X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির প্রেমের কবিতা

অদিতি ফাল্গুনী
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৫৬আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৪৬

ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির প্রেমের কবিতা শিরদাঁড়া বাঁশি  বিখ্যাত রুশ কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির একটি দীর্ঘ কবিতা। বাংলা ভাষায় তাঁর ‘আ ক্লাউড ইন ট্রাউজার্স’ বা ট্রাউজার পরা মেঘ  আগে অনূদিত হয়েছে বা সোশ্যালিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক কবিতাগুলো অনেক জনপ্রিয় হলেও মায়াকোভস্কি উন্মাতাল প্রেমের কবিতাও লিখেছেন। তীব্র প্রেমিক ছিলেন তিনি। প্রেমজনিত জটিলতা থেকেই আত্মহত্যাও করেন। শিরদাঁড়া বাঁশি (Backbone Flute) তাঁর বিখ্যাত দীর্ঘ কবিতা। কবিতার ভেতর আবার কিছু ছোট ছোট অংশ আছে। শিরদাঁড়া বাঁশি (ব্যাকবোন ফ্লুট)-তে কবির প্রেমবেদনার কোনো সীমা নেই। কবি যে বিবাহিতা নারী লিলিয়া ব্রিকের প্রেমে পড়েছিলেন, তাঁকে উদ্দেশ্য করেই লেখা এ কবিতা। মূলত লিলিয়ার সাথে সম্পর্কজনিত জটিলতায় তিনি আত্মহত্যা করেন। এ কবিতা যে লিলিয়াকে উদ্দেশ্য করে নিবেদিত, সেটা কবিতার একটি জায়গায় লিলি সম্বোধন থেকে বোঝা যায়। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য এই কবিতাটি অনুবাদ করা হলো।

 

শিরদাঁড়া বাঁশি

প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৯১৫


প্রারম্ভিকা


তোমাদের সবার জন্য,

যাদের অনুরাগী ছিলাম আমি কিংবা আজো আছি,

আত্মার গুহায় লুকানো বিগ্রহের মতো,

ভোজসভা জমায়েতে মদের পিপের মতো

আমি তুলে ধরবো আমার ভাড়ী আর পঙক্তি-ঠাসা করোটি।

যত বেশি দিন যায় ততটাই বিষ্মিত হই—

কেন আমি গুঁজে দিচ্ছি না একটি বুলেটের আয়ুষ্কাল

আমার কবিতার স্তবকের শেষে?

আজ,

হয়তো বা নিতান্ত দৈবক্রমে,

আমি উপহার দিচ্ছি আমার শেষ, বিদায়ী কনসার্ট। 


স্মৃতি!

মস্তিষ্কের মিলনায়তনে জড়ো করো

আমার প্রিয়জনদের অন্তহীন চরণগুলো।

চোখে থেকে চোখে, সবার ভেতরে ঢেলে দাও উল্লাস।

বিগত উচ্ছ্বাসে হাল্কা করো রাত।

শরীর থেকে শরীরে ঢালো উচ্ছ্বাস বিভঙ্গ রেখা। 


আমাদের মাঝে কেউ যেন এই রাত ভুলে না যায়।

আমাকে শোন, আমি আজ রাতে বাজাব বাঁশি।

ভর করে একান্তই আমার শিরদাঁড়ায়।


এক.

দীর্ঘ প্রসারিত পদবিক্ষেপে আমি

চূর্ণ করি মাইল মাইল পথ।

কোথায় যাব আমি, নিজেকে লুকিয়ে নরকে?

অভিশপ্ত নারী, স্বর্গের কোন কামার

গড়েছে তোমাকে তার নিজস্ব খেয়ালে?

উল্লাস ঝড়ের জন্য রাস্তাগুলো সঙ্কীর্ণ ভাড়ী,

উৎসবে শোভাযাত্রা আর মানুষেরা পথে বেরিয়েছে

রবিবারের সেরা সাজে-ঠমকে।

আমি ভেবেছিলাম,

চিন্তাগুলো, অসুস্থ ও ঘনীভূত

রক্তের টুকরো, হামাগুড়ি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যত

আমারই করোটি থেকে।


আমি,

যা কিছু উৎসবময় তারই পৌরাণিক-শ্রমিক,

এই উৎসব ভাগ করে নেবার যার কোনো সঙ্গী নেই।

আমি এখন যাব আর ঝাঁপ দেব,

আমার মগজ ঠুকব আমি নেভস্কির পাথরে!

আমি করেছি ঈশ্বরনিন্দা,

চিৎকার করে বলেছি যে ঈশ্বর নেই,

যদিও সেই ঈশ্বরই

কোন না নরকের অতল থেকে

এমন এক নারীকে তুলে আনলেন

যার সামনে কম্পিত, শিহরিত হবে আস্ত একটি পাহাড়;

তিনি সেই নারীকে আমার সামনে এনে বললেন:

তাকে ভালবাসো!


ঈশ্বর শান্ত ও সুখী,

আকাশের নিচে কোন ঊষর পাহাড়ে—

এক বেদনাদীর্ণ পুরুষ পশু হয়ে ধ্বংস হয়েছে।

ঈশ্বর শুধু তাঁর করতল ঘষেন।

ঈশ্বর ভাবেন:

একটু শুধু তুমি অপেক্ষা করো, ভ্লাদিমির!


সুতরাং তুমি ভাবতেই পারো না কে ছিল সেই নারী,

এ ত’ ছিল বরং সে-ই,

যে ভেবেছে মেয়েটিকে দেবে এক যথাযোগ্য স্বামী

আর পিয়ানোর উপর রেখে গেছে মানবীয় স্বরলিপি।

যদি কেউ হঠাৎই শয্যাকক্ষের দ্বারে পা টিপে টিপে গিয়ে

তোমার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে নকশি কম্বল,

আমি জানি

সেই কম্বলে থাকবে পুড়ে যাওয়া উলের ঘ্রাণ

আর শয়তানের মাংস পুড়ে উড়বে ক্ষার গন্ধ ধোঁয়ায়।


বরং, খুব সকাল অবধি,

যতক্ষণ না তুমি জেগে উঠেছো

তোমার দয়িতাকে অন্য কেউ ভালবাসার জন্য নিয়ে যাবে এই ভয়ে,

আমি ছুটে চলেছি আমার আর্তনাদকে কবিতায় বদলে নিয়ে,

উন্মাদনার প্রান্তে হীরে কাটা ছুরি,

আহা, এক প্যাকেট তাসের জন্য!

আহা, মদের জন্য

এক দীর্ঘশ্বাস-ভরা হৃদয় উগরে দেয়া।


তোমাকে আমার দরকার নেই!

তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই!

যে কোন ক্ষেত্রেই,

আমি জানি

হঠাৎ ফেটে পড়ব আমি কর্কশ চীৎকারে!


যদি সত্যিই তুমি থেকে থাক হে ঈশ্বর,

হে আমার ঈশ্বর!

যদি এ নক্ষত্রের গালিচা তোমারই বুনন হয়ে থাকে,

তবে এই নৈমিত্তিক, নানাবিধ গ্লানি ও যন্ত্রণা,

যা কিছু আমাদের উপর অগ্নিপরীক্ষার মতো চাপিয়ে দিয়েছে হে প্রভু;

তবে বরং পরে নাও বিচারকের শৃঙ্খল।

অপেক্ষা করো আমার আসার জন্য।

আমি তো নিয়মানুবর্তী অনেক

আর একটি দিনও দেরি করব না।

শোন,

হে সর্বশক্তিমান বিচারক!


আমি আমার মুখ বন্ধ রাখব।

কোন কান্নাই আমার শক্ত করে কামড়ানো ঠোঁট

ভেদ করে বের হবে না।

ঘোড়ার ল্যাজে বেঁধে রাখার মতো

আমাকে বেঁধে রাখ ধূমকেতু পুচ্ছের সাথে,

আর তারপর আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে চলো,

নক্ষত্রকণা কিছু ছিঁড়ে নিয়ে।

অথবা এমনটিও হতে পারে:

আমার আত্মা যখন তার দেহ ছেড়ে

তোমার বিচারালয়ে পৌঁছে যাবে,

তখন উদ্বিগ্ন ভ্রুজোড়া কুঁচকে,

ছায়াপথের দুপাশে ঝুলিয়ে দিও ক্রুশাকৃতি ফাঁসির মঞ্চ,

আমাকে ধরে নিয়ে ঝুলিয়ে দিও কোনো অপরাধীর মতো।

যা ইচ্ছা খুশি করো আমাকে নিয়ে।

কেটে চার টুকরো করো ইচ্ছামাফিক।

আমি নিজেই তোমার হাত ধুইয়ে দেব।

তবু এটুকু করো—

শুনতে পাচ্ছো হে ঈশ্বর?

শুধু ঐ অভিশপ্ত নারীকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও

যাকে তুমি করেছো প্রেমিকা আমার!


দীর্ঘ প্রসারিত পদবিক্ষেপে আমি

চূর্ণ করি মাইল মাইল পথ।

কোথায় যাব আমি, নিজেকে লুকিয়ে নরকে?

অভিশপ্ত নারী, কোন স্বর্গীয় কামার

তোমাকে গড়েছে তার নিজস্ব খেয়ালে?

 

দুই.

উভয় আকাশে,

অচেতন ধোঁয়ার নীল কুণ্ডলী,

জীর্ণ বস্ত্র উদ্বাস্তুর মতো মেঘ,

আমার চূড়ান্ত প্রেমের সকাল বয়ে আনব আমি,

যা যক্ষ্মা রোগীর রক্তের মতো উজ্জ্বল। 


সৈন্য সমাবেশের গর্জন আমি ঢাকব উল্লাসে,

যে সৈন্যরা ভুলে আছে নিরাপদ ঘর আর ঘরের স্বস্তি।

পুরুষেরা,

আমাকে শোন!

ঐসব ট্রেঞ্চ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসো!

এই লড়াই আর একদিন লড়ে নিও।


এমনকি,

সুরা ও বসন্তের দেবতা ব্যাক্কাসের মতো

রক্তে গড়াতে গড়াতে,

উন্মত্ত এক যুদ্ধ যখন পৌঁছেছে সপ্তমে—

তখনো প্রেমবাক্য ভুল নয়।

প্রিয় জার্মানগণ!

আমি জানি

গোয়েথের গ্রেশেন

তোমাদের ঠোঁটে মুখরিত। 

ফরাসীরা বেয়নটে সয়ে হাসিমুখে মরে;

এক বৈমানিক হাসিমুখে বিধ্বস্ত বিমান নিয়ে শেষ হন,

যখন তারা মনে করে তোমার চুম্বনকারী মুখ,

ত্রাভিয়াতা।


কিন্তু সেই গোলাপী মুখগহ্বরের জন্য আমার কোনো বাসনা নেই

যা চুষেছে শতাব্দী সমূহ।

আজ আমাকে আলিঙ্গণ করতে দাও কোন নতুন পদতল!

তুমি আর আমি গাইব,

রক্তমস্তক,

আর রুজ মাখা ঠোঁটে।


সম্ভবত বেয়নেটের ইস্পাতের মতো ভয়ানক

সময় আমরা অতিক্রম করে যাব,

পার হয়ে পলিত শ্মশ্রু শতকগুলো,

থেকে যাব আমরা দু’জন:

তুমি

আর আমি।

তোমাকে তাড়া করে ফিরব আমি

নগর থেকে নগরে। 


তোমার বিয়ে হবে সমুদ্রের পারে,

রাতের ভাঁজে নমিত হবে তুমি—

লন্ডন নগরীর কুয়াশায়

তোমার দেহে এঁকে দেব আমি

সড়ক বাতির অগ্নিভ ঠোঁট।


এক তপ্ত ও আর্দ্র মরুতে,

সিংহেরা সতর্ক যেথা,

তুমি খুলে দেবে তোমার ক্যারাভানগুলো—

তোমার উপরে,

বাতাস-ধ্বস্ত যত বালুর আড়ালে,

আমি পেতে দেব আমার গাল

সাহারার মতোই যা জ্বলন্ত।


ঠোঁটে পুরে এক চিলতে হাসি,

তুমি তাকাবে

আর দেখতে পাবে এক দশাসই টরিয়াডর!

এবং সহসাই আমি

ছুঁড়ে মারব আমার সব ঈর্ষা বাক্সগুলোয়

একটি মরতে বসা ষাঁড়ের চোখের জন্য।


যদি তুমি তোমার স্খলিত পা টেনে চলো

সেই ব্রিজের কাছে,

একথা ভাবতে ভাবতে

যদি পৌঁছে যাও সেই ব্রিজের কাছে

যে কতটা মনোরম নিচে ঝাঁপ দিয়ে পড়া,

তবে সে তো আমি,

নিচে বহতা সিনের জলধারা থেকে

যে ডাকবে তোমায় তার

হলদে দাঁতগুলো মেলে।


আর তুমি, অন্য কোনো পুরুষের সাথে

দ্রুত গতির গাড়ি চালাতে চালাতে

পুড়িয়ে ফ্যালো স্ট্রেলকা বা সকোলনিকি—

তবে সে তো আমিই,

যে অনেক উঁচুতে উঠে,

প্রত্যাশী আর নগ্ন যেন চাঁদের মতোই,

তোমাকে ভোগাবে যত বিরহ ব্যথায়।


ওদের তো দরকার হবে

আমারই মতো কোনো শক্ত পুরুষ

ওরা আমাকে নির্দেশ দেবে:

যুদ্ধে শহীদ হও!

শেষ যে শব্দটি উচ্চারিত হবে

আমার ঠোঁটে,

সে যে তোমারই নাম!

গুলিবিদ্ধ আমার ঠোঁটে রক্তের টুকরো জমা হবে।


কি আমার অন্তিম পরিণতি? সিংহাসন?

অথবা সেইন্ট হেলেনায় চির নির্বাসন?

জীবনের সমূহ ঝড়ের স্কেইটে পরিয়ে লাগাম

আমি ছুটছি বিশ্বের রাজত্ব লোভে

এবং পেতে

এক অভিযুক্ত কয়েদির পায়ের শেকল।


আমি তো রাজা হবার জন্য নিয়তিবদ্ধ—

আমার প্রজাবৃন্দকে হুকুম করবো আমি

আমার মুদ্রাগুলোর স্বর্ণাভায় খোদাই করতে

তোমারই অমূল্য মুখচ্ছবি।


কিন্ত পৃথিবী যেখানে

ঝাপসা হতে থাকে তুন্দ্রার দিগন্তরেখায়,

নদীগুলো যেখানে দর কষাকষি করে উত্তুরে বাতাসের সাথে,

সেখানে আমি লিলির নাম খোদাই করে যাব

আমার পায়ের ডান্ডাবেড়িতে,

আর কঠোর শ্রমের অন্ধকারে

চুমু দেব ঐ ডান্ডাবেড়িগুলোয় বারম্বার।


শোন, তোমরা যারা ভুলে গেছ

আকাশ কতটা নীল,

আর তোমরা যারা রোমশ হয়েছ

পশুর মতো,  

সেই তোমরা শুনে রাখো

এটাই পৃথিবীর শেষ প্রেম

যা ক্ষয়রোগীর রক্ত ঝলকের মতো সকাল হবে।


তিন.

আমি তো ভুলে যাব বছর, দিন আর তারিখের বিশদ খতিয়ান।

এক গাদা কাগজের মাঝে নিজেকে বন্দী রাখব।

প্রজ্ঞাময় শব্দের যন্ত্রণার মাঝ দিয়ে যাব,

করো তোমার সৃজনকর্ম, হে অমানবিক যাদু!


এই দিনে, তোমাকে দেখতে গিয়ে

আমি অনুভব করেছিলাম

তোমার বাড়িতে কিছু একটা অনর্থ ঘটেছে।

তোমার রেশমী পোশাকের আড়ালে

কিছু একটা লুকিয়েছো তুমি।


আর ধূপ ও অগুরুর ঘ্রাণ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছিল।

আমাকে দেখে সুখী তুমি?

খু-ব কথাটা এমনভাবে বলেছিলে

যা সত্যিই মধুর ছিল।


সংশয় ভেঙে দিল যুক্তির বাঁধ।

জ্বর তপ্ত, পুড়ে যাওয়া আমি,

হতাশার স্তুপের উপর

মুখ থুবড়ে পড়েছি।

 

শোন,

যা কিছুই কর না কেনো,

লুকাতে পারবে না তুমি কোনো শবদেহ।

সেই ভয়ানক শব্দ মস্তকে ঢেলে চলে

বিগলিত লাভা।

যা কিছুই করো না কেনো তুমি,

তোমার বিউগলের প্রতিটি তন্তু থেকে

(যেন বা মেগাফোন বাজিয়ে বলছে কেউ):

মেয়েটি মৃতা, মৃতা, মৃতা! 


এ হতে পারে না,

আমাকে উত্তর দাও।

মিথ্যা বলো না!

(এখন কিভাবে যাব আমি? যেতে পারি?)

তোমার মুখের উপর তোমার চোখ জোড়া

খনন করে চলে গভীর দুই কবরের অতল শুন্যতা।

 

কবরগুলো গভীরতর হয়।

ওদের কোন তল যেন নেই।

দিনের বধ্যমঞ্চে মাথা ঢোকাব প্রথমে—

পাতালের উপরে আমার আত্মা

ছড়িয়ে দিয়েছি আমি শক্ত দড়িতে,

আর শব্দের বাজিকরী খেলতে খেলতে

হেঁটে চলেছি সেই দড়ির ওপরে।

 

আমি জানি

প্রেম তাকে ইতোমধ্যে ক্লান্ত করেছে।

শনাক্ত করি আমি একঘেঁয়েমির অসংখ্য চিহ্ন।

আমাদের যৌবনকে খুঁজে পাই আমি আমার আত্মায়।

হৃদয়কে ডাকি আমি শরীরের আনন্দযজ্ঞে।

 

আমি জানি আমাদের প্রত্যেকেকেই

চড়া মূল্য দিতে হবে কোনো নারীর জন্য।

কিছু কি মনে করবে যদি ইতোমধ্যে,

তোমাকে পোশাক পরাই আমি তামাক ধোঁয়ায়, 

ফরাসী ফ্যাশনের বদলে?

 

প্রেম আমার,

যিশুর বার্তা প্রচারকদের কারো মতোই,

আমি পার হবো হাজার হাজার পথ।

শাশ্বত সময় তোমার জন্য সাজিয়েছে একটি মুকুট

আর সেই মুকুটে আমার শব্দাবলী

বুনে দেয় শিহরণের রংধনু। 


শত মণ ভারি খেলায় হস্তীবাহিনী যেমন

সম্পন্ন করে রাজা পুরুর বিজয়,

তোমার মস্তিষ্ক ভরেছি আমি প্রতিভার পদচারণায়,

তবু নিরর্থক সব।

তোমাকে ছিঁড়ে আনতে পারি না আমি।

 

আনন্দ করো!

আনন্দ করো,

এখন

তুমি তো আমাকে শেষ করে দিয়েছ!

বিক্ষোভ এতটাই তীব্র আমার,

যে দৌড়ে যাবো খালের কিনারে

আর মাথাটা ডুবিয়ে দিব

তার তলহীন জলে।

 

তুমি তোমার ওষ্ঠ বাড়িয়ে দিয়েছিলে,

এতটাই রুক্ষ আর খসখসে ছিলে

তোমার ওষ্ঠ নিয়ে যে আমি জমে গেলাম তাদের ছোঁয়ায়।

 

আমার অনুতপ্ত ঠোঁটে এর চেয়ে বরং আমি চুম্বন করতে পারতাম

শীতল পাহাড়ের উপর ঠাঁই গাড়া কোনো সন্ন্যাস আশ্রম।

 

দরজায় শব্দ হলো।

সে ঢুকলো,

রাস্তার স্ফূর্তিতে আমোদিত। 


আমি

তীক্ষ্ম হাহাকারে ভেঙে পড়লাম

আর তাকে চেঁচিয়ে বললাম ভগ্ন আর্তনাদে:

-ঠিক আছে,

আমি চলে যাব,

ঠিক আছে!

তোমার সে থাকবে তোমারই কাছে।

তাকে সাজাও সুশোভন যত ছেঁড়া কাপড়ে,

আর তার রেশমে মোড়ানো লাজুক ডানা দুটো ভারি হতে দাও।

দেখতে থাক যতক্ষণ না সে ভেসে চলে যায় বহু দূরে।

আর তোমার স্ত্রীর গলদেশে

ঝুলিয়ে দাও মুক্তার হার,

এক টুকরো পাথরের মতো!

 

আহ্, কেমন একটি রাত!

আমি নিজেই শক্ত করে বেঁধেছি হতাশার ফাঁস।

আমার কান্না ও হাসি

শোচনীয় করে তুলেছে এই কক্ষের মুখ বিভীষিকায়। 

 

তোমার অস্থির চেহারা দেখা গেল;

তোমার জ্বলন্ত চোখ নিবদ্ধ গালিচায়

যেন বা কোনো নতুন বিয়ালি

হাতসাফাই করে নিয়েছে

ইহুদি জায়নের কোন চোখ ঝলসানো রাণী। 


তীব্র শোচনায় 

আমি তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসি আত্মসমর্পণে,

নিজস্ব মালিকানার সব শহর

বিলিয়ে দেবার পরও

রাজা এ্যালবার্ট

আমার তুলনায় যেন

এক জন্মদিনের উপহার ঠাসা বালক ছিলেন। 

 

ফুল ও ঘাসেরা, সূর্যালোকে স্বর্ণালী হও!

বসন্তের যৌবনে উজ্জীবিত হও, সমস্ত পদার্থের হে জীবনশাঁস!

শুধুমাত্র একটি বিষই বাসনা করি-

কবিতার তীব্র মদ চুমুকে পান করা! 


আমার হৃদয় লুট করেছো যে তুমি,

যে আমাকে নগ্ন করেছো সর্বস্ব থেকে,

যে আমার আত্মাকে এতটাই পীড়ন করেছো যেন জ্বরগ্রস্ত আমি,

হে প্রিয়তমা, তবে গ্রহণ করো এই উপহার—

কোনদিন, আর কখনোই হয়তো নয়, আমি অন্য কিছুর কথা ভাবব না।

 

এই দিনটিকে আঁকো এক উজ্জ্বল ছুটির দিন হিসেবে।

ক্রুশবিদ্ধ করার মতো যাদু,

করো তোমার সৃজনী কর্ম।

যেমনটা তুমি দ্যাখো—

শব্দের নখ

আমাকে আটকে দেয়

কাগজের স্তপের সাথে।

  


 

রুশ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ : আন্দ্রে নেলার।

 

 

সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা