X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-২

ফিরোজ আহমেদ
২৪ জুলাই ২০১৬, ১৫:০১আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৬, ১৫:৩৬

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-২ যদি কাফের ও মুশরেক হিন্দুদিগকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করা না যায়, তাহা হইলেও এতটুকু করিতে হইবে, যাহাতে আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলের এই সকল জঘন্য শত্রু অসম্মান ও অভাবের মধ্যে জীবন যাপন করিতে বাধ্য হয়। বাদশাহদের ধর্মভীরুতার লক্ষণ এই যে, যখনই তাহাদের দৃষ্টি এই হিন্দুদের উপর পড়িবে, তখন ক্রোধে মুখমণ্ডল অগ্নিবর্ণ ধারণ করিবে এবং ইহাদিগকে জেন্দা গোর দিবার কথা বারংবার মনে উদয় হইবে

পূর্ব প্রকাশের পর

প্রাক-ব্রিটিশ ভারতে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না!
সলিমুল্লাহ খানের সূত্রে পাওয়া অধ্যাপক রাজ্জাকের এই বক্তব্য নিয়ে ভারতবর্ষের ইতিহাসের সাথে যারা পরিচিত, তাদের সংশয় জাগতেই পারে। এক অর্থে দেখলে, পৃথিবীর সকল সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের পেছনেই পার্থিব কারণসমূহ উপস্থিত, ক্রুসেড নামে খ্যাত মুসলমান-খ্রিস্টান ধর্মযুদ্ধগুলোরও। এমনকি মধ্যযুগের অন্তিমপর্ব জুড়ে ইউরোপে ক্যাথলিক-প্রটেস্টান্ট ধর্মযুদ্ধগুলোও কি একেবারে পার্থিব বৈশিষ্ট্যহীন? বিবাদমান পক্ষদ্বয় তাদের পার্থিব স্বার্থকে ধর্মের মোড়কেই হাসিল করার চেষ্টা করেছে, সকল যুদ্ধের চিত্রণেই এই সত্যটিকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। কখনো কখনো এই আড়াল করাটি গৌণও হয়েছে, যোদ্ধারা ধর্মরক্ষার অপার্থিব পূণ্যের পাশাপাশি পার্থিব জমিজমা-ব্যবসা-রাজত্ব দখলের বাসনা গোপন রাখেননি। এমনকি বহু ক্ষেত্রে ধর্মযুদ্ধের পার্থিব স্বার্থ এতটাই প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে যে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সমরনৈতিক স্বার্থ ধর্মীয় নিকটত্বকে ছাপিয়ে ভিন্ন শিবিরের মাঝে মিত্রতা খুঁজে পেয়েছে, ধর্মযুদ্ধের ডামাডোলের মাঝেই।(৭)
তাই সবচেয়ে ভাল হতো সত্যিকারের– যাকে বলা যায় ‘বিশুদ্ধ’-নির্ভেজাল এবং আদর্শ কিছু সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের নমুনা-নিদর্শন-আকার-প্রকার-বিবরণ পাওয়া গেলে– যেটার নিরিখে আমরা ভারতবর্ষীয় সমরগুলোতে সাম্প্রদায়িকতা নামের উপাদানটির উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি বিচার করতে পারতাম। অনেক লেখকই ভারতবর্ষের আধুনিক সাম্প্রদায়িকতার সূচনার সাথে আধুনিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন, রাজনীতিতে যখন সাম্প্রদায়িক পরিচয় নির্ধারক হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু অধ্যাপক রাজ্জাকের ওই ‘বিচ্ছিন্ন’ মন্তব্যটি আধুনিক মধ্যবিত্ত স্বার্থজাত সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ক আলোচনা নয়, এটি রাজা-রাজড়াদের যুদ্ধকাণ্ডের মাঝেও সাম্প্রদায়িক মনে বৃত্তির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি প্রশ্নে একটি ইতিহাস বিচার সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।
অধ্যাপক রাজ্জাক কথিত পাঁচশত বছরের ব্যাপ্তির মাঝে অপেক্ষাকৃত ‘উদার হয়ে’ ওঠা মোঘলরা নয় শুধু, মোঘলদের আগেকার সুলতানী আমলও অন্তর্ভূক্ত। এবং এই সুলতানী আমলের বেলায় এই বক্তব্যটি মান্য করা কঠিন। তুর্কী শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই শাসনামলের বড় অংশ জুড়েই প্রজাদেরকে প্রধানত প্রতিকূল বির্ধমী হিসেবেই ভাবা হতো। খুব সম্ভবত তখনও পর্যন্ত ভারতে মুসলমান শাসকদের যথেষ্ট শেকড় না-গাড়তে পারা, বহিরাগতদের ওপর সামরিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বগুলোতে অতিমাত্রায়, কিংবা বলা যায় প্রায় পূর্ণমাত্রায় নির্ভরশীল থাকা এবং মিশ্রিত সংস্কৃতি ও যোগাযোগ গড়ে ওঠার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ সৃষ্টি না-হওয়াই এর কারণ। এই সময়ের জনপ্রিয় একটি ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারিখ ই ফিরুজ শাহী’ দিল্লীর ছয় জন সুলতানের শাসনামলের ঘটনা নিয়ে রচিত। এই শাসকদের অধিকাংশের সততা, দক্ষতা এবং প্রবল বুদ্ধিমত্তা ও সাহসের পরিচয় বিপুল হলেও পরধর্মসহিষ্ণুতা সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় গ্রন্থটিতে আমরা পাই, তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির খুব অনুকূল না। ইতিহাসকার জিয়াউদ্দীন বারানী স্বয়ং নিজেও অবশ্য ভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়, এমনকি তার বিবেচনায় ‘কলুষিত’ এবং স্থানীয়জাত ও নিম্নবর্ণের ধর্মান্তরিত মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ (৮) গোপন করার কোন চেষ্টাই করেননি।
‘তারিখ ই ফিরুজ শাহী’ বর্ণিত সুলতানদের মাঝে প্রথমজন হলেন গিয়াসউদ্দীন বলবন। শাসক হিসেবে তাকে তুলনামূলকভাবে যোগ্য, বিচক্ষণ ও ন্যায়পরায়ণ হিসেবে চিহ্নিত করেও বারানি তার প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি সবার আগে সালতানাতের স্বার্থ দেখতেন, এবং সেরকম কোন স্বার্থের দ্বন্দ্ব উপস্থিত হলে তিনি ধর্মের বিধি-নিষেধেরও ধার ধারতেন না। তিনি রাজকীয় কোন পদেই নীচু বংশোদ্ভুত কোন ব্যক্তিকে কিছুতেই নিয়োগ দিতেন না। সে রকম সুপারিশ কেউ করলে অতিশয় রুষ্ট হতেন। হিন্দু সম্প্রদায় সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ক একটা উদাহরণ আলোচনা করেই সুলতানী আমলের একটি প্রাধান্যশীল ভাবনার পরিচয় দেয়া যেতে পারে:
‘যদি কাফের ও মুশরেক হিন্দুদিগকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করা না যায়, তাহা হইলেও এতটুকু করিতে হইবে, যাহাতে আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলের এই সকল জঘন্য শত্রু অসম্মান ও অভাবের মধ্যে জীবন যাপন করিতে বাধ্য হয়। বাদশাহদের ধর্মভীরুতার লক্ষণ এই যে, যখনই তাহাদের দৃষ্টি এই হিন্দুদের উপর পড়িবে, তখন ক্রোধে মুখমণ্ডল অগ্নিবর্ণ ধারণ করিবে এবং ইহাদিগকে জেন্দা গোর দিবার কথা বারংবার মনে উদয় হইবে। বিশেষ করিয়া এই সকল কাফেরের নেতৃবৃন্দ ব্রাহ্মণদিগকে সমূলে বিনাশ করিতে হইবে। কারণ ইহাদের দ্বারাই অধর্ম ও কুফুরীর প্রসার লাভ ঘটিয়া থাকে। ইসলাম তথা সত্য ধর্মের ইজ্জত রক্ষার জন্যই কোন মুশরেক বা কাফেরকে এমন কোন সুযোগ দেওয়া যাইবে না, যাহাতে সে সসম্মানে জীবন যাপন করিয়া সুমলমানদের মধ্যে বিশিষ্টতা লাভ করিতে পারে এবং নানাবিধ সুখ ভোগ করিতে সমর্থ হয়। কোন রাজকীয় পদ বা দায়িত্বপূর্ণ কাজেও ইহাদিগকে বহাল করা যাইবে না। বস্তুত ইহাদিগকে আরাম আয়েশে থাকা এমনকি নির্ভয়ে সুনিদ্রা ভোগ করিবার সুযোগ দেওয়াও মুসলমান বাদশাহদের উচিত কার্য নহে।’(৯)
পাঠক, খেয়াল না করে পারবেন না যে, বলবনের ধর্মীয় নিয়ম-নিষ্ঠাকে জিয়াউদ্দীন বারানি যথেষ্ঠ উৎসাহের সাথে উল্লেখ করছেন। রাজধর্ম আর ধর্মের মাঝে সংঘর্ষের বেলায় তিনি অস্বস্তি মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে ঘটনার বর্ণনা করছেন, সুলতানের যে কাজগুলোকে তিনি ধর্মবিরোধী অথচ রাজত্বের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচনা করেছেন, সেগুলোকে নীরবে সমর্থন দিয়েছেন, অন্ততপক্ষে ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণত বিরোধিতা করনেনি। কিন্তু গিয়াসউদ্দীন বলবনের সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও শরাফতির প্রতি অন্ধ পক্ষপাতের একজন উৎসাহী সমর্থক হিসেবেই পাঠক বারানীকে আবিষ্কার করবেন। অথবা, কিছুটা সম্ভাবনা তো থাকেই যে, এই উগ্রভাষণ স্বয়ং বারানীর কল্পনাপ্রসূত, গিয়াসউদ্দীন ততটা চড়া ছিলেন না। বারানীর চিত্রিত সুলতানেরা হয়তো বারানীরই নির্মিত ভাস্কর্য, যেমন অধ্যাপক রাজ্জাক নির্মিত হয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন চোখে। যাই হয়ে থাকুক, বারানির মতো শক্তিশালী আমীর ও বুদ্ধিজীবীর উপস্থিতিও সুলতানী আমলের বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ধারণা দেয়। উদাহরণে পাতা আরও ভারী করা সম্ভব, আশা করি প্রবণতাটা বোঝাতে এটুকুই যথেষ্ট হবে।
এরপরও, পাঠক দয়া করে ভুল বুঝবেন না। মুসলমানী শাসনের একেবারে শুরু থেকেই একদিকে কঠোরভাবে শরিয়ত মানতে চাওয়া (এই শরিয়ত মানার বিষয়টিও খুবই আপেক্ষিক। প্রধান আগ্রহের বিষয় আসলে ছিল সেই প্রসঙ্গগুলোই যেগুলো নানান কারণে ধর্মীয় প্রতীক হয়ে উঠেছে। দৈনন্দিন জীবনে অল্পকিছু শাসক বাদ দিলে অধিকাংশ শাসক, আমীর ওমরাহবৃন্দ রীতিমত বে-শরাই ছিলেন, তা ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে যথেষ্টই পষ্ট) শাসক ও ধর্মীয় নেতা এবং সুফীগণ ছিলেন, অন্যদিকে ছিলেন ভারতীয় ভাবধারার সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টারত সুফী সাধক ও কবি-গায়কগণ। সংস্কৃতির এই মিশ্রণ ঘটছিল এবং সেটা যেমন প্রায়ই উত্তেজক বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়াত, তেমনি জনগণের একটা বড় অংশ বাস্তব প্রয়োজনেই এই মিশ্র সংস্কৃতির।(১০) কিন্তু ধীরে ধীরে একটি মিশ্র সংস্কৃতিও পরিসরও গড়ে ওঠে, যেখানে ভারতীয় মুসলমানরা তুরস্ক ও পারসিক এবং আরবীয় মুসলমানদের থেকে খুবই আলাদা। এই যৌথ পরিসরটুকুর বাইরে সকল ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাত এবং বর্ণের ছিল নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। পরবর্তীকালগুলোতে তাই শাসকদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল এই ভারসাম্যটি বজায় রাখা। কিন্তু কোন গোলমালে এই ভারসাম্য নড়ে উঠলেই সাম্প্র্রদায়িক কাঠামোটিকে ঠিকঠাক চেনা যেতো। এখনো যেটা ভারত-বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রেই দেখা যাবে, স্থায়ী গোলমালের দেশ পাকিস্তানে গোলমাল খানিকটা বেশিই স্থায়ী বলে বেশ কিছুদূর আইনী চেহারাও পেয়েছে। সুলতানী আমলের অর্জনগুলো মাথায় রাখলে বোঝা যাবে যে, তুর্কী সুলতানদের হটিয়ে ক্ষমতায় আসা মোঘল আমলে রাষ্ট্র অতটা সাম্প্রদায়িক চেহারা আর নেবে না। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিভক্তি যতক্ষণ আছে, যে কোন রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে তা ঠিকই বিভাজন আকারে দেখা দিতেই পারে। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণ্যাত্য অভিযানের শুধু ধর্মীয় কারণ ছিল না। সাম্রাজ্য বিস্তারই লক্ষ্য ছিল। ভিন্ন মাজহাবের নাঙ্গা দরবেশকে হত্যা (১১) কিংবা ভিন্ন ধর্মের নাগরিকদের জন্য অবমাননাকর অথবা নির্দিষ্ট বর্ণের পোশাক পড়তে বাধ্য করা কিংবা অশ্ব ইত্যাদি বাহন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার চেষ্টার মাঝেও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িকতা যে সাম্রাজ্যে কোন নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত আচরণ ছিল না, ব্যক্তি সম্রাটের খেয়ালের ওপরও নির্ভর করতো, তারই নিদর্শন পাই।
সিয়ার-উল-মুতাখখিরিন পাঠ করে ব্রিটিশ আসার আগে এদেশে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না এই সত্যটি কিভাবে জানা সম্ভব, সেটা আমাদের বোধগম্য হয় না। ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে এই গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ, তাতে অবশ্যই সন্দেহ নেই। কিন্তু এর লেখকের বিশেষ সামাজিক মর্যাদা ও আগ্রহ এবং গ্রন্থটি রচনার কাল ইত্যাদি অনেকগুলো কারণেই সামাজিক ইতিহাসের দলিল হিসেবে এটির নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আওরঙ্গজেব পরবর্তী সম্রাট আর রাজপুত্রদের যুদ্ধবিগ্রহের দরুণ সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনাই এর প্রধান দিক, কে কোন কৌশলে লড়াইতে জিতলেন আর কে কেন হারলেন, কার বীরত্বব্যাঞ্জক কি ভূমিকা ছিল, কার কূটকৌশল কিংবা বিচক্ষণতা ও মর্যাদার বোধ কতখানি গুরুত্ব রেখেছে, উচ্চমহলের আস্কারায় হঠাৎ বেয়ারা হয়ে ওঠা নর্তকীর সমুচিত শাস্তিপ্রাপ্তি, রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পাঠকরা রুদ্ধশ্বাসে জানতে পারবেন বইটি থেকে।
সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস অনুসন্ধানের চেষ্টাটিকে এই একটিমাত্র গ্রন্থে সীমিত রাখা হলে কিংবা এই গ্রন্থকে একমাত্র বা প্রধান দলিল হিসেবে ধরে নিলে সলিমুল্লাহ খানের বরাতে পাওয়া অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের এই মতটি গ্রহণযোগ্য মনে হলেও হতে পারে। কিন্তু আমরা আগেই যেটা দেখলাম, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা হিন্দু-মুসলমান বিভেদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক কারণগুলো তো ব্রিটিশদের আগমনের আগেই যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। ফলে কোন গভীরতর অনুসন্ধানের আগেই কাণ্ডজ্ঞানও আমাদের বলবে সাম্প্রদায়িকতার অনুভূতির উপস্থিতির কথা, যদি না আমরা কোন আত্মবিশ্বাস বা আপ্তবাক্য দ্বারা পরিচালিত হতে থাকি। প্রাক-বৃটিশ সাম্প্রদায়িকতার যথাযথ নির্ভুল সাক্ষ্যও রেখে গিয়েছিলেন সমকালের মানুষেরা। সিয়ার-উল-মুতাখখিরীনে তাই চোখ আটকে থাকলে চলবে না, সেই সাক্ষ্য আমাদের খুঁজতে আমাদের নজরটিকে আরও কিছুটা ছড়িয়ে দিতে হবে।

শায়খ জালালউদ্দীন তাব্রীজের মতোই, শাহ্ জালালকে উপস্থাপন করা হয় বাঙলার হিন্দু অতীত ও মুসলিম ভবিষ্যতের মাঝে একটি ছেদ আনয়নকারী হিসেবে... ‘সুদূরপ্রান্তে অভিযান’-এর উল্লেখ যেখানে শাহ্ জালালের যোদ্ধা-অনুগামীদের ‘বেঁচে থাকার কোন রসদও ছিল না, গণিমতের মাল ছাড়া’ ইঙ্গিত করে এই তুর্কি অভিযাত্রীদের যাযাবর উৎসের, এবং এভাবে শাহ্ জালাল-এর বাঙলায় আগমনের প্রধান লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় প্রকৃতির, এই দাবিটাকে নাকচ করে

একই আলোচনা বাংলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবার কথা
‘মগর একটিও সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ হয় নাই’ বাক্যটির সুনিশ্চয়তার মাঝে কি হযরত শাহ্ জালাল (মৃত্যু ১৩৪৬) বনাম গৌড় গোবিন্দের যুদ্ধটিও অন্তর্ভূক্ত? বিজয়ীরা কিন্তু এই যুদ্ধটিকে মিথ্যা ধর্মের ওপর সত্য ধর্মের বিজয় হিসেবেই গণ্য করে আসছেন। এটিকে গোনায় ধরা হচ্ছে না কি সিলেটের ক্ষুদ্র পরিসরে ছোট্ট এক স্থানীয় রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধলিপ্তদের সংখ্যার স্বল্পতার কারণে? (১২)
সাম্প্রতিককালে রিচার্ড এম ইটন হযরত শাহ্ জালাল-গৌড় গোবিন্দের মাঝে অনুষ্ঠিত এই ‘ধর্মযুদ্ধ’টিরও একটি নতুন ভাষ্য জানিয়েছেন যেখানে মধ্য এশীয় যাযাবর তুর্কি ভাগ্যান্বেষীর রাজ্য অর্জনের প্রয়াস হিসেবেই এই যুদ্ধটিকে দেখা হয়েছে।(১৩) হযরত শাহ্ জালাল মধ্য এশীয় বিখ্যাত একটি সুফী তরিকার অনুসারী ছিলেন, তুর্কী গোত্রগুলি কোন না কোন সুফী তরিকার অনুবর্তী হতো। শাহ্ জালালের কয়েকশ বছর আগে থেকেই মধ্য এশিয়া একদিকে সংঘাতে জর্জরিত ছিল, অন্যদিকে এখান থেকে বহির্গত তুর্কি ও অন্যান্য জাতির ভাগ্যান্বেষীরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছোট বড় রাজবংশ গঠন করেছে, ভূমিকা রেখেছে যোদ্ধা হিসেবে, নতুন বসতি স্থাপন করেছে অজস্র। হযরত শাহ্ জালাল প্রসঙ্গে ইটন জানিয়েছেন, হযরত শাহ্ জালালের প্রথম জীবনীটি লেখেন তার এক সঙ্গীর বংশধর শায়খ আলী (মৃ ১৫৬৩), শাহ্ জালালের সাথে তার মৃত্যুকালের ব্যবধান ২১৭ বছর। এই জীবনীকার একদিকে যেমন মধ্য এশিয়ায় তুর্কিস্তানে জন্ম নেয়া হজরত শাহ্ জালালের সুফি তরিকায় প্রশিক্ষণ এবং বিরান দেশে ধর্মপ্রচারের আগ্রহে তার পীর কর্তৃক আদিষ্ট হবার কথা উল্লেখ করেছেন; তেমনি কয়েকশ সঙ্গীসাথী-সহ সিলেটের দূরতম প্রান্তে অভিযানের কথাও বলেছেন যেখানে ‘গণিমতের মালপত্র ছাড়া টিকে থাকারও উপায় ছিল না।’ অচেনা জনপদে অজানা মানুষদের সাথে এই গণিমত সংগ্রহের জন্য যুদ্ধ ভিন্ন আর কি উপায় থাকতে পারে! অশ্ব, উন্নততর অস্ত্র ও সমর প্রশিক্ষণের কল্যাণে এই বিজয়লদ্ধ গণিমতের প্রাপ্তিটাও সম্ভব ছিল। ‘পুরো অঞ্চলটি পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জগতের বিজয়ীর হস্তগত হলে, শায়খ মুজাররাদ সকলের জন্য এক একটি ভাগ নির্মাণ করেন এবং সেটিকে তাদের পরিতোষি হিসেবে প্রদান এবং তাদেরকে বিয়ে করার অনুমতি দেন।”
ইটনের ভাষায়, ‘শায়খ জালালউদ্দীন তাব্রীজের মতোই, শাহ্ জালালকে উপস্থাপন করা হয় বাঙলার হিন্দু অতীত ও মুসলিম ভবিষ্যতের মাঝে একটি ছেদ আনয়নকারী হিসেবে... ‘সুদূরপ্রান্তে অভিযান’-এর উল্লেখ যেখানে শাহ্ জালালের যোদ্ধা-অনুগামীদের ‘বেঁচে থাকার কোন রসদও ছিল না, গণিমতের মাল ছাড়া’ ইঙ্গিত করে এই তুর্কি অভিযাত্রীদের যাযাবর উৎসের, এবং এভাবে শাহ্ জালাল-এর বাঙলায় আগমনের প্রধান লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় প্রকৃতির, এই দাবিটাকে নাকচ করে।’ কিন্তু এই যে ইটন ভাবছেন, লক্ষটি ধর্মীয় নয়, অথচ যুদ্ধজয়ী হযরত শাহ্ জালাল এবং এবং তার পরের প্রজন্মের কাছে এর ধর্মীয় তাৎপর্যের বিশালতা থেকে আমরা অপার্থিব ও পার্থিব আকাঙ্ক্ষার বোঝাপড়া ইতিহাসের ব্যাখ্যায় যেভাবে জড়িয়ে থাকে, সেই সম্পর্কে একটা ধারণা পাবো।
এভাবে তীর্থে আসা সাধুদের হাতে দখলের শিকার হয়ে ময়মনসিংহে যেমন স্থানীয় একটি গারো রাজ্য পরিণত হলো সুসঙ্গ রাজ্যে (সৎসঙ্গ- অর্থাৎ ধার্মিকদের রাজ্যে), সিলেটে কিন্তু সেভাবে রাজপরিবার গড়ে ওঠেনি। সিলেটে বরং, মধ্য এশীয় গোত্রপতির আদলে গণিমতের ভাগ ও করায়ত্ত জমি বণ্টনের চিত্রটি দেখা যায়। মধ্য এশীয়ায় তখনকার অস্থিরতা, বহুসংখ্যক তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর এশিয়া ও ইউরোপব্যাপী ভূমির জন্য অভিযান এবং রাজবংশ ও বসতি গড়ে তোলার প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে হজরত শাহ্ জালালের এই কাহিনির তাৎপর্য বোঝা সম্ভব। ধর্মীয় প্রেরণা এই অভিযানগুলোকে সদর্থক তাৎপর্য দিতে পারে, এমনকি তা অধর্মের রাজত্বকে ধর্মের রাজত্বে নিয়ে আসার নৈতিক বৈধতা ও প্রদান করতে সক্ষম।এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে কোন যুদ্ধই প্রকৃত ধর্মযুদ্ধ নয় আদৌ, পার্থিব চাহিদাই মানুষকে দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত অভিযানে টেনে এনেছে। সেই হিসেবে ইংরেজরা আসার আগে কোন ধর্মযুদ্ধও নিশ্চয়ই অনুষ্ঠিত হয়নি।
তারপরও, ভূমি প্রধান প্রণোদনা থাকলেও একথা না মেনে উপায় কি যে, যুদ্ধটা দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মাঝেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল? ধর্মপ্রচার মূল প্রণোদনা ছিল না, অথচ সাম্প্রদায়িক স্বার্থের প্রকাশ ঘটেছিল, এমন সংঘাতের অভাব নেই সাম্প্রতিক কিংবা প্রাচীন ইতিহাসে। এমন খাঁটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত এই গ্রহের কোথায় পাওয়া যাবে যেখানে কোন জাগতিক তুচ্ছ বাসনা ইন্ধন হিসেবে ক্রিয়াশীল ছিল না, একমাত্র ধর্মপ্রচারই যোদ্ধাদের পরম আরাধ্য ছিল? স্বার্থ কিংবা লোভকে মহত্বের আলখাল্লা পড়ানো হয়নি এমন কোন রাজনৈতিক বিবাদ পাওয়া যাবে না, রাজনীতির কাজই তো স্বার্থকে আদর্শায়িত করা। চলবে..
পর্ব-১ পড়তে ক্লিক করুন :
অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-১


টিকা
৭. ইউরোপ বিষয়ে সাধারণ আলোচনার জন্য আগ্রহী পাঠকরা Richard S. Dunn এর The Age of Religious Wars, 1559-1715 (The Norton History of Modern Europe) দেখতে পারেন। ১৫৫২-৫’র যুদ্ধে ক্যাথলিক ফরাসি রাজার সহায়তায় ধর্মযুদ্ধের নামে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের তৎকালীন অধীশ্বর স্প্যানিশ সম্রাট চতুর্থ চার্লসের রাজ্যগ্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে প্রোটেস্টান্ট সামন্ত শাসকরা, ক্যাথলিক সামন্ত শাসকরা কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে নিজেদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে রক্ষা করে। এই যুদ্ধের পরিণামে হ্যাপসবুর্গরা অগসবার্গের শান্তিচুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়ে। এমন আরেকটি বিখ্যাত ঘটনা হলো সুইডেনের রাজা গুস্তাফ অ্যাডলোফাস-এর প্রোটেস্ট্যান্ট ক্রুসেডে (১৬১৮-৪৮) ক্যাথলিক ফরাসী সরকারের বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি প্রদান, কেননা এই যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছিল অস্ট্রিয় সম্রাটের বিরুদ্ধে। এটাই ইউরোপের বিখ্যাত ৩০ বছরের যুদ্ধ নামে খ্যাত ধর্মযুদ্ধ।
৮. জিয়াউদ্দীন বারানীর ‘তোয়া ই জাহানদারি’ দ্রষ্টব্য। এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির উল্লেখ সুলতানী আমল বিষয়ক অনেকগুলো গ্রন্থে মিললেও এর ইংরেজি অনুবাদটি এখানকার কোন গ্রন্থাগারে পাইনি। অন্যত্র উল্লেখ থেকে জানা যাচ্ছে যে, ফতোয়ার এই সংকলনটি এমনকি নব্য মুসলিমদেরও পৃথকীকরণের পক্ষে অনুকূল মত দেয়। প্রধানত তুর্কি শ্রেষ্ঠত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত সুলতানী শাসনের একটি ধর্মীয় ন্যায্যতা প্রদানই এর রাজনৈতিক লক্ষ্য।
৯. গোলাম সামদানী কোরায়শী কর্তৃক অনূদিত ‘তারিখ ই ফিরুজশাহী’, পৃষ্ঠা: ৩২, বাংলা একাডেমী, ১৯৮২।
১০. উভয় সংস্কৃতির এই মিশ্রণ এবং শক্তিশালী একটি সমন্বিত সংস্কৃতি গড়ে ওঠা বিষয়ক চিত্তাকর্ষক একটি আলোচনার জন্য দেখুন MUZAFFAR ALAM রচিত The Languages of Political Islam INDIA 1200-1800.
১১. একজন দিগম্বর দরবেশ মুহম্মদ সাইদকে হত্যা করেন সম্রাট আওরঙ্গজেব, তার মৃত্যুর কারণ সম্ভবত দারা এই ফকিরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। দেখুন এ শর্ট হিস্টরি অব আওরঙ্গজেব, স্যার যদুনাথ সরকার, অনুবাদ খসরু চৌধুরী, প্রকাশক ঐতিহ্য, ২০১২ পৃষ্ঠা ৯৩। এই হত্যার ধর্মীয় বৈধতাও প্রতিপাদন খুব কঠিন। সব মিলিয়ে অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের যে প্রকটতা এই সময়ে দেখা গিয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই। এই আচরণগুলোর আর্থ-সামাজিক তাৎপর্য বা ব্যাখ্যা যাই থাকুক, এদের অস্তিত্ব অনস্বীকার্য।
১২. কৌতূহলী পাঠক জেনে রাখবেন, অধিকাংশ প্রান্তিক রাজ্যের কোন একটি বিকাশমান সভ্যতার প্রতিভূস্বরুপ ভাগ্যান্বেষীদের অধিনস্ত হওয়ার বা যুক্ততার যে কয়টি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, হজরত শাহ্ জালালের গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত করার কাহিনির ভাবনাটি তার মাঝে একটি। অত্যাচারী রাজা, বহিরাগত সিদ্ধপুরুষ, প্রজাদের নালিশ এবং অবশেষে সত্যের জয়। হুবহু হজরত শাহ্ জালালের ছকে নির্মিত আর একটি রাজ্য হলো সুসং রাজপরিবার, যেটি সময়ের দিক দিয়ে বেশ খানিকটা আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এই সামন্ত পরিবারটি টিকে ছিল ১৯৪৭ পর্যন্ত। এটাও প্রাণিধানযোগ্য যে, গৌড় গোবিন্দের উত্তরসূরী স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং গারো জাতিগোষ্ঠী উভয়ের মাঝেই ওই যুদ্ধের একটা বিকল্প ব্যাখ্যাও আছে। ক্ষমতাগত ভারসাম্যের কারণেই তাদের কাহিনির প্রচার বোধগম্যভাবেই কম। সুসং রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠার সর্বজনবিদিত কাহিনিটি এখানে তুলে দেয়া হলো ‘সুসং দূর্গাপুর.ওআরজি’ নামের অন্তর্জালিক ঠিকানা থেকে: অনেককাল আগে ১২৮০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে মাঘ মাসের শীতকালীন অবসরে ভারতের কান্যকুব্জ থেকে একদল সাধু বেরিয়েছিলেন তীর্থ ভ্রমণে। বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুড়তে ঘুড়তে একসময় তারা উপস্থিত হন গৌহাটির নিকটস্থ পাহাড়ে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দিরের পূণ্যপীঠে। কিছুদিন সেখানে অবস্থানের পর নদীর তীরে বিগ্রহলক্ষ্মী নারায়ণজীর আবাসে আশ্রয়গ্রহণ করেন এবং সেখানে মগ্ন হন ঈশ্বর আরাধনায়। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন। নীরব পাহাড়ি পরিবেশ তাদেরকে বেশ প্রশান্তি দিচ্ছিল। হঠাৎ একদিন একদল দরিদ্র ধীবর সেখানে উপস্থিত হয়ে সাধুদের জানালেন যে ‘পাহাড় মুল্লুকে’ বৈশ্যগারো নামে এক দুর্ধর্ষ ও অত্যাচারী রাজা তাদের উপরে ক্রমাগত নির্যাতন করে চলেছে। এ হেন অবস্থা থেকে তারা পরিত্রাণ চায়। ধীবরদের মুখে এ নির্যাতনের কাহিনি শুনে এক প্রবীণ সাধুর মনে দয়ার উদ্রেক হয়। তিনি তার কনিষ্ঠ সাধু সোমেশ্বর পাঠককে বলেন, সোমেশ্বর তুমি ‘এই অরণ্যভূমি অধিকার করে এখানে একটি রাজ্য স্থাপন কর! তাতে তোমার অভীষ্ট সিদ্ধি ও ধীবরদের মঙ্গল হবে। জ্যেষ্ঠ সাধুর নির্দেশকে শিরোধার্য ভেবে আরও কয়েকজন সন্ন্যাসীকে নিয়ে সোমেশ্বর পাঠক থেকে গেলেন নিবিড় পাহাড়ি অরণ্য এ জনপদে। আর বাকি সাধুরা চলে গেলেন পূর্বের গন্তব্যে। তারপর সোমেশ্বর পাঠক অন্যান্য সহচর ও ধীবরদের নিয়ে একটি দল সংগঠন করেন এবং অত্যাচারী বৈশ্যগারো রাজাকে পরাজিত করে তিনি নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন নতুন এক রাজ্য। যার নাম দেন ‘সুসং রাজ্য।’ রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর রাজ্যের পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারায় প্রবাহিত পাহাড়ি নদীটির নাম দেন ‘সোমেশ্বরী’। ৩,৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা ও প্রায় সাড়ে নয়শত গ্রাম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সুসং রাজ্য। সুসং রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু এক বিরানভূমিকে করা হয় রাজধানী। রাজধানীর নাম রাখা হয় দূর্গাপুর। বর্তমানে সেই দূর্গাপুর জনপদটিই নেত্রকোণা জেলার সুসঙ্গ দূর্গাপুর উপজেলা নামে পরিচিত।”
১৩. rise of islam and the Bengal frontier, Richard m eaton, 75.

অলঙ্করণ : মোস্তাফিজ কারিগর

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভুল হলে রিয়াল-বার্সার ম্যাচটি পুনরায় মাঠে গড়ানো উচিত: লাপোর্তা
ভুল হলে রিয়াল-বার্সার ম্যাচটি পুনরায় মাঠে গড়ানো উচিত: লাপোর্তা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ আদায়, মোনাজাতে কান্না
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ আদায়, মোনাজাতে কান্না
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ