X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু নেদারল্যান্ডসে নয়, পৃথিবীতে খ্যাত

মূল : মারটাইন ড্যা রোই ।। অনুবাদ : তানবীরা তালুকদার
২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৩:৫২আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১১

শুধু নেদারল্যান্ডসে নয়, পৃথিবীতে খ্যাত

পৃথিবীতে প্রায় সকলেই জানে, গড ক্রিয়েটেড দ্যা আর্থ বাট দ্যা ডাচ ক্রিয়েটেড দ্যা নেদারল্যান্ডস  প্রাকৃতিক দুর্যোগে পর্যুদস্ত দেশটি, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে শুধু পরাস্তই করেনি, তাকে নতুন রূপে, নিজেদের পছন্দ ও সুবিধে মত সাজিয়ে নিয়েছে। প্রকৃতির রূপরেখা এখন ডাচেদের নিজেদের হাতে বন্দী। আচ্ছা, এর শুরুটা হলো কীভাবে? কাকে দিয়েই বা শুরু? সেই গল্পটি জানতে হলে আমাদেরকে অনেকটা পেছনে যেতে হবে।

“হান্স ব্রিঙ্কার” - আমেরিকানরা এই নামটি হাজার বার শুনেও অতৃপ্ত রয়ে যায়, তাদের চোখে তিনি হলেন মহাপরিক্রমাশীল সমুদ্রের বিরুদ্ধে এই ছোট নেদারল্যান্ডসের জয়ের যে ইতিহাস তার অবতার। আর “হান্স ব্রিঙ্কার” হলেন পৃথিবী বিখ্যাত সেই ডাচ নাম, যিনি বস্তুত নিজের দেশে অপরিচিত। আর তাঁর সম্পর্কে সাধারণ ডাচে’রা যা জানে বা ভাবে সেটাও খুব ভুল।

“হান্স ব্রিঙ্কার”- এর চেয়ে বেশি ডাচ কোন নামটা হতে পারে? একটি বাঁধে’র গর্তে আঙুল ঢুকিয়ে তিনি জগদ্বিখ্যাত হয়ে গেলেন, এই ভাবে নিজের দেশকে মারাত্মক বন্যার কবল থেকে রক্ষা করলেন। স্পার্নডামের এই বালকটি, তখন মাত্র আট বছর বয়স ছিল, তাকে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত, সব কিছু পুরো মাত্রায় নিরিবিলি হলে তবেই সে কাজটি করতে পারত, সত্যিকারের একটি বীরোচিত কাজ। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ডাচেরা তার ভাস্কর্য স্থাপন করেছে, বাস্তবে তিনটি, স্পার্নডামে, হারলিঙ্গেনে আর ছোট ছোট বাড়ি ঘর দিয়ে সাজানো নেদারল্যান্ডস পার্ক ডেনহাগের মাডুরাডামে। 

যদি পথ চলার সময় একজন ডাচ নাগরিককে জিজ্ঞেস করা হয় এই বালকটির কথা, প্রবল সম্ভাবনা আছে উত্তর পাওয়ার, কে! একজন বীর? ভাস্কর্য? আসলে, ডাচেরা সেই জাতিই না যারা কোন বড় কারণ ছাড়া তাদের স্বদেশী বীরের ভাস্কর্য তৈরি করবে, কিন্তু তারা ব্রিঙ্কার এর ব্যাপারে বড্ড বাড়াবাড়ি করছে। এত এত শ্রদ্ধা’র পরেও বেশির ভাগ মানুষের কোনো ধারণাই নেই,  কে ছিল সে! খুব বেশি হলে, একজন বা দুজন হয়ত এগিয়ে এসে অনিশ্চিত গলায় বলবে, ওই ছেলেটা না যে আঙুল দিয়ে বাঁধের পানি আটকাত? 

কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বাইরের গল্পটা খুব অন্যরকম : তার বীরোচিত কাজ খুব প্রশংসিত। আমেরিকানরা তো নির্দিষ্টভাবে হান্স-এর বিরাট সমর্থক, মহাপরিক্রমাশীল সমুদ্রের বিরুদ্ধে ছোট এই নেদারল্যান্ডসের জয়ের ইতিহাস। এই বইটি প্রকাশের সঙ্গে-সঙ্গেই বিরাট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এটি এমনই একটি গল্প যে আমেরিকানরা শুনে শুনে কিছুতেই আশ মেটাতে পারে না।

হান্স ব্রিঙ্কার কিংবা দ্যা সিলভার স্কেইটস হলো বইটির নাম, ১৮৬৫ সালে ম্যারি মেপস ডজ এটি লিখেছিলেন। বাচ্চাদের বইয়ের এই লেখিকা কখনও নেদারল্যান্ডসে বেড়াতে আসেনি কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন, উত্তর সমুদ্রের পাশের এই বন্ধুসুলভ রাষ্ট্রটিকে তার পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করতে। তিনি তার বইয়ে আবেগপূর্ণভাবে আমেরিকানদের মত করে নেদারল্যান্ডসকে এঁকেছেন— দেশভর্তি উইন্ডমিল, পানি, বরফ আর স্কেইটস। গল্পে হান্সের মূল দুঃসাহসিক কাজ ছিল,  এক জোড়া রুপো’র স্কেটিং জুতো জয় করা এবং নিজের দুঃস্থ পরিবারকে স্কেটিং প্রতিযোগিতায় জিতে বাঁচিয়ে রাখা।

এই বইয়ের অন্য সমস্ত উপকরণের মত,  ছোট হান্স ও ছিল লেখিকার কল্পনা। হান্স ব্রিঙ্কার বলে সত্যি কেউ কখনো ছিল না যে একা একটি ফুটো হয়ে যাওয়া বাঁধকে রক্ষা করার কল্পনা করত, সেটা এই বইয়ে হান্স ও করেনি কিন্তু একটি নামহীন অন্য আট বছরের বালক যে “হার্লেমের বীর” বলে পরিচিত তার সাহসী কর্মকাণ্ডকে বইয়ে হান্সের ওপর আরোপ করা হয়েছে। তারপরও বইটি সারা পৃথিবী জুড়ে বিরাট আবেদন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং পৃথিবী জুড়ে নানা ভাষায় তা ভাষান্তর করা হয়। জাপান এবং আমেরিকা’তে মিলিয়ন কপি’র ওপর বইটি বিক্রি হয়েছে। হান্স ব্রিঙ্কার পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত হয়ে গেলো এই বলে, “ বাধের গর্তে আঙুল ঢোকানো সেই ছেলেটি”। 

বইটি নেদারল্যান্ডসেও প্রকাশিত হয়েছিল কিন্তু মোটেও তেমন জনপ্রিয় হয়নি। যদিও এর মধ্যেই বাইরে থেকে তীর্থযাত্রীদের স্পার্নডামে আসার ভীড় শুরু হয়ে গিয়েছিল, সবাই একবার সেই ছোট বীর ছেলেটার ছুঁয়ে দেয়া সত্যিকারের জায়গাটা দেখতে চায়। পর্যটন কর্তৃপক্ষের তার ভাস্কর্য স্থাপন না-করে আর কোনো উপায় ছিল না। যেখানে এখন পর্যটকরা ডাচবাসীদের ব্যাখ্যা করে হান্স ব্রিঙ্কার আসলে কে ছিল। হান্স ব্রিঙ্কারকে অবশ্য অনেক সময় “পেইটার অফ হার্লেম” নামেও ডাকা হয়ে থাকে। হ্যাঁ। অবাক হলেও এটাই সত্যি! ডাচ বীর এখনও সাধারণ ডাচদের কাছে অপরিচিত, ডাচ স্কুলেও এর কোনো নাম গন্ধ উল্লেখ নেই!

উনিশ শতকের একটি রঙিন ওলন্দাজ জীবনের পরিপূর্ণ বর্ণনা এই বইটিতে পাওয়া যাবে। এই বইয়ের মাধ্যমে আমেরিকানরা ডাচদের নিজস্ব “স্পিড স্কেটিং” খেলাটি সম্বন্ধে জানতে পারে। এই বইটিকে ভিত্তি করে বেশ কয়েকটা সিনেমা তৈরি হয়েছে,  যার মধ্যে  উনিশ শো আটান্ন সালে “Hallmark Hall of Fame”, উনিশ শো বাষট্টি সালে ওয়ার্ল্ড ডিজনি থেকে দুই পর্বের টেলিফ্লিম, উনিশ শো ঊনসত্তর সালে এন বি সি থেকে বানানো মিউজিক্যাল টেলিফ্লিম, উনিশ শো আটানব্বই সালে বানানো “homage, Brink” বিখ্যাত। এই বইটি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আরও দুজন বাচ্চাদের জন্যে এই গল্পটি নিয়েই আরও দুটো বই লেখেন, যার একটি The Hole in the Dike, by Norma Green (1974) আর অন্যটি হলো, The Boy Who Held Back the Sea, by Lenny Hort (1987)।

বইটি’র আরও কিছু বিখ্যাত ভার্সন আছে অন্য লেখকদের দ্বারা লেখা কিংবা সম্পাদনা করা,  ইউ.কে-তে আঠারশো পঞ্চাশ সালে Sharpe's London Journal-এর সম্পাদনায় "The Little Hero of Haarlem" এবং Eliza Cook's এর সম্পাদনায় "The Brave Little Hollander", আঠারশো পঞ্চান্ন সালে  Beeton's এর সম্পাদনায় আছে "The Little Dutch Hero",  আঠার শো তেষট্টি সালে J.S. Laurie’র আছে “The Little Dutch Hero", ইউ.এস.এ-তে আঠারশো ছাপান্ন সালে Julia Matilda Olin's-এর বই “A Winter at Wood Lawn” সহ আরও অনেকগুলো।

আগ্রহী যারা তারা এই পুরো বইটি অনলাইনে ফ্রি পড়তে পারেন : Hans Brinker, or The Silver Skates complete book readable free online on Google Books.

 

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী