X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ কাদরী আমার বন্ধু : আল মাহমুদ

.
২৯ আগস্ট ২০১৬, ০৮:২৭আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ১১:৫২

শহীদ কাদরী

শহীদ কাদরী আমার বন্ধু : আল মাহমুদ
আল মাহমুদ শহীদ কাদরী আমার বন্ধু। সে যখন নিউ ইয়র্ক থেকে ফোন করতো, বলতো, ‘আমি শহীদ।’ আর হা হা হা করে হাসতো। তাঁর সেই গাঢ় স্বর আমার এখনও মনে আছে। আমি তো কানে শুনতে পাই না। তাই দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে কথা হয় না। তাতেও আমাদের বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। বাংলাদেশে সে অনেক কষ্ট করেছে। তখন তাঁর পাশে দাঁড়াবার কেউ ছিল না। আমরা হকারীও করেছি। বাংলা কবিতায় তিনি তাঁর সাক্ষর রেখেছেন।পঞ্চাশের কবি হলাম আমরা। আমাদের গোড়ার দিকে আমরা ত্রিশের কবিদের খুব পছন্দ করতাম, মানে আপন মনে করতাম। কিন্তু পঞ্চাশ দশকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে কবিতার ধারাটা, আধুনিক কবিতার ধারাটা বদলে ফেলতে হবে। তার প্রমাণ আমাদের কবিতা। এই সংগ্রামে শহীদ কাদরী সামিল ছিলেন।
শহীদের অনেক ব্যক্তিগত বিষয় আছে, যা তোমাদের আমি বলতে পারবো না। তিনি আমাকে বিশ্বাস করেন। বন্ধু মনে করেন।

শ্রুতিলিখন জাহিদ সোহাগ


 


আমি আমার বন্ধুকে হারিয়েছি : আসাদ চৌধুরী

আসাদ চৌধুরী আমার বন্ধু শহীদ কাদরী। তাঁর জীবনযাপন প্রণালীই ছিল একটু ভিন্ন রকমের। তাঁর আধুনিক মানসিকতা, কাব্য ভাষা আমাদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করতো। আমরা যারা ষাটের দশকের দিকে বড় হয়েছি, লেখালিখি করেছি, সেই সময় শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, এবং শহীদ কাদরী আমাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখতো। শহীদ কাদরী তাঁর কবিতায় পশ্চিমা ভঙ্গিমার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিষয়গুলোকেও ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকারভাবে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর কবিতা সোচ্চার ভূমিকা রেখেছে। ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ বের হবার পর আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, গণহত্যার বদলে গণচুম্বনকে প্রধান্য দিচ্ছেন তিনি। ফ্যান্টাসি আর অ্যাবসাডিটি এই বিষয়গুলোকে তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরলেন একের পর এক। এটা তখনকার দিনে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল বটে।
ছড়াকে কীভাবে কবিতা করতে হয় সে বিষয়ে দক্ষ ছিলেন শহীদ কাদরী। কবিতাকে কী করে আধুনিক পাঠকের কাছে উপস্থিত করতে হয় এ কৌশল শহীদ কাদরীর কাছে ছিল সহজাত ও মামুলি ব্যাপার।তিনি আজ নেই। তাঁর কাছে আমরা ঋণী। আমি আমার বন্ধুকে হারিয়েছি। বেদনার এই মুহূর্তে আমি শুধু এটুকু জোরের সঙ্গে বলতে চাই : বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য হারাল একজন সৎ ও মহৎ কবিকে।

শ্রুতিলিখন : মিলন আশরাফ

 


 

শহীদ কাদরীর কবিতা

বৃষ্টি, বৃষ্টি

সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো। ঘর-ফেরা রঙিন সন্ধ্যার ভীড়ে
যারা তন্দ্রালস দিগ্বিদিক ছুটলো, চৌদিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে লাল আরশোলার মত যেন বা মড়কে
শহর উজাড় হবে,– বলে গেল কেউ– শহরের
পরিচিত ঘণ্টা নেড়ে খুব ঠাণ্ডা এক ভয়াল গলায়

এবং হঠাৎ
সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে
বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম!
বজ্র-শিলাসহ বৃষ্টি, বৃষ্টি : শ্রুতিকে বধির ক’রে
গর্জে ওঠে যেন অবিরল করাত-কলের চাকা,
লক্ষ লেদ-মেশিনের আর্ত অফুরন্ত আবর্তন!

নামলো সন্ধ্যার সঙ্গে অপ্রসন্ন বিপন্ন বিদ্যুৎ
মেঘ, জল, হাওয়া,–
হাওয়া, ময়ূরের মতো তার বর্ণালী চিৎকার,
কী বিপদগ্রস্ত ঘর-দোর,
ডানা মেলে দিতে চায় জানালা-কপাট
নড়ে ওঠে টিরোনসিরসের মতন যেন প্রাচীন এ-বাড়ি!
জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় জনারণ্য, শহরের জানু
আর চকচকে ঝলমলে বেসামাল এভিনিউ

এই সাঁঝে, প্রলয় হাওয়ার এই সাঁঝে
(হাওয়া যেন ইস্রাফিলের ওঁ)
বৃষ্টি পড়ে মোটরের বনেটে টেরচা,
ভেতরে নিস্তব্ধ যাত্রী, মাথা নীচু
ত্রাস আর উৎকণ্ঠায় হঠাৎ চমকে
দ্যাখে,– জল
অবিরল
জল, জল, জল
তীব্র, হিংস্র
খল,
আর ইচ্ছায় কি অনিচ্ছায় শোনে
ক্রন্দন, ক্রন্দন
নিজস্ব হৃৎপিণ্ডে আর অদ্ভুত উড়োনচণ্ডী এই
বর্ষার ঊষর বন্দনায়

রাজত্ব, রাজত্ব শুধু আজ রাতে, রাজপথে-পথে
বাউণ্ডুলে আর লক্ষ্মীছাড়াদের, উন্মূল, উদ্বাস্তু
বালকের, আজীবন ভিক্ষুকের, চোর আর অর্ধ-উন্মাদের
বৃষ্টিতে রাজত্ব আজ। রাজস্ব আদায় করে যারা,
চিরকাল গুণে নিয়ে যায়, তারা সব অসহায়
পালিয়েছে ভয়ে।

বন্দনা ধরেছে,– গান গাইছে সহর্ষে
উৎফুল্ল আঁধার প্রেক্ষাগৃহ আর দেয়ালের মাতাল প্ল্যাকার্ড,
বাৎকা-চোরা টেলিফোন-পোল, দোল খাচ্ছে ওই উঁচু
শিখরে আসীন, উড়ে-আসা বুড়োসুড়ো পুরোন সাইনবোর্ড
তাল দিচ্ছে শহরের বেশুমার খড়খড়ি
কেননা সিপাই, সান্ত্রী আর রাজস্ব আদায়কারী ছিল যারা,
পালিয়েছে ভয়ে।

পালিয়েছে, মহাজ্ঞানী, মহাজন, মোসাহেবসহ
অন্তর্হিত,
বৃষ্টির বিপুল জলে ভ্রমণ-পথের চিহ্ন
ধুয়ে গেছে, মুছে গেছে
কেবল করুণ ক’টা
বিমর্ষ স্মৃতির ভার নিয়ে সহর্ষে সদলবলে
বয়ে চলে জল পৌরসমিতির মিছিলের মতো
নর্দমার ফোয়ারার দিকে,–

ভেসে যায় ঘুঙুরের মতো বেজে সিগারেট-টিন
ভাঙা কাচ, সন্ধ্যার পত্রিকা আর রঙিন বেলুন
মসৃণ সিল্কের স্কার্ফ, ছেঁড়া তার, খাম, নীল চিঠি
লন্ড্রির হলুদ বিল, প্রেসক্রিপশন, শাদা বাক্সে ওষুধের
সৌখীন শার্টের ছিন্ন বোতাম ইত্যাদি সভ্যতার
ভবিতব্যহীন নানাস্মৃতি আর রঙবেরঙের দিনগুলি

এইক্ষণে আঁধার শহরে প্রভু, বর্ষায়, বিদ্যুতে
নগ্নপায়ে ছেৎড়া পাৎলুনে একাকী
হাওয়ায় পালের মতো শার্টের ভেতরে
ঝকঝকে, সদ্য, নতুন নৌকার মতো একমাত্র আমি,
আমার নিঃসঙ্গে তথা বিপর্যস্ত রক্তেমাংসে
নূহের উদ্দাম রাগী গরগরে গলা আত্মা জ্বলে
কিন্তু সাড়া নেই জনপ্রাণীর অথচ
জলোচ্ছ্বাসে নিঃশ্বাসের স্বর, বাতাসে চিৎকার,
কোন আগ্রহে সম্পন্ন হয়ে, কোন শহরের দিকে
জলের আহ্লাদে আমি একা ভেসে যাবো?

 

বোধ

শালিক নাচে টেলিগ্রাফের তারে,
কাঁঠালগাছের হাতের মাপের পাতা
পুকুর পাড়ে ঝোপের ওপর আলোর হেলাফেলা
এই এলো আশ্বিন,
আমার শূন্য হলো দিন
কেন শূন্য হলো দিন?

মহাশ্বেতা মেঘের ধারে-ধারে
আকাশ আপন ইন্দ্রনীলের ঝলক পাঠায় কাকে?
ছাদে-ছাদে বাতাস ভাঙে রাঙা বৌ-এর খোঁপা
এই এলো আশ্বিন,
আমার শূন্য হলো দিন
কেন শূন্য হলো দিন?

শিউলি কবে ঝরেছিল কাদের আঙিনায়
নওল-কিশোর ছেলেবেলার গন্ধ মনে আছে?
তরুণ হাতের বিলি করা নিষিদ্ধ সব ইস্তেহারের মত

ব্যতিব্যস্ত মস্তো শহর জুড়ে
এই এলো আশ্বিন,
আমার শূন্য হলো দিন
কেন শূন্য হলো দিন?

 

সঙ্গতি
(অমিয় চক্রবর্তী, শ্রদ্ধাস্পদেষু)

বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ

প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...

একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে
শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত
শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে

প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...

ব্যারাকে-ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ
ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই,
গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ
মেয়েলি গানের- তোমরা দু'জন একঘরে পাবে ঠাঁই

প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...



কোনো
ক্রন্দন তৈরি হয় না

একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,
রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো
হেলায়-ফেলায় পড়ে থাকে
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না;

কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,
মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে
একটা সবুজ টিয়ে,
ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে
হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির
এবং পাখির প্রস্রাব;
সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার করে নিপুণ ফিরে আসে
পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে
একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়
সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে
বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার
প্রথম সহজ রঙ হেলায়-ফেলায়

কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না


স্মৃতি : কৈশোরিক

অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন
রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর
যেন তার নৌকা- দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম
ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর
যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা
জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে
অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো,
গলা পিচে তরল বুদ্বুদে ছলছল নত্ররাজি,
তার ওপর কোমল পায়ের ছাপ,- চলে গেছি
শব্দহীন ঠাকুরমার ঝুলির ভেতর।
দেয়ালে ছায়ার নাচ
সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই
গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়-পাওয়া রাত্রিগুলোয়
যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের
সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে
শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক
নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই
মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয়


মাংস, মাংস, মাংস...

আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপ
কখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায়
ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায়
সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়।
শৈশবও ছিলো না লাল। তবে জানি,
দেখেছিও, ছুরির উজ্জ্বলতা থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা

তবে হাত রাখবো ছুরির বাঁটে? সবুজ সতেজ-
রূপালি রেকাবে রাখা পানের নিপুণ কোনো খিলি নয়,
মাংস, মাংস, মাংস... মাংসের ভেতরে শুধু
দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন
খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি...

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া