X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রবিন অঙ্গোম-এর কবিতা

অনুবাদ : মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম
২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:১৩আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:৫২

রবিন অঙ্গোম রবিন অঙ্গোম উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুরের ইম্ফালে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহন করেছেন। তিনি একাধারে কবি, অনুবাদক, সম্পাদক ও শিক্ষক। তার কবিতা ভারত-সহ বিশ্বের নামিদামি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার জন্য তাকে ১৯৯৪ সালে ‘উদয় ভারতীয় জাতীয় পুরস্কার’ প্রদান করা হয়, আর ১৯৯৯ সালে অনুবাদের জন্য দেয়া হয় ‘কথা অনুবাদ পুরস্কার’। রবিন ভারতের নর্থ-ইস্টার্ণ হিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে দ্যা ডিজায়ার অফ রূটস, টাইম’স ক্রসরোডস  আর ওয়ার্ডস এন্ড দ্যা সাইলেন্স  অন্যতম। 

 

প্রথম বৃষ্টি


মে মাসের প্রথম চিঠির মতো প্রথম বৃষ্টি

পাহাড়ের কাছে বার্তা নিয়ে আসে।

পাহাড়ের চূড়ায় স্থির, শান্ত বাড়িগুলোর মতো

আমি আমার করুণ শৈশবের চেয়েও

বেশি সময়কাল ধরে পরবাসে আছি।

পনের বছর বয়সের বকবক করা বালক

আমি আমার নিজ দেশীয় মানুষগুলোকে পরিত্যাগ করেছিলাম

যারা তাদের সন্তানদেরকে সন্ত্রাস, নেশা আর

সভ্য অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল।


কোনটি ভালো : ভুলে যাওয়া আর আনন্দে ডুবে থাকা

না বারবার স্মরণ করা আর কষ্ট পাওয়া?

কেবল একজন বোকা বালক বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারে না,

সে ভালোবাসে শীত, আর কবিতা লেখার জন্য গৃহত্যাগ করে।


ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের পর আসলো কঠিন পরীক্ষার সময়

একটি গোষ্ঠিকে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হলো

আর সম্ভব হলো সংস্কৃতি ও হত্যাকাণ্ডের সহাবস্থান নিশ্চিত করা।

আমি যদি তোমাকে বলতে পারতাম কিভাবে শিশুদেরকে তাদের মায়ের বুক থেকে

ছিনিয়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে

তুমি তাহলে একজন কবির ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে লিখে রাখতে পারতে

কিন্তু আমরা নেতাদেরকে বিশ্বাস করতে পছন্দ করি যারা রাজধানী অভিমুখী

আর শুধু ফিরে আসে যাদুকরের ভূমিকায়।


যে প্রাণী প্রতিনিয়ত বিলীন হওয়ার হুমকিতে

তারও এবং তার দলভুক্ত অন্যান্যদের প্রয়োজন একটি জায়গা,

আমিও আলাদা নই।

সকালবেলার রক্তিম আলো আমার চাই

আর চাই রাতকে আলিঙ্গন করতে।


এমন একটি দিনও আমার জীবনে আসেনি যা আমার সময়কে বদলে দিতে পারত।

যখন আমি পাহাড়গুলোর নিকট কান পেতে রই

শুনতে পাই শুধু আমার ধূসর জীবনের স্বরগুলো।

মদ, মেহেদি হাসান আর বিলি হলিডে

অনিশ্চিত সন্ধ্যাগুলোতে সৃষ্টি করে এক অদ্ভুত আবহ।


তারা আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু রাস্তায় নামার জন্য

আমাদের অদম্য চিন্তা ও বাসানাকে কখনো নয়।

তারা আমাদেরকে গুলি করতে পারে, কিন্তু কখনো হত্যা করতে পারবে না বাতাসকে

যা আমাদের কণ্ঠস্বর বয়ে বেড়ায়।


হে আমার ভালবাসা, তুমি এখনো ঘুমে

সারারাত বৃষ্টি হয়ে এখন ভোর।

চোখে তোমার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমুতে যাই

আর জেগে উঠি পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে, বেঁচে থাকার সংগ্রামে।


নির্বাসিত আমি মরণাপন্ন সাম্রাজ্যের দূরবর্তী এক অঞ্চলে

যার স্মৃতিচিহ্নগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের হস্তনির্মাণ সামগ্রিতে পরিণত হয়েছে:

অলংকার, বাদ্যযন্ত্র, ফিতা আর সমাধি-প্রস্তর।


আমি রাশিফলের পিছু ছুটেছি

আমার পিছু ছুটেছে শুধু প্রতিশ্রুতি আর অভিশাপ।

একদিন ভিনাস আমার পক্ষে– আমার আনন্দ, আমার ভাগ্য

আর অন্যদিন শনি আমার ভাগ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতে।

আমি এক মুহূর্তের শান্তি পেয়েছি

আমার ছোট্ট মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে।


তোমার সাথে সাক্ষাতের পূর্বে

আমার স্বপ্নগুলো ছিল সীমাবদ্ধ, অজ্ঞতায়।

মাঝে মাঝে রাতে

আমাদের অতীত থেকে দুই ফোটা আমার চোখে ঢেলে দিতাম

কিন্তু চোখের পাতাগুলো আর বন্ধ হতো না।


বন্দুক আর মাদকের মতো কবিতাও কি পাচার করা যায়?

আমরা রক্ত দিয়ে এঁকেছি আমাদের সীমানাগুলোকে।

এমনকি আমাদের মাতৃভাষায় লেখার জন্য

আমরা প্রতিনিয়ত কাঁটি আমাদের শিরা-উপশিরা আর জিহ্বা

আর লেহন করি রক্তাক্ত চর্ম-কাগজ।


আমি পড়ি আমার পাচার করা নেরুদা

আর মাঝে মাঝে শুনি ধূসর বাঁশির সুর

আর আমার নিজভূমির বিলপমান স্বর।


আমি কর্তিত শিকড়গুলোর যন্ত্রণা,

গৃহহীনদের আতঙ্ক,

আর সাবেক চুম্বনের উন্মত্ততা।

আমার শত্রুদের আর কত ভূমি প্রয়োজন?


হে আমার ভালোবাসা কেন বিলীন হয়ে গেলে তুমি

আমার জীবনের দূর্বোদ্ধতার মাঝে

আর আমাকে ফেলে গেলে একা

আমি শুধু তাকিয়ে থাকি ঐ পর্বতগুলোর দিকে।


আমি কর্তিত শিকড়গুলোর কষ্ট

আর এখানে ইতোমধ্যে শেষ বৃষ্টি হয়ে গেছে।

আমার বাসভূমির চিড়-খাওয়া মাঠগুলো আর এর

ভোরের ক্রন্দনরত চারণভূমি ছেড়ে চলে যাব আমি।

ঐ নেকড়ের দল ছিন্নভিন্ন করুক আমাদের প্রিয় পাহাড়গুলো।


ছেড়ে যাব কচি বাঁশগুলো যারা বড় হবে

আমার শৈশবের উদ্যানে।

ইঁদুরগুলো কামড়ে খাক চিত হয়ে যাওয়া মানচিত্র

যার ভিতরেই একদা ছিল আমার নিজ বাসভূমি।

 

অস্ত্রও এখানে ফুল হয়ে ফুটবে


এ ভূমিতে যেখানে শুধু রডডেনড্রন

আর চেরি ফুল ফুটার কথা

অস্ত্র সেখানে ফুলের মতো ফুটে উঠবে।


যখন অপরিচিতরা এখানে আসল

তারা কোন বন্দুক, বর্শা বা তরবারি নিয়ে আসেনি

তারা কোন যুদ্ধবাজ মানুষ না

কারণ তারা শুধু ফুল নিয়ে কথা বলে

এই ধৈর্যশীল আশ্রয়প্রার্থীরা চেয়েছিল

স্থানীয়রা নাচবে আর গান গাইবে আর

নিজ ভুমিতে যাযাবর হয়ে থাকবে।


কিন্তু তাদের টিকে থাকার জন্য

এখন অস্ত্র রোপণ করা হবে।

তাদের বিশ্বাসঘাতক নেতাদের দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে

কৃত্রিম নারী ও পুরুষেরা

লজ্জিত হয় তাদের প্রকৃত নামের জন্য–

স্মৃতির ঘুমন্ত যুদ্ধারা একদিন জেগে উঠবে।

এজন্য তাদের কবিরা

অসাধারণ ঝরনাগুলোর কথা লিখতে চায় না

কিন্তু শত শত শেল নিয়ে

সোৎসাহে কথা বলে।


আমরা সবাই সারা পৃথিবীর

পুরুষদের মতোই দোষী

আমরা জানি কেন দারিদ্র্য

গ্রামাঞ্চলগুলোতে কষাঘাত করেছে

আমরা দেখেছি গ্রামের পর গ্রাম

কিভাবে কচি বাঁশের মতো দারিদ্র্য ফুটে উঠেছে।

এ শান্ত পাহাড়গুলো থেকে

চুরি করে আমরা

শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম।


তাদের স্বপ্নের কথা কে জানতে চায়?

কারা এই ভূমির ভাষা শিখেছিল?

কে আমাকে বলতে পারবে এর পুরাণ গাঁথা?

আমি মর্মাহত যে এ ভূমি সম্পর্কে কিছুই জানিনি।


আমি এসেছিলাম ভালবাসা খুঁজতে

আর দেখতে পেলাম শুধু ক্রন্দনরত বৃক্ষরাজি। 


 

মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনলজি, সিলেট। 

সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা