একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে জিনাত জাহান খানের তৃতীয় কবিতার বই 'শর্তহীন দেবদারু'। বইটি আজ থেকে মেলায় থাকবে। প্রকাশ করেছে জেব্রাক্রসিং প্রকাশনী। পাণ্ডুলিপি থেকে তিনটি কবিতা প্রকাশ করা হলো।
পরিচয়
১। আমি রাখাল বালিকা! পুরুষের দায়িত্ব বুঝে নিতে পৃথিবীতে এসেছি...
১। আমি জিনাত জাহান খান। পাখি হয়ে নয়, নিজের পরিচয় নিয়ে উড়ে যেতে চাই...
১। আমি নারী, আমি ডাকাত ভালোবাসি।
নিখোঁজ
রাতের খাওয়া শেষ হলো। এঁটো বাসন কোলে নিয়ে মা যাচ্ছেন কলতলায়। বাবার সামনে হারিকেন ধরে আমি বাবাকে
সাহায্য করছি আমাদের গরুকে গোয়ালজাত করার উপায়ে। সবাই ফিরে এলাম আমাদের ঘুমের কিনারে। ঘুম থেকে উঠে
তো অবাক। দেখি, আমাদের ওপার বলে কিছু নাই। সারা গ্রামে সকাল উপস্থিত হয়েছে শুধু আমাদের বাড়িটিকে উপেক্ষা
করে। ঘুম ছিল আমাদের রাত অতিক্রমের যানবাহন। তাহলে আমাদের ঘুম কি যানবাহনের প্রকৃত চেহারা পায়নি?
আমাদের এমন সীমাহীনতায় ফেলে কীভাবে ভেঙে গেলে, ঘুম? আমার বাবা জ্যামিতি বুঝতেন না; আমাদের বাড়িটি বৃত্তের
আকার পেয়েছিল।
সহপাঠীদের স্কুলে যাওয়ার শব্দ; আমাদের স্কুলের বেলা হয়ে যাচ্ছে...
সকালের খাবার শেষে বাবার প্রতিবেশী কৃষকেরা পুনরায় মাঠের দিকে যাচ্ছেন...
মায়ের প্রতিবেশী বধূরা সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে তার আলোর সংসারে বসে স্বামী-সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন...
অথচ, আমরা কেউই আমাদের সীমানা ভেদ করতে পারছি না।
কী হচ্ছে আমাদের সাথে-
আমি বেণী করতে গিয়ে চুল খুঁজে পাচ্ছি না...
বাবা হয়তো লাঙল খুঁজতে গিয়ে আমাকে খুঁজে পাচ্ছেন না...
মা হয়তো আমাকে খুঁজতে গিয়ে বাবাকে খুঁজে পাচ্ছেন না...
প্রার্থনা
প্রদর্শনী শেষে অচল মুদ্রাগুলো তুলে রাখি...
যে কোনো বিদায় আমাকে মৃত্যু নয়
বরং আত্মগোপন শিখিয়েছে।
দাঁড়ানো একটা দেবদারু গাছে
উঠে গেছে মোহময়ী প্যাঁচানো লতারা শর্তহীন।
তারপরেও - আলো, এসো; এই রাস্তা ধরে
এখানে দুপুরবেলায়, কিছুটা শীতকালে, জেগে ওঠে যে ফুল
আকুলস্বরে সে প্রস্ফূটিতকে ‘জিনাত জিনাত’ বলে ডাকো।
০২.
কিছুটা মাছের জন্ম আমিও পেয়েছি।
দেখেছি ডুবসাঁতার শেষে, অবশিষ্ট ঝড়;
ম্লান কোনো সাবমেরিন -
যেন ভিনদেশে
শত্রুবাহিনীর কাছে নিদারুণ পরাস্ত!
০৩.
পুঁতির মালা-ভর্তি দিনগুলো কার কাছে
জমা রেখেছো?
এইসব লাল, লালেরও অধিক কোনো লাল
মনে পড়ে...
আমার দেবদারু...
তার কোনো বন্ধু নেই
শর্ত নেই, কী যে ভীষণ নিঃসঙ্গ সে।
আমি তার নিঃসঙ্গতার উপর -
ঢেউয়ের প্যাঁচ নিয়ে উঠে যাচ্ছি;
শর্তহীন শর্তহীন বলে আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছি
আমার দেবদারুর বিচ্ছিন্নতায়।
০৪.
এসো দেবদারু, সপ্রাণে, কেঁপে কেঁপে
তারপর সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়ে,
বলো- ‘জিনাত, ওগো জিনাত...’
বাষ্পিত হাওয়ার দল, এই তপ্ত গ্রহের গান
তুমিই বাজাও...