তোকে
তুই বললেই বৃষ্টি হয়
ঘষাকাঁচ ভুলে
মনে পড়ে
জেলেপাড়া, জোনাকিদের ঘোড়দৌড়।
তোর ছায়া নামলেই
বানের পানি, ফুলে ফেপে
কিশোরের বুক- কার নামে
উড়িয়ে দেয়
তার সবটুকু গোলাপী নদী!
তবে কি
তোর মতো অন্য কেউ
চোখজন্মের ফাঁক গলে
ঢুকে পড়েছিল বিনা টিকিটে
পৃথিবীর প্যান্ডেলে!
কোথাও একটা দুপুরের কিন্নর
শুনতে পাস্,
দূরে, আরও দূরে
ঘন হয় দুগ্ধঘ্রাণ,
কড়া মিষ্টিতে ঝুলে পড়ে
আমের ঘনবন
তাহলে এত বছর কোথায় ছিলাম!
রিক্সার বাটন খুলে যে মেয়েটি নেমে গিয়েছিল
তার নাম কেন মনে নেই!
যাকে ভেবেছিলাম- অথবা
তার জন্যই আমার মৃত্যু হতে পারে
তুই তো জানিস
কীভাবে তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছিলাম
আমি! পাহাড় অতশত বোঝে না,
ধ্যান আর নিদান তত্ত্ব ছাড়া
অন্যপথে পথ ছিল না তখন,
কাছে ডেকেছিল শুধু সবুজঘ্রাণ
একা এবং একমাত্র,
ক্ষুধার মতো গভীর মনোযোগে দেখেছিল সে
আমার মুমূর্ষু চোখ!
তবে কি
তোর মতো অন্য কেউ
চোখজন্মের ফাঁক গলে
আমার নামে
বিনা টিকিটে ঢুকে পড়েছিল
পৃথিবীর প্যান্ডেলে।
পাহাড় এবং একা
একগ্লাস হুইস্কি যেমন লোভী পানকারীকে নিমিষে কাছে টেনে নেয়,
তারও অন্তিম এই সুর্যাস্ত- যে আমাকে
বিষণ্ন করে তোলে আগামিকালের জন্য।
সময়! এক অলিখিত ঘণ্টাবাজ, বেরহম
সে শুধু জানান দিতে চায়- সে আছে; সবখানে আছে।
যতটা সম্ভব দূরবর্তী মেঘেদের মধ্যে
ভেসে যায় রাত্রি,
ক্রমে খোলাসা হতে থাকে আমাদের অভিপ্রায়, গতকালের বাসি পাপ।
অতঃপর ভেবেছি-
পাহাড়ের কাছে আর কী কী চাওয়া যায়!
ঘুম, নিঃশ্বাসের নিরাময়, দূরের টান!
কার কাছে এই নাছোড় অভিমান!
মনে হয়
দরজার বাইরে কেউ একজন
কড়া নাড়বে, নাকি ভাবনার ওপারে
কোথাও হয়ত লাগাতার সবুজ ঘাস,
বিশ্বস্ত বাল্যকাল, বর্ষাকালের আশায়
শরীর জুড়ায় পথ ঘাট মাঠ
-এসব অপেক্ষার শেষ নাই,
মৃত্যুরও শেষ নাই
গতকালের ইচ্ছের মতন
একদিন কী মনে করে সোজা পূব দিকে
চলে গিয়েছিলাম, পাথার থেকে পাথারে
গ্রামের পরে গ্রাম পার হয়ে দেখি-
শাখা পরে শুয়ে আছো নদী,
তোমার করুণ চোখে
নুয়ে ছিল আমার বাল্যকালের ছায়া,
দুই কুলে ছপ ছপ পানি
মধুমাস মধুময়,
শামুকেরা চেটে খায়
রূপালি সময়
জলের দরে, অতঃপর আর
পার হতে পারিনি বরং
ফিরে এসে বুঝেছি
দুনিয়ার সব দায়ীত্ব আমার নয়!
অনেক দিন একা ছিলাম
কিছুই জানতে পারিনি,
শুধু আঙুলের জবান খুলে
উড়ে গেছে দরখাস্ত
গতকালের ইচ্ছের মতন।
চুম্বনের মেরুনগুচ্ছ
হাতলে থেবড়ে থাকা
ক্লান্তিস্তুপ,
আর এই যে চর্বিরা
অনভ্যস্ত হিরিকে
থেমে গিয়েছিল
বোকা সিগনালে
এরাও একদিন
মেদ খুলে
আলগা হবে, নিভিয়ে দিয়ে
হাড্ডি-কব্জায়
অবশিষ্ট শয়তানি
তোমার বয়সের মতো
ডাকপিয়নের কাঁধে চেপে
অন্য শহরের শীতল মাফলার,
চলে যাবে তোমার
চুম্বনের মেরুনগুচ্ছ।
গল্পের সূত্রপাত
আমি যখন ডুবে যেতে যেতে
আরও একবার বলতে চাই,
-আমি ফিরতে চেয়েছিলাম।
যখন সবুজ সিগনালে ফুল ফোটে
গোলাপি রঙের, নিঃশব্দে গলে
যেতে থাকে মেটামরফিক রাস্তা, মোটরকার।
ভদ্রমহিলাদের মেদ খুলে অঙ্কুরিত
শ্যামল উদ্যান মেলে ধরে নৌযান। অতঃপর
দৃশ্যের বাইরে ফিতে খুলে ঝর ঝর করে
ঝরে পড়ে ধারাপাত। তখন সবকিছু বুনো প্রেমিকার মতো
বাদামি চুলে নরমের ঊল আনে
গলার কাছে। জন্মনিরোধ বাটনে এঁটে থাকে
কামভরা আকাঙ্ক্ষা।
হঠাৎ করেই শ্রাবণ, শকুন্তলা
অথবা বাহুল্য দৈনিকেও একটা সবুজ শরীর
দুলে দুলে বসন্ত আনে, বলে,
-এবার অন্যরকম হবে।
এতদিন যা হবার তা হয়েছে।
তখন তোর মুখের মতো অথবা
আমার মুখের ভাস্কর্য বয়ে
নেমে আসা বিষণ্নতা কবিতাঘাম
আরও একবার গল্পের সুত্রপাত করে।
নষ্টার্জিত হাত
এই যে জবরদস্ত জবান
ফসলের ঘুম খুলে
হৃদয়ের তপস্যা, আর
আমার ঠোঁটের লাবণ্যদানা,
জিহবায় লেগে আছে দ্যাখো
তোমার নামের নোকতা,
তুমি- একবার তাকাও প্রিয়।
হয়ত এই নষ্টার্জিত হাতের
নোনা ভেঙে
এবাদতের শরবতে ডুবে
গেছে বরাদ্দকালের পাপ
হয়ত এই পথ, পথের ইচ্ছের মতো
গোপন দরজা খুলে দেখেছি
জোব্বা পরা হরিণ, শুনেছি
জোনাকিদের মক্তব।
আমাকে ক্ষমা করো প্রিয়
আমি কিছুই চাইনি মাওলা