X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
বব ডিলানের সঙ্গে কথাবার্তা

গান গাইব বলেই আমি লিখি || পর্ব-১

সাক্ষাৎকার : স্কট কোহেন || অনুবাদ : অলকানন্দা সেনগুপ্ত
১৫ অক্টোবর ২০১৬, ২২:২৬আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৬, ২২:৪৪

বব ডিলান
কথা বলতে চাও আমার সঙ্গে? বেশ তো বলো। খবরের কাগজের বহু লোকই দেখি আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়, কিন্তু তারপর আর বলে না। হয়তো কোনো কারণ আছে তার, সেটাই রহস্য, যদি অবশ্য সত্যি তাই-ই হয়। কথা শেষ পর্যন্ত আমাকে বলতেই হয়। আমার ধারণা তাতে কাগজের বিক্রি বাড়ে। খবর মানে তো ব্যবসা। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কারো কোনো যোগ নেই, ফলে তার সঙ্গে তাল মেলানোরও কোনো চেষ্টা করি না আমি। রহস্য নিয়ে ভাবলে আমি নিজেকে নিয়ে ভাবি না, ভাবি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কথা। যেমন, সূর্য ডুবে গেলে চাঁদ ওঠে কেনো? শুঁয়োপোকা কেনো প্রজাপতি হয়?
এতকাল আমি সত্যি নির্জনে ছিলাম না। খবরের কাগজের লোকদের সঙ্গে এতকাল যে কথা বলিনি, তার কারণ আমার কিছু ব্যক্তিগত কাজ ছিল, নিজের সম্পর্কে কথা বলার চেয়ে তার গুরুত্ব নিশ্চয়ই অনেক বেশি। পারলে আমি এখনো চোখের আড়ালে থাকি। আমার জীবন নিয়ে অন্যেরা ভাববে, তারচেয়ে নিজের জীবন নিয়ে নিজে ভাবাটা নিশ্চয়ই অনেকে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরো, বাড়িওয়ালাকে বলতে হবে যে, জলের কলটা যেন ঠিক করে দেয় বা ছবি করার পয়সা দেবে এমন একটা লোক খুঁজে বার করতে হবে- এসব তো নিজেকেই করতে হয়, তাই না? কাগজে এসব নিয়ে বকে কী হবে? অন্যেরা এসব জানলে সমস্যা বাড়বে, তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত নই। আর তাছাড়া নিজের সম্পর্কে কথা বলতে আমার ভাল্লাগে না। বরং যেসব বিষয়ে আমার সত্যি বলার আছে- যেমন, বস্তি অঞ্চলের প্রভু, পাপ আর মুক্তি, প্রবল লালসা, কিংবা খুনিরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, শিশুদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই- এসব লোকে ছাপতে চায় না। এদিকে, যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর তারা ছাপতে চায়, সেসব আমার জানা নেই।
আমি বরং সাক্ষাৎকার নিতে চাই যাদের, তাদের অনেকে আজ বেঁচে নেই। যেমন, হাঙ্ক উইলিয়মস, আপোলিন্যের, বাইবেল-এর যোসেফ, মেরিলিন মনরো, জন কেনেডি, মুহম্মদ, যিশুর শিষ্য পল, হয়তো, উইলকেস বুথ বা গোগোল। আমি তাঁদের সাক্ষাৎকারই নিতে চাই, যাঁদের নিয়ে বিস্তর অসমাধিত রহস্য থেকে গেছে, কল্পনা ছাড়া সেখানে আর কিছুই করার নেই। জীবিত লোকদের মধ্যে কার কথা বলবো? কাস্ত্রো? গর্বাচেভ? রেগন? হিলসাইড স্ট্র্যাংলার্স? এরা তোমায় কী বলবে? দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী লোকদের নিয়তি কী, তা জানার কোনো আগ্রহ নেই আমার। আমি জানি কী তাদের পুরস্কার। কারও কাজ যদি আমার ভালো লাগে তো সেটা আমি ঠিক সেই অবস্থাতেই রেখে দিতে চাই। কেউ যদি কিছু করে থাকে, সেটা কীভাবে করলো, এ আর জেনে কী হবে? তার দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি খবরই পাওয়া যাবে খালি। ‘মাছ খাও না? কেনো?- এরকম আর কী। আমি যা খুঁজে বেড়াই, এ সবে তার কোনো উত্তর নেই।
ব্যাটম্যান আর রবিন জাতীয় সানগ্লাস দিয়ে শুরু করেছিলাম। এ ব্যাপারে কালো প্ল্যাস্টিকের মুখোশযুক্ত মোটরসাইকেলের হেলমেটই অবশ্য সবচেয়ে ভালো, তাতে মাথার পেছন দিকটাও দেখা যায় না। সানগ্লাস কেনা তো সহজ, জুতো কেনাটাই হুজ্জুতির- এটা পরে দেখো, ওটা পরে দেখো। এমন একটা চশমা আমি খুঁজছি যার দৃষ্টি দেওয়াল ভেদ করে যায়, সেটা সানগ্লাস, না অন্য কিছু, তাতে কী আসে যায়।
লোকে সবসময় আমার কাছে ’৬০-এর কথা জানতে চায়। আমি বলি, শোনো, ঐ সময়টা সম্পর্কে সত্যি জানার আগ্রহ থাকলে নর্মান মেলার-এর ‘আর্মিস অফ দ্য নাইট’ পড়ো, মার্শাল ম্যাকলুহান, কি আব্রাহাম মাশলো পড়ো। কত লোক তো লিখেছে ’৬০ নিয়ে, ভালোই লিখেছে, সত্যি কথাই লিখেছে। গায়করা তো তার একটা অংশ। আমি বরং অত কিছু বলতে পারবো না। কিছু কিছু আমার মনে আছে, কিন্তু আবার একদম ঝাপসা হয়ে গেছে। খুব চেষ্টো করলেও হয়ত মনে পড়বে সামান্য। অন্যেরা বরং সেসব অনেক বিশদে বলতে পারবে। গিন্সবার্গ পারবে, কেরুয়াক পারবে। কেরুয়াক তো কিচ্ছু ভোলেনি।
মাইলস ডেভিসই হচ্ছে আমার কাছে প্রশান্তির পরাকাষ্ঠা। দর্শকের দিকে পেছন করে ছোট ছোট ক্লাবে ও বাজাচ্ছে দেখলে আজও ভালো লাগবে আমার। হঠাৎই হাতের যন্ত্রটা নামিয়ে রেখে মঞ্চ ছেড়ে চলে গেল, ব্যান্ড বেজে যাচ্ছে, ফিরে এসে শেষ দু’একটা নোট বাজিয়ে ছেড়ে দিল। আমি এ রকম কয়েকবার করে দেখেছি, লোকে ভাবে আমি বোধহয় অসুস্থ।
আমার প্রথম পপ-হিরো জনি রে। ’৭৮-এর শেষ দিকে তাকে দেখেছিলাম। ক্লাবের লাউঞ্জে বাজাচ্ছিল। আমার ধারণা ও এখনো বেঁচে আছে। কী যে ভালো ছিলো ও! লোকে ভুলে গেলো।
টিভিতে খেলা আমি কখনো দেখি না।  গত বছর ইংল্যান্ডে থাকার সময়ে উইম্বলডনে ম্যাকেনরোকে অবশ্য দেখলাম কোনর্সকে কীভাবে হারালো। মঞ্চের পেছনে একটা টিভি ছিল, একটু আগে পৌঁছে দেখছিলাম। কী আর করি? খুব মন দিয়ে খেলাটা দেখলাম। ছোটবেলায় হকি খেলেছি, বেসবল বা বাস্কেটবল তত খেলিনি। ফুটবল তো ছুঁয়েই দেখিনি।
বব ডিলান আমার জীবনে যত নারী এসেছে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। সকলে আমার খুব ভালো বন্ধু।
কোনো মেয়েকে চিঠির আদলে লেখা নাথানিয়েল হথর্ন-এর একটা বই পড়েছিলাম, খুব ব্যক্তিগত লেখার ধরন, তাতে নিজেকে খুঁজে পাইনি, কিন্তু তিনি কী বলতে চাইছেন সেটা বুঝেছিলাম। আমার গানে আমার অনেক কিছুই ঢুকে বসে আছে। কখনো নিজেকে বলি, না-না, এ বদলাতে হবে, এত ব্যক্তিগত রাখা চলবে না; আবার কখনো বলি, থাক না, কেউ যদি এসব ঘেঁটে আমি লোকটা কেমন তা বুঝতে চায় তো বুঝুক, সেটা তার ব্যাপার।
সবচেয়ে ভালো গান হচ্ছে সেই সমস্ত গান, যা তুমি লিখলেও যার সম্পর্কে তুমি প্রায় কিছুই জানো না। এ যেন এক মুক্তির মতো। এরকম অবশ্য আমি খুব বেশি করি না, কারণ কল্পনা করা ছাড়া যেখানে আর কিছু করার নেই সেখানে নিজেকে আটকে ফেলার চেয়ে বোধহয় চারপাশে যা ঘটছে তা নিয়ে কাজ করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তুমি যদি এমন কিছু কল্পনা করতে পারো যা তোমার অভিজ্ঞতায় নেই, তা হলে প্রায়ই দেখা যায় যে অন্য কেউ হয়তো তার মধ্যে দিয়ে গেল আর সে তখন তার সঙ্গে একাত্মবোধ করলো। পো-র ‘দ্য টেল-টেল হার্ট’ বা ‘দ্য পিট অ্যান্ড দ্য পেন্ডুলাম’ ইত্যাদির মতো গল্পগুলো সম্পর্কে আমি তাই ভাবি। তাঁর জীবনে আর এসব অভিজ্ঞতা হওয়ার সুযোগ কোথায় ছিলো? তিনি স্রেফ চিলেকোঠার ঘরে বসে গল্পগুলো লিখেছেন আর লোকে ভেবেছে, আরে, এ তো ভারি অদ্ভুত লোক! এটা যে পদ্ধতি হিসেবে খুবই অবৈধ তা অবশ্য আমি মনে করি না, কিন্তু ওদিকে আবার হেরমান মেলভিল-এর মতো লোকেরা আছেন, যাঁরা সব তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন। যেমন, ‘মবি ডিক’ বা ‘কনফিডেন্স ম্যান।’ অবশ্য তাতেও যে কল্পনার মিশেল নেই তা নয়। লেখালেখি নিয়ে আমার যে কিছু বলার হক আছে, এ কথা ধরে নেওয়া হলেও ঘটনা হচ্ছে, এ সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। জানার তেমন কিছু আছে কি না, তা-ও জানি না।
গান গাইতাম বলে আমি প্রথম লিখতে শুরু করি। লিখতে শুরু করি, কারণ চারপাশটা খালি বদলে-বদলে যাচ্ছিল আর তা নিয়ে গান-টান লেখার দরকার হয়ে পড়ছিল। গান গাইবো বলেই আমি লিখি। এসব গান অন্য কেউ লিখলে আমার আর লেখার কোনো দরকারই হতো না। যাই হোক, কান টানলে মাথা আসে, সেরকম আমিও আমার গান লিখে যেতে খাকি, কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজও নয়। এজন্য তো আমি নিজেকে তৈরি করিনি, নিজে লেখার আগেও গান আমি অনেকে গেয়েছি। (চলবে)

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া