X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোর্হেসচর্চা প্রসঙ্গে রাজু আলাউদ্দিনের সঙ্গে কথাবার্তা

.
২৪ আগস্ট ২০১৬, ১২:২৩আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৬, ১৩:১২

এই মুহূর্তে বোর্হেসে শেক্সপিয়রের আদল ও আত্মার চিহ্নগুলো উদ্ধারের গোয়েন্দাগিরি করছি। দুজনকে পাশাপাশি পড়তে গিয়ে বহু জায়গায় বোর্হেসে কখনো সরাসরি, কখনো চোরাগুপ্তা উপস্থিতি দেখে মনে হলো- এ নিয়ে কিছু একটা করা যেতে পারে। ইংরেজি বা স্প্যানিশে এখনও পর্যন্ত এনিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোন লেখা আমার নজরে পরেনি। অথচ এ নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে


হোর্হে লুইস বোর্হেস কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের অনুবাদ ও চর্চা করে আসছেন। বাংলাদেশে স্প্যানিশ ভাষা থেকে সরাসরি যারা অনুবাদ করছেন তিনি তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। প্রয়াত লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দের ভাষায়, “উভয় বাংলায় তিনি আমাদের একমাত্র বোর্হেস-বিশেষজ্ঞ।” বোর্হেসের ১১৭তম জন্মদিনে বাংলা ট্রিবিউন-এর পক্ষ থেকে আমরা রাজু আলাউদ্দিনের মুখোমুখি হয়েছিলাম বোর্হেস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন নিয়ে। তার সাথে সাক্ষাতের পূর্ণ বিবরণটি এখানে প্রকাশ করা হলো।


বাংলা ট্রিবিউন : আপনি বোর্হেসকে আবিষ্কার করলেন কিভাবে?

রাজু আলাউদ্দিন : হ্যাঁ, আবিষ্কারই বটে, আমার ক্ষেত্রে তিনি আবিষ্কার। খুব সম্ভবত আশির দশকের মাঝামাঝি আমি তাকে আবিষ্কার করি কবি রফিক আজাদের একটি অনুবাদ পড়তে গিয়ে । রফিক ভাই বোর্হেসের ছোরা বলে একটি কবিতা অনুবাদ করেছিলেন। কবিতাটি পড়ে আমি ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। জড় ও ধাতব পদার্থের মধ্যে কিভাবে বোর্হেস প্রাণ সঞ্চার করছেন তা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যেমনটা দেখতে পাই- “পর্বত চাহিল হতে বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ”- তা মোটেই এরকম নয়। বোর্হেসের ‘ছোরা’ টি রীতিমত ঐতিহাসিক পটভূমিসহ আমাদের সামনে ক্ষুধার্ত ভঙ্গিতে এসে দাঁড়ায়। এই কবিতাটিই ছিল বোর্হেসকে আবিষ্কারের সূচনা। এরপর আমি ধীরে ধীরে তার গল্প ও প্রবন্ধের সাথে পরিচিত হই। এবং লক্ষ্য করে দেখলাম কবিতা দিয়ে তার সাথে আমার পরিচয় ও প্রেমের সূচনা হলেও পরবর্তীকালে আমি তার গল্প ও প্রবন্ধের অনুরাগী হয়ে পড়ি বেশি মাত্রায়।

বাংলা ট্রিবিউন : বোর্হেস কেন গুরুত্বপূর্ণ?
রাজু আলাউদ্দিন : বোর্হেস কেন গুরুত্বপূর্ণ তা এক কথায় বলা মুশকিল, কারণ তার লেখার গুরুত্ব বহুস্তরী, বহু ব্যঞ্জনায় তার লেখা দীপ্যমান। ১৯৩৫ সালে যখন  Historia universal de la infamia নামক গল্পের বইটি প্রকাশিত হয়, তখন গোটা স্প্যানিশ সাহিত্য ছিল স্থানিকতা ও প্রাদেশিকতার ঘেরাটোপে বন্দি। তার রচিত এই প্রথম গ্রন্থেই তিনি বিষয় ও মেজাজে ভিন্ন রীতির জন্ম দিয়েছিলেন। বিষয়ে এই কারণে যে গোটা স্প্যানিশ সাহিত্যে তার আগে আর কেউ বীর ও খলনায়ক, প্রাচ্য ও প্রতীচ্য, নৈতিক ও অনৈতিক, ন্যায় ও অন্যায়বোধের ধারণাকে কূটাভাস ও পরিহাসের ইশারায় আচ্ছাদিত রূপে উপস্থাপন করেননি। এর পরে রয়েছে তার শৈল্পিক মুন্সিয়ানা। সেটা এই গ্রন্থে যেমন আছে তেমনি তার পরবর্তী গ্রন্থে আছে আরও তীব্রভাবে। তিনি নতুন ধরনের গল্পের জন্য জন্ম দিয়েছিলেন নতুন এক নন্দনতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। যে-দৃষ্টিভঙ্গি কলাকুশলতার সুক্ষ্মতা ও নৈপুন্যকেই কেবল তুলে ধরেনি, তা একইসঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছে এর চূড়ান্ত রূপটি কেমন হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্তকেও। কেমন সেই দৃষ্টান্ত? এক. যথাযথতা, দুই. বর্ণনায় মিতব্যয়িতা, তিন. সীমার মধ্যে অসীমকে ঠেসে দেয়া, চার. স্থানিকতাকে সর্বোচ্চ আড়ালে রেখে সর্বজনীন আবেদনে একটি গল্পকে প্রতিষ্ঠা করা। পাঁচ. কথাসাহিত্য থেকে সব ধরনের অতিকথনকে তালাক দেয়া। আর এই তালাক দেয়ার দক্ষতায় তিনি এমনই এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন যে উপন্যাসের মতো জনপ্রিয় মাধ্যমকে তার কাছে বাহুল্য মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল এই মাধ্যমটি শৈল্পিক ত্রুটিসম্পন্ন। তার মতো এই অপ্রতিদ্বন্ধী শিল্পীর কাছে এটা মনে হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। এই কারণেই তিনি কোনদিন উপন্যাস লেখার প্রণোদনা অনুভব করেননি। কারণ এটি তার কাছে এক প্রগোলভ মাধ্যম বলে বিবেচিত হয়েছিল। ছয়. তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে একটি গল্পে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে একইসঙ্গে উপস্থাপন করা যায়, কীভাবে বীর ও খলনায়ককে একই দেহে অর্ধনারীশ্বর রূপে উপস্থাপন করা সম্ভব। কারণ সেভাবে উপস্থাপন করলেই ইতিহাস ও বাস্তবের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুগামী হওয়া সম্ভব। কারণ তার কাছে বীর ও খলনায়ক ছিল অভিন্ন। আপাতভাবে একথা স্ববিরোধী মনে হলেও তিনি গল্পে তা সম্ভব করে তুলেছিলেন তার অসামান্য কুশলতায়। সাত. তিনি গল্পকে নিয়ে গেলেন প্রবন্ধের কাছে (আর প্রবন্ধকে গল্পের কাছে) যাতে পাঠক বিভাজনের সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে মুক্ত হতে পারেন। তিনি ইতিহাস, গল্প, দর্শন ও মানুষের মনের গড়নকে এমন এক মিশ্র রূপ দিলেন যেখানে কোন কিছুই আর পরস্পর-বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে না। কারণ তিনি মানুষের বৈশিষ্ট্য ও স্বভাবকে সবচেয়ে নির্ভুলভাবে জানতেন। মানুষের সামগ্রিকতাকে তিনি দেখতে পেরেছিলেন। আট. প্রাচ্য বা ইউরোপের কোন লেখক নয়, তিনিই প্রথম দেখিয়ে দিলেন কীভাবে একজন লেখক প্রাচ্য, প্রতীচ্য ও লাতিন আমেরিকার জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে সমান স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারেন ও তার নিজের রচনায় তার ব্যবহার করতে পারেন। নয়. তিনিই আমাদেরকে শেখালেন- কোরান শরীফের উদাহরণ দিয়ে- কীভাবে স্থান ও কালের মোটাদাগের উল্লেখ না থাকলেও, কিংবা প্রায় উল্লেখ না থাকলেও একজন লেখকের সাহিত্য তার দেশ ও কালের চিহ্ন থেকে মুক্ত নয়। দশ. তিনি দেখালেন কিভাবে ইতিহাসের শূন্যতাকে কথাসাহিত্য দিয়ে পূরণ করতে হয়। আর এটা করতে গিয়ে আমাদেরকে শেখালেন ফিকশনকে ফ্যাক্টস-এ আর ফ্যাক্টসকে ফিকশন-এ রূপান্তরিত করতে হয়। এগার. তিনি দেখালেন ছেলে ভুলানো এইসব মুখরোচক গল্পই কেবল গল্প নয়, দর্শনও গল্প হতে পারে, তাই তিনি “দর্শনের সাহিত্যিক সম্ভাবনা” (Las Posibilidades literarias de la filosofia) খুঁজে পেয়েছিলেন ‘ট্রন, উকবার, অরবিস এন্ড টার্সিয়াস’ গল্পে। দেখুন, এরকম আরও একটি দুটি নয়, আরও শত সহস্র গুরুত্বের কথা বলা যায় বোর্হেস সম্পর্কে। তার গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার এই কথা যে অত্যুক্তি নয়, তার নিশ্চয়তা আপনারা খুঁজে পাবেন মারিও বার্গাস যোসার এই বক্তব্যে : “স্পানঞল ভাষায় তিনিই একমাত্র লেখক, যিনি অসংখ্য শব্দের মতোই অসংখ্য ধারণার অধিকারী। তিনি আমাদের কালের এক মহান লেখক।”
বাংলা ট্রিবিউন : বাংলা ভাষায়, বিশেষত, বাংলাদেশে বোর্হেসের চর্চা কেমন?
রাজু আলাউদ্দিন : বাংলাদেশে বোর্হেস চর্চা বলে কি আদৌ কিছু আছে? পশ্চিমের লেখকদের সম্পর্কে যতটা চর্চা হয়, তাদের কাউকে কাউকে নিয়ে লিটলম্যাগগুলো সংখ্যা বের করলেও বোর্হেস নিয়ে তেমন কিছু আমাদের বাংলাদেশে হতে দেখিনি এখনও পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে, তবে সেগুলোও যে খুব পাঠযোগ্য কিছু হয়েছে তা আমার মনে হয়নি। কিছুদিন আগেই দেখলাম মনোজ চাকলাদার নামে এক ভদ্রলোক বোর্হেসের সমগ্র গল্প প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই ভদ্রলোক বোর্হেসতো বোঝেনই না, এমনকি তিনি যে ভূমিকাটি লিখেছেন তাতে তথ্য ও পর্যবেক্ষণের বিভ্রান্তির পাশাপাশি দেখা যায় বাংলা ভাষাটিও তিনি ঠিকমতো জানেন না। আমাদের এখানে লাতিন আমেরিকার লেখক মার্কেস, মারিও বার্গাস যোসাকে নিয়ে সংখ্যা বের হলেও বোর্হেস নিয়ে তো আমি তেমন কিছু দেখিনি এখনও। তবে এর মানে এই নয়, বোর্হেস নিয়ে কেউ লিখছেন না। টুকটাক লিখেছেন কেউ কেউ। এবং মজার ব্যাপার হলো প্রবীন লেখকদের তুলনায় নবীণ লেখকরাই বোর্হেসের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ও উৎসাহী। এই নতুন প্রজন্ম- আমার বিশ্বাস- বোর্হেস চর্চার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন ভবিষ্যতে।
বাংলা ট্রিবিউন : অনুবাদে বোর্হেসকে কতটুকু পাওয়া যায়?
রাজু আলাউদ্দিন : অনুবাদে বোর্হেসকে কতটা পাওয়া যায়- এর জবাব এক কথায় দেয়া মুশকিল। প্রথম কথা হলো আমরা ইংরেজি যে-অনুবাদগুলোর সাথে পরিচিত তার সবই যে খুব বিশ্বস্ত অনুবাদ তা কিন্তু নয়। ফলে ইংরেজি যদি মূল থেকে খানিকটা বিচ্যুত হয়ে থাকে আর সেই বিচ্যুতিকে অনুসরণ করে যদি আমরা- ধরে নিচ্ছি ইংরেজি অনুবাদটির বিশ্বস্ত অনুবাদই করা হলো- তারপরেও সেটি বোর্হেসকে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করবে তা নিয়ে আমার সংশয় থেকেই যাবে। আপনাকে একটা উদাহরণ দিলেই আপনি বুঝতে পারবেন। ধরা যাক, বোর্হেসের Dreamtigers থেকে অনূদিত এই অংশটুকু : Every hundred paces a tower cleft the air, to the eye their color was identical, yet the first of all was yellow, and the last, scarlet, so delicate were the gradations and so long the series.  (Dreamtigers, Jorge Luis Borges, translated by Mildred Boyer and Harold Morland , Texas Press, 1991, p. 44)

এটি বোর্হেসের একটি প্যারাবলের ছোট্ট একটি অংশ। প্যারাবলটির নাম প্যারাবল অব দ্য প্যালেস। লক্ষ্য করে দেখুন, এই ছোট্ট অংশটিতে বোর্হেস অসামান্য দক্ষতায় প্রাসাদের অভ্যন্তরে এক অসীমের ব্যঞ্জনা তৈরি করেছেন মাত্র একটি বাক্যে। প্রায় পরস্পরবিরোধী ব্যঞ্জনা তৈরি করেছেন প্রথম এবং শেষের টাওয়ারের রংয়ের পার্থক্য নির্দেশ করে, যদিও- তিনি বলেছেন- সাদা চোখে এগুলোকে একই রংয়ের মনে হচ্ছে। কথা হলো, এই অংশটি যদি কোন অনুবাদক বাদ দিয়ে যান গুরুত্বহীন ভেবে কিংবা সংকুচিত করে দুই তিন শব্দে অনুবাদ করেন তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে বোর্হেসের অসামান্য শিল্পকুশলতা থেকে বঞ্চিত হবেন। ভুলে গেলে চলবে না যে বোর্হেস এতই মিতভাষী যে তার কোন লেখাতেই অতিরিক্ত বলে কিছু নেই, তার প্রতিটি শব্দ অত্যন্ত সুনির্বাচিত। উদাহরণ দিয়ে আমি কেবল এ কথাই বলতে চাইছি যে বোর্হেস অনুবাদ করতে গেলে খুবই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তা না হলে বোর্হেসকে পাবেন না, পাবেন তার কঙ্কাল। সুতরাং অনুবাদের সময় সতর্ক থাকলে বোর্হেসকে অনেকটাই পাওয়া সম্ভব। অনানুবাদযোগ্য সাংস্কৃতিক ভিন্নতা ও ভাষিক স্বাতন্ত্র্যের যেটুকু হারাবার তাতো হারাবেই। তবে তারপরেও এসব হারানোর পরও যা থাকবে তা বোর্হেসের শক্তি ও অনন্যতা বুঝবার জন্য যথেষ্ট।


বাংলা ট্রিবিউন : বোর্হেস উপন্যাস লিখলেন না দীর্ঘ ন্যারেটিভের ভয়ে- নাকি তিনি উপন্যাসের বিরোধী?
রাজু আলাউদ্দিন : কিসের ন্যারেটিভের ভয়? ওনার মতো দুঃসাহসী লেখক কজন আছেন এই ভূমণ্ডলে? না, না, ন্যারেটিভের ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। উনিই সেই দুঃসাহসী শিল্পী যিনি উপন্যাসের মতো জনপ্রিয় ও প্রবল প্রতাপশালী শিল্পমাধ্যমকে শিথিল বলে অভিহিত করতে পারেন। এবং এর পেছনে তার যুক্তিও ছিল। তিনি বলতেন, Why take five hundred pages to develop an idea whose oral demonstration fits into a few minutes? তিনি নিজে উপন্যাস লেখার বিরুদ্ধে ছিলেন- একথা অনেকেই জানেন, কিন্তু কেন ছিলেন তা অনেকেই ঠিকমতো জানেন না । ঘটনা হলো তিনি যে-ধরনের নিখুঁত শিল্পী ছিলেন, যিনি সসীমের মধ্যে অসীমকে পুড়ে দিতে চাইতেন, যিনি বিশ্বাস করতেন দ্রুততায়, যথাযথতায়, সুক্ষ্মতায়, মিতব্যয়িতায়, তার পক্ষে উপন্যাস লেখা অসম্ভব। ঠিক এই কারণেই তিনি উপন্যাসের বিরোধী ছিলেন। কিংবা ঠিক বিরোধী না বলে ঔপন্যাসিক হুয়ান হোসে সায়েরের ভাষায় বলা যায়, “বিশ শতকের উপন্যাসগুলো যদি উপন্যাসের বৈশিষ্টসম্পন্ন না হয়ে থাকে, আর বোর্হেস যদি উপন্যাস না লিখে থাকেন, তাহলে এর কারণ হচ্ছে বোর্হেস মনে করেন, উপন্যাস না লেখার মধ্যেই নিহিত রয়েছে বিশ শতকের কোন লেখকের ঔপন্যাসিক হওয়ার একমাত্র উপায়। বোর্হেসের সব রচনা এ ধারণাকেই তুলে ধরেছে।”
বাংলা ট্রিবিউন : এখন বোর্হেসকে নিয়ে কী কাজ করছেন?
রাজু আলাউদ্দিন : এই মুহূর্তে বোর্হেসে শেক্সপিয়রের আদল ও আত্মার চিহ্নগুলো উদ্ধারের গোয়েন্দাগিরি করছি। দুজনকে পাশাপাশি পড়তে গিয়ে বহু জায়গায় বোর্হেসে কখনো সরাসরি, কখনো চোরাগুপ্তা উপস্থিতি দেখে মনে হলো- এ নিয়ে কিছু একটা করা যেতে পারে। ইংরেজি বা স্প্যানিশে এখনও পর্যন্ত এনিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোন লেখা আমার নজরে পরেনি। অথচ এ নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে।
বাংলা ট্রিবিউন : ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত আপনার বোর্হেস সিরিজ কেমন সাড়া ফেলেছে?
রাজু আলাউদ্দিন : সাড়া ফেলেছে কিনা জানি না। তবে পরিচিত লেখক পাঠকদের অনেকেই খুশী হয়েছেন বোর্হেসের এই প্রকাশে। কাজটি তারা পছন্দ করেছেন। মনে পরে আবদুল মান্নান সৈয়দ খুবই খুশী হয়েছিলেন। সম্ভবত প্রকাশের বছর দুয়েকের মাথায় গল্পের খণ্ডটি নিঃশেষ হয়ে গেছে। অন্য খণ্ডগুলোও এতদিনে নিঃশেষ হওয়ার পথে। আমি তো বলবো বোর্হেসের মতো এত সিরিয়াস লেখকের বই দুই বছরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া- এটাতো বিরাট ব্যাপার।
বাংলা ট্রিবিউন : বোর্হেসের কাছ থেকে কি বাঙালি লেখকদের শেখার কিছু আছে? থাকলে সেটা কি?
রাজু আলাউদ্দিন : শুধু আমাদের না, পৃথিবীর সব দেশের সব ভাষার লেখকদেরই বহু কিছু শেখার আছে। বললে অত্যুক্তি মনে হবে, কিন্তু আসলেই সত্যি যে আর কোন লেখকের কাছ থেকে একই সাথে এত কিছু শেখা যায় কিনা সন্দেহ। বোর্হেস কেন গুরুত্বপূর্ণ- আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষণীয় বিষয়ের কিছু কিছু উদাহরণ সেখানে পাবেন। এছাড়াও কল্পনাশক্তি ও বহুসংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হওয়ার উদাহরণতো আছেই। তিনি আমাদেরকে লোকাল কালারের উদ্ভট দুশ্চিন্তা থেকেও মুক্ত করেন এই বলে যে-কালে ও স্থানে বসে লিখবেন তার ছায়া অনিবার্যভাবে আপনার লেখায় পড়বে, অতএব এনিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই । এবং ওটা আলাদা গুরুত্ব দিয়ে একটা গৌণ জিনিসকে মুখ্য সমস্যা হিসেবে দেখারও দরকার নেই। অসংখ্য আইডিয়ার এক পাওয়ার হাউজ হচ্ছেন বোর্হেস। তার কাছ থেকে শেখার এত কিছু আছে যে তা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সবটা বলা সম্ভবও নয়।

বাংলা ট্রিবিউন : সময় দেবার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

রাজু আলাউদ্দিন : আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!