X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে দেশে বইমেলা

দুলাল আল মনসুর
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:১২আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৪৩

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার ছবি প্রকাশনা জগতের খোঁজখবর থেকে শুরু করে বই বিপণনের নানা তথ্য সম্পর্কে পাঠকের কৌতুহল জাগে। সেসব কৌতুহলের অবসান ঘটানোর জন্যই বইমেলার আয়োজন। এছাড়া বইয়ের পরিচিতি ও প্রাপ্যতা ঘটানোও একটি প্রধান উদ্দেশ্য। মেলায় অংশ নেয়া লেখকও বুঝতে পারেন, তার পাঠক কোন ধরনের লেখা চান। এভাবে লেখক পাঠকের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি হয়। কোনো কোনো বইমেলা উপলক্ষে দূরদূরান্ত থেকে পাঠকেরা আসেন। তাদের আগমনে পরিবহন ও হোটেল ব্যবসায়েরও প্রসার ঘটে। এখানে সংক্ষেপে বিশ্বের কয়েকটি বইমেলার পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

১৯৮৬ সাল থেকে চলে আসছে বেইজিং আন্তর্জাতিক বইমেলা। প্রকাশনা শিল্পে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান এ বইমেলা। প্রতি বছর মার্চ কিংবা এপ্রিলে চার দিনব্যাপী ইতালির বোলোগনাতে অনুষ্ঠিত হয় বোলোগনা শিশু সাহিত্যের বইমেলা। ১৯৬৩ সাল থেকে চলে আসছে এ মেলা। শিশুদের বইয়ের লেখক প্রকাশকসহ আরো অনেক পেশাদার লোকজনের আগমন ঘটে এ মেলায়। অনুবাদের জন্য এবং বই থেকে অন্য মাধ্যমের শিল্প তৈরির জন্য এখানে বইয়ের স্বত্ত্ব কেনাবেচা হয়। শিশুদের বই থেকে যারা শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তারা মূলত এখান থেকেই বইয়ের স্বত্ত্ব কিনে থাকেন। ২০০৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে আয়োজিত হচ্ছে ব্রুকলিন বইমেলা। অন্যান্য বইমেলার মতো এখানেও বড়দের পাঠের দিকেই প্রধানত নজর দেয়া হয়। তবে বাড়তি আয়োজনও থাকে শিশুদের জন্য। শিশুদের বইয়ের আয়োজনসহ থাকে তাদের জন্য নানা কর্মপ্রক্রিয়া। ব্রুকলিন বইমেলায় চলে বড়দের পাঠচক্র, সাহিত্য আলোচনা, বই বিকিকিনি এবং লেখকদের সঙ্গে প্রকাশকদের চুক্তি স্বাক্ষর।  জার্মানিতে বইয়ের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য মেলা হলো ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা। প্রতি বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি আয়োজন করা হয়ে থাকে এ মেলা। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার শুরু পাঁচশো বছরের বেশি পুরনো। গুটেনবার্গের প্রিন্টিং আবিষ্কারের পরপরই ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে মেইনজে ১৪৫৪ সালে এ মেলার শুরু হয়। তখন আয়োজক ছিলেন মূলত স্থানীয় বই বিক্রেতারা। বইয়ের আন্তর্জাতিক বাজার তৈরিতে এ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। গেস্ট অব অনার হিসেবে প্রতি বছর কোনো একটি দেশকে বেছে নেয়া হয়। সে দেশের সাহিত্যের ওপর আলোকপাত করা হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায়। অতিথি দেশের জন্য বিশেষ প্রদর্শনী হলের ব্যবস্থাও করা হয়। এ মেলায় আলোচনা, থিয়েটার প্রদর্শন এবং রেডিও ও টিভির বিশেষ অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়ে থাকে। ১৯৮০ সাল থেকে আরো একটি লক্ষণীয় বিষয় চলে আসছে এ মেলায়: এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলের সাহিত্য প্রবণতা বেছে বের করার চেষ্টা করা হয় এখানে। জার্মান ভাষায় অনুবাদের জন্য এসব অঞ্চল থেকে তৃতীয় বিশ্বের লেখক প্রকাশকদের জার্মানভাষী লেখক প্রকাশকদের সঙ্গে মেলবন্ধনের চেষ্টা করা হয় এভাবে। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরেই জার্মানির দ্বিতীয় বহত্তম বইমেলা হলো লিপজিগ বইমেলা। মার্চে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। বইয়ের বাণিজ্য প্রসারে বিশেষ অবদান রাখে এ মেলা। নতুন প্রকাশনা প্রথমত এখানেই আলোর মুখ দেখে থাকে। এ মেলা থেকে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়: প্রতি বছর দ্য লিপজিগ বুক ফেয়ার প্রাইজ এবং লিপজিগ বুক প্রাইজ ফর ইউরোপিয়ান আন্ডারস্ট্যান্ডিং পুরস্কার এখান থেকেই দেয়া হয়। বইয়ের বাণিজ্যিক কাটতির উদ্দেশে লিপজিগ বইমেলা এবং ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা। ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ফ্রাঙ্কফুর্টের চেয়ে লিপজিগ বেশি বইয়ের সমাহার উপহার দিয়েছে। শহর এবং মেলা প্রাঙ্গণে প্রায় আঠারোশো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তার ফলে লিপজিগ বইমেলা ইউরোপের অন্যান্য মেলার চেয়ে বিরাট আর জাঁকজমপূর্ণ চেহারা লাভ করে থাকে।
এদিকে ওয়েলসের ব্রেকনকশায়ার ডিস্ট্রিক্টের ছোট বাজার শহর হে-অন-ওয়ে; সেটারই ছোট নাম হলো ‘হে।’ হে-কে বলা হয়ে থাকে বইয়ের শহর। আসলে এটা ওয়েলসের জাতীয় বইয়ের শহর। শহরটি ওয়ে নদীর দক্ষিণ-পূর্ব তীরে অবস্থিত। ১৯৮৮ সাল থেকে এখানে বইয়ের আসর বসে। দশ দিনব্যাপী চলা এ আসরে প্রায় আশি হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। ২০০১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ঘুরে দেখতে আসেন এখানকার আসর। বর্তমানে এ আসরের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা। প্রতি বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি আয়োজন করা হয় হংকং বইমেলা। আয়েজক হংকং ট্রেড ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল। স্থান: হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টার। বই প্রদর্শন, বেচাকেনা, কমপ্যাক্ট ডিস্ক এবং অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া প্রকাশনার ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে এ মেলায়। হংকং পাবলিশিং ফেডারেশন বাৎসরিক আসর বসাত সিটি হলে; সেখান থেকেই উৎপত্তি হংকং বইমেলার। হংকং বইমেলার প্রথম আসর বসে ১৯৯০ সালে। হংকংয়ে বছরের একটি প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে এ বইমেলা। প্রতি বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। আয়োজকদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় পর্যায়ের পাঠকদের পঠন পরিধি বাড়ানো। মে মাসের মাঝামাঝি ইতালির তুরিনে অনুষ্ঠিত হয় তুরিন আন্তর্জাতিক বইমেলা। এটাই ইতালির সবচেয়ে বড় বইয়ের বাণিজ্য মেলা। এ বইমেলা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। সে বছরের ১৮ মে উদ্বোধন করা হয় মেলা। উদ্বোধন করেন নোবেলজয়ী রুশ কবি যোসেফ ব্রডস্কি। ব্যবসায়ী গিদো আকোনেরো এবং বই বিক্রেতা আনজেলো পেজানা বইমেলার নাম দেন মেলোন দেল লিব্রো। পরবর্তীতে নাম রাখা হয় তুরিন আন্তর্জাতিক বইমেলা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এযাবৎ বেশ কয়েকবার নাম বদল করা হয়েছে এ মেলার। ২০১৫ সালে এখানে এক হাজার চারশো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সে বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল তিন লক্ষ একচল্লিশ হাজারের ওপরে।  
লন্ডন বইমেলা সাধারণত বছরের এপ্রিল মাসে আয়োজন করা হয়ে থাকে। ১৯৭১ সাল থেকে চলে আসছে এ বইমেলা। একজন লাইব্রেরিয়ানের বই প্রদর্শনী থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। প্রদর্শনীটির নাম ছিল দ্য স্পেশালিস্ট পাবলিশার্স এক্সিবিশিন ফর লাইব্রেরিয়ানস। বার্নেস হোটেলের বেসমেন্টে এভাবেই শুরু করেন লায়োনেল লেভেনথাল। তিনি চেয়েছিলেন, ছোট পরিসরের প্রকাশকরা যেন লাইব্রেরিয়ানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। ইউরোপের এই এলাকা এবং পৃথিবীর বাকি অংশের সঙ্গে যাতে বইয়ের প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়, সেই লক্ষ্যে এখন এ মেলার প্রতি বছর একটি বিশেষ অঞ্চল কিংবা দেশকে দৃষ্টিপাতের কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। তাতে অবশ্য মাঝে মাঝে বিতর্কও তৈরি হয়। যেমন ২০১২ সালে এরকম নির্বাচনে নেয়া হয় চীনকে। সেখানকার জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনকে দেয়া হয় চীনের কোন কোন লেখককে মেলায় প্রতিনিধিত্ব দেয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব। কিন্তু বিতর্ক বেধে যায় কোনো কোনো লেখকের সঙ্গে। কেননা ওই প্রতিষ্ঠান নোবেলজয়ী গাও জিংজিয়ানের নাম প্রস্তাব করেনি। কোনো কোনো লেখক চীনা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেন।
১৯৯৩ সাল থেকে জাপানে চলছে টোকিও আন্তর্জাতিক বইমেলা। টোকিওর বিগ সাইট কনভেন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এ বইমেলা। পঁচিশটি দেশের প্রায় ষোল হাজার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এ মেলায়। বইয়ের বাণিজ্যিক কাটতি এবং প্রচার বাড়ানোই মূলত এ মেলার উদ্দেশ্য।
ভারতের জয়পুরে সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হয় জয়পুর সাহিত্য উৎসব। সাহিত্যের নানা আয়োজনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এ উৎসব। এবছর ১৯ থেকে ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে এ মেলা। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া এ মেলার চেহারা দিনদিন বৃহত্তর হচ্ছে, আরো প্রাণবন্ত হচ্ছে। প্রায় এক লক্ষ লোকের সমাগম ঘটে এ মেলায়।
চীনের সাংহাইতে অনুষ্ঠিত হয় সংহাই সাহিত্য উৎসব। স্বল্প পরিসরে তবে আন্তর্জাতিক আবহে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এ উৎসব। যেমন নবীনতম বুকারজয়ী লেখক এলিনর ক্যাটন থেকে শুরু করে বেস্ট সেলিং এমি ট্যান পর্যন্ত ঘুরে গেছেন এ উৎসব। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অগাস্টে চলে জাতীয় বইমেলা। আয়োজন করে থাকে লাইব্রেরি অব কংগ্রেস। এ বইমেলায় সম্মনিত ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্টকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেমন সদ্য-সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় এ বইমেলার বিশেষ সম্মানিত অতিথির চেয়ারে বসেছেন। এ মেলায় আলোচনাসভাসহ চিত্রপ্রদর্শনীর ব্যবস্থাও থাকে।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে আরো অনেক বইমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হলো স্কটল্যান্ডের উইগটন বইমেলা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের পিইএন ওয়ার্ল্ড ভয়েসেস ফেস্টিভ্ল, যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ডস বাই দ্য ওয়াটার ফেস্টিভ্ল, সিডনি রাইটার্স ফেস্টিভ্লসহ আরো অনেক।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওসির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজের অভিযোগ
ওসির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা