X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নভেরা আহমেদের অপূর্ব আধুনিকতা

সাখাওয়াত টিপু
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:৩৭আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:০৬

নভেরা আহমেদ
Rhetoric and Dialectic alone of all the Arts prove opposites; for both are equally concerned with them.

-The art of rhetoric : Aristotle
বাংলাদেশের শিল্পালয়ে ভাস্কর নভেরা আহমেদ এক রহস্যের নাম। জীবদ্দশায় তার শিল্পকর্ম নিয়ে খুব লেখালেখি হয়েছে, তাও নয়। শিল্পী হিসেবে স্রেফ মুখে মুখে বেঁচে আছেন তিনি। ফলে তাকে নিয়ে বাজারে নানা রকমের ‘মিথ’ চালু আছে। এই মিথ চালু হয়েছে তিন কারণে। প্রথমত, পশ্চাদপদ সমাজ ব্যবস্থার বাইরে তার বোহেমিয়ান আর মুক্ত জীবন-যাপন। প্রচলিত প্রথাকে উপেক্ষা করে পশ্চিমাধাচের আধুনিক জীবনাচরণে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। যে সময়ে নভেরা আহমেদের শিল্পের গতি-প্রকৃতির উন্মেষ ঘটেছিল, সেই সময়ে সত্যি এমন রক্ষণশীল সমাজে একজন বাঙালি নারীর ভাস্কর্য চর্চা দুরূহ ব্যাপার ছিল। দ্বিতীয়ত, জীবনের একটা সময় নিভৃতে প্রবাস জীবন গ্রহণ। বিশেষত, প্রবাসকালীন নিজের পিতৃভূমি আর নিজের শিল্প বিস্তারের অঙ্গনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। তৃতীয় কারণ রাজনৈতিক। রাজনৈতিক কারণ এই- ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে পদক গ্রহণ না করা। পুরস্কার গ্রহণ না করা এক ধরনের সামাজিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ফলে তার সম্পর্কে নানা ধরনের ‘মিথ’ তৈরি হয়েছে। বস্তুত প্রবাসেই এক নির্মোহ জীবনের আবডালে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন তিনি। আড়াল বললাম এই কারণে- ভাস্কর্য শিল্পের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনই কর্মের দায়। সেই ক্ষেত্রে নভেরার নিজের কর্মের প্রতিও দরদের কমতি ছিল বলা যায়। না হলে তিনি শিল্পের দায় থেকে এত উন্নাসিক থাকতে পারতেন না। ১৯৯৭ সালের ১৭ অক্টোবরের সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ইকতিয়ার চৌধুরী কলামে জানান, দেখা হওয়ার পর নভেরা বাংলায় কথা বলতেন না। এমন কি, বাংলা লিখতেও পারেন না তিনি। বস্তুত প্রবাসী বাঙালিদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখেন। লেখক মেহবুব আহমেদ বলেছেন, ‘আর্ট কলেজে চাকরির সুযোগ থাকলে হয়তো নভেরা ঢাকায় স্থিত হতে পারতেন।’ তবে নভেরা এসব বিষয়ে কোন কিছু না বলায় এমন নানা অনুমাননির্ভর রহস্যময়তার সৃষ্টি হয়েছে।    
সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হল- নভেরাকে নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণার জন্য আর্কাইভ না থাকা। সবেধন নীলমণি দুটো উপাত্ত বাজারে মেলে। লেখক আবুল হাসনাত সম্পাদিত সংকলন ‘নভেরা আহমেদ’ আর বেঙ্গল ফাউন্ডেশন  প্রযোজিত ‘শিল্পী নভোরা আহমেদের সৃজন ভুবন নহন্যতে’। আর শিল্পী জীবিতাবস্থায় কেনো, কি কারণে এমন জীবন বেছে নিয়েছেন সেও এক অপার সিন্ধু। নহন্যতে ডকুমেন্টারিতে আনা ইসলাম জানান, শেষ জীবনে নভেরার সাথে তার কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। আনা বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে নভেরা দেশে ফিরতে নারাজ।’ কিন্তু ‘ব্যক্তিগত কারণ’ কি সে ব্যাপারে খুব স্পষ্ট করেও কিছু বলেননি তিনি। ওই ডকুমেন্টারিতে শিল্পী লালারুখ সেলিম দুটো কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এক, সামাজিক পরিবেশ। পশ্চাৎপদ একটি সমাজে এমন মুক্ত জীবন-যাপন শিল্পচর্চা সবমিলিয়ে খুবই দুরূহ ছিল। দুই, তার শিল্পকর্ম নিয়ে আশেপাশের শিল্পীরা তেমন মর্যাদা দেয়নি। শিল্পী সত্তার প্রতিও সুবিচার পাননি। তবে লালারুখ সেলিমের যুক্তি অকাট্য। খানিকটা অন্যভাবেও দেখা যেতে পারে। সেটা কেমন? ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, ঢাকা আর্ট স্কুলের সূচনা হয় ১৯৪৮ সালে। কিন্তু ঢাকার শাহবাগে চারুকলা পূর্ব পাকিস্তান কলেজ অব আর্টস এন্ড ক্রাফট শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের শিল্পবিদ্যার শুরু এতেই। নভেরা দেশে ফিরেন ১৯৫৪ সালে। শিল্পবিদ্যার এমন উন্মেষ সময়ে ঠিক যে সব যথাযথ হবে সেটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে কাঠামোগত এই দুর্বলতা বাদ দিলে নভেরার এই ‘আড়াল’ শিল্পসত্তা মহীয়ান হয়ে উঠেছে। আবার দুর্মর ব্যক্তিসত্তা বাদ দিলে তার শিল্পসত্তাকে চেনা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। সেটা কেমন?              
ভাস্কর্য শিল্পী নভেরা আহমেদের জন্ম বৃটিশ শাসিত ভারতবর্যের কলকাতায়। তার পিতা সৈয়দ আহমেদ চাকরি সূত্রে তখন কলকাতায় থাকতেন। তার পূর্ব পুরুষের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আসকার দীঘির পাড় এলাকায়। কিন্তু তাঁর জন্ম সাল নিয়েও আছে নানা গরমিল। আবুল হাসনাত সম্পাদিত বইতে মেহবুব আহমেদ লিখেছেন, নভেরার জন্ম আনুমানিক ১৯৩০ সালে। রেজাউল করিম সুমন সে মতানুসারি। অন্যদিকে লেখক ও গবেষক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী লিখেছেন, ১৯৩৯ (?) সালে। ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সঙ্গে উইকিপিডিয়ার তথ্যের মিল আছে। উইকিপিডিয়া তথ্যটি নিয়েছে ফরাসি প্রবাসি বাঙালি লেখক আনা ইসলাম হতে। জন্ম সালের এমন ফারাক প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যে কোনো কোনো শিল্পীর বেলায় দেখা যায়। তবে জন্ম সাল নিয়ে নয় বছরের গড়মিলের কারণ হিসেবে বলা যায়, ভাস্কর নিজেই এমন তথ্য আড়াল করছেন অথবা বাংলাদেশে গবেষণার মান এখনো সেই কলিযুগে আছে। কিন্তু দুটোই মিলিয়ে দেখলে এটা স্পষ্ট- নভেরা আহমেদের জন্ম ত্রিশের দশকের কোনো একদিন। তার বেড়ে ওঠা ব্রিটিশ কলোনিয়াল যুগ বলয়েই।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তার পিতা কুমিল্লায় বদলি হন। এই সময় নভেরা তখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। পরে পিতার অবসর গ্রহণের পর চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেন। সে সময় নভেরা চট্টগ্রাম কলেজে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। বিয়েও হয় এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে। কিন্তু সে বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। মা-বাবার জোড়াজুড়ি সত্ত্বেও এরপর তিনি আর বিয়েতে রাজি হননি। পরিবার চাইত আইন পড়ুক, কিন্তু তার আগ্রহ নৃত্য ও শিল্পকলায়। ১৯৫০ সালে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে বিবিসির সাংবাদিক নাজির আহমেদের পরিচয় হয় নভেরার। সেই সূত্রে পরিচয় নজির আহমেদের ছোট ভাই হামিদুর রাহমানের সাথে। হামিদুর তখন পড়তেন লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টে। আর নভেরা আহমেদ ১৯৫১ সালে ভর্তি হন ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের ‘ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের মডেলিং ও স্কাল্পচার কোর্সে’। ৪ বছরের এই কোর্স শেষে ১৯৫৫ সালে ডিপ্লোমা ডিগ্রি পান নভেরা আহমেদ। তার শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যক্ষ ড. কারেল ফোগেল। ১৯৫৪ সালে শিল্পী হামিদুর রাহমান আর নভেরা আহমেদ ইটালিতে যান। সাক্ষাৎ হয় বাংলাদেশি শিল্পকলার ছাত্র আমিনুল ইসলামের সাথে। এ সময় ড. ক্যারলের সহায়তায় ইতালিয় শিল্পী ভেন্তরিনো ভেন্তরির কাছে ভাস্কর্যের কাজ শেখেন নভেরা। ওই বছরই ক্রিসমাসের ছুটিতে হামিদ আর নভেরা রদাঁর মিউজিয়াম দেখতে যান। ফের দুজনেই ফিরে আসেন লন্ডনেই। নভেরার শিল্প-জ্ঞানের মিথষ্ক্রিয়া ঘটে ইউরোপখণ্ডেই। ১৯৫৬ সালের জুন মাসেই নভেরা আর হামিদ পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। দেশে এসে দুজনে একত্রে শিল্পচর্চা শুরু করেন।      
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয়। ব্রিটিশ শাসকের দাওয়া দ্বিজাতি তত্ত্বে ভাগ হয় ভারত ও পাকিস্তান। ফলে কাল বিকাশের দিক থেকে ব্রিটিশ কলোনিয়াল যুগ বলয়ের শিল্পী নভেরা আহমেদ। কারণ বৃটিশ শাসকরা উপমহাদেশ ছাড়লেও তার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর আইনগত কাঠামোই বলবৎ ছিল দেশ দুটিতেই। দেশ ভাগের ‘যুগ-যন্ত্রণা’, ‘হিন্দু-মুসলমান বিভাজন’ কিংবা ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ নানা রাজনৈতিক বাতাবরণ তার শিল্পকর্মে নাই বললে চলে। এটা শিল্পে না থাকাটা দোষের নয়! নভেরাও হয়তো চাননি এই পথে তার শিল্পকর্ম দানা বাধুক। মূলত মূলধারার রাজনৈতিক চেতনা থেকে উৎসারিত যে শিল্প তা থেকে সচেতনভাবে নিজেকে বিযুক্ত রেখেছেন তিনি। তবে হলফ করে বলা যায়, ভাস্কর্য শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে নভেরা একাডেমিক পদ্ধতিকেই অনুসরণ করেছেন। কেননা তার শুরুর দিককার শিল্পকর্ম প্রাতিষ্ঠানিক ফর্মের বাইরের জিনিস না। ইংল্যান্ডের বিদ্যালয়ে শিক্ষার কারণে পশ্চিমা আধুনিকতা তার শিল্পকর্মকে আচ্ছন্ন করে রাখে। বিশেষত পশ্চিমের আধুনিক স্কাল্পচারিস্ট হেনরি মুর আর বারবারা হেপওর্থের শিল্পকর্মের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। লক্ষ্য করার বিষয়, এই প্রভাব অনুকরণ নয়। ফর্ম বা ধরনের বিষয়। আদল বা আকার নয়। দর্শনশাস্ত্রে আদল আর প্রভাব এক ভাব নয়। আদল মাত্র অনুকরণই। মানে একই গঠন রূপে যার বিকাশ। আর প্রভাব ভাবের অপর রূপ। প্রভাব আদলকে বদলে দেয়। শিল্পের ইতিহাসের দিকে তাকালে এই প্রভাব নতুন প্রকরণেরও জন্ম দেয়। তবে না পারাটা শিল্পীরই অক্ষমতা বৈ, অন্যকিছু নয়। শিল্পী নভেরার শিল্পকর্মে আদলের ব্যাপারে সেটা সর্বৈব নয়। তবে মুরের ঘরানা হিসেবে নভেরাকে বিবেচনা করা যেতে পারে। ভাস্কর্য নির্মাণে পুরোদস্তুর প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন নভেরা। এটা কেমন?
একবাক্যে সবাই স্বীকার করেন, নভেরা আহমেদ আধুনিক শিল্পী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কোন ধরনের আধুনিক? আমাদের বিবেচনায় নভেরার ভাস্কর্য চিন্তায় গোড়ায় আছে ‘মডার্ন কনস্ট্রাকটিভিস্ট আর্ট’। বিংশ শতকের আদিতে ইউরোপে এই আন্দোলন শুরু হলেও রাশিয়ায় এই শিল্পান্দোলন নতুন রূপ পায়। বিশেষত অক্টোবর বিপ্লবের পর স্থাপত্য আর শিল্পকলায় বিমূর্ত ভাবধারাকেই কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এই শিল্পান্দোলন। প্রখ্যাত শিল্পী  ভ্লাদিমির তাতলিন, কাসিমির মেলভিচ, আলেকজান্দ্রা এক্সটার, রবার্ট অ্যাডামস, এল লিসিৎকির নেতৃত্বে ১৯১৩ সাল থেকে ১৯৪০ নাগাদ চলে এই আন্দোলন। শিল্প আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটা ছিল রাশিয়ার আভাগার্দ। ভ্লাদিমির তাতলিনের ১৯১৯ সালের ‘মনুমেন্ট টু দ্যা থার্ড ইন্টারন্যাশনাল’ ‘বাস্তব স্থানে বাস্তব বস্তু’র ধারণাকে সামনে আনে। বিমূর্ত এই ভাবধারা ছিল মূলত স্বল্পাবেগী, নিরীক্ষামূলক শিল্পের জ্যামিতিক ফর্ম। কন্সট্রাকটিভিস্ট তাতলিনরা এই আন্দোলনে নিছক বস্তু নির্ভর বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেছিলেন। অন্যদিকে একই ভাবধারায় পাবলো পিকাসো মানবিক বিমূর্ততার চর্চা করেছিলেন। আধুনিক এই কন্সট্রাকটিভিস্ট আন্দোলন প্রভাব ফেলে কিউবিজমের ওপরই। ইন্ডিভিজুয়াল ফর্মের এইসব শিল্পকর্ম নতুন মাধ্যমেই (নিউ মিডিয়া) প্রকাশ পায়। বলা চলে, সহজ (ন্যাচারাল) চিন্তা প্রসূত শিল্পের সুশৃংখল শৈলী তৈরি করা। হেনরি মুর, বারবারা হেপওর্থ কিংবা পাবলো পিকাসোর সেই ভাবধারার সহজ প্রকাশ। মানে মানবিক বিমূর্ত অবজেক্টে সূক্ষ্মতম বা নিপূণ সৌন্দর্য সৃষ্টি করা। শিল্পী নভেরা আহমেদ এইসব শিল্পীর প্রভাবকেই বহন করেছেন। যেই ক্ষেত্রে মুর কিংবা বারবারা সহজ প্রকৃতির, সেই ক্ষেত্রে নভেরা অনেকটাই সরল (নাইভ) প্রকৃতির। সহজ এই অর্থে, বস্তু চেতনাগত জায়গায় ভাবগত রূপ লাভ। বস্তু উপর ভাব আর চিন্তার ভাষা সহযোগে ভর করে। আর সরল (নাইভ) এই অর্থে, বস্তু ভাবগত ভাবে অপর ভাব না নিয়ে ভাবেরই সরল প্রভাব বলয়ে থাকা। তার এই সরলতার দেখা মেলে তার ‘কম্পোজিশন’ সিরিজের ভাস্কর্যগুলো। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, নভেরার এই রূপ মুরেরই ‘সরল রূপ’। কারণ নভেরা মুরের স্ট্রাকচারকে ভাঙেননি। সরলভাবে বহন করেছেন তিনি। কেননা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘সহজ আকার’ বা ‘ইউনিভার্সাল অবজেক্ট’ শিল্পের গঠন প্রণালী প্রভাবকে স্পষ্ট করে তোলে। কারণ নভেরার ‘কম্পোজিশন’ সিরিজের শিল্পকর্মে দেখা মিলছে, ত্রিডি ডাইমেনশনের ভাস্কর্য। মানবিক বিমূর্ত আকারের এই ভাস্কর্যগুলো চতুর্দিক থেকে দেখা যায়। বিশেষত ফিগার বা অবজেক্টের মাঝখানে ফুটো করে অপর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছেন তিনি। এই ধরনের ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে দুটো জিনিস ঘটে। প্রথমত, ‘আকার’ বা ‘অবজেক্ট’ নিছক ‘আকার’ বা ‘অবজেক্ট’ আকারে থাকে না। আকার জমিনেরই অবজেক্ট স্পেসেরই অংশ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অবজেক্টের ভেতরকার শূন্যস্থানে অন্য স্পেস বা প্রকৃতি ভর করে। অবজেক্টের পেছনের অবজেক্টও একই সাথে হাজির হয়। তবে শূন্যস্থান দিয়ে আলোর প্রতিসরণ বা প্রকৃতির অপর রূপে অবজেক্ট বা ফিগার নান্দনিক রূপ লাভ করে। মানে প্রকৃতির এক-শয্যার ভেতর প্রতি-শয্যা সৃষ্টি করা। বিমূর্ত কল্পনার এই পদ্ধতি হেনরি মুরের শিল্পকর্মে দেখা যায়। নভেরার কোনো কোনো কাজে হেনরি মুরের শয্যার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেই অর্থে নভেরা সহজ নয়, সরল। সহজ যেমতি ভাব বিলয়ে নতুন ভাব সৃষ্টি করে, সরল অনুরূপ তেমনটি নয়। সরল ভর বিন্দুর উপরই গড়ায়। সরলে বস্তুর আকার অপর বস্তুর স্বর বা ভাষার বহন করা। বিশেষত মুখাবয়বের বিমূর্ততার কারণেও এই প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। শিল্পে প্রভাব মন্দ কিছু নয়। প্রভাব চিন্তার গতিমুখকে চিহ্নিত করে। মানে শিল্পী উন্মেষ কালকে ঐতিহাসিকভাবে রূপান্তর করে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে নভেরার ভাস্কর্যের ভিন্নতা কোথায়?
‘কম্পোজিশন’ সিরিজে নভেরার ফারাক ভাস্কর্য গঠনের স্টাইলে আর ম্যাটেরিয়ালে। ফিগারের ক্ষেত্রে মুর যেখানে বৃত্তাকার জ্যামিতিক ফর্মে ভাস্কর্য গড়েন, নভেরা সেখানে উলম্ব বা খাড়া প্রকৃতির। নভেরা ভাস্কর্যের ফিগার বিমূর্ত। গড়নে হালকা প্রকৃতির। নভেরার ভাস্কর্যের ফিগারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, টান টান মাথা থেকে দেহ ‘জিরাফের গলা’র মত লম্বা। উলম্ব আর খাড়া প্রকৃতির। এই ধরনের ভাস্কর্য ভর কেন্দ্রে এক ধরনের টেনশন সৃষ্টি করে। কেননা ভর বিন্দুর ভার হতে ফিগারের গড়ন লম্বা মনে হয়। নভেরার এই ফর্মকে বদলিয়ে ফিগারের গঠনের সাথে মিলিয়েছেন বাংলাদেশের নাইভ আর্টের। টেপা পুতুলে ফিগারের যে সরল ভঙ্গি সেটা আধুনিক মেজাজে ব্যবহার করেছেন। কেনো নভেরার ভাস্কর্যের ফিগার আধুনিক? ম্যাটেরিয়ালের দিক দিয়ে ট্যাপা পুতুল মাটির তৈরি ভঙ্গুর প্রকৃতির। ফলে এগুলো ক্ষণস্থায়ী। ট্যাপা পুতুলে ফিগারের গঠন বাস্তবধর্মী। অনেকাংশে স্টিল লাইফের মতো। নভেরা সেই ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রকৃতির। ম্যাটেরিয়াল হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন সিমেন্ট। স্থাপত্যের স্থায়ীত্ব তার ভাস্কর্যের নাইভ বা সরল আকারকে স্থায়ী করে তুলেছেন তিনি। শিল্পকে বাস্তব আকার থেকে বাড়িয়ে তোলার যে সৌন্দর্য সেখানে তিনি অনন্য হয়ে আছেন। দর্শনের দিক থেকে বলা যায়, বাস্তবের আকার ইমেজেরই প্রতিস্থাপন। সৌন্দর্যও তখন বাস্তবের রূপ। বাস্তবের আকার যখন অপর আকার নেয়, তখন প্রয়োজনের বাড়া সৌন্দর্য আকারে ধরা দেয়। বাস্তব মানে ধরা আকার। ধরা ভাবের এই অধরা রূপকে আমরা বলছি, বিমূর্ত রূপ। নভেরার ভাস্কর্যের এতেই বাড়তি রূপেই নিহিত।    
নভেরা আহমেদঢাকায় ১৯৬০ সালে তার প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদশর্নী হয়। ‘ইনার গেইজ’ বা ‘মনোলোক’ নামের এই প্রদর্শনী তাকে চরম খ্যাতি এনে দেয়। নামায়নের ক্ষেত্রে ‘ইনার গেইজ’ বা ‘মনোলোক’ ভাবধারাও মন্দ নয়। বস্তুর অচেতন থেকে যে ভাষা তৈরি হয় সেটাই তো ‘মনোলোক’। আমরা হয়ত বলতে পারতাম, ‘মনের আলো’। সদা দীপ্ত থাকা জ্যোতি। সেও এক অপার সম্ভাবনা। তো ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ আর্ট কলেজ হবার ৪ বছর আগেই আগেই এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। কেননা ১৯৬৪ সালে ভাস্কর্য বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ফলে নভেরা প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায়তনিক সময়ের আগেই ভাস্কর্য শিল্পী হিসেবে ‘মাইলফলক’ হয়ে আছেন। তৎকালীন লাহোর আর্ট কাউন্সিলের সেক্রেটারি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, সাংবাদিক এস এম আলী ও আবদুস সালামের লেখা ওই প্রদর্শনীর ক্যাটালগে ছাপা হয়। দুয়েকটা উদাহারণ টানছি। কারণ যেই অর্থে বলা হয়, ‘নভেরা আহমেদ শিল্পী হিসেবে সমকালে অবহেলিত ছিলেন’ কথাটা সর্বাংশে ঠিক নয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন লিখেছেন, ‘১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দেয়ালে উদ্ভাসিত ফ্রিজ ও ১৯৫৮ সালে খোলা আকাশের নিচে ভাস্কর্য- পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পাঙ্গনে নভেরা আহমেদের এদুটো শিল্পকর্মকে ছোট বিপ্লবই বলা যায়।’ জয়নুলের ‘বিপ্লব’ সংস্কৃতির কেন্দ্র থেকে দেখা শ্রেয়। শিল্প বিপ্লবের পাত্র নয়, সংস্কৃতির রূপান্তর বৈ মাত্র। ফলে জয়নুলের ‘বিপ্লব’ আদিখ্যেতা সংস্কৃতির ক্রিয়া হিসেবে জায়মান। ফয়েজ আহমদ ফয়েজের মত, ‘কৃত-কৌশলের দিক থেকে নভেরা আহমেদ বিমূর্তবাদী।’ পাকিস্তান অবজারবারের সম্পাদক আবদুস সালামের ভাষ্য, ‘নিপূণ, সৌষ্ঠব আর আধ্যাত্মিকতায় ভরা তার এমন কাজ, এদেশে হালনাগাদ একদমই বিরল।’
উদাহারণ আরও টানা যেত। আমরা সে পথ মাড়াইলাম না। প্রকৃতি আর প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে নতুন চিন্তা নিয়েই নভেরার শিল্পকর্ম দৃশ্যমান। তার কাজে আধ্যাত্মিকতার চেয়ে বাস্তবধর্মীতাই বেশি। কারণ নভেরা কাজের ভেতর দিয়ে পশ্চিমা চিন্তার সাথে দেশিয় উপাদানের শিল্প সম্পর্ক উৎপাদন করতে চেয়েছেন। এটি তার শিল্পের কাঠামোগত ধরন। কেননা ১৯৬১ সালে তার শিক্ষক ফোগেলে দেয়া নামে ‘চাইল্ড ফিলোসফার’ ভাস্কর্যটির নামকরণ করেন। ‘অল পাকিস্তান পেইন্টিং এন্ড স্কাল্পচার এক্সিবিশনে’ ভাস্কর্যটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও লাভ করে। বাস্তবধর্মী এই কাজটি জ্যামেতিক ফর্মের। মাথা ত্রিভূজ আকৃতির। চোখ আর দেহ উপবৃত্তাকার। পুরো ভাস্কর্যে ফিগারের গঠনও ত্রিভূজের মতো কৌণিক অবস্থানকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মুখায়বয়বের বাস্তবধর্মী ভাস্কর্যের আরেকটি হচ্ছে ‘বুদ্ধ’। প্রাতিষ্ঠানিক ফর্মের বাইরে কাজটি দেখলে মনে হবে, গৌতম বুদ্ধ ধ্যানরত ফিগার। দর্শনশাস্ত্র বলে, ধ্যান অচেতনেরই বিন্দু। যা ব্যক্তির বাস্তবতাকে অতিক্রম করা। ব্যক্তিসত্তা হিসেবে হাজির না থেকে অধরা সত্তার সাথে লীন হয়ে যাওয়া। অধরা পরকে আপন করা। মানে সত্তার মহামিলন। যেন নভেরার ‘বৌদ্ধ’ ভাস্কর্যটি আবেগমিশ্রিত ধ্যান। চোখ মুদে থাকা বুদ্ধের মুখায়বয়ব এক ধরনের নৈঃশব্দ সৃষ্টি করে। ভাবের প্রকাশে যেন নিপতনে সিদ্ধ হওয়া ফিগার।
তার কোন কোন স্কাল্পচারে নামের ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য আছে। জাতীয় জাদুঘরের ক্যাটালাগে ভাস্কর্যটির নাম ‘বুদ্ধ’। আর আবুল হাসনাত সম্পাদিত ‘নভেরা আহমেদ’ বইয়ে ছাপা হয়েছে ‘শান্তি’। একই ভাস্কর্যের দুই নাম গবেষণার দুর্বলতা বলা যায়। তবে আবুল হাসনাত সম্পাদিত বইয়ের নামটাই সঠিক মনে হয়। ভাস্কর্যের যে গঠন ওই নামের সাথে সাজুয্যপূর্ণ। ভাস্কর্যটি শীর্ষ বিন্দু হতে আনুভূমিক এবং খাড়া। ফর্ম দীর্ঘাকায় সমবাহু ত্রিভূজের ন্যায়। বিমূর্ত ফর্মের এটা দেখতে বৌদ্ধিক স্তুপা বা মিনারসদৃশ। গগণমুখী শীর্যবিন্দু দেখলে মনে হয়, শান্তিই আহবান করছে। এই ধরনের ফর্ম প্রাচীন গির্জা বা মন্দিরের ক্ষেত্রে দেখা যায়। অপরাপর ভাস্কর্যের ইমেজ হিসেবে নভেরা গরু, ছাগল, হাতি ঘোড়া, পেঁচা, মাছ, পাখি, সাপ আর বাংলার লোক সংস্কৃতি বস্তুগত উপাদান ব্যবহার করেছেন। এই উপাদানকে তিনি কখনো কখনো বস্তুর আকার বিচ্যুত করে বিমূর্ত রূপ দেন। কখনো কখনো বস্তুর রূপই রেখেছেন। বিশেষত ভাস্কর্যের ম্যাটেরিয়ালের দিক থেকে তার সিমেন্টের কাজ বেশি। স্টিল আর ব্রোঞ্জের কাজও আছে। উপাদানের দিক থেকে বিবেচনা করলে নভেরাকে মনে হবে ‘জাতীয় ভাবধারা’র শিল্পী। কিন্তু নভেরা তা নন। ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তির নিঃসঙ্গতাকে উদযাপন করেছেন তিনি। ব্যক্তির রূপকে সামষ্টিকতার রূপ আকারে দেখেছেন। সামষ্টিকতার ভেতর ব্যক্তির একক বিকাশ দেখতে চেয়েছেন। ব্যক্তির একক নিঃসঙ্গতা, ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে পরিবার, ব্যক্তিকে কেন্দ্র প্রকৃতির যে সম্পর্ক সেটাই নভেরার ভাস্কর্যে দৃশ্যমান। যেন ব্যক্তির মুক্তি ঘটলে আপামর সমাজের মুক্তি ঘটবে। আধুনিকতার সমাজ-কাঠামোর এই কাঙ্ক্ষা তার ভাস্কর্যকে নৈঃশব্দে পর্যবশিত করেছে। নিছক ব্যক্তি যদি রূপক হয়, তাহলে সৌন্দর্যও ব্যক্তির একক রূপ। সামষ্টিকের সৌন্দর্য যদি ব্যক্তির রূপক হয় তাহলে সমাজে সৌন্দর্য সামষ্টিক হয়ে ওঠে। ফলে নভেরা শিল্পী হিসেবেও মিনিমালিস্ট। নভেরার ভাস্কর্যের সৌন্দর্যও ব্যক্তির উৎকর্ষতার ফল। নভেরা আধুনিক এই জন্য যে, ব্যক্তিকে সামষ্টিকের সৌন্দর্যে তোলা। উদাহারণ হিসেবে ‘মাদার এন্ড টু চাইল্ড’, ‘মা ও শিশু’, ‘স্ট্যান্ডিং ওমেন’, ‘হেড অব ওমেন’ ও ‘ফামিলি’ সিরিজের কাজ ব্যক্তি সৌন্দর্যের রূপক হয়ে আছে। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে ব্যাংককে একক প্রদর্শনী হয় তার। প্রদর্শনীতে ছিল ব্রোঞ্জ, স্টিল, শিট মেটাল, ওয়েলডেড ও স্টিইনলেস স্টিলের ভাস্কর্য। ম্যাটেরিয়ালের কারণে তার ভাস্কর্যের গড়নে পরিবর্তন আসে। ঘটেছে ফর্মের ভাঙাগড়া। ব্রোঞ্জের তৈরি ‘মূর্তি’ নামের ভাস্কর্যটিতে দেখা যায়, দৈহিক গড়ন মসৃণ নয়, খোদাই করা। একটা মাংসহীন আবক্ষ মেরুদণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দার্ঢ্য বস্তুর যে ভঙ্গি সেটাই ভাস্কর্যটিতে দৃশ্যমান। বস্তুর অমরতা যেমন বস্তুকে ঐতিহাসিকতা দেয়, ঠিক তেমনি এক শিল্পকর্ম। তার তৃতীয় প্রদর্শনী হয় প্যারিসে, ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে। ‘নৃত্যহীন’ নামের ভাস্কর্যে দেখা যায়, এক পায়ের উপর ভর বিন্দু। অন্য পা শূন্যে তোলা। দৈহিক বিচ্যুতির যে রূপ সেই রূপ বেদনা নিমগ্ন এক বিমূর্ত মানুষের অবয়ব। কিংবা ‘সূর্যমুখি নারী’ যেন কোন এক আলোর কাছে মুক্তি খুঁজছেন। কেননা ব্যক্তির স্বাধীনতার বাসনা অপর যুক্তির পরে খাড়া। প্রকৃতি ব্যক্তির চিন্তার জন্ম দেয়। আর ব্যক্তি চিন্তা প্রকৃতিকে পাল্টায়। নভেরার ভাস্কর্য যেন সেই পথই ধরে আছে।  
পরিশেষে বলতে হয়, আধুনিক এই ভাস্বর গত হয়েছেন ২০১৫ সালের ৫ মে। ফ্রান্সের ওথ ইল শহরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। শেষ জীবনে সেই শহরের মায়া ত্যাগ করেননি। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ ফরাসি দেশে তার জীবনসঙ্গী ছিলেন গ্রেগোয়ার দ্য ব্রুনস। আধুনিক ভাস্কর নভেরা আহমেদ ব্যক্তির যুগ-যন্ত্রণা ধরে আছেন। ব্যক্তির একক সংকট তো সমাজের সংকট নয়। একই সংকট বা যন্ত্রণা অপর ব্যক্তির ভাব বলয়ে আসন পাতলে তা সামষ্টিক হয়ে ওঠে। তাই সামষ্টিকের ভাবধারা থেকে নিজেকে আলাদা করেও নিয়েছেন তিনি। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তাকে একক ব্যক্তিতে রূপান্তর করেছে। এটাই আধুনিকতার বিচ্ছিন্নতার রূপক। এই বিচ্ছিন্নতা তাকে একাকি ও নিঃসঙ্গ করে তুলেছিল। তিনি নৈঃশব্দ যাপন করেছেন শিল্পে। নৈঃশব্দ যাপনের স্বাধীনতা ভোগ করেছেন জীবনে। শিল্পীর এই একাকিত্বকে আধুনিক চিন্তা থেকে আলাদা করা যাবে না। অন্তত নভেরা আহমেদের বেলায়। তার শিল্পের ইতিহাস তাই বলে। আমরা ইতিহাসের দিকে তাকাবো। হয়ত ভাববো, নভেরা আছে দূর দেশে! তবে ভাস্কর্য শিল্পে আগেও কেউ নেই, হাল নাগাদ এই বাংলাদেশে তার তুল্য ভাস্কর খুঁজে পাওয়া বিরল। ইহকালে আমরা নভেরার কাজ নিয়ে ইশারা করেছি মাত্র, বাকিরা আকাশ করবেন, নিশ্চয়ই। পরকালে এই যা ভরসা।

তথ্য-তত্ত্বপাড়া
১.    নভেরা আহমেদ : আবুল হাসনাত সম্পাদিত, বেঙ্গল পাবলিকেশন লিমিটেড, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি ২০১৫
২.    সাঈদ আহমেদ রচনাবলি : হাসনাত আবদুল হাই সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ঢাকা; মে ২০১২
৩.    হামিদুর রাহমান : সাঈদ আহমেদ সম্পাদিত, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা; ডিসেম্বর ১৯৯৭
৪.    শিল্পী নভেরা আহমেদের সৃজন ভূবন নহন্যতে, এন রাশেদ চৌধুরী পরিচালিত, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নিবেদিত, ঢাকা;
৫.    চারু ও কারু কলা : লালারুখ সেলিম সম্পাদিত, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা
৬.    সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা

৭.    The art of rhetoric : Aristotle, translated by john henry freese, edited by E capps and other, London: William heinmann, Britain
৮.    Introductory Lectures on Aesthetics: Georg Wilhelm Friedrich Hegel, Edited by M J Inwood, translated by Bernard Bosanquet, Penguin Books Limited, 1993

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৪৬৮ কোটি টাকার তেল ও ডাল কিনবে সরকার
৪৬৮ কোটি টাকার তেল ও ডাল কিনবে সরকার
আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির টাকা কবে পাবে বাংলাদেশ
আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির টাকা কবে পাবে বাংলাদেশ
সুন্দরবনে আগুন: ১১ নাগরিকের উদ্বেগ
সুন্দরবনে আগুন: ১১ নাগরিকের উদ্বেগ
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানকে হারিয়ে হাকিমপুর উপজেলায় রাজের জয়
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানকে হারিয়ে হাকিমপুর উপজেলায় রাজের জয়
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ