X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যোগাযোগ পরিচিতি

আনন্দ পাল
২৭ জুলাই ২০১৬, ১৪:২৯আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৬, ১৪:৪২

যোগাযোগ পরিচিতি জুলাই ২০১৬ ‘যোগাযোগ’-এর ১২ তম সংখ্যা ‘টেলিভিশন সংখ্যা’ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। টেলিভিশন মিডিয়াকে বুঝতে এমন পত্রিকা ইতোপূর্বে বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়নি, বা এভাবে কেউ ভাবেওনি। বাংলাদেশে বেসরকারি চ্যানেলের ছড়াছড়ি ও তার প্রতি দর্শকের অনাগ্রহ এবং ভারতীয় চ্যানেলের প্রভাব বুঝতে এই সংখ্যাটি খুবই কার্যকর; পাশাপাশি টেলিভিশনের তাত্ত্বিক দিকও।
১০টি অধ্যায়ে বিভাজিত ৩৯টি লেখার অধিকাংশ অনূদিত হলেও তা পূর্ণাঙ্গভাবে টেলিভিশন মিডিয়াকেই প্রকাশ করে। এই ১০টি অধ্যায় হলো: ওত্ত্ব, ইতিহাস, রাজনৈতিক অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন, সাংবাদিকতা, টকশো, সোপ অপেরা, নীতিমালা, টেলিভিশন অধ্যয়নের প্রধান ধারণাসমূহ এবং আলোচনা।
‘টেলিভিশন কী?’ শিরোনামে জ্যানেট ওয়াসকোর প্রবন্ধ দিয়ে শুরু। এখানে জ্যানেট টেলিভিশন আবিষ্কারের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলো ফার্নসওয়ার্থের ভূমিকা স্মরণ করে তার জীবনকাহিনি রচয়িতার একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সেখান থেকে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি তার আশাবাদের বাস্তবতা বুঝতে-
“টেলিশিভন কী হতে পারে ফিলো তা বোঝানো শুরু করলেন। সর্বোপরি... পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিক্ষণ-মাধ্যম হয়ে উঠবে। নিরক্ষরতা দূর হয়ে হবে।...যদি আমরা অন্য দেশের মানুষকে দেখতে পাই এবং আমাদের পার্থক্যগুলো জানতে পারি তাহলে আর কোনো বুল বোঝাবুঝি কেন থাকবে? যুদ্ধ একটা অতীতের বিষয়ে পরিণত হবে।”
এই আশায় গুড়েবালি বা বেহাত বিপ্লবের পেছনে টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রক ও তাদের ক্ষমতা-পুঁজিকে আমরা বুঝতে পারি আমেরিকা পরিচালিত যুদ্ধ ও যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরিতে তাদের ভূমিকা দেখে। কখনো কখনো তাদের হস্তক্ষেপকে ‘মিডিয়া ক্যু’ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।
উপরোক্ত উদ্ধৃতি মনে রেখে আরো দুটো উদ্ধৃতি দেই-
“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশন সাড়ম্বরে হাজির হওয়া সত্ত্বেও সাত বছর বয়েসী এক বালক বলেছিল সে রেডিও পছন্দ করে, তাতে ‘চিত্রটা ভালো দেখা যায়’।’’-আলিস্টেয়ার কুক।
অন্যটি “টেলিভিশন আমার কাছের খুবই শিক্ষামূলক। যথনই কেউ ওটা চালু করে, আমি পাশের ঘরে চলে যাই এবং কোনো একটা বই পড়া শুরু করি।”-গ্রুচো মার্কস।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে একটি ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’-এর বাক্স হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যখন যে রাজনৈতিক বা দল বা গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে তাদের ভেরেন্ডা ভাজতেই তার বেলা যায়, এবং এটা জনমানসে স্থিতধী হয়ে আছে। ফলে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই। তাহলে অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রতি মানুষের আস্থা কতটুকু- এই প্রশ্নও আমাদের সামনে আসে।
আসুন বিটিভি মানে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনের (১৯৬৪ সালে) সূচনানুষ্ঠানের দিনটি স্মরণ করি জামিল চৌধুরীর বরাত দিয়ে, “সমালোচকেরা প্রায়ই বলেন, বর্তমান টেলিভিশন দর্শকদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ২৫ ডিসেম্বর জন্মলগ্নে আঁতুড়ঘরেই টেলিভিশন দর্শকদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ছিল, পাকিস্তান বেতার থেকে যে সংবাদ পাঠ করা হবে, তার বাইরে কোনো সংবাদ টেলিভিশনে পরিবেশন করা যাবে না। এত প্রতিকূলতার বিপরীতে একমাত্র পথ ছিল অনুষ্ঠানের মান উন্নয়ন।”
ওই উদ্বোধনের দিন পল্টন ময়দানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফাতেমা জিন্না আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন অবসানের জন্য বিশাল জনসভা করে, কিন্তু রাত ৮টার সংবাদে এই জনসভার খবর প্রচারিত হয়নি। ফলে এই টেলিভিশনটি যেভাবে বিকশিত হবার কথা সেভাবেই হচ্ছে।
কিন্তু এর বাইরে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংবাদ পরিবেশনের পলিসি কেমন, কয়েকজন সাংবাদিক নাম-পরিচয় গোপন রেখে জানান, “টিকে থাকার তাগিদে বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থ আমাদের রক্ষা করতে হয়। তাই যারা আমাদের নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেয় তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো সংবাদ প্রচার করতে পারি না।...”
আরো একজন বলেন, “সবসময় বিজ্ঞাপনের জন্য আমাদের নিউজ ছোট করতে হয়। কখনো ঘটনার গুরুত্বের কারণে সংবাদ বড় করতে চাইলে নিউজ এডিটরদের ধমক খেতে হয়।...”
আরো একজন বলেন, “যেকোনো সংবাদ বাছাই থেকে শুরু করে তৈরি করা পর্যন্ত আমাকে আমার হাউজ পলিসি, মালিকের স্বর্থ, বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থ, উর্ধ্বতনের স্বার্থ-চিন্তা-চেতনা সবকিছু বিবেচনায় রাখতে হয়।...”

মানে মালিকপক্ষ ও বিজ্ঞাপনদাতার উপর নির্ভর করে স্বাধীন সাংবাদিকতা। এর উপরে সরকারি সম্প্রচার নীতিমালা তো আছেই। আর সাংবাদিকের জীবনে তো ‘সাগর-রুনী’ নজির ও চাকরি হারানোর ভয়ে কম্পমান- এ কথা তো সবাই মেনে নিয়েছে।

যোগাযোগের লেখক ও অনুবাদকের তালিকায় রয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও টেলিভিশনের সাংবাদিকবৃন্দ। সম্পাদক ফাহমিদুল হক এবং আ-আল মামুন। মূল্য ২০০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে পাঠক সমাবেশ, জনান্তিক (শাহবাগ, ঢাকা); বাতিঘর (চট্টগ্রাম); গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসমূহের সেমিনার (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। যোগাযোগের পরবর্তী সংখ্যা হবে ‘নিউ মিডিয়া ও প্রযুক্তি’ সংখ্যা।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক