X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকার

আমার সীমিত সঞ্চয় আমি ভাগ করে নিতে চাই : চিন্ময় গুহ

.
২৯ জুন ২০১৬, ১২:৩২আপডেট : ৩০ জুন ২০১৬, ১৭:৩৯

চিন্ময় গুহ পৃথিবী জুড়ে যে মৃত্যু-উপত্যকায় আমরা বাস করছি, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই শব্দেরা ক্রমশ জীর্ণ হয়ে আসছে, তাদের শরীর থেকে ঝরে পড়ছে সাদা রক্ত। তাই গতানুগতিক লেখা নয়, একটা নতুন স্পেস আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি

 

[চিন্ময় গুহ। মৃণাল সেনের ভাষায়, ‘অন্তহীন, ক্লান্তিহীন মননের চলমান স্রোত। তারই নাম চিন্ময় গুহ’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘আমাদের কালের গর্ব’। নোবেল পুরস্কারজয়ী ফরাসি ঔপন্যাসিক ল্য ক্লেজিওর ভাষায়, ‘দুই সংস্কৃতির সেতু’।
সমকালীন বাংলা সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক, বিশিষ্ট অনুবাদক, অগ্রগণ্য ফরাসিবিদ চিন্ময় গুহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক এবং প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃসাহসিক প্রাক্তন উপাচার্য। যাঁর ফরাসি লিখন ও উচ্চারণকে ‘অলৌকিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন স্বয়ং জাঁক দেরিদা। ফরাসি সংস্কৃতি ও শিক্ষা মন্ত্রক তাঁকে দু দুবার ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন ২০১০ ও ২০১৩ সালে। ‘দেশ’ ও ‘বইয়ের দেশ’ পত্রিকার গ্রন্থ-সমালোচনার সম্পাদনা করেছেন এক দশক। সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। ভারতের Central Institute of Indian Languages প্রযোজিত বেশ কয়েকটি ইংরেজি তথ্যচিত্রের ভাষ্যকার : কৃত্তিবাসী রামায়ণ, রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ, প্যারীচাঁদ মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র।
এই সময়ের এই বিশিষ্ট সাহিত্যভাবুক অধ্যাপনা ও অনুবাদকর্মের সঙ্গে নিয়মিত এক নতুন প্রাণবন্ত গদ্যকে আবিষ্কার করে চলেছেন বাংলা, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায়।
জন্ম ১৯৫৮ সালে কলকাতায়। আদি বাড়ি বরিশাল। বিদ্যালয় স্তরে জ্যোতিভূষণ চাকীর স্নেহচ্ছায়ায় জগদ্বন্ধু ইন্সটিটিউশনে, যেখানকার প্রাক্তন ছাত্র তপন রায়চৌধুরী, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক রুদ্র, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে সমান গুরুত্ব দিয়ে অধ্যয়ন ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য। গবেষণা করেছেন ফ্রান্সের সরবন ও ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক দশকের বেশি ফরাসি পড়িয়েছেন আলিয়াঁস ফ্রাঁসেজ-এ। দিল্লির ফরাসি দূতাবাসে প্রকাশনা বিভাগের অধিকর্তা ছিলেন। টি. এস. এলিয়টের সৃজনকর্ম নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যে নিবিড় অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করে নিয়েছিলেন চিন্ময় গুহ- তা যে বিগত দিনের এলিয়ট-গবেষণায় বিরল ঘটনা- এমন প্রশংসা উচ্চারণ করেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যবেত্তা ফ্রাঙ্ক কারমোড। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত এই গবেষণা কর্মের শিরোনাম Where the Dreams Cross: T S Eliot and French Poetry। চিন্ময় গুহ বক্তৃতা দিয়েছেন প্যারিস, লিয়ঁ, আভিন্যঁ, অক্সফোর্ড, ম্যানচেস্টার, ওয়রউইক, উরস্টার ও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর গ্রন্থ তালিকার দিকে চোখ রাখলেই ফরাসি সাহিত্য বিষয়ে তাঁর অনুবাদকর্ম ও চর্চার ধারাবাহিকতা ও বিস্তার বিষয়ে অবহিত হওয়া যাবে- লা রোশফুকোর ‘মাক্সিম’, ফ্লবের-এর ‘আহাম্মকের অভিধান, আঁদ্রে জিদ-এর ‘শীর্ণ তোরণ’, রম্যাঁ রলাঁর ‘দাঁতঁ’, ফরাসি কবিতার সংকলন ‘অন্য জলবাতাস অন্য ঢেউ: একশ বছরের শ্রেষ্ঠ ফরাসি কবিতা’, জাক প্রেভের-এর ‘বৃষ্টি আর রোদ্দুরের কবিতা’ (পলাশ ভদ্রের সঙ্গে), The Tower and the Sea: Romain Rolland- Kalidas Nag Correspondence 1922-38, রবিন উড-এর ‘অপু ট্রিলজি’। প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত, মৃণাল সেন, বাদল সরকার, তপন রায়চৌধুরী, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রমুখের সঙ্গে কথোপকথন ‘আয়না ভাঙতে ভাঙতে’। সহ-সম্পাদনা করেছেন Remembering Sartre, Tagore at Home in the World, Breaking the Silence, Time Space Text: Making Cultural Paradigms, অরুণ মিত্রের প্রবন্ধ (২ খণ্ড) ও অনুবাদ-সংগ্রহ (১ম খণ্ড), রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তের ‘বিবিধ প্রবন্ধ’। সমাদৃত হয়েছে তাঁর ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘চিলেকোঠার উন্মাদিনী’, ‘গাঢ় শঙ্খের খোঁজে’, ‘সুরের বাঁধনে: রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে’ এবং সাম্প্রতিকতম ‘ঘুমের দরজা ঠেলে’ (সিগনেট প্রেস, ২০১৬)। এখন সম্পাদনা করছেন রবীন্দ্রনাথ ও রম্যাঁ রলাঁর চিঠিপত্র। চিন্ময় গুহ-র সঙ্গে কথা বললেন তরুণ কবি অরুণাভ রাহারায়।]
অরুণাভ : আপনার ছাত্রজীবন গড়ে উঠেছিল বেশ কিছু গুণী মানুষকে ঘিরে...
চিন্ময় : আমার ছাত্রাবস্থা মানে ষাট আর সত্তরের দশক। ষাটের দশকটা ছিল একেবারে অন্যরকম, একটা মানুষের ‘মন গঠনের’ পক্ষে উপযুক্ত সময়। আমার মনে হয়, দুই বাংলাতেই তাই। বিশ্বাস ছিল, মানুষের প্রতি আস্থা ছিল। উন্মাদনা ও বিক্ষোভ তো ছিলই, কিন্তু বিশ্বাস ছিল। আমার পরিবারের মানুষেরা কয়েকটি মৌলিক মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করতেন। জ্ঞানচর্চার একটা পরিবেশ ছিল। বাবা, কাকাকে একটি দিনের জন্যও বই ছাড়া দেখিনি। বিহারের শিমুলতলায় আমার ঠাকুর্দা ডাক্তারি করতেন, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের শ্রেষ্ঠ ছাত্র হয়েও তিনি কলকাতা ছেড়ে পাহাড়ের কোলে এক ছোট্ট গ্রামে গরীব মানুষের সেবা করে জীবন কাটান। সহপাঠীরা বিদেশ গিয়ে FRCS হয়েছেন, বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক হয়েছেন, কিন্তু তাঁর কোনও অনুতাপ দেখিনি। এইটে তো আমার কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা! যখন লোকে বলে আমি কেন জ্ঞানচর্চা করতে প্যারিসে থেকে যাইনি, অক্সফোর্ড-কেম্ব্রিজে থেকে যাইনি, হারভার্ড যাইনি, তখন আমি বলতে চাই, আমি পালাতে চাইনি। এখানেই থাকতে চেয়েছি, কারণ এখানেই বিশ্বচরাচর এসে আমাকে ছোঁয়।
ছোটবেলা থেকে দেখেছি বাবা-কাকার রাশি রাশি বই। বাবার ইংরেজি বইয়ের মধ্যে হঠাৎ কাজী আবদুল ওদুদের ‘গ্যেটে’, অন্নদাশংকরের ‘পথে প্রবাসে’ এবং ‘বিনুর বই’ খুঁজে পাই। বাবার নাস্তিকতা ও মুক্ত চিন্তা আমায় সাহায্য করেছিল। আমার বয়স তখন ন’দশ, কিন্তু আমার জীবনের গতিপথ নির্ধারিত হয়ে যায়। আমার মা ইংরেজি-বাংলা ব্যাকরণ শেখাতে শেখাতে মূল্যবোধগুলোও শেখাতেন, শেখাতেন গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে, মানুষে মানুষে পার্থক্য না করতে। এই কথাগুলো নিতান্ত ক্লিশের মতো শোনাচ্ছে, কিন্তু এগুলো খুব বড় ব্যাপার। শৈশব তো মূল চরিত্র তৈরি করে দেয়। গতবার ঢাকায় হাসান আজিজুল হকের কাছে ওঁর ছেলেবেলার কথা শুনেছিলাম, যেন স্বচক্ষে দেখতে পেয়েছিলাম এক মহৎ সাহিত্যিকের যাত্রাপথের সূচনা।
ইস্কুলে কয়েকজন বড় মাপের, উদারচেতা শিক্ষককে পেয়েছিলাম, একাধিক সুপণ্ডিত, পরিশ্রমী, নিঃস্বার্থ ইংরেজির শিক্ষক, বাংলার কয়েকজন অসাধারণ শিক্ষককে, বিশেষত বৈয়াকরণ, বহুভাষাবিদ জ্যোতিভূষণ চাকীকে। মাটি থেকে রস টানতেন তিনি। ছবি আঁকা শেখাতেন বিশিষ্ট শিল্পী শ্যামল দত্ত রায়। সংকীর্ণতামুক্ত মন শেখাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। মনের মধ্যে একটা আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। স্কুল লাইব্রেরিরও একটা বড় ভূমিকা ছিল। পশ্চিমবঙ্গে পাঠ্যবই ও ‘র‍্যাপিড রিডার’-গুলো সেই সময় অর্থাৎ ষাট ও সত্তরের দশকের গোড়ায় অনেক বেশি চিন্তা করে সংকলিত হতো। অগ্নিযুগের কাহিনি থাকত, সুনির্বাচিত কয়েকটি ছোটগল্প। দশ-এগারো বছর বয়সে শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ মনটাকে তৈরি করে দেয়। তাছাড়া যখন নকশাল আন্দোলনের ঢেউ এসে পড়ল, সমাজ, রাষ্ট্র ও হিংসা সম্পর্কে এক তুমুল বিতর্কের মুখোমুখি হলাম। আমার বালক-মনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। এগুলোর প্রভাব আমার চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে।
অরুণাভ : এখন আপনি একই সঙ্গে অধ্যাপক, ফরাসি ভাষার পথিক, সুলেখক, অনুবাদক...
চিন্ময় : আসলে আমি পাঠক মাত্র। মুক্তমন এক পাঠক হয়ে সীমিত সামর্থ্যে বিশ্বের জ্ঞান-ভাণ্ডার আহরণ করতে চেয়েছি। বোর্হেস মালার্মেকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, পৃথিবীটা টিকে আছে শুধু একটা বই হয়ে যাওয়ার জন্য। আমি চিন্তার জগতে বিশ্বপথিক হতে চেয়েছি, weltbürger। সাহিত্য ভালোবেসেছি, সৌভাগ্যবশে সাহিত্যের অধ্যাপক হওয়ায় পেশা আর নেশা গেছে মিশে। ইংরেজি সাহিত্য পড়াই, ফরাসি সাহিত্য পড়ি, কিন্তু লিখি প্রধানত বাংলায়। দেশে ও বিদেশে ইংরেজিতে লিখে ও বক্তৃতা দিতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে সাফল্য পাওয়া অনেক বেশি সহজ। কিন্তু সে পথে যাইনি। সেদিক থেকে বুদ্ধদেব বসু, কবীর চৌধুরী, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আমার মডেল। অনুবাদ করিও একই কারণে। আমার সীমিত সঞ্চয় আমি ভাগ করে নিতে চাই। আমার সব অন্বেষণে একটা অন্তর্নিহিত সুর সংগতি আছে, একটা অন্তরের মিল। আমি শতকরা একশ ভাগ নিখুঁত ফরাসি বলতে চেয়েছি, যাতে আমার মাতৃভাষাকে আরও ভাল করে শিরা-ধমনীতে অনুভব করতে পারি।

অরুণাভ : ১৯৮৯ প্রথমবার প্যারিস। তাই তো? একবার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘গোটা ফ্রান্স যেন একটা রামধনু রঙের বই’।
চিন্ময় : হ্যাঁ, ১৯৮৯! ফ্রান্স যেন একটা রামধনু। নেমেই একটা হোর্ডিং দেখেছিলাম, প্যারিসে পৃথিবী তোমার সঙ্গে কথা বলছে, তুমি পৃথিবীর সঙ্গে কথা বলো। তারপর অনেকবার গিয়েছি, কিন্তু মত বদলায়নি। স্বামী বিবেকানন্দ লিখেছিলেন, ‘এই ফ্রাঁস স্বাধীনতার আবাস’। ‘প্রাচীন গ্রিক মরে ফরাসি হয়ে জন্মেছে যেন’। শুধু ফরাসি বিপ্লব নয়, সাম্য ও সুবিচারের চিন্তা ও ঐতিহ্য নয়, ফরাসিদের জন্মগত সৌন্দর্য-চেতনা আমায় মুগ্ধ করে। আমি পাশ্চাত্যের অনেক দেশ দেখেছি, কিন্তু ফ্রান্সের সঙ্গে কোনও তুলনাই চলে না। ফ্রান্সের মানুষ, সংগ্রহশালা, বইয়ের দোকান এসব আমায় মোহিত করে রাখে। সর্বোপরি ফরাসি ভাষা, যেটির বহু শতাব্দী-প্রাচীন অসংখ্য স্তরকে, বাগধারা, বাগবিধি থেকে অপভাষা পর্যন্ত, আমি শিরা-উপশিরায় ধারণ করতে চেয়েছি। ফরাসি সাহিত্য যেভাবে নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে আত্মান্বেষণ করে চলেছে তার কোনও তুলনা দেখি না। আমি মঁতেন থেকে সার্ত্র সকলের ভক্ত।
অরুণাভ : ‘অন্য জলবাতাস, অন্য ঢেউ’ অনুবাদ-কবিতার বই হলেও, সেখানে আপনার নিবিড় কবিকণ্ঠ অনুরণিত হয়েছে। কিন্তু অনুবাদে বিশুদ্ধ কবিতার রস পাওয়া যায় না- এমনই বলেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
চিন্ময় : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো ঠিকই বলেছেন, আমরা জানি। কোনও semantic network বা ভাষা-জালকেই অন্য এক ভাষাজালে, বিশেষত ভিনদেশি সংস্কৃতির কোনও ভাষাজালে প্রকাশ করা দুরূহ, কবিতাকে তো বটেই। ‘উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে’ কেউ ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারবেন? পেঙ্গুইন প্রকাশিত দ্বিভাষিক সংকলনগুলিতে ইংরেজি অনুবাদে অজস্র প্রাথমিক স্তরের ভুল চোখে পড়েছে। কিন্তু বিশ্বকবিতার ক’জনকে আমরা মূলে পড়েছি? দান্তে, ব্যাস, ভার্জিল, গ্যোয়েটে, ভিকতর য়্যুগো, বোদল্যের, রিলকে...? আমি মনে করি, যে অনুবাদক দুটি ভাষায় পারঙ্গম (এটিও অবশ্য একটি ইউটোপিয়া, কিন্তু অনুবাদ তো অর্ধশিক্ষিত রাম-শ্যাম-যদুর কাজ নয়, আমাদের কলেজ স্ট্রিটে অথবা পত্র-পত্রিকায় কোনও ভাষাই না জেনে এরকম অনুবাদ-অনুবাদ খেলা চালু আছে) এবং মাতৃভাষায় অনুবাদ করছেন, মূল লেখককে শ্রদ্ধা করেন এবং ভালোবাসেন, তিনি একটা বিশেষ স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন বলে আমার ধারণা। তাঁর মধ্যে আবশ্যিকভাবে কবিতার সুর থাকতেই হবে। ‘অন্য জলবাতাস, অন্য ঢেউ’ এর অনুবাদগুলো ভালোবেসে করা। একটা passion কাজ করেছে, হয়তো সেই কারণে অন্তত কিছু কবিতা উতরে গেছে। বিশেষ করে য়্যজেন গিলভিকের। তাছাড়া (হাসি) এটা কাউকে বোলো না, আমি এককালে কবিতা লিখতাম।
জানি না আপনারা আমার অন্যান্য অনুবাদ সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল। তবে আঁদ্রে জিদ-এর অবিস্মরণীয় প্রেমের উপাখ্যান ‘শীর্ণ তোরণ’ (ইংরেজিতে Strait is the Gate) আমার আরেকটি ভালোবাসার অনুবাদ। লা রশফুকোর ‘মাক্সিম’ বা ফ্লবের-এর ‘আহাম্মকের অভিধান’-কে কবিতার মতো যত্নে তিলে তিলে অনুবাদ করেছি, কান পেতে তার মূর্ছনা শুনতে শুনতে। বা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুত্রয়ী’ সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত সমালোচক রবিন উডের অসাধারণ বইটি আমাকে তানপুরার তারের মতো বাজিয়ে দিয়েছে। সেটিকে বহুদিন ধরে অনুবাদ করেছি প্রেমিকের মতো ভালোবাসায়।
অরুণাভ : আপনি জানিয়েছেন ‘ফরাসি কবিতা পাঠককে নতুন করে ছোবল দেওয়ার আগে দু-দণ্ড দাওয়ায় বসে জিরোচ্ছে’।
চিন্ময় : ফরাসি কবিতা বিশেষত উনিশ শতক থেকে এতো দিয়েছে...ভিকতর য়্যুগো, লামার্তিন, বোদল্যের, জেরার দ্য নেরভাল, লোত্রেয়ামঁ, পল ভের্লেন, আর্ত্যুর র‍্যাঁবো, জ্যুল লাফর্গ…বিশ শতকে পল ভালেরি, আপোলিনের, ব্লেজ সাঁদ্রার্স, স্যুররেয়ালিস্তরা, স্যাঁ-জন পের্স, পল এল্যুয়ার, লুই আরাগঁ, আঁরি মিশো, রনে শার, জাক প্রেভের, য়্যজেন গিলভিক ...এখন একটু বিশ্রাম তো নিতেই পারে! একটু মন্দা যাচ্ছে...কিন্তু আবিষ্কার থেমে যাবে না। ফরাসি কবিতা চর্বিতচর্বণ করে না, নিজেকে নতুন করে নিতে জানে। ইতিহাস তার সাক্ষী।
অরুণাভ : আচ্ছা, দেরিদা যখন বললেন ফরাসিতে আপনার অধিকার ‘অলৌকিক’...
চিন্ময় : দেরিদা বলেছেন, ঠিক। আরও অনেকে। বিখ্যাত ফরাসি পণ্ডিতেরা যেমন, ফ্রান্সে সাধারণ মানুষেরাও। আমি ফরাসি ভাষায় কখনও পিয়ানো, কখনও এসরাজ বাজাতে চেয়েছি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ফরাসি বলার সময় এমনভাবে বলব যে চোখ বন্ধ করে থাকলে বা টেলিফোনে শুনলে কেউ বুঝতে পারবে না আমি জন্মসূত্রে ফরাসি নই। প্যারিসীয় ফরাসি, যা ফ্রান্সেও অনেকেই বলে না, যে এক বাঙালিও বলতে পারে সেটা প্রমাণ করতে চেয়েছি। কলকাতায় বসে। তবে এটাকে অকারণ অহংকার ভাববেন না। উনিশ শতক থেকে বাঙালিরা অনেকেই বহু ভাষিক ছিলেন, মধুসূদন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, তরু দত্ত, ইন্দিরা দেবী, প্রমথ চৌধুরী..। স্বামী বিবেকানন্দ ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ আর ‘পরিব্রাজক’-এ প্রায় নিখুঁত ফরাসি প্রতিবর্ণীকরণ করেছেন। ‘ফ্রান্স’ না লিখে ‘ফ্রাঁস’ লিখেছেন, ‘প্যারিস’ না লিখে ‘পারি’। সৈয়দ মুজতবা আলী তো এক আশ্চর্য উদাহরণ। তাছাড়া অরুণ মিত্র তো আমার গুরু। আমি দূর থেকে এঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি।
অরুণাভ : বুদ্ধদেবের ‘বোদলেয়ার’ কি আপনার পছন্দ হয়নি?
চিন্ময় : আরও অনেকের মতো আমিও বুদ্ধদেব বসুর বহুমুখী মনীষার গুণগ্রাহী, বিশেষত তাঁর অপরূপ গদ্যের। ‘তিথিডোর’-এর মতো কিছু পড়েছি কি? ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’ বা ‘মহাভারতের কথা’-র মতো? মনে হয় না। তাঁর বোদল্যের-অনুবাদ তো কিংবদন্তী হয়ে গেছে। কিন্তু না, দুঃখের বিষয়, বোদল্যেরের সঙ্গে সেই অনুবাদ-কর্মের মূল চরিত্রের বিশেষ মিল নেই। বোদল্যের অনেক বেশি সহজ, সাবলীল, ‘কাব্যিকতা’ তাঁর পছন্দ নয়। তাছাড়া বহুগুণ বেশি রূপময়। বুদ্ধদেব ফরাসি জানতেন না, কাজেই গভীর ভালোবাসায় যা করেছেন, আমরা তা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু না, ওতে বোদল্যের বহুলাংশে অনুপস্থিত। আসল বোদল্যের আলাদা। কী করা যাবে?
অরুণাভ : অনেকে থাকতে ভিকতর য়্যুগোর জীবনী লিখলেন কেন?
চিন্ময় : ভিকতর য়্যুগো (১৮০২-১৮৮৫)-র তুলনা একমাত্র রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। কবি হিসেবে, বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ত্ব হিসেবে। ফরাসি রোমান্টিসিজমের অন্যতম প্রধান উদগাতা, সুদীর্ঘ জীবনে প্রায় একা ফরাসি কবিতার মোড় ঘুরিয়েছেন, বারবার নিজেকে ভেঙেছেন, উপন্যাস (যার মধ্যে আছে ‘লে মিজেরাবল’ আর ‘নত্র-দাম দ্য পারি’-এর মতো মানবগাথা) ও নাটক লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন, সামাজিক বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। তাঁকে নিয়ে লিখব না তো কাকে নিয়ে লিখব? প্যাপিরাস প্রকাশনী থেকে কিশোরদের জন্য শঙ্খ ঘোষ সম্পাদিত এক অনবদ্য জীবনীগ্রন্থমালা আছে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রামমোহন’, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘জগদীশচন্দ্র’, শঙ্খ ঘোষের ‘বিদ্যাসাগর’, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নজরুল’। শঙ্খদাই আমাকে য়্যুগোর জীবনী লিখতে বলেন। ওঁর ইতিহাসবোধ অসাধারণ। য়্যুগোর মেরুদণ্ডী বর্ণিল জীবন আমাদের জীবন আমূল বদলে দিতে পারে। হাসান আজিজুল হকের ‘সক্রেটিস’ আমায় বিশেষভাবে উদ্দীপ্ত করেছিল। যাঁরা আত্মবিক্রয় করেননি, যেমন ভলতের, ভিকতর য়্যুগো, এমিল জোলা, রম্যাঁ রলাঁ, জাঁ-পল সার্ত্র... আমার অতি প্রিয়। আমি সার্ত্র-এর জন্ম শতবর্ষে তাঁর সম্পর্কেও একটি ইংরেজি বই সম্পাদনা করেছি। তাতে শিবনারায়ণ রায়, ল্য ক্লেজিও, রোনাল্ড আরনসন থেকে ক্রিস্টিনা হাওয়েলস সকলেই লিখেছেন।
অরুণাভ : রলাঁর বিপ্লব-নাটকগুলির মধ্যে ‘দাঁতঁ’ বেছে নিলেন কেন?
চিন্ময় : আগেই বলেছি, রলাঁকে আমি ভালোবাসি। ছোটবেলায় আমার বাবার গ্রন্থাগারে যাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ। আড়াই দশক ধরে রাত্রি জেগে আমি রলাঁ-বিষয়ক গবেষণা করে চলেছি। ফরাসিতে, ইংরেজিতে, বাংলায় বহু বক্তৃতা দিয়েছি, লিখেছি, কিন্তু ওই মহাশিল্পীকে পুরোপুরি আবিষ্কার করতে পারিনি। এ বছর তাঁর ১৫০-তম জন্মদিন গেল। রবীন্দ্রনাথ যাঁকে বলেছিলেন পাশ্চাত্যে তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ, তাঁর সম্পর্কে চারপাশে এক কান ফাটানো নীরবতা। তাঁর ‘জাঁ-ক্রিস্তফ’ আর ‘বিমুগ্ধ আত্মা’-র কথা জানলেও বিপ্লব নাট্যমালার কথা চর্চিত হয়নি। তাই ‘দাঁতঁ’ নাটক অনুবাদ করা মনস্থ করি। ফরাসি বিপ্লবের প্রধান চরিত্রদের দ্বন্দ্ব যে আমাদেরও দ্বন্দ্ব সেটা বোঝানোই আমার উদ্দেশ্য ছিল। রোবেসপিয়ের আর দাঁতঁ-র সংঘাতটা প্রতিটি বিপ্লবের ও অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিপ্লবের শক্তির দিকটাও যেমন ধরা যায় (সেটা অতি-বামপন্থী বিপ্লবও হতে পারে), তেমনি ফাঁকির দিকটাও। দুঃখের বিষয়, হয়তো ভাষাগত দূরত্বের কারণে, বিশেষ কেউ কষ্ট করে নাটকটি পড়েননি। তবে ঐতিহাসিক গৌতম ভদ্রের ভাল লেগেছিল। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সু-সমালোচনা করেছিলেন।
অরুণাভ : আপনার Where the Dreams Cross বইটি আমাদের আলোড়িত করেছে। বইটির মাধ্যম ইংরেজি হলেও বহুসংখ্যক দৃষ্টান্ত ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যনির্ভর।
চিন্ময় : টি এস এলিয়ট তো বিশ শতকের মার্কিন-ইংরেজি কবিতার এক আলোকস্তম্ভ। কিন্তু দৈবাৎ এক বৃষ্টির বিকেলে আমি আবিষ্কার করি তিনি ফরাসি কবিতা থেকে অকুণ্ঠভাবে আহরণ করে গেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋণ স্বীকার না করে। বস্তুত প্রায় শত শত উপাদান নিয়েছেন। প্রায় ঘোরের মধ্যে ফ্রান্স ও অক্সফোর্ড-কেম্ব্রিজ ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে পিএইচ.ডি-র অভিসন্দর্ভ লিখি। অন্যতম পরীক্ষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এলিয়ট এস্টেটের ডিরেক্টর জন বডলি লেখেন, ‘It will create a rumpus’। পরে সেই বই প্রথমে প্যাপিরাস থেকে, পরে ম্যাকমিলান থেকে প্রকাশিত হয়। ‘টাইম্‌স্‌'-এ ফ্র্যাঙ্ক কারমোড বইটিকে যুগান্তকারী বলে অভিহিত করেন, অক্সফোর্ড ম্যানচেস্টার প্যারিস ও অন্যত্র বক্তৃতাগুলি আদৃত হয়, কিন্তু ভারতবর্ষে পড়াশোনাটা আজকাল এত কম হচ্ছে- তত্ত্ব চালিয়াতিটাই যেখানে প্রধান- যে কাঙ্খিত অভিঘাত হয়নি। তবে তোমার মতো তরুণ কবির ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগছে। তরুণ কবিরা যদি পড়েন, এলিয়টের কবিতা রচনার অভিনব প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে লাভবান হবেন বলে মনে হয়।
অরুণাভ : আমরা জানি, বহু বিচিত্র ঘটনা আপনাকে বিস্মিত করে।
চিন্ময় : হ্যাঁ, করে, তবে নানা বিষয়ে এই উৎসাহটা আমার নিজস্ব কিছু না। বাঙালির বিশেষ চরিত্র-ধর্ম, যেটা হারিয়ে যাচ্ছে, যেটা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছি। বঙ্কিম থেকে শুরু করে শ্রেষ্ঠ বাঙালিদের দেখুন। অন্নদাশংকর, আনিসুজ্জমান, অমর্ত্য সেন...। এই গুণ আশা করি আপনারাও ধরে রাখবেন। আমি সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, সংগীত... সবকিছু নিয়ে উৎসাহী। সাত-আটটি ইংরেজি তথ্যচিত্রে পর্দায় উপস্থিত (অনেকটা ‘সিভিলাইজেশন’-এ কেনেথ ক্লার্কের মতো) ভাষ্যকারের দায়িত্ব নিয়েছি… যেমন কৃত্তিবাস ওঝা, কালীপ্রসন্ন সিংহ, প্যারীচাঁদ মিত্র, রবীন্দ্রনাথ (চিঠিপত্র), বুদ্ধদেব বসু, অরুণ মিত্র, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়…। আমি এমনিতে খুব লাজুক লোক, কিন্তু গুণীজনদের সভায় বক্তৃতা দিতে আমার ভাল লাগে। একটা তরঙ্গদ্রাঘিমায় পৌঁছনো যায়।
অরুণাভ : আপনার শেষতম বই ‘ঘুমের দরজা ঠেলে’। এর গদ্যভাষা অদ্ভুত রকমের নতুন…
চিন্ময় : আমার বিশ্বসাহিত্যপাঠকে একটা তানপুরায় বেঁধে নতুন সুরে আমি উপস্থাপন করেছি ‘ঘুমের দরজা ঠেলে’ নামে তিন বছর ধরে লেখা আমার সম্প্রতি-প্রকাশিত নতুন বইতে। একটা নতুন ভাষা তৈরির প্রচেষ্টা আছে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেবের পাশে অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছেন পো, আপোলিনের বা কার্ল স্যান্ডবার্গ। এক সময় আমি কবিতা লিখতাম, কবিতা অনুবাদ করেছি ফরাসি থেকে, কে জানে হয়ত সেটা আমার গদ্যের ভেতরে অন্তঃসূত হয়ে আছে। আমার creative energy-টাকে আমি ওইদিকে চালিত করেছি। মঁতেন-এর রচনার তৃতীয় খণ্ডের কথা ভাবো, যা প্রায় একটি উপন্যাসের বহুমাত্রিকতায় পৌঁছয়। ধর, পল ভালেরির ‘সংলাপ’, যা অনেকটা বীজগণিতের মতো, তাতে এমন এক সূক্ষ্মতা রয়েছে যা ইংরেজি প্রবন্ধে সচরাচর পাওয়া যাবে না।
এখন সংবাদ প্রতিদিন-এর ‘রোববার’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেছি ‘ঘুমের দরজা ঠেলে’-র দ্বিতীয় পর্যায়। এক নতুন কলাম ‘হে অনন্ত নক্ষত্রবীথি’। সেখানে লিখেছি চলচ্চিত্রকার বার্গম্যান আর আন্তোনিয়োনির ওপর। কলেজ জীবনে ছাত্রাবস্থায় তাঁদের ছবি আমায় শিহরিত করেছিল, কয়েক দশক পরে সেই শিহরণ সুষুম্না বেয়ে ফিরে এসেছে ঘুমের মধ্যে। পৃথিবী জুড়ে যে মৃত্যু-উপত্যকায় আমরা বাস করছি, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই শব্দেরা ক্রমশ জীর্ণ হয়ে আসছে, তাদের শরীর থেকে ঝরে পড়ছে সাদা রক্ত। তাই গতানুগতিক লেখা নয়, একটা নতুন স্পেস আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি।

.....................................................................

ঈদ সংখ্যার সূচিপত্র দেখতে ক্লিক করুন :

বাংলা ট্রিবিউন ঈদ সংখ্যা ২০১৬

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া