X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্যে ভাসা

মুম রহমান
২১ জুন ২০১৭, ১৮:১৬আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ১৯:৫৭





শূন্যে ভাসা

১.


হুদ ইন্না ছুম্মা দহি, হামাড়া চোখ দেখতা চাহিতো।
সবকা ছুরা ভাসনি পার, যো ভাসনি মোর নাবিকা আঙ্গ।
হুম হুম গিশানি মাওলা মেরা মন্ত্র ভাছনী
দোহায় জুল জুল জালানী।
- এইটার মানে কী?
- স্যার আমি তো জানি না।
- ওরে ডাক।
- স্যার যে মাইর দিছেন এখন আজরাইল ছাড়া আর কারো ডাক তো ওর কানে যাইবো না।
- কস কি! বাঁচবো তো?
- মরলেই কি!

২.
সাইদুল ইসলাম তখন শূন্যে ভাসছে। বাথিডং থেকে মাউনডং চলে আসে সে কয়েক সেকেণ্ডে। মেউ পাহাড়ের উচ্চতা তাকে আটকায় না। পাহাড় কেটে দুই শহরের মাঝে যে টানেল বানানো হয়েছে সেটাও তার কাজে লাগে না। পাহাড়ের উপর দিয়ে, জঙ্গলের উপর দিয়ে, নদীর উপর দিয়ে, উড়ে উড়ে অনায়াসে চলে আসে সাইদুল। তার সঙ্গে আছে বিড়াল পুতুতুতু। পুতুতুতু শূন্যে ভাসতে পারে না। সে মন্ত্র শেখে নাই। কিন্তু সাইদুল ইসলামের কোলে চড়ে সে-ও নাফ নদী পেরিয়ে সোজা জাইলার দ্বীপে রওনা হয়। জাইলার দ্বীপে একবার পৌঁছতে পারলে আর শূন্যে ভাসা লাগবে না। মাটিতে ঠাঁই করে নিতে পারবে সাইদুল।
আদতে মাটিতে নয়, একটা পাকা মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সাইদুল। তার মুখ দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছে। জমাট রক্ত আর থুথুকে ঘিরে মাছি উড়ছে। তার শরীরটা মৃত মানুষের মতো। সাইদুল নড়তে চড়তে পারে না। মানুষের মরে মাথা। কিন্তু তার মাথার ভিতর ক্ষুধা, তার মাথার ভিতর যন্ত্রণা আর তার মাথার ভিতর উড়ার অবাধ্যতা। সাইদুল তার মগজের মধ্যে মন্ত্রটা পড়ার চেষ্টা করে।
হুদ হুদ কুদ কুদ
চোখ নেহি দেখতা
হুম হুম ছুম্মা আম্মা
জুল জুল জেলখানা পার...
না এই রকম ছিলো না। মনে হয় এই রকম-
ইন্না দহি, ছুম্মা রাহি
রশি দাও ছাড়ি
মাওলা ভাসাও মুঝে
আব্দুল কাদের জিলানি...
না। হচ্ছে না। সাত ক্লাস পাশ দেয়া সাইদুল অনেক কষ্টে মন্ত্রটা মুখস্থ করেছিলো। এখন কিছুতেই মনে করতে পারছে না। মনে করতে পারলে এক মুহূর্তে শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারতো। যদিও এর আগে দুইবার মন্ত্র কাজ করেনি। কিন্তু দান দান তিন দান। এইবার কাজ করবে। তাছাড়া তখন ভুল হয়ে ছিলো। গুরুজি বলছিলো চণ্ডিবরণ করতে, পদ্মপুকুরের পাকের মাটি আর কালা গরুর গোবর দিতে। এইসব যোগাড় হয়নি বলে প্রথমবার মন্ত্র ফেল মেরেছিলো। দ্বিতীয়বার সাইদুল মন্ত্রটাই ভুল বলেছিল। এবার আর কোন ভুল হওয়ার কথা না। সব আয়োজন করে কাগজে লেখা মন্ত্রটা সে দিব্যি মুখস্থ ঝেড়েছে।
কিন্তু তবুও কোথাও একটু ভুল হয়েছে। শূন্যে ভাসতে পারা তো দুরের কথা, সাইদুল তার শরীরটাও একটু নাড়াতে পারছে না। নিজেকে একটা পাথর মনে হচ্ছে। ভারী পাথর। কেবল পাথরটার মগজ আছে। সেই মগজে এতো প্যাঁচ লেগে গেছে যে কুলকিনারা হারিয়ে ফেলেছে। সাইদুলের মগজটাও তার মতো পথ হারিয়েছে, ঠিকানাহীন ঘুরছে অবাঞ্চিত সব জায়গায়। কেবল একটা তীব্র ব্যথা। মগজে আর কিছু নাই কেবল ব্যাথা। মনে হচ্ছে পাথর শরীরের ভেতর আছে একটা ব্যথার মগজ।

৩.
পবিত্র পাঠক, গল্পকার হিসাবে আমি ভেতরের কথা জানি। যেহেতু পুলিশের মুক্ত মারের চোটে সাইদুল প্রায় কোমায় চলে গেছে সেহেতু তার ভাবনা এলোমেলো হবেই। কিন্তু আপনাদেরকে আমি এলেমেলো ভাবনায় চালাতে চাই না। বরং আসল ঘটনাটা বলি। আপনারা যারা টক শো দেখেন, আপনারা যারা খবরের কাগজ পড়েন, আপনারা যারা সুশীল, সচেতন তারা তো জানেনই রোহিঙ্গাদের কথা। আগে যে বার্মা মুল্লুক ছিলো পড়ে তা মিয়ানমার হলো। সেখানে সামরিক শাসন এলো, গণতন্ত্রও এলো, এলো নোবেল বিজয়ী শান্তি মহিলাও। কিন্তু আরাকান মুল্লুকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হয়ে থাকা রোহিঙ্গা মুসলমানদের কোন বদল হলো না। তারা জারজের মতোই রয়ে গেলো রাজনীতির মেসিনে পড়ে। মিয়ানমার সরকার সে সামরিক কি বেসামরিক যাই হোক, এক বিষয়ে একমত হলো যে, রোহিঙ্গা মুসলমান মানেই সমস্যা। এরা বাড়তি ঝামেলা, রাষ্ট্র যন্ত্রে অপ্রয়োজনীয়। আর তারচেয়েও বড় কথা এরা শরণার্থী। কেননা কোন এক কালে এরা নাকি বাঙাল মুলুক থেকে ওখানে গিয়েছিলো। কোনকালে সে ইতিহাসের হিসাবে না-গিয়েই বলা যায়, এই ভূমিতে এরা বাবা হলো, দাদা হলো, বড় দাদা হলো তবু এদের বংশধররা রাষ্ট্র পেলো না। বুদ্ধের অনুসারীরা রাষ্ট্র আর পোশাকধারীদের সহায়তায় নিজের দেশে এদেরকে শরণার্থী শিবিরে ঢুকিয়ে দিলো। এমনভাবে রাখলো যেমনভাবে মানুষ টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় হারতেই পারে কেবল।
ধৈর্যশীল পাঠক, ক্ষমা করবেন গল্পের মধ্যে প্রবন্ধ ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য। মার্কেস-বোর্হেসের প্রভাবে এমনটা হয়ে গেলো। যাহোক, এবার মূল ঘটনাটি হলো আমাদের গল্পের চরিত্র সাইদুল ইসলাম একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। বাথিডং নামের এক ছোট পাহাড়ি এলাকায় তার বাস। তার একমাত্র বোন ধর্ষিত হয়েছে। গণ ধর্ষণের ঠেলায় সে মরে বেঁচেছে। ভাগ্যিস সাইদুলের একটা মাত্র বোনই ছিলো। তার বাবা-মাও দুজনই সরকারী গুণ্ডা বাহিনির হাতে প্রাণ দিয়েছে। বুড়ি দাদী নিখোঁজ হয়েছে। বাড়ি-ঘর আর পুরো এলাকাটি যখন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো তখন সাইদুল মৃত বোন-বাবা-মা তাদের লাশের কথা ভাবেনি, ভাবেনি নিঁখোজ বৃদ্ধা দাদীর কথা। সবার কথা ভুলে নিজের প্রাণটা নিয়ে সে পালালো। পালানোর সময় তার হাতে ছিলো এগারশ বার্মিজ কিয়ট। সেই মুদ্রাটুকু নিয়ে সাইদুল রওনা হয় বাংলাদেশের দিকে। এটাই নিকটস্থ নিরাপদ আশ্রয়। তার অনেক পরিচিতরাই বাংলাদেশে চলে গেছে। কেউ কেউ থাইল্যান্ডও যায়। তবে বাংলাদেশটা বেশি সুবিধার। ধর্ম এক, ভাষারও কিছুটা মিল আছে। ধর্ম আর ভাষা মিলে গেলে মানুষের সংকট অনেকটাই কেটে যায় মনে হয়।
পালানোর পথেই সাইদুলের সাখে পরিচয় হয় এক কামাখ্যা ফেরত সাধুর সঙ্গে। তিনি তিনশ কিয়াটের বিনিময়ে সাইদুলকে শিখিয়ে দেয় শূন্যে ভাসার মন্ত্র। সাইদুল মনে করে এই মন্ত্র পড়েই সে শূন্যে ভেসে ভেসে চলে যাবে বাংলাদেশে। একবার নাফ নদী পেরুলেই সাইদুল নিরাপদে বাঁচতে পারবে। হয়তো থাকা-খাওয়ার কষ্ট হবে, কিন্তু বেঁচে তো থাকবে। মানুষ কিংবা যে কোন প্রাণীকেই আগে বেঁচে থাকতে হয়।
মন্ত্র পড়ার পর সাইদুল এগুতে থাকে। না, সে উড়তে পারে না, শূন্যে ভাসতে পারে না। বরং বুদ্ধ কিশোর তাকে হামলা করে। পায়ের জোরে প্রাণে বেঁচে যায় সাইদুল। নিজের অজান্তে প্রাণ বাঁচানোর তরে সাইদুল কত জোরে দৌড়েছিলো আর এক দৌড়ে কতোটা পথ গিয়েছিলো সে হিসাব আমার কাছে নেই। তবে সে প্রায় নাফ নদীর তীর তকে চলে আসে বন-জঙ্গল পেরিয়ে। তখন তার সারা শরীরে কাটা আর জমাট রক্তের দাগ। পা ফুলে গেছে ভয়াবহ রকম। শরীরে আর কুলায় না। তবে সাইদুল একবার এটাও ভাবে এইসব মন্ত্রফন্ত্র কিছু না। তাছাড়া মুসলমান হয়ে হিন্দু মন্ত্র পালন করতে আল্লাহ বরং নারাজ হবে। কিন্তু তবু সে মন্ত্রটা ভুলতে পারে না। সিদ্ধান্ত নেয়, পালাতে হলে তাকে মন্ত্রের পাশাপাশি বুদ্ধিও খাটাতে হবে। এ নদী পার হলেই বাংলাদেশ। কিন্তু নদী গিয়ে মিশেছে মোহনায়। সেখানে ঢেউ বুদ্ধ সন্ত্রাসীর মতো ফুঁসে উঠতে পারে যে কোন সময়। আর তার শরীরে সামর্থ নেই সাঁতরে এ নদী পার হবে। দুইদিন নাফ নদীর পার ধরে ঘুরে বেড়ায় সাইদুল। এর মধ্যে কালা গরুর গোবর জোগাড় করা কঠিন হয় না, তবে পদ্মপুকুরের পাঁক জোগাড় করতে বেশ কষ্ট করতে হয়। এর মধ্যে ঘাস লতা যাই পেয়েছে খেয়েছে সাইদুল। হাবিজাবি খেয়ে বড় হয়েছে বলে তার পেটে সবই সে যায়। মন্ত্র সাধনের সব ক্রিয়া সমাধা হলে সাইদুল কিছুটা নিশ্চিত হয়।
এটা তো জানা কথাই, সাইদুলের মতো রাষ্ট্রহীন, নিরাপত্তাহীন মানুষের অভাব মিয়ানমারে নেই। তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরই সে পেয়ে গেলো নারী, পুরুষ, শিশুর ছোট্ট একটা দল। একটা নৌকায় সাইদুলরা ১৩ জন উঠে বসে। নৌকার মালিক আর মাঝিকে এ জন্য দিয়ে দিতে হয় আরো পাঁচশো কিয়ট। নৌকায় ওঠার আগে আবার মন্ত্র পড়ে সাইদুল। মন্ত্রের জোরেই তার মনে একটা শক্তি আসে। অন্ধকারে সমুদ্রের মতো নদীটি পার হতে গিয়েও সাইদুল গান গায়, ‘ইয়ম্মি গট টোলে লে পাংলে’। কিন্তু গান-ফান বেরিয়ে গেলো। কেননা, নাফ নদীও মাঝে সাঝে সমুদ্রের চরিত্র ধার করে। ফলে নৌকাখানা উল্টে যায়। ১৩ সংখ্যাটা কুফা এটা প্রমাণ করার জন্যই একজন মারা গেলো। বেঁচে থাকা ১২ জন শুভাকাঙ্ক্ষি নিয়ে নৌকা জাইল্লার দ্বীপে আসে। এইখান থেকে ওরা আলাদা আলাদ হয়ে টেকনাফে ঢোকে। টেকনাফে এসে সাইদুল হাপ ছেঁড়ে বাঁচে। সে নিজের একটা কর্ম পরিকল্পনা করে নেয়। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই সাইদুল বোবা সেজে যায়। কথায় বলে বোবার শত্রু নাই। মুখ খুললেই তার রোহিঙ্গা উচ্চারণ বেরিয়ে যাবে। তাই মুখ একদম বন্ধ। ইশারা ইংগিতে সে কাজ চালিয়ে নেয়। সে শুনেছে কুতুপালংয়ের শরণার্থী শিবিরে তার মতো অনেক মানুষ আছে। কিন্তু ওখানে সে যেতে চায় না। মা-বাবা নেই, বোন মৃত, দাদী নিঁখোজ- কাজেই সাইদুলের কোন পিছুটান নেই। তাই সে কুতুপালং নামে না। হোক, জীবনটা নতুন করেই শুরু হোক। বাস কণ্ডাকদার যখন ভাড়া নিতে আসে, সেনাবাহিনি লোকেরা যখন বাসে তল্লাসি করে তখনও সাইদুল স্রেফ বোবা কালে সেজে থাকে। কণ্ডাকদার পারলে তাকে মারতে আসে। অন্য যাত্রীরা বলে, ‘আহা বোবা কালা মানুষ, ছেঁড়ে দাও, সবার ভাড়াই তো নিচ্ছ, একজনেরটা না-নিলে কী হয়!’ সবার কথাকে সমর্থন করেই পুতুতুতু বলে ওঠে ‘মিউ মিউ মিঁয়া, যথার্থ কথা বলেছাও’। রসিক এক যাত্রী বলে, ‘শালা, নিজেই একটা বোবা-কালা, লগে আবার বিলাই!’ বাসে হাসির রোল ওঠে।

৪.
কক্সবাজারের সৈকত কী দেখবে সাইদুল! সমুদ্র সে দেখেছে আগেও। কিন্তু সৈকত ঘিরে দালানের ভিড় তাকে হতবাক করে দেয়। আহা, মানুষ এতো বড় বড় বাড়ি বানালো কবে! সমুদ্রের পারেই এতো সব ঘর! অথচ তারই কিনা থাকবার একটা জায়গায় নাই। কতো মানুষ, কতো হাসি, কতো খাবার! সাইদুল টানা দুইদিন সৈকতে এলোপাথারি ঘুরে বেড়ায়। আগের জীবনের সাথে তুলনা করলে বলা যায়, সাইদুলের জীবনে যেন ঈদ এসে গেছে। ঘুমানোর জন্য সৈকত ঘেষে পাকা রাস্তা আছে। সেখানে ঠাণ্ডা কম। খাওয়ার জন্য এদিক সেদিক বহু কিছু ছড়িয়ে আছে। বেড়াতে আসা লোকগুলো যতো না খায় তারচেয়ে বেশি ফেলে। অর্ধেক পোড়া ভুট্টা, কাকড়া ভাজা, মুড়ি, চানাচুর, রুটি, কাবাব... সাইদুল সারাজীবনে যতো খাবার খেয়েছে তার চেয়ে বেশি খাবার এখানের কুত্তারাও খায়। পুতুতুতুকে সে ছেঁড়ে দেয় সৈকতেই। তার নিজের তো ঠিকানা নেই, বেড়ালটাকে কই রাখবে! পুতুতুতু অবশ্য আশেপাশে ঘুরপাক খায়। এর তার পায়ের কাছে গিয়ে ‘মিঁউ মিঁউ’ করে। সৈকতের ধার ঘেষে মাছ ভাজার দোকানগুলোতে পুতুতুতু ঘুড়ে বেড়ায় মনের আনন্দে। পুতুতুতু’র রাষ্ট্র নাই, ধর্ম নাই, ভাষা নাই- কাজেই কোন চিন্তা নাই।
তবে মানুষ আর বিড়ালে পার্থক্য আছে। তারচেয়ে বেশি পার্থক্য আছে মানুষে মানুষে। নইলে আমাদের সাইদুল ইসলাম চুরি করতে যাবে কেনো! সে তো খেতে পারছিলো, শুতে পারছিলো, বেঁচেও ছিলো। তবু তার কোন কিছুই ভাল লাগলো না। যে ভূমিতে তার মা-বাবা মরলো, বোন ধর্ষিত হলো, দাদী হারিয়ে গেলো, সেই রক্তাক্ত মাটির জন্যই তার প্রাণ কাঁদতে লাগলো। নিজের মাথার বালিশটার জন্য মন কাঁদতে লাগলো। কোনদিন কি তার কোন ঠিকানা হবে। নাকি শূন্যে ভাসার মন্ত্র পড়েই পার হবে একটা জীবন!
জীবনকে পাল্টানো ফেলে কেউ কেউ হাতের কাছে সুযোগ পেয়ে। সাইদুলের হাতের কাছেও অনেক সুযোগ। এই যে মানুষগুলো কক্সবাজারে আসে, তাদের পকেট ভর্তি টাকা, মোবাইল, সোনাদানা, তারা দুদিন তিনদিনের জন্য টাকার জোরে সমুদ্র বিলাসে আসে। এরা অভাবী নয়। এদের ঘর আছে, ঘরের মানুষ আছে, ঠিকানা আছে, দেশ আছে, মাথার বালিশ আছে, নিজের থালা-গ্লাস আছে। সাইদুলের কিছু নেই। কিছু টাকা, কেবল কিছু টাকাই পারে অনেক কিছুই এনে দিতে পারে।
শূন্যের ভাসার মন্ত্রটা আবার আওড়ায় সাইদুল। শূন্যে ভেসে ভেসে একটা হোটেলের তিনতলায় চলে যায় সে। জানালা দিয়ে লাঠি দিয়ে টেনে টেনে মানিব্যাগ আর মোবাইলটা কাছে টেনে নেয়। মিতা তখনই বাথরুম থেকে বের হয়। সৈকতে ঝাপিয়ে এসে অঞ্জন আর মিতা স্নানঘরে হানিমুনের আরেকটা পর্ব সারছিলো। মিতার চিৎকারে কোন রকম টাওয়েল পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসে অঞ্জন। সাইদুল দ্রুত পাইপ বেয়ে নামতে শুরু করে। শেষের দিকে এসে আর সামাল দিতে পারে না। হুড়মুড় করে পড়ে যায়। পায়ে একটা তীব্র টান লাগে। হয়তো, পা টা ভেঙে গেছে কিংবা মচতে গেছে। পা নিয়ে নড়তে পারে না সাইদুল।

৫.
শুরুতে ব্যথায় কুকড়ে ওঠে সাইদুল। তবু চিৎকার করে না। থানায় নেয়ার পরও কথা বলে না সে। মোবাইল মানিব্যাগ তখুনি পেয়ে যায় অঞ্জন। হানিমুনে এসে সে মামলা মোকদ্দমায় জড়াতে চায় না। ওসিকে চা-খাওয়ার টাকা দিয়ে আবার মিতার কাছে ফিরে যায় সে। হোটেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ব্যাপারটা অতো সহজ চোখে দেখে না। তিন তারকা হোটেলে চুরি, পাইপ পেয়ে তিনতলায় ওঠা, এইসবই পাকা চোরের কাজ। কিন্তু ব্যাপারটা জানাজানি হলে হোটেলের সুনামের ক্ষতি হবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। ম্যানেজার আকরাম তাই ওসিকে বকশিস দিয়ে অনুরোধ করে, লোকটাকে যেন উপযুক্ত ধোলাই দেয়া হয়।

৬.
ওসি ঘরে ঢুকে দেখে রক্ত আর ফেনায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে চোর। না, পালস নেই।
- স্যার মইরা গেছে?
- মনে হয়। শালা এইটুক মাইর সহ্য করতে পারলো না!
- পকেট চেক কর।
- আগেই তো করছি।
- কী পাইছিস?
- সবই তো আপনে টেবিলে।
- তাইলে আইডেন্টি কার্ড বা কোন পরিচয় বাইর করতে পারলি!
- না।
- পরিচয় ছাড়া কোন মানুষ অয়?
- পরিচয় না- থাকায় তো ভালোই হইছে স্যার, কী বলেন!
- হুম। তোর বুদ্ধি বাড়তাছে। গুড। যা মালটা সরায়া ফালা। কী করবি জানোস তো?
- চিন্তা কইরেন না স্যার, একদম শূন্যে ভাসায়া দিমু।

৭.
পবিত্র পাঠক, এই গল্প থেকে আমরা কী শিক্ষা গ্রহণ করিলাম?
মানুষ শেষ পর্যন্ত যা চায় তা পায়।
সাইদুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত শূন্যে ভাসিলো।


আরো পড়ুন-
একজন বুদ্ধিজীবীর গল্প

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী