বনহারা হরিণ
আমাকে প্রাণ ভরিয়া দুঃখ দাও,
জগতে আমি একা নই! আরও আছে
ম্লান যুবক এবং গর্ভক্লান্ত কিশোরী,
নুনঘরে জমে যাওয়া বৃদ্ধের মনোবেদনা,
কেউ কেউ মর মর যৌবনহারা নর-নারী,
অতএব দুঃখ দাও, প্রাণ ভরিয়া দুঃখ দাও।
শাখা পরে শুয়ে থাকো নদী,
শুয়ে থাকো কপালে টিপ দিয়ে
হাঁটুমুড়ে বসে তোমার সুখ দেখি।
ঈশ্বরকে কে বলবে!
কার কথা শুনবে সে,
সেও তো এক বনহারা হরিণ।
দ্বিতীয় জীবন
এক সময় আমি পড়তে পারতাম। এখন পারি না।
বলি, আপনারা পড়াশোনা করুন, আমি দাঁড়িয়ে দেখি
পড়াশোনা দেখতে আমার ভালো লাগে।
আগে প্রচুর জেদ ছিল
পরিচিত পথকে পিছনে ফেলে হতাম দ্রুততম মানব
এখন শুধুই হাঁটি অথবা দাঁড়িয়ে থাকি
পথটা নিজ থেকেই পায়ের তল থেকে সরে সরে যায়
পথের নাম মনে রাখতে পারি না।
একদা বাবাকে ভাবতাম খাল-বেয়ে-উঠে-আসা-কুমির
মৃত্যু বুঝতাম না তখন।
এখন মৃত্যু বুঝি অথচ মরতে পারি না
আমার পথের উপর
ঈশ্বরের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন আমার বাবা।
কোথায় নেবে আমাকে
আমি কোথাও যাব না,
এই যে বর্ষাকাল
সে আমার ঠিকানা জানে, রগ চেনে।
নাড়িবিদ্যায় পারদর্শী গাছগুলি জানে
আমার বাল্যস্বভাব, জানে লালপড়া দম।
নদীর নরম শরীরে
মিশে আছো আমার কামলীলা, একা
ধীরে শরম-কলার কপাট খুলে যে পাখি
জান ছাড়িয়া উড়াল দিল
সে আমার বিরহ বোঝে।
কবে যেন হাত খুলে পড়ে গেছে ঝরনা,
ভাঁটবনের জোনাকিরা জানে
কত সহজে আমি মরে যেতে পারতাম
তোমার চোখের সামান্য ওমে
অথবা বাতাসে জোসনা ভাসলেই
মরে যেতে পারতাম।
এইসব মন পরাণে নিভে থেকে থেকে
কিছুই আর মনে থাকে না।
কোথায় নেবে আমাকে
আমি কোথাও যাব না।
পরী
জোছনায় আমার চোখে হরিণ দৌড়ায়
সাদা শস্য ক্ষেতে খই উড়ায় নীল পরী
আমাকে ছুলে ও আর উড়তে পারবে না,
নিশানা করে থাকি, যেন কামার্ত হয়রান ব্যাধ
পুনর্জন্মের ফ্যাড়ে পড়ব ভেবে কাছে যাই না
স্পর্শ করি না তোমাকে ভুজঙ্গনা, পরী।
লালা কর্ম
পাথর চিনেছে নুন, ষোল আনা লোভে প্রেম
চিনেছে বিপদের বন্ধু-দয়ালু বান্ধব
বর্ষা-বিষণ্ন কলিকাল ভুলে ঠোঁট চেপে
বেধে রাখে বাধ পরানের হাটুজল
উবু হয়ে দেখে নিচ্ছি মনের অসুখ
জলের পাতায় পাতায় হারিয়ে যায়
তোমার মুখ, তুমি নেই—আঃ কষ্ট।
হৃদয়ের বোটা থেকে খসে গেলে
মাঘমাসি ফলের নাকফুল, স্পর্শের নোকতা
সঙ্গমের ঘ্রাণ যেমন উম্মাদ করে, তেমন আল্গিতে
বাজু খুলে নেমে যায় স্নেহাতুর শামুক
লালা কর্মে ভাসে দু-কূল
অতঃপর বিরহের কুটকুটে অভিমানে
ঠোঁট-কলিজা, মন ভালো নেই,
মুদ্রাদোষে বাঁচি কি মরি, ঠিক নেই
তোমার মুখ, তুমি নেই—আঃ কষ্ট।