X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুম রহমানের ‘হয়তো প্রেমের গল্প'

অরণি হক
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৭:০৩আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৭:১৫

বইয়ের প্রচ্ছদ কলকাতায় ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মুম রহমানের ভিন্ন ধরনের একটি বই ‘হয়তো প্রেমের গল্প’―ভিন্ন ধরনের এজন্য যে, গল্পগুলো গল্পের চিরাচরিত চেহারায় আসেনি; একে কাব্যগল্প বা কাব্যনাটক বললেও ক্ষতি নেই। লেখক অবশ্য এই লেখাগুলোকে ‘গল্প’ বলে পাঠককে মানাতে জবরদস্তিও করছেন না। ভূমিকায় তা সাফ সাফ বলেও দিয়েছেন। আসুন তার একটি গল্প পড়ার আগে বরং ভূমিকায় চোখ রাখি―  
But I love your feet
only because they walked
upon the earth and upon
the wind and upon the waters,
until they found me.
―Pablo Neruda
এই বইয়ের সবগুলো গল্পই প্রেমকেন্দ্রিক। সেই প্রেম কখনো পরাবাস্তব, কখনো পৌরাণিক, কখনো পরকীয়া, কখনো সমকালীন। যখন যে রকমই হোক প্রেম তো প্রেমই। মিলন-বিরহ, অনুরাগ-বিরাগ―দুনিয়াময় প্রেম। সেই প্রেমেরই দুয়েকটি খণ্ড ধরার চেষ্টায় এই গল্পকাব্য বয়ান। এইগুলো গল্প না কবিতা, জানি না। কাব্যনাটকের মতো কাব্যগল্প/গল্পকাব্য বলা যেতে পারে কি? আচ্ছা সেই সব দায় সমালোচক কিংবা পাঠকের হাতে থাক। আমি শুধু এটুকু জানিয়ে রাখি এ নেহাতই একটা নিরীক্ষা। আমি কিছু গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। লিখতে লিখতে দেখি তার মধ্যে কবিতার সুর ঢুকে গেছে কেমন করে। একটা-দুটাতে এমনিতে ঢুকে গেলো। তারপর মনে হলো বেশ তো গল্প-কবিতার এই মিলনটা উপভোগ করা যাক। সে মিলনেরই প্রকাশ এই বইয়ের লেখাগুলি।”

বইটি প্রকাশ করেছে অনার্য প্রকাশনী। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সমরেশ মজুমদার, মন্দাক্রান্তা সেন, মাজাহারুল ইসলাম, সামসুজ্জামান খান প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রসদনে বিকাল ৫টায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হবে। বইতে মোট ৮টি গল্প রয়েছে: হয়তো প্রেমের গল্প, ঘুম, ভৌতিক ভালবাসা, বিরজা, বৈশাখ তুই থাক, স্বামী ও প্রেমিক, নরকে কবি ও ঘাতক, গদ্য পদ্যের প্রেম পিরিতি।


হয়তো প্রেমের গল্প

 

রূপক:

কেন এতো মায়া বাড়াবে?
আমার মাথা আমার মতো
ব্যথা করে যাবে?
তুমি কে? তুমি কেন?
কেন তুই তবে
আমার মাথায় হাত বুলালি?
কে তুই আমার কপালে চুমু খেলি?
নারী কি বোঝে না
কোলে শুইয়ে
পুরুষের কপালে চুমু খেলে
বুক এসে মুখে লাগে
শিমু কি জানে না
নারীর বুকের শব্দ আর ঘ্রাণ
এড়াবার মতো পুরষ
আজকের দুনিয়াতে জীবিত নেই আর?


শিমু:

না, পুরুষরা এমন হয় না তো!
পুরুষরা বুক দেখে,
ঠোঁট দেখে
মাপে শরীর,
চল্লিশ পেরোনো পুরুষের চোখে খালি খিদা
আর এই রূপকটা কমপ্লিট অপদার্থ
এন্টিক পিস!
এখনও সে মন ছুঁতে চায়
মাইগ্রেনে মাথা ছিঁড়ে যায়
বমি শুরু হয়,
আলো নিভিয়ে দেয়
অফিসের সোফায় আঁধ শোয়া হয়ে
ডাঙায় তোলা মাছের মতো নিঃশ্বাস নিতে থাকে
তবু বলে, ‘ইটস ওকে, আই উল বি অল রাইট’
‘আপনার কি খুব বেশি খারাপ লাগছে
আমি কি মাথাটা টিপে দিবো,
আমি খুব ভালো মাথা বানাতে পারি,
দেই।’
‘না, ঠিক আছে।’
কোথায় কী ঠিক আছে!
স্নেহাশীষ আমার দিকে ফিরেও তাকায় না
সময় নেই ওর হাতে
ব্যস্ত ডাক্তার
ছাত্রী, নার্স,
কখনোবা আরোগ্য পাওয়া সুন্দরী রোগি
সেমিনার, ক্যারিয়ার
কতো কাজ তার
দুরে দুরে থাকে—
আমি থাকি একা।
সেই যৌবনের রাগ
সেই যে পেটে লাথি দিয়েছিলো
সেই থেকে আমি পরিত্যক্ত
নিজের মধ্যে যে নারী আরেকটা মানুষ ধারণ করতে পারে না
সে কেবল পুরনো জাহাজের মতোই একা পরিত্যক্ত
পড়ে আছি অব্যবহৃত বন্দরে
যাত্রীর আনাগোনা নেই
পাখিরাও আসে না মাস্তুলে
নয় বছর
নয় বছর হয়ে গেলো
কেউ আর এই হাতে হাত রাখে না
ঊরুতে হাত রাখতে চায়
বুকে তাকিয়ে থাকতে চায়
না রে,
পোড়া চোখের অন্তরে তাকায় না
তুমি
শুধু ভেতরের রঙ ওঠা মনের ক্যানভাসে ছবি আঁতে চাও
আজব পুরুষ রূপক
তবে বলো কী তোমার ব্যথা
এই ভাঙা জাহাজে জীবন সাজাবে?
বলো তবে, মুখ ফুঁটে বলো
কী চাও তুমি
কী রাঁধবো আমার উনুনে
রূপক তুমি কোন হন্তারক নও
অহংকারে প্রজ্বলিত মোমবাতি নও
তবে এতো ব্যথা নিয়ে
মুখ বুজে কেন থাকো
শুধু কি মাইগ্রেনের ব্যথা
বউ ছেড়ে গেছে তারকা হওয়ার লোভে
দুটো ব্লাব নষ্ট নিয়ে জন্ম নেয়া সন্তান
কয়েকদিন পৃথিবীতে থেকে চলে গেলো
নিজে বাঁচলো তোমাদেরও বাঁচালো
কিন্তু রূপক আমি কেন পর?
কাগজ-পত্র সই করিনি
স্বাক্ষী কালেমা নেই
দেনমোহর ধার্য করিনি
অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তরুন তোমাকে
আজ কি তাই কোলে মাথা রাখতে নেই?
আজ কি মাইগ্রেনের বাইরে আর কোন ব্যথা নেই?
আজ কি মাথা টিপতে গিয়ে
কপালে একটু চুমু খেলে আমি অসতী হয়ে যাবো?
আজ কি তোমার ঠোঁট ফুলিয়ে দিলে পরকীয়া হয়ে যাবে?
কেন আমাকে ক্ষমা করতে পারো না রূপক?

রূপক:

যা আমার নয়
তা আমি কী করে নেই?
যা আমার কাছে ছুটে আসে
তাকে কি করে ফেলে দেই?
শিমু তুমি এখনও শিশু
বিরাট একটা শিশু
পাগলামীর বয়সটা তো আমাদের নেই
দূরবীক্ষণ অনুবীক্ষণ লাগে না
এই তো দেখো খালি চোখে
বয়সের ভার পড়েছে শরীরে
চোখের কালি চুলে পাক
উঁকি দিচ্ছে বেয়াড়া টাক
এখন কি চাইলে কাঁধে মাথা রাখতে পারি
এখন কি টেনে নিলেই বুকে মুখ লুকাতে পারি?
শিমু, তুই এখন আর কলেজে পড়িস না
জিদ করে মাথার সব চুল ফেলে দিতে পারিস না
আমি বেশ আছি আমার চিড়িয়াখানায়
আমাকে থাকতে দে আমার খাঁচায়
‘আপন মনে আমায় থাকতে দে’
আমি ছিটকে পড়লে আর টিকতে পারবো না
অফিস-টফিস-মফিজ নিয়ে বেশ আছি
কোনভাবে গুছিয়ে নিয়েছি একতিল জীবন
তুই কেন মায়া দেখাস?
নাকি এটা কোন প্রেম?
প্রেম সে তো যৌবনের এক তরফা টেলিফোন
রিং বেজে যায় ওপারে সাড়া নেই
মিস কল মিস কল
আজ কেন এতোদিনের পুরনো নাম্বারে খোঁজ করা
জীবন বদলে গেছে
হারিয়ে গেছে পুরনো নাম্বার
তুই থাক তোর মতো
আমি বেশ আছি নিজেকে ভুলে
ডাকিস না পিছনে আর
রং রুটে গাড়ি চালাই না আমি।


শিমু:

তুই কোন গ্রহের মাল
শালা বাতিল পলিথিন
এই দেশে তুই নীতিন গান ধরিস
ফুটপাথে চায়ের দোকান
ফার্নিচার আলমারি
ফুটপাথেও মোটর সাইকেল চলে
মানুষ ও কুকুর লাইট পোস্টে দাঁড়ায় বেহায়ার মতো
এই দেশে গণজাগরণ আছে
আছে গণধর্ষণও আজও
আর তুই খালি নীতিবাগিশ হয়ে থাকবি?
পলাতক
কাপুরুষ
আস্ত একটা উজবুক...
এক রক্তি সাহস ছিলো না তো
টান দিয়ে ওড়না ফেলে দিতে
ঘরের কোণে জাপটে ধরে চুমু খেলে
জাত যেতো তোর
বুকের মাঝখানে পাউরুটি কাটার ছুরি ধরে বলতি একবার
খবরদার আর কাউকে বিয়ে করলে লাশ হয়ে যাবি
বলিসনি তো একবারও
ভদ্রলোক?
ন্যাকা
যত্তোসব!
জেনে রাখ
ঘৃণা করি আমি
এক কেজি ভালবাসার সাথে
দেড়কেজি ঘৃণা করি তোকে
স্নেহাশীষ আমাকে ছেড়ে যায়
ছুটে যায় ছুঁতে যায়
যতো সব রঙচঙা কার্নিশ
আর তুই আকামের ঢেকি
ঘরে বসে বসে
অহেতুক মাকড়শার জাল বুনিস
ভালবাসি তোকে আমি
আমার গোপন লজ্জা আর
বেহায়াপানাসহ ভালবাসি তোকে
আমার ইচ্ছা তোকে ফিরিয়ে দিয়েছি আমি
আমার ইচ্ছা তোকে টেনে নেবো আমি
তুই আমার খেলনা
অথবা ফেলনা
যখন যা খুশি
তুই আমার
এক্ষণ এইখানে নতজানু হয়ে পায়ে চুমু খা
বল, তোমার পায়ের নিচে
আমার হীরার খনি
বল...
সাহস থাকে তো বল
আমি ভালবাসি।


রূপক:

এইভাবে হয় না রে...
গলার জোরে গান হয় না
গায়ের জোরে যদি টেনে নেই তোকে
হেচকা টানে যদি ভালবাসা পাড়তে চাই আকশিতে
যেন পঙ্গু আর অকম্মাই হয়ে পড়ে থাকি এইখানে
ভাল
আমার মাকড়শার জাল ভাল
আমার নীরব গোপন ভালবাসা ভালো
আমার অন্ধকারে ছুঁয়ে ছুয়েঁ দেখা কাল্পনিক মুখ ভালো
তোর ছুঁড়ে দেয়া রাগ অভিমান ঘৃণা
আমি বয়ামে বয়ামে সাজিয়ে রাখি
গোপন সিন্দুকে
আমি তো জানি
ভালবাসবি বলেই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলি তুই
হয়তো প্রেমের গল্প নেই আমাদের
হয়তো মিলনও নেই, বিরহ নেই
হয়তো ছোটগল্পের মতো শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে
প্রেম
তবু তোর বুকের কস্তুরি ঘ্রাণ
আমার বালিশের কাভারে ঢাকা আছে।
শিমু, তুই বাড়ি যা
এ শহরে অনেক ট্রাফিক
গাড়ি পেতে কষ্ট হবে তোর
আমার কিচ্ছু হবে না
অন্ধকারে একটু শুয়ে থাকলে ব্যথা সেরে যাবে
কিছু ব্যথা অন্ধকারেই সারে।


শিমু:
আল্লার কিরা
এরপর ডাকলেও আসবো না কোনদিন।


রূপক:

জানি।
কারো ডাকা না-ডাকায় তুই আসিস না।
এই জন্যই তো তোকেই আমি প্রেম বলি।
তুই তোর ইচ্ছায় আসিস
আর তোর ইচ্ছাতেই যাস।
তুই তো আর কারো চাকরী করিস না
তুই কেবল অকস্মাৎ বৃষ্টি ও বজ্রপাত।
আল্লার কিরা
ভাল থাকিস
চিরকাল।

সম্পর্কিত
ভুটানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
২৫০ শিশু লিখলো ‘আমাদের জাতির পিতা, আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা’
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী