X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুরাকামির নতুন উপন্যাস কিলিং কমেন্ডাটোর

দিলওয়ার হাসান
৩০ জুলাই ২০১৭, ১২:২০আপডেট : ৩০ জুলাই ২০১৭, ১২:৪৯

মুরাকামির নতুন উপন্যাস কিলিং কমেন্ডাটোর

জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির নতুন উপন্যাস ‘কিলিং কমেন্ডাটোর’ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে। দুই খণ্ডের এই উপন্যাসের জাপানি নাম ‘কিশি ডানচো গোরাশি’। এ উপন্যাসে মুরাকামি তার চিরাচরিত উত্তম পুরুষের বর্ণনা রীতিতে ফিরে এসেছেন।    

সম্প্রতি জাপানি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মুরাকামি বলেছেন, “গোড়ার দিকে সব সময়ই আমি উত্তম পুরুষের বর্ণনা রীতি অনুসরণ করতাম, পরে ধীরে ধীরে প্রথম পুরুষ রীতিতে ফিরে যাই। ‘ওয়ান কিউ এইট্টি ফোর’ উপন্যসটি এ রীতিতেই লেখা। তখন থেকেই আমি আবার উত্তম পুরুষের বর্ণনা রীতিতে ফিরে যাবার তাগিদ অনুভব করি। উৎসে ফিরে যাওয়ার তীব্র একটা বাসনা আমার ভেতর ছিল। বইটি লেখার আগেই নামটি আমার মাথায় আসে। শব্দটির বিশিষ্টতা ও বৈচিত্র্য আমাকে টেনেছিল। প্রথমে নামটি আমি পাই, তারপর আসে স্থান অর্থাৎ ঘটনাস্থল যা কিনা ছিল কানাগাওয়া ওদাওয়ারা শহরের একটি পাহাড়ের চূড়া।”

প্রধান চরিত্র একজন চিত্রকর, যিনি সাধারণত পোট্রেট আঁকেন।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্রটির বয়স ৩৬। স্ত্রী তাকে হঠাৎ করে তালাক দিলে তিনি টোকিও শহর ছেড়ে হোক্কাইডো ও তোহোকুতে এলাকায় চলে যান আর পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটা বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। পোট্রেট আঁকা বাদ দিয়ে এবার তিনি নিজের আনন্দের জন্যে কিছু একটা আঁকতে চান। একান্ত শিল্পীতভাবে প্রকাশ করতে চান নিজেকে। যে-বাড়িতে থাকেন সেটার মালিক তারই কলেজ জীবনের বন্ধু মাহাহিকোর বাবা স্বনামধন্য শিল্পী তোমাহিকো আমাদা।

প্রধান চরিত্র সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকেন রং তুলি আর ক্যানভাস নিয়ে। বাকি সময় রান্না করে, বই পড়ে কিংবা ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীত শুনে কাটিয়ে দেন। বন্ধু প্রধান চরিত্রটিকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘সাবধান থেকো। বাবার উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে পড়ো না; তিনি কিন্তু খুব শক্ত মনের মানুষ।’

তারপর কাহিনি আবর্তিত হয় মুরাকামির নিজস্ব রচনাভঙ্গিতে যখন প্রধান চরিত্র বাড়ির চিলেকোঠায় খুঁজে পান আমাদার আঁকা ছবি ‘কিলিং কমেন্ডাটোর’। আমাদা জাপানের চিরাচরিত ধারার শিল্পী হলেও তার ওই চিত্রে আসুকা (৫৫২-৬৪৫ খৃঃ) যুগের ভয়ংকর এক হত্যাকাণ্ড রূপায়িত হয়েছে; প্রধান চরিত্র যার সঙ্গে মোৎসার্টের ‘দোন জোভান্নির’ একটি দৃশ্যের সাজু্য্য খুঁজে পান।

কেমন করে চিত্রটি পৃথিবীতে পরিবর্তনের সূচনা করে তা প্রধান চরিত্রের কাছে পরিষ্কার না হলেও তিনি অচিরেই রহস্যজনক রকম বিত্তশালী ব্যবসায়ী ওয়াতারু মেনশিকির একটা পোট্রেট আঁকার জন্যে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ওয়াতারু আমাদার বাড়ির পাশের উপত্যকায় একটা সুরম্য অট্টালিকায় বসবাস করেন।

রাতের মধ্যভাগে প্রধান চরিত্র একটা ঘণ্টা ধ্বনি শুনে সচকিত হয়ে ওঠেন আর তার উৎস খুঁজে বেরাতে থাকেন। খুঁজতে খুঁজতে তিনি মাটিতে কূপের মতো একটা গর্তের সন্ধান লাভ করেন। মেনশিকির সহযোগিতায় তিনি গর্তমুখ উম্মোচন করতে সক্ষম হন এবং সেখানে একটা পুরনো ঘণ্টা খুঁজে পান যেটা দেখতে বৌদ্ধ বেদির মতো পেইন্টিং-এ বিধৃত কমেন্ডাটোর এর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। ওই ঘণ্টাকে কেন্দ্র করেই গল্পটি আবর্তিত হয় যা কিনা ইদো আমলের ঔপন্যাসিক ইউয়েদা আকিনারির ছোটগল্প ‘নিশি নো ইনিশি’ অবলম্বনে রচিত।

এ প্রসঙ্গে মুরাকামি বলেছেন, ‘ক্ল্যাসিক তখনই মূল্যবান যখন তা থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হয় আর রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আমি যথেষ্ট রেফারেন্স টেনেছি, যার কারণে এটি একটা মজার ব্যাপারে দাঁড়িয়ে গেছে। বিশিষ্ট আখ্যানগুলোর ‘সাহিত্য ভাণ্ডার’ হিসেবে একটা ক্ষমতা থাকে, আর যখন তার রেফারেন্স টানা হয় তা আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করার পর প্রধান চরিত্র আবার তার জীবন শুরু করে আর নিজের সন্তানদের লালন পালন করতে থাকে। তার স্ত্রী আবারও অন্তঃসত্তা হয়।

উপন্যাসের শেষে কাহিনি ২০১১ সালে পূর্ব জাপানে সংঘটিত ভূমিকম্পের ঘটনার কয়েক বছর আগে এসে থমকে দাঁড়ায়, যখন প্রধান চরিত্র ভাবতে থাকে সে কী করে এখন তার জীবন যাপন করবে। যে অপরিসীম ক্ষতি তার জীবনে সাধিত হয়েছিল আখ্যানের শেষে তা পূরণ হয়েছে এবং সে এক নতুন জীবন লাভ করেছে। মুরাকামি বলেছেন, ‘আমার উপন্যাসগুলো মীমাংসাহীন কিংবা অধিকাংশই সম্পূর্ণ উম্মুক্ত। কিন্তু এই বার আমি পরিসমাপ্তির একটা অনুভূতির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। আমার কাছে সত্যি ব্যাপারটা হচ্ছে প্রধান চরিত্র শেষে তার বাচ্চাকে নিয়ে বেঁচে থাকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একটা নতুন ধরনের পরিসমাপ্তির বার্তা দিচ্ছে।

এই পরিবর্তনের মূলে আছে ২০১৫ সালে মুরাকামির দীর্ঘ ভ্রমণ যেখানে তিনি ফুকুশিমা উপকূল থেকে মিয়াগি জেলা অবধি গিয়েছিলেন। মার্চ ২০১১ এর সুনামি ও ভূমিকম্পে এলাকাটি মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

মুরাকামির ভাষায়, ‘এটা দারুন গুরুত্বপূর্ণ একটা অভিজ্ঞতা। এর সঙ্গে নতুন করে শুরু করবার যে ধারণা তার সম্পর্ক আছে। আমার অনুভবে এসেছে যে, আমাকে নতুন জিনিস সৃষ্টি করতে হবে। বয়সের কারণেই ভাবতে হচ্ছে- সবকিছু দায়িত্বের সঙ্গে করা উচিত। আমার বিশ্বাস তোহোকু অঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী তাণ্ডব সংঘটিত হয়েছে তা জাপানি জনসাধারণের মনোজগতে এক বিপুল ক্ষতের চিহ্ন রেখে গেছে।’

একইসঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালিন মহা হত্যাকাণ্ড (দ্য হলোকাস্ট) আর চীনের নানকিং হত্যাকাণ্ড মানুষের মনে যে ক্ষতচিহ্ন তৈরি করেছে ‘কিলিং কমেন্ডাটোর’ শিল্পকর্মটির ওপর তার প্রভাব স্পষ্ট। এই ঐতিহাসিক ঘটনার রেফারেন্স টানার পেছনে মুরাকামির কী অভিপ্রায় ছিল? মুরাকামি নিজে বলেছেন, ‘ইতিহাস হচ্ছে কোনো জাতির যৌথ স্মৃতি।’ আমার মনে হয় অতীত ভুলে যাওয়া কিংবা অন্য কিছুর সঙ্গে তা প্রতিস্থাপন করা একটা বড় ধরনের ভুল। ঐতিহাসিক সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে আমাদের।

‘ঔপন্যাসিকের ক্ষমতা সীমিত, তারা কতটা করতে পারে? তবে গল্প বলার মাধ্যমে তাদের পক্ষে ওসবের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।’

সূত্র : দ্য মাইনিচি, জাপান।

সম্পর্কিত
ভুটানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
২৫০ শিশু লিখলো ‘আমাদের জাতির পিতা, আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা’
সর্বশেষ খবর
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা