X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুকবিতার সুগন্ধ

জিয়া হক
২৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৫১আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৫৮

সুকবিতার সুগন্ধ ‘নজম কা তজযিয়া করতে করতে/পুরা গুলাব হী ছীল দিয়া/মিসরে অলগ, অলফাজ অলগ/ ডন্ঠল-সা বচা, ন খানে কো, ন সুঁঘনে কো!/খুশবু কুছ হাথ পে মসলী গয়ী/কুছ মিটটী মেঁ গিরকে গর্দ হুই/নজম পড়হুঁ তো ওম ভী অব/খালি বর্তন সী বজতী হ্যায়!!’ -প্লুটো, গুলজার

কবিতার কি কোনো দেশকালের সীমা-বাঁধনছাঁদ থাকে? বিশেষ কাল বিশেষ একটি লিখন ‘ছাঁদ’-এর মোহে পড়ে বটে, সাহিত্য-ঐতিহাসিকরা সেই প্রবণতা মেনে-মেপে যুগবিভাগ, পর্ব-বিভাজনও করেন হয়তো, এই ছাঁদেরই পৃষ্ঠপোষক হয় হয়তো বড়তর কোনো পুঁজি, এই ‘ছেঁদো’ চর্চার বাহিরবাসীরা ‘অন্য’/‘ব্যতিক্রম’ নামে ‘কীর্তিত’ হন হয়তো, তবে এসবে ওই ‘প্রকৃত’ সহৃদয় পাঠকের বিপুল উন্নাসিকতা, সে-খানিকটা ওই বিনয় মজুমদারী সারস-জাতীয়-প্রকৃত কবিতা নিকটে না এলে সে ‘উড়ে যায়’। এখন প্রশ্ন হবে, প্রকৃত কবিতা কী, কাকে বলে, কোনটা? কবিতা তো মানুষভেদে কবিতা হয়। কবিতার সংজ্ঞাগুলি যে-কারণে অচল। বুদ্ধদেব বসু বা হুমায়ুন আজাদদের আধুনিক কবিতার সংকলনগুলির বহু ‘সু-নির্বাচিত’ কবিতা অনেক পাঠক অ-কবিতা বলে সরিয়ে দিতে পারেন। শিল্পে এ অধিকার-বিচারটুকু স্বীকৃত। এ-কারণেই ‘বড়’ কবির শংসাপত্র নিয়েও বহু পদকর্তা হারিয়ে যান। বিপরীতটাও ঘটে। তবে ‘হারিয়ে’ হয়তো একেবারেই যায় না। নিশ্চয়ই কোনো-কারও স্মৃতিতে তা থাকে। আর কবিতার ব্যাখ্যাও আরও এক শূন্য-শুকনো ব্যাপার। কবিতারসিক শেখ সদর নইম উপরে উদ্ধৃত গুলজারের কাব্য-সমালোচনা বিষয়ক নজমটি অনুবাদ করেছেন এভাবে-

‘কবিতার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে/গোটা গোলাপই ছিন্ন করলাম/শব্দ এবং লাইন বিচ্ছিন্ন হল/কাঁটা রইল হাতে, না খেতে পারি, না শুঁকতে/গন্ধ হাতে দলা হল, কিছু ধুলোয় পড়ে মাটি হল/কবিতা পড়লে সেটাও এখন খালি বাসনের মতো বাজে।’ কবিতার ব্যাখ্যাবিরোধী এই নজমটির ‘ব্যাখ্যা’ও নিষ্প্রয়োজন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র সুরেশচন্দ্র সমাজপতি বা ‘রবীন্দ্র-বিদূষক’ আখ্যাপ্রাপ্ত সমালোচকবর্গ যেভাবে কবিতার ব্যাখ্যা ‘দিতেন’ তাতে স্পষ্ট যে কাঁটা উৎপাদনই তাঁদের মৌল অভিপ্রায় এবং তারা অন্তত রবীন্দ্রকাব্যের ব্যাপারে আলোচক নন, নিন্দুক অর্থে সমালোচক। ওই ‘আলোচনা’গুলি প্রকৃতই ‘খালি বর্তন সী বজতী হ্যায়’।

এই ভূমিকার পর গ্রন্থসমালোচনা লেখা কার্যত অপরাধ। কেবল বলতে পারি সজল আহমেদ-এর কবিতার বই ‘আগুন জ্বেলে যাই’ পড়তে পড়তে মনে হয়েছে সজল প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত কবিই। এর ভেতরে তিনি আর-যা-কিছু। চিত্রপরিচালক, প্রযোজক প্রভৃতি ও ইত্যাদি। তাঁর কবিতার ‘ব্যাখ্যা’ না ‘দিয়ে’, কয়েকটি প্রিয়-স্তবক উদ্ধৃত করা গেল:

‘কী হবে এত শব্দ তৈরি করে

আবার তো সেই অন্ধকারের কাছে

আলোর জন্য আত্মসমর্পণ;

তবুও প্রতিনিয়ত অক্ষরগুলি ঘেমে ওঠে...’

(জ্বলে উঠি নিভে যাই)

‘লাল কাপড়’-এর এই দুটি পংক্তি-

‘যেন পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্বের ভেতর

আমিই স্ববিরোধী স্লোগান।’

কবিতার প্রকরণ ও গাঠনিকতার মিস্ত্রিপনার ‘লোভ’ মুক্ত হতে পেরেছেন সজল আহমেদ; তিনি বক্রোক্তিজীবী নন; সপাট বক্তব্যজীবী। জ্যেষ্ঠ কবি অসীম সাহা তাই হয়তো এই কবিতাগুলিকে বলেছেন ‘আপাতসরল’। সরলতাই কার্যত এর শক্তি। অনেকেই কাব্যগুণ বিষয়ে ‘সারল্য’কে ইতিবাচক তো নয়ই বরং নঞর্থক-তাচ্ছিল্যে গ্রহণ করেন। জটিলতাই কি সিদ্ধি? যা জটলাগানো তা-ই কি সূক্ষ্ম? সূক্ষ্মতাই সৌন্দর্য? সৌন্দর্যই কেবল কাম-প্রার্থিত? বাঁকা উক্তি মাত্রই পদ্য? তবে, তার্কিক হয়তো বলবেন, যে অরূপ আপনাকে টানছে, পান করিয়ে নিচ্ছে তার অরূপত্ব, সেই অরূপ কার্যত অপর-রূপ, অপরূপ-সুন্দর। ভোক্তা ফলত সৌন্দর্যই ‘ভোগ’করলেন। সজল আহমেদ যখন দেশ-প্রীতির কথা বলেন, যখন ‘পিরীতি’র বলেন, যখন আত্মানুসন্ধানে যান, যখন পরমাত্মানুসন্ধানে যান, সব সময়ই কবিত্ব থাকে। যদিও এসব কথা-মন্তব্যই তর্কসাপেক্ষতায় আটকে রয়েছে। এতদ্সত্ত্বেও গুলজারের কাছে ঋণী হয়ে বলি, অপরিবর্তিত খুশবুসহ পূর্ণ গোলাপই আমাদের হাতে ছিল-কঁহি নহি ‘মসলী’।


আগুন জ্বেলে যাই।। সজল আহমেদ।। প্রথম প্রকাশ : ২০১৭।। প্রকাশক : কবি।। প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা

 

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী