X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চর্যাপদের সময়ে বিশ্বসাহিত্য

বিশ্বাস তীর্থ
০৯ জুন ২০১৮, ১৩:১৯আপডেট : ০৯ জুন ২০১৮, ১৩:৫৯

চর্যাপদের সময়ে বিশ্বসাহিত্য

শিল্প সৌন্দর্যে হয়তো শাশ্বত বলে কিছু নেই। যে আর্তনাদ কাদাঁতে পারে অন্যকে সেই এক আর্তনাদে মানুষ হাসতে পারে। সাহিত্যের বেলায় মান বিচারের তুলনা হয়তো তাই বোকামি। তবে আলোচনা করাটি একেবারেই হয়তো অবাঞ্ছনীয় নয়। আজকের সময়ে আমরা অতি সহজে জানতে পারি ইউরোপ, আমেরিকা বা আফ্রিকায় বসে কে কী লিখছেন। সাহিত্যচর্চা শুরুর প্রথম দিকটায় যেটি অসম্ভব ছিল। এমনই এক সময়ে নিজ গৃহ, মঠ বা রাজদরবারে বসে আমাদের আদি কবিরা লিখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম লিখিত দালিলিক নিদর্শন চর্যাপদের পদগুলি। 

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে যে গ্রন্থ উদ্ধার করেছিলেন অনেক তার্কিক গবেষণার পর ঐক্যমত হওয়া যায় যে এটি বাংলা ভাষারই আদি রূপ। চর্যাপদে আছে কবির বুদ্ধ ভক্তির কীর্তন আবার আছে নিজের জীবনে দুঃখ কষ্টের নিত্যকথন। লুইপা, কাহ্নপা, ভুসুকুপা, শাবরপা, শান্তিপাসহ নানা কবিরা চর্যাপদের কবিতাগুলো লিখেছেন ৯৫০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে (সঠিক সময় নিয়ে মতান্তর আছে)। চর্যাপদের কবি যখন লিখছেন তার সংসার জীবনের কথা—

টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী,

হাড়ীতে ভাত নাহি নিতি আবেসী

ঠিক সেই সময়টাতেই জাপানের তৎকালীন রাজনীতিক ফুজিওয়ারা না কানেই এর পত্নী তার সংসার জীবনের দুঃখসুখের গদ্যকাব্য লিখেছেন তার ডাইরিতে। যা জাপানের ক্ল্যাসিকাল সাহিত্য ধারার অন্যতম একটি নিদর্শন। এই লেখিকার নাম খুঁজে পায়নি ইতিহাস। তিনি মাদার অব মিসিসুনা নামেই পরিচিত। তৎকালীন সময়ে জাপানের বিখ্যাত পরিবারের ঘটনাবলী লিখে রাখার এবং সেগুলো সংরক্ষণ করার একটি প্রবণতা ছিল। ধারণা করা হয়, তিনি ঐ সময়ের এই পারিবারিক গল্পলেখার স্বাভাবিকতার ঘটনাক্রমেই লেখা শুরু করেছিলেন। 

এই শতকে সমগ্র বিশ্ব সাহিত্য যেখানে কথা বলেছে পদ্যে সেই সময়টাতেই জাপানিজ হেইয়ান রাজসভার মহিলা সাহিত্যিক মুরাসাকি শিকিবু লিখলেন পৃথিবীর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য টেল অব গেঞ্জি’। সম্রাট কিরিতসুবোর দ্বিতীয় সন্তান গেঞ্জিকে ঘিরেই এ উপন্যাস। এখানে লেখক গেঞ্জির জীবনের প্রেম-ভালবাসা, সুখ-দুঃখের উত্থান পতনের আখ্যান তুলে ধরেছেন। মাত্র তিন বছর বয়সে মাতৃহারা গেঞ্জি যে বিমাতার স্নেহ বড় হয়। অপরূপ দেহ সৌন্দর্যের অধিকারী হবার জন্যই হয়তো একটা সময় গেঞ্জির জীবনের প্রথম প্রেম হয়ে আসে সেই পালক বিমাতা ফুজিৎসুবো। দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে দুজন, জন্ম হয় এক সন্তানের। যদিও সবাই ধারণা করে এই সন্তান সম্রাটেরই। এরপর নিজ স্ত্রী অয়ির সন্তানের মৃত্যুতে বিষাদগ্রস্থ গেঞ্জি ভালোবাসার আশ্রয় পায় কিয়োটো থেকে অপহরণ করে আনা মেয়ে মুরাসাকির কাছে। দ্য টেল অব গেঞ্জিতে জীবন, উথান-পত্তন, প্রেম-উন্মত্তার যে অ্যাখ্যান লেখক তুলে ধরেছেন তা ঐ সময়ের বিবেচনায় বিস্ময় জাগায়। বিস্ময় জাগিয়েছিল স্বয়ং প্রথম নোবেল জয়ী জাপানি ঔপন্যাসিক ইয়াসুনারি কাওয়াবাতাকেও। তিনি তার নোবেল বক্তৃতায় বলেন, গেঞ্জি উপন্যাস জাপানি সাহিত্যের সর্ব্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে আছে। আমাদের আজকের দিনেও এমন কোনো উপন্যাস নেই যার সঙ্গে তার তুলনা করা চলে। একেবারেই সম সাময়িক জাপানি সাহিত্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো—সে শোনাগমের এর দ্য পিলো বুক। এটি মূলত একটি দিনপঞ্জি। একটি সময়ে আমাদের দেশেও ডাইরি লেখার প্রবণতা ছিল তথ্য প্রযুক্তি ছোঁয়াতে হয়তো আজ সেই ডাইরি লেখা রূপ নিয়েছে ফেসবুক বা ব্লগে। দ্য পিলো বুক মূলত লেখিকা বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে মতামত, পর্যবেক্ষণ, ভালো লাগার বিষয়, মন্দ লাগা ছোট একটি বইতে লিখে রেখেছিলেন তারই নমুনা।

১০ম শতকের মাঝামাঝি সময়ে চায়নাতে শুরু হয় সাঙ ডায়নেস্টি। এই সময়টা ছিল চাইনিজ সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। চিনা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় দুটি কবিতার ধারা শি এবং চি এই সময়টাতে এসে শুদ্ধতার পরিপূর্ণতা লাভ করে। চায়নাতে এখনো এই দুই ধারার কবিতার চর্চা বর্তমান। লুইপা, কাহ্নপা, শবরপা যখন বুদ্ধপদে আশ্রিত হয়ে গীতকবিতা লিখছেন তখন চাইনিজ বিখ্যাত কবি উয়াং জিউ বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারণ করছেন নিজের জীবনের গল্প—

বৃদ্ধ মাতাল মদের বোতল ফেলে

আবেশ জড়ায়ে পড়ে আছে প্রকৃতির কোলে।

কবি জিউ নিজেকে প্রথা বিরোধী এক বৃদ্ধ মাতাল বলে দাবী করছেন সারা জীবন। এই সময়টাতে বিশ্ব সাহিত্য যেখানে দেব-দেবী, রাজা, রাজদরবারের কাহিনি, যুদ্ধ ও কূটরাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছে—সে সময়টাতে চাইনিজ সাহিত্যে আমরা ব্যক্তি মানুষের যাপিত জীবনগল্প ও প্রকৃতির বন্দনা শুনতে পাই প্রগাঢ়ভাবে। শুধু প্রকৃতি নয় গভীর প্রেমের বাক্যও লিখেছেন কবি জিউ—

‘স্বপ্নেই শুধু তোমার দেখা পাই

তবু কেন এত ক্ষণস্থায়ী ঘুম, কেন জাগি বার বার?’

ঐ সময়ের আরেক বিখ্যাত চাইনিজ কবি সু সিকে উচ্ছ্বসিত প্রকৃতি প্রেমে বলতে শোনা যায়

চাঁদ, তুমি যখন স্বচ্ছ পরিস্কার

এক গ্লাস ওয়াইন হাতে

নীল দিগন্তে জানতে চাই,

কোন ঋতুর সাজে প্রকৃতি এখন জানি না

স্বর্গীয় এই রাত ছেড়ে

আমি ঘরে ফিরতে চাই হাওয়ায় উড়ে।

এই সময়টার চাইনিজ সাহিত্যে প্রকৃতি বন্দনা বর্ণনার প্রাধান্য অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। সমসায়িক কবি মি ইয়োচেন, লিন বু, ইয়ে সুসহ প্রায় সকলের কবিতায় প্রকৃতি সৌন্দর্যের মুগ্ধতা একটা বিশাল অংশ জুড়ে ছিল।

বাঙালিদের একটা বড় অংশ প্রথম বাঙলা গ্রন্থ চর্যাপদ সম্পর্কে বিন্দু মাত্র না জানলেও যে সময়কালকে চর্যাপদের আনুমানিক লেখনিকাল বলে বিবেচনা করা হয় সেই সময়কার একটি আরবীয় সাহিত্যের গল্প সর্ম্পকে কমবেশি সবাই ওয়াকিবহাল, সেটি হল ওয়ান থাউজেন্ড এন্ড ওয়ান নাইটস যা আরব্য রজনী নামে অধিক পরিচিত। বেশিরভাগ পণ্ডিত মনে করেন, এর অনেক গল্প নেয়া হয়েছে ভারতীয় ও পারস্য লোক কাহিনি থেকে। মূল গল্প অনেক ছোট থাকায় ৯ম ও ১০ম শতকে এসে এর সঙ্গে যোগ হয় আরবীয় গল্প। এরপর আরব্য রজনীর অতিক্রম করেছে সিরিয়া ও মিশরের গল্পকথনের রাজ্যে। ১৭০৪-১৭১৭ সালের দিকে প্রথম ইউরোপীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ফরাসি ভাষায়, আরবি থেকে এর অনুবাদ করেন ওয়ানটোয়েন গ্যালান্ড । যদিও এই অনুবাদের সময় তিনি এখানে বেশ কিছু গল্প যোগ করেন যা মূল গ্রন্থে ছিল না। প্রকাশের পরই বইটি সারা ইউরোপে সাড়া ফেলে দেয়। নিজেকে বাচাঁতে উজির কন্যা শেহেরজাদ বাদশাহ শাহরিয়ারকে যে গল্প বলা শুরু করলেন সে গল্প আজও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরছে গল্পের ফেরিওয়ালা হয়ে।

আজ একবিংশ শতকে এসে বাংলা সাহিত্য হয়তো ইংরেজি সাহিত্য থেকে যোজন যোজন দূরে। কিন্তু দশম বা একাদশ শতকে এমনটি ছিল না। ঐ সময়টাতে পৃথিবীর যেকোনো সাহিত্যের থেকে এশীয় সাহিত্য তার মান, বিষয়বস্তু ও বর্ণনারীতিতে হয়তো অনেকটাই অগ্রসর ছিল। যখন বাংলা সাহিত্যের আদিকবিরা চর্যাপদের পদ লিখেছেন প্রায় ঠিক সেই সময়টাতেই সুদূর ইংল্যান্ডে বসে নাম না জানা কবি স্ক্যান্ডেনেভিয়ান ঘটনা নিয়ে লিখেছেন বীরগাথা বেউলফ। মজার বিষয় হলো আমাদের চর্যাপদের পদ মৌলিক হলেও ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম নির্দশন বেউলফ মৌলিক নয় তা আইসল্যান্ডীয় মিথ বেয়ার সন’স টেল’ এর একটি ঘটনা। 

প্রায় সম-সমায়িক সময়ের ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম কবিতা সংকলন হল এক্সেটর বুক। এই এক্সেটর বুকের অন্যতম একটি কবিতা হলো ডিওর, যে কবিতাটি গাঠনিক ও বর্ণনাত্মক দিক থেকে এক্সেটর বুকের অন্য কবিতা থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। ৬ স্তবকে ৪২ লাইনের এক বীরগাথা ডিওর। বিষয়বস্তু ও গঠনগত বিচারে কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন, এটি এক্সেটর বুকের অন্য কবিতার চেয়ে বেশ পূর্বে লেখা এবং সমসাময়িক ইংরেজি সাহিত্যের চেয়ে প্রাচীন—নরডিক কবিতার সঙ্গে এর সাদৃশ্য অনেক বেশি। তাই কেউ কেউ ধারণা করেন এটি মূলত অনেক পুরাতন কোনো কবিতার অনুবাদ। এখানে আমরা দেখতে পাই প্রতিটি স্তবকে আখ্যানকারী একটি গল্প পদ্যে বর্ণনা করছেন এবং গল্পের শেষে তিনি নিজেকে ঐ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। যেমন প্রথম স্তবকে একজন শক্তসমর্থ নির্বাসিত মানুষ উয়েল্যান্ডের দুঃখ কষ্টের কথা বলা হয়েছে। উয়েল্যান্ড ক্ষুদ্রকায় নিথড দ্বারা বন্দী হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে সে এই কঠিন অবস্থা অতিক্রম করে। এই স্তবকে বর্ণনাকারী নিজেকেও এমন কাজে সক্ষম বলে উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় স্তবকে বিডোহিল্ডের জীবনের এক চরম দুঃখের অভিজ্ঞতা তুলে আনা হয়েছে। বিডোহিল্ডের ভাইয়েরা খুন হয় এবং তার জীবনে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় নেমে আসে, যখন সে বুঝতে পারে সে গর্ভবতী। তখন সে অনুধাবন করতে পারে সামনে যা কিছু ঘটবে কোনোটাই তার অনুকূলে থাকবে না। কিন্তু এতসব বিপদের অবস্থাও সে একটা সময় অতিক্রম করে। এই স্তবকের শেষেটাতেও বর্ণনাকারী নিজেও এমনটি করতে সক্ষম বলে দাবী করেন। মজার ব্যাপার হলো এখানে উল্লেখিত চরিত্রগুলি প্রাচীন নরডিক মিথ থেকে নেয়া। যেমন উয়েল্যান্ড হলো নরডিক দেবতা যিনি তার শত্রু নিথড দ্বারা বন্দী হন এবং তাকে কায়িক শ্রম করতে বাধ্য করা হয়। একটা সময় উয়েল্যান্ড পালিয়ে যায় এবং সে রাজার সন্তানকে হত্যা করে ও মেয়েকে ধর্ষণ করে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো উয়েল্যান্ড প্রতিশোধ স্বরুপ যে মেয়েকে ধর্ষণ করে সে হলো দ্বিতীয় স্তবকের নারী চরিত্র বিডোহিল্ড। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাহিত্য পণ্ডিত জেরম ম্যান্ডেল উল্লেখ করেন যে, এই কবিতার উপস্থাপন সান্ত্বনার জন্য নয় বরং শিক্ষনীয় বিষয়ালোকপাতে চর্যাপদের সমসাময়িক পার্সিয়ান সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ ছিল। জন্মান্ধ কবি রুদাকিকে  পার্সিয়ান কবিতার জনক বলা হয়। তার কবিতায় যে কল্পনার শক্তি দৃশ্যত হয় সেটি বাস্তব পৃথিবী দেখার অভিজ্ঞতা না থাকলে হবার কথা নয়। এ কারণে কেউ কেউ বলেন তিনি জন্মান্ধ ছিলেন না পরে অন্ধ হয়ে গেছেন। তিনি প্রকৃতিকে দেখেছেন মানুষ রূপে এবং প্রকৃতি যেন ধারণ করে আছে মানুষের নানা চরিত্র। রুদাকি তার কবিতায় মেঘকে তুলনা করেছেন শোকার্ত মানুষের সঙ্গে অসাধারণ উপমায়—

‘দেখ, আকাশ যেন কাঁদছে শোকার্ত মানুষের বেশে

ব্যর্থ প্রেমিকের মতো তীব্র আর্তনাদ ব্রজপাতে

মাঝে মাঝে সূর্য উকি দেয় মেঘের আড়ালে

যেন বন্দী নিজেরে লুকায় প্রহরী থেকে।’

শুধু প্রকৃতি নয় পার্সিয়ান কবিতায় নবধারা সূচনাকারী এই কবি লিখেছেন মানুষের জন্য অমোঘ এক বাক্য—

‘অগ্রগামী হও। লস্যে কাটিও না সময় দীর্ঘকাল

সাফল্য যদি আকাশ ফুড়ে চাঁদে পৌছায় তবু।’

 আর্তি জানিয়েছেন কবি রুদাকি প্রেমের প্রগাঢ়তায়—

 ‘যদি একবার রাখ চরণ এই ভুমিতে

আমি সহস্রবার প্রণাম দেব সে ধূলিতে।’


তবে চর্যাপদের সমসাময়িক পার্সিয়ান সাহিত্যের যে নামের সঙ্গে আমরা সবচেয়ে পরিচিত তা হলো মহাকবি ফেরদৌসীর শাহনামা। বিস্ময় সৃষ্টি হয় যখন ফেরদৌসীর শাহনামার সোহরাব রুস্তমের গল্পটি মিলে যায় প্রায় সমসাময়িক কালের জার্মান ওরাল পোয়েট্রি দ্য লে অব হিল্ডেব্রান্ডে বা হিল্ডেব্রান্ডস্লিডের সঙ্গে। ল্যাটিন কোডেক্স পাতায় লেখা এর পাণ্ডুলিপি দেখে ধারণা করা হয় ৯ম শতকের মাঝামাঝি সময় বা তার পর জার্মানির ফুল্ডা শহরের কোনো এক মঠে বসে কবি এটি লিপিবদ্ধ করেন। হিডেব্রান্ডস্লিড ল্যাঙ্গোবারডিক, ওল্ড হাই জার্মান, আপার জার্মান এবং ওল্ড লো জার্মান ভাষার মিশ্রণে লিখিত হয়েছে এই জার্মান বীরগাথা। এর শুরুতেই শোনা যায় কবি বলছেন

‘আমি শুনেছিলাম, দুই যোদ্ধার গল্প,

যুদ্ধসাজে মুখোমুখি পিতা পুত্র।

দুই সেনাদলে দুই বীর, হিল্ডেব্রান্ড ও হাল্ডুব্রান্ড

রণ ঢাল হাতে, প্রস্তুত তলোয়ার, যুদ্ধাস্ত্র সারা গায়,

পিতা পু্ত্র মুখোমুখি যুদ্ধের আঙিনায়।’

 জার্মানির ক্যাসেল শহরের রাজগ্রন্থাগারে সংরক্ষিত জার্মানির এই প্রাচীন সাহিত্যের শেষ চরণগুলি হতবাক করতে পারে যে কাউকে—

 ‘দুই বীর, পিতা ও পুত্র, হাতে উদ্ধত তলোয়ার

প্রস্তুত ঢাল, তীব্র আঘাত নিতে

ধীর পায়ে এগিয়ে পিতা পুত্র, দুজন দুজনার সমুখে

আক্রম অস্ত্রে অস্ত্রে তীব্র ঝঙ্কার, সমানে বাজে ঢাল তলোয়ার

থামল শব্দ, ভাঙলো ঢাল, দুজনের দুই তলোয়ার।’

ধারণা করা হয় জার্মান বীরগাথা হিল্ডেব্রান্ডস্লিড মহাকবি ফেরদৌসির শাহনামারও কিছুকাল আগে লেখা।

দশম শতকে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান অঞ্চলে তখন চলছিল ভাইকিং যুগ। এই সময়টাতে নরডিক সাহিত্যে জুড়ে ছিল মিথ, দেব-দেবী ও তাদের রাজাদের যুদ্ধ জয়-পরাজয়ের গল্প। এই সময়কার নরডিক কবিতা লেখা হত মূলত স্কালডিচ ধারায়। আর এই স্কালডিচ ধারায় লেখা কবিতাগুলি ছিল মূলত বীরগাথা। এগিল স্কালাগ্রিমসন, আইনর হেলগাসন প্রভৃতি কবির কবিতা জুড়ে রাজকাহিনি ও যুদ্ধের আখ্যানই মুখ্য।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা