X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
গৌরাঙ্গ মোহান্তর

‘প্রমগ্ন কবিতাবলি’ থেকে

সাহিত্য ডেস্ক
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪৫আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:০২

‘প্রমগ্ন কবিতাবলি’ থেকে ২০১৭ একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে গৌরাঙ্গ মোহান্তর কবিতা সংকলন ‘প্রমগ্ন কবিতাবলি’। প্রকাশ করেছে ছোট কবিতা। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর।

কথামুখ
একটি অল্পভার বইয়ের ভেতর আমার বেছে-নেয়া কিছু কবিতা প্রকাশ করবার জন্য প্রীতিভাজন সৈয়দ মহিউদ্দিন মাসুম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামে একটি প্রচ্ছদও প্রস্তুত হয়ে যায়। ‘শ্রেষ্ঠ’ শব্দটি আমার কাছে ভয়ানক অস্বস্তিকর। মনে হয় অহমিকা ঘোষণার কিংবা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি মোক্ষম প্রকাশ। কবিতা নিয়ে আমার অহংকার করবার কিছু নেই; বাণিজ্য বাঞ্ছনীয় নয়। ‘নির্বাচিত কবিতা’ বাজার-চলতি শিরোনাম বলে প্রচ্ছদে ‘প্রমগ্ন কবিতাবলি’-র রাজত্ব মেনে নেয়া গেলো। বইটির অধিকাংশ কবিতা চলিষ্ণু গদ্যে নির্মিত। এখানে মেটনিমি ও মেটাফরের ভেতর দিয়ে জেগে ওঠে একটি ব্যক্তিগত ন্যারেটিভ যেখানে অন্তর্গত অস্তিত্বের সাথে অপর সত্তা বা প্রকৃতিপ্রবাহের সম্পর্ক যোজিত।
অনেক অ্যান্টিপোডাল প্রবণতা নিয়ে গদ্য কবিতা এগিয়ে চলছে। এতে নিশ্চিত হচ্ছে কবিতার প্রসারণস্বাধীনতা। বাক্যের শক্তি গদ্য কবিতাকে অনন্য করে তুলছে। বাক্যের উজ্জ্বল দিন কবিতাকে করবে প্রিয়তর।




পানকৌড়িবোধ

পানকৌড়িবোধ নিয়ে নিমজ্জিত থাকি; একটি মাছের উজ্জ্বলতার পাশে দেখি জলজ রাজ্যপাট। দেখার জন্য নিমজ্জনকে অত্যাবশ্যক ভাবি। মৎস্যমগ্নতা প্রতিনিয়ত ঘটায় শ্বাসপ্রকৃতির রূপান্তর। উজ্জ্বল মাছের ব্যক্তিগত আয়নায় প্রতিফলিত হয় পানকৌড়ি চিহ্নিত পথ। পানকৌড়ির সাথে মাছের অতিপ্রাকৃতিক যোগ প্রস্তুত করে গভীর রং। এ রং মৃত্যুপূর্ব প্রসারতার জন্য জরুরি। আমার কৃষ্ণতা পানকৌড়ির ঐশ্বর্যে রঞ্জিত। আমার প্রার্থনার ভেতর মাছের অলৌকিক পুচ্ছের অবিকল্প বিকিরণ।

 

দুর্ভিক্ষদিনে তোমার কৌশিক বস্ত্র
দুর্মূল্য দুধকলার গন্ধ ভেসে এলে তোমার দিকে তাকাই। মানকচুছত্রের ঔদার্যে শঠি-সোনালু পথে ভেসে আসা স্বাদ ও শব্দের কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়ে সিফুড কিংবা জীবনানন্দীয় চিত্রকল্প। আমার দুর্ভিক্ষদিনে তোমার কৌশিক বস্ত্র উড়ে আসে আমার ধূসর গৃহে। স্কাইট্রেন কিংবা বিমানএঞ্জিনের ক্রমাগত হুঙ্কারের ভেতর তোমার বাক্যদল ভেসে আসে উন্মাদ মেঘে। মেঘের উপস্থাপন শতভাগ অকৃত্রিম নয়; দ্রুতগতির সাথে মেঘ ছিঁড়ে যেতে থাকে আর তোমার উচ্চারণকে করে তোলে কিছুটা অস্বাভাবিক। তবুও শূন্যতার ভেতর মেঘের করুণাই বিস্ময়কর। সূর্যতপ্ত মেঘ স্মৃতিকে প্রোজ্জ্বল করে; মেঘ ও সূর্যের ভেতর তরঙ্গিত হতে থাকে তোমার অবিনাশী শরীর।

 

মাছের সৌন্দর্যছায়া
ইভাসকুলার লেক থেকে মাছ উঠে আসবে বলে আমি হিমার্ত প্রভাত থেকে বসে থাকি ধবল বার্চের নিচে। কাদার গহন আশ্রয় থেকে শরীর ভাসাতে সময় লাগবে জেনে আমি বনের দীর্ঘতার দিকে দৃষ্টি ফেরাই—বসন্তের অবসন্নতার ভেতর কুয়াশা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সূর্য লজ্জিত; কুহকী আঁধারে ডুবে আছে বন। আমাকে ভিজিয়ে যায় অতি শীতল সাহসী বৃষ্টি। উঁচু বৃক্ষরাজির দুর্বল শাখা শীতফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অবিস্তীর্ণ পার্ক ও পাহাড় পথে যুবক-যুবতীরা নেমে পড়ে—লেকের গভীরে ঘণ্টা বেজে ওঠে। মাছেরা জলবক্ষে সাঁতার দিয়ে যায়। আমি অজস্র মাছের ভেতর অনন্ত সৌন্দর্যের ছায়া দেখি; রক্তের উজ্জ্বলতার জন্য ছায়াকে জরুরি বলে চিনি।

 

কার্ল প্লেস পার্ক
আমার শূন্য অন্ধকারে তুমি ফিরে আসো, অর্থাৎ তোমাকে টেনে আনি। প্রলম্বিত অন্ধকারে মেঘকণা আয়না হয়ে ওঠে। আমার জন্যে নেমে আসা নক্ষত্রআলো তোমাকে প্রতিফলিত কর—আশ্চর্য গতিময় প্রতিফলন খুলে দেয় সমস্ত দরজা। আমি সিঁড়ি বেয়ে নেমে পড়ি কার্ল প্লেস পার্কে। সবুজ লতায় বাক্সময় হয়ে ওঠে নক্ষত্রফুল; কর্তিত ঘাসের শরীর শোনায় নবজন্ম উপাখ্যান। অলৌকিক গন্ধে কেঁপে ওঠে পার্ক, বাতাস, বসবার কাঠবেঞ্চ। আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রার্থিত ফলের দীপ্তি। আমার সমস্ত কোষে তখন গন্ধদীপ্তির অদৃশ্য আলোড়ন।



অন্ধকার ও দাহস্মৃতি
অন্ধকারে জেগে থাকে দূর শহরের ক্ষীণ আলো। শহরদাহ নয়, দাহস্মৃতি আমাকে বিষণ্ন করে রাখে। সারাদিন কোরীয় পাহাড়ের রক্তপল্লব আমাকে উদ্দীপ্ত করেছে, দাহ অনুষঙ্গ চেতনায় ছড়িয়ে দেয়নি হেমলক ছায়া। সূর্য মৃত্যুকে ঢেকে রাখে, অন্ধকারে সূর্যরেখার অদৃশ্য গতির দিকে চেয়ে থাকি। আমার দৃষ্টিপথে ভেসে আসে তোমার দীপিত বস্ত্রখণ্ড। একদিন অরণ্যসরোবর আলোকময় মাছে মুখর হয়ে উঠেছিলো। তোমার স্পর্শে আমার আবরণধূলি নক্ষত্রপালকের লাবণ্য ধারণ করেছিলো। আলোকপ্রবণ মাছের প্রাত্যহিক উৎসবে তোমার নক্ষত্রনাম কীর্তিত হয়; আমার প্রত্যাশী পরিচ্ছদে লেগে থাকে বিরামপুরমৃত্তিকা। লাবণ্যকামনাময় ধূলি আমাকে অন্ধকারে উৎসাহী করে তোলে। আমি একটি নামে ঢেকে রাখি অনন্ত দাহস্মৃতি।

 

সম্পর্কিত
ভুটানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
২৫০ শিশু লিখলো ‘আমাদের জাতির পিতা, আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা’
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ