X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বখ্যাত লেখকদের বিচিত্র অভ্যাস ও রসাত্মক কাহিনি

মোজাফফর হোসেন
২১ জুন ২০১৭, ১৭:১৩আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ২০:০২

বিশ্বখ্যাত লেখকদের বিচিত্র অভ্যাস ও রসাত্মক কাহিনি

ক.লেখালেখি নিয়ে লেখকদের কিছু বিচিত্র অভ্যাস আছে। কেউ আছেন বিছানাতে না বসলে লিখতে বা পড়তে পারতেন না। মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েইন, ইংরেজ সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েল, অভিনেতা ও নির্মাতা উডি এলেন, ফরাসি লেখক মার্সেল প্রুস্ত— এঁরা বিছানাতে শুয়ে শুয়ে অথবা সোফায় হেলান দিয়ে লেখালেখি ও পড়ার কাজ করতেন। মার্কিন লেখক ট্রুম্যান ক্যাপোট প্যারিস রিভিউয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘I am a completely horizontal author. I can’t think unless I’m lying down, either in bed or stretched on a couch and with a cigarette and coffee handy.’

অন্যদিকে মার্কিন কথাশিল্পী আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স, ভার্জিনিয়া উলফ এবং ফিলিপ রথের মতো বড় বড় লেখকেরা টেবিলে দাঁড়িয়ে লিখতেন। ভ্লাদিমির নবোকভ আবার ইনডেক্স কার্ডে লিখে একটা লম্বা বাক্সের ভেতর রেখে দিতেন। তিনি ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে ব্রিস্টল কার্ড রেখে দিতেন, কোনো আইডিয়া মাথায় এলেই টুকে রাখতেন। ফরাসি লেখক আলেক্সান্দ্রে দুমো আরো একধাপ এগিয়ে ছিলেন। তিনি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের লেখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কালি ব্যবহার করতেন— উপন্যাসের জন্য নীল, প্রবন্ধের জন্য গোলাপি, হলুদ কবিতার জন্য।

‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ খ্যাত  মার্কিন রোমাঞ্চকর উপন্যাস লেখক ড্যান ব্রাউন মনে করতেন Hanging upside down অর্থাৎ বাদুর-ঝুলা করে ঝুলে থাকলে বা নিচে মাথা দিয়ে উপরে পা তুলে ব্যায়াম করলে রাইটার্স ব্লক কেটে যাবে। তিনি নিজে এই থেরাপি ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

লেখার ক্ষেত্রে আরেকটা প্রশ্ন হলো, আপনি কোন দিকে মুখ করে লিখবেন? জানালা দিয়ে খোলা বাইরের দিকে মুখ করে অধিকাংশ লেখক লিখতে বসেন। তবে ব্লু অ্যাঞ্জেল-এর লেখক ফ্রানসিন প্রজ মনে করেন দেয়ালের দিকে মুখে করে লিখলে সুবিধা হয়।তিনি জানালা থেকে দূরে থাকেন যাতে তাকে কেউ দেখতে না পায়। এছাড়াও স্বামীর কালো রঙের টি শার্ট ও পাজামা প্যান্ট পরে তিনি লিখতে বসেন।  

নগ্ন হয়ে কেউ কি লিখেছেন কখনো? ডেডলাইনের ভেতর লেখা সম্পন্ন করতে ভিক্টর হুগোকে এই কাজ করতে হয়েছে। পৃথিবীর সব লেখককে একটা কমন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়— ডেডলাইন মেনে লেখা। কিন্তু দেখা গেল লেখার টেবিল থেকে বাইরের কাজে হুটহাট বের হওয়ায়, বাসায় আগত অতিথিদের সময় দেওয়ার কারণে অনেক সময় ডেডলাইন মিস হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ভালো একটা থিওরি অ্যাপ্লাই করেছেন এই ফরাসি সাহিত্যিক। তিনি তাঁর সহকারীকে বলেন, শরীরের সব পোশাক খুলে নিতে, যাতে করে শরীরে কাপড় না থাকার কারণে হুটহাট তিনি ঘর থেকে বের হতে না পারেন। এরপর ভিক্টর হুগো দিনের পর দিন নগ্ন অবস্থায় লিখে যেতেন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পড়লে কেবল একটা চাদর জড়িয়ে নিতেন শরীরে। নগ্ন-থেরাপি কাজে লাগিয়েছেন বিখ্যাত লেখক ফ্রাৎন্স কাফকাও। তবে কারণটা ভিক্টর হুগোর থেকে আলাদা। মনটা ফ্রেস রাখার জন্য জানালার সামনে নগ্ন অবস্থায় কাফকা ব্যায়াম করতেন বলে জানা যায়। 

কথাসাহিত্যিক জেন অস্টিন টেবিলে বসে লেখার মুড তৈরি করতেই কাটিয়ে দিতেন আধাঘণ্টা, এই সময়টা তিনি কাগজে হিজিবিজি করে যা মনে আসত লিখতে থাকতেন।

খ.

চায়ের সাথে সৃজনশীল কাজের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেতা-নাট্যকার-নির্দেশক আর্থার উইং পিনেরো যে কারণে ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ’ (While there is life, there is hope) প্রবাদ বাক্যটিকে প্যারোডি করেছেন এই বলে, ‘যতক্ষণ চা, ততক্ষণ চাওয়া’ (Where there’s tea there’s hope)। চেরিজ সিনক্লেয়ার তো আরো একধাপ এগিয়ে সভ্যতাকে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, চা-পূর্ব যুগ এবং চা-উত্তর যুগ। তিনি মজা করে বলেছেন, ‘No matter what historians claimed, BC really stood for ‘Before Coffee’। তবে চা বা কফি নিয়ে বিখ্যাত উক্তিটি দিয়েছেন আলবেয়ার কামু। তিনি বলেছেন, ‘Should I kill myself, or have a cup of coffee?’ এই কথাটাই একটু অন্যভাবে বলছেন বিখ্যাত রুশ সাহিত্যিক দস্তয়েভস্কি তাঁর Notes from Underground উপন্যাসিকায়— ‘I say let the world go to hell, but I should always have my tea.’ লেখকদের ভেতর চা বা কফি-প্রীতি কতখানি প্রকট সেটা বোঝাতেই এই আপাত অপ্রাসঙ্গিক কথাগুলো বলা। কপি বা চা-পানের অভ্যাস তাই লেখকদের ক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে অনিবার্য হিসেবে ধরা যায়। তাই বলে দিনে ৫০ কাপ কফি? বিখ্যাত ফরাসি কথাসাহিত্যিক বালযাক দিনে ৫০ কাফ কফি পান করতেন! তাঁর আরেক স্বদেশি লেখক-দার্শনিক ভলতেয়ারও নাকি দিনে ৪০ কাপ কফি খেতেন।

পশুপালনের নেশা অনেক লেখকেরই আছে। এমিলি ব্রন্টে, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে থেকে শুরু করে ভি. এস. নাইপল পর্যন্ত অনেক লেখকের বেড়াল-প্রীতির কথা আমরা জানি। প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনও বেড়ালকে খুব পছন্দ করতেন। তাঁর প্রিয় বেড়ালটির নাম ছিল মিনু। ওকে নিয়ে টালিউডে সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা-লেখক রমা চৌধুরীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আলাপে জানতে পেরেছি তিনি তাঁর ৮ টি বই উৎসর্গ করেছেন তাঁর ৮ বেড়ালকে। এক্ষেত্রে রেমন্ড চান্ডলার আরো একধাপ এগিয়ে। তিনি তার বেড়াল টাকিকে তার সেক্রেটারি হিসেবে পরিচিত করিয়ে দিতেন। সাহিত্য-সমালোচকও মনে করতেন তাকে। তিনি টাকিকে নিয়ে লিখেছেন, ‘Just quietly gazing out of the window from a corner of the desk as if to say, ‘The stuff you’re doing is a waste of time, bud.’

গ.

বিশ্বের বহুল পঠিত কোনো কোনো বই নিয়ে সেই বইয়ের লেখক সন্তুষ্ট ছিলেন না। এমনকি প্রথম খসড়া ছিঁড়েও ফেলেছিলেন কেউ কেউ। যেমন হার্পার লি তাঁর একমাত্র উপন্যাস ‘টু কিল অ্যা মকিং বার্ড’ (২০১৫ সালে ‘মকিংবার্ড’ উপন্যাসের সিক্যুয়েল এবং লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘গো সেট আ ওয়াচম্যান’ প্রকাশিত হয়) লেখার পর ভালো হয়নি ভেবে প্রথম খসড়া বাসার জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন। কিন্তু লির এডিটর তাঁকে বোঝাতে সক্ষম হন যে উপন্যাসটি যথেষ্ট ভালো হয়েছে; এরপর তিনি ফের সেটা তুলে আনেন। ভেবে দেখুন, যদি তিনি সেটি তুলে না আনতেন তাহলে কি আমরা ‘টু কিল অ্যা মকিং বার্ড’ এর মতো মহৎ উপন্যাস পেতাম? গ্রেগরি পেক কি এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অস্কার পেতেন? অনুরূপভাবে স্কটল্যান্ডীয় সাহিত্যিক রবার্ট লুই স্টিভেনসন তাঁর বিখ্যাত ক্ষুদে উপন্যাস ‘ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইড’ লেখার পর স্ত্রীর পরামর্শে পাণ্ডুলিপি নষ্ট করে ফেলেন। তাঁর স্বকাল অর্থাৎ ভিক্টোরিয়ান পিরিয়ডের এলিট শ্রেণি উপন্যাসে উপস্থাপিত দ্বৈতসত্তার বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারবে না ভেবেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে তিনি সেটি পুনরায় লিখে প্রকাশকের হাতে তুলে দেন। তবে একটি মজার কাণ্ড করেছিলেন স্টিভেনসন। তিনি নিজের জন্ম তারিখটি অ্যানি নামের এক কিশোরীর নামে লিখে দেন। সম্পত্তি লিখে দেওয়ার মতো নিজের জন্ম-তারিখ অন্যের নামে লিখে দেওয়ার নজির বোধহয় এই একটিই। এর কারণ হলো অ্যানির জন্ম-তারিখ পড়েছিল বড়দিনে। যে কারণে বড়দিনের উচ্ছ্বাসে নিজের জন্মদিনের উদযাপনটা ঠিকমতো হতো না বলে অ্যানির ভীষণ আফসোস ছিল। এতে স্টিভেনসন ঘোষণা দিলেন, নিজের জন্মতারিখের আর প্রয়োজন নেই তাঁর। এরপর নিজের জন্ম তারিখটি আইনানুসারে অ্যানির নামে লিখে দেন তিনি। 

ঘ.

লেখকদের আরো কিছু মজার ঘটনা আমরা জেনে নিতে পারি। ১৮৬২ সালে প্রকাশিত হয় ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’। হৈচৈ পড়ে যায় চারিদিকে। হুগোর খুব ইচ্ছে হলো বইটির কাটতি কেমন হচ্ছে জানার। তিনি এই মর্মে প্রকাশকের কাছে একটি পত্রও লিখলেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদেপত্র বোধহয় এটা। তিনি খালি লিখলেন একটি জিজ্ঞাসা (?) চিহ্ন। প্রকাশকও কম জানেন না। তিনি উত্তরও পাঠালেন উপযুক্ত ভাষায়। তাঁর জবাব ছিল বিস্ময়বোধক (!) চিহ্ন।

মার্ক টোয়েইনের সময় আমেরিকান ট্রেনগুলো চলত বেশ ধীরগতিতে। একদিন টোয়েইন কোথাও যাওয়ার জন্য ট্রেনে চেপে বসলেন। কিছুক্ষণ পর কামরায় উঠল টিকিট চেকার। টোয়েইন গম্ভীর মুখে চেকারের দিকে একটা 'হাফ টিকিট' বাড়িয়ে দিলেন। বুড়ো মানুষের হাতে 'হাফ টিকিট' দেখে টিকিট চেকার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী দাদু, হাফ টিকিট কেটেছেন কেন? আপনি কি জানেন না চৌদ্দ বছরের বেশি হলে হাফ টিকিট কাটতে মানা?' মার্ক টোয়েইনের সরল জবাব, ‘যখন ট্রেনে উঠেছিলাম, তখন বয়স চৌদ্দই ছিল। কে জানত, ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে এত লেট করবে!'

মার্ক টোয়েইনকে নিয়ে সত্য-মিথ্যা মিলে আরো অনেক গল্প প্রচলিত আছে। টোয়েইন একবার এক সাংবাদিক বন্ধুকে বললেন বছর দশেক লেখালেখি করার পর বুঝতে পারলাম এ ব্যাপারে আমার কোন প্রতিভা নেই। এটা বুঝবার পরও তুমি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছ যে? বন্ধুর এই প্রশ্নে টোয়েইন উত্তর দেন, উপায় কি? ততদিনে যে রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গেছি!

কথিত আছে গোরস্থানের চারপাশে দেয়াল তোলার জন্য মার্ক টোয়েইনের কাছে চাঁদা চাইতে যাওয়া হলে তিনি বলেন, সমাধিস্থলের চারদিকে দেয়াল দেয়ার কোন প্রয়োজন দেখি না। কারণ যারা ওখানে থাকে তাদের বাইরে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা নেই। আর যারা বাইরে থাকে তাদের ওখানে যাবার কোন ইচ্ছে নেই!

আইরিশ লেখক ও নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শর মুখের দাড়ি ছিল মোটামুটি বিখ্যাত। একবার এক রেজর নির্মাতা কোম্পানি তাদের নতুন রেজরের প্রচারণার অংশ হিসেবে বার্নার্ড শকে নতুন এই রেজর দিয়ে দাড়ি কামানোর অনুরোধ করল। বিনিময়ে দেওয়া মোটা অঙ্কের টাকা। শর রাজি না হয়ে বললেন, তার বাবা যে কারণে দাড়ি কামানো বাদ দিয়েছিলেন তিনিও ঠিক একই কারণে এ ঝামেলা ধরে রেখেছেন। কোম্পানির লোকজন কারণটি জানতে চাইলে বার্নার্ড শ বললেন ‘আমার বয়স তখন পাঁচ হবে। বাবা দাড়ি কামাচ্ছেন। আমি তাকে বললাম, বাবা তুমি দাড়ি কামাচ্ছ কেন? তিনি এক মিনিট আমার দিকে নির্বাক তাকিয়ে থেকে বললেন, তাই তো, আমি এ ফালতু কাজ করে সময় নষ্ট করছি কেন? এই বলে তিনি জানালা দিয়ে রেজরটি ছুঁড়ে ফেললেন, জীবনে আর কখনো তা ধরেননি।

বিখ্যাত ইংরেজ কবি ও সাহিত্য সমালোচক ড্রাইডেন ভীষণ পড়ুয়া মানুষ ছিলেন। বই থেকে চোখ তুলতেন না দেখে একদিন তাঁর স্ত্রী অভিমান করে বললেন, ‘তুমি যেভাবে বইয়ের ওপর মুখ গুঁজে পড়ে থাকো তাতে তোমার স্ত্রী না হয়ে বই হলে বোধহয় তোমার সান্নিধ্য পেতাম বেশি!’ ড্রাইডেন বই থেকে মুখ না তুলেই বললেন, ‘সে ক্ষেত্রে বর্ষপঞ্জি হয়ো, বছর শেষে বদলে নিতে পারব!’

প্রখ্যাত মার্কিন নাট্যকার ও’নীলকে পরিচালক রাসেল ক্রুসো তাঁর ওয়াইলডারনেস নাটকটির দৈর্ঘ্য খানিকটা ছোট করার অনুরোধ করেন। ও’নীল নাটকটি পনের মিনিট কমিয়েছেন বলে জানালেন। পরিচালক ক্রুসো খুশি হয়ে কোন দৃশ্যটি বাদ দিয়েছেন জানতে চাইলে ও’নীল বলেন, ‘কোনো দৃশ্য বাদ দিইনি। আমি খালি নাটকের বিরতির সময়টুকু বাদ দিয়েছি।’

ড্রাইডেন এবং ও’নীলের মতোই রসবোধসম্পন্ন মানুষ ছিলেন বিখ্যাত লেখক অস্কার ওয়াইল্ড। তাঁকে একবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষায় গ্রীক ভাষায় লেখা ‘নিউ টেস্টামেন্ট’ থেকে ‘প্যাশন’ অংশের কয়েক লাইন অনুবাদ করতে বলা হয়। ওয়াইল্ড সঠিকভাবে দশ বারো লাইন অনুবাদ করার পর পরীক্ষক সন্তুষ্ট হয়ে থামতে বললে ওয়াইল্ড বলেন- ‘স্যার, প্লিজ গোটা অংশটাই আমাকে অনুবাদ করতে দিন। বাড়তি অনুবাদ করার জন্য আমাকে বাড়তি কোন মার্কস দিতে হবে না। গল্পটা জানার আমার ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে।’

রসবোধে বাঙালি লেখকরাও পিছিয়ে নেই। একবার বিত্তশালী দেব নারায়ণ দে’র বাড়িতে একটা বড়সড় অনুষ্ঠানের আয়োজনকে সামনে রেখে খরচাপাতির ফর্দ লেখা হচ্ছিলো। উপস্থিত ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র। খরচের ফর্দ দেখে প্যারীচাঁদ মিত্র বললেন- ‘এসব খরচ কিছু বাড়িয়ে দিন।’ দেব নারায়ণ দে বললেন- ‘আপনি খরচ বাড়াতে বলছেন। টাকাটা কে দেবে শুনি?’ প্যারীচাঁদের তাৎক্ষণিক জবাব- ‘নিশ্চয় আপনি দেবেন। আপনার নামের আগে দে, নামের পরেও দে। দিতে আপনাকে হবেই।’

লেখক বঙ্কিম চন্দ্র এবং দীনবন্ধু মিত্র যে বন্ধু ছিলেন তা আমরা জানি। দীনবন্ধু একবার আসাম থেকে বন্ধু বঙ্কিমের জন্য একজোড়া জুতো কিনে লোক মারফত পাঠালেন। একটা চিরকুটে লিখে দিলেন- ‘জুতো কেমন হয়েছে জানিও।’ বঙ্কিম চিরকুটটি পড়ে হাসতে হাসতে উত্তরে লিখে দিলেন- ‘ঠিক তোমার মুখের মতো!’

লেখকজীবনে হাস্যরসের কথা এভাবে বলে শেষ করা যাবে না। আমি বাঙালি লেখকদের ভেতর সবচেয়ে বেশি যার রসবোধ ছিল সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি রসবোধের উদাহরণ টেনে এই গদ্যের ইতি টানবো।

কলকাতার জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে একবার বসেছে গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানের জলসা। রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন। শ্রোতারা এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ধরলেন একটা গান গাইতে। রবীন্দ্রনাথ হাসি মুখে বললেন, গোপেশ্বরের পর কি এবার দাড়িশ্বরের পালা?

শান্তিনিকেতনে সভা বসেছে। যে ঘরটিতে সভা বসেছে সেটি সম্বন্ধে কেউ কেউ আলাপ করছিলেন। রবীন্দ্রনাথ হঠাৎ বলে উঠলেন- এ ঘরটিতে একটা বাঁ-দোর আছে। শুনে ঘরসুদ্ধ লোক একেবারে হতবাক। রবীন্দ্রনাথ তাদের অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বললেন- বাঁদর নয়, আমি বাঁ-দোরের কথা বলছি। দেখছ না ঘরটির ডান দিকে একটি দরজা এবং বাঁ-দিকেও একটি দরজা।

এক সাহিত্যসভায় লেখক বনফুল অর্থাৎ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ভাল বক্তৃতা করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথও। সভায় সকলে বনফুলের বক্তৃতার খুব প্রশংসা করলে রবীন্দ্রনাথ বললেন, বলাই তো ভাল বক্তৃতা দেবেই কারণ বলাই তো ওর কাজ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার মৈত্রেয়ী দেবীর আতিথ্য গ্রহণ করলেন। রোজই বিভিন্ন রকমের নিরামিষ রান্না হয়। একদিন হঠাৎ মগজ পরিবেশন করা হলে রবীন্দ্রনাথ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ পদার্থটি কী? মৈত্রেয়ী দেবী উত্তর দিলেন মগজ। কবি দুষ্টুমি করে বললেন, বিশ্ব কবির ‘ব্রেনে’ ঘাটতি পড়েছে, এ কথাটি সোজাসুজি বললেই হতো! এত কৌশল করা কেন? থাকগে, এ তর্কের চাইতে জরুরী ব্যাপার যখন সামনে তখন আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা কেন!


আরো পড়ুন-

শরণার্থী ক্যাম্প

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়