X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-৫

ফিরোজ আহমেদ
১৪ আগস্ট ২০১৬, ১৪:০৬আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০১৬, ১৪:২৭

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-৫ তারপরও সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে অধ্যাপক রাজ্জাকের বক্তব্যটির সারকথাটুকু গ্রহণ না করে উপায় থাকে না, কেননা আমাদের চেনা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম ও বিকাশ ঔপনিবেশিক শাসকদের আশ্রয়ে ও মদদে; হিন্দু মধ্যবিত্তের বিকাশের আদিপর্বে আধুনিক সাম্প্রদায়িকতার সূচনা ও তারই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পরবর্তী সময়ে বিকশিত মুসলমান মধ্যবিত্তের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার রমরমা

পূর্ব প্রকাশের পর

সুলতানী আমল পরবর্তী মোগল আমলেও রাষ্ট্রক্ষমতা ও সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শন করা না-করার এই প্রচেষ্টার আভাস পাওয়া যাবে ১৬৪০ সালের একটি বিচারের ঘটনার বর্ণনায়, যেখানে আধুনিক মেদেনীপুর জেলায় একজন বাঙালি মুসলিমের বিচার করছিলেন আরেকজন বাঙালি মুসলিম কাজী। অপরাধ ছিল হিন্দুগ্রামে এক জোড়া ময়ূর হত্যা ও ভক্ষণ, কাজী অভিযুক্তকে চাবকানোর হুকুম দিয়ে রায়ের ব্যাখ্যায় বলেন, ৬৬ বছর আগে বঙ্গবিজয়ের সময় সম্রাট আকবর কথা দিয়েছিলেন যে বাঙালিদের তাদের প্রথা আর আইন অনুসরণ করতে দেওয়া হবে। ফলে হিন্দুগ্রামে প্রাণী হত্যা করে মুসলমান প্রজাটি আইন ভঙ্গ করেছে।[৩৮]
আমাদের তাই স্মরণ রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িকতার পরিস্থিতি মোঘল আমলে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল যে ছিল, সেটা ছিল তাদের শাসনের তুলনামূলক স্থিতিশীলতারই প্রতিফলন। মোঘল শাসনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রাজবংশটি শুধু বহিরাগত যোদ্ধা ও আমলাদের সেবার ওপর নির্ভরশীল ছিল না। বরঞ্চ স্থানীয় বহু প্রথাকে আয়ত্ত করে তারা ভারতীয় চেহারা গ্রহণ করেছিল, যেটা এর আগের দিল্লীর সুলতানী আমলের প্রায় সোয়া তিনশ বছরে (১২০৬-১৫২৬) প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল না। এই স্থিতি ও সংহতি যখন বিপর্যস্ত হলো, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও সমন্বয়বাদী দারার বদলে ক্ষমতায় এলেন জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, প্রতিশোধপরায়ন, সাহসী এবং সাম্প্রদায়িক ভাবধারায় আচ্ছন্ন আওরঙ্গজেব। ভাতৃঘাতী যুদ্ধে তার ক্ষমতারোহন খুব সম্ভবত মোঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ঐক্য বিনষ্টির প্রতীক। জিজিয় কর আরোপ এবং নানাবিধ অপমানকর নিয়ম তিনি চাপিয়ে দেন ভিন্নধর্মের মানুষদের ওপর। নতুন মন্দির নির্মাণ বা পুরনোগুলোর সংস্কার করার অনুমতি না দেয়া, নানান অজুহাতে বেশ কিছু মন্দির ধ্বংস, রাজপুত ছাড়া অন্য ভারতীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর পালকি, হাতি বা ঘোড়ায় চড়া ও অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করার আইন জারিসহ যে অজস্র সাম্প্রদায়িক পীড়নের মনোবৃত্তি তিনি তার শাসনকালে রেখেছেন, তার একটা বাস্তব ভিত্তিও ভারতবর্ষীয় রাষ্ট্রকাঠামোর মাঝেই উপস্থিত ছিল।

পাঁচ
প্রায়শই আমরা দেখি বুদ্ধিমান আশু সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রজ্ঞাবান সমস্যার প্রকৃতি বোঝার ওপর গুরুত্ব দেন। হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এই যে সমস্যার বহু রকম সমাধান শুরু থেকেই চেষ্টা করা হয়েছে- বিশেষ করে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ও তার প্রেক্ষিতে বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলনের সুদূরপ্রসারী ফল নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার সমাজের এই গভীর বিভাজন নিয়ে ভাবিত হন, অন্যদের মতো তিনি কোন ধামাচাপা দেয়ার আপোষ-রফায় এর স্থায়ী সমাধান দেখেননি। বঙ্গবিভাগের পরপরই নাড়া খাওয়া মন নিয়ে সম্ভবত প্রথমবারের মতো সাম্প্রদায়িকতার সমস্যার গভীরতম খাদে আলো ফেলেন, হিন্দু-মুসলিম সমস্যা যে শুধুই ইংরেজের কারসাজি, অন্যদের এই মতটি তিনি মোটেই মেনে নেননি:
“এই তো দেখিতেছি যুদ্ধের আরম্ভে আমরা বিপক্ষকে ভুল বুঝিয়াছিলাম, তার পরে আত্মপক্ষকে যে ঠিক বুঝি নাই সে কথাও স্বীকার করিতে হইবে।
আজ আমরা সকলেই এই কথা বলিয়া আক্ষেপ করিতেছি যে, ইংরেজ মুসলমানদিগকে গোপনে হিন্দুর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিয়া দিতেছে। কথাটা যদি সত্যই হয় তবে ইংরেজের বিরুদ্ধে রাগ করিব কেন। দেশের মধ্যে যতগুলি সুযোগ আছে ইংরেজ তাহা নিজের দিকে টানিবে না, ইংরেজকে আমরা এতবড়ো নির্বোধ বলিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া থাকিব এমন কী কারণ ঘটিয়াছে।
মুসলমানকে যে হিন্দুর বিরুদ্ধে লাগানো যাইতে পারে এই তথ্যটাই ভাবিয়া দেখিবার বিষয়, কে লাগাইল সেটা তত গুরুতর বিষয় নয়। শনি তো ছিদ্র না পাইলে প্রবেশ করিতে পারে না; অতএব শনির চেয়ে ছিদ্র সম্বন্ধেই সাবধান হইতে হইবে। আমাদের মধ্যে যেখানে পাপ আছে শক্রু সেখানে জোর করিবেই আজ যদি না করে তো কাল করিবে, এক শত্রু যদি না করে তো অন্য শত্রু করিবে অতএব শত্রুকে দোষ না দিয়া পাপকেই ধিক্কার দিতে হইবে।
হিন্দু-মুসলমানের সম্বন্ধ লইয়া আমাদের দেশের একটা পাপ আছে; এ পাপ অনেক দিন হইতে চলিয়া আসিতেছে। ইহার যা ফল তাহা না ভোগ করিয়া আমাদের কোনোমতেই নিষ্কৃতি নাই।”[৩৯]
রবীন্দ্র সাহিত্যে এরপর বহুবার এই পৃথকতাকে মর্যাদা দেয়ার কথা এসেছে, কথা এসেছে তার স্বাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়ার এবং সামাজিক জীবনে মুসলমানকে যে অপাঙতেয় করে রাখা হয়, তার উপলদ্ধি। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতি বিপরীত পথেই অগ্রসর হয়েছিল। কংগ্রেস তার সংখ্যাগুরুত্বের শক্তিতে সমাজে ভিত্তি গেড়ে থাকা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের বৈষম্যকে লুকিয়ে রেখে নামমাত্র অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশের আড়ালে সঙ্কটের সমাধান প্রস্তাব করে। প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম লীগ খোলাখুলি দ্বিজাতিতত্ত্বের সাম্প্রদায়িক সমাধানের পথ গ্রহণ করে।
সাম্প্রদায়িক বিভাজন প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথের তিক্ত অথচ গভীর অন্তদৃর্ষ্টি সম্পন্ন এই মূল্যায়নের প্রায় হুবহু প্রতিধ্বনি পাওয়া যাবে কয়েক দশক পরে পাকিস্তান রাষ্ট্রে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের নিজের জীবনেরই একটি অতুলনীয় কাহিনীতে। গল্পটি একই সাথে বৈষম্য গোপন করার, একই ধরনের ধামাচাপা দেয়ার রাজনীতির বিপদ নিয়েও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি কতটা বড় মাপের ছিলেন, কোন সংবেদন তার বুদ্ধিবৃত্তিকে জাগ্রত রাখতো, সেটা সরদার ফজলুল করিমকে বলা তার এই গল্পটাতে বোঝা যাবে। পাকিস্তানের উৎসাহী সমর্থক হিসেবে যে রাজ্জাককে চিত্রিত করা হয়, সেই আদর্শ থেকে কখনোই সরে না এসেই কি করে একই রাজ্জাকই অনেকের চোখেই চিহ্নিত[৪০] হন বাংলাদেশেরও স্বাধিকার আন্দোলনের পূর্বসূরী হিসেবে, তারও বেশ খানিকটা আভাস পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনরের সাথে তার মোলাকাতের এই দৃষ্টান্তটাতে মিলবে।
অধ্যাপক রাজ্জাক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে কত উঁচু মাপের ছিলেন, তার আভাস বেশ খানিকটা পাওয়া যাবে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জাকির হোসেনের সঙ্গে তার আলাপচারিতায়। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আবদুর রাজ্জাক পূর্ব পাকিস্তানের পরিকল্পনা বোর্ডের সদস্য, এই দায়িত্বের সুবাদেই ৫৯ বা ৬০ সালের কোন এক সময়ে জাকির হোসেনের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। দীর্ঘ এই মোলাকাতের একদম শেষ পর্যায়ে আব্দুর রাজ্জাক অযাচিতভাবেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটা মৌলিক সঙ্কট উত্থাপন করেন।
জাকির হোসেনকে তিনি যা বলেন, সংক্ষেপে তা এই:
আব্দুর রাজ্জাক যখন ১৯৩৬ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন, তখন আরবি-ফার্সি ছাড়া ২০০-২৫০ জন শিক্ষকের মাঝে ৩-৪ জন মুসলমান শিক্ষক। রাজ্জাক সাহেবের মতে এরা সকলেই তার চেয়ে যোগ্যতর হলেও এবং তখনও পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে অজস্র জিনিস শিখলেও একটা বিষয়ে রাজ্জাক সাহেব তাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করতেন, এবং তাঁর মতে, তিনিই সঠিক ছিলেন। তিনি মনে করতেন দেশের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম হিসেবে একটা সমস্যা আছে। এই সমস্যাটার মুখোমুখি হতে হবে এবং সেটা সমাধান করতে হবে। তার সহকর্মীরা সকলেই মনে করতেন আসলে সমস্যাটা নাই, এটা তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের ফলে সৃষ্ট একটা বিভ্রম। রাজ্জাক মনে করেন এই সমস্যাকে স্বীকার করতে রাজি না হওয়ার কারণেই ৪৭ সংঘটিত হয়েছে। কংগ্রেস এই সমস্যা স্বীকার করতে বা হিন্দুদের সংখ্যাগুরু অংশ সত্যের মুখোমুখি হতে রাজি না হলে দেশভাগ অনিবার্য হতো না। ১৯৪৭ সালের পরও কিছু মানুষ বোঝার চেষ্টা করছেন পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের বৈরিতার একটি সমস্যা দেশে আছে। কথাটা উল্লেখ করলেই এই মানুষগুলোকে বলা হয় তারা ভারত বা এমন কোন তৃতীয় পক্ষের ঘুটি, এটা ৪৭-এর আগেকার পুরনো দিনগুলোতে যে যুক্তিগুলো শোনা যেতো তার প্রায় হুবহু প্রতিলিপি। এবং এই মনোভঙ্গির কারণে ১৯৪৭ সালে যে ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল, খুব সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে সেই পরিস্থিতির আবারো মুখোমুখি হতে হবে।[৪১]

মঙ্গলকাব্যে সাম্প্রদায়িকতার বিবরণ ছিল এটা যেমন সত্যি, মুসলমানরাও মঙ্গলকাব্য রচনা করছেন, দুই ধর্মের মানুষই পরস্পরের উৎসবগুলো উপভোগ করছেন- এমন বাস্তবতাও নির্মিত হয়। দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক জীবনে তার ছাপ-সমৃদ্ধ অজস্র কীর্তি আজ পর্যন্ত বহমান

ছয়
তারপরও সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে অধ্যাপক রাজ্জাকের বক্তব্যটির সারকথাটুকু গ্রহণ না করে উপায় থাকে না, কেননা আমাদের চেনা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম ও বিকাশ ঔপনিবেশিক শাসকদের আশ্রয়ে ও মদদে; হিন্দু মধ্যবিত্তের বিকাশের আদিপর্বে আধুনিক সাম্প্রদায়িকতার সূচনা ও তারই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পরবর্তী সময়ে বিকশিত মুসলমান মধ্যবিত্তের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার রমরমা। বিশেষ করে ব্রিটিশ আমলের শেষ পর্বটি এক রকম সাম্প্রদায়িক সংঘাতেরই ইতিহাসে পরিণত হয়, সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক ব্যবহার পরিণত হয় নৈমিত্তিক চর্চায়।
ফলে সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্বের ওপর গূরুত্ব আরোপই বর্তমান পর্যালোচনার লক্ষ্য, তার প্রাবল্যের মাত্রা নির্ণয় এর লক্ষ্য নয়। আর সব সামাজিক সম্পর্কের মতো সাম্প্রদায়িকতাও কতগুলো প্রেক্ষিত ছাড়া জন্ম নিতে সক্ষম না, কতগুলো বাস্তবতা ছাড়া তার প্রবল হয়ে ওঠা হয়ে ওঠে না। কতগুলো নির্দিষ্ট বাস্তবতায় তার প্রশমনও ঘটে। ইতিহাসের কাজ ধামাচাপা দিয়ে অতীতের রক্তক্ষরণকে আড়াল করা নয়। ইতিহাসবিদ বরং ঘৃণার জন্মের কার্যকারণ খুঁজবেন, ঘৃণার শক্তির ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা বা ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষিতটা আজকের পাঠকের সামনে তুলে ধরবেন।
ব্রিটিশপূর্ব ভারতের পাঁচশত বছরে তাই সাম্প্রদায়িকতার বিচ্ছেদ-বীজ ছিল না, সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ বা দৈনন্দিন জীবনে তা ছিল না, এটা বলা মুশকিল। অন্যদিকে, একই সময়ে বিপরীত প্রক্রিয়াটিও শক্তিশালীভাবেই জারি ছিল। ওই একই কালপর্বে ভারতের সকল অঞ্চলে স্থানীয় মুসলমান জনগোষ্ঠীও তো গড়ে ওঠে। মঙ্গলকাব্যে সাম্প্রদায়িকতার বিবরণ ছিল এটা যেমন সত্যি, মুসলমানরাও মঙ্গলকাব্য রচনা করছেন, দুই ধর্মের মানুষই পরস্পরের উৎসবগুলো উপভোগ করছেন- এমন বাস্তবতাও নির্মিত হয়। দর্শন, ধর্মতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক জীবনে তার ছাপ-সমৃদ্ধ অজস্র কীর্তি আজ পর্যন্ত বহমান। বিভাজন তাই একমাত্র সত্যি ছিল না, বিভাজন-অতিক্রমী শক্তিগুলোও ক্রমশ মূর্ত হয়েছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যে, যদিও তা ভিন্ন আলোচনার বিষয়।
শেষ করা যেতে পারে এই গৌণ তথ্যটি দিয়ে যে, যে সিয়ার উল মোতাখখিরীন-এর প্রসঙ্গে এই দীর্ঘ আলাপের সূত্রপাত, সেই গ্রন্থটিতেও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কখনো তা গুজরাটে একই উঠানে হিন্দু প্রতিবেশীর হোলি পালন ও মুসলমান প্রতিবেশীর গরু জবাইকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা, কখনো তা কাশ্মীরে উগ্রপন্থী প্রচারকের উস্কানিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, কখনো তা হিন্দু সমাজের ওপর জিজিয়া কর আরোপ কিংবা রদ, অশ্বারোহন বা পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ, কখনো তা রদের ইতিহাসচ্ছলে এসেছে। কোন সন্দেহ নেই, সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহে এটি অত্যন্ত গৌণ ও তুচ্ছ অংশমাত্র। বরং আওরঙ্গজেবের মৃত্যু থেকে সিয়ার লেখক গোলাম হোসায়ন তাবতাবায়ীর সমকাল পর্যন্ত যে কালপর্ব এই গ্রন্থটির বিষয়, ততদিনে সমাজের ভিন্ন একটি পরিগঠন সম্ভব হয়েছে যা প্রধানত ধর্মীয় চরিত্রের দিক থেকে সমন্বয়বাদী। তারপরও, বিভাজন যে অটুট ছিল, তাতে কোন সন্দেহ থাকবে না গ্রন্থটি পাঠ করা যে কোন সতর্ক পাঠকের। সিয়ার গ্রন্থটিতে এই সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর উল্লেখ থাকাটাও রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক তত্ত্ব হিসেবে অধ্যাপক রাজ্জাকের প্রাক-ব্রিটিশ সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ক তত্ত্বটির গুরুত্ব লঘু করে না, বরং মূলধারার প্রতিনিধিত্বশীল বিশ্বাস হিসেবে এটাই আধিপত্য করে এসেছে যুগের পর যুগ।(চলবে)

আরো পড়ুন-

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-৪

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-৩

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-২

অধ্যাপক রাজ্জাক : কয়েকটি খটকা || পর্ব-১

 

 

টিকা
[৩৮] ইটন, এসেইজ অন ইসলাম অ্যান্ড ইনডিয়ান হিস্টরি, পৃষ্ঠা ২৫৬
[৩৯] ব্যাধি ও প্রতিকার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমান উদ্ধৃতিটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে নেয়া।
[৪০] রওনক জাহান, আহমদ ছফা ইত্যাদি।
[৪১] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ : অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা; সরদার ফজলুল করিম। পৃষ্ঠা ১১৮-১১৯। বর্তমান লেখক সংলাপটিকে বাংলায় ভাবানুবাদ এবং তৃতীয় বাচনে রূপান্তর করেছেন।


 

অলঙ্করণ : মোস্তাফিজ কারিগর 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…