X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বার্গম্যান ও সত্যজিতের ‘মৃত্যুর সাথে নৃত্য’

অদিতি ফাল্গুনী
১১ মে ২০১৭, ২১:১৭আপডেট : ১১ মে ২০১৭, ২২:৫১

মধ্যযুগের গির্জার দেয়ালে মৃত্যুর নৃত্য
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর সেই অদ্ভুত দৃশ্যটি মনে আছে? হেঁড়ে গলার গান আর বিকট ঢোল বাদনের কারণে গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে গুপী বাঘা তো পালালো। তারপর বনের ভেতর সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ ওদের দু’জনের চোখের সামনে আবির্ভাব হলো কয়েকটি ভূতের। সাদাকালো নেগেটিভের রিল ব্যবহারের মাধ্যমে ‘সাইকেডেলিক’ এক ডান্স সিকোয়েন্সের শুরু। আট মিনিটের এই ‘ভূতনৃত্য’র চরিত্রগুলো আসলে কারা? কেউ কেউ বলেন এই নাচে গোটা ভারতের ইতিহাস বিশেষত, দেশভাগের আগে-পরের কিছু মুখ্য চরিত্র যেমন- মহাত্মা গান্ধি, লর্ড মাউন্টব্যাটেন, জিন্নাহ্ বা প্যাটেল- এরা আছেন। মার্কিন লেখক বেন নাইস যথার্থ বলেন, ‘রূপকথার থেকে অনেক বেশি এই সিনেমা- গুপী এবং বাঘা হচ্ছে তেমন একটি সিনেমা যা শিশুদের (এবং আমাদের সবাইকে) বলে যে যুদ্ধ এবং হামলা ভুল এবং আমাদের উচিত বিভ্রান্ত ও বিবেকবর্জিত নেতাদের দ্বারা ব্যবহৃত না হওয়া (More than a fairy tale, Goopy and Bagha is also a film which says to children (and all of us) that warfare and aggression are wrong and that we should beware of being manipulated into it by misguided and unscrupulous leaders. : Nyce, Ben.  Satyajit Ray: A Study of his Films.  New York: Praeger, 1988. P.117).’

সত্যজিৎ রায় এরিখ বার্নাউ এই ছবিটিকে ‘বাধা-বন্ধনহীন আনন্দের, ছায়াশরীরী’ একটি ছবি বলে বর্ণনা করেন: ‘এই ছবির চরিত্রগুলোর মাঝে আছে দৈত্য, যাদুকর, জীবজন্ত এবং মানুষ আর এর তীব্র ক্ল্যাইম্যাক্স- যা যুদ্ধ রোধ করতে প্রচেষ্টা চালায়। রায়ের আঁকা কার্টুনগুলোতেও এই আনন্দের বা স্ফূর্তির মুহূর্ত পাওয়া যায়। এই ছবির নাচ এবং গানের ভেতর ভারতীয় গান ও নাচের প্রতিনিধিত্বশীল উপাদান পাওয়া যায় এবং এই সিনেমায় রূপদানকারী চরিত্রগুলো পৌরাণিক হলেও গোটা বিষয়টিই করা হয়েছে একটি স্বতন্ত্র এবং সতেজ আবহে (Its creatures included demons, wizards, animals, and people and its climax involved efforts to prevent a war. Cartoons by Ray joyfully set the mood. Its dances and lyrics had elements of the Indian song and dance genre, and its cast of characters suggested the mythological, but all in a different and refreshing context. Barnouw, Eric and S. Kishnaswamy.  Indian Film.  New York: Oxford University Press, 1980. (237)”

দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে এই সিনেমার চূড়ান্ত ক্ল্যাইম্যাক্সের মুহূর্ত হলো এর ভূত নৃত্য। বিভিন্ন ধরনের পৃথক পৃথক এবং এমনকি বিপরীত উপাদানের মিশ্রণ, আলো ও ছায়া, রাজকুমার ও চাষী, ভূত এবং মানুষ, অরণ্য ও শূন্য পরিসর, লড়াই এবং নতুন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত, নিথর চিত্র এবং গতি, ছেঁড়া কাপড় ও পোশাক- নানা কিছু এখানে মিলেমিশে আছে। আছে তলোয়ারের লড়াই- যা এই ছবিতে ধনী এবং নির্ধনের মাঝের কেন্দ্রিয় সঙ্ঘাতের বিষয়টি উস্কে দেয় এবং দেখা যায় তলোয়ার এবং গদা হাতে মানুষেরা হারিয়ে দেয় শুধুই লাঠি হাতে লড়াই করা মানুষদের। 

মার্কিন চলচ্চিত্রবোদ্ধা বেন নাইস আমাদের আরো জানাচ্ছেন যে, শুরুতে ‘রায় গোটা ছবিটিই রঙিন ছবি হিসেবে শ্যুট করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভারতে ১৯৬৬/৬৭ সালের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট ও কলকাতার বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বম্বের সস্তা, হিন্দি ছবির দৌরাত্ম্যের কারণে ইন্ডাস্ট্রির শ্রমিকদের ডাকা এক ধর্মঘটের কারণে তিনি সাদাকালোতে ছবিটি করতে বাধ্য হন (Nyce, Ben.  Satyajit Ray: A Study of his Films.  New York: Praeger, 1988. P.116); ‘কিন্তু এর ফলে যে শাপে বর পাবার মতো ভূত নৃত্যের মতো একটি অসাধারণ কাজ সম্পন্ন হতে পারে যা কালারে শ্যুটিং করলে কোনোদিনই সম্ভবপর হতো না।

ইঙ্গমার বার্গম্যান দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রবোদ্ধারা আরো দেখিয়েছেন যে কিভাবে গুপী-বাঘার সিক্যুয়েল ‘হীরক রাজার দেশে’ ছিল বস্তত ইন্দিরা গান্ধির শাসনামলে ভারতে ‘ইমার্জেন্সি’ বা `জরুরি’ অবস্থাকালীন সময়ের বিরুদ্ধে, রূপকথা ও শিশুতোষ কাহিনির মোড়কে এক তীব্র প্রতিবাদ। ১৯৭৫-৭৭ সাল নাগাদ ভারতে জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে সংবাদপত্রের উপর সেন্সরশিপ থেকে গণতন্ত্রের নানা প্রতিষ্ঠান কার্যত অকার্যকর করা আপাতদৃষ্টে ‘রাজনীতি বিমুখ’ ও ‘ভদ্রলোক’ সত্যজিৎকেও প্রবল ক্ষুব্ধ করেছিল: ‘It’s an angry response to the emergency decreed by Indira Gandhi in 1975-77, in which censorship and police control were severe and intolerable to most Indian intellectuals. The anger is barely masked by the entertainment. In this way, presumably, the film could get by the government censors. (Nyce, Ben.  Satyajit Ray: A Study of his Films.  New York: Praeger, 1988. P.176)’

যাহোক, ‘গুপী বাঘা’ বা `হীরক রাজার দেশে’-র রাজনৈতিক আধেয় নিয়ে আর একদিন লেখা যাবে। আজকের এ প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা তো এখনো শুরুই করতে পারলাম না।

এই যে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে ভূতের নাচ- এটা কি বা এই নাচের মতো কোনো কিছু কি বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আগে কোথাও দেখা গেছে? একটু ভাবুন তো! আচ্ছা, ১৯৫৭ সালে সুইডিশ চলচ্চিত্রকার ইঙ্গমার বার্গম্যান নির্মিত ‘দ্য সেভেন্থ সীল’ সিনেমাটির কথা একবার ভাবুন তো!

‘দ্য সেভেন্থ সীল (ডেট সজুন্দে ইন্সেগ্লেট) সারা বিশ্বের ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন। ১৯৫৭ সালে নির্মিত এ সিনেমাটি বার্গম্যানের পরিচালনায় একটি নাটক-ফ্যান্টাসি নির্ভর চলচ্চিত্র। মধ্যযুগের ইউরোপে কালো মৃত্যু বা মহামারীর (প্লেগ) সময়ের কাহিনি নিয়ে এই সিনেমাটি বানানো হয়েছে। এই ছবিতে বলা হয়েছে মধ্যযুগীয় নাইট (ম্যাক্স ভন সাইডৌ) এবং খোদ মৃত্যু (বেঙ্গট একেরট)-এর ভেতর জীবন-মৃত্যুর দাবা খেলা ও নাইটের আত্ম-যাত্রার কথা। নিজেরই লেখা নাটক ‘উই পেইন্টিংস’ থেকে বার্গম্যান পরে সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেন। সিনেমাটি শুরু হয় বাইবেলের উদ্ধৃতি থেকে এবং শেষও হয় সেই একই উদ্ধৃতিতে। 

কাহিনি সংক্ষেপ

মধ্যযুগীয় সুইডিশ নাইট আন্তোনিয়াস ব্লক ও মৃত্যুর দাবা খেলার দৃশ্য মৃত্যু খেলছে কালো গুটি নিয়ে এক যুগ ধরে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ করার পর ক্লান্ত ও ক্রুসেড সম্পর্কে মোহভঙ্গ হওয়া মধ্যযুগীয় সুইডিশ নাইট (ম্যাক্স ভন সাইডৌ) একটি জনশূন্য সমুদ্র সৈকতে খোদ মৃত্যুর মুখোমুখি হন। মৃত্যুকে এড়াতে নাইট মৃত্যুকে দাবা খেলায় অংশ নিতে ডাকেন। এর পরের দৃশ্যে ব্লক এবং তার অনুচর জোন্স ব্লকের দুর্গের দিকে রওনা করেন। সেখানে তাঁরা গ্রামে ভ্রাম্যমাণ একটি নাটক দলের কিছু অভিনেতা যেমন জোফ ও তার স্ত্রী মিয়া ও তাদের শিশু পুত্র মিকায়েলকে দেখেন। স্কাট জোফের স্ত্রী মিয়া ঈশ্বর প্রশ্নে সংশয়বাদী। এরপর নাইট ও তার অনুচর জোন্স একটি গির্জায় ঢোকেন। গির্জার দেয়ালে একটি ফ্রেস্কো চিত্র আঁকা যেখানে এক শিল্পী ‘মৃত্যুর নৃত্য’ ছবিটি আঁকছে। ব্লক পাদ্রির কাছে পাপ স্বীকার করতে গিয়ে একটা সময় দেখতে পায় যে পাদ্রিও আসলে ছদ্মবেশী মৃত্যু।
পরের দৃশ্যে ব্লককে অভিনেতা জোফের স্ত্রী মিয়া স্ট্রবেরি ও দুধ দিয়ে আপ্যায়িত করে। খুশি হয়ে নাইট নাটকদলকে তার দুর্গে নিমন্ত্রণ জানায় যেখানে প্লেগের বিস্তার এখনো পৌঁছয়নি। পথে তারা দেখতে পায় নাটকদলের হুজুগে প্রেমিক অভিনেতা স্কাট ও কামার প্লগের বউ লিসাকে। লিসা তার স্বামীকে প্রতারণা করে এবং প্রেমিকের সাথে পালিয়েও পরে ফিরে আসে। গাছের আড়ালে লুকনো প্রেমিক স্কাটের সামনে মৃত্যু আসে হাতে করাত নিয়ে। গাছটি কাটতে কাটতে মৃত্যু বলে তার সময় শেষ।

এরপরই দেখা যায় ডাইনি হিসেবে অভিযুক্ত এক তরুণীকে। ব্লক তাকে মুক্ত করার চেষ্টা করে। 

শেষ দৃশ্যে দেখা যায় নাইট ব্লকসহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কিছু মানুষ মৃত্যুর নেতৃত্বে হাতে হাত ধরে নাচছে।

দন্স ম্যাকাবের কি?

`‌‌দন্স ম্যাকাবের’ বা শেষ দৃশ্যের ‘মৃত্যু/প্রেত নৃত্য’ এখন আসুন জেনে নিই ‘দন্স ম্যাকাবের’ কী? ফরাসি শব্দ ‘Danse Macabre’- এর ইংরেজি হলো ‘Dance of Death’ বা ‘মৃত্যু নৃত্য।’ ইউরোপে মধ্যযুগের শেষদিকে শিল্পীদের ভেতর বিশেষত, গির্জার দেয়াল চিত্রণের ক্ষেত্রে এই ‘মৃত্যু নৃত্য’-এর ভাবনা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। মানুষের জীবনের আসলে কোনো স্থির নিশ্চয়তা নেই। মৃত্যুর অন্তিম নৃত্যই আমাদের একত্রিত করে। সেসময়ে গির্জাগুলোয় আঁকা ‘মৃত্যু নৃত্য’র ছবিতে দেখা যেত সমাজের নানা স্তরের মানুষ হাতে হাত ধরে মৃত্যুর সাথে সাথে নাচের ছন্দে কবরের দিকে চলেছে। এই নাচের ছবিতে একই সাথে চিত্রিত বা খোদিত হতো একজন পোপ, একজন  রাজা, শিশু এবং শ্রমিক। মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া যে পার্থিব জীবন কত তুচ্ছ এবং এর অর্জন নিয়ে অত শ্লাঘার কিছু নেই! ১৪২৪ থেকে ১৪২৫ সাল নাগাদ প্যারিসের সেইন্টস ইনোসেন্ট সেমেট্রির শার্নেল হাউসের দেয়ালে ম্যুরালে ‘দন্স ম্যাকাবের’ বা ‘মৃত্যু নৃত্য’-এর খোদিত ছবি বর্তমানে অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত।

১৪৪০ সালে বাসেলে গির্জার দেয়ালে আঁকা ছবির ভগ্নাবশেষ, এস্তোনিয়ার তাল্লিনে সেন্ট নিকোলাস চার্চের দেয়ালে আঁকা ছবি, বেরামের ইস্ত্রিয়ান নগরীর মারিজানা চ্যাপেলের পেছন দুয়ারে আঁকা ছবি, ইস্ত্রিয়ার হলি ট্রিনিটি চার্চের দেয়ালে বা লন্ডনের সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে আঁকা (পরবর্তী সময়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত) এমন প্রচুর ‘মৃত্যু নৃত্য’র ছবি রয়েছে। 

প্যারিসের সেইন্টস ইনোসেন্ট সেমেট্রির শার্নেল হাউসের দেয়ালের ম্যুরালে ‘দন্স ম্যাকাবের’ বা ‘মৃত্যু নৃত্য’-এর ছবি কেন মধ্যযুগের ইউরোপে বা ক্রিশ্চিয়ানিটির ইতিহাসে ‘দন্স ম্যাকাবের’ নৃত্যের এই প্রাধান্য? চিত্রিত তা চার্চের দেয়ালে দেয়ালে? সে কি ‘মহাভারত’-এ বকরূপী ধর্মের প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠিরের বলা যে ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে সব মানুষই জানে সে মারা যাবে তবু মৃত্যুকেই মানুষ এত ভয় পায়!’ অদৃষ্টবাদ বা আধ্যাত্মিকতা? নাহ্- ছিল কিছু সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। চৌদ্দ শতকের ইউরোপে দেখা দিয়েছিল টানা দুর্ভিক্ষ, ফ্রান্সের এক শতাব্দীব্যপী যুদ্ধ এবং সবকিছু ছাপিয়ে ছিল ‘কালো মৃত্যু’- প্লেগ বা মড়কের করাল থাবা। মৃত্যুর এই ভয়ানক চেহারাকে সাংস্কৃতিকভাবে আত্তীকরণের চেষ্টা করছিল যুদ্ধে আর প্লেগে জর্জরিত ইউরোপ। কাজেই- আসুক না মৃত্যু! আনন্দ বাদ যাবে না। দরকারে মৃত্যুর সাথেই শেষ নাচ নাচা হবে। তাই দেবে শীতল স্বস্তি! অনেক সময় ‘মৃত্যুর সাথে নৃত্য’ বিভিন্ন শহরে বা গ্রামে ‘লোক নাটক’ হিসেবে মঞ্চস্থ হতো যেখানে মৃত্যু এবং যার মৃত্যু হবে তাদের ভেতর সংলাপ বিনিময় হতো। কেউ কেউ মনে করেন যে আরবি শব্দ ‘মাকাবির (অর্থ- কবর)’ স্পেন হয়ে ইউরোপে আসে যা থেকে ‘ম্যাকাবের’ শব্দটি এসেছে। জার্মানিতে এই `মৃত্যুর সাথে নৃত্য’কে ‘টোটেনটাঞ্জ’, স্পেনে ‘লা দন্জা দো লা ম্যুয়ের্তে’ বলা হয়। মধ্যযুগের ফ্রেস্কো এবং ম্যুরালগুলোয় আসতো ‘তিনজন জীবিত এবং তিনজন মৃতে’র ভেতরের কিংবদন্তী । বনের ভেতর ঘোড়া চেপে শিকারে বেরনো তিন তরুণ মুখোমুখি হলো তিন মৃত আত্মার (কখনো কখনো মৃতরা জীবিতদের পূর্বপুরুষ) যারা এই তিন তরুণকে প্রশ্ন করবে: ক্যুয়োদফুইমাস, এস্তিস; কুয়্যোদসুমুস, ভসএরিতিস- আমরা কে ছিলাম; তুমি/তোমরা কে; আমরা আজ কী, তোমরা কী হবে?)। এসব ম্যুরাল চিত্রে পরম প্রতাপশালী পোপ বা রাজার পাশেই থাকত ভিখিরি, চাষী এবং শিশুর ছবি। প্রত্যেক মরণশীলের হাত ধরা থাকতো একটি কঙ্কালের হাতে। কেন জানি এই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের `কঙ্কাল' গল্পটির কথা মনে পড়ছে। মেডিকেল ছাত্র পড়ার টেবিলে ‘কঙ্কালে’র সাথে আলাপ করছে। নারী কঙ্কালটি বলছে তার সালঙ্কারা, বধূ জীবনের গল্প। যখন তার চোখে কাজল ছিল, চুলে ফুলের মালা বা ঠোঁটে ব্রীড়া। পোপ বা রাজা র সাথে ভিখিরির পোশাকের পার্থক্য ঘুচে যেত মৃত্যুর করাল স্পর্শে।

মৃত্যুর সাথে মৃত্যুপথযাত্রীদের কিছু সংলাপের নমুনা (মধ্যযুগের ইউরোপীয় লোকনাট্যে ব্যবহৃত):

        তোমার তলোয়ার সাহায্য করবে না তোমায়!

        কাজে আসবে না মুকুট ও রাজদণ্ড।

        তোমাকে আমার হাতে ধরেছি আমি,

        এখন তোমাকে আসতেই হবে আমার নাচে!

(La Danse macabre (Abbot and Bailiff). Paris, Guy Marchant, 1486) (Emperor, your sword won't help you out
Sceptre and crown are worthless here
I've taken you by the hand
For you must come to my dance)

সেই একই মৃত্যু কৃষকের সাথে যখন কথা বলছে, তখন কৃষক হয়তো উত্তর করছে:
খেটেছি বিষম একটি জীবন
ঘাম ঝরেছে কতই না!
পালাতে পারলে বেঁচেই যেতাম
মৃত্যুকে কি যায় এড়ানো?
(I had to work very much and very hard
The sweat was running down my skin

I'd like to escape death nonetheless

But here I won't have any luck)

নাট্যাভিনয় শেষ হতো ‘ধনী কিংবা গরীব- মৃত্যুতে সবাই এক’ জাতীয় সংলাপে।

গুপী গাইন বাঘা বাইন সিনেমার ভূতনৃত্য

মধ্যযুগের সময় থেকে মানব সভ্যতা অনেক অগ্রসর হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি ঘটেছে। ইউরোপে ঘটেছে আলোকায়ন যার কিছু রশ্মি আমরাও পেয়েছি। তবু মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি। উন্নত পশ্চিমে তো নয়ই- পূর্বে এ অবস্থা আজো করুণ। এই উপমহাদেশে মানুষ আজো মরে অনাহারে, খরা-বন্যা-ঢল-মঙ্গায়-দাঙ্গায়, মানুষ মরে যুদ্ধে। অকালেই। যতদিন এই নিষ্করুণ মৃত্যুর মিছিল থাকবে, ততদিন  সত্যজিৎ বা বার্গম্যানের মতো পরিচালকদের প্রেত নৃত্য বা মৃত্যু নৃত্য বারবারই আনতে হবে সিনেমায়।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া