X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিগনিভ হার্বাট-এর কবিতা

অনুবাদ : অনন্ত উজ্জ্বল
১৩ মার্চ ২০১৮, ১৮:১২আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৩৭

জিগনিভ হার্বাট-এর  কবিতা

জিগনিভ হার্বাট ১৯২৪ সালের ২৯ অক্টোবর ইউক্রেনের লিবিব শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর পোলিশ কবি, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী। তার জনপ্রিয় রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে “Struna światła“ (The Chord of Light), “Hermes, pies i gwiazda” (Hermes, Dog and Star), “Barbarzyńca w ogrodzie” (The Barbarian in the Garden) and “Pan Cogito” (Mr. Cogito).তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট বিরোধী এবং পোল্যান্ড প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য গঠিত হোম আর্মি (একে)-এর একজন সক্রিয় কর্মী। হারবার্ট তার আন্তরিক সমর্থন দিয়েছিল সলিডারিটি আন্দোলনে। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক আইন লঙ্ঘনের পর, গোপনে অনুষ্ঠিত সলিডারিটি মিটিং-এ তার কবিতা আবৃত্তি করা হতো। ৩৮টি ভাষায় হারবার্ট-এর কবিতা অনূদিত হয়েছে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২৮ জুলাই পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশোতে মৃত্যুবরণ করেন।

 

কথা

আমি সমুদ্র তীরে হাঁটছি

সেই কথাগুলো শোনার জন্য

যে কথাগুলো একটা ঢেউ ভেঙে

আর একটা ঢেউয়ের উপর পড়লে হয়।

 

কিন্তু এখানে কোনো কথা নেই

শুধু জরাজীর্ণ পানির বাচালতা

এখানে লবণও নেই

শুধু একটা সাদা পাখির ডানা

আটকে আছে হৃদয়হীন পাথরে।

 

আমি বনের মধ্যে হাঁটছি

এখানে শুধু হাঁটতেই হয়

এ যেন গুনগুন গানের অসাধারণ এক কাচ-ঘড়ি

এখানে পাতাগুলো মাটিতে

মাটি পাতায় মিশে আছে

পোকা-মাকড়ের শক্তিশালী মুখ

পৃথিবীর নীরবতা উপভোগ করে।

 

আমি মাঠের মধ্যে হাঁটছি

এ যেন সবুজ আর হলুদের চাদর

এখানে আবদ্ধ মানুষ কথা আর পোকার যন্ত্রণা

গান হয়ে ভেসে আসে বাতাসের প্রতিটি স্পর্শে।

 

কোথায় সেই গান?

কিছু বলা কি উচিত হবে?

যখন কিছু সময়ের বিরতি আছে এখানে।

অক্লান্ত পৃথিবীর নাটকীয় দৃশ্যে

কিছুই নেই

শুধুই ফিস ফিস শব্দ আর

বিস্ফোরণের হাততালি।

 

আমি বাড়ি এসেছি

বিকল্প আকৃতির

অভিজ্ঞতা অর্জন করতে

এখানে হয় পৃথিবী বোবা

অথবা আমি কালা।

 

সম্ভবত আমরা দুটোই

বধির আর বোবা

এ আমাদের দুঃখ কষ্টের প্রতিবাদ।

 

তাই তো আমাদের হাতের মধ্যে হাত

অন্ধের মতো পথ চলা

নতুন দিগন্তের দিকে

সংকীর্ণ পথে

যেখান থেকে উৎপত্তি হয়

সংশয়ের বুদবুদ।

 

যাত্রাবিরতি

আমরা একটা শহরে হঠাৎ থেমে ছিলাম

আমন্ত্রণকারী টেবিলটাকে বাগানের দিকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন

আজকের আকাশের প্রথম তারাটি চকচকে এবং বিবর্ণ

আমরা রুটি কাটছিলাম

গোধূলি বেলায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনে মনে হচ্ছিল

এ যেন বিরামহীন ঝগড়া

কান্না কিন্তু এ একটি শিশুর কান্না

কান্নাভরা পৃথিবীর ঘন গন্ধে

মানুষ আর পোকা-মাকড়ের ছোটাছুটি

তারা উভয়ে বসে আছে

এই পৃথিবীর দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে

অথচ দেয়ালের ওপরে মৃত মানুষের ঘন সারি।

 

আমরা অনেক খেলাম

কিন্তু কেউ কোনো দাম পরিশোধ করলো না।

রাজার বিবরণ

রাজার দাড়ি যতোই আকর্ষণীয় আর সুন্দর হোক

তা ধারালো কুড়ালের মতো নিষ্ঠুর না হলে ব্যর্থ।

হঠাৎই স্বপ্নে দৃশ্যমান হয় একজন নিন্দিত মানুষের মৃত্যু

এবং একটি মোমবাতির মৃদু আলো একা একাই জ্বলছে অন্ধকারে।

 

একটি হাত অনেক মাংস ছেঁড়ার জন্য

যেনো সমস্ত শরীর ছেঁড়ার জন্য

এর মধ্যে একজন কৃষক

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে কয়েক ইঞ্চি এগিয়ে গেলো

একটি যুদ্ধজাহাজের দিকে।

 

রাজদণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী হাতের ক্ষমতা কমে গেছে

পার্থক্যগুলো ধূসর হয়ে

বেড়েই চলেছে

প্রচীনকাল থেকে একটি প্রাচীন মুদ্রার মতো।

 

এক ঘণ্টায় কাচ-ঘড়ির ভেতর থেকে

ধীরে ধীরে হৃদয়ের বালি গড়িয়ে পড়ে

মূল্যহীন একজোড়া জুতো

এক কোণায় পড়ে আছে সতর্কাবস্থায়

হতাশ রাজা রাতে যখন সিংহাসনে বসে

তখন হারায় তার বুদ্ধিজ্ঞান।

 

দুই ফোঁটা

 “যখন আগুনে বন পুড়ছে

তখন গোলাপের জন্য দুঃখের সময় কোথায়?” — Juliusz Słowacki

 

বন পুড়ছিলো আগুনে—

সেই আগুন আঁচের ছোয়া

লাগছিলো ঘাড়ে

যেমন করে হাত স্পর্শ করে

গোলাপ ফুলের তোড়া।

 

মানুষেরা আশ্রয়স্থলের দিকে দৌড়াচ্ছে—

একজন বললো তার বউয়ের অনেক লম্বা ঘন চুল ছিলো

সেই গভীর চুলের মধ্যে সে হারিয়ে যেতে পারতো।

 

তারা ফিসফিস করে লজ্জাহীন কথা বলতো

একটা কম্বলের নিচে শুয়ে

সেই কথাগুলো শুধুই তাদের

যারা একে অপরকে ভালোবাসে।

 

যখন পরিস্থিতি খুব খারাপ হতো

তখন তারা আক্রমণ করতো একে অন্যের চোখে

এবং তাদের দমন করা ছিলো খুবই কষ্টকর।

 

চোখেন সামনে আসা আগুনের শিখা

গভীরভাবে বুঝেনি তারা।

 

শেষ পর্যন্ত তারা সাহসী ছিলো

শেষ পর্যন্ত তারা বিশ্বস্ত ছিলো

শেষ পর্যন্ত তারা একই রকম ছিলো

দুইটি বিন্দুর মতো

চোখে মুখে আঘাত করে।

 

বিশেষ কিছু না

বিশেষ কিছু না

কাঠে রং করা

নখে রং মাখানো

কাগজ সেলাই করা

 

কোনো একজন শিল্পী

পৃথিবী তৈরি করেছেন

পরামাণু শক্তি থেকে নয়

এমনকি কোনো কিছুর অবশিষ্টাংশ থেকেও নয়।

 

জলন্ত আগুনের বন

দেখা যায় ছাতার নিচ থেকে

ঝরনা কলমের কালি থেকে

তৈরি হয় ইনিয়ান সাগর।

 

ঠিক যতক্ষণ পর্যন্ত

তার দৃষ্টি সুন্দর হয়

ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত

তার হাত নিশ্চিত হয়—

 

এটায় পৃথিবীর প্রবঞ্চনা—

 

ফুলের হুক

ঘাসের সুইয়ের উপর

তারের মেঘ বাতাসের টানে

সীমা রেখার বাইরে।

 

অলঙ্ককরণ : আল নোমান

//জেড-এস//
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
ইচ্ছা
সর্বশেষ খবর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বাধিক পঠিত
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!