X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বব ডিলানের নোবেল ভাষণ

অনুবাদ : অনন্য মুশফিক
১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:৪৬আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:৪৭

আযিতা রাজি অনেক কানাঘুষা শেষে বব ডিলান নোবেল ভাষণ দিলেন। তবে সশরীরে হাজির হলেন না। শনিবার নোবেল ভোজসভায় তার ভাষণ পড়ে শোনান সুইডেনে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আযিতা রাজি


শুভসন্ধ্যা। আজ সন্ধ্যায় উপস্থিত সুইডিশ একাডেমির সকল সদস্য এবং অন্যান্য সম্মানিত অতিথি সকলকে আমার উষ্ণ অভিনন্দন জানাই।

আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে সশরীরে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পারিনি, কিন্তু এটা নিশ্চিত জানবেন আমি মানসিকভাবে আপনাদের সাথেই আছি এবং এত উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি। আমি কখনো কল্পনা করিনি বা স্বপ্নেও দেখিনি যে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসাবে ভূষিত হব। খুব অল্প বয়সেই আমি কিপলিং, শ, টমাস মান, পার্ল বাক, আলবেয়ার কামু, হেমিংওয়ে এদের সাথে পরিচিত হয়েছি- তাদের কাজ পড়ে এবং বুঝে- যারা এমন একটি সম্মান পাবার যোগ্য ছিলেন। সাহিত্যের এই মহারথীগণ- যাদের লেখা পড়ানো হয় স্কুলে, স্থান পায় সারা বিশ্বের লাইব্রেরিতে এবং বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়- এরা গভীর প্রভাব ফেলে আসছে আমার মধ্যে। এখন এদের নামের তালিকায় আমি যুক্ত হওয়ায় আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।

আমি জানি না, এনারা কখনো নিজেদের জন্য নোবেল-সম্মান আশা করেছিলেন কি না; কিন্তু আমার মনে হয় যিনি বই, কবিতা অথবা নাটক লিখেন তিনি সবার অজান্তেই মনের গভীরে হয়ত এ স্বপ্ন লালন করেন। এ স্বপ্ন মনের এতটাই গভীরে থাকে যে, সে ব্যক্তি হয়ত নিজেও তা জানেন না।

যদি আমাকে কেউ কখনো বলত যে আমার সুপ্ত সম্ভবনা আছে নোবেল বিজয়ের, আমি হয়ত ভাবতাম এটা অনেকটা চাঁদে দাঁড়িয়ে থাকার মতো। প্রকৃতপক্ষে, আমি যে সময়ে জন্মেছি এবং এর কয়েক বছর পরেও এমন কেউ ছিল না যে নোবেল জয়ের যোগ্য বলে গণ্য হতে পারে। অতএব, আমার মনে হচ্ছে যে আমি খুব বিরলদের মধ্যে একজন, অন্ততপক্ষে।

আমি যখন এই প্রত্যাশাতিত খবরটা শুনি তখন রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি এবং এটা হজম হতে আমার বেশ খানিকটা সময় লাগে। আমি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কথা ভাবতে থাকি- সেই মহান সাহিত্যিক, তিনি নিজেকে নাট্যকার হিসেবে দেখতেন। তিনি এটা চিন্তাও করতেন না যে, তিনি সাহিত্য রচনা করছেন। তিনি লিখতেন কেবল মঞ্চের জন্য। যা ছিল কেবল বলার জন্য, পড়ার জন্য নয়। আমি নিশ্চিত যখন তিনি হ্যামলেট লিখছিলেন তখন বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করছিলেন- “এই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত অভিনয় শিল্পী কে হতে পারে?” বা “কীভাবে এটা মঞ্চস্থ করা হবে?” “আমি কি আসলেই এর সেটিং ডেনমার্কে রাখতে চাই?” তাঁর সৃষ্টিশীল চিন্তা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষাই নিঃসন্দেহে সবার আগে ছিল, কিন্তু সেখানে অন্যান্য বাস্তবিক বিষয়ও ছিল বিবেচনা করার জন্য। “অর্থায়ন ঠিক আছে কি না?” “সেখানে আমার পৃষ্ঠপোষকদের জন্য যথেষ্ট ভালো আসন আছে কিনা?” “আমি মানুষের মাথার খুলি কোথায় পাব?” আমি বাজি ধরে বলতে পারি, “এটা কি সাহিত্য?” -তা শেক্সপিয়ার কখনো চিন্তাও করেননি।

যখন আমি কৈশোরে গান লেখা শুরু করি এবং আমার সক্ষমতার জন্য সুনাম অর্জন করতে থাকি, গানগুলোকে নিয়ে আমার আকাঙ্ক্ষা বেড়েই যায়। আমি চাইতাম ওগুলো শোনা যাক কোনো কফিহাউস বা বারে, পরবর্তীকালে কার্নেগি হল, লন্ডন প্যালাডিয়ামের মতো স্থানে। যদি আমি আরও বড় আশা করে থাকি, তবে তা ছিল যে আমার গানগুলো রেকর্ড করার এবং রেডিওতে শোনানোর। এটা সত্যিই মনে মনে আমার জন্য ছিল অনেক বড় পুরস্কার। রেকর্ড করা এবং নিজের গান রেডিওতে শোনানোর অর্থ আপনি একসাথে অনেক শ্রোতার কাছে পৌঁছাচ্ছেন এবং আপনি যা করার জন্য মনস্থির করেছেন তা করে যাচ্ছেন।

বেশ, আমি দীর্ঘ সময় ধরে তাই করে চলেছি, যা করার মনস্থির করেছিলাম। এখন আমি অনেক অনেক রেকর্ডিং করেছি এবং হাজার হাজার কনসার্ট করেছি সারা বিশ্বব্যাপী। কিন্তু আমি যতকিছুই করি না কেন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল আমার গান। আমার গানগুলো স্থান পেয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির অনেক অনেক মানুষের জীবনে এবং এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

কিন্তু একটা জিনিস আমি অবশ্যই বলব। একজন পারফর্মার হিসেবে আমি প্রায় ৫০,০০০ মানুষের জন্য পারফর্ম করেছি আবার ৫০ জনের জন্যেও করেছি, এবং আমি আপনাদের এটা বলতে পারি যে ৫০ জনের জন্য পারফর্ম করা সত্যিই বেশি কঠিন। ৫০,০০০ লোকের রয়েছে একত্ব, ৫০ জনে তা নেই। প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্যবোধ, আলাদা পরিচয়, যার যার আলাদা পৃথিবী রয়েছে। তারা আরও স্পষ্টভাবে কোনোকিছু উপলব্ধি করতে পারে। আপনার সততা এবং এটা কীভাবে আপনার প্রতিভার গভীরতার সাথে সম্পর্কিত তা যাচাই করা হয়। নোবেল কমিটি এত ছোট হওয়া সত্ত্বেও আমাকে বুঝতে পেরেছে।

তবে, শেক্সপিয়ারের মতো আমিও আমার সৃজনশীল প্রচেষ্টার সাধনা নিয়ে ব্যস্ত আছি এবং জীবনের অন্যান্য বাস্তবিক বিষয়ের সাথেও বোঝাপড়া করছি। “এই গানগুলোর জন্য সবচেয়ে ভালো মিউজিসিয়ান কে?” “আমি কি ঠিক স্টুডিওতে রেকর্ড করছি?” “এ গানটা কি ঠিক গঠনে আছে?” কিছু ব্যাপার কখনো বদলায় না ,এমনকি ৪০০ বছরেও।

নিজেকে কখনো জিজ্ঞাসা করার সময়ই পাইনি, “আমার গানগুলো কি সাহিত্য?”

তাই, আমি ধন্যবাদ জানাই সুইডিশ একাডেমিকে; একই সাথে সময় নিয়ে এই প্রশ্নটি বিবেচনা করার জন্য এবং পরিশেষে এর একটি চমৎকার উত্তর প্রদানের জন্য।

সবার জন্য শুভ কামনা

বব ডিলান

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা