X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

বিহঙ্গবালক ।। মঈনুল হাসান

.
২৯ মে ২০১৮, ১৬:০৯আপডেট : ০৭ জুন ২০১৮, ১৪:০৮

বিহঙ্গবালক ।। মঈনুল হাসান

শহরের উন্নিদ্র কোলাহল ছেড়ে মফস্বলের অপেক্ষাকৃত ছিমছাম এক কোণে আমার আগমন ঘটে যায় একদিন। তবে এটা দৈবসিদ্ধ কোনো ব্যাপার ছিল না; অথবা অন্তর্গত মনোবেদনার দ্বন্দ্ব বিষয়ক অবস্থানও নয়—জীবিকার অন্বেষণে ব্যস্ত মানুষের জীবনে এমন সম্পূরক ঘটনা সচরাচর ঘটেই থাকে। সেই সূত্র ধরে অর্থাৎ চাকুরির অনিচ্ছাকৃত বদলির সুবাদে কোনো এক মধ্যাহ্নের পর শহরের সন্নিকটে আমার উপস্থিতির যথার্থতা নিশ্চিত হয়ে যায়।

ভ্রমণের এমন নিশ্চিত সুযোগে দেশের ভূগোল সম্পর্কে এভাবেই আমার টুকটাক জানা হয়ে যায়। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সকল সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে কিছুদিন বসবাসের পর অনিচ্ছা থেকে ইচ্ছার প্রাবল্য অধিক হতে থাকলে একটা আত্মিক যোগাযোগ ঘটে যায় সেখানে—পাশাপাশি বাড়তি যেটা যোগ হয় তা হলো সেখানকার মানুষের জীবনাচার দর্শন ও জীবনবোধের গভীরতা পরিমাপের। মানুষকে পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি করে যাবতীয় ভূয়োদর্শন অর্জন শেষে মনের ভেতর মানুষ জমানোর চেষ্টা আমার বহুদিনের খেয়াল। ঈশানপুরে আগমনের পরেও এক্ষেত্রে তেমন ব্যতিক্রম ঘটে না। বরং মানুষ দেখতে দেখতে একদিন আমার নতুন গল্পের চরিত্রটি এখানে আবিষ্কার হয়ে যায়।

অঘ্রান মাসের শেষের দিকে কোনো এক বিকেল ছিল সেদিন। মৃদুমন্দ ঠান্ডা হাওয়ায় চারদিক মুড়ে ছিল বলে তিরতির করে কাঁপছিল ছেলেটি। অফিস ভবনের সম্মুখে গাড়ি থেকে নামতেই হুলুস্থূল কাণ্ড বাঁধিয়ে ছুটে এল সে। আমাকে তার মলিন জামার দিকে আঙুল ইশারা করে কী যেন বলতেও শুনলাম। ভাঙাচোরা সে ভাষা শুনে কিছু বুঝবার বা বলবার আগেই আমার হাতে থাকা চামড়ার ছোট্ট হাতব্যাগটি কেড়ে নিয়ে আবার একছুটে কোথায় জানি পালিয়ে গেল সে।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে শুধু দাঁড়িয়ে থাকি। অতঃপর আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা মানুষগুলোর কাছ থেকে তার সম্পর্কে আশ্বস্ত বাক্য শুনে ধীর পায়ে এগিয়ে যাই সামনে। সত্যিকার অর্থে আমি তার কথাগুলো ঠিক খেয়াল করতে পারিনি। তবে চলে যাওয়ার আগে ছেলেটির মুখের কোণে লেগে থাকা নির্মল হাসি এক ফালি রোদের মতো শেষ বিকেলের আলোয় মিশে গিয়েছিল। একবার মনে হলো আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর ফাঁকে হয়তো কিছু একটা বলতে চেয়েছিল সে। তার প্রস্থান পথটি অনুসরণ করে আমি এগিয়ে যেতে থাকলাম আমার কর্মকক্ষের দিকে। আমার অনুমিত প্রত্যাশার সাথে সঙ্গতি রেখে সেখানেই ছেলেটির সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হলো। আমি তার বুদ্ধিমত্তায় অবাক হয়ে যাই—হয়তো এভাবেই সে অভ্যর্থনা জানাতো আমার পূর্বতনদের। 

মাঝে মাঝে এক আধদিন বারান্দায় কয়েক দণ্ডের জন্যে দেখতাম ছেলেটিকে। আমার কক্ষের কাঠের দরজা একটুকু ফাঁক করে নিশ্চুপ হাসি বিনিময় করে কী সব বলে দৌড়ে পালিয়ে যেতো এদিক ওদিক। তার এ অবাধ বিচরণের রোজনামচার সাথে আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠি ধীরে ধীরে। তবে ভাষা আর ভাষাহীনতার আশ্চর্য সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দুজনের মাঝে প্রত্যাশিত দূরত্ব সচল থেকে যায়।

দেলোয়ারকে একদিন ডেকে বললাম, ছেলেটি কে? দেলোয়ার আমার অফিস সহায়ক; ফুট ফরমায়েশ খাটে।

সবিনয়ে সে উত্তর দেয়, কে স্যার?

এই তো খানিক আগে যে ছেলেটি এসে হড়বড় করে কী সব বলে গেল তার কথাই জানতে চাইছি।

আমার কথায় খুব একটা গুরুত্ব দেখালো না সে—হয়তো পূর্বসুরীদের মধ্যে আগে কেউ এভাবে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কিংবা ছেলেটিকে খেয়াল করলেও এমন একটি গুরুত্বহীন বিষয়ে আমি প্রশ্ন করতে পারি তা ভেবেও হয়তো সে হকচকিয়ে গিয়েছিল। দেলোয়ারের বৈশিষ্ট্যহীন চোখ-মুখের দিকে চেয়ে আমি আরও অবাক হয়ে যাই। আমাদের উপলব্ধির হীনমন্যতা, জীবনবোধের অসারতা আরও আশ্চর্য করে দেয় আমাকে।

কিছুক্ষণ পর ঘুরে এসে দেলোয়ার তার কর্তব্যবোধ থেকে জানিয়ে যায়, নাম জানি না স্যার। তয় অফিসেই ঘুরাঘুরি করে দেখি। ছেলেটা তেমন ভালা না। শুনছি...

থাক আর কিছু বলতে হবে না, পরে জেনে নেব; বলে তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যপটের পরিচয় অঙ্কের যবনিকা টানি আমি।

কয়েকদিন কেটে গেলে আমি বুঝে যাই, ছেলেটির নাম কেউ জানে না। হয়তো নাম জানবার কৌতূহল বা ফুরসত কেউ কোনোদিন পায়নি কিংবা তার মতো একজন মানুষকে কোনো শূন্যস্থানে বসানোর মতো হুজুগে ইচ্ছা কেউ কখনও পোষণ করেনি। আসলে ছেলেটিকে কোনো প্রয়োজনে লাগানোর বিষয়টি কারও ধর্তব্য কর্মের মধ্যেই ছিল না। দিনের কোনো এক সময়ে যখন সবাই কর্তব্যকাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তো তারই এক ফাঁকে হঠাৎ তার আগমন ঘটতো। আবার সন্ধ্যাশেষে সকলে যখন বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিতে শুরু করতো ঠিক এমনই সময়ে কোথায় জানি হাওয়ার মতো মিলিয়ে যেতো সে। তার আসা যাওয়ার এ সময়টুকু আমাদের সকলের দৃষ্টির অগোচরে থাকায় এসব কিছুর হিসাব কোথাও টুকে রাখা সম্ভব ছিল না।

ছেলেটার রোজকার উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি কোনোটাই কারও আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে না প্রথম থেকেই — ব্যাপারটি তাই জানা ও অজানার মাঝামাঝি একটা জায়গায় দৃশ্যমান ঝুলে থাকে। এদিকে আমিসহ আমার  চারপাশের প্রচণ্ড মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষজনের অথবা সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজের সকলেরই তার সম্পর্কে বিশদভাবে জানার একটা অবারিত সুযোগ থেকে যায় সচেতনভাবে।

আপন জগতে ভীষণ অন্তর্মুখী একজন মানুষ বলে মনে হতো আমার ছেলেটিকে। তবে নিজের বাঁধা গণ্ডিতে দারুণ উচ্ছল ও প্রাণবন্ত ছিল তার বিচরণ। তাকে কেন্দ্র করে বাইরের জগতের মানুষের এ নিদারুণ নির্লিপ্ততা নিয়ে কারও কাছে তার কোনো অনুযোগ ছিল না। বরং তার চারপাশের হাতেগোনা কিছু মানুষের নিস্তরঙ্গ গুমোট সময়ের কিছুটা শূন্যস্থান সে ভরিয়ে দিতে চাইতো তার স্বভাবসুলভ অঙ্গভঙ্গি বা ইশারাজনিত শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে। যার বেশিরভাগ শব্দই ছিল ভীষণ রকম দুর্বোধ্য বা উপলব্ধির অতীত।

ছেলেটির রোজকার দিনলিপি এভাবে গোচরে অগোচরে কিছু মানুষের কাছে শর্তহীন অধিকারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থেকে যায়—অব্যবহৃত কিছু জিনিস যেমন অবহেলায় হাতের কাছে পড়ে থাকে ঠিক তেমনি করে। প্রথম দিনেই তাকে দেখে আমি আমার বুকের গভীরে রেখে দেই। ছিপছিপে শরীরের গড়নে গাঢ় শ্যাম বর্ণের গোলাকার মুখমণ্ডলের মধ্যে ঈষৎ মায়া ছড়ানো ছিল বলেই হয়তো তার দিনভর উপস্থিতি বা আগমন প্রস্থানে কারও কোনো টুঁ শব্দ ছিল না। তবে চারদিকের প্রখর দৃষ্টিবান মানুষের সাথে কিছুটা প্রভেদ ছিল বলেই আমার কাছে পুরো ব্যাপারটি ছিল একটু অন্যরকম—ঠিক যেন স্বচ্ছ কাচের বোতলে কোনো দামি জিনিস ভরে সযত্ন সাবধানে তুলে রাখার মতো একটি বিষয়।

চিরায়ত দিনপঞ্জীর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধা কর্তব্যের মতো ছিল মানুষ নিয়ে আমার ভাবনাগুলো। আর তাই তো সেদিন আমি বিকারশূন্য তাকিয়ে ছিলাম দেলোয়ারের ভাবলেশহীন মুখের দিকে, মুখের কথাগুলো শুনছিলাম একটি একটি করে। মুখটা জমানোর মতো নয় বলে আমার কাছে উপেক্ষিতই থাকে সে। আর এমনই নিস্পন্দ কেটে যায় অনেকগুলো দিন।

কাজের চাপে দিনগুলো টানা দীর্ঘ হয়ে আমার কাছে মাসের রূপ নেয়, মাসগুলো ধাবিত হতে চায় বছরের দিকে। বিশ্রামের জন্য রাতগুলো হ্রস্ব হতে হতে নিরাপদ দূরত্বে এড়িয়ে যেতে থাকে। দিনরাতের গাণিতিক নিয়মে সময়গুলো এভাবে চক্রায়িত হতে থাকলে পরিপার্শ্বের চরাচর তার নিজের স্বভাবসিদ্ধ নিয়মে বরাবরের মতোই অন্ধ-ব্যস্ত থাকে। তাই আমার আর নাম জানা হয়ে ওঠে না—সেই ছেলেটির।

২.

আমার দিনযাপনের সূত্রটি শুরু থেকেই সময়ের সাথে দারুণভাবে ব্যস্তানুপাতিক হয়ে উঠেছিল কাজের বাড়তি চাপে। এ ব্যস্ততা কোনো কোনোদিন সীমা ছাড়িয়ে জ্যামিতিক হারে বেড়ে উঠতো আশ্চর্য সব কর্মের সমীকরণে। আমার অফিসের চেয়ারটায় একেবারে রাতদিন বসে থাকতাম শরীরের নিঃশেষ হওয়া শক্তিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে। কোনোদিকে তাকানোর সুযোগ না নিয়ে চোখ দুটো সারাক্ষণ কাজের মধ্যে নিবিষ্ট হয়ে থাকতো ইচ্ছা অনিচ্ছার সাথে সন্ধি করে।

কাজের মধ্যে ডুবে নিবিড় হয়ে সেদিন কী যেন করছিলাম একা। তার মাঝে হঠাৎ কাঠের দরজা আলতো করে ঠেলে একটা অবয়বহীন কিশোরমুখ দেখা দিয়ে মিলিয়ে গেল হঠাৎ। প্রথমে চমকে উঠলেও পরিচিত লাগল মুখখানা। সাথে সাথেই মনে হলো সেদিনের সে ছেলেটা। সম্মোহনী কালো চোখের একটা চৌদ্দ কী পনের বছরের কিশোরের কাছ থেকে প্রত্যাশিত অর্বাচীনতা ভেবে আবার ভুলে গেলাম বিষয়টি। এমনিভাবে কয়েকদিন ধরেই ঘটতে লাগল ব্যাপারটা।

প্রথম প্রথম যদিও তেমন আমলে নেইনি নিছক একটিমাত্র ছুতোয়—আমি ভীষণ কর্মব্যস্ত। তবে তার নিষ্পাপ হাসিটুকু মনে গেঁথে গেলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার উদ্দেশ্যে একদিন কাকে যেন ডেকে জিজ্ঞেস করে বসি, ‘ছেলেটি কে’? উত্তরে অচল পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকলেও তুচ্ছ এ মানুষটির করুণ নৈঃশব্দ্যের একটা জগতের সাথে আমার যোগাযোগ ঘটে গিয়েছিল ততদিনে।

ঈষাণপুরে আসার পর থেকে আমার থাকার জায়গাটি প্রথমে সুনির্দিষ্ট ছিল না। সরকারি বাঁধা নিয়মে বদলি হতেই হয়, তবে থাকার মতো বাসস্থান সব সময় সুবিধামতো বা কেতাদুরস্ত হয় না। রাতবিরাতে দূরগামী লঞ্চের সাইরেনের আওয়াজে ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টির লক্ষেই বোধ হয় অবশেষে থাকার জায়গটি স্থির হলো অপেক্ষাকৃত নীরব কোনো স্থানে—সড়কের ব্যস্ততা ছেড়ে কোলাহলহীন স্বস্তির একটি দূরত্বে। কর্মব্যস্ত নদীর ধার ঘেঁষে দোতলা ডাকবাঙলোর এক সংকীর্ণ কক্ষে অবশেষে স্থায়ী রূপ নিয়েছিল আমার আলোহীন বৈচিত্র্যহীন দিনগুলো।

রঙ করা বাঙলোটিসহ থাকার জায়গাটি বাড়াবাড়ি রকমের পরিপাটি—যা ছিল একদম আমার ধারণার বাইরে। কোলাহল বলতে ছিল নদীকেন্দ্রিক ব্যস্ততা এবং সাথে নদীবর্তী মানুষগুলোর জীবিকার অন্বেষণ ও বিবর্তিত দিনযাপনের খণ্ড খণ্ড মহড়া। জীবনের খণ্ডিত অংশের এমন ধ্বনিত রূপ আমাকেও ধীরে ধীরে বিবর্তিত করে তুলছিল—ফলে সারা দিনের সমস্ত জীবনযুদ্ধের যন্ত্রণা নির্দ্বিধায় মেনে নিতাম প্রতিদিন। বাইরের জগতের হাসি-কান্নার সে ধ্রুপদী কাহিনির অধীন হচ্ছিলাম প্রতিনিয়ত। ভাবতাম, এ অধীনতা থেকে শেষে মুক্তিলাভ হবে তো? তবে সে সমস্ত কিছুর প্রতিফলনে আমার একাকিত্বের দিনগুলোতে প্রথম প্রথম বেশ প্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে গভীর বিষাদমাখা নির্জন দুপুরের সময়টা। পরিপার্শ্বের সবকিছুকে ধ্রুবক আখ্যা দিয়ে নদীপাড়ের ব্যস্ততা বা চারপাশের জীবনভোগের সকল আয়োজন উপভোগ করে এভাবেই আমার একঘেয়ে সময়গুলো কাটিয়ে দিতাম নিশ্চিন্তে।

একদিন ছুটির দিনের দুপুরবেলায় পাঁচিলের ওপাশে সবুজ মাঠের দিকে চোখ আটকে গেল হঠাৎ। দেখলাম ছেলেটিকে। রোদে তাতানো শ্যামবর্ণ শরীরটা আরও কালো লাগছিল দেখে—তবে পরনের ধবধবে শাদা জামায়  তাকে লাগছিল উজ্জ্বল এক বিশাল বকের মতো। আমার কাছে মনে হলো, এ দৃশ্য মহাপৃথিবীর কোনো অংশ নয়। অন্যলোক থেকে নেমে আসা বিশাল ডানার কোনো বিহঙ্গবালক এখানে এক চিলতে নদীর ধারে সবুজ মাঠের ভেতর গলা ডুবিয়ে যেন বসে আছে তার মতো। করুণ বৈধব্যের শাদা রঙমাখা নিবিষ্ট ধ্যানমগ্ন সে বালকের উদাস ভঙ্গিটি আমার চিন্তাশক্তিকে সম্মোহিতের মতো টেনে নিয়ে যায় সেদিকে।

দুপুরের খর রোদে মাঠের অদূরে আরও কিছু কিশোরের দুরন্তপনায় মাঠটি ছিল মুখর। কিন্তু, কল্পলোকের সে বালক যেন সবার চেয়ে আলাদা, সবার চেয়ে অন্যরকম। বারান্দায় ঠায় দাঁড়িয়ে ইঞ্জিন নৌকার সমস্ত বিকট আওয়াজসহ সেইসব দুরন্ত বালকের দস্যিপনার সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম আমি। তারা পাখির মতো ডানা মেলে হৈচৈ বাঁধিয়ে খেলছে। দূর থেকে মনে হলো, নামহীন সে বালকটির সাথে বাকীদের তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না। দলছুট এক বিহঙ্গ সে; পৃথিবীর কারো সাথেই তার কোনো যোগাযোগ নেই যেন। এভাবে শব্দ আর শব্দহীনতার এক কঠিন দেয়াল আমার মাঝে দাঁড়িয়ে যায়। আমি তখন সন্ধির জন্যে যতই এগিয়ে যাই দূরত্বের অনিবার্যতা আরও বেশি করে চেপে বসতে থাকে আমার ভাবনার মাঝে ।

পাঁচিল ঘেঁষে নদী সন্নিহিত মাঠের কোণে ছেলেটি একা বসেছিল দলছুট কোনো পাখির মতো। আর ওদিকে দুরন্ত শৈশবের বাঁধভাঙা উচ্ছলতায় মাঠে খেলে যাচ্ছিল ছোটন, আবীর, সোহাগ, সুমনসহ আরও অপরিচিত কয়েকজন। এরা প্রত্যেকেই আমার নিঃসঙ্গ সময়ের ব্রতচারী হওয়ায় তাদের অজান্তেই নামগুলো জমানো হয়ে গিয়েছিল মনে।

আমি খেয়াল করতাম, ছেলেগুলো প্রত্যেকেই কারণে অকারণে আঘাত করে যেতো শান্ত ওই তিতির বালকটিকে। তিতির বলছি এ কারণে প্রথম প্রথম ছেলেটি মাঠের কোণে একা বসে থাকতো। আবার মাঝে মাঝে তাদের দলেও ভিড়তে চাইতো। কিন্তু, ছেলের দল সকলে একযোগে যখন বিচিত্র শব্দের তীর দিয়ে বিদ্ধ করে যেতো ঠিক তখনই তিতির পাখির মতো অদ্ভুত উচ্চ স্বরে চিঁচিঁ করে খেপে উঠতো সে। দুর্বোধ্য এ সন্ধ্যাভাষার মধ্যেও যে একটা অর্থ লুকিয়ে থাকতো তা আমি প্রতিদিন পাঠোদ্ধার করতে চাইতাম প্রাণপণে। নিজেকে সেই জায়গায় বসিয়ে নিঃসঙ্গ মানুষের মতো আমিও চিঁচিঁ করে বিদ্রোহ করে উঠতে চাইতাম চারপাশের মানুষের সাথে।

এ আর্তধ্বনি কি প্রতিবাদ? নাকি তাদের বালকোচিত খেলার অংশবিশেষ? এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো কোনোদিন যে বিচ্ছিন্ন হাতাহাতি হয়নি এমন নয়। তারপরও নিছক খেলা ভেবে দূরবর্তী দর্শক হিসেবে আপোষ করে নিতাম সবকিছু।

সিঁদুররাঙা সূর্যটা প্রতিদিন যখন নদীতে গলে গিয়ে হুলুস্থূল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিত শেষ বিকেলের দিগন্তে ঠিক তখনই ইতি ঘটতো তাদের এ নিত্য খেলার। তিতির বালকটিকে একা ফেলে সবাই নৌকায় চেপে এদিক ওদিক হারিয়ে যেতো একসময়। ওরা সকলে অদৃশ্য হয়ে গেলে আমার কাছে সবকিছু আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতো। দূর থেকেও আমি বুঝতাম, দিগন্তপ্লাবী আর্তির এক দীর্ঘ ছায়া আরও দীর্ঘতর হয়ে যেন নেমে আসতো তার চোখে মুখে। সঙ্গহারা বেদনার ছাপ নিয়ে তার কালো মুখখানা সন্ধ্যার ঘন অন্ধকারের সাথে মিশে যেতো শেষে।

জীবন নিয়ে খেলার শেষ দৃশ্যের পরিণতির মতো মাঠের সেই অদৃশ্য খেলার নিয়ম থেকে এভাবেই আমার আর তিতির বালকটির ছুটি হয়ে যেতো রোজ। আমি ধীরে ধীরে প্রতিদিন তাদের খেলার অংশ হয়ে যাই। আর পরিচিতি হয়ে উঠি বৈকালিক খেলার মুখ্য ও গৌণ সব চরিত্রগুলোর সাথে। একসময় তাদের পরিবার ও পরিবেশ পরিচিতি বিনা কারণে অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠতে থাকে আমার কাছে।

৩.

অনেকদিন কেটে গেলে ঈষাণপুরের বেশ কতগুলো মানুষ আমার বুকের গভীরে জমানো হয়ে যায়। এভাবে মানুষ জমানোর কারণে তারা প্রত্যেকেই আমার ভাবনার একান্ত বিষয় হয়ে ওঠে। সেদিন সন্ধ্যাটা কেবল গভীর হতে শুরু করলে আমি আবার ভাবতে শুরু করি। কয়েকদিন থেকে ছেলেটিকে দেখছি না মাঠের কোথাও। অফিসের বারান্দা কিংবা অন্য কোথাও সহসা হাজির হয়ে অদ্ভুত কোনো শব্দের উচ্চারণও শুনতে পাচ্ছি না কানের কাছে। তার মায়াভরা মুখখানা চোখ বন্ধ করলেই বার বার ভেসে উঠছিল মগজের ভেতরে—কোথাও না থেকেও কেমন জানি  থেকে থেকে যাচ্ছিল সে।

অসহায় মুখ করে দেলোয়ারকে আবার ডেকে বললাম, বোবা ছেলেটা যে ঘুরে বেড়াতো এখানে ওর বাড়ি কোথায় চেনো?

ক্যামনে কইতাম স্যার। কাম নাই, হুদাই ঘুইরা বেড়ায়।

আহ, এত কথা বলছ কেন? না চিনলে বল চিনি না।

আফনে নদীর ধারে যেইদিকে থাকেন ওইদিকে শুনছি থাকে।

বিরক্তি ঝেড়ে বললাম, ওইটুকু আমিও জানি। যাও এবার।

একদিন সারাটা দিন তার অনুপস্থিতির কারণে আমার কোনো কাজে ঠিকমতো মনঃসংযোগ হলো না। তেমন কিছু নয়, তারপরও ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় অকারণে অস্থির হয়ে উঠলাম। পড়ন্ত বিকেলের দিকে অফিসের কাজ গুটিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। আমার সঙ্কীর্ণ চতুষ্কোণে প্রবেশের আগে বাঙলোর সামনের রাস্তায় অনেকক্ষণ পায়চারি করলাম ইতস্তত পায়ে। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম ক্লান্ত নদীর দিকে। বালকগুলো সেদিনও মাঠে খেলছিল অবিরাম। আমাকে দেখে তাদের মধ্যে এক ধরনের ছন্দপতন হলো। মাঠের মধ্যে অবাধ বিচরণে আগের উন্মুক্ত উচ্ছ্বাসের মধ্যে একটা ছেদ চিহ্ন এসে জেঁকে বসল যেন। অদৃশ্য নিষেধের বাক্যে হৈচৈ স্তিমিত হয়ে এলো নিমিষে।

সোহাগ ডেকে বলল, এদিকে আয় তোরা। আইজ আর খেলমু না। বাকীদেরও এক রা। কয়েকদিন আগের বিচ্ছিন্ন সে ঘটনার ছাপ তাদেরকেও গ্রাস করেছে। এর মধ্যে আরও খারাপ কিছুও ঘটেছে কিনা কে জানে?

আমি অপেক্ষাকৃত শান্ত সুমনকে হাত ইশারায় কাছে ডেকে নিলাম। সে কাছে এল। বিনীত ভঙ্গিতে বললাম, তোমাদের সাথে যে বোবা ছেলেটা মাঠের এক কোণে বসে থাকতো ওর বাড়ি চেনো? মাথা ঘুরিয়ে একবার আপাদমস্তক সে দেখে নেয় আমাকে। এক মুহূর্ত মাথা নিচু করে আঙুল ইশারায় নদীর ওধারে কী যেন দেখিয়ে দিল। বাকীরা ততোধিক ব্যস্ত হয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। তারা হয়তো মনে মনে ভাবছে, অপরিচিত কারও সাথে দাঁড়িয়ে এভাবে কথা বলা সমীচীন হবে কিনা? অথচ আমি ভাবছি, তোমরা সকলেই আমার মনের ভেতর জন্ম নেয়া নতুন কিছু জমানো মানুষ। তোমাদের অজান্তে প্রত্যেকেই তোমরা এখন আমার জীবনাবদ্ধ চরিত্র হয়ে গেছ। 

চার কিশোরের দলটি তারপর অপ্রয়োজনীয় অস্থিরতায় আধো অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে যায়—একটা ছোট্ট ডিঙি  নৌকায় চেপে অদৃশ্য হয়ে যায় আরও ঝাপসা অন্ধকারের ভেতরে। হতবল আমি তাকিয়ে থাকি সে জমাট অন্ধকারের দিকে। চারদিকের অন্ধকারের ঘনত্ব সমান হয়ে গেলে নদীর ওধার থেকে নিজেকে গুটিয়ে আনি সঙ্কোচে।

সেদিনের পর থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাঠের সবুজ আর ঘোলাটে নদীর স্রোত দেখা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। দিন রাতের আবর্তে যতটুকু সময় পেতাম প্রায় পুরোটা সময় কাটতো ওদিকে চেয়ে চেয়ে। সোনালি নরম রোদ, মাঠভরা সবুজ জলপাই রঙের ভেতরে নিঝুম আঁধারের নিরুত্তাপ দাপাদাপি কিংবা ডানা মেলা পাখির পালকের গান কোনোকিছুই আর আমাকে স্পর্শ করতে পারে না। তারপরও শুধু দেখে দেখে আর শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে আমি আরও ক্লান্ত হয়ে উঠি। আর ওদিকে পরিচয়হীন এক বালকের ভাষাহীন জীবনের গান ক্রমাগত সাঙ্গ হওয়ার বাহানা খুঁজে নিতে চায় আমার কাছে।   

ধূলি উড়িয়ে কয়েকটি বালককে মাঠের ওধারে খেলতে দেখে চোখ সরু করে তাকাই। না, আমার পরিচিত জমানো মানুষগুলোর কেউ নয়—আবার জমানোর অপেক্ষায় সারিবদ্ধ মানুষের স্রোতেও এরা দাঁড়িয়ে নেই। কিন্তু, একবার  আমার চোখ থমকে গিয়ে তির তির করে হঠাৎ কাঁপতে শুরু করে। হ্যাঁ, ওই তো সেই ছেলেটি। আবার ফিরে এসেছে তার আপন ভুবনে। নিজের খেয়ালে উদ্দাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাঠের বুকে। হাঁ, ওই তো... উদার বিহঙ্গের মতো প্রাণোচ্ছল অবাধ তার গতি। হাসছে, খেলছে; আমার ধাঁধানো চোখের কল্পনায় অচেনা কোনো বিহঙ্গের মতো আবার আকাশেও ভাসছে।

আমার দিনযাপনের দিনগুলোতে ঈশানপুর তার সকল ঐশ্বর্য নিয়ে এভাবেই আপন হয়ে ওঠে আমার কাছে। শুধু আপন হয়ে ওঠে না একটি মানুষ। মানুষটি হয়তো এখনো একদেহ সন্ধ্যা নিয়ে আমার আবাসটিকে পেছনে ফেলে ক্লান্ত পায়ে বাড়ি ফিরে যায়। আর ওদিকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেউ হয়তো তার গমনপথের অনুসরণ করে অপেক্ষা করে যায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতদিনের প্রতিটি মুহূর্তের সাথে বিনা কারণে আবর্তিত হতে থাকে নামপরিচয়হীন সেই মানুষের মুখটি।

দুপুরের বিষণ্ন সময়ের ফাঁকে অনেকদিন পর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ায় হেঁটে হেঁটে ঘুম নেমে এসেছিল চোখে। আমি ততদিনে যান্ত্রিক ঊনমানুষ হয়ে ওঠায় দীর্ঘদিন স্বপ্নের কবলে হারিয়ে যাইনি। তবে সেদিন স্বপ্ন নেমে এসেছিল উন্মত্ত অবাধ্য হয়ে। সবুজের সর্পিল মাঠ হারিয়ে গিয়ে সেখানে ঢেকে দিয়েছিল মস্ত এক কালো গালিচা। গুহাচারী কালো মোষের এক অবাধ্য পাল অতর্কিতে হানা দিয়েছিল আমার ঘুমের মধ্যে। সৌখিন অরণ্যবিহার ছেড়ে এই পরিব্রাজক মোষের দল নিয়ম ভেঙে অন্ধ চরাচরে অবিরাম ধেয়ে আসতে থাকে। তাদের খুড়ের আওয়াজে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সবুজের আদিগন্ত শয্যা। বিস্তৃত সেই মাঠ জুড়ে থাকা ভয়হীন বিহঙ্গের দল একসময় বিশাল ডানা মেলে আর্ত চিৎকারে উড়ে যেতে থাকে। কী অদ্ভুত তাদের ভাষা...বাঁচার কী সকরুণ আকুতি ছিল তাদের চোখে-মুখে। ঘুম ভেঙে ধড়মড় করে জেগে উঠে বিছানায় বসে থাকি আমি।

কালের বিধিবিধান মেনে হরবোলা নদীর কাছে তখন সন্ধ্যা হতে চলেছে। মুখর নদীতীরে সমস্ত প্রাণের সমান বিচরণ থাকতো বলে নামটা আমিই দিয়েছিলাম। তামাগলা রোদ নির্বিষ মেঘের ফাঁক গলে তখনো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দিনশেষের কর্তব্য মনে করে সূর্যটা শুধু হেলে পড়েছে পশ্চিমে। বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই একটা বিচ্ছিন্ন শোরগোল শুনতে পাই সামনের মাঠের দিক থেকে। বালকোচিত খেলা ভেবে একদল ছায়াচারী মানুষ হঠাৎ ধাবিত হয় সেই ভাষাহীন বালকটির দিকে। তাদের চোখে ক্রোধ ছিল কিনা জানি না, তবুও তারা অন্ধকার সাঁতরে বাধাহীন ধেয়ে আসতে থাকে সেই রূঢ় স্বপ্নের মতো। তাদের এ সংঘবদ্ধ ব্যতিহার আচরণ দেখে আমি প্রায় মুষড়ে যাই ভয়ে।

সাথে সাথে মনে হলো একদল বালক কিংবা তাদের ছায়া নয়, অরণ্য বিহার ছেড়ে আসা একপাল বুনো মোষ যেন তাড়া করে ফিরছে তখন। তাদের উঁচিয়ে ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাতগুলো উদ্যত শিংরূপে প্রায় ধরে ফেলছিল ছেলেটিকে। মাঠের মাঝে ইতস্তত বিচরণকারী মানুষগুলো দারুণভাবে দৃষ্টিবান হয়েও এ দৃশ্য দেখে নিছক খেলা মনে করে। তাদের এ অন্ধ অন্ধ খেলার দৃশ্যপাপ দেখে আমি শুধু ছটফট করি। অন্যান্য অনেক ছায়াচারী মানুষের মতো আবার অন্ধকারে মিশে যাই কিংবা অন্ধকারের মুখোশ নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে মুখ লুকোতে চাই তার চেয়েও নীরব কোনো গহ্বরে।

উন্মত্ত ধাবনের গান গেয়ে মুহূর্তে সরব হয়ে উঠেছিল সকলে—সে গান ছিল ক্রমাগত আরও অদ্ভুত কোনো স্বরের,  অপরিচিত ভিন্ন কোনো সুরের। তাদের সে গান উপলব্ধি করে আমার ভেতরকার উৎকণ্ঠা দিগ্বিদিক শূন্য হয়, আপাত সত্যের মতো ভাষার সীমাবদ্ধতা আরও জটিল হয়ে ওঠে। আকাশের দিকে তখন ঘূর্ণায়মান অচেনা পাখির স্রোত। আমার সমর্পিত সীমাবদ্ধতাকে উপলব্ধি করে চক্রায়িত সে স্রোতের মধ্যে বিদ্রোহের নতুন স্বর প্রতিধ্বনিত হতে থাকে করুণ আর্ত সুরে। 

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা