X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা প্রার্থনার মতো : সালেহীন শিপ্রা

.
২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৫৮আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:০১

কবিতা প্রার্থনার মতো : সালেহীন শিপ্রা সালেহীন শিপ্রার জন্ম ২০ ডিসেম্বর ১৯৮৯, জামালপুরে। তিনি মার্কিন গবেষক অধ্যাপক ক্লিন্টন বি সিলি ও প্রথমা প্রকাশনের যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত ‘জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০১৬’ পেয়েছেন।

 দ্বিতীয় দশকের কয়েকজন কবির কাব্য-ভাবনা ও লেখালেখি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন সাহিত্যের এই আয়োজন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একই সময়ের কবি রাসেল রায়হান।

 

প্রশ্ন : ‘প্রকাশ্য হওয়ার আগে’ দিয়ে শুরু করি।বেশ বৈচিত্র্যময় বই। বৈচিত্র্যময় বলতে প্রায় সব স্বাদের কবিতা ছোট্ট বইটাতে আছে। ক’বছরের প্রস্তুতি ছিল এটার জন্য?

উত্তর : ছোটবেলা থেকেই লিখি৷ সে সময়ের লেখাগুলো বইতে না থাকলেও তারা সিঁড়ির মতো এ কবিতাগুলোকে উপরে তুলেছে৷ তো তাদেরকে ধরলে অনেক বছর৷ যদি বইতে থাকা কবিতার সৃষ্টিলগ্ন ধরি, তবে দশ বছর। বইতে থাকা ‘ অচেনা স্টেশন’ কবিতাটি ২০০৭ সালে প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।

 

প্রশ্ন : প্রকাশ্য হওয়ার পরে কী? মানে নেক্সট প্ল্যান?

উত্তর : একটা বই করতে দশ বছর পেরিয়ে গেছে৷ পরেরটা এত সময় না লাগলেও জলদি হবে না, কমপক্ষে দুবছর সময় লাগবে৷ আর কবিতায় আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই৷

 

প্রশ্ন : কবিতা লেখার ক্ষেত্রে কতটা নিজের জগত নির্মাণ জরুরি? জরুরি হলে আপনার ক্ষেত্রে সেই পদ্ধতিটা ঠিক কেমন?

উত্তর : কবির নিজস্ব জগৎ থাকা জরুরি। এই জগতের নিজস্বতাই কবির নিজস্বতা নির্মাণ করে। নইলে মাত্রা-অন্তমিল মেলানো আর অন্য কবিদের আইডিয়া, ভাষাভঙ্গি ধার ছাড়া তার অন্য উপায় থাকে না। একটু অন্যভাবে দেখার চোখ, বোধের গভীরতা, ভাষায় বোধের সঞ্চার ঘটানো- এই জগৎ থেকেই উঠে আসে। এর সাথে বিভিন্ন রকম সম্পর্কের বিভিন্ন রকম স্তর, ওঠানামা, বিভিন্নতাকে বোঝার চেষ্টা করি।

 

প্রশ্ন : অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের সাথে কবিতার পার্থক্যটা কোথায়?

উত্তর : আমার কাছে কবিতা প্রার্থনার মতো, আত্মার শান্তিদায়ক। অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের থেকে এ কারণেই আলাদা লাগে। এছাড়া ফর্ম, ভাষার ব্যবহার, বোধের খেলা তো আছেই। আর একটা ভাল কবিতার রেশ একজন কবিতার পাঠকের মধ্যে অনেক সময় ধরে থেকে যায়। জীবনের নানা অভিজ্ঞতায় হঠাৎ হঠাৎ তারা সামনে এসে দাঁড়ায়।

 

প্রশ্ন : সুবিধা পাবার জন্য জুনিয়র কবিরা সিনিয়র কবিদের পেছনে ঘোরে, সম্পাদকের পেছনে ঘোরে- এই অভিযোগ কতটা সত্যি? সত্যি হলে, এই প্রক্রিয়ায় কতটা জাতে ওঠা যায়?

উত্তর : লাইনে আসার জন্য সম্পাদকের পেছনে ঘুরলে লাইনই বড় হবে, আর লাইনেই থাকতে হবে। কারও কবিতা যদি কবিতা না হয়, সম্পাদক তাকে আকাশে নিয়ে নাচলেও কোন লাভ নাই। কবিতা লিখেই কবিতায় থাকতে হবে।

 

প্রশ্ন : কবিতায় আপনি কিসের দিকে বেশি জোর দেন? নির্মাণে, না বোধে?

উত্তর : কবিতায় বোধ এবং নির্মাণ- দুটোকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি আমি। দুটোকেই গুরুত্ব দেই।

 

প্রশ্ন : কবিতার আন্তর্জাতিকতার বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

উত্তর : পৃথিবীর সব মানুষের সাধারণ অনুভূতি, যেমন- রাগ, বিষণ্ণতা, আনন্দ, একাকিত্ব আসলে একই ধরনের। শুধু দেশীয় কোনো বিশেষ ঘটনা ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে পাঠকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আর আমাদের কবিতাও বিশ্বকবিতার চেয়ে পিছিয়ে পড়া নয়। কিন্তু সেভাবে তো সত্যিই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উঠে আসছে না।

 

প্রশ্ন : একজন কবির নিজের মাটির কথা বলা কতটা বাধ্যতামূলক? কবিতা কখন নিজের সীমারেখা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক হয়ে ওঠে?

উত্তর : কবিতা তো কোনো পরীক্ষা পাশের বিষয় নয় যে বাধ্যবাধকতা থাকবে।

আমি বা আমার দেশ যখন বিশ্বেরই অংশ, তার মানে আমাদের সব কবিতাই বৈশ্বিক। বরং যখন তা আলাদা করে কোনো বিশেষ অঞ্চলের কথা বলে তা বৈশ্বিক হয়েও আঞ্চলিক হয়ে ওঠে।

 

প্রশ্ন : বাংলা কবিতা কতটা ক্ল্যাসিক হয়ে উঠতে পারছে?

উত্তর : ক্ল্যাসিক কিছু হচ্ছে কিনা সেটা এ সময়ে দাঁড়িয়ে বলাটা মুশকিল। তবে বলবো যে দারুণ কিছু কাজ হচ্ছে, যার ভাগ্য ভবিষ্যৎ জানে।

 

প্রশ্ন : অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের সাথে কবিতার পার্থক্যটা কোথায়?

উত্তর : পর্ন আর শৈল্পিকভাবে উপস্থাপিত মিলনদৃশ্য যেভাবে আলাদা- সেভাবে যেকোনো শিল্পেই স্থুল রুচি আর সূক্ষ্ম রুচির পার্থক্য রয়েছে, সীমা রয়েছে।

 

প্রশ্ন : বাংলা কবিতায় নানা বৈশিষ্ট্য-বৈচিত্র্য আছে। এর মধ্যে আপনার কবিতা কী স্বাতন্ত্র্য নিয়ে এসেছে। ঠিক কিসের তাগিদে লিখছেন?

উত্তর : একটা জীবন শুধু কবিতার সাথে যাপন করে যেতে চাই। কবিতা লেখার আনন্দে কবিতা লিখি, আর কিছুর জন্য না। আমার কবিতা আমার কাছে কবিতার কোলাহলের ভেতরে আত্মার শান্তিদায়ক। বাকি স্বাতন্ত্র্য-বৈচিত্র্য পাঠকরা বলবেন।

 

প্রশ্ন : কবিতার পাঠক কমের একটা অভিযোগ পাওয়া যায়।এই অভিযোগের ভিত্তি কী? উত্তরণ সম্ভব কি না? কীভাবে?

উত্তর : কবিতায় পাঠক কম এটা বড় কোনো বিষয় না। কবিতা সব মানুষকে তাড়িত করবে না এটা স্বাভাবিক। কবিতা উপভোগের জন্য পাঠকের যে টানটা থাকতে হয় সেটাই তাকে কবিতার পাঠক বানায়। এই টানটা গড়ে দেয়া যায় না, গড়ে ওঠে। তবে পাঠকের কাছে ভাল কবিতা পৌঁছানো একটা বিষয়।

বাংলা সাহিত্যের সব পাঠকই তো লিটলম্যাগ, ফেসবুকে কবি সাহিত্যিকদের সাথে কানেক্টেড না, সব জায়গায় সহজলভ্যও না। এমন অনেককে জানি তারা ওই দৈনিকের সাহিত্য পাতা পড়েই সাহিত্যের তেষ্টা মেটায়।

 

প্রশ্ন : লিটলম্যাগের ম্রিয়মাণতা আর দৈনিকগুলোর উত্থান, এই দুইয়ের সুবাদে সাহিত্য একটি করপোরেট শ্রেণির কাছে বাঁধা পড়ছে কি না?

উত্তর : লিটলম্যাগের ম্রিয়মানতা ঠিক আছে কিন্তু দৈনিকের উত্থান নয় বরং দৈনিকেরও ম্রিয়মানতাই দেখছি আমি। যা আসলে অনলাইনের প্রভাব।

 

প্রশ্ন : একসময় ছোটকাগজের খুব বড় একটা ভূমিকা ছিল। বর্তমানেও বেশ কিছু ছোটকাগজ বের হচ্ছে।  কী ভূমিকা রাখছে তারা?

উত্তর : ফেসবুক এসে ছোটকাগজকে বিশাল একটা ধাক্কা দিয়েছে। ই-ম্যাগগুলো এ জায়গাটা আস্তে আস্তে দখলে নিচ্ছে। তবে মানসম্মত আরো ই-ম্যাগ হওয়া প্রয়োজন।

এরপরও যারা ছোটকাগজ করছেন তারা ভালবাসা ও আন্তরিকতা থেকেই করছেন। একটা কবিতা স্ক্রিনে দেখা আর ছাপা কাগজে হাতে নেবার আনন্দ তো আলাদাই।

 

প্রশ্ন : সমাজে এমন একটা ধারণা চালু আছে যে, কবিকে হতে হবে মহামানব? এই ধারণার ভিত্তি কী? আপনি কি একমত?

উত্তর : একটা সময়, শুরুর দিকে আমি ভাবতাম যে, একজন কবি হচ্ছেন ঋষি বা সন্ত টাইপের মানুষ। সে ভুলটা ভাঙায় কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এই ভাবনাটা আসলে রোমান্টিকতা ছাড়া কিছু না। একজন কবি মানেই নিষ্পাপ কিছু নন। শুধু তিনি সাধারণের চেয়ে একটু বেশি অনুভূতিপ্রবণ। তার দৃষ্টিভঙ্গির স্বাতন্ত্র্য রয়েছে আর এসবের সাথে রিলেট করে তার নির্মাণের ক্ষমতাও রয়েছে।

 

প্রশ্ন : সাহিত্যে ইদানিং পুরস্কারের যে রীতি খুব বেশি দেখা যাচ্ছে, এর প্রভাব আসলে কতটা?

উত্তর : পুরস্কারের সাথে কবিতার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে একজন কবিকে একটি পুরস্কার সামান্য কিছু বাড়তি পাঠক আর খানিকটা মানসিক চাপ (আরো ভাল কিছু করার) উপহার দেয়।

 

প্রশ্ন : আর গ্রুপিংয়ের যে চিরাচরিত অভিযোগ, এটাকে কীভাবে দেখেন?

উত্তর : কবি হিসেবে টিকে থাকলে কবিতা লিখেই টিকতে হবে। গ্রুপিং-ট্রুপিং সব ফালতু বিষয়।

 

প্রশ্ন :তরুণদের ভিতরে ছন্দবিমুখতার যে একটা প্রবণতা, এটিকে কীভাবে দেখছেন?

উত্তর : ছন্দ, চিত্রকল্পসহ আরো আরো যেসব ব্যাপার রয়েছে এসব সম্পর্কে একজন কবির  (কবিতায় বেশি দূর পথ হাঁটার ইচ্ছা থাকলে) ধারনা থাকা উচিত বলে মনে করি। ব্যবহারটা ইচ্ছা বা '‘কবিতার দাবী'' অনুযায়ী ব্যবহার করা বা না করা নিজস্ব বিষয়।

 

প্রশ্ন : আপনার বই কতটা ব্যক্তি আপনাকে রিপ্রেজেন্ট করছে?

উত্তর : একটাই তো বই আমার। ব্যক্তি আমার ভেতর থেকে, ব্যক্তি আমার দেখার বা বোঝার উপলব্ধি থেকেই যেহেতু বইটার জন্ম, তা ব্যক্তি আমাকে অনেকখানিই রিপ্রেজেন্ট করছে।

 

ধন্যবাদ, শিপ্রা।

আপনাকেও।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা