X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোকেয়ার উত্তরসূরী

রোখসানা চৌধুরী
০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৩২আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:২০

বেগম রোকেয়া বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনই এই উপমহাদেশের প্রথম নারীবাদী যিনি ধর্ম ও পুরুষতন্ত্রকে আক্রমণ করেছিলেন একই সঙ্গে। কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থকে নয়, বরং সকল ধর্ম ও তার ধারক-বাহক-প্রহরীরূপী পুরুষকে। অথচ তাঁর নাম নিয়েই ঘটে গেছে সবচেয়ে বড় বিভ্রাট। উপমহাদেশের প্রথম নারীবাদীর নামের তিন-চতুর্থাংশই কৃত্রিমভাবে আরোপিত। পিতৃপ্রদত্ত নামটি ছিল মোসাম্মৎ রুকাইয়া খাতুন। বিয়ের পর তিনি মিসেস আর. এস. হোসেন নামে লিখতে শুরু করেন। কিন্তু তারঁ মৃত্যুর পর তার বিদ্রোহী সত্তাকে আড়াল করে একজন ‘সম্ভ্রান্ত মুসলিম ভদ্রমহিলা’র অবয়ব প্রদানের অভিপ্রায়ে ‘বেগম রোকেয়া’ নামে তাঁকে পরিচিত করা হয়। বর্তমানে ‘বেগম রোকেয়া’ এবং ‘রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন’- দুটি নামই জনসমাজে প্রচলিত, যার একটি নামও তাঁর প্রকৃত পরিচয় বহন করে না। নামজনিত এই বিভ্রাট অত্র অঞ্চলের অবিকশিত, বিভ্রান্ত নারীবাদী ভাবনার প্রতীক হয়ে ধরা দেয়। ‘রোকেয়া’- পরবর্তী দীর্ঘ শূন্যতার প্রেক্ষাপট স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
রোকেয়া-দর্শনের মূল আলোকপাত ঘটেছে প্রধানত তিনটি গ্রন্থে- ১. সুলতানার স্বপ্ন, ২. পদ্মরাগ এবং ৩. অবরোধবাসিনী।
‘সুলতানার স্বপ্ন’ আখ্যানটি নারীবাদী বিশ্বের বা রাষ্ট্রের ভবিষৎ মেনিফেস্টো। ‘পদ্মরাগ’ উপন্যাস বাস্তবতার সাথে সাযুজ্যতা রেখে তৎকালীন সম্ভাব্য স্বাধীন মনুষ্য অবয়বধারী নারীর রূপরেখা। অবরোধ ও পর্দাপ্রথা সম্পর্কে বেগম রোকেয়ার ভাবনা নিয়ে যত বিভ্রান্তি তার মোক্ষম উত্তর ‘অবরোধবাসিনী’ গ্রন্থখানি স্বয়ং। তাঁর সমগ্র রচনাবলী এবং জীবন-দর্শনে যে বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে তা মোটের উপর নিম্নরূপ-
১. অবরোধ-প্রথার অবলুপ্তি
২. দপ্তর ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নারী-পুরুষের সমন্বিত উদ্যোগ
৩. নারীর বিজ্ঞাননির্ভর কর্ম পরিকল্পনা
৪. নারী-পুরুষের জড়তামুক্ত সহাবস্থান
৫. নারীর আত্মপ্রত্যয়ী ঋজু লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শরীরী ভাষা (body language)
৬. দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত নারীর পরিবর্তিত বেশভূষা
৭. দেশ-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছুৎমার্গবিহীন একত্রবাস তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্ময়কর প্রকাশ
৮. ক্ষুদ্র ও কৃষি-শিল্পের সম্প্রসারণে নারী-পুরুষের সমন্বিত অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক অলোচনা

স্থানস্বল্পতার জন্য রোকেয়া-রচনার চুম্বক অংশবিশেষ পাঠকের জন্য বর্তমান প্রবন্ধে উপস্থাপন করা গেল:
১. ধর্ম প্রসঙ্গে
যখনই কোন ভগ্নি মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন তখনই ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচন-রূপ অস্ত্রাঘাতে তাহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে।
আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন।...
তবেই দেখিতেছেন, এই ধর্মগ্রন্থগুলো পুরুষ রচিত বিধি ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে। ...কোন স্ত্রী মুনির বিধানে হয়তো তাহার বিপরীত নিয়ম দেখিতে পাইতেন। ...ধর্মগ্রন্থসমূহ ঈশ্বর প্রেরিত কিনা কেহই নিশ্চিত বলিতে পারে না। যদি ঈশ্বর কোন দূত রমনী শাসনের নিমিত্ত প্রেরণ করিতেন, তবে সে দূত বোধ হয় কেবল এশিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকিতেন না। এখন আমাদের আর ধর্মের নামে নতমস্তকে নরের অযথা প্রভূত্ব সহা উচিৎ নহে। আরও দেখ, যেখানে ধর্মের বন্ধন অতিশয় দৃঢ় সেইখানে নারীর প্রতি অত্যাচার অধিক।...
‘কেহ বলিতে পারেন যে, ‘তুমি সামাজিক কথা কহিতে গিয়া ধর্ম লইয়া টানাটানি কর কেন?’ তদুত্তরে বলিতে হইবে যে, ‘ধর্ম’ শেষে আমাদের দাসত্বের বন্ধন দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর করিয়াছে, ধর্মের দোহাই দিয়া পুরুষ এখন রমনীর উপর প্রভূত্ব করিতেছেন। তাই ‘ধর্ম’ লইয়া টানাটানি করিতে বাধ্য হইলাম।’  (রোকেয়া, কাদির, ১৯৭৩, পৃ. ১১-১৩)
২. পুরুষের স্বরূপ উন্মোচনে
ক. কুকুরজাতি পুরুষাপেক্ষা অধিক বিশ্বাসযোগ্য। (ডেলিশিয়া-হত্যা, রোর, ১৬২)
খ. নারীস্থানে স্বয়ং শয়তানকেই (পুরুষ জাতি) শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়াছেন, দেশে আর শয়তানী থাকিবে কি রূপে? (সুলতানার স্বপ্ন, ১৩৪)
গ. তাহারা কিছুই করিবে না- তাহারা কোন ভালো কাজের উপযুক্ত নহে। তাহাদিগকে ধরিয়া অন্তঃপুরে বন্দি করিয়া রাখুন। (ঐ, ১৩৫)
ঘ. নারী যাহা দশ বৎসরে করিতে পারে, পুরুষ তাহা শতবর্ষেও করিতে অক্ষম।
ঙ. ডাকাতি, জুয়াচুরি, পরস্বাপহরণ, পঞ্চ-মকার আদি কোন পাপের লাইসেন্স তাহাদের নাই। (রোর, ৩৩৪)
৩. নারীর উদ্দেশ্যে
ক. আমি আজ ২২ বৎসর হইতে ভারতে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীবের জন্য রোদন করিতেছি (রোর, ২৭৭)। প্রাণীজগতের কোন জন্তুই আমাদের মত নিরাশ্রয় নহে। (রোর, ৮৪)
খ. আমাদের অতিপ্রিয় অলঙ্কারগুলি- এগুলি দাসত্বের নিদর্শন বিশেষ। ...কারাগারে বন্দীগণ পায়ে লৌহনির্মিত বেড়ি পরে, আমরা স্বর্ণরৌপ্যের বেড়ি অর্থাৎ ‘মল’ পরি। উহাদের হাত-কড়ি, লৌহ-নির্মিত, আমাদের হাতকড়ি স্বর্ণ বা রৌপ্য-নির্মিত চুড়ি। কুকুরের গলে যে গলবন্ধ (dog-collar) দেখি উহারই অনুকরণে বোধ হয় আমাদের জড়োয়া চিক নির্মিত হইয়াছে। ...গো-স্বামী বলদের নাসিকা বিদ্ধ করিয়া ‘নাকাদড়ি’ পরায়, এদেশে আমাদের স্বামী আমাদের ‘নোলক’ পরাইয়াছেন!! ঐ ‘নোলক’ হইতেছে ‘স্বামীর’ অস্তিত্বের (সধবার) নিদর্শন।
গ. স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য ও নক্ষত্রের দৈর্ঘ মাপেন, স্ত্রী তখন বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ প্রস্থ মাপেন। (পৃ. ২৮)
প্রশ্ন জাগে, রোকেয়ার এই সব বিস্ফোরক-ভাবনার উৎস কোথায়? ভাই ও স্বামীর সহায়তায় সামান্য বাংলা-ইংরেজী শিখবার যে ইতিহাস প্রচলিত তাতে অন্তত এই ধরণের র‌্যাডিক্যাল ভাবনার জন্ম নেয়াটা অসম্ভব বলেই মনে হয়। তাই হয়তো রোকেয়া প্রসঙ্গে ঐসময়ে রবীন্দ্রনাথের নীরব থাকাটাও সঙ্গত বলে মনে হতে থাকে আমাদের। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই না আর। কারণ, রবীন্দ্রনাথসহ অন্যান্য সমকালীন বিশিষ্ট লেখকেরা ‘রোকেয়া’ সম্পর্কে বিস্ময়কর নীরবতা পালন করেছেন। ঠাকুর পরিবারের মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি বেশ-ভূষার পরিবর্তন, একাকী বিলেত ভ্রমণ পর্যন্ত ঠাকুর পরিবারের বিদ্রোহ সীমায়িত ছিল। নারী-পুরুষের সমতার কাছাকাছি কোন ধারণা তাদের পক্ষে থেকে উত্থাপিত হয়নি। বরং ‘শিক্ষাকে তারা গ্রহণ করেছিলেন সমাজ ও পরিবারে নারীর ঐতিহ্যিক ভূমিকাকে আরো বেশি নিপুণভাবে পরিবেশন করতে।’ (রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া, গোলাম মুরশিদ পৃ. ১৮৬) তাই রবীন্দ্র-রচনাতেও সত্যিকার অর্থে কোনো উদ্যোগী নারীর প্রতিচ্ছবি চোখে পড়ে না। বিনোদিনী, চারু, সুচরিতা, ললিতা, লাবণ্য-কেতকী, কুমুদিনী- এরা প্রত্যেকেই লেখালেখি, সামাজিক সাংগঠনিক কাজের মত সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িত থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকেই হৃদয়ঘটিত জটিলতার আবর্তনে ঘুরপাক খেতে খেতে জীবনের সকল সম্ভাবনা পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে।
বেগম রোকেয়া যখন লিখছেন, তখন তার সামনে উদাহরণস্বরূপ রামমোহন এবং বিদ্যাসাগর ছিলেন। যারা ঠিক নারীবাদী না হলেও নারীমুক্তির পথে প্রধান প্রধান বাধাগুলো অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তুু প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে কিংবা নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে উপমহাদেশে রোকেয়ার কোন পূর্বসূরী ছিল না। পূর্বসূরী না থাকাটা যৌক্তিক কারণেই মেনে নেয়া যায়। কিন্তুু আজকের একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে ভাবতে হচ্ছে, সেই রোকেয়ার যথার্থ উত্তরসূরী কোথায়? রোকেয়া-ভাবমূর্তিকে মহিমান্বিত করলেও বাংলাদেশের সমাজ বা রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোতে নিদেনপক্ষে নারী আন্দোলন কিংবা নারীর জীবন যাপনে প্রতিফলন কোথায়? যদিও আশান্বিত হবার মত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছিলো। সুফিয়া কামাল সরাসরি রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলামের সদস্যরূপে, স্ব-প্রতিষ্ঠিত রোকেয়া সদনের পরিচালনায়, পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার প্রতিবাদ ও আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে প্রত্যক্ষভাবে রোকেয়া-পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের অগ্রদূত ‘শিখা’ গোষ্ঠির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে ‘জাতীয় মহিলা পরিষদ’ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নারী পুর্নবাসন, মেয়েদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করবার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
কিন্তু ধর্মে ও পরিবারে নারীর অধস্তন অবস্থান, ধর্মীয় আইনে নারীর সন্তান ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদি নারীমুক্তি প্রসঙ্গে মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা পরবর্তী-সময়ে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান ও মৌলবাদের আগ্রাসন ঘটে। খোদ স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধের নানা অনুষঙ্গকে বিতর্কিত করে তোলা হয়। স্বাভাকিভাবেই নারী মুক্তি অথবা নারী অধিকার প্রসঙ্গটি আন্দোলনের মূল ধারা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। উদাহরণ স্বরূপ, মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণকে স্বাধীনতার পর ‘ধর্ষিতা’ বা নির্যাতিতা হবার বাইরে আর কোনোভাবেই স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এমনকি সশস্ত্র নারী মুক্তিযোদ্ধারাও অধিকাংশই অপরিচয়ের আড়ালে হারিয়ে গেছেন। বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে বের করে সম্মানিত করা হয়েছে স্বাধীনতার ২৫ বছর পর। তাই স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি অথবা উল্টো দিক থেকে নারীর জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে গভীর ভাবনায় খুব বেশি ইতিবাচক মনে হবার কথা না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে একাত্তর পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকা দেশটির প্রশাসকগণ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায়। কিন্তুু পরিবারের অর্থনীতি, একই সাথে রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সামলে তুলতে যে নারী ঘর থেকে বেরিয়ে এলো- রাষ্ট্র সেই নারীর জন্য রাস্তা-ঘাট, যানবাহন, কর্মক্ষেত্র- কোথাও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার কথা ভেবে দেখেনি। নারী যে- পুরুষের (পিতা, স্বামী অথবা ভাই) ঘর থেকে বের হয় অথবা যে- পুরুষের সাথে চলতে হয় (রাস্তা-ঘাট বা যানবাহন) এবং যাদের সাথে পরিবারের চাইতেও অধিক সময় ব্যয় করে (দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান) সেই পুরুষেরা আজও নারীকে তাদের অপ্রস্তুুত মানসিকতায় ‘মাংসপিণ্ড’ ব্যতীত সহকর্মী ভাববার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। ইভটিজিং, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপসহ নারীর প্রতি সহিংসতার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়ে আছে এভাবেই, যাকে মূল থেকে উৎপাটনের পরিকল্পনা করা হয়নি কখনোই। তাই নারী ঘরে-বাইরে নিরাপত্তা, সম্মান, বা ন্যূনতম মানবিক অধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তবে লড়াইটি অসংগঠিত, বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত- একথা প্রাজ্ঞজনেরাও স্বীকার করছেন।
নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম (যুদ্ধাপরাধীদের বিচার), নীলিমা ইব্রাহিম (মুক্তিযুদ্ধে আহত-নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন) কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূতে ফলপ্রসু অবদান রেখেছেন। কিন্তু এইসব ধারাবাহিকতাহীন বিবিধ আন্দোলন অথবা দেশজুড়ে গৃহকর্মীদের পোশাকশিল্প কারখানায় কর্মীরূপে রূপান্তর- নারীমুক্তি কিংবা নারীর অধিকার প্রসঙ্গে রোকেয়া বর্ণিত নারীর সার্বিক জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারেনি।
যেমনভাবে বেগম রোকেয়ার পরে আর কোনও লেখকের (নারী বা পুরুষ) রচনায় যথাযথ রূপে সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারের সাথে দ্বন্দ্ব-সংশিষ্টতার প্রেক্ষাপটে নারীর সম্ভাব্য স্বাধীন, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন অবয়বকে নিরূপণ করা যায়নি।
নব্বই দশকে এমত বিরাজমান স্থবির সময়ের মাঝপথে তসলিমা নাসরিনের আগমন পুরো পরিস্থিতিকে পাল্টে দেয়। ধর্ম, সমাজ ও পুরুষতন্ত্রকে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে তার প্রকাশিত আক্রমণাত্মক বক্তব্য নিয়ে দেশ ও বহির্বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মৌলবাদী ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রকাশ্যে তার হত্যামূল্য নির্ধারণ করলে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। তার গ্রন্থগুলি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভের পাশাপাশি বাজেয়াপ্তও হয়। প্রশ্ন হচ্ছে তসলিমা নাসরীন যা যা বলেছিলেন, তা কি খুব অসম্ভব, উদ্ভট, আকস্মিক আবিষ্কৃত নতুন কোনো তত্ত্ব? ধর্ম, নারী এবং সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ে তার আগে-পরে ড. আহমদ শরীফ, ড. হুমায়ুন আজাদ, আরজ আলী মাতুব্বরসহ আরো বহু মনীষীই বিদ্বেষ, কটূক্তি, বিরুদ্ধভাব প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাদের দেশত্যাগ করতে হয়নি। আমজনতার সমাবেশে এঁদের নাম পর্যন্ত অনেকে অবগত নন। প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া একশ বছর আগেই মত প্রকাশ করেছেন। পার্থক্য হল রোকেয়াকে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আর তসলিমা নাসরিন বক্তব্যকে আরো বেশি তথ্য-প্রমাণ সহকারে উপস্থাপন করাতে তার মাথার মূল্য ধার্য হয়ে গেছে।
বলে রাখা ভালো, বর্তমান আলোচনাটি তসলিমা নাসরীনকে নিয়ে নয়, তার রচনা কুশলতার বিচার নিয়েও নয়। কেবল একটি প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে উপমহাদেশে নারীবাদের উদ্ভব-বিকাশের আশ্চর্য পরস্পরহীনতার যোগসূত্র অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হওয়া যায়। অর্থাৎ রোকেয়া যদি তার রচনা প্রত্যাহার না করতেন, তবে মাথার মূল্য নির্ধারণের আগেই অজানা অন্ধকারে তাকে হারিয়ে যেতে হত। এই আশ্চর্য মূল্য নির্ধারণের দুর্ভেদ্য বেষ্টনীকে অতিক্রম করা যায়নি বলেই কি নারীবাদের সহজ-স্বাভাবিক বিবর্তন ঘটেনি অত্র অঞ্চলে? তসলিমা নাসরীনের আগমন ও উপস্থিতি তাই পূর্বাপর সংযোগ-বিচ্ছিন্ন। বেগম রোকেয়ার মতই। এক শতাব্দী আগের প্রেক্ষাপট বলেই তাকে মহিমার দৃষ্টিতে বিচার করা সম্ভব হচ্ছে।
কথা হচ্ছে, হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ গ্রন্থে এবং বেগম রোকেয়ার রচনাতেও যতখানি পুরুষ-বিদ্বেষ এবং ধর্ম বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে, ততখানি নয় তসলিমা নাসরীনে। একটি সক্ষাৎকারে (৭১টিভি,৮ আগষ্ট,২০১৪) তিনি সেই কথা স্বীকারও করেছেন।
অথচ রোকেয়া নারীজীবন সম্পর্কে যেখানে থেমে গিয়েছিলেন, তসলিমা নাসরিন অন্য সব কিছুর সঙ্গে নারীর সেই অকথিত যৌনজীবন সম্পর্কে মুখ খুললেন। অপ্রস্তুত বাঙালি সমাজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চমকে গেল। মূলত তসলিমা নাসরিনের বিবৃত নারীবাদের সমালোচনা হিসেবে দুটি বিষয়কে গণ্য করেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ কিংবা সমাজ তাত্ত্বিকেরা।
১. দেশ-কাল-সমাজ-ইতিহাসের প্রেক্ষিতে বাঙালি নারী মুক্তির বিষয়টি সমন্বিত করে দেখতে না পারা।
২. ভাবনাসমূহের বিচ্ছিন্নতা, ব্যক্তিগত ক্ষোভের তীব্রতা সামগ্রিক বিষয়টির তত্ত্বীয় রূপদানে ব্যর্থতা।
তবে তাঁর এইসব সীমাবদ্ধতাকে ‘সমাজের সামগ্রিক গণতান্ত্রিক সংগ্রামের দিক নির্দেশনার অপরিপক্কতার সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত’ বলে মনে করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ (নারী,পুরুষ ও সমাজ/পৃ.১২৩)। তাছাড়া, তার রচনাবলীর সামগ্রিক নিবিড় পাঠেরও অভাব রয়েছে বলে বোধ হয়। যেভাবে রোকেয়া-রচনার বিদ্রোহী প্রতিবাদী অংশগুলো আজো জনসমাজে অজানিতই রয়ে গেছে। অর্ধ-শিক্ষিত জাতি, যারা আজো বিনোদন খুঁজে পায় দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান গ্রন্থে, অথবা ধর্মীয় গ্রন্থের (মাকছুদুল মোমেনীন) ‘দাম্পত্য জীবন’ অংশে, তারা যে নারীরচিত গ্রন্থে নারীর যৌনজীবন সম্পর্কে উন্মুক্ত আলোচনায় গোপন ‘আনন্দ’ খুঁজবে আর প্রকাশ্যে তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে, বিচ্ছিন্নভাবে হলেও নারীর প্রধান দুটি শত্রু মৌলবাদ ও পুঁজিবাদকে চিহ্নিত করতে তিনি ভুল করেন নি।
দীর্ঘ গণ আন্দোলন এবং সশস্ত্র একটি জনযুদ্ধের পরেও স্বাধীন দেশে নারীমুক্তির বিষয়টি কখনো গুরুত্ব পায়নি। তাই দেখা যায় অতীত ইতিহাসেও প্রীতিলতা কিংবা ইলা মিত্র অথবা একাত্তরের বীরযোদ্ধা তারামনদের যুদ্ধক্ষেত্রেও জেন্ডার বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে নারীকে মানসিকভাবে ভেঙেচুরে দেবার জন্য ‘ধর্ষণ’ নামক নির্যাতনটিকে ক্রমাগত ব্যবহার করা হয়। ইলা মিত্রসহ অগনিত নারী যার শিকার ছিলেন। তারামন এবং আরো অনেককেই প্রথমে পরীক্ষাস্বরূপ রান্নার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যাতে তারা যুদ্ধে যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে জয় করার যুদ্ধটি নারীর প্রথম যুদ্ধ। তা সংসারই হোক কিংবা যুদ্ধক্ষেত্র। এতগুলো যুদ্ধে উত্তীর্ণ হওয়ার মাঝপথে মানসিক দাসত্বের কাছে পরাজিত হয়ে সংসারের একটি নিত্য প্রয়োজনীয় ‘আসবাব’-রূপে নারী ঘরে ফিরে যায়। এই ফিরে যাওয়ার মিছিলটিই দীর্ঘ এবং হতাশাব্যঞ্জক।
বেগম রোকেয়া এবং হুমায়ুন আজাদের রচনার যেখানে সাদৃশ্য দেখা যায় তা হলো তারা দুজনেই নারী মুক্তির ক্ষেত্রে নারী ক্ষমতায়নকে এতটা জোরালোভাবে প্রাধান্য দেন যেখানে পুরুষের ভূমিকা স্বাভাবিকভাবেই ম্রিয়মান হয়ে পড়বে। উনিশ-শতক পূর্ব নারীর মত পুরুষের অস্তিত্ব সেখানে আবছায়ার আড়ালে ঝাপসা হয়ে থাকবে।
১. নন্দনকাননতুল্য নারীস্থানে নারীর পূর্ণ আধিপত্য। পুরুষেরা মর্দানায় থাকিয়া রন্ধন করেন, শিশুদের খেলা দেন (সুলতানার স্বপ্ন/পৃ. ১১৩)
২. পুরুষেরা বড় বড় কলকারখানায় যন্ত্রাদি পরিচালিত করেন; খাতা-পত্র রাখেন- ...তাহারা কেরানী ও মুটে মজুরের কাজ করিয়া থাকেন। (সুলতানার স্বপ্ন/পৃ. ১১৪)
এদিক থেকে দুজনার ভাবনাই প্রবলভাবে র‌্যাডিক্যাল। হুমায়ুন আজাদ মাতৃত্বকে নারী মুক্তির পথে প্রতিবন্ধকরূপে উপস্থাপন করেছেন।
৩. নিজের ভবিষ্যতের জন্য নারীকে ত্যাগ করতে হবে পিতৃ ও পুরুষ-তন্ত্রের সমস্ত শিক্ষা ও দীক্ষা; ছেড়ে দিতে হবে সুমাতা, সুগৃহিনী, সতীর ধারণা; ... তাকে কান ফিরিয়ে নিতে হবে পুরুষতন্ত্রের সমস্ত মধুর বচন থেকে, তাকে বর্জন করতে হবে পুরুষতন্ত্রের প্রিয় নারীত্ব। তাকে সাবধান হতে হবে পুরুষতন্ত্রের সমস্ত মহাপুরুষ সম্বন্ধে, সন্দেহের চোখে দেখতে হবে সবাইকে। কেননা কেউ তার মুক্তি চায়নি। (নারী/হু. আজাদ পৃ. ৩২৬)
৪. নারীর গর্ভধারণ একান্ত পাশবিক কাজ। নারীকে কি চিরকালই ধারণ করে যেতে হবে গর্ভ, পালন করে যেতে হবে পশুর ভূমিকা? ...পুরুষতন্ত্রের শিক্ষার ফলে নারী আজো মনে করে গর্ভধারনেই তার জীবনের সার্থকতা... গর্ভবতী হওয়ার মধ্যে জীবনের কোনা সার্থকতা, মহত্ত্ব, পূণ্য নেই। আমূল নারীবাদীরা মনে করেন মানবপ্রজাতিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নারীর নয়, পুরুষকে উদ্ভাবন করতে হবে সন্তানসৃষ্টির বিকল্প পথ; এবং কয়েক শ’ বছর পর গর্ভধারণ যে আদিম পাশবিক কাজ বলে গণ্য হবে তাতে সন্দেহ নেই। (ঐ/পৃ-৩২০)
রোকেয়ার উত্তরসূরী রোকেয়া ‘পদ্মরাগ’ কিংবা ‘সুলতানার স্বপ্নে’ যেভাবে নারীকে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজে ব্যাপৃত দেখান সেখানে কোথাও নারীর মাতৃরূপটির উপস্থিতি নেই। অথবা ঘরে-বাইরে নারীর একাধিক ভূমিকা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে সেই বিষয়গুলো সঙ্গত কারণেই তিনি দৃষ্টি এড়িয়ে গেছেন। নারী মুক্তির পথে বিবাহ-সংসার-পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সকল শৃঙ্খলকে তিনি উপেক্ষা করতে বলেছেন। তবে কি ধরে নেয়া যায়, র‌্যাডিক্যাল নারীবাদীদের মত তিনিও নারী-পুরুষের জীববৈজ্ঞানিক বৈষম্যে বিশ্বাসী ছিলেন? রোকেয়া একটি বিষয়েই সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করে গেছেন। তা হল নারীর যৌনজীবন। হয়তো লেখালেখির শুরুতেই ধর্ম বিষয়ক বিদ্রোহ প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হয়ে সতর্ক হয়েছিলেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় অবরোধ ও পর্দাপ্রথা নিয়ে ক্রমাগত স্ববিরোধী বক্তব্য প্রকাশে। নিদেনপক্ষে তিনি নারীশিক্ষার প্রকল্পটি চালু রাখতে মরণপণ করেছিলেন। (অন্যত্র জানা যায়, তিনি মেয়েদের জন্য কলেজ খুলতেও আগ্রহী ছিলেন।) তাই শেষ জীবনে অনেক রকমের আপোসকামিতার সঙ্গে সমঝোতা করতে থাকা এই যুগান্তরী মহামানবীর তীব্র ক্ষোভ অপ্রকাশিতও থাকেনি।
১. আমার স্কুলটা আমার প্রাণ অপেক্ষাও প্রিয়। একে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি সমাজের অযৌক্তিক নিয়ম কানুনগুলিও পালন করছি। (সওগত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনকে।)
২. তবু পর্দা করছি কেন জানেন? বুড়ো হয়ে গেছি, মরে যাব। ইস্কুলটা এতদিন চালিয়ে এলাম, আমার মরার সঙ্গে সঙ্গে এও যদি মরে সেই ভয়ে। (ইব্রাহিম খাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকার)
৩. জীবনের ২৫ বছর ধরিয়া সমাজসেবা করিয়া কাঠমোল্লাদের অভিসম্পাত কুড়াইতেছি।’ (রোর/৩৮০)
৪. হাড়ভাঙ্গা গাধার খাটুনি- ইহার বিনিময় কি জানিস? ... ‘ভাড় লিপকে হাত কালি’ অর্থাৎ উনুন লেপন করিলে উনুন তো বেশ পরিষ্কার হয়, কিন্তু যে লেপন করে তাহারই হাতে কালিতে কালো হইয়া যায়। আমার হাড়ভাঙা খাটুনির পরিবর্তে সমাজ বিস্ফারিত নেত্রে আমার খুঁটিনাটি ভুল ভ্রান্তির ছিদ্র অন্বেষণ করিতেই বদ্ধপরিকর। (রোর/পত্র-১/পৃ.৪৯৯)
বিদ্যাসাগর পরাধীন দেশে ‘বিধবা বিবাহ আইন’ পাস করিয়েছিলেন (১৮৫৬)। কিন্তু তার সার্থক প্রয়োগ দেখে যেতে পারেননি। এত বছর পর বিধবা বিবাহে কোন সামাজিক বা আইনি বাধা না থাকলেও যেন-তেন ভাবে বিবাহ, সন্তান ও সংসারই যে নারীজীবনের প্রধান লক্ষ্য ও গন্তব্য- সেই শৃঙ্খল থেকে নারী আজো বের হতে পারেনি। যেখানে এক শতাব্দী আগেই রোকেয়া উচ্চারণ করেছিলেন নারীমুক্তির অমোঘ বাণী:
‘আমি সমাজকে দেখাইতে চাই, একমাত্র বিবাহিত জীবনই নারী জন্মের চরম লক্ষ্য নহে; সংসার ধর্মই জীবনের সারধর্ম নহে।’ (পদ্মরাগ/রোর/৪৫৩)
রোকেয়া-রচনায় আধুনিক নারীর পূর্ণাঙ্গ জীবনের স্বয়ম্ভূ রূপরেখার নির্মাণ থাকলেও আজকের বাংলাদেশে সেই নারী কোথায়? শিক্ষা-সুযোগ-অধিকার সবকিছুই হয়তো প্রত্যাশিত রকমের বৈষম্যরহিত হয়ে যায়নি, কিন্তুু যতটুকু দূরত্ব পেরোনো গেছে, ছায়াভূতের মতো সঙ্গে সঙ্গে এগিয়েছে রোকেয়া কথিত ‘মানসিক দাসত্ব’- স্বয়ং নারীর ও সমাজের, উভয়ত। নারী আজ অবোরোধের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষিত, শিল্পিত, স্বাধীন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রীতদাসে রূপান্তরিত পুরুষের পদাঙ্ক অনুসরণকারী ছায়ামূর্তি মাত্র।
আজকের যুগের এই নারীদের জন্য রোকেয়ার কণ্ঠই পুনরায় প্রতিধ্বনিত হোক:
‘অতএব জাগো, জাগো গো ভগিনী।’
প্রথমে জাগিয়া উঠা সহজ নয় জানি; সমাজ মহা গোলযোগ বাধাইবে জানি, ভারতবাসী মুসলমান আমাদের জন্য ‘কৎল’-এর (অর্থাৎ প্রাণদণ্ডের) বিধান দিবেন এবং হিন্দু চিতানল বা তুষানলের ব্যবস্থা দিবেন জানি! (এবং ভগ্নিদিগেরও জাগিবার ইচ্ছা নাই জানি!) কিন্তু সমাজের কল্যাণের নিমিত্ত জাগিতে হইবেই। ... কারামুক্ত হইয়াও গ্যালিলিও বলিয়াছিলেন, কিন্তু যাহাই হউক পৃথিবী ঘুরিতেছে (but nevertheless it does move)!! ... সমাজের সমঝদার (reasonable) পুরুষেরা প্রাণদণ্ডের বিধান নাও দিতে পারেন, কিন্তু unreasonable অবলা সরলাগণ; (যাহারা যুক্তি তর্কের ধার ধারে না, তাহারা) শতমুখী ও আঁইস বঁটির ব্যবস্থা নিশ্চয় দিবেন, জানি!! (রোকেয়া রচনাবলী/পৃ.২০)

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!