X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বইয়ের দিন

মুম রহমান
০৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৪০আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৫২

বইয়ের দিন

গ্রীসের থিবসের লাইব্রেরির দরজায় খোদাই করা একটি কথা আছে, সেটি হলো, ‘আত্মার ওষুধ’। অর্থাৎ জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রদূত গ্রীকদের বিশ্বাস : বই হলো অসুস্থ আত্মার চিকিৎসার প্রধাণ উপকরণ। জ্ঞানচর্চার সূতিকাগার বলা যায় গ্রীকদের। আজকের বিশ্বসভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখার সূচনা গ্রীকদের হাতেই হয়েছে। গ্রীকদের গ্রন্থাগার যদি আত্মার ওষুধ হয় তবে আমাদের জন্য আজকের এই দুনিয়ায় সেই ওষুধ সবচেয়ে বেশি দরকার। যান্ত্রিক সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশের এইকালে চারপাশে যখন মূল্যবোধ, সততা, বিশ্বপ্রেমের ভয়াবহ অবক্ষয় বা বিপর্যয় আমাদের আত্মাকে কলুষিত করছে নিরন্তর তার ওষুধ হিসাবে বইকে গুরুত্ব দিতে পারি আমরা।
চীনারা খুব সৌন্দর্যপ্রেমী জাতি। পানজাই (পরবর্তীতে বনসাই), ক্যালিগ্রাফি (হরফলিপি), জলরঙ ইত্যাদি সুকুমার চর্চার চূড়ান্ত নান্দনিক বিকাশ চীনে হয়েছে। প্রাচীন চীনা প্রবাদে বলে, বই হলো এমন একটা বাগান যা পকেটে নিয়ে ঘোরা যায়। গ্রীকদের পাশাপাশি, এই কর্মঠ জাতিদের কথাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এরা শুধু বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাচীন সভ্যতাই নয়, আধুনিক সভ্যতাও বটে। যারা দ্বীন-দুনিয়ার হাল হকিকত জানেন, তারা স্বচোক্ষেই দেখেছেন, টের পেয়েছেন, চীনারা কিভাবে বিশ্বটাকে দখল করে ফেলেছে। আমার ঘড়ের ফ্রিজ, টিভি, মোবাইল, ব্যাটারি, কলম, পেন্সিল থেকে শুরু করে কতো দরকারি আর অদরকারি জিনিসে যে মেইড ইন চায়না লেখা আছে তা হয়তো আমি নিজেও জানি না। প্রযুক্ত আর বাণিজ্যের এই ভয়াবহ উন্নতির আড়ালে কিন্তু আছে তাদের সহস্ত্র বছরের নন্দন আর জ্ঞানচর্চার ইতিহাস।
অন্তত দুটো প্রাচীন চীনা বইয়ের কথা না-বললেই নয়। আজ থেকে প্রায় পনেরশ বছর আগে লেখা স্যুন যু’র ‘আর্ট অব ওয়ার’ এখনও বিশ্বের নানা দেশের সামরিক বাহিনীতে সমর বিদ্যার অবশ্যপাঠ্য। কনফুসিয়াস না-পড়লে বিশ্ব দর্শনের অনেকটাই না-জানা থেকে যায়। প্রাচীন ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আর সংস্কৃতিতে চীনাদের অগ্রগামিতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। তাই, সৌন্দর্যপ্রেমী চীনারা যখন পকেটে বাগান নিয়ে ঘুরতে বলে, আর এই মোবাইল বাগানটা যখন হয় বই, তখন নিশ্চিতই বলা যায় এমন একখান বাগান সঙ্গে থাকলে সৌরভ, সৌন্দর্য কোনোটারই অভাব হবে না। আর কে না জানে, আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় সৌরভ আর সৌন্দর্যও বিক্রি হয় ভালো দামেই। কাজেই বই পাঠের বিক্রয় মূল্যটাও কম হওয়ার কথা না!
শুনতে খারাপ লাগলেও কথাটা সত্য, দুনিয়াটাই এখন ফায়দার হয়ে গেছে। কার সাথে কার লিঁয়াজো আছে, কে কাকে ব্যবসা দিতে পারবে, কোথায় কতটুকু লাভ লোকশান আছে এই সব হিসাব করতে সবাই ব্যস্ত। এই ব্যস্ত দুনিয়ায় ঠিক মতে চলতে গিয়ে আপনার কিন্তু নির্দোষ বন্ধু লাগবে, লাগবে শক্তিশালী খুঁটির জোড়। বই হতে পারে সেই নির্দোষ বন্ধু আর শক্ত খুঁটি। আর্নেস্ট হেমিয়ংওয়ে তো বলেই গেছেন, বইয়ের মতো বিশ্বস্ত আর কোনো বন্ধুই নাই। ওমর খৈয়াম আবার এই বিশ্বস্ত বন্ধুকে অনন্ত যৌবনাও বলেছেন। আর বালজাক বলেছেন, বই আমাদেরকে অচেনা বন্ধু এনে দেয়। এখন যখন সময়টা খারাপ, কেউ কাউকে নিঃশর্ত বন্ধু বলে মানতে ভয় পাই, তখন নির্ভয়ে বইকে বন্ধু হিসাবে মেনে নেয়া যায়। অন্তত বই এমন একজন বন্ধু যে কখনো বেঈমানী করবে না। কারণ পৃথিবীতে ভুল মানুষ আছে, কিন্তু ভুল বই নেই। জ্যাঁ জেনের ব্যক্তিজীবন যাই হোক, তার লিখিত বই যথার্থই পবিত্র। এমনকি হিটলারের লেখা আত্মজীবনী থেকেও আপনি পেতে পারেন কাজের জ্ঞান। আমাদের মধ্যে যাদের পলিটিক্যাল জোর নাই, মামা-চাচার জোর নাই, ইন্টারভিউ বোর্ডে তাদের জন্য বই-ই ভরসা। পাঞ্জেরি কিংবা প্রফেসর গাইডই হোক, জে কে রাউলিং কিংবা কাফকা-কাম্যুই হোক, নিজের বাজার দর বাড়াতে এগুলোর ভূমিকা কম নয়। ভিকারুন্নেসা, আইডিয়াল স্কুল থেকে শুরু করে আইবিএ, বিসিএস-এর ভর্তি পরীক্ষাতে আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ফায়দা এসে দিতে পারে বই হোক সেটা পাঠ্য কিংবা সহপাঠ্য। বই শুধু পরম বন্ধুই নয়, সাফল্যের পাসপোর্ট-ভিসা হতে পারে।
অনেকেই আছেন এই দুনিয়ায় যারা প্রতিটি কাজের আগেই নিজের লাভ-ক্ষতিটা ভাবেন। আপ্তবাক্য দিয়ে মানুষকে ভোলার দিন শেষ। স্মার্ট যুগের স্মার্ট মানুষ খামাখা সময় নষ্ট করার বিলাসীতায় যায় না। এই স্মার্ট মানুষদেরই বলছি, আপনারা যারা কেবল জাগতিক ফায়দার জন্য কিছু করতে রাজি আছেন, তাদের উন্নতির জন্য বই পড়াটা সবচেয়ে শর্টকাট রাস্তা হতে পারে। আপনি বই পড়লে আপনার আচরণ, কথাবার্তাই পাল্টে যাবে। হয়ে উঠতে পারেন পার্টি কিংবা মিটিংয়ের মধ্যমণি। ইহকাল পরকাল দুটোর রাস্তাই মসৃণ করে দিতে পারে বই পড়া। আপনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পুলিশ- যাই হোন না কেনো রবীন্দ্রনাথের যে কোনো একটি বই আপনার জন্য ফায়দা এনে দিতে পারে। কেননা আপনার পেশাগত কিংবা নেশাগত ক্ষেত্রে বই আপনার দক্ষতাই বাড়াবে। কেমন করে ভালেঅ ব্লাডি মেরি, স্ক্রু ড্রাইভার, রাশিয়ান সালাদ বানাতে হয়, কিভাবে টেনিস বল থেকে শুরু করে পৃথিবীর মাপ আর ওজন নেয়া যায়, কোথায় অক্টোপাসের স্যুপ থেকে শুরু করে বাতাসে সীসা পাওয়া যায়, এমনি অসীম সব জ্ঞান আপনি পাবেন বই পড়েই। একটা টাই, একটা স্যুট, একটা ব্র্যান্ডের শার্টের চেয়ে একটা ভাল বই আপনাকে অনেক বেশি স্মার্ট করে। মালিক বা ম্যানেজার যাই হোন না কেনো নিজের কাজের জগতটাকে বড় করে জানতে চাইলে বইয়ের কাছে হাত পাতুন। ফায়দা হবে।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’