X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের নির্মাণ ও সমীকরণ

সঞ্জয় দে রিপন
০৪ মে ২০১৭, ১১:১৮আপডেট : ০৪ মে ২০১৭, ১১:৩৬

ফিগার উইথ এ পেট, এচিং, ১৯৬৫, শিল্পী সোমনাথ হোর
আজকাল ভাবনাপ্রসূত শিল্পকলা নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে অনেকের ভেতরেই। শিল্পের ধামাধরা কাব্য নিয়ে বেশ পঠনপাঠন হয় বা হচ্ছে কিন্তু শিল্পটা যে একটা বিজ্ঞান, একটা জ্ঞানলব্ধ কৌশল এটা অনেকেই ভাবেন না বা ভাববার চেষ্টাও করেন না। শিল্প হচ্ছে অনেক বেশি সাহিত্য, কিন্ত আবার অনেক বেশি কৌশলগত জ্ঞানও।  সাহিত্যের যে শাখা-প্রশাখাতেই সৃষ্টি কৌশল নিয়ে কেউ মেতে উঠুক না কেন তাকে অবশ্যই রূপের অবকাঠামোগত দিক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ এবং তার প্রকাশের ধরন সম্পর্কে কৌশলগত দিক বুঝে নিতে হবে। আর তাই তো শিল্পের গুণ এবং গুণের কাঠামোবদ্ধ রীতি নিয়ে আলোচনা অনেক বেশি জরুরি।
শিল্পের তিনটি গুণ থাকে। বিষয়, শৈলী এবং আঙ্গিক। এই তিনটি গুণের মধ্যে দিয়েই শিল্পের প্রকাশ। বিষয়ভিত্তিক চিন্তার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষেই শিল্পের গড়ন নির্মাণ এবং অবয়বধর্মী আবহ সৃষ্টির প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে নির্মাণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে একটা রীতি কৌশল সৃষ্টি হয় যাকে আমরা বলে থাকি স্টাইল বা শৈলী। স্টাইল কথাটার অর্থই হচ্ছে শৈলী। একটি ছবির স্টাইল কিন্তু হঠাৎ করে তৈরি হয় না। এই স্টাইল বা শৈলী কোথা থেকে তৈরি হয়। যদি সাহিত্যের বা কবিতা বা গল্পের ক্ষেত্রে আমরা লেখনীশৈলী নিয়ে আলোচনা করি তবে একটি বিষয় প্রতীয়মান হবে যে লেখার স্টাইলটা কিন্তু লেখকের একান্ত নিজস্ব যা তার চিন্তাধারা থেকে সরাসরি উৎসারিত হয়ে থাকে। লেখকের চিন্তার ধরনটাই কিন্তু তার লেখার স্টাইল তৈরি করে দেয়। যেমন একজন লেখকের চিন্তার গড়ন অনুযায়ী তার গদ্য গাথুঁনী তৈরি হয়। কখনো সহজীয়া আবার কখনো খুবই কঠিন একটা ব্যাপার থেকে থাকে। এক্ষেত্রে বিষয় ভিত্তিক ভাব লেখনিকে প্রাণরূপ দান করে থাকে যার মধ্য দিয়ে লেখক নিজে তার ধরনটা সেই ভাব অনুযায়ী নির্ধারণ করে থাকেন। লেখার সরলীকরণ স্টাইল বা শৈলী বিষয়কে অনেক বেশি যোগাযোগ সমৃদ্ধ করে তোলে।
আবার একজন কুমারের ক্ষেত্রেও কিন্তু বিষয়টা একই রকম। তিনি একটি জগ বা মগ বা হাঁড়ি অথবা কলসি যাই তৈরি করুক না কেন পূর্বেই এই সিদ্ধান্তটি তিনি গ্রহণ করেন। তারপর হুইলটি ঘুরানো শুরু করেন এবং ঘূর্ণায়মান মাটির চাকাকে অঙ্গুলি টিপ্পনের কম বেশি চাপের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন রকম গড়ন তৈরি করে থাকেন। চাপ বেশি দিবে না কম দিবে এটা কিন্তু একজন কুমার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই কিন্তু তার নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়, এবং এটাই তার স্টাইল বা রীতি। অর্থাৎ নির্মাণ শৈলীটা হচ্ছে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার দৃশ্যরূপের একটা আলেখ্য মাত্র; যেখান থেকে সৃষ্টির রস নিঃসরিত হয় বা উৎকলিত হয়। এই শেলীর মধ্যে সৃষ্টির গুণাগুণ থাকে অক্ষুন্ন এবং শৈলীর মধ্যেই প্রকাশিতব্য হয়ে উঠে সৃষ্টির নিজস্বতা এবং সৃষ্টিকারীর স্বকীয় সত্তা।
এই যে নির্মাণের স্টাইল বা রীতি কৌশল বা শৈলী এটা শিল্পীর জ্ঞানের মোড়কে আবদ্ধ থাকে অর্থাৎ যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে শিল্পী তার জ্ঞান লাভ করে, যে সংস্কৃতির আবাহনে শিল্পী সৃষ্টির রস গ্রহণ করে থাকে, যে প্রক্রিয়ায় জীবিকার কর্মযজ্ঞ চলমান সেই প্রবাহই শিল্পীর চিন্তায় প্রভাব বিস্তার করে এবং সৃষ্টি-নির্মাণ প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। অর্থাৎ শৈলীতে শিল্পীর জীবন বিধৌত নানা কিছুর প্রেষণা থাকে। আর তাই তো শৈলীতেই শিল্পীর নিজস্বতা, স্বতন্ত্রতা তথা সৃষ্টি রহস্য অনেকভাবেই নির্ভরশীল। ঠিক তেমনিভাবে একজন ভাস্কর যখন ভাস্কর্য নির্মাণের মাধ্যম নির্বাচন করেন সেই নির্বাচনটাই তার বিষয় প্রকাশের অন্যতম প্রধান একটি সিদ্ধান্ত। কারণ বিষয় প্রকাশের জন্য কোন মাধ্যমটা বেশি উপযোগী; কাঠ, মাটি, লোহা, সিমেন্ট নাকি অন্যকিছু এবং এই কাঠ কাটা, লোহার ঢালাই, সিমেন্টের যোজন বিয়োজন বা ঢালাই ইত্যাদি কাজের শৈলিতা নির্দেশের অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে বিবেচ্য। তারপর আসে ফর্মের বিন্যাস বা রূপ নির্ণয় যাকে আমরা আঙ্গিক বিন্যাস বলে থাকি। আঙ্গিক বিন্যাসের সফলতা কিন্তু নির্ভর করে শৈলীর উপর। অর্থাৎ এই শৈলিতাই শিল্পের গুণাগুণকে পরিচালিত করে বিষয় এবং আঙ্গিকের মতো। এই শৈলী শুধু শিল্পী নয় মানুষ মাত্রেই প্রত্যেকের একটা স্টাইল থাকে। মানুষের আচার আচরণ কথাবার্তা, চলাফেরা, কাজে কর্মে স্টাইলের প্রতিফলন ঘটে। স্টাইলই বলে দেয় কে কেমন মানুষ। কার সংস্কৃতি কী।
খরার কবলে কোলাপুর (মহারাষ্ট্র), লিনোকাট, ১৯৫৩, শিল্পী চিত্তপ্রসাদ অর্থাৎ স্টাইল মানুষের পরিচয়, ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তাকে ফুটিয়ে তোলে। এখানে একটি বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে ফ্যাশন। ফ্যাশন কিন্তু স্টাইল নয়। স্টাইল আর ফ্যাশনের মধ্যে অনেক ব্যবধান। স্টাইল প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয় না; কিন্তু ফ্যাশন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। নিজেকে, নিজের চিন্তাকে, ভাবনাকে, দর্শনকে  উত্তরণ ঘটানোর মধ্য দিয়েই স্টাইলের পরিবর্তন হয় যা সময়সাপেক্ষ এবং অনেক বেশী পঠন পাঠন জ্ঞান আহরণ ও চর্চার মধ্য দিয়েই সম্ভব যেখানে আবেগ অনুভূতি, দৃষ্টির সীমানার ভাববোধন অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই যে স্টাইল বা রীতিনীতি এই বিষয়টা বৃহৎ পরিসরে সংস্কৃতির রূপ লাভ করে থাকে।
স্টাইলের মধ্য দিয়ে অনেক সময় শিল্পের মৌলিকতা প্রকাশ পায় আবার কখনো কখনো স্টাইল শিল্পে অনুসৃত হয়। একটি  নির্দিষ্ট শৈলীতে একজন শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে  কাজ করলে তা আবার প্রাথমিক হিসেবেই বিবেচিত হয়। শিল্পীকে এই স্টাইল আবিষ্কার করতে হয় এবং এই স্বতঃস্ফূর্ত দিকটি ধারাবাহিকভাবে চর্চার মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়। শিল্পীর চিন্তা ভাববোধ এবং সচেতনতার মধ্য দিয়েই স্টাইলের প্রকাশ ঘটে থাকে। এই শৈলী হচ্ছে শিল্পীর চেতন ও অবচেতন মনের প্রতিক্রিয়ার ফল। নানান চিন্তার গভীরতা থেকেই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নির্যাস উৎসারিত হয়, উদ্ভাবিত হয়। সৃষ্টির শুরুতেই স্টাইল বা শৈলীতা বা নিজস্বতা নিয়ে ভাবনার বেড়াজাল তৈরি করা ঠিক নয়। প্রতিনিয়ত চিন্তার রূপ নির্মাণ, ভাবের আবহ তৈরি এবং কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়ে স্টাইল আবর্তিত হতে থাকে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পরে একটি স্বতঃস্ফূর্ত রূপ নির্দেশ করে।  যেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নতুনত্বের সন্ধান চলতে থাকে এবং জীবন সৃষ্টির কাঠ খড় পুড়িয়ে অনেক শিল্পী শৈলীর স্বতন্ত্রতা অর্জন করে থাকে। শিল্পীর বিষয় ভিত্তিক চিন্তা থেকেই স্টাইলের আবিষ্কার। বিষয় নিয়ে শিল্পীর চেতনা এবং অবচেতনভাবে বিভিন্ন ভাবনার যে ক্রিয়া সেই ক্রিয়ামুখী ভাবনা থেকেই সৃষ্টির সূচনা। চেতন অবচেতন মনের যে ক্রিয়া সেই ক্রিয়া থেকেই রীতি কৌশলের ধারণা শিল্পী পেয়ে থাকেন। শিল্পী হাশেম খান নৌকা নিয়ে অনেক ছবি এঁকেছেন। তার একটি ছবিতে নৌকাগুলোকে দেখেছেন আকাশ থেকে।
এই যে অনেক উপর থেকে জলে ভাসা নৌকার সাথে জীবন ও প্রকৃতিকে দেখার মধ্য দিয়ে একটি অন্যরকম আবহ তিনি তৈরি করেছেন। এই ছবিতে নির্মাণের রীতি তিনি সবকিছু থেকে বদলে দিলেন এই পরিবর্তনটা কীভাবে আসল। শিল্পীর চেতনা থেকে। দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। নদী নৌকাকে নিজের মতো করে আলিঙ্গন করার মধ্য দিয়ে। মূলত এভাবেই স্টাইল তৈরি হয়। যার সাথে শিল্পীর গভীরতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
স্টাইল ও ফ্যাশন সম্পর্কে নির্মাল্যনাগ তার চেতনা বইতে বলেছেন “সমাজে ফ্যাশন কখনো কখনো ফিরে আসলেও স্টাইল কখনোই ফিরে আসে না। স্টাইলকে বুঝতে হলে অবশ্যই শিল্পীকে ও তার পরিপ্রেক্ষিতকে অনুধাবন করতে হবে।”
শিল্পচর্চায় স্টাইলের শুধু শিল্পমূল্যই নয়, এর ব্যাপক ঐতিহাসিক তাৎপর্যও আছে তাই স্টাইলকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করে দেখা যাবে না।
জেনোসাইড ১৯৭১, ক্যানভাসে এক্রেলিক, ২০১৫ শিল্পী মোস্তাফিজুল হক শিল্পীর চিন্তার কোষ থেকে স্টাইলের মাত্রা নির্ধারিত হয়। এখানে শিল্পীর জীবন সম্পর্কিত ধারণা, চিন্তার এবং দৃষ্টির গভীরতা অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে। অনেক সময় অবকাশ থাকে না এতকিছু ভাববার।  যেমন কোনো দর্শক যদি শিল্পী সফিউদ্দিন আহমদের কালো সিরিজের চিত্রমালা দেখেন। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগবে এই চিত্রকর্ম গুলো কীভাবে যুগান্তকারী বা সময়কে ধারণ করেছে। দেখেতো মনে হয় ফর্মের বিন্যাস, রং এর বিভিন্নমুখী মাত্রায়ণ কিন্তু ছবিগুলোর গভীরতা অন্য জায়গায়। যেখানে যুক্তির আনাগোনা রয়েছে, রয়েছে দৃষ্টিশক্তির ভাবনা। অনেকের কাছে মনে হতে পারে স্বপ্নের মতো ব্যাপার। কোথাও পরিষ্কার  কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। না মানুষ, না জীবন, না প্রকৃতি কিন্তু তারপরও ছবিতে রয়েছে অনুভূতির এক বিন্যাস, বোধ এবং মননের এক মেলবন্ধন। জীবন ও দৃষ্টির আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। এই সবকিছুর আবিষ্কারের জন্য শিল্পীর ধারণার সাথে পরিচিত হতে হবে; জানতে হবে সমাজ ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের ব্যাখ্যা। আর এসব কিছুর মধ্য থেকেই স্টাইলের আবির্ভাব। যে স্টাইল নির্মাণের জন্য একজন শিল্পীকে যুগ যুগ ধরে সাধনা করতে হয়। নানামুখী বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে একজন শিল্পী শিল্প বিষয়টিকে একটি নিজস্ব ছকের মধ্যে নিয়ে আসতে চায়। এই যে ছক তৈরি করা, যার মধ্য দিয়ে বিষয়ের সঠিক প্রকাশপর্ব তৈরী হয় শিল্পীর নিজের মতো করেই। এই যে ছবি আঁকার নিজস্ব গণিত বা সমীকরণ এটাই স্টাইল বা রীতি। এটাকে আমরা শিল্পের গণিত বা সমীকরণ বলতে পারি। এই গণিতটাই শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে আয়ত্ত করেন এবং সৃষ্টির সমাধান টানেন সমীকরণের মাধ্যমে। এই আলোচনায় আমরা শিল্পী এস এম সুলতানের পেশিবহুল ছবি দেখতে পারি। এই যে পেশি বহুল ফিগার নির্মাণ, পেশিশক্তিকে মনের শক্তির রূপ হিসেবে উপস্থাপন করা এবং অনুপাতের তারতম্য অনুযায়ী চিত্রের বিষয়বস্তুকে বিন্যাস করা এই ব্যাপারটা একটা সমীকরণ। যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ বিশ্বশিল্পকলার ইতিহাসে রেখে গেছেন শিল্পী পাবলো পিকাসো। শিল্পীর ফর্ম ভাঙা, ফর্মের মধ্যে তালের সম্মিলন এবং অতি ভেতর থেকে ভেতরের বেসিক রূপকে খুঁজে বেড়ানোর যে অনুভূতি তা কিন্তু কোনো সরল বিন্যাস নয়। এটা একটা কঠিন সৃষ্টির গাণিতিক রূপ যেখানে পৃথিবীর সকল বস্তুকণার অবয়বকে ভেতরকার অনূভূতি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। অনুশীলনলব্ধ জ্ঞানের এক বিস্তর সীমানা তৈরি করেছেন শিল্পী পাবলো পিকাসো। যেমন তার বিখ্যাত ছবি গুয়ের্নিকার কথা যদি বলি; ছবিতে যুদ্ধের যে ভয়াবহতা পরবর্তীতে সমালোচক বা দর্শকরা খুঁজে পেয়েছে এই পাওয়াটা কীভাবে সম্ভব হলো। অথবা যদি বলি যে এত ভয়াবহ একটা যুদ্ধের পরিণতি তিনি কীভাবে একটা ক্যানভাসে প্রকাশ করলেন। কীভাবে কয়েকটা ফিগারের মোটিফ এবং ছাই রঙের সমারোহে এত বড় একটা সত্যাবৃত অমানবিকতার গল্প বিস্তর আলোচনায় ক্যানভাসে উপস্থাপন করা সম্ভব হলো। এটাই সমীকরণ। আবার পিকাসোর চিত্রকর্মে নির্মাণের একটি নিজস্ব ধারা তিনি তৈরি করেছিলেন; কালোত্তীর্ণ অবয়ব নির্মাণের এক যুগান্তকারী নিরীক্ষাধর্মী দৃষ্টি তিনি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।
মোটিফের উপস্থাপন  এবং আঙ্গিকগত উপস্থাপন এই বিষয়টাই সমীকরণের মাধ্যমে শিল্পী বিন্যস্ত করে থাকেন অর্থাৎ বিন্যাস প্রক্রিয়াটাই একটা সমীকরণ। শিল্পী হাশেম খানের ছবির সাথে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাইয়ুম চৌধুরীর ছবিতে ফিগারের মাঝে একটা জ্যামিতিক ভাব রয়েছে। যে কোনো অবয়বের ক্ষেত্রেই রয়েছে সরলীকৃত রূপ সাধনের দক্ষতা, যা শিল্পীর ছবি দেখলেই বোঝা যায়। শিল্পীর চিত্রমালায় নারীকে এত সাবলীল মনে হয় যেন রঙের মোহ ছবিতে একেবারেই স্থির নয়। রঙকে যেন ফর্মের আওতাধীন করে রাখেন শিল্পী। আবার শিল্পী হাশেম খানের ফিগারগুলো কিন্তু বাস্তবধর্মী অথচ রেখার মধ্যে রয়েছে একধরনের প্রাণস্পর্শ। শিল্পীর ড্রইংয়ের মধ্যে এক ধরনের বাস্তব অনুভূতি সবসময় কাজ করে। কিন্তু ছবিতে যে নিজস্বতা; রঙের যে উপর্যুপরি তাল মেলানো খেলা, দীপ্তময় রঙের যে প্রাঞ্জলতা তা কিন্তু শিল্পীর নিজস্ব সমীকরণ। যে নিজস্ব ঘরানায় শিল্পীর কাজ চলছে নিরবধি তা কিন্তু একান্তই নিজস্ব আবিষ্কার। এই সূত্র অনুযায়ীই শিল্পী কাজ করছেন। ছবিতে রেখার যাওয়া আসা রঙের মিলিয়ে যাওয়া ফর্মের অবস্থানগত আবেদন সবকিছুই কিন্তু শিল্পীর সূত্রমতো নির্মিত হয়। আর শিল্পের এই সমীকরণের জন্যই একজন শিল্পীর কাজের সাথে আরেকজন শিল্পীর কাজের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় বা মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। শিল্প সৃষ্টি অনেকবেশি জীবন নির্ভর বা প্রকৃতি নির্ভর হলেও মূলত সৃষ্টি প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যে রীতি বা কৌশল অনুযায়ী শিল্প সৃষ্টি হয় তাই শিল্পের সমীকরণ। এই সমীকরণটা হচ্ছে একটা সূত্রবদ্ধ পাঠ, এখানে বিষয় ও আঙ্গিক মিলেমিশে কিছু প্রশ্ন এবং সমাধান তৈরি করে যেখানে কোনো সৃষ্টি শিল্পের দায়বদ্ধতাকে পূরণ করে থাকে।

ঋণস্বীকার
১. Bell Clive, Art, New York, 1914
২. দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, রূপ রস ও সুন্দর, কলকাতা-১৯৮১
৩. প্রজ্ঞানন্দ স্বামী, রাগ ও রূপ
৪. নন্দলাল বসু, শিল্পকথা
৫. ইউরি বোরেভ, নন্দনতত্ত্ব, সম্পাদনা; শামসুদ্দিন চৌধুরী

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট