পরম্পরা ও পরমায়ু যেভাবে অপরাধ হয়ে উঠলো
এই জনদৌড় মহাসড়কে একটা সমুদ্রযাত্রাকে পেরেক মেরে বসিয়ে রেখেছে। একটা দেড় ঘণ্টার ভিতরে কতগুলো ভিড়ের ভগ্নাংশ আর প্রথার স্পার্ম জমে আছে! হে মাংসগণ, দেখ জন্ম আর জিঘাংসার পাস্তুরিত আরামে কী সুন্দর জলসা পেতেছো। দেখ। দেখ, অন্ধকারই ক্রমশ আলোকিত হয়ে আসছে। আলো নয়।
তবু তোমরা এ সমাজ নামের যে গোলযোগ লিখে লিখে শান্তির একটা চিৎ হয়ে থাকা সকালে ভেবেছ, আহ্ নিজের একটা ছায়া, একটা রক্তের কল বসিয়ে দিলাম! তাতে বিয়োগের অঙ্ক নিষিদ্ধ।
তৃষ্ণার অভ্যাস তুমি গোপন করনি, যেভাবে তোমার নামেই একদিন প্রকাশ্যে ঢেলে দিয়েছে কেউ। তার নাম হতেই পারে পিতা, নামহীনও সে ছিলো একদিন। শুধু সেদিন এই পেরেকের জন্ম হয়নি। সমুদ্র সেদিনও ছিলো। আজ যাকে ভিড়ের জন্য নতুন করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তোমরা তাকে ভ্রমণ কর, বিশ্বাস কর না।
মানুষের ধারণা
তুমি কে? নিষিদ্ধ হিংসার লবণ নাকি পাপ?
আপেল বংশের কেউ তুমি নও—
এ কথা যারা হাতে করে নিয়ে এসেছিলো,
তাদের তুমি ধারণার ঈশ্বরও বলতে পারো।
আর প্রকৃতি, যে ধারণ করে— মনে রেখ
তার উদাহরণে তোমারও নাম লেখা আছে।
বিষও একটা ধারণা হতে পারে, তবে পৃথিবী—
যেখানে তুমি ঘুমাও, জেগে ওঠো, বিশ্বাস করো, অবিশ্বাসও করো?
সকালে তোমার ভাঙা ঘুমের সাথে যারা নাস্তা করতে আসে রোজ—
তাদের প্রত্যেকের হাতেই থাকে ভিসা ও বিরোধ।
কেউ কেউ কাগজের মতো কথা বলে
আর তুমি মর সারাদিন বিষণ্ন ভাতে।
স্বীকার কর
স্বীকার কর তোমার পূর্বপুরুষ ছিলো শৈব— তারপর প্রয়োজনে তওবা করে নাও।
তবু স্বীকার কর। না হলে বল— তুমি কে, তা তুমি জানো না।
যদি তুমি সৎ, সত্যি তোমাকে আকরে ধরবেই।
গঙ্গা পদ্মা পুনর্ভবা— এ নদীর বয়স কত? কার সাথে মিশে গেছে কার শরীরের জল? কার ভাঁজে ভাঁজে ডুবেছে নগর-গ্রাম-তামার বন্দর? তা তুমি জানো।
আমাদের টোটেম ছিলো পাখি— তবু সে আনন্দ বৈভব ভেঙে আমাদেরই ডাকা হলো অসুর-রাক্ষস নামে!
ঘৃণার ঘোড়াগুলো ছুটে আসে, দেখ কত যুগ নিষাদ সময় থেকে। তবু রক্তের নামে তুমি দোষ রটিয়ে দিলে জেনেশুনে— নিজেরই নামের পাশে লিখলে, জারজ!
নাক টিপে দেখ, চোখ টিপে দেখ।
বাঙালির চুল-চামড়া কেটে দেখতে খোলো গবেষণাগার। বল ভাগাড় থেকে এরা এসেছে।
তবু এ জারজ সংবাদ তুমি অস্বীকার কর— হে বাঙালি, অমৃতের সন্তান মোর মার।
রাগের কঙ্কাল
রাগের শরীরে একটা ফড়িং বসলে তাকে উড়িয়ে দিও না। বসতে দাও— যতক্ষণ না পৃথিবীর ওলান থেকে ঝরে পড়ে বিষণ্ন দুধ।
বিষের বুনিয়াদ থেকে দূরে, শেষ ঘাসভূমির সমাধিতে পৌঁছে আমরা মাটির হিসেব নিয়ে বসবো একদিন।
মাটি কি পরাজিত? মাটি কি রেগে আছে তোমার মতো?
শল্যচিকিৎসার বান্ডেল খুলে বিচিত্র ছুড়িতে আমরা সভ্যতার ব্যরিক্যাডগুলো কেটে কেটে দেখে নেবো। আদিম অভাব থেকে পাখিহত্যার দায় মুছে যতটুকু পবিত্র পাপ উঠে আসবে আমাদের হাতে— তাতে পাওয়া যাবে কতগুলো রাগের কঙ্কাল?
ধুলার সাগর থেকে ফিরে এসে আমরা নিশ্চই চোখ দেখাতে যাবো। চোখযন্ত্রে জানি না ধরা পরবে কতখানি নৃতত্ত্ব, কতটুকু ব্যথার বৈরাগ?
বসন্তের তেজগাঁ শাখা
ঘুরে ঘুরে বসন্ত এসে আবার স্টেশনে থেমেছে। বসন্ত ঘুরছে। কোকিল দায়িত্বে আছে প্রচারণার।
গত বছর তেজগাঁয় এ কাজে যে কোকিলটা নিয়োগ পেয়েছিলো— এবার শোনা যাচ্ছে তার সাথে কাজে এসেছে আরও একজন। তার গলায় কিছুটা খাদ আছে। অফিস একই আছে, কৃষ্ণচুড়া। গাছটা একটা বসন্তের রুগ্ন কর্মচারি। পাতা ছাড়া— ফুলের স্মৃতি-অযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চৈত্র চেহারায়!
বসন্তে কি মানুষ তাদের নিজেদের মাংস খাবার বাসনা ভুলে যায়? বসন্ত কি রোগ সারায়, নাকি সে নিজেই একটা রোগ?
মাটি ফেটে যা কিছু বেরিয়ে আসছে বাতাসের লোভে— তাতে বসন্তের ইন্ধনগুলো যেভাবে কাজ করে, তোমাদের ভেতরে সে ইন্ধন কী রাঁধে?
কোকিল না ডাকলে, নিজের চামড়ার নিচে বসন্তোদ্ধারে নেমে দেখতে? দেখলে কী পেতে? পাঠ্যসূচীর মতো থোকা থোকা ফাল্গুন। যেখানে লেখা নাই, বসন্তে কাকেরও অবদান আছে।
ধানেন্দ্রিয় মরে গেছে। মানুষ তার চাকাগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছে নতুন ঋতুতে।
তবু ঘামদৌড় আর চৈত্রকানা রোদে— বুঝি না কেমনে ডাকে ঢাকার কোকিল!