X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিম্পোজিয়াম

মূল : মিলান কুন্ডেরা ভাষান্তর : রেজা রাজা
২১ জুন ২০১৭, ১৮:৪২আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ১৯:৫৭

সিম্পোজিয়াম

স্টাফরুম

ডাক্তারদরে স্টাফ রুমে (যেকোন শহরের যে কোন হাসপাতালের যে কোন ওয়ার্ডে বলতে পারেন) একত্রিত হওয়া জনাপাঁচেক নর-নারীর  সকল কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা একটা মামুলি অথচ একটা পরম উপভোগ্য কাহিনিতে পরিণত হয়েছে। এখানে আছেন ডাঃ হাভেল ও নার্স এলিজাবেথ (তাঁরা উভয়েই আজ রাতের দায়িত্বে) এবং আরো আছেন দু’জন অতিরিক্ত ডাক্তার, হাসপাতালের সবাই জানেন এ ওয়ার্ডের টাক মাথার চিফ ডাক্তার এবং অন্য ওয়ার্ডের একজন অনন্দ্যি সুন্দরী ত্রিশ বছর বয়সী লেডি ডাক্তার যারা, একে অপরের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। (চিফ ডাক্তার অবশ্য বিবাহিত এবং ঠিক এক মুহূর্ত আগেই তিনি তার প্রিয় বাণীটি উচ্চারণ করেছেন যা শুধু তার জ্ঞানের মহিমাই প্রকাশ করে না, তার অভিপ্রায়টিও ব্যক্ত করে : প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ আপনাদের যেমন জানা আছে, একজন মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো তার সুখী বিবাহিত জীবন; যার বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার সামান্যতম সম্ভাবনাও নেই।)

চারজনের অতিরিক্ত পঞ্চম ব্যক্তিটিও আছে, কিন্তু সে প্রকৃতপক্ষে এখানে নেই, কারণ কনিষ্ঠতম হিসেবে তাকে আরও একটি বোতল আনয়নের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এখানে একটা জানালা রয়েছে, যার গুরুত্বপূর্ণ এটা উন্মুক্ত এবং এর ভেতর দিয়ে বাইরের অন্ধকার থেকে কক্ষে উষ্ণ, সুবাসিত ও গ্রীষ্মের চাঁদনী রাতের আলো প্রবেশ করে। সবার প্রশংসনীয় কথাবার্তায় বিশেষ করে চিফ ডাক্তারের যিনি আবার তার নিজেরই প্রবাদবাক্য সমূহের বিমুগ্ধ শ্রোতা, একটা মনোরঞ্জকারি মেজাজের অবতারণা করলেন।

খানিকক্ষণ পরে সন্ধ্যায় (কেবলমাত্র এখানেই আমাদের গল্পের শুরু) একটা নির্দিষ্ট দুর্ভাবনার কথা উল্লেখ্য : এলিজাবেথ দায়িত্ব পালনরত সেবিকার জন্যে নির্ধারিত মাত্রার অধিক পান করে ফেলেছে এবং তদুপোরি সে হাভেলের সাথে প্রকাশ্য অবাধ্যতায় ছেনালিপনা শুরু করেছে, যা  তাকে তীব্র নিন্দাপূর্ণ ভাষায় তিরস্কারে জর্জরিত করেছে।

হাভেলের তিরস্কার

‘প্রিয় এলিজাবেথ, আমি তোমাকে বুঝতে পারি না। তুমি প্রতিদিন পচনধরা ক্ষতস্থানের অনুসন্ধান কর, বুড়োদের পশ্চাৎদেশ খোঁচাও, তাদের পাছা দিয়ে তরল ঢুকানোর যন্ত্র প্রবেশ করাও, শয্যাশায়ী অবস্থায় মলমূত্র ত্যাগের পাত্র সরাও। তোমার ভাগ্যই তোমাকে সমস্ত অধিবিদ্যক আত্মশ্লাঘায় মানবজীবনের বাস্তবতা উপলব্ধির কাঙ্খিত সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু তোমার জীবনীশক্তি সংশোধনের অসাধ্য। তোমার ইন্দ্রিয়গত; হ্যাঁ, কেবল ইন্দ্রিয়গত সুখ চরিতার্থ করার অদম্য আকাঙ্ক্ষাকে নাড়া দেয়া কারো বাপের সাধ্য নয়। পাঁচ মিটার দূরে দাঁড়ানো কাউকে কিভাবে ঘর্ষণ দিতে হবে তা তোমার স্তনযুগলের ভালোই জানা আছে। তোমার হণ্টনকালীন তোমার অক্লান্ত পাছা যেরকম চিরায়িত দোলায় দোলে ওঠে তাতে ইতোমধ্যেই আমার মাথা চক্কর দিতে শুরু করেছে। জাহান্নামে যাও, দূর হও আমার সামনে থেকে। তোমার ঐ স্তন দু’টি ঈশ্বরের মতোই সর্বব্যাপী। দশ মিনিট আগেই তোমার ইনজেকশনগুলি দেয়া উচিত ছিলো।’

ডাঃ হাভেল মৃত্যুর মতোই, তিনি সবকিছু গ্রহণ করেন।

যখন সেবিকা এলিজাবেথ (দম্ভের সাথে রাগান্বিত হয়ে) বড়োদের পশ্চাদদেশে খোঁচানোর অভিযোগ নিশ্চিত হয়ে স্টাফরুম ত্যাগ করলো চিফ ডাক্তার বললেন, ‘হাভেল, আপনার প্রতি আমার জিজ্ঞাসা আপনি কেন বেচারী এলিজাবেথের সাথে লাগাতে যান?’

এক চুমুক মদ্যপান করে ডাঃ হাভেল জবাব দিরেন : ‘চিফ সেজন্য আমার উপর রাগ করবেন না। তার কারণ এই নয় যে, সে সুন্দরী নয় এবং তার বয়স হয়ে গেছে। বিশ্বাস করুন, এর চেয়ে ঢেড় কুৎসিত ও বয়স্কা রমণীকে আমি আমার সন্নিধ্যে পেয়েছি।’

আপনার এ ঘটনা সবার বেশ ভালো জানা আছে : ‘আপনি মৃত্যুর মতোই; আপনি সবকিছু গ্রহণ করেন। সবকিছু যদি আপনি গ্রহণই করে থাকেন তবে এলিজাবেথকে কেন আপনি গ্রহণ করতে পারেন না?’

‘হতে পারে,’ হাভেল বললেন, ‘এর কারণ সে তার ইচ্ছাকে এতোটা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে তা খানিকটা আদেশের মত মনে হয়। আপনি বলেন মেয়েদের ব্যাপারে আমি মৃত্যুর মতোই। মনে রাখবেন মৃত্যুও কোন আদেশ পছন্দ করে না।’

চিফ ডাক্তারের বৃহত্তম সাফল্য

‘আমার মনে হয় আমি আপনাকে বুঝতে সক্ষম,’ চিফ ডাক্তার উত্তর দিলেন। ‘যখন আমি কয়েক বছর আগে যুবক ছিলাম আমি একটি মেয়েকে চিনতাম যে কিনা আবার সবার সাথেই বিছানায় যেতো এবং যেহেতু সে সুন্দরী ছিলো, আমি তাকে পেতে চাইতম। চিন্তা করুন, সে আমাকে প্রত্যাখান করতো। সে কেবল আমাকে ছাড়া আমার সহকর্মী, গাড়ী-চালক, বয়লারম্যান, বাবুর্চি, এমন কী ঠিকাদার সবার সাথেই বিছানায় যেতো। কল্পনা করতে পারেন?’

‘নিশ্চয়ই’, লেডি ডাক্তার বললো।

‘আমাকে বলতে দিন’ চিফ ডাক্তার খিটখিটে মেজাজে বললেন, ‘এটা আমার গ্র্যাজুয়েট হবার কয়েক বছর পরের ঘটনা এবং তখনই আমি নামজাদা। আমার বিশ্বাস ছিলো প্রতিটি রমণীকেই জয় করা সম্ভব এবং শেষে আমার কাছে একটা প্রতীয়মান হয়েছিলো যে রমণীদের জয় করা আসলে একটা অপেক্ষাকৃত কঠিন কাজ। ভেবে দেখুন, এই সস্তা মেয়েটির কাছেই থেকে আমি দুঃখ পেয়েছিলাম।’

‘আমি আপনাকে যতটুকু জানি, এ সম্পর্কে আপনার অবশ্যই একটা সুত্র উদ্ভাবন করা উচিত’, ডাঃ হাভেল বললেন।

‘আমি করেছি’- চিফ ডাক্তার জবাব দিলেন, ‘যৌনাকঙ্খা শুধু শরীরের জন্য আকাঙ্ক্ষা নয়, এটা সমভাবেই শ্রদ্ধারও আকাঙ্ক্ষা। আপনার সঙ্গী যাকে আপনি জয় করেছেন, যে আপনার প্রতি যত্নশীল এবং আপনাকে ভালোবাসে, সে আপনার আরশি, আপনার গুরুত্ব ও মেধার মানদণ্ড। আমার ঐ ছেনালটার জন্য এটা ছিলো কঠিন কাজ। আপনি যখন কারো সাথে বিছানায় যান, তখন এ চিন্তা আপনার মাথায় থাকে না যে, যৌন মিলনের মতো একটা সাধারণ কাজের মধ্যে এক ধরনের তাৎপর্যনিহিত। অপর পক্ষের কাছে আপনি কামজ শ্রদ্ধা আশা করেন। যে লোক মেয়েটিকে চেয়েছিলো কিন্তু তার দ্বারা সে প্রত্যাখান হয়েছিলো সেই শুধু মেয়েটির মুল্যায়নের সঠিক মানদণ্ড নির্ণয় করতে সক্ষম। যেহেতু সে নিজেকে বোধগম্যভাবে প্রমাণ করতে চেয়েছিলো যে, রমণীকুলের মধ্যে সে সবচেয়ে সুন্দরী ও উত্তম, তাই সে সেই লোকটিকে পছন্দ করে বসলো যাকে সে তার অতি কঠোর ও কুতর্কপূর্ণ প্রত্যাখ্যান দ্বারা সম্মানিত করতো। শেষ পর্যায়ে সে যখন আমাকে পছন্দ করলো, আমি বুঝলাম এটা একটা ব্যতিক্রমি সম্মান এবং এই আজ আমি এটাকে আমার সর্বোত্তম কামজ সাফল্য বলে বিবেচনা করি।

‘আপনি যে পদ্ধতিতে জলকে মদ্যে পরিণত করেন  তা অতি চমৎকার।’ লেডি ডাক্তার বললো।

‘এটাকি তোমাকে পীড়া দেয় যে, আমি তোমাকে আমার সর্বোত্তম অর্জন বলে মনে করি না?’ চিফ ডাক্তার বললেন। ‘আমাকে তোমার অবশ্যই বুঝতে হবে। যদিও তুমি একজন গুণবতী রমণী তথাপি, আমি তোমার প্রথম ও শেষ নাগর নই, যেখানে আমি আমার সেই ক্ষুদে ছেনালটার সাথে জড়িয়েছিলাম। বিশ্বাস কর সে আমায় কখনো ভুলে যায়নি এবং এই এখন সে অতীতবিধুর অনুভূতিতে স্মরণ করে সে আমাকে কিভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। এলিজাবেথের প্রতি হাভেলের প্রত্যাখ্যানের সাদৃশ্য আনয়নের জন্যে তোমার কাছে আমার এ গল্পের অবতারণা।’

স্বাধীনতার প্রশংসায়

‘মহোদয়, মহান ঈশ্বরে দোহাই’, হাভেল আর্তনাদ করে উঠলেন, ‘আশা করি আপনি বলছেন না যে, আমি এলিজাবেথের মধ্যে মানবিক গুণাবলীর অনুসন্ধান করছি।’

‘অবশ্যই না’, লেডি ডাক্তার বিদ্রুপাত্মকভাবে বললো। 

‘মোটের উপর আপনি ইতোমধ্যেই আমাদেরকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন যে, তাঁর উত্তেজনা আপনার কাছে আদেশের মতো প্রতীয়মান হয়, এবং আপনি মনে এই বিভ্রম পোষণ করেন যে, আপনিই সেই লোক যে রমণীদের মনোনীত করছেন।’

‘ডাক্তার আপনি জানেন, যদিও আমরা এ ব্যাপারে এমনটি বলে থাকি কিন্তু আসলে সেটা এমন নয়।’ হাভেল খানিকটা চিন্তা করলেন। ‘এলিজাবেথের উত্তেজনা আমাকে বিরক্ত করে বলে আমি শুধু রসিক ও বুদ্ধিমান সাজার চেষ্টা করেছিলাম। সত্যি বলতে কি আমি তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তোজিত রমণী দেখেছি এবং তাদের উত্তেজনার সাথে আমি নিজেকে বেশ মানিয়ে নিতে পারতাম কারণ এটা ঘটনার গতিকে সুন্দরভাবে ত্বরান্বিত করতো।’

‘তাহলে কোন জাহান্নামের জন্যে আপনি এলিজাবেথকে গ্রহণ করতে পারেন না।’ চিফ ডাক্তার চিৎকার করে বললেন।

‘চিফ, প্রথমে যতটা তুচ্ছ মনে হয়েছিলো, আদপে আপনার প্রশ্নটা ততোটা তুচ্ছ নয় কারণ মনে হচ্ছে বাস্তবে উত্তর দেখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অকপটভাবে বলতে গেলে এলিজাবেথকে কেন গ্রহণ করি না তার উত্তর আমার জানা নেই। আমি এর চেয়ে অনেক বেশি কুৎসিত, উত্তেজিত এবং বয়স্কা রমণীর সাথে শুয়েছি। এ থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, সঙ্গত কারণেই তার সাথেও আমার শোয়া উচিত। পরিসংখ্যানবিদগণ তাই বলে থাকবেন। সমস্ত সাইবারনেটিক যন্ত্রও একই উপসংহারে আসবে। দেখুন, সম্ভবত এসব নিশ্চিত কারণেই আমি তাকে গ্রহণ করি না। সম্ভবত প্রয়োজনীয়তাকে আমি প্রতিরোধ করি। দুর্ঘটনাকে এড়িয়ে চলা। মনের স্বাধীন ইচ্ছার খামখেয়ালে বিশ্বের গতির নিরানন্দ ভবিষ্যদ্বাণীকে বিমুক্ত করা।’

‘কিন্তু এজন্য এলিজাবেথকে কেন টেনে আনছেন?’ চিফ ডাক্তার চিৎকার করলেন।

‘কারণ এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যদি কোন কারণ থাকতো তবে তা আগাম বের করা যেতো এবং আমার কার্যবলীও আগাম নির্ণয় করা সম্ভব হতো। ঠিক এই ভিত্তিহীনতার কারণেই এটা অতিক্ষুদ্র স্বাধীনতা আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত যার জন্য আমরা অবশ্যই অক্লান্তভাবে পৌঁছে যাই যাতে করে এ বিশ্বের কঠোর নিয়মের মধ্যে কিছু মানবিক বিশৃঙ্খলা থাকা উচিত। প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ, স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক’, হাভেল বললেন এবং বিষণ্ণভাবে স্বাস্থ্যপানের ভঙ্গীতে তার পান পাত্রটি উঁচু করলেন।

মানুষের দায়-দায়িত্ব যেথায় বর্ধিত হয়

এ মুহূর্তে একটা নতুন বোতলের আবির্ভাব ঘটলো, এটা উপস্থিত সকল ডাক্তারের মনোযোগ আকর্ষণ করলো। দরোজায় এ নিয়ে দণ্ডায়মান চমৎকার স্লিম যুবকটি হলো এ ওয়ার্ডের ইন্টার্নী ফ্লাজম্যান। সে বোতলটি (খুব ধীরে ধীরে) টেবিলে রাখলো, কর্ক-স্ক্রুর খোঁজ করলো (দীর্ঘক্ষণ), তারপর বোতলের ছিপিতে কর্কস্ক্রুটি (আস্তে আস্তে) দিয়ে চাপ দিলো। এসব বন্ধনীসমূহ থেকে ফ্লাজম্যানের শম্ভুকগতি স্পষ্ট; যাইহোক এটা তার ফিটফাট অবস্থার থেকে অদৃশ্য আত্মপ্রেমকে বেশি প্রমাণ করে; এই আত্মপ্রেমের কারণেই তরুণ ইন্টার্নী বহির্বিশ্বের গুরুত্বহীন জঞ্জালকে এড়িয়ে নিজের হৃদয়ের দিকে তাকায়।

ডাঃ হাভেল বললেন : ‘এখানে আমরা সমস্ত স্টাফরা মিলে যা নিয়ে আলাপ করছি তা তুচ্ছ। আসলে আমি এলিজাবেথকে প্রত্যাখ্যান করছি না; সেই আমাকে প্রত্যাখ্যান করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে কোন কারণেই হোক সে ফ্লাজম্যানের জন্যে পাগল।’

‘আমার প্রতি?’ বোতলের উপর থেকে ফ্লাজম্যান মাথা উঁচু করলো, এবং তারপর ধীর গতিতে কর্কস্ক্রুটাকে তার নিজের জায়গায় রেখে টেবিলের কাছে ফিরে এলো এবং পানপাত্রগুলিতে মদ ঢেলে দিলো।

‘তুমি একটি খাসা ছেলে’, চিফ ডাক্তার হাভেলকে সমর্থন করে বললেন। কেবল তুমি ছাড়া আর সবাই এটা জানে। তুমি এ-ওয়ার্ডে আসার পর থেকে তাকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এখন থেকে দুই মাস আগে থেকে এমনটি চলছে।

ফ্লাজম্যান চিফ ডাক্তারের দিকে (অনেক্ষণ ধরে) তাকিয়ে রইলো এবং বললো, ‘সত্যিই আমি তা জানতাম না।’ তারপর সে বললো, ‘এতে আমার কোন আগ্রহই নেই।’

‘তোমার ঐ ভদ্রোচিত বক্তব্যের ব্যাপারে কি বলা যায়? ঐ যে রমণীদের প্রতি শ্রদ্ধা বিষয়ক কথার কচকচানী।’ হাভেল কঠোর হবার ভান করলেন। ‘তুমিই যে এলিজাবেথের যন্ত্রণার কারণ তাতেও কি তোমার কোন চিন্তা নেই?’

‘মেয়েদের জন্য আমার করুণা হয় এবং ইচ্ছেকৃতভাবে কখনো আমি তাদেরকে দুঃখ দেই না।’ ফ্লাজম্যান বললো, ‘কিন্তু যা আমার দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে তাতে আমার কোন আগ্রহ জাগে না, কারণ আমাকে তা প্রভাবিত করতে পারে না এবং তাই আমি এর জন্য দায়ীও নই।’

এখন এলিজাবেথ কক্ষে প্রবেশ করলো। সে স্পষ্টতই এই বিবেচনা করলো যে অপমান গায়ে না মাখাইলেই ভালো হবে এবং এমন আচরণ দেখালো যেন কিছুই ঘটেনি; সে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক আচরণ করলো। তার জন্য টেবিলের দিকে চিফ ডাক্তার একটা চেয়ার ঠেলে দিলেন এবং একটা পানপাত্র পরিপূর্ণ করলেন : ‘এলিজাবেথ পান কর এবং তোমাকে নিয়ে, যত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তা ভুলে যাও।’

‘নিশ্চয়ই।’ এলিজাবেথ তার দিকে একটা তীব্র হাসি ছুড়ে দিলো এবং গ্লাস খালি করে ফেললো। চিফ ডাক্তার আর একবার ফ্লাজম্যানকে নিয়ে পড়লেন : ‘একজন লোককে যদি শুধু তার সতর্কতার জন্যেই দায়ী করা হতো তবে একজন জড়বুদ্ধি ব্যক্তিকে যে কোন অপরাধ থেকে আগাম অব্যাহতি দেয়া হতো। প্রিয় ফ্লাজম্যান, কেবলমাত্র একজন মানুষই জানতে বাধ্য। অজ্ঞতার জন্য একজন লোক দায়ী হয়। অজ্ঞতা এক ধরনের ত্রুটি। সে কারণেই কোন কিছুই তোমাকে ত্রুটি থেকে অব্যাহতি দেয় না এবং আমি ঘোষণা করছি যে মেয়েদের ব্যাপারে তুমি একজন বর্বর। এমনকি যদিও তুমি তা নিযে তর্কবিতর্ক করতে চাও ‘

প্লেটোনিক ভালোবাসার প্রসংশায়

‘আমার ভয় হচ্ছে তুমি এখনও মিস ক্লারার জন্য সাবলেট পেয়েছ কিনা, তোমার মনে আছে, তুমি তাকে কথা দিয়েছিলো?’ হাভেল ফ্লাজম্যানকে তার এক নির্দিষ্ট রমণীর হৃদয় জয়ের ব্যর্থ চেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে খোঁচা দিলেন (উপস্থিত সকলেই অবহিত)।

‘না, পাইনি, তবে কিনা আমি তার জন্য খোঁজ খবর রাখছি।’

‘এটাই ঘটে যে ফ্লাজম্যান মেয়েদের সাথে ভদ্রোচিত আচরণ করে। আমাদের সহকর্মী ফ্লাজম্যান রমণীদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায় না’, ইন্টর্নীর জন্য দাঁড়িয়ে লেডি ডাক্তার বললো।

‘মেয়েদের প্রতি নিষ্ঠুরতা আমি সহ্য করতে পারি না কেননা তাদের জন্য আমার করুণা হয়।’ ইন্টার্নী পুনরুক্তি করলো।

‘ঠিক একই কারণে ক্লারা তোমার কাছে নিজেকে সমর্পন করেনি’, এলিজাবেথ, ফ্লাজম্যানকে বললো এবং বেশ অসঙ্গতভাবে হাসতে শুরু করলো যাতে করে চিফ ডাক্তার আরো একবার কথা বলতে বাধ্য হলেন : ‘সে নিজেকে সমর্পন করেছে আবার করেওনি, এলিজাবেথ, তুমি একে যেমনটি ভাব তা ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা সর্বজনবিদিত যে, আবেলার্ড নপুংসক ছিলেন তথাপি তিনি এবং হেলেয়িজ বিশ্বস্তভাবে পরস্পরকে ভালোবাসতেন। তাদের প্রেম অমর হয়ে আছে। জর্জ ম্যাণ্ড অক্ষতযোনির মত নিষ্কলঙ্ক ফ্রেডারিক সোপিনের সাথে সাত বছর ছিলেন এবং এবং ভালোবাসার প্রসঙ্গে (হয়তো লাখেও এমন লোক, খুঁজে পাওয়া যাবে না যাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা যায়।) আমি সেই ভক্তি জাগানিয়া প্রসঙ্গের অবতারণা করতে চাই না যেখানে মেয়েটি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে ভালোবাসার সর্বোচ্চ পুরস্কারটি আমাকে অর্পন করেছে। প্রিয় এলিজাবেথ ভালোভাবে লক্ষ করে দেখ, তুমি যেমনটি ভালোবাসা নিয়ে অবিরাম ভেবে থাকো, ভালোবাসা তার চেয়ে অনেক, অনেক হালকাভাবে সংশ্লিষ্ট। নিশ্চতভাবেই এ ব্যাপারে তোমার কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ক্লারা ফ্লাজম্যানকে ভালোবাসে! সে তার কাছে আকষর্ণীয় কিন্তু তারপরও সে তাকে প্রত্যাখ্যান করে। এটা তোমার কাছে অযৌক্তিক মনে হবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা জিনিসটা তাই, যা অযৌক্তিক।’

‘এর মধ্যে কিসের অযৌক্তিকতা?’ এলিজাবেথ আরো একবার অস্বাভাবিকভাবে হেসে উঠলো। ‘ক্লারার নজর এ্যাপার্টমেন্টের দিকে। সে জন্যেই সে ফ্লাজম্যানের প্রতি উদার : কিন্তু সে ফ্লাজম্যানের সাথে শোবার কথা ভাবে না, কারণ হতে পারে সে অন্য কারোর সাথে শুচ্ছে। কিন্তু সে বেচারা তার জন্য এ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করতে পারে না।’

সেই মুহূর্তে ফ্লাজম্যান তার মাথা উঁচু করলো এবং বললো: ‘তুমি আমার কলজেতে হাত দিয়েছ। তুমি কিশোরীর মতো। লজ্জা যদি একজন রমণীকে সংযত করে তবে কি হয়? সেটা তোমার বেলায় কখনো ঘটবে না, কি ঘটবে? তার যদি এমন কোন রোগ থাকে যা সে আমার কাছে গোপন করছে, তবে? শল্যিচিকিৎসার কোন সেলাইয়ের দাগ তাকে সংকুচিত করে? মেয়েরা ভয়ানক লাজ-রাঙা হতে পারে। কিন্তু এলিজাবেথ তুমি এ সম্পর্কিত বিন্দুবিসর্গও জান না।’

‘তবে অন্যকেউ’, চিফ ডাক্তার ফ্লাজম্যানের সাহার্য্যার্থে এগিয়ে এসে বললেন, ‘যখন ক্লারা ফ্লাজম্যানের মুখোমুখি হয় তখন সে ভয়ে এতোটাই অসার হয়ে পড়ে যে তার সাথে মিলিত হতে পারে না। এলিজাবেথ তুমি কি কল্পনা করতে পার না যে, তুমি কাউকে এতো ভীষণভাবে ভালোবাস যে, যার ফলে তুমি তার সাথে বিছানায় যেতে পার না।’

এলিজাবেথ স্বীকার করলো যে, সে এটা কল্পনাও করতে পারে না।

সংকেত

এখন আমরা খানিক্ষণের জন্যে আলাপ বন্ধ রাখতে পারি (তারা নির্বিঘ্নে তুচ্ছ জিনিস নিয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলো) এবং উল্লেখ করা যেতে পারে যে প্রথম দেখার পর থেকেই (প্রায় এক মাস আগে), এই সারাটি সময় ফ্লাজম্যান লেডি ডাক্তারের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে। তার ত্রিশ বছর বয়সী রমণীয়তা তার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। অদ্যবধি সে শুধু তার চলা ফেরার সময়ই দেখা পেয়েছে এবং আজই প্রথম সে তার সাথে দীর্ঘতর সময় একই কক্ষে অতিবাহিত করার সুযোগ পেয়েছে। তার মনে হলো প্রতিবারেই সে তার চাহনীর সাড়া দিয়েছে এবং এ-অনুভূতি তার ভেতরে উত্তেজনার সঞ্চার করলো।

এমন একটা ক্ষণিকের দৃষ্টি বিনিময়ের পর বলতে গেলে কোন কারণ ছাড়াই লেডি ডাক্তার উঠে দাঁড়ালো, জানালার দিকে হেঁটে গেলো এবং বললো, ‘বাইরেটা কি চমৎকার। একটা অপরুপ পূর্ণযৌবনাচাঁদ...।’ এবং সে আবার ফ্লাজম্যানের দিকে এসে একটা দ্রুত চাহনি দিলো।

ফ্লাজম্যান এমন পরিস্থিতিতে অন্ধ হয়ে থাকার মতো পুরুষ নয়। সঙ্গে সঙ্গে সে উপলব্ধি করতে পারলো যে, এটা একটা সংকেত- তার কাছে সমর্পনের সংকেত। সে অনুভব করলো তার বুক ফুলে উঠছে। স্ট্রাডিভেরিয়াসের কারখানার মতো তার বুকটা একটা স্পর্শকাতর যন্ত্র। সময় সময় উপরোল্লিখিত স্ফিতি সে অনুভব করতো এবং প্রত্যেকবারই সে নিশ্চতি হয়েছে যে এই স্ফিতি একটা মহান, অভূতপূর্ব কিছুর নিশ্চিত আগমনের পূর্বলক্ষণকে প্রকাশ করছে, প্রকাশ করছে এমন কিছুর যা স্বপ্নালোককে অতিক্রম করে যায়।

এই সময় সে স্তম্ভিত হলো আংশিকভাবে এই স্ফিতি দ্বারা ও আংশিকভাবে (তার মনের কোণার বিহবলতা থামেনি) তার বিস্ময়ের বিহবলতা দ্বারা এটা কেমন কথা যে, তার আকাঙ্ক্ষার এমন ক্ষমতাও ছিলো যার হুকুমের বাস্তবতা, বিনীতভাবে দ্রুত বাস্তবায়িত হলো? এর শক্তিতে আশ্চর্য হতে হতে আরো উদ্দীপিত হযে সে কথোপকথন পর্যবেক্ষণে নিমগ্ন হলো যাতে করে বিতর্ককারীরা তার উপস্থিত ভুলে যায়। এমনটি ঘটতে না ঘটতেই সে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো। 

বাহু ভাঁজ করা সুদর্শন যুবক

যে ওয়ার্ডে এই সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো তা ছিলো একটা আকর্ষণীয় প্যাভিলিয়নের নিচের তলায় যা হাসপাতালের প্রশস্ত বাগানে অবস্থিত (অন্য তাবুগুলো সন্নিকটে)। এবার ফ্লাজম্যান উদ্যানে প্রবেশ করলো। সে লম্বা প্লেন গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো, একটা সিগারেট ধরালো এবং আকাশের দিকে তাকালো। তখন গ্রীষ্মকাল, বাতাসে সৌরভ ভেসে আসছে এবং কালো আকাশে অপরূপ গোল চাঁদ ঝুলে আছে।

সে ভবিষ্যৎ ঘটনার গতি নির্ণয়ের চেষ্ট করলো। লেডি ডাক্তার যে কিনা তাকে বাইরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে, এখন সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে যতক্ষণ না তার সংযমহীন সহকর্মী তাকে পাহারা দিয়ে রাখার চেয়ে আলাপে অধিকমাত্রায় জড়িয়ে পড়েন। তখনই বোধ হয় সে অস্পষ্টভাবে ঘোষণা করবে যে, একটা ছোট অতিশয় ব্যক্তিগত কারণ তাকে এক মুহূর্তের জন্যে তাদের সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হতে বাধ্য করেছে।

অন্য কিই বা ঘটতে পারতো? ইচ্ছাকৃতভাবে সে অন্যকিছু ভাবতে পারলো না। তার স্ফীত বক্ষ তাকে প্রেম ভালোবাসার কথা জ্ঞাপন করছিলো এবং সেটাই তার জন্যে যথেষ্ট ছিলো। সে নিজের সৌভাগ্যে বিশ্বাস করতো, সে তার ভালোবাসার তারকায় বিশ্বাস করতো এবং সে বিশ্বাস করতো লেডি ডাক্তারকে। আত্ম-প্রত্যয়কে অস্কারা দিয়ে (আত্মপ্রত্যয় সবসময় নিজের দ্বারাই বিস্মিত হয়) সে আনন্দদায়ক উদাসীনতায় গা ভাসিয়ে দিলো। বলতে গেলে সে নিজেকে সর্বদা একজন আকর্ষণীয় সফল, প্রেমমুগ্ধ লোক হিসেবে বিবেচনা করতো এবং ঐ যাকে বলে বাহু ভাঁজ করে প্রেমের সম্পর্ক গড়তে পারলে সে নিজেকে ধন্য মনে করতো। সে বিশ্বাস করতো যে এই চমৎকার মেজাজ-মর্জি রমণীদের ডেকে পাঠাতে এবং কপাল ফেরাতে কাজে আসবে।

সম্ভবত, এই সুযোগে এটা বলাই বাহুল্য হবে যে, ফ্লাজম্যান প্রায়ই, যদি না অপ্রতিরোধ্যভাবে (এবং আত্ম-প্রেমসহ) নিজেকে দেখতো; এবং অব্যাহতভাবে এক জোড়া মেয়ের সঙ্গ পেতে সমর্থন হতো সেটা তার নিঃসঙ্গতাকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে তুলতো। এ মুহূর্তে প্লেন গাছে হেলান দিয়ে সে কেবল কায়দা করে ধূমপানই করছিলোনা, বরং যুগপৎভাবে সে  আত্ম-প্রেমে মজ্জমান হয়ে, সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে দেখছিলো। সে দেখলো সে কিভাবে প্লেন বৃক্ষে হেলান দিয়ে (সুদর্শন ও পৌরুষদীপ্ত) দাঁড়িয়ে উদাসী মনে ধুমপান করে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে সে খানিকক্ষণ চিত্তবিনোদন করলো, শেষ পর্যন্ত যতক্ষণ না একটা মৃদু পদধ্বনি তাবুর দিক থেকে তার বরাবর এগিয়ে আসছিলো। ইচ্ছে করেই সে ঘুরে দাঁড়ালো। সে সিগারেটে আর একদফা দম দিলো, ধোঁয়া নিস্ক্রান্ত করলো এবং আকাশের দিকে তাকালো। যখন পদশব্দ অতিনিকবর্তী হলো, সে শান্ত বিজয়ীর স্বরে বললো : ‘জানতাম, তুমি আসবে।’

প্রস্রাব করা

‘সেটা আন্দাজ করতে পারাটা খুব কঠিন নয়’, চিফ ডাক্তার জবাবে বললেন। ‘আমি আধুনিক ব্যবস্থাদি মানে ফালতু ব্যবস্থার চেয়ে বরং প্রকৃতির বুকে তরলের প্রপাত ঝরাতে পছন্দ করি। এখানে আমার ক্ষুদে সোনালি ঝর্ণা সর্বাগ্রে মাটি ঘাস, পৃথিবীর সাথে মিশে যাবে। ফ্লাজম্যান যেহেতু আমি ধুলো থেকেই এসেছি এবং এখন আংশিক ধুলোয় ফিরিয়ে দিচ্ছি। প্রকৃতির বুকে ছিদ্র তৈরি করা একটা ধর্মীয় পর্ব যার সাহায্যে পৃথিবীর সাথে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হই যে, শেষ পর্যন্ত আমরা তার মাঝেই সম্পূর্ণ  বিলীন হযে যাবো।’

ফ্লাজম্যানকে চুপ করে থাকতে দেখে চিফ ডাক্তার তাকে প্রশ্ন করলেন : ‘তোমার কী ধারণা? তুমি কি চাঁদ দেখতে এসেছ?’ তারপরও যখন ফ্লাজম্যান জেদের বশে নিরব হয়ে রইলো চিফ ডাক্তার বললেন : ‘ফ্লাজম্যান তুমি একটা বদ্ধ উন্মাদ। সে জন্যেই আমি তোমাকে এতো পছন্দ করি।’

‘ফ্লাজম্যান চিফ ডাক্তারের কথাকে বিদ্রুপ বিবেচনা করলো এবং তার গাম্ভীর্য বজায় রাখতে চাইছিলো : ‘এর থেকে চলুন বরং চন্দ্রদেবকে বিদায় জানাই। আমিও মুততে এসেছিলাম।’

‘প্রিয় ফ্লাজম্যান’, প্রধান ডাক্তার খুব ভদ্রোচিতভাবে বলরেন, ‘তোমার দিক থেকে তোমার বয়স্ক বসের প্রতি এটাকে তোমার বদান্যতা বলেই বিবেচনা করি।’

নিরবচ্ছিন্ন আনন্দে চিফ ডাক্তার যে কর্মটি সমাধা করেছেন তা সাঙ্গ করে তারা দু’জনে প্লেন গাছের নিচে দাঁড়ালেন এবং  নব গাম্ভীর্যে তারা একে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বলে আখ্যা দিলেন।

সুদর্শন বিদ্রূপাত্মক যুবক

তারপর তারা একত্রে লম্বা বারান্দায় ফিরে গেলো এবং চিফ ডাক্তার ভ্রাতৃসুলভ ভঙ্গীতে ইন্টার্নীর কাধে হাত রাখলেন। ইন্টার্নী নিশ্চিত ছিলো যে ঈর্ষান্বিত টেকো ব্যাটা লেডি ডাক্তারের সংকেত বুঝতে পেরেছেন এবং এখন তিনি বন্ধুত্বের ভাবোচ্ছ্বাস দ্বারা তাকে বিদ্রূপ করছেন। স্বভাবতই সে বসের হাত সরিয়ে দিতে পারলোনা কিন্তু ভেতরে তার ক্রোধ পুঞ্জিভূত হয়ে উঠছিলো। শুধু রাগে গুমরে মরছিলো তা নয়, নিজেকে তৎক্ষণাৎ রাগান্বিত অবস্থায় আবিস্কার করা তাকে খানিক সান্ত্বনা দিলো। সবাইকে বিস্মিত করে সে এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি : বিদ্রূপাত্মক, হাস্যকর এবং প্রায় ভূতগ্রস্ত।

তারা যখন ঠিক কর্মীকক্ষে প্রবেশ করলো, এলিজাবেথ তখন কক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভয়ানকভাবে কোমড় দোলাচ্ছিল এবং অনুচ্চস্বরে গান গাইছিলো। নতুন আগন্তুকদ্বয়ের মানসিক অভিঘাত দূর করতে ডাঃ হাভেল মেঝে ও লেডি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এলিজাবেথ নৃত্য পরিবেশন করছে।’ 

‘সে কিছুটা মাতাল’ হাভেল যোগ করলেন।

উপবিষ্ট হাভেলের নতমস্তকের উপর তার শরীরের উর্ধ্বাংশ দোলানোর সময় এলিজাবেথ তার নিতম্ব দোলানো থেকেও বিরত থাকলো না।

‘তুমি এমন চমৎকার নাচ কিভাবে শিখলে?’ চিফ ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন। তীব্র বিদ্রূপে ফেটে পড়ে ফ্লাজম্যান একটা ঠাঠা হাসি ছুঁড়ে দেয়, ‘হা-হা-হা! চমৎকার নাচ! হা-হা-হা!’

‘আমি ভিয়েনায় সম্মীলিত ট্রিপটিজ অনুষ্ঠানে এটা শিখেছি’, এলিজাবেথ প্রত্যুত্তর দিলো।

‘এখন, এখন’, চিফ ডাক্তার তাকে মৃদু তিরস্কার করেন।

‘ঠিক কবে থেকে আমাদের নার্সরা ট্রিপটিজ করে?’

‘চিফ, আমার তো মনে হয়না এতে কোন বিধি-নিষেধ আছে!’ চিফ ডাক্তারকে ঘিরে এলিজাবেথ তার উর্ধ্বাঙ্গ দোলালো।

ফ্লাজম্যানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো এবং মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলো:‘ট্রিপটিজ করার চেয়ে তোমার বরং ব্রোমাইড খাওয়া উচিত’, সে  বললো, ট্রিপটিজ করে তুমি বরং আমাদের বলাৎকার করার কাম ফতে করতে যাচ্ছো!’

‘উদ্বিগ্ন হবে না। আমি কারোর আরাম হারাম করি না’ এলিজাবেথ পাছায় চাপড় মারলো এবং হাভেলকে ঘিরে উর্ধ্বাঙ্গ দোলালো।

‘তুমি ট্রিপটিজ পছন্দ কর?’ পিতৃসুলভ ভঙ্গীতে চিফ ডাক্তার তাকে প্রশ্ন করলেন। 

‘হ্যাঁ, করতাম’, এলিজাবেথ জবাব দিলো। ‘সেখানে বিশালবক্ষ এক সুইডিস রমণী ছিলো, কিন্তু দেখুন আমার দুটি কি সুন্দর (ঐ কথা বলেই সে তার স্তনে হাত বুলিয়ে আদর করলো)।

‘এবং আরও একটি মেয়ে ছিলো যে কিনা আবার কার্ডবোর্ডের তৈরী গোসলখানায়) সাবানের একরাশ ফেনায় গোসল করার অভিনয় করেছিলো এবং সব চেয়ে মজার ব্যপার হলো- একটা মোটামুটি কালো মেয়ে ঠিক দর্শকদের সামনেই স্বমোহন করেছিলো!’

‘হ্যাঁ-হ্যাঁ!’ ফ্লাজম্যান বিদ্রুপের ছলে বললো, ‘স্বমোহন, সেটা ঠিক তোমার জন্যেই!’

এলিজাবেথ তাঁর ট্রিপটিজ  চালিয়ে যেতে লাগলো কিন্তু তার দর্শকবৃন্দ ভিয়েনা ট্রিপটিজ দর্শকটির চেয়ে অধিক বিপর্যস্ত : হাভেল মাথা নত করলেন, লেডি ডাক্তার ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালো, ফ্লাজম্যান নেতিবাচকভাবে এবং চিফ ডাক্তার পিতৃসুলভ ক্ষমার দৃষ্টিতে। এলিজাবেথের পশ্চাদভাগ যা কিনা আবার নার্সদের সাদা পোশাকের উপাদানে আচ্ছাদিত, কক্ষের চতুর্দিকে একটা রূপবতী গোলাকার সূর্য কিন্তু নির্বাপিত ও মৃত সূর্য (সাদা কাফনে মোড়া) সূর্য, সমবেত ডাক্তারদের অভিন্ন ও বিস্ময়ে বিহ্বল চোখের করুণার আতিশয্যে যার নিয়তি নির্ধারিতা ঘূর্ণিপাক খেতে লাগলো।
কোন এক মুহূর্তে মনে হলো এলিজাবেথ সত্যি সত্যিই তার বসন খুলে ফেলতে শুরু করবে, চিফ ডাক্তার উৎকণ্ঠিতভাবে বাঁধা দিলেন, ‘প্রিয় এলিজাবেথ, শোনো, আশা করি এখানে আমাদে জন্যে তুমি ভিয়েনা প্রদর্শনীর আয়োজন করতে চাইবে না।’

‘চিফ, আপনার কিসের ভয়! আপনি অস্তত দেখতে পারবেন নগ্নরমণী আদতে দেখতে কেমন!’ এলিজাবেথ চিৎকার করে বললো এবং তারপর হাভেলের কাছে ফিরে গিয়ে দুই পর্বতপ্রমাণ স্তন দুলিয়ে তাকে আতঙ্কিত করলো : ‘কি ব্যাপার হাভেল, আমার পোষা প্রাণি? আপনি এমন ভণিতা করছেন যেন কারোর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে এসেছেন। মাথা তুলুন। আপনার কি কেউ মারা গেছেন? কেউ মারা গেছে আপনার? আমাকে দেখুন। আমি অন্তত জ্যান্ত আছি! আমি মারা যাচ্ছিনা। অনাগত কালের জন্য আমি এখনও বেঁচে আছি! আমি জীবন্ত। এ কথাগুলি বলার পর তার নিতম্ব আর নিতম্ব রইলোনা। যেন সে নিজেই করুন কিন্তু চমৎকারভাবে শোকগাথারুপে কক্ষে ঘুরে ঘুরে নৃত্য পরিবেশন করছিলো।

‘এলিজাবেথ, তোমার থামা উচিত,’ মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ হাভেল বললেন।

“থামবো?” এলিজাবেথ বললো। “কিন্তু কেবলমাত্র আপনার জন্যেই আমি নেচে যাচ্ছি।এবার আমি ট্রিপটিজ  করবো। ট্রিপটিজ নামের মনোজ্ঞ নৃত্য!”সে তার ঢিলে বহির্বাস খুলে ফেললো এবং নাচের ভঙ্গীতেই সে ওটাকে ডেস্কের উপর ছুঁড়ে দিলো।

প্রধান ডাক্তার আরো একবার ভীমসন্ত্রস্তভাবে প্রতিবাদ করলো: “প্রিয় এলিজাবেথ, তুমি যদি অন্য কোথাও আমাদের জন্যে বস্ত্র উন্মোচন নৃত্য পরিবেশন করতে তবে বড়ো ভালো হতো। তোমাকে এটা অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে, এটা একটা হাসপাতাল।”

চমৎকার ট্রিপটিজ

“চিফ, আমার কি করার অনুমতি আছে তা আমার জানা আছে।” এলিজাবেথ উত্তর দিলো। এখন সে সাদা কলারযুক্ত হালকা নীল রঙের পোশাক পরিহিত এবং সে তার নাচ থামালোনা।

অতপর সে তার হাতদু’টি তার কোমরে স্থাপন করলো এবং শরীরের উভয়পাশ দিযে তাদের গড়িয়ে আনলো এবং সারা শরীর বেয়ে হাত দুটি তার মাথার উপরে তুলে ফেললো। তারপর রস তার ডান হাত উত্তোলিত বামবাহুর উপর দিয়ে বইয়ে দিলো এবং তারপ বাম হাত ডান হাতের উপর এবং তারপর হাত দিয়ে ফ্লাজম্যানের দিকে এমন এক অঙ্গভঙ্গী করলো যেন তাকে সে তা ব্লাউজ ছুঁড়ে দিলো। এটা ফ্লাজম্যানকে স্তম্ভিত করলো। সে লাফ দিলো। “কচি খোকা, তুমিই এটার পতন ঘটালো”, সে তাকে চিৎকার করে বললো।

পুনরায় সে তার হাতদু’টি তার কোমরে স্থাপন করলো এবং সে তাদের উভয় পা বেয়ে নামিয়ে আনলো। উপুর হয়ে সে প্রথমে ডান পা এবং তারপর বাম পা উত্তোলন করলো। তারপর চিফ ডাক্তারের দিকে অপলক তাকিয়ে তার দিকে একটা প্রতীকী স্কার্ট ছুঁড়ে দেয়ার ভঙ্গীতে সে তার দক্ষিণ বাহু ছুঁড়ে দিলো। একই সময় চিফ ডাক্তার আঙ্গুল চড়িলে তার দিকে হস্ত প্রসারিত করে দিলেন। তারপর তিনি এ হাতকে তার হাটুতে স্থাপন করলেন এবং অন্য হাতের আঙ্গুলের ইশারায় তিনি এলিজাবেথের দিকে একটি চুম্বন ছুঁড়ে দিলেন।

আরো খানিকক্ষণ মোচড়া-মুচড়ি ও নৃত্যের পর, পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে এলিজাবেথ দাড়ালো, কনুইয়ের কাছে বাহু বাঁকালো এবং তার পশ্চাদ্ভাগে তা স্থাপন করলো। তারপর নাচের ভঙ্গীতে সে তার বাহুযুগল সামনে নিয়ে এলো, ডান হাতের তালু দিয়ে বাম কাঁধে হাত বুলালো এবং বাম হাতে তালু দিযে ডান কাধে হাত ঝুলালো এবং এবার হাভেলের দিকে বাহুযুগল দিয়ে বয়ে চলার অঙ্গভঙ্গী করলো। তিনিও আনাড়িভাবে খানিক হাত নাড়া-চাড়া করলেন।

এবার এলিজাবেথ সোজা হলো এবং রাজকীয়ভাবে দীর্ঘপদক্ষেপে কক্ষে ঘুরে বেড়াতে লাগলো; দেহের উর্ধ্বাঙ্গের প্রতীকী নগ্নতা তাদের প্রত্যেকের কাছে জাহির করে, সে কক্ষের চারজন দর্শকের সবার কাছেই পর্যায়ক্রমে এগিয়ে গেলো। অবশেষে সে হাভেলের সামনে থামলো, আবারো কোমর দোলানো শুরু করলো এবং ঈষৎ বাঁকা হয়ে উভয় দিকে বাহু গড়িয়ে দিলো এবং পুনরায় (আগের মতো) একটার পর অন্য পা উত্তোলন করলো। তার পর উল্লসিতভাবে সে সোজা হয়ে দাড়ালো, ডান হাত উঁচু করে যেন সে তার বুড়ো আঙ্গুল ও তর্জনীর মধ্যে কোন কিছুর টুকরো ধরে আছে। এই হাতের মাধ্যমে সে হাভেলের দিকে গড়িয়ে যাবার ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলো।

তার প্রতীকী নগ্নতার পূর্ণ মহিমা প্রদর্শন পূর্বক তারপর সে তার পায়ের আঙ্গুলে ভর করে আবার দাড়ালো। সে আর কারোর দিকে তাকাচ্ছিলো না, এমনকী হাভেলের দিকেও না কিন্তু অর্ধনিমিলীত নেত্রে মাথা আধাআধি হেলিয়ে সে তার নিজ ঘূর্ণয়মান শরীরের দিকে অপলক তাকিয়ে দেখছিলো।

এবার তার দর্শনীয় অঙ্গভঙ্গীতে ছেদ পড়লো এবং এলিজাবেথ ডাঃ হাভেলের হাঁটুর উপর বসে পড়লো।” আমি বিপর্যস্ত,” সে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো। সে হাভেলের গেলাসের দিকে হাত বাড়ালো এবং কিছুটা পান করলো। “ডাক্তার,” সে হাভেলকে বললো, “আপনার কাছে, জীবনীশক্তিবর্ধক বড়ি নাই,  আছে? আমি ঘুমোতে চাই না!”

“প্রিয় এলিজাবেথ, তোমার জন্যে সবকিছু আছে!” হাভেল বললেন। তিনি হাঁটুর উপর থেকে এলিজাবেথকে উঠালেন, চেয়ারে বসালেন এবং ঔষধালয়ে গেলেন। তিনি সেখানে কিচু উচ্চমাত্রার ঘুমের বড়ি পেলেন এবং তার থেকে দুটো এলিজাবেথকে দিলেন।

“এটা কি আমায় জাগিয়ে রাখবে?” সে জানতে চাইলো।

“নয়তো আমার নাম হাভেলই নয়,” হাভেল বললেন।

প্রস্থানকালে এলিজাবেথের উক্তি

যখন এলিজাবেথ বড়ি দুটো গিলে ফেললো সে পুনরায় হাভেলের হাঁটুর উপর উপবিষ্ট হতে চাইলো, কিন্তু হাভেল তার পদযুগল একপাশে সরিয়ে নিলো যাতে করে সে মেঝেতে চিৎপটাং হয়।

হাভেল তৎক্ষণাৎ এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করলো কারণ বাস্তবে সে এলিজাবেথকে এমন হীনপন্থায় ফেলে দিতে চায়নি এবং সে পা সরিয়ে থাকলে এ ছিলো এলিজাবেথের পশ্চাদ্ভাগ বিরূপভাবে পা দিয়ে স্পর্শ করার এক ধরনের অসচেতন কার্যকলাপ।

সুতরাং তিনি তাকে টেনে তোলার চেস্টা করলেন, কিন্তু এলিজাবেথ নিদারুণ অবাধ্যতায় তার সমস্ত ভার নিয়ে মেঝের সাথে দৃঢ়ভাবে সেঁটে রইলো। এই সময় ফ্লাজম্যান তার সামনে এসে দাঁড়ালো এবং বললো: “তুমি মাতাল হয়ে গেছো, তোমার ঘুমাতে যাওয়া উচিত।”

এলিজাবেথ মেঝে থেকে অপরিসীম ঘৃণায় উপরের দিকে তাকালো এবং তাকে বললো : “তুমি একটা পশু। তুমি একটা মুর্খ।” আরো একবার বললো, “তুমি একটা মুর্খ।”
হাভেল তাকে আর একবার উঠানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু সে তাকে ভয়ঙ্করভাবে এড়িয়ে গেলো এবং কাঁদতে লাগলো। কি বলা উচিত তা কেউ বুঝতে পারলো না, সুতরাং তার কান্না নিস্তব্ধ কক্ষে বেহালার হাহাকারের মতো প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। কেবল খানিকক্ষণ পরেই লেডি ডাক্তার শান্তভাবে বিদ্রুপাত্মক শিস্ দিতে লাগলো।

এলিজাবেথ অশিক্ষভাবে উঠে দাড়ালো, দরোজার কাছে গেলো এবং দরোজার হাতল ধরে আধেক ঘুরে কক্ষের দিকে তাকালো এবং বললো: “তোমরা পশু। তোমরা পশু। তোমরা যদি কেবল জানতে। তোমরা কিছুই জানো না। ”

ফ্লাজম্যান সম্পর্কে চিফ ডাক্তারের অভিযোগ

তার প্রস্থানের পর যে নিরবতা নেমে এলো চিফ ডাক্তারই প্রথম তার অবসান ঘটালেন। “দেখ, বাপু ফ্লাজম্যান। তুমি বলে বেড়াও রমণীকুলের জন্যে তোমার ভেতরে করুণার উদ্রেক হয়। কিন্তু তাদের জন্যে তোমার যদি করুণাই হবে এলিজাবেথের জন্যে কেনো হয় না?

“তার জন্যে কেনো আমি মাথা ঘামাতে যাবো?” ফ্লাজম্যান প্রতিবাদ করলো।

“কোন কিছু না জানার ভনিতা করতে যেও না! কিছুক্ষণ আগেই আমরা তোমাকে এ ব্যাপারে বলেছি। সে তোমার জন্যে পাগল।”

“আমার কি কিছু করার আছে?” ফ্লাজম্যান জিজ্ঞেস করলো।

“তুমি পার না,” চিফ ডাক্তার বললেন, “কিন্তু তুমি তার প্রতি কঠোর হয়েও তাকে যন্ত্রণা দিয়ে তাকে সাহায্য করতে পার। তোমার কর্মকাণ্ড দ্বারা তুমি তার সারাটি সন্ধ্যা মোহনীয় করে তুলতে পারতে, যদি তুমি তার দিকে তাকিয়ে হাসতে, যদি তার কাছে কিছু মিঠে বুলি আওড়াতে। কিন্তু তুমি তাকে কী বললে!”

“আমি তাকে খুব মারাত্মক কিছু বলিনি।” ফ্লাজম্যান প্রতিবাদ করলো কিন্তু তার কণ্ঠ অনিশ্চিত শুনালো।

“আহা, খুব মারাত্মক কিছু না, না?” চিফ ডাক্তার কঠোরভাবে বললেন।

“তুমি তার নৃত্য নিয়ে তামাশা করলে, যদিও সে কেবল তোমার জন্যেই নৃত্য পরিবেশন করছিলো, আর তুমি কিনা তাকে ব্রোমাইড খেতে বললে, দাবী করে বসলে হস্তমৈথুন করা ছাড়া তার করার আর কিছুই নেই। কিছুই ভয়ানক নয়? সে যখন তার ট্রিপটিজ নিয়ে ব্যস্ত তুমি মেঝেতে তার ব্লাউজ লুটিয়ে দিলে।”

“কিসের ব্লাউজ?” ফ্লাজম্যান প্রতিবাদ করলো।

“তার ব্লাউজ,” ডাক্তার বললেন। “ন্যাকা সাজতে চেষ্টা করোনা। পরিশেষে তুমি তাকে শয়ন করতে পাঠালে যদিও এক মুহূর্ত আগেই সে একখানা প্রাণবন্ত থাকার বড়ি গলাধরকরণ করেছে।” 

“কিন্তু সে আমার নয় হাভেলের পিছু নিয়েছে!” ফ্লাজম্যান প্রতিবাদ অব্যাহত রাখলো।

“অভিনয় বাদ দাও,” চিফ ডাক্তার কঠিনস্বরে বললেন। “তুমি যদি তার প্রতি মনোযোগ না দাও সে কি করতে পারে। সে তোমাকে রাগান্বিত করার চেষ্টা করছিলো। এবং সে তোমার ভেতরে খানিকটা ঈর্ষা উৎপাদনের বাসনা করেছিলো। ভদ্রলোকের মতো কথা বল।”

“তাকে আর যন্ত্রণা দিয়ো না।” লেডি ডাক্তার বললো। “সে নিষ্ঠুর কিন্তু সে যুবক।”

“সে প্রতিশোধপরায়ন সর্বোচ্চ শ্রেণীর দেবদূত।” হাভেল বললেন।

পৌরাণিক চরিত্রসমূহ

“হ্যা সত্যিকারেই,” ডাক্তার বললো, “তার দিকে তাকান; একটা দুষ্ট বুদ্ধি, সর্বোচ্চ শ্রেণীর সুদর্শন দেবতদূত।”

“প্রকৃতপক্ষেই আমরা একটা পৌরণিক দল,”  চিফ ডাক্তার তন্দ্রালুভাবে লক্ষ্য করলেন, “কারণ তুমি হলে গিয়ে ডায়না। শান্ত  এথলেট এবং হিংসুটে।”

“আর আপনি হলেন গিয়ে স্যাটায়ার, পরিণত বয়স্ক, লম্পট এবং বাক্যবাগীশ,” লেডি ডাক্তার বললো। “হাভেল হলেন ডন জুয়ান। তিনি বুড়ো নন কিন্তু বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন।”

“মোটেই না! হাভেল হলেন মৃত্যু,” চিফ ডাক্তার তার পুরনো মতবাদে ফিরে দিয়ে আপত্তি উত্থাপন করলেন।

ডন জুয়ানের সমাপ্তি

“তোমরা যদি আমায় জিজ্ঞেস কর যে, আমি ডন জুয়ান অথবা মৃত্যু কিনা, তবে চিফ ডাক্তারের অভিমতের প্রতিই আমি সায় দেবো,” একটা লম্বা চুমু দিয়ে হাভেল বললেন। সর্বোপরি ডন জুয়ান ছিলো একজন বিজয়ী। কিন্তু আমার প্রশ্ন, কিন্তু যে অঞ্চলে কেউ তোমায় প্রত্যাখ্যান করেনা সেখানে তুমি কিভাবে জয়ী হতে পারো, যেখানে সবকিছুই সম্ভব এবং সবকিছুই অনুমোদিত ডন জুয়ান যুগের অবসান হয়েছে। আজ আর ডন জুয়ানের উত্তরসূরীরা জয় করে না, সে কেবলমাত্র কালেক্ট করে। গ্রেট কালেক্টর মহান বিজয়ীর জায়গা দখল করেছে, শুধু গ্রেট কালেক্টরের সাথে ডন জুয়ানের কোন মিল নেই। ডন জুয়ান হলো এক রকম চরিত্র। সে তার অপরাধে দণ্ডিত। সে উল্লাসিতভাবে পাপ করেছিলো এবং ঈশ্বরের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছিলো। সে ছিলো ঈশ্বর-নিন্দুক এবং নরকে বিলীন হয়েছিলো।

“ডন জুয়ান তার কাঁধে নাটকীয় দণ্ড তুলে নিয়েছিলো যার সম্পর্কে গ্রেট কালেক্টরের কোন ধারণা নেই কারণ তার জগতের সকল দণ্ডের ভার হারিয়ে গেছে। শিলাখণ্ড পরিণত হয়েছে পালকে। বিজয়ীর জগতে একটা ক্ষণিকের দৃষ্টিপাত কালেক্টরের রাজ্যে দশ দশটি বছরের সবচেয়ে সফল যৌনমিলনের সমান গরুত্বপূর্ণ ছিলো।

“ডন জুয়ান ছিলো প্রভু, আর কালেক্টর হলো কৃতদাস। ডন জুয়ান সমস্ত প্রথা এবং আইন লঙ্ঘন করেছিলো। গ্রেট কালেক্টর কেবল অনুগতভাবে স্বেদবিন্দু ঝরিয়ে প্রথা ও আইন মেনে চলে কারণ কালেক্টরের কাজ উত্তম রীতি, উত্তম আচরণ এবং প্রায় দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। মোদ্দাকথা আমার কোন অপরাধের দণ্ড যদি দেয়া হয় তবে তার একমাত্র কারণ আমি এলিজাবেথের সাথে লাগতে যাই না।

গ্রেট কালেক্টর বিষাদ কিংবা নাটকের কিছুই জানে না। যৌনপ্রবৃত্তি তাকে সর্বনাশের প্ররোচক হিসেবে ব্যবহার করে। তার কাজ নাস্তা ও নৈশ আহার করা, স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা, টেবিল টেনিস খেলার মতো কাজে পরিণত হয়েছে, যদিও তা ট্রামে চড়া এসবকে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করেছে। সে এটাকে রঙ্গমঞ্চে পরিণত করেছে যাতে যথার্থ নাটক অভিনীত হয় না। হায়! বন্ধুগণ।” হাভেল বাগরম্বর করলো, “আমার ভালোবাসার (যদি আমি তাদেরকে এমনটি বলতে পারি)  রঙ্গমঞ্চে কিছুই ঘটছে না।”

“আমার প্রিয় ডাক্তার এবং চিফ, আপনি। আপনারা ডন জুয়ান এবং মৃত্যুকে একে অপরের বিপরীতে স্থাপন করেছে। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবেও অসাবধানতায় আপনারা ব্যাপারটার নির্যাস বের করতে সক্ষম হয়েছেন। দেখুন ডন জুয়ান অসম্ভবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এবং সেটা খুবই মানবিক বৈশিষ্ট। কিন্তু গ্রেট কালেক্টরের রাজ্যে, কিছুই অসম্ভব নয়, কারণ এটা মৃত্যুপুরী। গ্রেট কালেক্টর বিরোগান্ত কাহিনী, নাটক ও প্রেমের ক্ষেত্রে মৃতের মতো। মৃত্যু ডন জুয়ানের খোঁজে এসেছিলো। নরকাগ্নী যেখানে তার প্রভু তাকে উৎসর্গ করেছিলেন সেখানে তিনি জীবিত। কিন্ত গ্রেট কালেক্টরের জগত যেখানে আবেগ ও অনুভূতি পালকের মতো স্থানে ইতস্তত আন্দোলিত হয় এ জগতে তিনি চিরদিনের জন্য মৃত।

“মোটেই না, প্রিয় ডাক্তার,” বিষণ্নভাবে হাভেল বললেন, “ডন জুয়ান এবং আমি, মোটেই না! আমি আমার প্রভু কে যা দেখাতে চেয়েছি এবং আমার অন্তরে অনুভব করতে চেয়েছি তাহলো তার অভিশাপের কঠিন দণ্ড এবং আমার ভেতরে ঘনীভূত বিয়োগান্ত কাহিনীর উদারতা। ডাক্তার আমি মোটেই মিলনান্তক কাহিনীর চরিত্র নই এবং তেমনটি হওয়ার কোন বাসনাও আমার নেই কিন্তু ডন জুয়ানের বেলায়, কারণ কেবলমাত্র তার করুণ ছন্নছাড়া অবস্থার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে আর একটু বাড়িয়ে আমার মাগিখোর অস্তিত্বের হাস্যকর বিষণ্নতার সাথে তুলনা করতে পারেন যা এরূপ মানদণ্ড ব্যতীত একটা ক্লান্তিকর সন্নিবেশের অনুজ্জ্বল গাতনুগতিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

পরবর্তী সংকেত

হাভেল লম্বা বক্তৃতা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে (এসময়ের মধ্যে তন্দ্রালু চিফ ডাক্তার দু’বার মাথা ঝাঁকুনী দিয়ে উঠেছেন) নিরব হয়ে গেলেন। কেবল একটা উপযুক্ত মুহূর্তকালের পর আবেগের অতিশয্যে লেডি ডাক্তার নিরবতা ভঙ্গ করলো: “ডাক্তার আমি ধারণাই করতে পারিনি যে, আপনি অমন অনর্গল বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন। আপনি প্রকৃতপক্ষে নিজেকে হাস্যকর কাহিনীর অনুজ্জল নির্বোধ ও শূন্যগর্ভ চরিত্র হিসেবে প্রতিয়মান করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত আপনি যেভাবে কথা বললেন তা বেশ উন্নত। আপনি যথাযথই ধূর্ত নিজেকে ভিখিরি বলে অভিহিত করেন কিন্তু যেভাবে রাজকীয় কথার ফুলঝুরি সাজাচ্ছেন আপনাকে রাজা-বাদশারা চেয়েও মহিয়ান মনে হয়। হাভেল, আপনি একজন পরিণত বয়স্ক প্রবঞ্চক। এমনি ব্যর্থ, যদিও নিজেকে নিন্দা করে বেড়ান। আপনি একজন স্বাভাবিক পরিণত বয়স্ক প্রবঞ্চক।”

ফ্লাজম্যান শব্দ করে এই আত্মসন্তুষ্টিতে হাসলো যে, তার বিশ্বাস লেডি ডাক্তারের কথায় হাভেলের প্রতি তার অবজ্ঞাই প্রতীয়মান হচ্ছে। সুতরাং তার বিদ্রুপ এবং তার নিজের হাস্য দ্বারা উৎসাহিত হয়ে সে জানালার ধারে এগিয়ে গেলো এবং অর্থপূর্ণভাবে বললো: “কী চমৎকার রাত!”

“হ্যাঁ,” লেডি ডাক্তার বললো, “জমকালো রাত্রি অথচ হাভেল মরার মতো পড়ে আছে! হাভেল, আপনি লক্ষ্য করেছেন কী, কি চমৎকার রাত আজ?”

“আবশ্যই তিনি লক্ষ্য করেননি,” ফ্লাজম্যান বললো, “হাভেলের কাছে একজন রমণী অন্যজনের মতোই, একটা রাত অন্য রাতে মতোই, শীতকাল গ্রীস্মকালের মতোই। হাভেল জিনিসের নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে উদাসীন।” 

“তুমি আমাকে ভালোই চিনেছো,” হাভেল বললেন।

ফ্লাজম্যান এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলো যে, এবার লেডি ডাক্তারের সাথে নির্দিষ্ট স্থানে তার মিলিত হওয়া সাফল্যের মুখ দেখবে। চিফ ডাক্তার আকণ্ঠ পান করেছিলেন এবং শেষ কয়েক মিনিট তন্দ্রালুতা তাকে অধিকার করে ফেলে তার চেতনা ভোতা করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় ফ্লাজম্যান কথাচ্ছলে বললো: ওহ! মরার পেশাব!” এবং লেডি  ডাক্তারের দিকে একবার দৃষ্টিদান করে দরোজার বাইরে চলে গেলো।

গ্যাস

বারান্দা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে তার স্মরণ হলো যে, পুরো সন্ধ্যে জুড়ে লেডি ডাক্তার চিফ ডাক্তার ও হাভেল যাকে ঠিক এখন ঝোঁকের বশে প্রবঞ্চক বলে অভিহিত করেছে, এই উভয়কে নিয়ে সারাটি সন্ধ্যে ভয়ানক তামাশা  করেছে। এই ভেবে সে অবাক হলো যে, এটা পুনরায় ঘটছে, প্রতিবার ঘটা সময়ই সে নতুন করে বিস্মিত হলো, কারণ এটা নিয়মিত ঘটতো: রমণীরা তাকে পছন্দ করতো, অভিজ্ঞ পুরুষদের চেয়ে তারা তাকে অধিক পছন্দ করতো। নারী ডাক্তারের ক্ষেত্রে, তা হলো বিশাল, ভিন্নতর ও অনাকাঙ্খিত উল্লাস কেন না সে স্পষ্টতাই খুঁতখুঁতে বুদ্ধিমতি এবং খানিকটা ( কিন্তু প্রশংসনীয়ভাবে ) দেমাগী।

এসব খোশ মেজাজী চিন্তা করতে করতে ফ্লাজম্যান লম্বা বারান্দা দিয়ে হেঁটে প্রস্থান দরোজায় পৌঁছে গেলো। যখন সে প্রায় বাগানে ঢোকার প্রবেশদ্বারে তখন সে গ্যাসের গন্ধ পেলো। সে থামলো এবং শ্বাস টানলো। নার্সদের ছোট্ট কামরায় ঢোকার দরোজায় সে গ্যাসের কড়া গন্ধ পেলো। হঠাৎ ফ্লাজম্যান অনুভব করলো যে, সে ভীষণ আতঙ্কিত।

প্রথমে সে দ্রুত দৌড়ে হাভেল ও চিফ ডাক্তারকে ডেকে আনতে চাইলো কিন্তু তারপর সে দরোজার হাতল নেড়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো (সম্ভাব্য কারণ তার ধারণা হলো যে দরোজা লক করা থাকবে যদি না প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়)। কিন্তু বিস্ময়করভাবেই দরোজা ছিলো উন্মুক্ত। কৌঁচে শায়িত একটা বিশাল নগ্ন রমণী দেহকে আলোকিত করে ছাদে একটা তীব্র আলোর বাতি জ্বলছিলো। ফ্লাজম্যান চারদিকে তাকালো এবং দ্রুত খানিকটা এগিয়ে গেল। সে গ্যাসের উৎসমুখ বন্ধ করে দিলো। তারপর দৌড়ে জানালার ধারে গেলো এবং এটাকে বেশ প্রশস্তভাবে উন্মুক্ত করে দিলো।

বন্ধনীতে মন্তব্য

কেউ বলতে পারে যে ফ্লাজম্যান বেশ তৎপরতা ও একান্ত আন্তরিকতায় কাজ করেছে। যাহোক একটা ব্যাপার উল্লেখ্য যে, সবকিছু স্মরণ রাখার মতো যথেষ্ট ঠাণ্ডা মাথা তার তখন ছিলোনা। এটা অবশ্য সত্য যে একটু মুহূর্তের জন্য সে এলিজাবেথের উদ্যোম শরীরটা হা করে দেখছিলো কিন্তু ঘটনার ধাক্কা তাকে এমন অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছিলো যার আড়ালে সে কিছুই ঠার করতে পারেনি, আমরা একটা সুবিধাজনক দূরত্ব থেকে যার উচ্ছসিত প্রশংসা করতে পারি:

এলিজাবেথের চমৎকার শরীর। সে চিৎ হয়ে মাথা একদিকে ঈষৎ ঘুরিয়ে এবং একটা কাঁধ হালকাভাবে অন্য কাঁধের দিকে খানিকটা বাঁকিয়ে যাতে করে তার রমণীয় স্তন দুটি এক অপরের উপর চেপে থাকতে পারে এবং তাদের পূর্ণ আকৃতি দৃশ্যমান করতে পারে, এমনভাবে শুয়ে ছিলো। তার একটা পা প্রসারিত হয়েছিলো এবং অন্যটা হাটুর কাছে হালকাভাবে বাঁকানো অবস্থায় ছিলো যাতে করে তার দৃষ্টান্তমূলক উরুর পূর্ণতা ও তার যৌনকেশের ব্যতিক্রমি গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ দৃশ্যমান হয়।

সাহায্যের জন্য চিৎকার করা

দরোজা খুলে এবং জানালা প্রশস্তভাবে উন্মুক্ত করে ফ্লাজম্যান দৌড়ে বাড়ান্দায় গেলো এবং সাহায্যের জন্যে চিৎকার শুরু করে দিলো। তারপর দ্রুত ও বস্তুত যা ঘটলো তা হলো : কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা, জরুরী বিভাগে ফোন করা, দায়িত্ব পালনরত ডাক্তারের কক্ষে অসুস্থ রমণীটিকে নিয়ে যাওয়া, আরো বেশী পরিমাণ কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা, জ্ঞান ফেরানো, রক্ত দেয়া এবং শেষমেষ একটা গভীর প্রশান্তির ছাপ, যখন এটা নিশ্চিত হয়ে গেলো যে এলিজাবেথের জীবন রক্ষণ পেয়েছে।

কে কি বললো

যখন চারজন ডাক্তারের সবাই উঠোনের উদ্যমে জরুরী বিভাগ ত্যাগ করলেন তাদেরকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিলো। চিফ ডাক্তার বললেন: “বেচারী এলিজাবেথ আমাদের সিম্পোজিয়ামের সর্বনাশ করলো।”

লেডি ডাক্তার বললো: “অসুখী রমণীর সর্বদা দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” হাভেল বললেন: “এটা বিরক্তিকর। সে তার সুন্দর রমণীয় শরীর প্রদর্শনের জন্য গ্যাস ছেড়ে রেখেছিলো।”

এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাজম্যান হাভেলের (দীর্ঘক্ষণ) দিকে তাকিয়ে বললো: “আমি আর পান করা কিম্বা রসিক ও বুদ্ধিমান সাজার মত অবস্থায় নেই। শুভ রাত্রি।” এবং সে হাসপাতাল থেকে বের হবার জন্য রওনা দিলো।

ফ্লাজম্যানের মতামত

তার সহকর্মীদের মন্তব্য ফ্লাজম্যানের ভেতরে ঘৃণার উদ্রেক করলো। তাদের মধ্যে সে বয়স্ক পুরুষ এবং রমণীদের নোংরামি, পরিণত বয়সের নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করলো যা তার যৌবনের সামনে এক প্রচণ্ড প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিলো। একারণেই একা থাকতে পেরে সে খুশী হলো এবং সে ইচ্ছে করেই পায়ে হেটে গেলো। কারণ সে তার  উত্তেজনাকে সম্পূর্ণরূপে অনুভব ও উপভোগ করতে চাইলো।

আনন্দময় আশংকা সে বারে বারে বলতে লাগলো এলিজাবেথ মৃত্যুর সন্নিধানে চলে গিয়েছিলো এবং এই মৃত্যুর জন্যে তাকেই দায়ী করা হতো।

সে নিশ্চিতভাবেই জানতো যে আত্মহত্যার পেছনে শুধু একটা কারণ থাকে না কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কারণের নক্ষত্রপুঞ্জ বিদ্যমান থাকে, পক্ষান্তরে সে ঐ একটি কারণকে অস্বীকার করতে পারেন। সম্ভবত তার অস্তিত্বের সহজ ব্যাপারে এবং সে রাতে তার আচরণের মাধ্যমে সে নিজেই প্রধান কারণ হিসেবে পরিগণিত হতো।

এখন নিজেকে খুব সাংঘাতিকভাবে দায়ী করলো। নিজেকে সে আত্মাভিমানী আখ্যা দিলো, যে কিনা তার প্রণয়সংক্রান্ত সাফল্যের অহংকারে মজ্জমান। লেডি ডাক্তারের আগ্রহে পাগল হয়ে তার ইশারায় সারা দেবার জন্যে নিজেকে ভর্ৎসনা করলো। সে এলিজাবেথকে একটা তুচ্ছ বস্তু, একটা পাত্রে পরিণত করার জন্যে নিজেকে দায়ী সাব্যস্ত করলো, যে পাত্রে সে তার ক্রোধ উগরে দিয়েছে যখন চিফ ডাক্তার তার নৈশকালীন অভিসার ভণ্ডুল করে দিয়েছিলেন। ঠিক সেই কারণেই কি সে এই নিরপরাধ মানবীর সাথে অমন আচরণ করেছিলো?

তরুণ  ইন্টার্নী, যাহোক, কোন আদিম প্রাণী নয়; নিশ্চিত উক্তি এবং অস্বীকৃতির উপভাসা তার মনের প্রতিটি ধাপকে অধিকার করেছিলো। যার ফলে তার ভেতরের কৌশলী মন আত্মরক্ষার্থে তার অন্তর্গত অভিযোগকারীর অভিযোগ খণ্ডক করেছিলো:

এলিজাবেথের প্রতি তার মন্তব্যসমূহ অপ্রাসংগিক ছিলো, কিন্তু বলতে গেলে তাদের কোন করুণ পরিণতির সম্ভাবনাই নেই যদি এটা এই কারণে না হতো যে এলিজাবেথ তাকে ভাল বাসতো। যাই হোক কেউ তার প্রেমে পড়েছে এ কারণে কি ফ্লাজম্যানকে দায়ী করা যায়? ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কি সেই রমণীর জন্যে দায়ী হলো?

এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সে এক মুহূর্তের জন্যে থামলো। এটাকে তার কাছে মানুষের অস্তিত্বের সমস্ত রহস্যের চাবি বলে বোধ হলো। সে হাঁটায় বিরতি টানলো এবং সম্পূর্ণ আন্তরিকভাবে নিজেকে জবাব দিলো: হ্যাঁ ভুল আসলে তার নিজেরই হয়েছে যখন সে চিফ ডাক্তারকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলো যে, অনিচ্ছাকৃতভাবে তার দ্বারা সংঘটিত কোনকিছুর জন্যে সে দায়ী নয়। তার ভেতরের সচেতন ও অভিপ্রেত অংশটাকে কি প্রকৃতপক্ষে প্রশমিত করা সম্ভব ছিলো না? অনিচ্ছাকৃতভাবে সে যা করেছে তাকি তার ব্যক্তিত্বের পরিধির অন্তর্ভূক্ত নয়? সে ছাড়া অন্য কেইবা তার জন্যে দায়ী হতে যাবে? হ্যাঁ, সেই অপরাধী; এলিজাবেথের ভালোবাসায় অপরাধী, এ ব্যাপারে অজ্ঞতার দায়ে অপরাধী; আগ্রহ না দেখানোর দায়ে অপরাধী। সে একটা মানুষকে মেরে ফেলার উপক্রম করে ফেলেছিলো।

চিফ ডাক্তারের মতামত

ফ্লাজম্যান যখন আত্ম-জিজ্ঞাসার পরিণত চিন্তায় বিভোর তখন চিফ ডাক্তার, হাভেল এবং নারী ডাক্তার স্টাফরুমে ফিরে এলেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের আর পান করার মানসিকতা ছিলো না। কিছুক্ষণের জন্য তারা নিরব রইলেন এবং তারপর হাভেল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন: “আমার বিস্ময়, এলিজাবেথের মাথায় এ দুর্বুদ্ধির উদয় হলো কিভাবে?”

“ডাক্তার এটা কোন আবেগ প্রবণতা নয়, অনুগ্রহ করুন,”  চিফ ডাক্তার বললেন। “যখন কোন ব্যক্তি এমন গাধার মতো আচরণ করে, আমি তাতে বিচলতি হই না। অধিকন্তু আপনি যদি এতোটা অনমনীয় না হতেন এবং অন্য কারোর সাথে যা করে থাকেন তা যদি অনেক আগেই করতেন তবে এমনটি হতো না।”

“আত্মহত্যার জন্যে আমাকে দায়ী করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।” হাভেল বললেন।

“আসুন আমরা আর একটু ঠিকঠাক হই,” এটা আত্মহত্যার প্রশ্ন নয় কিন্তু এমনভাবে সাজানো আত্মহত্যার অভিনয় যাতে বিপর্যয় ঘটবেনা। প্রিয় ডাক্তার, যখন গ্যাস দ্বারা কেউ শ্বাসরোধ করতে চায় সে ঘরে তালা মেরে শুরু করে। শুধু তাই নয়, যতোটা বিলম্ব ঘটানো সম্ভব ততোটা সময়ের জন্যে সে ঘরের ফাঁক-ফোকরগুলো বন্ধ করে দেয়। এলিজাবেথ মৃত্যুর কথা ভাবেনি সে আপনার কথা ভাবছিলো।

“ঈশ্বর জানেন, কতোদিন ধরে সে আপনার সাথে রাতের দায়িত্ব পালনের জন্যে চেষ্টা করছিলো এবং সন্ধের শুরু থেকেই বেহায়ার মতো আপনার কাছে ভেরার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু আপনি কঠিন হৃদয়। এবং আপনি যতোবেশী পাষাণ হলেন সে ততো বেশী পান করে গেলো এবং ততো বেশী হইচই করে গায়ে পড়ার ভাব করলো। সে নির্বোধের বাক্য আওড়ালো, নৃত্য করলো এবং ট্রিপটিজ করতে চাইলো।”

“দেখুন, আমার ভয় হয় এর মধ্যে কোন কিছুর সম্পৃক্ততা আছে কিনা। যখন সে না আপনার চোখ না কান আকৃষ্ট করতে পারলো তখন সে আপনার প্রাণেন্দ্রিয় আকর্ষণের নিমিত্তে সে সব কিছুর বাজি ধরলো এবং গ্যাস ছেড়ে দিলো। গ্যাস ছাড়ার পূর্বে সে উলঙ্গ হলো। সে জানে, তার একটা জমকালো শরীর রয়েছে এবং সেটা আবিষ্কার করার জন্যে আপনাকে সে বাধ্য করতে চেয়েছিলো। স্মরণ করুন দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে সে কেমন করে বলেছিলো: তোমরা যদি কেবল জানতে। তোমরা কিছুই জান না। তোমরা কিচ্ছু জান না। সুতরাং আপনি এখন জানেন: এলিজাবেথ একটা বিশ্রী মুখ কিন্তু একটা চমৎকার শরীর রয়েছে। আপনি নিজেও এটা স্বীকার করেছেন। দেখুন, নয়তো তার অতোটা বেয়ারাপনার দরকার ছিলো না। আমার ভয় শেষ পর্যায়ে আপনি তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বশে আনতে পারবেন কিনা।”

“হয়তো করতে পারবো।” হাভেল তার কাঁধ ঝাঁকালো।

“অবশ্যই।” চিফ ডাক্তার বললেন।

হাভেলের মতামত

“চিফ, আপনার কথা আপাতদৃষ্টিতে সত্য বলে মনে হচ্ছে কিন্তু আপনার ব্যাখ্যায় কিঞ্চিত ভুল রয়ে গেছে: এ নাটকে আমার ভূমিকাকে আপনি খুব বড়ো মনে করেছেন। কেননা এটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেবলমাত্র আমিই এলিজাবেথের সাথে শুতে যাবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিনি। কেউই এলিজাবেথের সাথে শুতে চায়নি।

“প্রথম দিকে আপনি যখন আমায় প্রশ্ন করেছিলেন, কেন আমি এলিজাবেথের সাথে বিছানায় যেতে রাজি হইনি, আমি তুচ্ছ সৌন্দর্য সম্পর্কে কিছু ফালতু কথা বলেছিলাম এবং বলেছিলাম কিভাবে আমি আমার স্বাধীনতা বজায় রাখতে চাই। কিন্তু সেসব ছিলো কেবল নিছক অর্থহীন তামাশা যদ্বারা আমি সত্যকে ঘোলাটে করে তুলেছিলাম। সত্য তার ঠিক বিপরীত এবং কেবল মিষ্টি কথায় ভুলানোর ব্যাপার নয়: আমি স্বাধীন ব্যক্তির মতো আচরণ করতে অসমর্থ ঠিক এ-কারণেই এলিজাবেথকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম।

এলিজাবেথের সাথে না ঘুমানোটা ফ্যাশন। তার সাথে কেউ শয়ন করেনা এবং এমনকি কেউ তার সাথে শুইলেও সে তা কখনো স্বীকার করবেনা কারণ সবাই তাকে উপহাস করবে। ফ্যাশন ভয়ানক নিয়ম-নিষ্ঠার ব্যাপার এবং কৃতদাসের মতো এতে সমর্পিত। সেই সাথে এলিজাবেথ একজন সাবালক রমণী এবং এ ব্যাপারটা তার বুদ্ধি-সুদ্ধি ভোতা করে ফেলেছে। আমার প্রত্যাখ্যানও তার বুদ্ধি লোপের সবচেয়ে বড়ো কারণ হওয়াটা বিচিত্র নয় কারণ এটা সবার জানা আছে যে আমি সবার সাথেই বিছানায় যাই। কিন্তু এলিজাবেথের বুদ্ধিসত্তার চেয়ে ফ্যাশনটাই আমার কাছে অধিক প্রিয়।

“আপনি ঠিকই বলেছেন, চিফ সে জানে যে তার একটা চমৎকার শরীর রয়েছে এবং তাই তার অবস্থাকে সে সম্পূর্ণ অবাস্তবতা ও অবিচার বিবেচনা করেছে এবং এর প্রতিবাদ করতে চাইছিলো। স্মরণ করে দেখুন সারাটি সন্ধ্যা অব্যাহতভাবে সে তার শরীরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেড়াচ্ছিলো। সে যখন তার ভিয়েনায় দেখা সুইডিশ ট্রিপটিজ নৃত্য শিল্পির কথা বললো, সে তার স্তনযুগলে হাত বুলালো এবং ঘোষণা দিয়ে বসলো যে তার দুটি সুইডিশ রমণীটির চেয়ে বেশী সুন্দর। স্মরণ কওে দেখুন এই সন্ধ্যায় তার স্তনদু’টি ও নিতম্ব উচ্ছৃঙ্খল জনতার মিছিলের মতো কক্ষটি কেমন পরিপূর্ণ করে তুলেছিলো।  চিফ, এটা সত্যিকার প্রদর্শনীই ছিলো।

“তার ট্রিপটিজ নৃত্যের কথা স্মরণ করুন, মনে করে দেখুন ঠিক কি অভিজ্ঞতা সে এর থেকে অর্জন করেছিলো! এটাই আমার দেখা করুণতম ট্রিপটিজ নৃত্য। প্রচণ্ড আবেগের বশে সে তার বস্ত্র উন্মোচনের চেষ্টা করছিলো এবং একই সঙ্গে তখনও সে তার ঘৃণ্য সেবিকার পোশাকের কারাভ্যন্তরেই অবস্থান করছিলো কিন্তু পারছিলো না। যদি সে জানতো যে সে উলঙ্গ হবে না তথাপি সে চেষ্টা করছিলো কারণ সে আমাদেরকে সে তার দুঃখের জানান দিতে চেষ্টা করেছিলো এবং দুর্বোধ্য আকাঙ্খাকে উন্মুক্ত করতে চেয়েছিলো। চিফ, সে আসলে উদোম হচ্ছিলোনা, সে উদোম হবার শোকের গাথা গাইছিলো, গাইছিলো উদোম হবার অসম্ভাব্যতার, প্রণয়ের অসম্ভাব্যতার, বেঁচে থাকার অর্থহীনতার গান! অথচ আমরা তা শুনতেও চাইনি। আমরা কেবল মেঝের দিকে তাকিয়েছিলাম এবং আমরা ছিলাম সহানুভূতিহীন।”

“ওরে আমার রোমান্টিক মাগিবাজরে! আপনি কি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন যে, সে মরতে চেয়েছিলো?” চিফ ডাক্তার হাভেলকে চিৎকার কওে বললেন।

“স্মরণ করুন,” হাভেল বললেন, “নাচার সময় কিভাবে সে আমাকে বলছিলো: “আমি এখনো বেঁচে আছি! আপনার কি মনে পড়ে? নৃত্য শুরুর মুহূর্তেই তার জানা ছিলো সে কি করতে চলেছে।

“সে ন্যাংটা হয়ে মরতে গেলো কেন, অ্যাহ্? এ ব্যাপারে আপনার ব্যাখ্যা কী?”

“একজন যেভাবে তার প্রেমিকের আলিঙ্গনে ধরা দিতে যায় সেও তেমনি মৃত্যুর আলিঙ্গনে ধরা দিতে গিয়েছিলো। সেজন্যেই সে নগ্ন হয়েছিলো, কেশ বিন্যাস করেছিলো এবং মেকাপ নিয়েছিলো..... ”

“সে কারণেই দরোজায় তালা মাড়েনি, এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি? দয়া করে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করবে না যে সে সত্যি সত্যিই মরতে চেয়েছিলো!”

“হতে পারে যে, সেকি চায় তা সে জানতোই না। আসলে আপনি কি জানেন, আপনি কি চান? আমাদের মধ্যে কেইবা তা জানে? সে মরতে চেয়েছিলো কিন্তু মরেনি। সে সম্পূর্ণ আন্তরিক ভাবেই মরতে চেয়েছিলো এবং একইসাথে (সমান আন্তরিকতায়) মৃত্যু গহ্বরে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করতে এবং তার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া অনুভব করতে চেয়েছিলো। অবশ্যই সে আমাদেরকে তার মত অন্ধকার, দুর্গন্ধ ছড়ানো এবং বিকৃত ব্যবস্থা দেখাতে চায়নি। সে আমাদেরকে তার চমৎকার, অবমূল্যায়ন করা শরীর যা তার সমস্ত মহিমা নিয়ে মৃত্যুর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে, তা দেখাতে চেয়েছিলো। সে অন্তত এমন একটা গুরুতর মুহূর্তে আমাদেরকে এই শরীর ও এর প্রতি আমাদের কামনার জন্য মৃত্যুকে ঈর্ষা করাতে চেয়েছিলো।”

লেডি ডাক্তারের মতামত

“প্রিয় ভদ্রমহোদয়গণ,” নারী ডাক্তার প্রতিবাদ করলো, যেকিনা মনোযোগের সাথে উভয় ডাক্তারের কথাবার্তা নিরবে শুনে যাচ্ছিলো, “মেয়ে হিসেবে আমি যতোটা বিচার বিশ্লেষণ করতে পারি আপনার উভয়েই যৌক্তিকভাবে কথা বলেছেন। আপনাদের মতামত আপাতদৃষ্টিতে সত্য এবং বিস্ময়কর মনে হয় কারণ তারা গভীর জীবনবোধকে প্রকাশ করে। তারা কেবল একটাই খুঁত ধারণ করে: তাদের মধ্যে সত্যের ছিটে-ফোঁটাও নেই। এলিজাবেথ আত্মহত্যা করতে চায়নি। না প্রকৃত আত্মহনন না সাজানো। কিছুই না।”

লেডি ডাক্তার এক মুহূর্ততার কথার প্রতিক্রিয়া উপভোগ করলো, তারপর বলে গেলো, “প্রিয় ভদ্রমহোদয়গণ, আপনাদের মধ্যে একটা খারাপ বিবেচনার দেখা পাই। আমরা যখন জরুরী বিভাগ থেকে ফিরে আসছিলাম, আপনারা নার্সদের ছোট্ট কক্ষ এড়িয়ে গেলেন। এমনকী আপনারা এটা দেখার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করলেন না। কিন্তু তারা যখন এলিজাবেথকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিচ্ছিলো, আমি ভালো মতো দেখলাম। নাগালের মধ্যে একটা ছোট্ট পাত্র ছিলো। এলিজাবেথ নিজেই কফি তৈরী করছিলো এবং ঘুমে ঢলে পড়লো। পানি ফুটতে ফুটতে উথলে পড়লো এবং আগুন ধরে গেলো।”

কিন্তু উভয় ডাক্তারই লেডি  ডাক্তারের সাথে দ্রুত সেবিকাদের কর্মী-কক্ষে প্রবেশ করলেন এবং এখনো সামান্য জলসহ সত্যি সত্যিই চুলার উপর একটা পাত্র বসানো রয়েছে দেখতে পেলেন।

“কিন্তু সে নগ্ন হতে গেলো কেন?” বিস্মিত চিফ ডাক্তার বললেন।

“দেখুন,” নারী ডাক্তার কক্ষের সমস্তকোণ দেখিয়ে বললো: জানালার নীচে মেঝের উপর হালকা নীল রঙের এটা  পোশাক পড়ে আছে, উপরে সাদা ঔষধের বাক্সে ঝুলে আছে একটা কক্ষ বন্ধনী এবং বিপরীত কোণে মেঝের উপর এক জোড়া সাদা অন্তর্বাস পড়ে আছে।

“এলিজাবেথ বিভিন্নদিকে তার বস্ত্রাদি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছিলো, তা এই সাক্ষ্য দেয় যে সে অন্তত তার টিপটিজ্রের সমাপ্তি ঘটাতে চেয়েছিলো এমনকী যদিও কেবলমাত্র তা তার নিজের জন্যে। সতর্ক চিফ, আপনিই ট্রিপটিজ  থামিয়ে দিয়েছিলেন!

“নগ্ন অবস্থায় সে বোধ হয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। এটা তার সহ্য হয়নি কারণ সে রাতের জন্যে তার আশা ত্যাগ করেনি। সে জানতো যে আমরা সবাই চলে যাবো এবং শুধু হাভেলই একানে একা থাকবে। এজন্যেই সে জেগে থাকার বড়ি চেয়েছিলো। সে নিজের জন্যে কফি বানাতে চেয়েছিলো এবং চুলিøতে পাত্রটি উঠিয়েছিলো। আরো একবার সে তার শরীরটি চেয়ে দেখলো এবং এটা তাকে যৌন উত্তেজনায় উত্তেজিত করে ফেললো। প্রিয় ভদ্র মহোদয়গণ, আপনাদের সবার উপরে এলিজাবেথের একটা সুবিধা ছিলো। সে তার মুখমণ্ডল দেখতে পেতো না। সুতরাং নিজের কাছে সে ছিলো অনিন্দ্য সুন্দরী। এটা তাকে যৌন উত্তেজনায় উত্তেজিত করতো এবং সে কামুক রমণীর মতো কৌচের উপর শুয়ে থাকতো। কিন্তু  দেহের সুখ উপভোগ করার আগেই নিদ্রা দেবী তাকে বিভোর করে ফেলেছিলো।”

“নিশ্চয়ই.” হাভেল বললেন, “বিশেষ করে আমি যখন তাকে ঘুমের বড়ি দিলাম!”

“ঠিক আপনার মতোই,” লেডি ডাক্তার বললো, “তারপরেও কি আপনার কাছে কোন কিছু অস্পষ্ট মনে হয়?”

“মনে হয়.” হাভেল বললেন, “স্মরণ করুন, সে এই কথাগুলো বলেছিলো” আমি মরছি না! আমি জীবিত! অনাগত দিনের জন্য আমি জীবন্ত! তার শেষের কথাগুলো: তোমরা যদি কেবল জানতে! তোমরা কিছুই জান না। তোমরা কিচ্ছু জান না।”

“কিন্তু হাভেল,” লেডি ডাক্তার বললো, “আপনি জানতেন না যে এর শতকরা নিরানব্বই ভাগই বাজে কথা। আপনি কি কেবল কথা বলার খাতিরেই বেশীর ভাগ সময় নিজে কথা বলেন না?

ফুলের সৌরভে সুবাসিত গ্রীষ্মের রাত

ফ্লাজম্যান শেষ পর্যন্ত শরহতলীর রাস্তায় এসে পৌঁছাল যেখানে একটা বাগান ঘেরা বাড়িতে সে বাবা-মার সাথে বাস করতো। সে ফটক উন্মুক্ত করলো এবং একটা বেঞ্চের উপর বসলো যার উপরে তার মায়ের পরিচর্যাকৃত গোলাপশাখা লতিয়ে উঠেছিলো।

গ্রীষ্মের রাত ফুলের সুবাসে সুরভিত এবং “অপরাধী,” “আত্মভিমানী,” “প্রিয়তম,” “মৃত্যু” শব্দগুলো ফ্লাজম্যানের ভেতরে প্রতিধ্বনি তুললো এবং অনাবিল আনন্দে সে এমনই উচ্ছ্বোসিত হয়ে উঠলো যে, তার মনে হলো তার পিঠে পাখা গজিয়েছে।

প্রাথমিক বিপন্ন শোকের প্রচণ্ড আবেগে সে অনুভব করলো যে পূর্বে কখনোই সে এতোটা ভালোবাসা পায়নি। অবশ্য গুটিকয় রমণী তার প্রতি তাদের অনুরাগের কথ জানায়েছি কিন্তু এখন নিজের প্রতি তাকে আন্তরিকভাবে বিশ্বস্ত হতে হবে: এসব কি সর্বদাই ভালোবাসা ছিলো? কখনো কখনো সে কি মায়ার বিভ্রমে মজ্জমান হয়নি? সে কি কখনো বিষয়বস্তু নিয়ে নিজের সাথেই বকবক করেনি? প্রকৃতপক্ষে ক্লারা কি প্রেমোমত্ত হওয়ার চেয়েও অধিক স্বার্থের জন্যে হিসেবী হয়নি। যে এ্যাপার্টমেন্টটা ক্লারাকে পাইয়ে দেবার কথা তাকি তার নিজের চেয়ে বেশী গুরুত্ব পায়নি? এলিজাবেথের কর্মকান্ডের আলোয় সব বিবর্ণতায় হারিয়ে গেলো।

বাতাসে কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো ভেসে রইলো এবং ফ্লাজম্যান নিজেকে বোঝালো যে, ভালোবাসার একটাই মানদণ্ড আছে এবং তাহলো মৃত্যু। প্রকৃত প্রেমের পরিসমাপ্তি মৃত্যুতে এবং কেবল মৃত্যুতে যে প্রেমের পরিসমাপ্তি তাই নিখাঁদ প্রেম। রাতের বাতাসে ফুলের সুবাস এবং ফ্লাজম্যানের ভয় হলো: কেউ কি তাকে এই কদাকার রমণীর মতো ভালোবাসবে? কিন্তু ভালোবাসার সাথে সৌন্দর্য বা কুৎসিত সম্পর্ক কি? আবেগের মধ্যে বেঢপ মুর্খই বা কি বস্তু যার উদারতার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিফলিত?

(শ্রেষ্ঠত্ব? হ্যাঁ। এই যুবক যে অতি স¤প্রতি প্রাপ্ত বয়স্কদের জগতে প্রবেশ করেছে, যা অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। যাহোক সে মেয়েদের পিছে ঘুর ঘুর করতো, যারা তাকে নতুন আবিস্কৃত জগতের ভীতিকর আপেক্ষিককতা থেকে উদ্ধার করবে, সর্বোপরি সে সুখকর, বন্ধনহীন, উজ্জীবনী আলিঙ্গনের অনুসন্ধান করছিলো।)

লেডি ডাক্তারের প্রত্যাবর্তন

ডাঃ হাভেল হালকা উলের কম্বল গায়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে কৌচের উপর শুয়ে ছিলেন। যখন তিনি জানালায় মৃদু টোকা দেয়ার শব্দ শুনলেন। চাঁদের আলোয় তিনি লেডি ডাক্তারের মুখ দর্শন করলেন। দরোজা খুলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন: “কি ব্যাপার?”

“আমায় ভেতরে আসতে দিন!”লেডি ডাক্তার বললো এবং সে ভবনের প্রবেশ পথের দিকেই দ্রুত ছুটে গেলো।

হাভেন তার জামার বোতাম লাগালেন, একটা হাই তুললেন এবং কক্ষ ত্যাগ করলেন।

তিনি যখন প্যাভিলিয়নের দরোজা বন্ধ করলেন লেডি ডাক্তার বেশ নিরুদ্বিগ্নভাবে স্টাফরুমে দ্রুত প্রবেশ করলো। কেবল যখন সে হাভেলের বিপরীতে আরাম কেদারায় উপবিষ্ট হলো তখন সে বাসায় না যেতে পারার ফিরিস্তি দিতে শুরু করলো; কেবল এখনই সে স্বীকার করলো যে, সে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সে কতোখানি বিপর্যস্ত। সে ঘুমুতে পারবেনা এবং সে হাভেলকে তার সাথে খানিক্ষণ কথা বলতে অনুরোধ করলো, যাতে সে খানিকটা সুস্থির হতে পারে।

হাভেলের নৈতিকতা

“সেটা তোমার সুমতি, “হাভেল বললেন, “এটা বেশ ভালো, যে তুমি নিজেকে সমর্পন করতে চাও না, এবং তা তুমি আমাকে জানাতে এসেছ। আদপে আমি মৃত্যুর মতোনই। আমি কেবল এলিজাবেথকেই নয়, তোমাকেও গ্রহণ করবো না।”

“ওহ্!”লেডি ডাক্তার বলরেন।

“এর দ্বারা আমি এই বোঝাতে চাই না যে, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট নই। বরং তার বিপরীতটিই।”

“তা বেশ ভালো কথা,” লেডি ডাক্তার বললেন।

“হ্যাঁ, তোমার প্রতি আমি প্রবল আকর্ষণ বোধ করি।”

“তাহলে কেন আমায় গ্রহণ করবে না? কারণ আমি আপনার প্রতি মনোযোগ দেই না বলে?

“না, আমার মনে হয় না এর সাথে তার কোন সম্পর্ক আছে।” হাভেল বললেন।

“তবে কিসের সাথে?”

“তুমি চিফ ডাক্তারের মিস্ট্রেস।”

“তাতে কি?”

“চিফ ডাক্তার ঈর্ষাপরায়ণ। এটা তাকে আহত করবে।”

“আপনার কি কোন নৈতিক বাঁধা আছে?” একটা হাসি দিয়ে লেডি ডাক্তার বললেন।

“তুমি জান,” হাভেল বললেন, “মানুষের বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেখার জন্যে আমি বিপুল রমণীর সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক স্থাপন করেছি। এমন বন্ধুত্বের নিষ্কলঙ্কতা যা যৌনতার মূর্খামী হতে মুক্ত, একমাত্র মূল্য যা আমি জীবনে খুঁজে পেয়েছি।”

“আপনি কি চিফ ডাক্তারকে বন্ধু মনে করেন?”

লেডি ডাক্তারের বলা একটি কথাও হাভেল বিশ্বাস করলো না, এবং তিনি যথেষ্ট অভদ্রভাবে (অথবা অসচেতনভাবে) তাকে এটা বুঝতে দিলেন।

যার ফলে লেডি  ডাক্তার বললো: “আপনি নিশ্চয়ই আমাকে বিশ্বাস করছেন না, কারণ আপনার ধারণা আমি কেবল আপনার সাথে শুতে এসেছি।”

ডাক্তার অস্বীকৃতির ভাব দেখালেন কিন্তু লেডি ডাক্তার বলতে লাগলো: “আপনি একজন অহংকারী ডন জুয়ান। স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত রমণী, আপনার উপর যাদের চোখ পড়ে, এছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না।  বিরক্ত ও বিরাগভাজন হয়ে আপনি আপনার করুণ অভিযান শেষ করেন।”

হাভেল আরো একবার অস্বীকৃতির ভঙ্গী করলেন কিন্তু ‘লেডি ডাক্তার একটা সিগারেট ধরিয়ে নিরুদ্বিগ্নভাবে ধোয়া  ছাড়লো এবং বলে চললো: “ বেচারা ডন জুয়ান, চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে বিরক্ত করতে আসিনি। আপনি মোটেই মৃত্যুর মতো নন। সেটা কেবল আমাদের চিফ ডাক্তারের তুচ্ছ তামাশাকে বলা যায়। আপনি সবকিছু গ্রহণ করেন না কেননা সব রমণীই  নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমি সম্পূর্ণরূপে আপনার প্রভাবমুক্ত।

“আমাকে এটা বলাতেই কি তুমি এখানে এলে?”

“সম্ভবত। আমি এই বলে সান্ত্বনা দিতে এলাম যে আপনি মৃত্যুর মতো নন। মানে আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পন করতে চাই না।”

“তিনি আমার জন্যে অনেক করেছেন।”

“নিঃসন্দেহে আমার জন্যে বেশী কিছু করেননি।” লেডি ডাক্তার উত্তর দিলো।

“হতে পারে,” হাভেল বললেন, “কিন্তু এটা কৃতজ্ঞতার প্রশ্ন নয়। তিনি একজন বন্ধু, এই যথেষ্ট। তিনি একজন মহান লোক। এবং তিনি সত্যি তোমার প্রতি যত্নশীল। যদি তোমায় নিয়ে আমি খেলা শুরু করতাম, তবে নিজেকে আমি একটি প্রকৃত জারজ বিবেচনা করতাম।”

চিফ ডাক্তার সম্বন্ধে কুৎসা 

“আমি কখনো আশা করিনি,” লেডি ডাক্তার বললো, “বন্ধুত্বের প্রতি নিবেদিত এমন আন্তরিক গীতিকাব্য আপনার কাছে শুনবো! ডাক্তার আমার কাছে আপনি নিজের সম্পূর্ণ নতুন, অপ্রত্যাশিত ভাবমূর্তি উপস্থাপন করছেন। সমস্ত প্রত্যাশার বিপরীতে আপনার কেবল আবেগধারণ করার ক্ষমতাই নেই, বরং আপনি এটা অর্পন করছেন (এবং এটা স্পর্শ করা যায়) একজন বৃদ্ধ, টাক-মাথা, পাকা চুলওয়ালা ভদ্র লোককে, যিনি কিনা আবার তার ভাড়ামির জন্যে উল্লেখয্যোগ। আজ সন্ধ্যায় তাকে আপনি লক্ষ্য করেছেন? কি অব্যাহতভাবেই তিনি নিজেকে জাহির করে বেড়ান? কেউ বিশ্বাস করবে না এমন কিন্তু প্রমাণ করতে তিনি সর্বদাই চেষ্টা করছেন।

“প্রতমত তিনি প্রমাণ করতে চান যে তিনি জ্ঞানী। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন? তিনি অবিরাম মূঢ়ের মতো কথা বলেন; তিনি চিত্তবিনোদনের খোরাক যোগান; তিনি ডাক্তার হাভেলকে মৃত্যুর মতো আখ্যা দেন; তিনি সুখী দাম্পত্য জীবনের দোহাই দিয়ে আপাত বিরোধী সত্যের শিক্ষা উদ্ভাবন করেন (যেন আমি এটা পনেরতম বারের জন্য শুনছিনা); তিনি ফ্লাজম্যানকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে দুঃখ দিয়েছেন (যেন তা করতে তাচ্ছিল্যের দরকার হতো!)।

“দ্বিতীয়ত, তিনি ফলাও করতে চেষ্টা করেন যে, তিনি একজন বন্ধুসুভল মানুষ। কিন্তু বাস্তবে মাথায় চুল আছে এমন কাউকেই তিনি নিশ্চিতভাবেই পছন্দ করেন না কিন্তু একারণেই তিনি জটিল পথে চলেন। তিনি আপনাকে তোষামোদ করেন, তিনি আমাকে তোষামোদ করেন, তিনি পিতার মতো এলিজাবেথের প্রতি সদয় ছিলেন, এবং তিনি এতোটা সচেতনভাবে ফ্লাজম্যানের সাথে ছেলে খেলা খেলেছেন যে, সে এটা ধরতেই পারেননি।

“তৃতীয়ত, এটাই মূখ্য বিষয়, তিনি নিজেকে টেক্কা প্রমাণ করতে চান। তিনি তার প্রাক্তন চেহারার আড়ালে বর্তমান চেহারা লুকিয়ে রাখতে চান। দুর্ভাগ্যবশত এর আর কোন অস্তিত্ব নেই এবং আমাদের কেউ এটা স্মরণ করেনা। আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করে যা কবেন, সেই ছেনাল মাগী যে কিনা আবার ওকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো, তার প্রসঙ্গে সুন্দর অবতারণা করে তিনি তার যৌবন, অপ্রতিরোধ্য সুখ দেখিয়েছিলেন এবং তার এ করুণ টাক মাথার কথা আদেরকে ভুলিয়ে রেখেছিলেন।

চিফ ডাক্তারের কাছে সমর্পন

“ডাক্তার তুমি যা বল তা যথেষ্টই সত্য,” হাভেল বললেন, “তারপরও চিফ ডাক্তারকে পছন্দ করার জন্যে আমার সংগত কারণ রয়ে যায় কারণ তোমার সন্দেহের চেয়ে এসবই আমার কাছে বেশী বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। যা থেকে আমি রেহাই পাবো না সেই টাক মাথা নিয়ে কেন আমি তামাশা করতে যাবো? নিজেকে ফুটিয়ে তোলার চিফ ডাক্তারের আন্তরিক চেষ্টাকে আমি কেন তামাশা করতে যাবো?

“একজন বয়স্ক মানুষ হয়তো এই ঘটনার ব্যবহার করবে যে তিনি যা তিনি তাই, তার প্রাক্তন অবস্থার শোচনীয় ধ্বংসাবশেষ অথবা তা নয়। কিন্তু তিনি যদি তা না করতে পারেন তবে তার কি করা উচিত? তা না হলে তিনি যা নন তার অভিনয় করা ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকে না। এই কঠিন অভিনয় দ্বারা, তিনি যে আর বেশীদিন নেই সব হারিয়ে গেছে- এমন ধারণার শ্রান্তি-নিবেদন করা ছাড়া তার আর করার কিছুই নেই: উদ্ভাবন করা, অভিনয় করা এবং স্ফুর্তি প্রাণোচ্ছলতা, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রহসনমূলক অভিনয় করা; তার যৌবন সুলভ আচরণের প্রকাশ করা এবং তার যে পরিণতি হয়েছে তার স্থানান্তর করা। চিফ ডাক্তারের অভিনয়ের মধ্যে আমি নিজেকে, আমার ভবিষ্যৎকে দেখতে পাই, যদি নিশ্চিতভাবেই পদত্যাগ করতে আহ্বন করার মতো আমার যথেষ্ট শক্তি থাকে, যা এই হীন অভিনয়ের চেয়ে জঘন্য শয়তানী।

“হতে পারে তুমি, চিফ ডাক্তারকে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করছো। কিন্তু তারপরও আমি তাকে বেশ পছন্দ করি এবং আমার তরফ থেকে তাকে দুঃখ দেয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই, তার মানে তোমার সাথে কোন কিছু করা আমার পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।”

লেডি ডাক্তারের জবাব
“প্রিয় ডাক্তার,” লেডি ডাক্তার জবাব দিলো, “আপনার ধারনার চেয়েও ক্ষুদ্রতর তফাৎ আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। আমিও তাকে পছন্দ করি। আমিও আপনার মতোই তার জন্য করুণা বোধ করি। আপনার চেয়ে তার প্রতিই আমি বেশী কৃতজ্ঞ। তার সাহায্য ছাড়া আমি এমন ভালে অবস্থানে আসতে পারতাম না। (যেভাবেই হোক আপনি এটা জানেন, সবারই এটা ভালো জানা আছে।) আপনার কি ধারণা আমি তার নাকের দড়ি দিয়ে ঘুরাই। আমি তাকে প্রবঞ্চনা করি? আমার আরও প্রেমিক পুরুষ রয়েছে? কিসের স্বার্থে তারা এটা তাকে অবহিত করবে! আমি তাকে কিম্বা নিজেকে আহত করতে চাই না, এবং সে কারণেই আমি আপনার কল্পনার চেয়েও তার কাছে বাঁধা পড়ে গেছি। কিন্তু আমি এই ভেবে আনন্দিত যে এখন আমরা দুজন একে অপরকে বুঝি। কারণ আপনিই সেই লোক যার জন্য চিফ ডাক্তারের সাথে অবিশ্বস্ত হওয়া যায়। আপনি প্রকৃতই তাকে বেশ পছন্দ করেন এবং তাকে কখনো আঘাত দেবেন না। আপনি বিবেকবান পরিণামদর্শী হয়ে থাকবেন। আমি আপনার উপর নির্ভর করতে পারি। আমি আপনার সাথে বিছানায় যেতে পারি....” এবং সে হাভেলের হাঁটুতে উপবিষ্ট হলো এবং তার পোশাক খুলতে শুরু করলো।

হাভেল কি করলেন

আন্দাজ করুন...      

উদার ভাবাবেগের আবর্তে 

রাতের পর সকাল হলো এবং ফ্লাজম্যান পেছনের বাগানে কিছু গোলাপ ফুল তুলতে গেলো। তারপর রাস্তায় গাড়ি ধরে সে হাসপাতালে গেলো।

এলিজাবেথ জরুরী বিভাগের একটা একটা ব্যক্তিগত কক্ষে ছিলো। ফ্লাজম্যান তার বিছানার পাশে বসলো, এবং গোলাপগুলো রাতের টেবিলে রাখলো এবং তার হাত ধরে নাড়ী দেখলো।

“এখন  তুমি কি ভালো বোধ করছ?” সে জিজ্ঞেস করলো।

“হ্যাঁ”, এলিজাবেথ বললো।

এবং ফ্লাজম্যান আন্তরিকভাবে বললো, “এমন বোকামী করা তোমার উচিত হয়নি, মেয়ে।”

“তুমি ঠিক বলেছে,” এলিজাবেথ বললো, “কিন্তু আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমি কফির জল তুলে দিয়েছিলাম এবং নির্বোধের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”

ফ্লাজম্যান বসে এক দৃষ্টিতে এলিজাবেথের দিকে তাকিয়ে রইলো কারণ এমন উদারত সে আশর করেনি: কারণ এলিজাবেথ তাকে অনুশোচনায় জর্জরিত করতে চায়নি, সে তাকে তার ভালোবাসার বন্ধনে জড়াতে চায়নি এবং সে তাকে পরিত্যাগ করছিলো!

সে তার মুখে হাত দিয়ে আদর করলো এবং আবেগতাড়িত হয়ে সে তাকে কোমল স্বরে বললো: “আমি সব জানি। তোমার মিথ্যা বলার দরকার নেই। কিন্তু সে মিথ্যার জন্যে তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।”

সে উপলব্ধি করলো যে এমন নির্মলতা, অনুরাগ ও বিবেচনাবোধ আর কোন রমণীর মধ্যে সে খুঁজে পাবে না এবং এই বেপরোয়া যোগ্যতার কাছে আত্ম সমর্পন করার এক দুর্দমনীয় আকাংকা এবং তাকে তার স্ত্রী হবার প্রস্তাব দেবার ইচ্ছা তাকে অধিকার করে ফেললো। যা হোক শেষ পযন্ত সে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হলো (বিয়ের প্রস্তাব দেবার অনেক সময় পাওয়া যাবে), সে শুধু এই বললো : “এলিজাবেথ, এলিজাবেথ, প্রিয়তমা। তোমার জন্যে আমি এই গোলাপগুলি এনেছি।”

এলিজাবেথ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এবং বললো: “আমার জন্যে?”

“হ্যাঁ, তোমার জন্যে। এখানে তোমার সাথে থাকতে পেরে আমি সুখী কারণ আমি এই ভেবে সুখী এলিজাবেথ যে তুমি দিব্যি বেঁচে আছো। সম্ভবত আমি তোমাকে ভালোবাসি। সম্ভবত আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু সম্ভবত ঠিক এই কারণেই যদি আমরা যেমনটি আছি তেমনটি থাকতে পারি তবে বেশ হবে। আমার ধারণা একজন নারী ও একজন পুরুষ একে অপরকে তখনই সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে যখন তারা একসঙ্গে বাস করেনা এবং তারা তারা শুধু এইটুক জানে যে, তারা বেঁচে আছে এবং এই বেঁচে থাকার জন্যে যখন তারা একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং তারা জানে যে তাদের অস্তিত্ববিদ্যমান।একমাত্র সেটাই তাদের সুখের জন্যে যথেষ্ট। এলিজাবেথ, তুমি বেঁচে থাকার জন্যে আমি তোমায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি।”

এলিজাবেথ এসব কথার কিছুই বুঝতে পারলো না কিন্তু অস্পষ্ট সুখ ও অনির্দিষ্ট আশায় পূর্ণ একটা নির্বোধ, পরম সুখের হাসি তার মুখে ছড়িয়ে রইলো।

তারপর ফ্লাজম্যান উঠে দাড়ালো, এলিবাবেথের কাঁধে মৃদুচাপ দিলো (একটা পরিণামদর্শী, আত্ম-সংযমী ভালোবাসর চিহ্ন হিসেবে), ঘুরে দাড়ালো এবং প্রস্থান করলো।

সব কিছুতেই অনিশ্চয়তা

“আমাদের সুন্দরী সহকর্মী যাকে আজ ভীষণ যৌবনোজ্জল মনে হচ্ছে সম্ভবত ঘটনাবলীর সবচেয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছি, চিফ ডাক্তার লেডি ডাক্তার ও হাভেলকে বললেন, যখন তাদের তিন জনের কমন ওয়ার্ডে সাক্ষাত হলো। “এলিজাবেথ কফি তৈরী করছিলো এবং ঘুমিয়ে পড়েছিলো। নিদেনপক্ষে সেটাই সে দাবী করে।”

আপনারা বোঝেন,” নারী ডাক্তার বললো।

“আমি কিছুই বুঝি না,” চিফ ডাক্তার বাঁধা দিলেন।

“আসলে কেউ জানেনা এটা প্রকৃতপক্ষে কিভাবে ঘটেছিলো। পাত্রটাইতো নাগালের মধ্যেই থাকার কথা। এলিজাবেথ যদি নিজেই গ্যাস ছাড়তে যাবে সে কেন পাত্র সরাতে গেলো?”

“কিন্তু এভাবেই সে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে!” লেডি ডাক্তার যু্ক্তি দেখালো। 

“তার নৃত্য পরিবেশন ও আমাদের ভীতিপ্রদর্শনের পর তার পাত্রের দোষ দেয়াটাতে আশ্চর্য হবার মতো কিছুই নেই। ভুলে গেলে চলবে না যে এদেশে আত্মহত্যার চেষ্টাকারীকে চিকিৎসার জন্যে অপরাধীদের আশ্রয় কেন্দ্রের পাঠানো হয়। কেউ সেখানে যেতে চায় না।”   

“চিফ, আপনি আত্মহত্যার কাহিনী পছন্দ করেন?” লেডি ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলো।

“একবার হাভেলকে অনুশোচনায় পুড়তে দেখতে চাই।” হাসতে হাসতে চিফ ডাক্তার বললেন।

হাভেলের অনুশোচনা

চিফ ডাক্তারের তিরস্কার সুলভ তুচ্ছ কথা বার্তায় হাভেলের ভণ্ড সাধুত্বগিরির কথা শুনে, যাদ্বারা স্বর্গলোক তাকে সুস্থভাবে মৃদুভর্ৎসনা করছিলো এবং তিনি বলনে: “চিফ ডাক্তারের কথাই ঠিক। এটা মূলত আত্মহত্যা প্রচেষ্টা ছিলো না, কিন্তু তা হতে পারতো। অধিকন্তু, যদি আমাকে অকপটভাবে বলতে হয়, এতে আমি এলিজাবেথের দোষ দেবো না। আমাকে বলুন, নৈতিক দিক থেকে অনাহত হয়ে যে পরিস্থিতি আমাদেরকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে তার কি মূল্য থাকতে পারে। প্রেম? অথবা বন্ধুত্ব? আমি এব ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে বন্ধুত্ব প্রেমের চেয়ে একটুও কম খামখেয়ালীপূর্ণ নয়, এবং এর উপর কোন কিছুর নির্মাণ অসম্ভব। আত্ম-প্রেম? আহা আমার বেলায় এটা যদি সম্ভব হতো,” হাভেল এবার বেশ উত্তেজিতভাবে বললেন এবং এটা অনুশোচনার মতো শুনালো। “কিন্তু চিফ, আপনার কাছে প্রতিজ্ঞা করে বলছি আমি নিজেকে মোটেই পছন্দ করি না।”

“প্রিয় ভদ্রমহোদয়গণ,” মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে লেডি ডাক্তার বললো, “এটা যদি আপনাদের জন্যে পৃথিবীকে সুন্দর করে এবং আপনাদের আত্মাকে রক্ষা করে, তবে অনুগ্রহপূর্বক কবুল করুন যে, এলিজাবেথ সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো। কি রাজী?”

সুন্দর সমাপ্তি

“ননসেন্স” চিফ ডাক্তার বললেন” এখন থামুন ডাক্তার হাভেল,  বকবক করে এই সুন্দর সকালটা মাটি করবেন না।আমি আপনার চেয়ে পনের বছরের বড়ো।আমার সুখী বিবাহিত জীবনের জন্য এবং যার জন্য ডিভোর্স নিতে পারি না  আমি একজন অসুখি মানুষ।আমার অসুখি প্রেম এই কারণে যে যাকে আমি ভালোবাসি দূর্ভাগ্যজনকভাবে সে হলো এই লেডি ডাক্তার।তারপরও সকলের মতো আমিও বেঁচে থাকতে ভালোবাসি।”

” ঠিক বলেছেন, ঠিক বলেছেন”, অস্বাভাবিক নম্রতায় চিফ ডাক্তারের হাত চেপে ধরে লেডি ডাক্তার বললো। “আমিও বেঁচে থাকতে ভালোবাসি”

এ মুহূর্তে তিন ডাক্তারের কাছে ফ্লাজম্যান এসে উপস্থিত হলো এবং বললো : “আমি এলিজাবেথের দেখাশোনা করছি। সে এক আশ্চর্য সম্মানীয় রমণী। সে সব কিছু অস্বীকার করলো। সে নিজের উপর বিরক্ত হয়েই এটা করেছে।

“তুমি দেখাশুনা কর,” হাসতে হাসতে চিফ ডাক্তার বলরেন, “এখানে হাভেল আমাদের সবাইকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করছে।”

“নিশ্চয়ই,” লেডি ডাক্তার বললো। সে জানালার ধারে গেলো। “আবার শুভ দিনের সূচনা হবে। আকাশ নীল। এ ব্যাপারে তোমরা কি মন্তব্য, প্রিয় ফ্লাজম্যান?” 

মাত্র এক মুহূর্ত আগেই ফ্লাজম্যান তার ধূর্তামির জন্যে নিজেকে তিরস্কার করছিলো যখন এক গুচ্ছ গোলাপ ও কিছু মন ভোলানো কথার দ্বারা সবকিছু সে প্রায় স্থির করে ফেলেছিলো কিন্তু এ মুহূর্তে তার মনে হলো সে তড়িঘড়ি কোন কিছু না করে ভালো করেছে। সে লেডি ডাক্তারের সংকেত শুনলো এবং নির্ভুলবাবে বুঝতে পারলো। প্রণয়ের সুতা গতকাল যেখানে ছিন্ন হয়েছিলো যখন গ্যাসের গন্ধে লেডি ডাক্তারের সাথে অভিসার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিলো আবার তার ভেতরেও পুনর্বয়ান চলছিলো এমনকী ঈর্ষাপরায়ণ চিফ ডাক্তারের সামনেও লেডি ডাক্তারের প্রতি সে মৃদু হাসি না ছড়িয়ে পারলো না।

সুতরাং গতকাল গল্পের যেখানে যবনিকাপাত হয়েছিলো সেখানে থেকেই আবার শুরু হলো কিন্তু ফ্লাজম্যানের মনে হলো সে বেশ প্রাপ্ত বয়স্ক ও শক্তিমান পুরুষ হিসেবে পুনরায় এর ভেতরে প্রবেশ করছে। সে বুঝতে পেরেছে যে, ভালোবাসা মৃত্যুর মতোই মহান। তার বুক স্ফিত হয় এবং এটাই তার জীবনে লাভ করা সবচেয়ে সুন্দর ও শক্তিমান স্ফিতি। সুখকরভাবে যা তাকে সবচেয়ে বেশী গর্বিত করছে তা হলো মৃত্যু: যে মৃত্যু তাকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে; চমৎকার এবং আরামদায়ক মৃত্যু।


আরো পড়ুন-
শূন্যে ভাসা

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকারের সব সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ: সেনাপ্রধান
সরকারের সব সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ: সেনাপ্রধান
মহিলা সমিতি মঞ্চে ‘অভিনেতা’ ও ‘টিনের তলোয়ার’
মহিলা সমিতি মঞ্চে ‘অভিনেতা’ ও ‘টিনের তলোয়ার’
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরদার করলো ইইউ
ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরদার করলো ইইউ
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ.লীগের, আছে শাস্তির বার্তাও
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ.লীগের, আছে শাস্তির বার্তাও
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট