X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কেস ও কাস্ত্রোর বিতর্কিত বন্ধুত্ব

দুলাল আল মনসুর
২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৩২আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৪


লাতিন আমেরিকার অন্যতম পাঠক-নন্দিত লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এবং কিউবার সদ্য-প্রয়াত বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মধ্যে বন্ধুত্ব বিশ্বব্যাপী কৌতুহলের ঢেউ ছড়িয়েছে। কিউবার পক্ষে যাদের সমর্থন ছিল তারা তাঁদের বন্ধুত্ব নিয়ে কটু কথা বলার চেষ্টা করেননি। কিন্তু অন্য শিবিরের আরও অনেক সমর্থক আছেন বা ছিলেন যারা মার্কেসকে আক্রমণের সুযোগ নিয়েছেন ঠিকই। কিউবার বিপ্লবের একদম শুরুর দিক থেকেই কাস্ত্রোর প্রতি সমর্থন ছিল মার্কেসের। আর এর পেছনের কারণও ছিল মার্কেসের লেখার প্রতি কাস্ত্রোর প্রশংসা। বই আকারে প্রকাশের আগে কাস্ত্রোকে তাঁর পাণ্ডুলিপি দেখাতেন মার্কেস। মার্কেসকে কাস্ত্রো খাঁটি বন্ধুও বলেছেন। কাস্ত্রোর শাসনের এক পর্যায়ে তাঁর পেছনের কেউ কেউ তাঁর প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেললেও মার্কেস কিন্তু কাস্ত্রোর প্রতি তাঁর সমর্থন অটুট রেখেছেন। মার্কেস ১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তখন কাস্ত্রো তাঁর জন্য ১৫০০ বোতল কিউবান রাম পাঠিয়েছিলেন স্টকহোমে। তারপরে মার্কেসকে হাভানার সিবোনি ডিস্ট্রিক্টে বাড়ি উপহারও দিয়েছিলেন। সে বাড়িতে মার্কেস অফুরন্ত সময় কাটিয়েছেন। কাস্ত্রোও হাজির হয়েছেন সে বাড়িতে বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা দিতে। সেখানে মার্কেসের উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
কারো কারো মতে, মার্কেসের উজ্জ্বল লেখক ক্যারিয়ারে বিতর্কের দাগ লেগেছে কাস্ত্রোর প্রতি তাঁর অবিচল বন্ধুত্বের সমর্থনের কারণে। স্প্যানিস এবং বেলজিয়ান লেখক জুটি অ্যাঞ্জেল এস্তেবান এবং স্তেফানি পানিসেলি মার্কেস এবং কাস্ত্রোর দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভেতর সন্দেহী দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন তাঁদের “গ্যাবো ই ফিদেল : এল পাইসাহে দে উনা” জীবনীগ্রন্থে। তাঁদের মতে মার্কেস এবং কাস্ত্রোর বন্ধুত্ব ছিল অস্বাভাবিক এবং নীতিবর্জিত। তাঁরা বলেছেন, গার্সিয়া মার্কেস তাঁর কথাসাহিত্য এবং ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষমতার জন্য বুদ হয়ে ছিলেন এবং কাস্ত্রোর সঙ্গে বন্ধুত্বের মাধমে পেয়েছিলেন রাজনৈতিক প্রভাব। অন্যদিকে কাস্ত্রোর দরকার ছিল সাংস্কৃতিক মর্যাদা এবং শক্তিশালী প্রচারকের। মার্কেসকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে তাঁরও স্বার্থলাভ হয়েছিল। তাঁরা মার্কেসকে সমালোচনায় বিদ্ধ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। তবে সর্বোপরি তাঁদের মতামতের মধ্যে আবেগী আক্রমণের চেহারা বেশ স্পষ্ট।
কাস্ত্রোর কাছ থেকে মার্কেস বন্ধুত্বের হাত গুটিয়ে নেননি ঠিকই। তবে তিনি কাস্ত্রোর কোনো কোনো কঠোরতার সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি। তিনিই কাস্ত্রোকে শান্ত করার ক্ষমতা রাখতেন।  
কাস্ত্রোর সঙ্গে মার্কেসের প্রথম দেখা হয়, ১৯৫৯ সালের জানুয়ারির ১৯ তারিখে। তখন কাস্ত্রো বাতিস্তা আমলের অপরাধীদের বিচারে ‘অপারেশন ট্রুথ’ শুরু করেন। ১৯৬০-এর দশকে মার্কেস এবং তাঁর সাংবাদিক বন্ধু আপুলিও মেনডোজা বোগোতায় প্রেসনা ল্যাটিনার নতুন অফিস খোলার দায়িত্ব পান। মার্কিন প্রচার মাধ্যমের বিপক্ষে কাজ করার জন্য তাদের এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কিউবা থেকে। ১৯৬১ সালে এপ্রিলে কিউবায় সিআইএ সমর্থিত ব্যর্থ সামরিক আক্রমণের সময় মার্কেস ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সে সময় তাঁর মনে হয়েছিল, ওই দেশে থাকা তাঁর জন্য সবচেয়ে মারাত্মক। সত্যিই আমেরিকার তরফ থেকে তাঁর পরিবারের প্রতি হুমকিও দেয়া হয়েছিল।
১৯৭১ সালে কিউবার লেখক পাদিল্লার বিরুদ্ধে কাস্ত্রো-শাসনের বিরোধিতা করার অপরাধে বিচার করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। মার্কেস প্রকাশ্যে পাদিল্লাকে সমর্থন করতে চাননি। তবে তাঁকে কিউবা ত্যাগ করতে সহযোগিতা করেছিলেন। ওই একই বছর কাস্ত্রো সোভিয়েত ইউনিয়নের চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণকে সমর্থন করেন। তখন মার্কেস হতাশা ব্যক্ত করেন এবং মন্তব্য করেন, বিশ্ব দুটো সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের মাঝে অচলাবস্থায় পড়ে গেছে। ১৯৭৫ সালে তাঁর এক লেখায় মার্কেস কিউবায় বাক-স্বাধীনতার অভাবের কথা উল্লেখ করেন। তবে আশা প্রকাশ করেন, সেখানে বাক-স্বাধীনতা ফিরে আসবে আবার।
কাস্ত্রোকে বন্ধু হিসেবে নেয়ার দোষে মার্কেসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন তাঁকে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। নব্বইয়ের দশকের শেষে বিল ক্লিনটন সে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে মার্কেস ক্লিনটনের সাঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কাস্ত্রোর পক্ষে কথাও বলেন। ১৯৯৬ সালে ক্লিনটনের সঙ্গে ডিনারে অংশ নেয়ার সময় তিনি বলেন, আপনি এবং ফিদেল একসঙ্গে মুখোমুখি বসলে আর কোনো সমস্যাই থাকবে না।
তবে তাঁর এসব কুটনৈতিক ভূমিকা তাঁর সমালেচাকদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। কিউবার লেখক গিলেরমো কাব্রেরা ইনফান্তে মার্কেসকে সমগ্রতাবাদের উন্মাদ বলেছেন। অন্যদিকে তাঁর পুরনো বন্ধু মারিও বার্গাস ইয়োসা তাঁকে কাস্ত্রোর বণিতা বলেছেন।
কিন্তু সবাই তো তাঁকে আক্রমণ করে কথা বলেননি। তাঁর পক্ষে কথা বলার মতো মানুষের সংখ্যা কম নয়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের প্রফেসর প্যাট্রিক আইবার বলেন, মার্কেস হয়তো কাস্ত্রোকে বড় করে দেখেছেন। তবে একথাও পরিষ্কার যে, কাস্ত্রোর সঙ্গে সামান্য কয়েকজন মানুষ খোলাখুলি কথা বলতে পারতেন, মুখের ওপর তাঁর সমালোচনা করতে পারতেন। মার্কেস তাঁদের অন্যতম। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিপ্লবের সমালোচনা করতেন এবং গঠনমূলক মতামত দিতে পারতেন। তিনি যদি কাস্ত্রোর সাথে তাঁর বন্ধুত্ব প্রকাশ্যে ভেঙে দিতেন তাহলে এত বড় ভূমিকা পালন করতে পারতেন না। মার্কেসের অনুবাদক এডিথ গ্রসমান মনে করেন, কাস্ত্রোর সাথে তাঁর বন্ধুত্বের কারণে মার্কেসের সাহিত্য-সম্ভার কিছুতেই প্রভাবিত হবে না। পাঠকরা তাঁর লেখাকে গুণ দিয়েই বিচার করবেন। ফিদেল কাস্ত্রোকে তিনি সমর্থন দিয়েছেন; এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে অন্য কারো প্রবেশের প্রসঙ্গ অনাকাঙ্খিত।
২০১১ সালে মার্কেসের স্মৃতিবিলোপ হওয়া শুরু হয়। তখন পর্যন্ত তাদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। কোনো বিরূপ পরিস্থিতি বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পারেনি।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ওয়ারীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
ওয়ারীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা