X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
উড়িষ্যার লোককথা : পর্ব- ৪

সাতবোন

অনুবাদক : দিদার মুহাম্মদ
০৩ আগস্ট ২০১৭, ০৯:৪৫আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৭, ১২:০৭

সাতবোন

বহুকাল আগের কথা। তখন সমর পাধান নামে এক যুবক ছিল। একদিন সে দুটো বুড়োলোককে সাথে করে এক উৎসব শেষে পাশের গ্রাম থেকে বাড়ি ফির ছিল। বুড়ো দুটো ছিল বেধরক মাতাল। এতটাই মাতাল যে ঠিকঠাক পা-ই ফেলতে পারছিল না, যেন শুয়ে-বসে হাঁটছে। যুবক সমরের এই মাতাল বুড়োদের সাথে রয়ে-সয়ে হাঁটা আর সহ্য হচ্ছিল না। তাই সে তার মতো হাঁটে বনের রাস্তা ধরলো। গ্রামে ফিরতে হলে এই বনের পথ মাড়িয়েই তাদের যেতে হয়। এদিকে অনেক রাত গড়িয়ে গেছে।

বনের পথে এখন ঘন অন্ধকার। খানেকক্ষণ হাঁটার পর হঠাৎ যেন বন কেঁপে উঠলো। যেন এক প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিশাল এক ঘূর্ণিবাউয়ের মত পাকের ভেরত থেকে এক পূর্ণবয়স্কা সুন্দরী রমণী এসে তার পথ আগলে দাঁড়ালো। সমর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। হতবুদ্ধ সমর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। বারবার চোখ রগড়ে নিজের বিভ্রম কাটানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু যা ঘটছিল তা ছিল বাস্তব। 

সমরের যখন ঘোর কাটলো তখন দৈবরমণী তাকে বললো, ‘প্রভু! আমার জন্য একটু দয়া করুন।’ সমর বললো, ‘কী করতে হবে আমাকে?’ রমণী এক কন্যাশিশুর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললো, ‘ঐ যে দেখুন, আমার শিশুকন্যা।’ সমর দেখলো এক পরিচ্ছন্ন শালপাতার উপর ঘুমিয়ে আছে এক কন্যাশিশু। দৈবরমণী শিশুকন্যার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো, ‘সে গুটিবসন্তে আক্রান্ত। আপনি যদি তাকে সামান্য মন্ত্রপূত করে তার মুখে হাত বুলান তাহলেই তার আরোগ্য লাভ সম্ভব।’

সমর ভেবেই পেলো না কিভাবে এই গভীর অরণ্যে একটি কন্যাশিশু আসবে! আর এই পূর্ণবয়স্কা রমণীকেও তার মায়ের মতো মনে হচ্ছিল না। সে রাতের শেষপ্রহরের জ্বলজ্বলে শুকতারাটার মতো জ্বলজ্বল করছিল। সমর ভাবলো, সে নিশ্চিত কোন অপচ্ছায়ার কবলে পড়েছে। তার বুক প্রচণ্ড ধরফর করতে লাগলো। বুকে বার কয়েক থুতু নিয়ে সে নিজেকে সাহস যুগিয়ে বললো, ‘না, না, আমি মন্ত্রটন্ত্র জানি না। আর না আমি কোন যাদুটোনার সাথে জড়িত। মাফ কর ভাই, আমার পথ ছেড়ে দাও। আমি যাই।’

সমর জানে, যারা যাদুটোনা করে তাদেরকে কেউ ভালো চোখে দেখে না। বিশেষত কেউ কোন রোগে মারা গেলে লোকে কেবল ঐ যাদুকারকেই দোষ দেয়। আর সবসময় তার সামনে সবাই তাকে হুজুর হুজুর করলেও পেছনে দুর্নাম করে, চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ে। আর এই দৈবরমণীকে পাশ কাটিয়ে কোন মতে বনটা পেরুতে পারলেই হয়! যাই হোক, কোনমতে সে তো এই জায়গা ত্যাগ করতে পারলো। কিন্তু খানেক দূর যাবার পর আবার এক সুন্দরী দৈবরমণীর কবলে পড়লো। সে সমরকে দেখেই বলো, ‘দয়া করুন প্রভু! আমার শিশুকন্যাকে বাঁচিয়ে দিন।’ 

সমর দেখলো সেই একই শিশুকন্যা শালপাতায় শায়িত। শিশুটি গুটিবসন্তে আক্রান্ত। সমর কোন মতে তার থেকে পালাবার চেষ্টা করলো। কিন্তু দৈবরমণী বললো, ‘প্রভু কেবল যদি আপনি আমার শিশুকন্যার মুখে হাত বুলিয়ে দেন কন্যা আমার সেরে উঠবে। এতে কি আপনার খুব ক্ষতি হবে, বলুন?’

সমর মুখ ঘুরিয়ে বললো, ‘আমি যাদুটোনা জানি না। আমি কোন মন্ত্রও জানি না। অন্য কারো কাছে যাও বাবা, যে যাদুটোনা জানে! আমি কোন সাহায্য করতে পারবো না।’ এই বলে সমর ঘাড়কাত করে নিজের পথে হাঁটতে আরম্ভ করলো। সে চোখ বড় করে আড়চোখে ঘুরে আবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো দৈবরমণী কি তার পিছু নেয় কিনা। তার পিলে চমকে গেলো। না, কেউ নেই। দৈবরমণী উধাও! উপরন্তু ঐ মাতাল বুড়ো দুটোও আশেপাশে নেই। বড় মসিবতে পড়া গেলো। এই চক্র থেকে কি আজ বেড়ুনো যাবে? নাকি এভাবেই অশুভচক্রে তার জীবনলীলা সাঙ্গ হবে! সবকিছু গুলিয়ে গেছে। কেমন যেন ভৌতিক! গা ছম ছম করছে তার। শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। তার পা যেন হাজার মন ভারি হয়ে গেছে। সে না পারছে এক পা আগাতে আর না পারছে পিছুতে। আর এই বনের মধ্যেও থাকা সম্ভব না। ভূত নাকি পেছন দিয়ে হাঁটে! কিন্তু সমরকে যে আগাতেই হবে। সমর হাঁটতে শুরু করল। আর একইভাবে তার সামনে পরপর মোট সাত-সাতজন সুন্দরী দৈবরমণী একই শিশুকন্যা নিয়ে দেখা দিলো আর মিনতি করে তাদের অসুস্থ্য শিশুকন্যার আরোগ্যের প্রার্থনা করলো। তবে এই সপ্তম দৈবরমণী শেষমেষ বললো, ‘প্রভু! আমার মতো আরো ছয়জন রমণী আপনার কাছে মিনতি করেছে এই শিশুকন্যার জীবন বাঁচানোর জন্য। আপনি কোন গুরুত্বই দেননি। আমরা সাত বোন। আমরা আপনার কাছে মিনতি করেছি কারণ একমাত্র আপনিই পারেন শিশুকন্যাটিকে বাঁচাতে। কেননা, আপনি এক মহাপবিত্র সময়ে জন্মে ছিলেন। কেউ এই গুটিবসন্ত আরোগ্যের মন্ত্রটি জানে না। যদি আপনি মন্ত্রটি শিখেন তাহলে অন্যকেও শেখাতে পারেন। অন্যথায়, মানুষ এই রোগে মরে শেষ হয়ে যাবে। আমাদের থেকে মন্ত্রটি শিখে নিন। আর সবাইকে আরোগ্য করুন। সাথে এই বরও দিচ্ছি, কেবল আপনি নিজের জন্য যা প্রার্থনা করবেন তা পাবেন, এই প্রার্থনা কেবল নিজের জন্যই করবেন অন্য কারো জন্য নয়।’

এবার সমর ভাবলো ইতোমধ্যে সাত-সাতজন রমণী তার কাছে আর্জি করেছে। আসলেই তো! কী এমন ক্ষতি হবে এই মন্ত্র শিখলে? বরং সে গুটিবসন্ত আক্রান্তদের আরোগ্য করতে পারবে, বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে। আর যদি সে এই মন্ত্রের অপব্যবহার করে কারো ক্ষতি করে বা হত্যা করে তবেই তার উপর দোষ পড়বে, নচেৎ নয়! এবার সে রাজি হলো। সে বললো, ‘আচ্ছা, কোথায় তোমার বোনেরা? আর সত্যিই কী তোমাদের শিশুকন্যা গুটিবসন্তে আক্রান্ত?’

দৈবরমণী বললো, ‘আমরা সাতবোন। আমরা কোন মানুষ নই। আমরা দেবী। আর এই শিশুকে আমরা আমাদের হৃদয় দিয়ে সৃষ্টি করেছি। আমরা কেবল মানুষকে শিক্ষা দিতে এসেছি, যাতে মানুষ গুটিবসন্ত থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারে। আর আপনিই একমাত্র মানুষ যে এমন একটি মহাপবিত্র সময়ে জন্ম গ্রহণ করেছে যাকে আমরা মন্ত্রটি শেখাতে পারি। যদি মন্ত্রটি পড়ে আক্রান্ত মানুষের মুখে হাত বুলিয়ে দেন তবে সে সঙ্গে সঙ্গে আরোগ্য লাভ করবে। এই সৌভাগ্য আপনি ছাড়া অন্য কারও নেই।’

এবার সাতবোন তাদের স্বর্গীয়রূপ নিয়ে তার সামনে আবির্ভূত হলো। তাদের দেখে সমর হতবুদ্ধ হলো। তাদেরকে একসাথে সরিষা ফুলের গুচ্ছের মতো মনে হচ্ছিলো। শত হলেও সে এক তগবগে যুবক, তার তো আর ভয় পাওয়া সাজে না। কেন সে ভয় পাবে, তারা তো আর তার কোন ক্ষতি করছে না। তারা প্রত্যেকে তাকে মন্ত্রটি শিখিয়ে দিলো। সবাই হাত উঁচু করে তাকে আশির্বাদ করলো। ফলে সমর সাতটি মন্ত্রই মুখস্ত করে ফেললো। তারা তাকে বর দিয়ে বললো, ‘সে যেন তার নিজের স্বার্থ ব্যতীত অন্যকারো স্বার্থে তা ব্যবহার না করে, অন্যথায় তারা বর উঠিয়ে নিবে, মন্ত্রের ক্ষমতা তুলে নেয়া হবে।’

তারা তাকে মন্ত্রপাঠ করে শিশুকন্যার মুখে হাত বুলাতে বললো। সমর তা করলো আর অমনি শিশুকন্যা ভালো হয়ে গেল। সাতবোন তাকে শেষমেষ বাড়ি যেতে বললো। কালবিলম্ব না করে সে সোজা বাড়ির পথ ধরলো। সাতবোনও সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়ে গেল। সে যখন বন পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছলো তখন ভোর হয়ে গেছে।

এরই কিছুদিন পর সমরের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে গুটিবসন্তের মহামারী। গ্রামবাসী এই রোগের লক্ষণ বা করণীয় কী, কিছুই জানতো না। তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। কেবল সমর জানে এই রোগে আরোগ্য লাভের পথ। সমর গ্রামের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ঘুরে গ্রামকে গুটিবসন্ত মুক্ত করলো। গ্রামবাসীদের মধ্যে আর সন্দেহের অবকাশ থাকলো না যে সমর যাদুটোনায় সেরা। কথায় বলে, মুখের কথা বাতাসের আগে ছড়ায়। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রামে সমরের যাদুটোনার গালগল্প নানা মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লো।

এদিকে সমর তো এখনও অবিবাহিত এক যুবা। সে ভালোবাসতো মন্দিরা নামের এক মেয়েকে। মন্দিরা ছিল পাশের কালাদি গ্রামের মেয়ে। মাঝে মধ্যে সমর মন্দিরাকে দেখতে যেত। 

একদিন কালাদি গ্রামের এক মেয়ের বিয়ে হয়। বরযাত্রী এলো। তাদের কথা ছিল তারা আসবে, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ও আহারাদি করবে, রাতে থাকবে, পরদিন সকালে বৌ নিয়ে ফিরে যাবে। কিন্তু এসেই ঐদিন বিকেলবেলা বর মশাই দলবেঁধে সারাগ্রাম ঘুরে বেড়াতে লাগলো। ঘুরতে ঘুরতে একসময় তারা দেখলো এক সালাপা গাছ। সালাপা গাছ আবার তালগাছের মতো ঝুরতে হয়। যে রস পাওয়া যায় তা থেকে তৈরি হয় মদের মতো তাড়ি। তাড়ি পান করলে আর মাথা ঠিক থাকে না, পুরো নেশায় চুর হতে হয়। সালাপা গাছে হাঁড়ি পাতা দেখে তো বরের জিভে জল এসে গেলো। এই গাছটা ছিল আবার মন্দিরার বাগানে। বর ভদ্রতা করে মন্দিরার বাবার কাছে গিয়ে কিছু তাড়ি চাইলো। মন্দিরার বাবা ছিলো তুখোর মাতাল। সবসময়ই পানের উপরই থাকতো। তখনও সে মাতাল। বারবার তাড়ি চাওয়ার পর বুড়ো মাতালটা তাড়ি তো দিলোই না বরং বলে বসলো, ‘তোদের জন্য কিসের তাড়ি রে! কোনো তাড়ি নেই। তুই ব্যাটা কে রে? তোকে কেন আমি তাড়ি দেবো! যা ভাগ!’

বর বেচারা সত্যিই এবার অপমান বোধ করলো। তাদের মধ্যে একজন ছিল যে কিনা যাদুটোনা জানতো। সবাই বললো যাদু করে এই বুড়োর একটা উচিৎ জবাব দিতে। সবার কথায় সে বললো এমন কিছু সে করবে যে বুড়োর জন্মের শিক্ষা হয়ে যাবে। যাবার সময় গলাবাজিয়ে বলে গেলো, ‘আচ্ছা, হতচ্ছাড়া বুড়ো, দেখবো তুই কি করে তাড়ি খাস!’

পরদিন সকালবেলা মন্দিরার বাবা গেলো বাগানে। দেখলো সালাপা গাছটা উধাও! বুঝতে বাকি রইলো না এটা ঐ বদমাইশ লোকদের কাজ যাদের গতকাল সে তাড়ি দেয়নি। তারা যাদু করেছে তার উপর। বুড়ো তো রেগেমেগে আগুন। সে প্রতিশোধের দিব্যি করে বসলো।

যে লোক মন্দিরার বাবার উপর যাদুটোনা করে ছিল তার বাড়িতে গিয়ে উঠল। সে দেখলো তার উঠানে বিশাল এক সালাপা গাছে ঝুলে আছে তাড়ির হাঁড়ি। হাল্কা কাপড়ে ঢাকা। ঐ হাল্কা আবরণ দিয়ে যেন তাড়ি উপচে পড়ছে। বুড়োর তো মাথাই নষ্ট হয়ে গেলো এই দেখে। তার একটা দিন তাড়ি ছাড়া কত কষ্টেই না গেছে! তার তাড়ির তেষ্টা যেন শতগুণ বেড়ে গেলো। হঠাৎ তার চোখ পড়লো বাড়ির পেছনে। তাকিয়ে তো তার চোখ ছানাবড়া। শতশত সালাপা গাছ। একসাথে এত সালাপা গাছ সে জীবনেও দেখেনি। সে চুপি চুপি সালাপি গাছটার গোড়ায় গেলো আর ঝটপট এর কিছু মাটি নিয়ে বাড়ি ফিরলো। রাতভর ভাবলো কি করে ঐ সালাপি গাছটা তার বাড়িতে নিজের উঠানে নিয়ে আসা যায়।

এক সন্ধ্যায় সমর মন্দিরাকে দেখতে আসলো। কিন্তু মন্দিরা তার সাথে কথা বললো না। সে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কেন আমার সাথে কথা বলছো না। তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো? সত্যি করে বলোতো!’ সমর তার মান ভাঙানোর চেষ্টা করলো অনেকক্ষণ। শেষমেষ মন্দিরা বললো, ‘তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাস তাহলে শপথ করো যে তুমি আমার একটি কথা রাখবে!’ সমর প্রেমিকার মাথায় হাত রেখে বললো, ‘এই বললাম, এক সত্যি, দুই সত্যি, তিন সত্যি, রাখবো। বল, তোমার কি ইচ্ছা?’  

‘পাশের গ্রাম থেকে এক বিয়েতে বরযাত্রী এসেছিল আমাদের গ্রামে। তুমি তো জানো না, কী হলো তারপর...’ এভাবে মন্দিরা শুরু করলো চৌদ্দসালা কথা, বলার আর শেষ কোথায়! সব যেন বিস্তারিত না বললেই নয়। শেষে সে এটাই বুঝালো তার বাবার জন্য ঐ সালাপা গাছটা তার ফেরত চাই-ই-চাই। সমর আর কী করে। সে বলে, ‘যাও তোমার বাবার কাছে গিয়ে বলো গ্রামে এক যাদুকর এসেছে। আর তাই তোমার বাবাকে আমার সাথে দেখা করতে বলো।’ মন্দিরা তার বাবাকে ঠিকঠাক বলে বুঝিয়ে আসলো। তারপর মন্দিরার বাবাও তাকে আবার সব কাহিনি বলা আরম্ভ করলো। 

কিন্তু কিভাবে সমর সেই দৈবরমণী সাতবোনের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করবে? অন্যের স্বার্থসিদ্ধ করলে যে তার থেকে গুটিবসন্ত নিরাময়ের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হবে! আর তা যদি সে না করে তবে হয়তো মন্দিরাকে তার হারাতে হবে। না সে তো মন্দিরাকেও হারাতে পারবে না! মন্দিরাকে ছাড়া সে তো বাঁচতে পারবে না! হ্যাঁ, সমর সিদ্ধান্ত নেয় মন্দিরার জন্য সে এই আত্মত্যাগ করবে।

ঐ সন্ধ্যায় সমর মন্দিরার বাবাকে বলে কোথায় সালাপা গাছটি সে চায়। বুড়ো তাকে জায়গা দেখায় আর সেই গাছের গোড়া থেকে আনা মাটি সমরের হাতে দেয়। সমর সেই মাটি হাতে নিয়ে তাকে মন্ত্রপূত করতেই মুহূর্তের মধ্যে সালাপা গাছটি যথাস্থানে চলে আসে। বুড়ো তো বেজায় খুশি। তাকে আর পায় কে! সে এই খুশিতে সমরের সাথে মন্দিরার বিয়ের আয়োজন করে। বড় অঙ্কের যৌতুক দিয়ে মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়ি পাঠায়। 

কিছুদিন পর সমর সেই বনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ সমস্ত বন কেঁপে উঠলো। সমরও ভয়ে কেঁপে উঠলো। সেই দৈবরমণীরা সাতবোন তার সামনে আবির্ভূত হলো। তারা তার চারপাশে চক্রাকারে ঘুরতে থাকলো। সাতবোন সমস্বরে বলতে থাকলো, ‘সমর, তুমি ভুলে গেছো কোন শর্তে আমরা তোমায় দিয়ে ছিলাম! তুমি অন্যের স্বার্থ চরিতার্থ করেছো। তুমি অন্যের দ্বার প্রভাবিত হয়েছো। তুমি প্রভাবিত হয়ে অন্যের ক্ষতিও করতে পারো। সেই মন্ত্র আর তোমার কাছে থাকতে পারে না। আমরা আমাদের মন্ত্র ফিরিয়ে নিলাম।’

সমর চোখ বন্ধ করলো আর অনুভব করলো তার হৃদয় আর নিষ্কলঙ্ক নয়, পাপে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তার হৃদয়ের পবিত্রতা দৈবরমণীরা যেন নিঙড়ে ফেলছে। সে যখন চোখ খুললো দেখলো দৈবরমণীরা চলে যাচ্ছে, আর মন্ত্রও ছেড়ে যাচ্ছে তার হৃদয়। (চলবে- প্রতি বৃহস্পতিবার)

...................................................................................................................................................................

আরো পড়তে ক্লিক করুন :

উড়িষ্যার লোককথা

রাজকুমারীর হস্তিস্বামী

বনকন্যা

মাছের হাসি


 

অনুবাদ : দিদার মুহাম্মদ। আইসিসিআর স্কলার, মাস্টার অফ পারফর্মিং আর্টস (এমপিএ), ব্যাঙ্গালুর ইউনিভার্সিটি, কর্ণাটক, ভারত।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!