X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সত্যেন বোসের শিক্ষা ভাবনায় জাপান ও চীন

ফিরোজ আহমেদ
১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৫৮আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১১

সত্যেন বোসের শিক্ষা ভাবনায় জাপান ও চীন
‘আমি প্রায় সারা জীবন শিক্ষা নিয়ে কাটিয়েছি। যখন আমরা ছাত্র ছিলাম, তখন মনের মধ্যে একটা উন্মাদনা ছিল যে, যে বিজ্ঞানের চর্চা করে প্রতীচ্য এত উন্নতি করেছে, আমাদের দেশে সেটা শীঘ্র চালু হবে, এবং আমরা জীবন উৎসর্গ করবো সে সব জিনিস দেশের মধ্যে আনতে।’

‘প্রায় ষাট বছর আগে যখন দেশে স্বদেশী আন্দোলন হয় তখন দেশের মনীষীরা এবং যাঁরা দেশকে ভালবাসেন সেই সব নায়করা মনে করেছিলেন যে জাতীয় বিদ্যালয়ের মাধ্যমে অন্তত বাংলা দেশের মধ্যে স্বদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করবেন। বহু বৎসর চলে গিয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে শিক্ষাবিস্তার অনেক সংকীর্ণ হয়ে রয়েছে।’ 

বহু রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও সংকীর্ণতার দোষেই স্বদেশী আন্দোলন সময়মতো থিতিয়েও গিয়েছিল, সে অন্য আলোচনা। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ বসুর হৃদয়ে দেশের প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি যে প্রেম জেগেছিল, সেটা নেভেনি কখনো। সত্যেন্দ্রনাথ বসু কোন লেখায় বা আলোচনায় তার সেই অমর বাণীটি প্রদান করেছিলেন, জানা নেই; কিন্তু সারা জীবন ধরে তিনি প্রমাণ করে গেছেন নিজের কথাই: ‘যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।’ এবং এই সিদ্ধান্তের পক্ষে আজীবন যেমন কথা বলে গিয়েছেন, তেমনি যুক্তির সন্ধান করেছেন ইতিহাস, সমকালীন বিশ্বপরিস্থিতি, শিক্ষণবিজ্ঞান এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। তার লেখালেখি থেকে জাপান ও চীন প্রসঙ্গে এমনি কয়েকটি মূল্যায়নের পর্যালোচনাই আমরা বর্তমান নিবন্ধে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবো।


জাপানের আধুনিকায়ন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পুনরুত্থান প্রসঙ্গে

ভারতের প্রদেশসমূহে হিন্দি ও ইংরেজির বদলে মাতৃভাষায় শিক্ষাপ্রদান ও ইংরেজি হটানোর দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনের সম্মুখভাগে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত ‘আংরেজি হঠাও’ সম্মেলনে প্রদত্ত সত্যেন্দ্রনাথের বাংলা বক্তৃতায় তার ভাষাদর্শন বেশ খানিকটা জানা যাবে:

‘অন্য দেশে গেলে একটা জিনিস চোখে পড়ে। সব দেশেই চেষ্টা চলছে মাতৃভাষার মাধ্যমে, যে ভাষা সবাই বোঝে তার উপর বুনিয়াদ করে, শিক্ষার ব্যবস্থা করবার। সব জায়গায় এই রীতি চালু রয়েছে। মধ্যযুগে অবশ্য অন্য ভাষা অবলম্বন করে শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা ছিল; জ্ঞানী-গুণী লোকরাই তার সুযোগ পেতেন। এর অসুবিধা ছিল এই যে, সাধারণ লোকে বুঝতে পারতো না। তার জন্য অন্য লোকের দরকার হতো। তারা যেমন বুঝত সেই রকম সাধারণ লোককে বুঝিয়ে দিত।’

‘এইভাবে কিন্তু দেশের মধ্যে জ্ঞানের বিস্তার বড় আস্তে আস্তে হত। আজকের যুগে একদিকে যেমন লোকে চেষ্টা করছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আশ্রয় নিয়ে দেশকে বড় করতে, মানুষকে নানা রকম সুখসুবিধা দিতে—তেমনি আবার এটাও বুঝেছে যে কেবল একটা শ্রেণীর মধ্যে জ্ঞান যদি আবদ্ধ থাকে তাহলে উন্নতি তত দ্রুত হয় না। কাজেই আজ যখন আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তখন আমাদের ভাল করে ভেবে দেখতে হবে কি করে দেশের ভিতর তাড়াতাড়ি শিক্ষার বিস্তার হবে। যদি চেষ্টা করা যায় তবে এ দেশের মধ্যে থেকে অজ্ঞতা এবং নিরক্ষরতা দূর করা যেতে পারে এটা যারা ইতিহাস চর্চা করেন, তাঁরাই জানেন।’

বিজ্ঞানী এখানে দোহাই দিচ্ছেন ইতিহাসের, দেখিয়ে দিচ্ছেন ভাষার অন্ধ অনুকরণে মুক্তি নেই, বরং মুক্তি আছে জ্ঞানটাকে মাতৃভাষায় আমদানি করার মধ্যে। এরপরই তাই তিনি জানাচ্ছেন জাপানে তার অভিজ্ঞতার কথা: 

‘প্রায় এক-শ’ বছর হল পাশ্চাত্য জগতের হাতে ঘা খেয়ে জাপান ঠিক করল, যে বিদ্যা ও জ্ঞানের জন্য প্রতীচ্য এত শক্তিমান হয়েছে, সে জ্ঞান ও সে সমস্ত বিদ্যা আয়ত্ত করতে হবে। এখনও এক-শ’ বছর হয় নি। এরই মধ্যে জাপানের কীর্তি-কলাপের কথা সকলেই জানেন। বিশ বছর আগে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যখন জাপানের হার হল তখন জাপানের দুরবস্থার শেষ ছিল না, আজ কিন্তু জাপানে গেলে মনে হবে না যে এরকম কোন অবস্থার মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়েছিল।’

ফলে কৌতুহলী সত্যেন বোস খবর নিলেন জাপানের এই অগ্রগতির রহস্যের। সেখানে তখন প্রতিটি ছেলেমেয়েকে নয় বছর বিদ্যালয়ে কাটাতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে, এর ব্যয়টা সমাজই বহন করে। সত্যেন বোস আরও বলছেন,

‘আমার প্রথমে ধারণা ছিল যে হয়ত কোন একটা বিদেশী ভাষার উপর নির্ভর করে জাপানে বিজ্ঞান কিংবা শিল্পকলা শেখান হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম যে আমার ধারণা ভুল। আমি অনেক বই জোগাড় করেছিলাম। তার অধিকাংশই জাপানীতে লেখা। তাই পাঠোদ্ধার হয়নি। অবশ্য দু’চারখানা ইংরেজি বইও তার সঙ্গে পেয়েছি।’

তাদের মাঝে যারা ইংরেজি বোঝেন, তারাও ইংরেজিতে কথা বলেন না। কারণ ‘তাদের মনে এমন বিশ্বাস ছিল না যে, ইংরেজি বললে নিজের মনের ভাব স্পষ্ট করে বোঝাতে পারবেন। সেইজন্য যে সব বিজ্ঞানী ও দার্শনিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারা সকলেই জাপানী ভাষাতেই নিজের মনোভাব প্রকাশ করছিলেন। দেখা গেল শুদ্ধ দার্শনিক তত্ত্ব কিংবা বর্তমান বিজ্ঞানের উচ্চস্তরের কথা সবই জাপানী ভাষায় বলা সম্ভব এবং জাপানী কথায় তা বলবার জন্য লোকে ব্যাগ্র।’

দেশিয় ভাষায় শিক্ষার বিস্তার বিষয়ে প্রায়ই সুবিধা অসুবিধার প্রশ্ন তুলে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়। এই নিয়ে সত্যেন বোস দেখাচ্ছেন:

‘আমাদের ভারতীয় ভাষাগুলির তুলনায় জাপানী ভাষার কতগুলি অসুবিধা আছে। যারা একটু খবর রাখেন তারাই তা জানেন। একটা অসুবিধা হলো এই যে, আমাদের যেমন অল্পসংখ্যক অক্ষর দ্বারাই সব বাক্য লেখাও যায়, বইতেও ছাপানো যায়, জাপানী ভাষাতে সে ব্যবস্থা নেই। আছে নিজের অক্ষর এবং চৈনিক অক্ষর প্রায় হাজার তিনেক। যারা উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুক তাদের এ সবকটাকেই শিখতে হয়। এর জন্য আমাদের দেশে যেখানে মাতৃভাষা বছরখানেক বা বছর দুয়েকের মধ্যে চলনসই আয়ত্তের মধ্যে এসে যায়, ছেলেমেয়েদের সেখানে জাপানী ভাষা শিখতে গড়ে লাগে প্রায় ছয় বছর। এত অসুবিধা সত্ত্বেও এমন অবস্থা জাপানী ভাষার যে প্রত্যেক জাপানী বিজ্ঞানী, জাপানী দার্শনিক নিজেদের মনের প্রত্যেকটি কথা জাপানীতে প্রকাশ করতে পারেন।’

এর ফলও জাপান হাতেনাতেই পেয়েছে:

‘এই জন্য জাপানে তাড়াতাড়ি শিক্ষাবিস্তার হয়েছে। ফলে জাপান অতি সহজেই সমস্ত জ্ঞান আয়ত্বের মধ্যে আনতে পেরেছে। যদি আমরা জাপানী ও জার্মান জাত দু’টিকে দেখি—পৃথিবীতে যে দু’টি জাত তাড়াতাড়ি জ্ঞানের স্বল্পাবস্থা থেকে আজ একেবারে শীর্ষস্থানে চলে গিয়েছে—তাদের মধ্যে শিক্ষিত অথবা অক্ষর পরিচয় আছে এরকম লোকের সংখ্যা শতকরা নব্বইয়ের উপরে।’

১৯৬৩ সালে রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের বক্তৃতাতেও সত্যেন্দ্রনাথ আবারো জাপানের কথা টেনেছেন, লিখেছেন:

‘সম্প্রতি আমার সুযোগ ঘটেছিল জাপান যাত্রার। সেখানেও প্রায় ভারতবর্ষের কাছাকাছি সময়েই পাশ্চাত্য শিক্ষাপদ্ধতি প্রবর্তনের চেষ্টা শুরু হয়। জাপান এখন একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত, তার অগ্রগির সারা পৃথিবীর বিস্ময় ও প্রশংসার বস্তু। আমি তাই সাগ্রহে এ সুযোগ গ্রহণ করি এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের স্থান বিষয়ক আলোচনা সভায় যোগ দিতে যাই।

সেখানে গণিতবিদ, জীববিদ ও দার্শনিক এবং বহু বিজ্ঞানীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়। আমি ভেবেছিলাম এ ধরনের আলোচনা সভায় আমরা কোন বিদেশী ভাষারই শরণাপন্ন হব। কিন্তু পৌঁছানোর পর আমাকেও বলা হল যে, অধিকাংশ জাপানী বিজ্ঞানী ইংরেজী, হয়ত বা তার উপরেও আরও কয়েকটি ভাষা বুঝতে পারলেও, (অনেক সময়েই তাঁদের সব ভাষার বই পড়তে হয়) সারা দেশ জুড়ে শিক্ষা চলে জাপানী ভাষার ভিত্তিতে এবং আমাকে তৈরি থাকতে হবে আলোচনা সভায় প্রধানত জাপানী শোনার জন্যই। আমি অবশ্য একজন দোষাভীর সাহায্য পাব, যাঁর কাজ হবে আলোচনা সভায় বিভিন্ন বক্তা যা বলবেন তার ভাষান্তর করে দেওয়া এবং আমার পালা যখন আসবে, তখন জাপানী ভাষায় আমার বক্তব্য সহযোগী সদস্যদের কাছে উপস্থিত করা। স্পষ্টই এই পদ্ধতি বেশ ফলপ্রসূ এবং আমি অবাক হলাম দেখে যে, আধুনিক রাষ্ট্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ সম্পর্কে এক বিশেষ জটিল ও বিমূর্ত আলোচনা অনায়াসেই চালানো হল জাপানী ভাষায়, আর আমরা বিদেশীরা যখন বললাম তখন তাঁরা বেশ ভালভাবেই আমাদের চিন্তাসূত্রটি ধরতে পারলেন ও আমাদের নিবন্ধ সম্পর্কে তাঁদের অনুমোদন বা প্রতিবাদজ্ঞাপক সমালোচনা উপস্থিত করলেন বেশ ধারালোভাবেই।’

সত্যেন বোস এখানে একটা মজার ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশেও এর প্রাসঙ্গিকতা আছে।

‘পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলাফল সম্পর্কে দুজন ভারতীয় বিজ্ঞানীর ইংরেজীতে লেখা একটি বইয়ের জাপানী তর্জমা হয়েছে। আমায় জানানো হলো ওই বইটি বেশ ভালই বিক্রি হয়েছে ছয় মাসে, প্রায় তিন হাজারের মত। শুধু জাপানী ভাষাই পড়তে পারেন এমন সাধারণ জাপানীরা পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলাফল জানবার জন্য বিশেষ উদ্বিগ্ন এবং হয়তো তারা এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ ভারতীয় মতামতকেই বেশি বিশ্বাস করেন অন্যদের চাইতে।’

এর পরই সত্যেন বোসের আক্ষেপ:

‘তবু আমাদের দেশে ওই বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা ইংরাজিতেই লিখে চলেছেন ও তার ফলে তাদের দেশবাসীর ৮০ ভাগকেই অজ্ঞ রেখেছেন পারমাণবিক বিপদ সম্পর্কে।’

ধংসস্তুপ থেকে উঠে আসা জাপান বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তার লেখায়, সত্যেন বোসের পর্যবেক্ষণে মাতৃভাষায় শিক্ষার শক্তিতেই এটি সম্ভব হয়েছে:

‘আমরা ইতিহাস পড়ি, রুশ, জাপান, মিশর ইত্যাদি দেশের নব জাগরণের খবর পড়ি। কিন্তু যদি বলা যায়, এসব দেশে দ্রুত প্রগতি সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞান শিক্ষা মাতৃভাষায় চালু করার ফলে এবং সেই ভাবে আমাদের দেশে শিক্ষা-নীতিতে পরিবর্তন আনলে, আমরাও তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলতে পারবো, তখনই তর্কের ধোঁয়ায় আসল কথা চাপা পড়ে যায়। জাপানের কথা আমি অনেক জায়গায় বলেছি। সেদিন এক জাপানী বিজ্ঞানী কলকাতায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, বললেন: “আমরা বিজ্ঞান বিদেশীদের কাছে শিখেছি এবং হয়তো এতে সত্যকারের মৌলিক অবদান আমাদের খুব বেশী নেই—তবে যা আমরা শিখেছি, সবই জাপানের উপযুক্ত রূপ দিয়ে তাকে আপনার করে নিয়েছি। কাজেই শিল্প বাণিজ্যের এই প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মধ্যেও নিজেদের জাহির করে রেখেছি।” এই বক্তৃতার পর এক বিজ্ঞানী বন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন স্নাতকোত্তরদের বিজ্ঞান শিক্ষার বন্দোবস্ত তোমাদের কোন ভাষায় হয়—জাপানী যখন উত্তর দিলেন সে ভাষা মাত্র একটি, সেটি জাপানীর মাতৃভাষা ও তারই ব্যবহার চলেছে স্কুল-কলেজে, তখন জিজ্ঞাসু একটু আশ্চর্য হলেন, কথাটা বিশ্বাস করতে তাঁর ইচ্ছা হচ্ছিল না। এঁরাই আবার বলে আসছেন, এদেশে ইংরাজী মাধ্যম ছাড়া উচ্চ বিজ্ঞান সম্ভব নয়। তাই এই অবিশ্বাসরের সুর। এ মনোভাব আমাদের অনেক দিনের। প্রায় চল্লিশ বছর আগে শিক্ষার্থী হয়ে যখন ফ্রান্স দেশে রয়েছি তখন ইংল্যান্ড থেকে সে দেশে বেড়াতে এলেন বাঙালী এক ডাক্তার বসু। একদিন সেখানে আড্ডায় ভারতীয় ও ফরাসী দুইই উপস্থিত ছিলেন—তার মধ্যে তিনি হাজির। ডাক্তারি শিক্ষার কথা উঠলো, বন্ধুটি জিজ্ঞাসা করলেন—সে দেশে অ্যানাটমি কি ভাবে শেখানো হয়। যখন শুনলেন ও দেশে গ্রে’স অ্যানাটমি চলে না—তখন তিনি চোখ কপালে তুললেন। এভাবে ভাবতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’

জাপান বিষয়ে সত্যেন বোসের এই মূল্যায়নের তাৎপর্য অপরিসীম, একজন পদার্থবিজ্ঞানী প্রায় সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টি দিয়ে অন্য একটি জাতির আধুনিকতার রহস্য উদ্ঘাটন করছেন। জাপান বিদেশিদের কাছে অনেক বড় বিস্ময় ছিল একটা বড় কারণে, সেটা হলো তারাই প্রথম জাতি যে তার মৌলসত্তা প্রায় অটুট ও অক্ষুণ্ন রেখে পশ্চিমা সভ্যতাকে সবচেয়ে বেশি ধারণ করছে। জাপানে ভ্রমণের সূত্রে চমকপ্রদ আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন জগৎবিখ্যাত আফ্রিকান সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবে, যেটি এক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক। ১৯৮১ সালে তিনি জাপান ভ্রমণে যান, বিশ্বসভ্যতার বৈচিত্রপূর্ণ বিবর্তন বিষয়ক একটি সম্মেলনে অংশ নিতে। সেখানে তিনি শোনেন একটি অসাধারণ পারিবারিক গল্প, আচেবে এভাবেই বর্ণনা করেছেন ওয়াজেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চিনিচিরো তোবার এই অসাধারণ সারসংকলনটুকু:

‘আমার দাদা টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৮০ দশকের শুরুর দিককার স্নাতক। তার খেরোখাতা ভর্তি ছিল ইংরেজিতে। আমার পিতা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯২০ এর দশকের স্নাতক, আর তার খেরোখাতার আধাআধি ছিল ইংরেজিতে, বাকি আধখানা জাপানী ভাষায়। এক প্রজন্ম পর আমি যখন স্নাতক হই, আমার সবটা টোকাটুকি হয়েছিল জাপানী ভাষায়। এভাবে আমাদের নিজেদের ভাষার মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতাকে পুরোটা আত্মস্থ করতে লেগেছিল তিনটে প্রজন্ম।’


আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথ বসু জনগণের দৈনন্দিন চাহিদা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

সাম্প্রতিক কালে প্রায়ই সংবাদ আসে, অমুক জরিপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুইশর তালিকাতেও নেই, আড়াইশর তালিকাতে নেই তমুক জরিপে; তাই বাতাসে শোনা যায় ক্ষণিকের আহাজারি। এই সব তালিকার মানদণ্ডগুলোর কিছু পশ্চিমাকেন্দ্রিকতা আছে।  যে সব শর্তের এটা নির্ধারণ হয়, তা সব দেশের জন্য সমগুরুত্বের বা সমঅগ্রাধিকারের হতেই পারে না। তারপরও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার দশা যে ভয়াবহ রকমের খারাপ, তাতেও সন্দেহ করার উপায় সামান্য। আরও খারাপ জনগণের জ্ঞানগত, প্রযুক্তিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্রিয়তা বা যুক্ততার মাত্রা।
১৯৪৪ সালের এক স্মৃতিচারণে সমাজের সঙ্কটে বিদ্যায়তনের কী ভূমিকা কাম্য সে বিষয়ে একটি কথা বলেছিলেন সত্যেন বোস। চীনে তখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আর জাপানী দখলদারিত্বের করাল থাবা। বিশ্বযুদ্ধও চলছে। খাদ্যের অভাবে চীনা শিশুদের বিপর্যস্ত দশা। মন্বন্তর আমাদের দেশেও।
‘আমার এক ছাত্র সালফোনামাইড নিয়ে নানা গবেষণায় ব্যস্ত। ওদিকে জৈব-রসায়নের গবেষণা কেন্দ্র ডা. কালীপদ বসু নানা প্রকার চাউল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের বিশ্লেষণ করে চলেছেন... সেই সময়ে খবর এলো চীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব-রসায়নে অভিজ্ঞ পর্যটক এসেছেন ভারত ভ্রমণে।’ দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি শিখে এসেছেন মাছের তেল থেকে, লাল চাল থেকে নানান খাদ্যপ্রাণ সংগ্রহের উপায়, 'রাজপুতানা, বোম্বাই, পাঞ্জাব দিল্লি বেড়ানো শেষ হলো, সব শেষে পূর্বপ্রান্তের শহর ঢাকায় তিনি উপস্থিত হলেন।’
বোস জানাচ্ছেন,

‘চীন দেশে আধুনিক রসায়নের তখন সবে পত্তন হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে, যন্ত্রপাতি কিংবা ঔষধপত্র সব আসছে বিদেশ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই সালফোনামাইড ও তার নানা যৌগিকের প্রস্তুতি চলছে শুনে চীনা বিজ্ঞানী চ্যাঙ-এর প্রথমে বিশ্বাসই হতে চায় না! তারপর, 'আমাদের নিমন্ত্রণে এসে স্বচক্ষে প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপ অতিক্রম করে শুদ্ধবস্তুতে উপনীত হতে দেখলেন। এই প্রত্যক্ষ জ্ঞানের পরিবর্তে আমরা চাইলাম তার কাছে সয়াবিন থেকে কিভাবে চীনদেশে দুধ তৈরি হয়, তার সন্ধান। কাশ্মীর থেকে আনা অনেক সয়াবিন শ্রীমান কালিপদ যত্ন করে রেখেছিলেন। তা থেকে যথানিয়মে দুধ তৈরি হলো, দুধ থেকে ছানা। চীনা হালুইকরেরা নাকি নানা মিষ্টান্ন এই ছানা থেকেই তৈরি করে।’

সত্যেন বোসের সেদিন মনে হয়েছিল, “চীন আর ভারত দুটি জাতিই বিরাট প্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী ও হয়তো প্রাচীন পন্থী, তবে অগ্রগতিতে চীনারা আমাদের চেয়ে একটু পিছিয়ে রয়েছে।”

ভারতবর্ষ তখনো বৃটিশের অধীন। ২৪ বছর বাদে স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসেবে এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন তিনি, লেখেন, 'শত্রুকে অশ্রদ্ধা করলেই বিজয়লক্ষী অঙ্কগত হন না। আমাদের ২৪ বছরের অগ্রগতির ছবির সঙ্গে চীনের তুলনা করে গর্ব করার মত কিছু খুঁজে পাই না। এর জন্য ভারতের বিজ্ঞানীরা কতটুকু দায়ী?'

চীনের অগ্রগতির ধারার অজস্র সমালোচনা সম্ভব, প্রয়োজনও। কিন্তু কোনো না কোনো উপায়ে সে এমন একটা শক্তি ও প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পেরেছিল, সৃষ্টি করতে পেরেছিল জাতীয় জাগরণের একটি আবেগ। ওই চ্যাঙ আসলে একা নন, অগ্রজ বিজ্ঞানীকে, মানুষকে স্বদেশের পানে, সাধারণ মানুষের প্রয়োজন আর চাহিদার পানে ফিরে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিল। এর নিদর্শন শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীতেও পাওয়া যাবে, ১৯৫১ সালে তিনি চীন ভ্রমণে গিয়ে এই নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন, যা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতার নামে পাকিস্তান কেমন একটি জাহান্মামে পরিণত হয়েছে আর চীন নিজের জনগণের শক্তিকে জাগিয়ে তুলছে। একই পর্যবেক্ষণ সত্যেন বোস জাপান নিয়েও করেছেন, দেশের মানুষের রুদ্ধ সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে, তাকে মুক্ত করে কিভাবে বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন তারা করেছিল। অন্য জাতিগুলোও এটা যতটুকু পেরেছিল, ততটুকুই তাদের বিকাশ হয়েছে। হালে ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াবার সবচে সতেজ উদাহরণ হযতো ভিয়েতনাম। এই উন্নয়নের নানান রূপ থাকতে পারে, দেশভেদে বস্তবতা ভেদে তার নানান বহিঃপ্রকাশ থাকতে পারে। কিন্তু কোনো না কোনো ধরনে এই আবেগকে জাগাতে হবে। বাংলাদেশের এক প্রণম্য অর্থনীতিবিদ, আনিসুর রহমান একটি বই লিখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পরেকার জাগরণ এবং দ্রুতই লুণ্ঠন আর ক্ষমতার আস্ফালনে তার অপমৃত্যুজনিত অনতিকালের হতাশা নিয়ে, নামটাও তাৎপর্যপূর্ণ: ‘যে আগুন জ্বলেছিল’।

চীন তার মুক্তির পর অচিরেই মাতৃভাষাকেই নতুন শেখা জ্ঞানের মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছিল। আমাদের দেশে ভাষা আন্দোলনেরও যারা নেতা ছিলেন, তাদের সামান্য সংখ্যকের নাতি-নাতনিরা মাতৃভাষায় কম-বেশি লিখতে পারেন, পরের প্রজন্ম আরও কম পারবেন। ঢাকা শহরেই এখন বাংলা আদৌ না জানা বা ভাঙা ভাঙা বাংলা বলা বাঙালি শিশুরা অস্তিত্বমান। এটা এই শিশুদের দোষ না, তাদের অভিভাবকদের উদাসীনতাও কার্যত কিছুটা দায়ী হলেও প্রধান কারণ রাষ্ট্র, তার বর্তমান বন্দোবস্তে মাতৃভাষা না জানা থাকলেও তাই চলে।

আসল বিষয় তো হলো এই যে, শরীরের সব রক্ত আমরা মুখে জমা করেছি। ভাষা সেই ঘটনারই নিদর্শন মাত্র। প্রতিটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে, মাতৃভাষায় শিক্ষার বিস্তার ঘটায়। প্রাচীন অক্সফোর্ড থেকে শুরু করে আধুনিক টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, নিজের জাতির ইতিহাসে এটিই তাদের প্রধান ভূমিকা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থাটির দিকে তাকানো যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থার গ্রন্থতালিকা পাঠে জানা যাবে ১৯২৬ সালে প্রকাশনা সংস্থা যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালের আগে পর্যন্ত একটিমাত্র বাংলা বই, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ অনূদিত ‘আদব কি তারিখ’ প্রকাশ করেছিল ১৯৫৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা। এরপর ১৯৭২ সালে একটি, ’৭৮ সালে একটি, এভাবে করে করে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫৬টি পুস্তকের বিশাল ‘বহর’ সাজিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি। অন্যদিকে ইংরেজি বইয়ের বেলায় ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত ১৪টি এবং এখন পর্যন্ত মোট ১০৭টি। দেশের আদিতম বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকাশনা সংস্থার মোট প্রকাশনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯ বছরে ১৬৩টি। এর মাঝে গোটা বিশেক বই আবার মুদ্রণ ফুরিয়েছে বছর কয়েক আগে।

তো? দেশবাসীকে একইভাবে জ্ঞানবঞ্চিত রেখে প্রতিবেশী ভারতেরও দুয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় সেরা তালিকায় এখনি আসতে পারে। কারণ সেখানে এই পরজীবী উচ্চবিত্তের সংখ্যা আমাদের দেশের তুলনায় বেশ খানিকটা বড়। কাজেই তাদের সেরা তালিকায় তাদের কারো কারো অবস্থান নিয়ে ঈর্ষা করার কিছু নেই। সামনের দিনে আমাদেরও কোন কোনটি সেই তালিকায় জায়গা করে নেবে, এদেশেও মধ্যবিত্তের বিষ্ফোরণ ঘটছে বটে। কিন্তু মৌলিক আবিষ্কারে কীভাবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা করবে সেই সব জাতির সাথে যারা মাতৃভাষায় জ্ঞানকে প্রসারিত করে সম্ভাব্য সকল ভবিষ্য প্রতিভার বিকাশের সুযোগ যথাসম্ভব খুলে রেখেছে? কীভাবে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করবে, যাদের জ্ঞানচর্চার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য দেশবাসীর সঙ্কটের সমাধান সম্ভব—সেটা প্রযুক্তিগত, জ্ঞানগত কিংবা রাজনৈতিক যে চরিত্রেরই হোক না কেনো?

সত্যেন বোস কার্যকর একটি পদ্ধতি হিসেবে অনুবাদকে গুরুত্ব দিয়েছেন, আইনস্টাইনের লেখা তিনিই প্রথম ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। কিন্তু জ্ঞানচর্চার ও জ্ঞান প্রচারের মাধ্যম হতে হবে মাতৃভাষা, অনুবাদের কর্মযজ্ঞের লক্ষ্য তার কাছে এই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাই লেখেন:

‘যারা বলেন, ইংরেজি যদি কম শেখানো হয় তাহলে আমাদের দেশের জানালা বন্ধ করে দেওয়া হবে—যার মধ্যে দিয়ে আসে জ্ঞানের আলোক ও স্বাধীনতার বাতাস, তারা ভুল ধারণা করেছেন যে, চিরকাল ভারতবর্ষের চতুর্দিকে কারাগারের উঁচু পাঁচিল থাকবে এবং আলো আসবে উপর থেকে যেটা কেবল মাত্র উপরতলার শিক্ষিত লোকের কাছে পৌঁছুবে এবং সেটা তারা যেমন বুঝবেন সেই রকম নীচের অজ্ঞ লোকদের কাছে পৌঁছে দেবেন। এইভাবে দেশের উন্নতি করা কষ্টদায়ক। তাছাড়া সকলের দায়িত্ব অল্পসংখ্যক লোকের একটি শ্রেণীর উপর চিরকালের জন্য চাপানো উচিত নয়। দেশের লোকের উচিত নিজেদের বোঝা নিজেদের বওয়া। আমরা পনেরো বছরেও এ কাজে বিশেষ আগাতে পারিনি।’
বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে ধারাবাহিক একটি আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় ব্রতী হয়েছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। “তার অন্তরের সেই আকুতি ও আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য কলকাতায় ১৯৪৮ খৃস্টাব্দে সত্যেন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠা করেন ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’; যার মূল লক্ষ্য: জনসমাজকে বিজ্ঞানে সচেতন করা, জনকল্যাণে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার এবং মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচলন—তারই জন্য—পরিষদের মুখপত্ররূপে প্রকাশ করেন ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা। অনেক সমালোচনা, অনেক ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ উপেক্ষা করে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করেছেন মাতৃভাষায় বিজ্ঞান প্রচার ও প্রসারের জন্য। “চ্যালেঞ্জ নিয়ে, ১৯৬৩ খৃস্টাব্দের ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’- এ কেবলমাত্র মৌলীক গবেষণা নিবন্ধ দিয়ে ‘রাজশেখর বসু সংখ্যা’ প্রকাশ করে তিনি দেখান, বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানের মৌল গবেষণাা নিবন্ধও রচনা সম্ভব।”

‘বিশ্বপরিচয়’ এর উৎসর্গনামায় রবীন্দ্রনাথ অনুপ্রাণিত করেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চায়। মৃত্যুর মাত্র বারোদিন আগে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’ পত্রিকার জন্য ডাকে ফেলা পত্রটিতে সম্পাদককে অভিনন্দিত করে এবং পত্রিকাটি পাঠ করে প্রচুর আনন্দ পাবার কথা উল্লেখ করেও সত্যেন বোস তার চিন্তার মৌলিকত্ব দেখিয়েছেন এই পরামর্শটিতে:

‘‘তবে একটি কথা বলে আপনার মনোযাগ আকর্ষণ করতে ইচ্ছা করছে। বিদেশে যেসব অদ্ভুদ আবিষ্কার হয়েছে সেই কথাই শুধু প্রচার করা এদেশের বিজ্ঞানীর মুখ্য ধর্ম নয় বলে আমার ধারণা। নিজের দেশের সঙ্গে নিবিড় পরিচয়, তার গাছপালা-জীবজন্তুর কথা, তার নদ-নদী, কৃষি-বাণিজ্য এবং শেষাবধি বর্তমান দেশের মধ্যে যেসব নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দিলে দেশে বিজ্ঞানের হাওয়া চলবে ও মনোভাব তাড়াতাড়ি বদলাবে বলে আমার ধারণা।”

 

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম