X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমি আমার যোগ্যতা নিয়ে দ্বিধায় থাকিনি : এডওয়ার্ড অ্যালবি

.
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:০৯আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:৩৩

এডওয়ার্ড অ্যালবি
[আমেরিকান নাট্যকার এডওয়ার্ড অ্যালবি ৮৮ বছর বয়সে গত শুক্রবার মারা গেছেন। তিনবার পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী এই নাট্যকারকে আর্থার মিলার ও উইলসনের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের জীবিত নাট্যকারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে মনে করা হতো। শিল্প সম্পর্কে অ্যালবি তার জীবনী লেখককে বলেন, ‘শিল্পকে কোনও ফর্মের দেওয়ালে আবদ্ধ করা যায় না। তা সীমার ঊর্ধ্বে ছড়াতে পারে। সেইসঙ্গে আমাদের এ সম্পর্কিত ধারণা পাল্টে দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণ শিল্পকে অবজ্ঞা করি।’ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক “হু’জ অ্যাফ্রেড অব ভারজিনিয়া উলফ?” নাটকটি যৌনতা বিষয়ক ব্যাখ্যা ও অপবিত্রতার অভিযোগে পুলিৎজার বিচারকরা প্রত্যাখান করলেও তা শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে টনি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। ২০০৫ সালে একাডেমি অফ এচিভমেন্ট অ্যালবির এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করে। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন মেহেদী শামীম।]

 

নিউ ইয়র্ক সিটিতে আপনার শৈশব-কৈশর বেড়ে উঠা কেমন ছিলো?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : আমাকে যে পরিবারটি দত্তক নিয়েছিলো তারা থিয়েটার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলো।তাদের বিচিত্রানুষ্ঠান পরিচালনার একটা দল ছিলো।আর তাই ওই বাড়িতে সবসময়ই বিচিত্রানুষ্ঠানের শিল্পিরা থাকতো। বিলি গ্যাসটন, ভিক্টর মুর, ইডি ওয়াইন এবং যাদের কথা হয়তো কেউ শুনেনি এমন কিছু মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার সুযোগ হয়। আমি খুব অল্প বয়স থেকেই থিয়েটারে যেতে শুরু করি। যখন আমার বয়স ৬ বছর আমি ‘জুম্বু’ দেখতে ওল্ড হিপ্পোড্রম থিয়েটারে গিয়েছিলাম। এই মিউজিক্যালটিতে ছিলো জিমি ডুয়ারেন্ট ও একটি হাতি।আর এটাই আমার প্রথম থিয়েটারের অভিজ্ঞতা।আমার জীবনটা থিয়েটারের সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িত। এটাই ওই পরিবারে দত্তক হয়ে থাকা সময়টুকুর মধ্যে একমাত্র ভালো সময়।

স্কুল কেমন লাগতো?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : অবশ্যই ভালো লাগতো। যখন স্কুলে আমি আমার পছন্দের কাজগুলো করতাম তখন বেশি ভালো লাগতো।কিন্তু যখন অপছন্দের কাজগুলো সামনে আসতো তখনই খারাপ লাগতো। আমার খুব ভালো লাগতো আর্টস। আট বছর বয়সেই আমি ড্রয়িং ও পেইন্টিং শুরু করি এবং নয়-দশ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করি। আমি হতে চেয়েছিলাম সুরকার- যখন ব্যাচকে (জার্মানি সুরকার) শুনতে শুরু করি। তখন আমার বয়স সাড়ে বারো বছরের মতো। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম কারণ তিনি একটু বেশিই ভালো ছিলেন।

আপনার সফল হওয়ার পথে কোন বইয়ের ভূমিকা ছিলো? বলতে চাচ্ছি, শুরুর দিকে আপনি কী বই পড়েছেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : হুম, অবশ্যই। আমি অনেক বই পড়েছি, যতটা পেরেছি। এই প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প মনে পড়লো। আমি যেই পরিবারের সঙ্গে থাকতাম তাদের নিজস্ব একটা বিশাল লাইব্রেরি ছিলো লার্চমন্টে। তখন আমার বয়স সম্ভবত ১৪ অথবা ১৩। একদিন রাতে একটা ভালো বই খুঁজতে ছিলাম পড়ার জন্য। ওই রাতে আমি ঈভান তুর্গেনেভের একটা বই লাইব্রেরির বাইরে নিয়ে এসেছিলাম। বইটার নাম ছিলো ‘ভার্জিন সয়েল’ এবং আমি বইটি পড়েওছিলাম। কিন্তু পরের দিন সকালে যথারীতি প্রতিদিনের মতো পরিবারের সবাই মিলে সকালের নাস্তা করছিলাম। সবার মন খারাপ দেখে আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে- তারা বললো, লাইব্রেরি থেকে একটা বই পাওয়া যাচ্ছে না। আমি তাদের বললাম, ও ঈভান তুর্গেনেভের বই। চমৎকার বইটি। আমি উপরতলায় নিয়েছিলাম পড়তে। তারা বললো, এটা লাইব্রেরিতে থাকা উচিত। এটা নিয়ে যাওয়ার কারণে বুকসেল্ফটা ফাঁকা লাগছে..

আপনি বলেছেন, আট-নয় বছর বয়সে আপনি লিখতে শুরু করেছেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : হুম। কিন্তু তার আগেই আমি আঁকতে শুরু করেছিলাম।

এই কাজগুলো করার উৎসাহ কোথায় পেতেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : সম্ভবত আমি ভাবতাম আমি একজন পেইন্টার, আমি ভাবতাম আমি একজন লেখক।

কোন ব্যাপারটা আপনাকে লেখক হওয়ার জন্য আগ্রহী করে তুলেছে?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : আমি আসলে জানি না কীভাবে।আমি যখন ছোট ছিলাম তখন একটা রেওয়াজ থেকেই মূলত শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে কাজ শুরু করি।এই কারণেই আমি সুরকার হতে চেয়েছিলাম, পেইন্টিং ও ড্রয়িং করেছিলাম এবং লেখালিখিও করি।এটা আমার কাছে অপরিহার্য মনে হতো।এই কারণেই আমি করতাম- মূলত আমার মন আমাকে যেভাবে পরিচালনা করতো।

কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা অথবা সময়?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : না, তেমন কিছু নেই।হতে পারে প্রথম যখন ব্যাচকে শুনি। হতে পারে একটা বিখ্যাত পেইন্টিং দেখে। হতে পারে ঈভান তুর্গেনেভকে পড়ার পড় থেকে। অথবা হতে পারে সবকিছু মিলেমিশে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।

আপনার প্রথম নাটক দ্য জু স্টোরির বিষয়ে বলেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : আমার ঠিক মনে নেই। আমি আমার বন্ধুদের বলেছিলাম যে, আমি একটা নাটক লিখতেছি। এটা লিখতে আমার দুই সপ্তাহ সময় লেগেছিলো। এর আগেও আমি অনেক কিছু লিখেছিলাম, কিন্তু কোনোটাই শেষ করতে পারিনি। হঠাৎ করেই ‘দ্য জু স্টোরি’ লিখে ফেললাম। তখন কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ছিলাম- এটা ভালো হলো না খারাপ হলো।

সমাজের কোন প্রেক্ষাপটে আপনি একজন লেখককে দেখেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : মূলত লেখালেখি হওয়া উচিত কার্যকর। এটা যদি মানুষকে দায়িত্ব সচেতনতা বিষয়ে নির্দেশনা না দেয় তাহলে এটার যৌক্তিকতা নেই। আমরা লেখকরা আমাদের চারপাশে যা দেখি তা ভালো লাগে না এবং আমরা চাই মানুষ আরো ভালো থাকুক। এই কারণেই আমরা লিখি।

তার মানে এখানে উদ্দেশ্য রয়েছে?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : অবশ্যই। সব কিছুর পিছনেই একটা উদ্দেশ্য থাকে।

প্রতিটা প্রফেশনেই ভালো এবং খারাপ সময় থাকে, এটার সঙ্গে আপনি কীভাবে মোকাবেলা করেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : কিছু ঠিকঠাক সময়, আবার কিছু কঠিন সময়ও যাবে। কিন্তু আপনার ভিতরে যদি নিজস্ব সফলতা অথবা বিফলতা বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকে তাহলেই আপনি বিপদে পড়বেন। আমার কিছু নাটক আছে কম জনপ্রিয়, আবার কিছু নাটক আছে অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু আমি কখনই আত্মবিশ্বাস হারাই না আমার লেখার শক্তির ব্যাপারে। এটা শুনতে খারাপ ও ভয়ানক শোনাচ্ছে কিন্তু সত্য। আমার যোগ্যতা নিয়ে আমি কখনই দ্বিধায় থাকিনি।

আপনি কি নিজেকে নিয়ে কখনো ভয় পেছেনে?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : না, না, না। কিন্তু এখন আমি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এখন একটা সম্ভবনা থাকতে পারে। আপনি কি বার্নাড শ’-এর গল্পটা জানেন? তার যখন নব্বই বছর বয়স তখন তিনি তার শুরুর দিকের একটা নাটক পড়ছিলেন। তখন তিনি এটা বুঝতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। তারপরে তিনি পুনরায় ওই লেখাটা আরো সহজবোধ্য করে লেখেনে। যাতে এরপরে যারা বইটা পড়বে তাদের সুবিধা হয়।

হু’জ অ্যাফ্রেড অব ভারজিনিয়া উলফ?- এই নাটক দিয়ে আপনি পৃথিবীব্যাপি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
এডওয়ার্ড অ্যালবি : এটা বাণিজ্যিক এবং পাশাপাশি ক্রিটিক্যাল সফলতাও ছিলো এবং এটা ছিলো আমার প্রথম নাটক, যেটা ৫৫ মিনিটের বেশি না।

আপনার সেলিব্রেটি হওয়ার অনুভূতি আছে?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : আমি সেলিব্রেটি না। আমি ওইভাবে কখনো ভাবি না। আমি আনন্দিত- মানুষ আমার লেখা পছন্দ করেছে। এটা ভালো। কিন্তু তারা ‘দ্য জু স্টোরি’ এবং ‘এন এমেরিকান ড্রিম’ এবং ‘দ্য ডেথ ও বেসি স্মিথ’ এবং ‘দ্য স্যান্ডবক্স’ এই নাটকগুলোও পছন্দ করেছে। কিন্তু এটা একটু বড় পরিসরে পছন্দ করেছে। এটা আমার কাছে প্রতিযোগীতা মনে হয়েছে। কিছুটা হাস্যকরও।

আপনি যখন লেখালিখি শুরু করেন, কখনো কল্পনা করেছেন আপনি তিনটা পুলিৎজার পুরস্কার পাবেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : হুম! পরিমাণটা খুব বেশি না।

এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : দেখেন, তারা যখন আমাকে পুরস্কার দেয়। আমার ভালো লাগে নিতে। আর প্রত্যেকবার যখন পুরস্কার পাই তখন বিস্মিত হই। আবার যখন পুরস্কার পাই না তখনো বিস্মিত হই। আমি বিস্মিত হয়ে বেঁচে আছি।

আপনি কীভাবে অর্জন এবং সফলতাকে পরিমাপ করেন?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : আমি আমার কাজের সঙ্গে এটা করি না। আমি আমার কাজকে এইভাবে দেখি না। যদি আমি বই পড়ি, নাটক দেখতে যাই, পেইন্টিং দেখি অথবা মিউজিক শুনি- এইগুলো আমাকে প্রসারিত করে। আমাকে আলাদা করে চিন্তা করতে শেখায়।

সব সময়ই কি পরিবর্তনের জন্য একটা স্থান পাওয়া যায়?

এডওয়ার্ড অ্যালবি : হুম। সব সময়ই।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া