X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ-পুরাণের করণসূত্র : প্রজ্ঞা ও প্রকাশ || শেষ পর্ব

শিমুল মাহমুদ
১৩ অক্টোবর ২০১৬, ১১:৪৩আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৪৮

মিথ-পুরাণের করণসূত্র : প্রজ্ঞা ও প্রকাশ || শেষ পর্ব
পূর্ব প্রকাশের পর


এই দেহ মানবজীবনের সর্বাপেক্ষা মহার্ঘ্য ও রহস্যঘেরা আধার; এর সাথে যোগ হয়েছে প্রকৃতি এবং মন। এই যে দেহ, প্রকৃতি ও মন; এই দেহ যখন মৃত তখন তা জড় আর যখন জীবিত তখন তা অজড়; যে অলীক বস্তুর অনুপস্থিতিতে দেহ জড় পদার্থে পর্যবসিত হয় সেই অলীক বস্তুর ধারণা থেকে ‘আত্মা’ বিষয়ের সূচনা এবং তা এক সময় সর্বপ্রাণবাদের ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে। ‘মৃত্যু কিংবা নিদ্রা হইতেই প্রাগৈতিহাসিক মানুষ আত্মা নামক এক অতিপ্রাকৃত বস্তুর অস্তিত্বের সন্ধান পাইয়াছিল। জীবিত ও মৃতের মধ্যে পার্থক্য কী? একজনের মধ্যে কিসের অভাব তাহাকে জড়ের মতো নিশ্চল করিল, আর একজনের মধ্যে কিসের অস্তিত্ব তাহার ব্যতিক্রম করিল? গুহাবাসী মানুষ একদিন এ কথাই ভাবিতে গিয়া এক অদৃশ্য শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করিল। এই অদৃশ্য শক্তিই আত্মা।’ [ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য, বাংলার লোকশ্রুতি]


প্রশ্ন করা যেতে পারে, আমরা কি আমাদের পূর্বপুরুষ গুহাবাসীদের মত এখনও আত্মায় বিশ্বাস রাখি? যদিও আত্মা বলে কিছুই নেই; সেক্ষেত্রে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভীত হালকা হয়ে আসে; অর্থাৎ আমরা আজ গুহাবাসী না-হয়েও আমাদের প্রত্ন-অভিজ্ঞতাকে পরিত্যাগ করতে পারি না; ত্যাগ করতে পারি না পুরাণকথাকে। নৃতত্ত্ববিদদের গবেষণা মতে, সভ্যতার ইতিহাসে আত্মাবিষয়ক ধারণাই প্রথম ধর্মচেতনার উদ্ভব ঘটায়। ‘রিলিজিয়ন’ বলতে আমরা যা বুঝিয়ে থাকি যেমন বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু, মুসলমান যাই হোক না কেন সভ্যতার উৎস বিচারে ধর্ম বলতে ঠিক তা বোঝায় না; ধর্ম হলো মানবসভ্যতার প্রথম জিজ্ঞাসার প্রথম দার্শনিক স্তর। ভারতীয় দর্শন অনুসারে বলা সম্ভব, যা ধারণ করে তা-ই ধর্ম। ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধারণার সাথে তুলনা করে ধর্মের সংজ্ঞা নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন; তিনি তাঁর ‘ধর্ম ও লোকাচার’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘পাশ্চাত্য মতে ধর্ম জীবনের একটি বহিরঙ্গ, কিন্তু প্রাচ্য মতে ইহা জীবনের অবলম্বন—ধর্ম ব্যতীত ব্যষ্টি কিংবা সমষ্টির কোন পরিচয় নাই।’
ধর্মকে বুঝতে হলে বিবেচনায় রাখতে হবে মানবসভ্যতায় খাদ্য-সংগ্রাহক স্তর থেকে খাদ্য-উৎপাদনের স্তরে অগ্রসর হওয়ার ঘাতসমূহ। শুধু তা-ই নয় উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং উৎপাদন থেকে উদ্বৃত্ত এবং সেই উদ্বৃত্ত বিষয়াদির ওপর ভিত্তি করে কীভাবে প্রাচীন নগরসমূহ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এর প্রতিটি স্তরের সাথে সংযুক্ত রয়েছে ধর্মীয় বিষয়াদি ও এর বিকাশ। যেমন আমরা জানি, শিকারজীবী পর্যায়ে সমাজ ছিল পুরুষপ্রধান; কেননা পশুপালন মূলত পুরুষালি কাজ। পশু শুধু জীবনধারণের উপকরণই নয় পাশাপাশি তা সম্পত্তিও বটে, যা রক্ষা করা যায় অথবা লুণ্ঠন করে বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ সম্পত্তিই সুবিধাভোগী শ্রেণির উদ্ভব ঘটায়। এক সময় এ সম্পদই তাদেরকে যুদ্ধপরায়ণ করে তোলে। সম্পদ থাকলে এর জন্য প্রয়োজন উত্তরাধিকার, ফলে পশুপালক সমাজ পিতৃপ্রধান; যেখানে স্ত্রীরা হয়ে ওঠে স্বামীর অনুগত।
আমরা দেখতে পাই পশুপালক সমাজের এই সমাজবিন্যাসের নানা স্তর তাদের ধর্মে স্থান করে নিয়েছে; কারণ মানবসমাজের প্রয়োজন থেকেই গড়ে উঠেছে বিশ্বাস, আর বিশ্বাস হলো ধর্মের প্রথম শর্ত। যেহেতু পশুপালক সমাজ প্রাকৃতিক শক্তি নির্ভর সেহেতু আমরা দেখতে পাই প্রাকৃতিক শক্তিগুলি তাদের দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে দেবীদের স্থান গৌণ, বরং এদের ‘প্রধান দেবতা যুদ্ধবাজ দলনেতারই প্রতিচ্ছবি। তাদের পুরাণাদি যুদ্ধের কাহিনিতে ভরপুর। আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের শিকারজীবী ঐতিহ্যের প্রতিফলন সুস্পষ্ট, পুরাতন আমলের জাদু-বিশ্বাসমূলক অনুষ্ঠানগুলি যাগযজ্ঞ ও পশুবলিতে আরও পল্লবিত। পক্ষান্তরে কৃষিজীবী সমাজের ধর্ম ব্যবস্থায় আরও সুদূর অতীতের মাতৃপ্রাধান্যের একটি নবরূপের প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। কৃষিকাজ মেয়েদের আবিষ্কার ও মেয়েদের দ্বারাই বর্ধিত। তাই কৃষিজীবী সমাজজীবনের প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে, অন্তত পশুবাহিত লাঙল প্রবর্তিত হবার পূর্ব পর্যন্ত, নারীপ্রাধান্য কিছুটা অবধারিত ছিল। আদি কৃষিজীবীদের কল্পনায় জীবনদায়িনী মানবী মাতা ও শস্যদায়িনী পৃথিবী বা বসুমাতা একাকার হয়ে গেছে। মানবিক ও প্রাকৃতিক ফলপ্রসূতা একই সূত্রে বাঁধা পড়েছে। মাতৃত্বের দেবী শস্যের দেবীতে রূপান্তরিতা হয়েছেন। আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে উর্বরতা-মূলক জাদুবিশ্বাসের প্রভাব বেড়েছে।’ [ড. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস]

মানুষকে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়। এই শিক্ষা সে পুরাণের কাছ থেকেই পেয়েছে। এই শিক্ষা তাকে বলে দেয়, মানুষ কখনও মানুষ হয়ে জন্ম নেয় না; সে জন্মের পর থেকে ক্রমাগত তার রিপুর সাথে যুদ্ধরত; ক্রমাগত মনুষ্যত্বের দিকে এগিয়ে যাবার তাড়নায় তাকে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। যে যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়ে, সে শেষাবধি পশু-শক্তির কব্জায় আটকে থাকে। প্রাণিজগতে পশু আর মানুষের পার্থক্য এখানেই; মানুষ ক্রমাগত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য যুদ্ধরত আর পশুকুলের ভেতর এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো বোধ-বুদ্ধি অথবা সত্তা অথবা মানুষ হয়ে ওঠার মতো কোনো ভাষা নেই। মনুষ্যত্বের এই চেতনাগত শিক্ষা পেতে হলে আমাদের মিথের কাছে ফিরে আসতে হয়। ফিরতে হয় মানুষের সৃজনী চেতনার কাছে; মিথের রূপকল্পের কাছে; কেননা মিথের রূপকল্প ছাড়া এই অপার চেতনার কথা প্রকাশ করা অসম্ভব। কেননা এই চেতনা মানব-প্রজন্মের উৎস থেকে বিকাশ অবধি অভিজ্ঞতার আলোকে অগ্রসরমান।
দেহই শেষাবধি নরক অথবা স্বর্গের আধার; এই দেহের ভেতরেই রয়েছে ঈশ্বর অথবা শয়তান। যতক্ষণ আমরা দেহ ধারণ করি ততক্ষণ আমাদের জীবন। জন্মের আগে আমি শূন্য; মৃত্যুর পর আমি শূন্য। সুতরাং দেহ রোমন্থনে খুঁজতে হচ্ছে এমন এক রিদম, যে রিদম আমার ভেতর জাগিয়ে দেবে সিম্ফনি; এই সিম্ফনির সাধনায় দেহ ঘিরে যে দুর্গন্ধ বিদ্যমান, তা রূপান্তরিত হয় সুগন্ধীর মন্দিরে; মৎসগন্ধার ক্ষেত্রে যেমনটি ঘটেছিলো। ভারতীয় মিথে আমরা দেখতে পাই, ব্যাসের মা মৎস্যগন্ধা; তার আরও এক নাম সত্যবতী। মহাভারত অনুসারে মৎসগন্ধার বাবার পেশা ছিলো মাছ ধরা। বাবার নির্দেশ মতো মৎসগন্ধার কাজ ছিলো নৌকা বাওয়া। কোনো একদিন পরাশর নামে এক সাধক মুনি মৎসগন্ধার নৌকাতে করে নদী পার হবার সময় মৎসগন্ধার প্রতি প্রণয়াসক্ত হন। এক পর্যায়ে মৎসগন্ধার শরীরের দুর্গন্ধের কারণে পরাশর মুনি বিরক্ত হন; তিনি তপোবলে মৎসগন্ধার শরীরের দুর্গন্ধ দূর করে সুগন্ধের ব্যবস্থা করেন। তখন থেকে মৎসগন্ধার নাম হলো গন্ধবতী; এক যোজন দূর থেকে তার গন্ধ পাওয়া যেত সেজন্য লোকে তাকে যোজনগন্ধাও বলত।
এই গন্ধবতীর আরাধনা রূপকার্থে পূণ্যময় জীবনের আরাধনা। মানুষ সেই পূণ্যময় আরাধনার পথে ধাবিত। মানব দেহ সেই পূণ্যময় শরীরের আলোকে পরিশুদ্ধতার দিকে অগ্রসরমান। এই অগ্রসরতা শুধু যৌনতার দিকে নয়; পক্ষান্তরে এই যৌনতা সৃজনশীলতার প্রণোদনা শক্তি হিসেবে সৃজনী চেতনায় বিবর্তিত হয়েছে। এই বিবর্তন প্রক্রিয়া মিথের রূপকল্পে যেভাবে প্রকাশ করা সম্ভব সেভাবে মানব ভাষায় আর কোনো উপায়ে সম্ভব নয়। কেননা মিথ তাৎক্ষণিক সত্যকে প্রকাশ করে না বরং সে প্রকাশ করে অভিজ্ঞতালব্ধ সত্যের জগৎ। ফলে পুরাণ বা মিথের শিক্ষা অভ্রান্ত; এবং তা মোটেও হঠকারীমূলক কোনো ক্ষণিক প্রতিভাস মাত্র নয়।
বৃহদারণ্যক উপনিষদে যেমন দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত পৃথিবীর উদাহরণ পাওয়া যায় তেমনই এ একই উদাহরণ পাওয়া যায় মানুষের অন্তরে। ফলে মানুষের অন্তরে ক্রমাগত বেড়ে ওঠে ‘কাম’; ‘কাম’ অর্থ ‘জন্ম-শর্ত’; ‘কাম’ অর্থ ‘ক্ষয় ও জরা’, অবশেষে ‘মৃত্যু’ এবং ‘প্রশান্তি’। ‘প্যাশন’ বা ‘কাম’ থেকেই যাবতীয় পাপের উদ্ভব; পাপ-চেতনা পক্ষান্তরে মিথ-চৈতনার অপর পিঠ। এই পাপ-চেতনা, সেইসাথে পৃথিবীর অভিজ্ঞতায় এই পাপের বিন্যাস এত ব্যাপক ও বিশাল যে, এই পাপ-চেতনা শেষ পর্যন্ত এমনভাবে পৃথিবীর অভিজ্ঞতার আদি-অন্তে ক্রিয়াশীল যে, যার ফলাফলে পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর উদ্ভব অর্থাৎ জন্ম। এমন একটি ভয়ানক সত্যের জগৎকে উপস্থাপনের জন্য অনিবার্যই প্রয়োজন হয় পুরাণকল্পের। পুরাণের এই রূপকল্প মানুষের কাছে মৃত্যুর মত ভয়ানক ঘৃণিত বিষয়কেও সহনীয় করে তোলে। পৃথিবী জন্মের চূড়ান্ত সত্যের ভেতরেই রয়ে গিয়েছে মৃত্যুকে অতিক্রম করার অনিবার্য আকাঙ্ক্ষা। আমরা যখন বলি ‘মানুষ তো মৃত্যুর দাস’ তখন মানব প্রজন্মের প্রজন্মগত অভিজ্ঞার আলোকে আমাদের অহং আমাদের উন্নীত করে এমন এক চেতনায় যে চেতনার আলোকে কেবলই মনে হতে থাকে মৃত্যু আসলে ভয়ঙ্কর কিছু নয়; ফলে পক্ষান্তরে আমরা মৃত্যুকেই দাসত্ববরণে বাধ্য করাই। আমরা হয়ে উঠি চিরন্তন প্রকৃতির অংশ। আর এ অবস্থায় মানবপরিবার হয়ে ওঠে মৃত্যুর ঊর্ধ্বে আরও এক সত্তা; যে সত্তা প্রকৃতিরই অংশ। সুতরাং উপনিষদের ভেতর আমরা দেখতে পাই, মানব অভিজ্ঞতা তার চেতনাকে তার সূচনাপর্বের আলোকে, তার পৌরাণিক সময়ের ভেতর তাদের লব্ধ অভিজ্ঞতাকে ধারণ করেছে।
রামায়ণে পাওয়া যায়, ‘কামরূপিণী রাক্ষসী নানাপ্রকার রূপ ধারণ করে, কখনও-বা অদৃশ্য হয়ে রাম-লক্ষণকে বিমোহিত করে প্রচণ্ড শিলাবর্ষণ করতে লাগল। তা দেখে বিশ্বামিত্র বললেন, রাম, তুমি এই পাপীয়সী দুষ্টচারিণী যজ্ঞবিঘ্নকারী যক্ষীকে দয়া করো না, এর মায়াবল বাড়বার আগেই সন্ধ্যার পূর্বে একে বধ কর। রাক্ষসজাতি সন্ধ্যাকালেই দুর্ধর্ষ হয়।’ [বাল্মীকি রামায়ণ, অনু., রাজশেখর বসু] রাক্ষস অর্থ ‘রিপু’; রাক্ষসের আক্রমণের অর্থ রিপুর আক্রমণ; রিপু অর্থ দৈহিক পিপাসা, অনিবার্য চাহিদা ও কাম; মানবদেহ সন্ধ্যাকালে কামতাড়নায় বিকারগ্রস্ত হয়। এই কামের বশবর্তী হয়ে পবন দেবতা কুশনাভের শতকন্যার রূপে আকৃষ্ট হয়, তাদের প্রেম কামনা করে। কিন্তু কোনো কন্যাই এতে সাড়া দেয় না; এতে পবন দেব ক্ষোভে তাদের বিকলাঙ্গ করে দেয়। এই যে ‘কাম ও ক্ষোভ’ এই ‘কাম ও ক্ষোভে’র প্রতিরূপ হলো প্রকৃতিজগতের ‘ঝড়’ অর্থাৎ ‘প্রলয়’। যে প্রলয় কাম ও ক্ষোভের মতই পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে, ফলে বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে মানব প্রজাতি সৃষ্টি করে নতুন পৃথিবীর। কাম অর্থ এমন এক অনিবার্য আকর্ষণ যে আকর্ষণের কোনো বিকল্প নেই; যার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্ম নিশ্চিত হয়। আর কামের বিপরীত শক্তি হলো ক্ষোভ। ক্ষোভ অর্থ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত। ভারতীয় দর্শন মতে, এই কাম মানবজগতকে জন্ম-মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের অন্তহীনচক্রে আমাদের বেঁধে রেখেছে।
এই যে কাম ও ক্ষোভের মহাবলয়ে জগতের ভাঙা-গড়া, এই ভাঙা-গড়ার সাথে রয়েছে মানব প্রজাতির সংশ্লিষ্টতা। এই সংশ্লিষ্টতার কারণেই জন্ম নেয় সংস্কৃতি; যে সংস্কৃতির কারণেই মানুষ শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির অংশ হওয়া সত্ত্বেও সে প্রকৃতি অপেক্ষা অধিক শক্তিমান; সে দেবতা এবং মহাজগতের নিয়ন্ত্রক। মানুষের সাথে মহাকালের ক্রিয়াদির রূপক গল্প উপস্থাপন করে পুরাণ। যেমন, বানররাজ কেশরীর রাজত্ব সুমেরু পর্বতের ওপর। পুঞ্জিকাস্থলী নামে এক অপ্সরা বানররাজের প্রেমে পড়ে; এই অপ্সরা কোনো এক ঋষির শাপে বানরীরূপ প্রাপ্ত হয়েছে; কেশরীর সাথে বিয়ের পর তার নাম হয় অঞ্জনা। একদিন অঞ্জনার রূপে মুগ্ধ হয়ে বায়ুদেবতা তাকে আলিঙ্গন করেন এবং তার সাথে মিলিত হওয়ার ফলে বায়ুর মত বেগবান এক পুত্রের জন্ম হয়, নাম হনুমান।
এই পুরাণকথার মর্মার্থ অনুসন্ধানে পাওয়া সম্ভব, সুমেরু পর্বত সৃষ্টিরহস্যের মহাশক্তির প্রতি ইঙ্গিত দেয়; বানররাজ কেশরী মানবজাতির আরও এক প্রতীকী উপস্থাপন; যার সাথে মানবজাতির সংস্কৃতির বিবর্তন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত। বানররাজ কেশরীর স্ত্রী অঞ্জনা জন্ম-সৃষ্টির প্রতীক; বায়ুদেবতার সাথে অঞ্জনার অনৈতিক মিলনের মধ্য দিয়ে পাওয়া যায় যৌনতা ও ক্ষমতা; কিন্তু যখনই এ যৌনতার সাথে এসে সংযুক্ত হয়েছে মোহনীয়তা-মুগ্ধতা ও প্রেম তখন যৌনতা হয়ে ওঠে সৃজনশীলতার প্রতীক; ফলে জীবন গতিলাভ করে, বায়ুর গতির সমতুল্য হনুমানের জন্ম হয়; যে হনুমান তার গতিকে ব্যবহার করবে মানবজাতির মঙ্গলার্থে। শুধু তা-ই নয়, হনুমান প্রসঙ্গের আলোকে রামায়ণ প্রসঙ্গের অবতারণার অর্থ হলো মানবসভ্যতার ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া। যে ইতিহাস শুরু হয়েছে পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে; অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে নগর-সভ্যতার প্রতিভাস সূচিত হয়েছে এই পুরাণকল্পের মধ্য দিয়ে।
পুরাণ অনুধ্যানে চলচ্চিত্রের মতো অভিনয়লব্ধ কোনো ছবির প্রয়োজন হয় না; বরং পুরাণ পাঠকের চেতনালোকে এমন এক ধরনের উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে যা চলচ্চিত্র অপেক্ষা শক্তিমান। যেমন পুরাণ অনুধ্যানে উপনীষদের দুর্ভিক্ষ চিত্রের মতো আধুনিক বিশ্বে আমাদের ভেতরে যে সংকট তা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি সংকটকে অতিক্রম করে পৌঁছে যায় যৌথ সংকটে। এই সংকটচিত্র গোষ্ঠীস্বপ্নের মতো পুরাণকথার পথ ধরে পৌঁছে যায় এক অভিজ্ঞতা থেকে আরেক অভিজ্ঞতায়; এবং এক স্তর থেকে আরেক স্তরে উন্নীত হয়ে তৈরী হয় এক মহাকালিক ইমেজ। ফলে স্মৃতি থেকে স্মৃতির স্বগত কথন, অতীত থেকে বর্তমান অথবা বর্তমান থেকে অতীত, কখনও-বা অনাগত কালের সৃষ্টিশীল আকাঙ্ক্ষায় এসে স্ফূর্তিলাভ করে পুরাণকল্প। বৃহদারণ্যক উপনিষদের কাহিনিতে পাওয়া যায়, ‘একবার এক প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সব নদী, নির্ঝর শুকিয়ে গেল। গাছের পাতা জলের অভাবে ঝরে পড়ল। সমগ্র সৃষ্টি অপেক্ষা করে আছে কখন মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি আসবে। কিন্তু বৃষ্টি আর আসে না। ভয়ে দিশেহারা হলো জীবকুল সৃষ্টি বুঝি যায় যায়। মানব, দানব, দেবতা মিলে চলল প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে, আর তখন মেঘের অন্তরালে বজ্রকণ্ঠে তিনবার ধ্বনিত হলো দ দ দ। দত্তম, দয়ধ্বম, দম্যতম। দান করো তোমার অহংকার; দয়া করো জীবকুলকে; দমন করো নিজেকে।’ [তারেক আহসান, এলিয়ট, দি ওয়েস্ট ল্যান্ড ও ভারতীয় দর্শন]
এই হলো মিথের জগৎ; সুতরাং মানুষ মৃত্যুর বিছানা থেকে ফিরে এসে আবিষ্কার করে মানুষের ভেতরের দেবতাকে। সেই সাথে দেখতে পায় দেবতার সাথে যুদ্ধরত শয়তানকে। আর যেহেতু এই দেবতা আর শয়তানের সহবস্থানেই মানুষের জন্ম; সেহেতু মানুষ এক অপার রহস্যে আবর্তিত অপার সম্ভবনাময় জীব। জীবজগতে মানুষই একমাত্র জীব যে কিনা প্রতিনিয়ত নিজেকে তৈরী করতে থাকে কিছুটা মানুষ অথবা কিছুটা পশু হিসেবে। এই পশু আর মানুষ, এই যে দ্বৈরথ শক্তি, এই শক্তির যথার্থ ব্যাখ্যা একমাত্র মিথের আলোকেই উপস্থাপন করা সম্ভব। মানুষ শেষ পর্যন্ত কোথায় যায়? এই জিজ্ঞাসা মানব প্রজন্মের চিরন্তন জিজ্ঞাসা। এর উত্তর মানব প্রজন্ম, প্রজন্ম পরম্পরায় অনুসন্ধান করে; এই অনুসন্ধানের অভিজ্ঞান নিয়ে মিথ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়।
পুরাণ আমাদের মৃত্যুকে অতিক্রম করতে শেখায়। বিষয়টিকে বোধগম্য করার লক্ষ্যে আমরা একটি পৌরাণিক কাহিনি বেছে নিতে পারি। যেমন, নীচুবংশে জন্ম এমন এক পৌরাণিক চরিত্র ‘শবরী’। শবরী ব্রহ্মচারিণী। এক সময় এই নারী পম্পা নদীর তীরে মাতঙ্গ ঋষির আশ্রমে মুনি-ঋষিদের পরিচালিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘পম্পা’ নদীর ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কেননা এ নদীটি আসলে রামায়ণে বর্ণিত পৌরাণিক নদী। সুতরাং বিষয়টিকে রূপকার্থে গ্রহণ করলে প্রকৃত তাৎপর্যে অনুপ্রবেশ সম্ভব। যাই হোক, দায়িত্ব পালনকালে শবরী রমণীকে তপসীরা বলেছিলেন, যদি কোনোদিন ‘রাম’ এই আশ্রমে এসে তাঁকে দেখা দেয় তাহলে শবরী এমন জায়গায় পৌঁছাতে পারবে যেখান থেকে কেউ আর কখনও ফেরত আসে না। তারপর থেকে শবরী রামচন্দ্রের অপেক্ষায় প্রতিদিন রামের জন্য বনের ফল সংগ্রহ করে রাখে। এরপর, ‘একদিন রামচন্দ্র যখন অপহৃতা সীতার অন্বেষণে সেখানে উপস্থিত হলেন, তখন শবরী করজোড়ে দণ্ডায়মান হয়ে রামের চরণে পতিত হলেন। রামের প্রশ্নের উত্তরে শবরী বলেন—রামের শুভ আগমনে তাঁর জন্ম সার্থক এবং গুরুসেবা সফল হলো। এবারে তিনি দেবলোক-প্রাপ্ত হবেন। এইরূপে রামের সেবা করে জটাবতী চীর-অজিন-ধারিণী শবরী অগ্নিতে দেহ আহুতি দিয়ে স্বর্গলোকে গমন করলেন।’ [সুধীরচন্দ্র সরকার, পৌরাণিক অভিধান]
এই পৌরাণিক কাহিনি আমাদের মৃত্যু-উত্তীর্ণ চিরন্তন জীবনের কথা বলে। মানব জীবনের আকাঙ্ক্ষা মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে বেঁচে থাকা, হতে পারে তা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। আর তাই জরাপ্রাপ্ত দেহ পরিত্যাগ করে শবরী পৌঁছে যান চিরন্তন দেবলোকে; যে জগৎ অনন্তের আধারে চিররক্ষিত। এই দেহহীন জগৎ আর দেহময় জগতের যোগাযোগ চিরন্তন; এই শাশ্বত চেতনা আমাদের পক্ষান্তরে অলৌকিক যৌবনের কথাই বলে। এই ইঙ্গিত পৌরাণিক তাৎপর্যে, পৌরাণিক ইঙ্গিতে উন্নীত হয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখোমুখিতে দাঁড় করিয়ে দিয়ে লড়াই করতে শেখায়; এই লড়াই করার সাধনায় মানুষ যখন ক্রমাগত মৃত্যু-উত্তীর্ণ জীবনের সন্ধান পেতে শুরু করে তখন জীবনী দোলকের অহংকারে মানুষ চিরন্তনী চেতনা প্রাপ্ত হয়। মৃত্যুর সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করার চেতনাই মানুষকে আজও প্রকৃতির বিপরীতে টিকিয়ে রেখেছে; তাকে ক্রমাগত পৌঁছে দিয়েছে ‘মানুষ’ অভিধায়। আর এভাবে প্রকৃত জীবনের আহ্লাদ বুঝে ওঠার আগেই তাকে পারি দিতে হয় ‘আয়ুর নদী’। স্বর্ণালি দিন কখন যে পাড় হয়ে এসেছি আমরা তা বিশ্বাস করতে চাই না। বিশ্বাস করতে চাই না আমাদের আয়ুর নদী আমরা পাড় হয়ে এসেছি।
পুরাণবিষয়ক উপলব্ধির অর্থই হলো পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞান; অমোঘ অভিজ্ঞতা; এমন অজস্র অভিজ্ঞতা যে অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের নিয়তিকে পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে শেখায়। পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস বস্তুত দ্বন্দ্বের ইতিহাস। এই দ্বন্দ্ব, প্রতিনিয়ত সৃষ্টি এবং ধ্বংসের দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের রূপরেখাই আসলে মানবসভ্যতার ইতিহাস। এই ইতিহাসের সূতিকাগার হলো পুরাণকথা। পুরাণকল্প একজন মানুষকে নশ্বর পৃথিবীর নশ্বর জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে পৌঁছে দেয় এমন এক আধ্যাত্মচেতনার জগতে, যে জগৎ তাকে দেখতে শেখায় কেনই-বা মানুষ এই প্রকৃতিতে অনুপ্রবেশ করেছে; এই নশ্বর পৃথিবীতে তার করণীয়ই-বা কী; আর অবশেষে তার গন্তব্য কোথায়।
আমরা জানি, শিকারের যুগ থেকে কৃষির যুগে উত্তরণ ঘটার ফলে অথবা অপরাপর সভ্যতায় মানব পরিবারের উত্তরণ ঘটার কারণে মানুষের জীবন রহস্য বর্ণনার ধরনও বদলে যেতে থাকে। ফলে মিথের বিবর্তন শুরু হয়। সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে লোকবিশ্বাস। যেমন শিকারি যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিল, শিকারের মধ্যেই অর্থাৎ জীবনকে হত্যার মধ্যেই রয়েছে বাঁচার মূলমন্ত্র। কিন্তু কৃষি যুগে এসে মানুষ জীবন সংহার নয় বরং শস্যবীজের মধ্যেই রয়েছে জীবনের অনন্ত সম্ভাবনা এমন বিশ্বাসে বদলে যেতে থাকে। সুতরাং মিথের বিশ্বাসের সাথে যোগ হতে থাকে শস্য প্রতীক। অনন্ত জীবনধারার জাদুমন্ত্র ধারণ করে শস্য। শস্য হয়ে ওঠে জীবন ধারণের প্রতীক। আর শস্যবীজ মাটিতে বিনষ্ট না-হলে শস্য থেকে যায় নিষ্ফলা। অথচ মাটিতে পতিত হয়ে বিনষ্ট হওয়ামাত্র তা হয়ে ওঠে ফলবন্ত জরায়ু। এই ফলবন্ত জরায়ুই শেষ পর্যন্ত জীবন দানকারী ‘অন্ন’। ঋগ্বেদের প্রার্থনাতে মানব-পরিবার এই অন্নের জন্য নতজানু হয়েছে। এক পর্যায়ে মানব-পরিবারের এই প্রার্থনা এবং তাদের সেই অভিজ্ঞতালব্ধ সংগ্রামঘন ইতিহাস ক্রমাগত শক্তিতে, শক্তি থেকে দেবতাতে অর্থাৎ পৌরাণিক চরিত্রে রূপ লাভ করেছে।
এভাবে মিথের গল্পগুলোকে অথবা ধর্মকাহিনি তথা প্রার্থনাসংগীতগুলোকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ না-করে রূপক তাৎপর্যে গ্রহণ করলে পাওয়া যায় মানব-পরিবারভিত্তিক অভিজ্ঞতার আখ্যান-ইতিহাস। যেমন যিশু খ্রিস্টের পুনরাবির্ভাব বিষয়ক কাহিনির মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, বস্তুগত পার্থিব জীবনের চেয়েও যে মানবজীবন কতটা গভীর এরই সারার্থের প্রতি। বস্তুত দৃশ্যমান ও আপাত জীবন অপেক্ষাও যে মানুষের জীবন ব্যাপক ও বিস্তৃত সে ইঙ্গিতই পাওয়া যায় যিশুর এই কাহিনির আলোকে। এ বিষয়ে খালিকুজ্জামান ইলিয়াস ইঙ্গিত দিয়েছেন কীভাবে মিথ মানুষের এই আপাত জীবনকে ব্যাপক অর্থে তাৎপর্যময় করে তোলে। তাঁর মতে, ‘মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে মিথ এবং এজন্যই তা কেবল মানসিক নয় দৈহিক পদ্ধতিও প্রভাবিত করে। আদিম মানুষের ভয়ভীতি কোনও-না কোনও প্রকারে আজও আমাদের ভীত ও শিহরিত করে। মিথের গল্প এই মানসিক অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। নতুন জীবনে পদার্পণের সময় যুবককে মিথ যেমন পথ দেখায়, তেমনি সেই জীবন উত্তীর্ণ হতে এবং পরবর্তীকালে মৃত্যুকে সহজভাবে গ্রহণ করতেও তাকে সাহায্য করে মিথের গল্প।’

অর্থাৎ মানবৎ-পরিবার তার অনিবার্য মৃত্যুকে, মৃত্যুর তাৎপর্যকে আবিষ্কার করে থাকে মিথের মাধ্যমে। ইহকালই চূড়ান্ত জীবন, নাকি এই জীবনের ওপারেও কোনো জীবন আছে? এই জিজ্ঞাসাকে আরও খানিকটা উসকে দেয় পুরাণ। শুধু তাই নয়, সার্বিক অর্থে মানুষের আচার অনুষ্ঠানের প্রাচীন ও বর্তমান তাৎপর্য আবিষ্কারের চাবি হলো পুরাণ। কীভাবে পর্ব উদ্যাপনের মাধ্যমে ব্যক্তির মুক্তি সাধিত হয়; আবার ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষার মধ্যে কীভাবে মানব-পরিবারের আকাঙ্ক্ষা স্ফূর্তি লাভ করে; আর পুরাণকথার মধ্য দিয়ে মানব-পরিবার কীভাবে ক্ষণিকের মধ্যে চিরায়তকে অথবা সীমার মাঝে অসীমকে অথবা ব্যক্তির মধ্যে ঈশ্বরত্বকে উপলব্ধি করে;—এই সমস্ত কিছুরই গ্রন্থিমোচনের জন্য আমরা ফিরে আসতে বাধ্য হই পুরাণের কাছে। এবং চেতনাগত কারণেই সমষ্টিগত মানবপ্রজাতির বিশ্বাসের শেকড় অনুসন্ধান করতে আমরা আমাদের উপলব্ধিতে এক ধরনের তাড়না বোধ করি। আর এ কারণেই আমাদের পক্ষে রহস্যেঘেরা পুরাণকথা, ধর্মকথা, ইহকাল, পরকাল, ঈশ্বরচেতনা অথবা ঈশ্বরহীনতার বাইরে বসবাস করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কেননা মানবকুলের বৈশিষ্ট্য বা ধর্মই হলো ক্রমাগত শেকড় অনুসন্ধান করে অজ্ঞানতার রহস্য দূরে সরিয়ে ফেলা।

............................................................................আরো পড়ুন


মিথ-পুরাণের করণসূত্র : প্রজ্ঞা ও প্রকাশ || পর্ব-১

মিথ-পুরাণের করণসূত্র : প্রজ্ঞা ও প্রকাশ || পর্ব-২

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া