X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপরাধী শাসক ও পাকিস্তানের সাহিত্য

ওয়ালি আহমেদ
১১ জুন ২০১৮, ১২:৩২আপডেট : ১১ জুন ২০১৮, ১২:৫৩

অপরাধী শাসক ও পাকিস্তানের সাহিত্য

মহেন-জো-দারো আর সিন্ধু সভ্যতার অতীত নিয়ে ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান স্বাধীন হয়। তার আগে মুসলমানদের শাসন ইংরেজদের শোষণ সহ্য করতে হয়। আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে মুসলিম বণিকরা ভারতবর্ষে আসে। আরব বণিকরা ব্যবসা বাণিজ্য করতে এসে কখনো থাকতো, আবার চলে যেতো, যারা থাকতো তাদের অনেকে বিয়ে-সাদি করে ভারতবর্ষে থিতু হয়ে যায়। ৭১১ সালে আরব সেনাপতি মুহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু জয় করে মুসলমানদের শাসন শুধু করে। তারপর অসংখ্য সুফি এবং দরবেশ ভারতবর্ষে এসেছেন। তাদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রসার হয়েছে। শুধুমাত্র তরবারির সাহায্যে মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। মুসলমানদের মানবীয় গুণে আকৃষ্ট হয়ে অথবা নিজ ধর্মের উঁচুজাতের বর্ণবাদের শিকার হয়ে হিন্দু-বৌদ্ধরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তারপর হাজার হাজার বছর ধরে পারস্য এবং আরবীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণে সম্প্রীতি গড়ে উঠে। তবু্ও ধর্ম একটি বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ধর্ম ও জাতি দুটি ভিন্ন বিষয়। শুধুমাত্র ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশ ভাগের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে, গান্ধীজি এবং গাফফর খানের মতো কয়েকজন নেতা বাধা দেয়। কোনো লাভ হয় না।

স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তান বা ভারতকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মতো যুদ্ধ করতে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় উপনিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাধীকার আন্দোলন বিশ্বযুদ্ধের আগে  শুরু হয়। ব্রিটিশদের কিছু করার ছিল না। স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়।  কিন্তু পাকিস্তান দুভাগে বিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব ১৬০০ কিলোমিটার। পৃথিবীর আর কোনো দেশ এরকম ছিল না। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বাঙালিদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু দেশ স্বাধীন না হতেই পাকিস্তানি শাসকরা হায়নায় রূপান্তরিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর সর্বকালের জঘন্য অত্যাচার নির্যাতন চালায়। যা ২০০ বছরের ইংরেজ বীভৎসতাকেও হার মানায়। হায়নারা ১৯৫২ সালে মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। তৎকালীন পাকিস্তানের নামী রাজনীতিবিদ ফিরোজ খান নুন মন্তব্য করেন, পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা খাঁটি মুসলমান নয়, আধা-মুসলমান। পরবর্তী কালে আয়ুব খান যে আত্মজীবনী লেখেন তাতে বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বেঁটে, দেখতে কদাকার। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য  পারদের গতিতে বাড়তে থাকে। নিজ দেশের জণগণের ওপর পশুর  দল ১৯৭১ সালে যেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরকম ভয়াবহ নৃশংসতা পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও নেই। পাকিস্তানকে অপছন্দ করার ১০০১টা কারণ । কিন্ত প্রতিবেশীদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক না রাখা কোনো দেশের জন্যই ভালো কিছু না। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়—সব থেকে বড় প্রতিবাদ আমেরিকার জনগণই করেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করেছে। একটা দেশের জনগণ কখনো খারাপ হতে পারে না। খারাপ শাসকের দায়ভার আবার জনগণকেই নিতে হয়। হিংসা, বিদ্বেষ, অবজ্ঞা মহৎ কিছু দিতে পারে না।

পাকিস্তান সাহিত্যের উর্বর ভূমি ছিল। উর্দু, সিন্ধি, ফারসি ভাষার মিথস্ক্রিয়ায় উন্নতমানের সাহিত্য বিকশিত হয়েছে। মুহম্মদ ইকবাল প্রথম মুসলমান কবি যিনি ১৮৯৯ সালে হিমালয় কবিতায় মুসলমানদের স্মরণ করিয়ে দেন এই ভারতবর্ষ তোমারই দেশ, তোমারই জন্মভূমি।

 

বল মোরে হিমালয়, কাহিনি সে পূর্ণ-কলভাষা

আদি নরনারী যবে তব বুকে বেঁধেছিল বাসা।

সহজ সরল সেই জীবনের বল কিছু মোরে,

কলুষ কলঙ্ক-রেখা আঁকে নাই যাহার উপরে।

হে কল্পনা, দেখাও সে সন্ধ্যা আর প্রভাতনিচল,

অতীতে ফিরিয়া চল ওগো কাল আবর্তনময়।

(অনু : মনির উদ্দীন ইউসুফ)

 

জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমের উদীপ্তমন্ত্র পাকিস্তানের ফারসি ও সিন্ধি সাহিত্যকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভাষা কোনো ধর্মীয় জনগোষ্ঠির সম্পদ না। হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায় উর্দু এবং সিন্ধি ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। ভাষা কখনো মানুষের সম্প্রীতিতে দেয়াল তুলতে পারেনি। এখনো উত্তর ভারতের সাহিত্যিকরা হিন্দু হওয়া সত্বেও উর্দুতে লেখালেখি করে। উর্দু এবং ফারসি ভাষার সঙ্গে মুসলমান সংস্কৃতির মিল এবং সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে হিন্দু সংস্কৃতি মিল খুঁজতে যাওয়াই হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। মুন্সি প্রেমচন্দ ও রাজিন্দর সিং বেদী উর্দুতেই সাহিত্য রচনা করেছেন। মুহম্মদ ইকবাল যদিও পাকিস্তানের জাতীয় কবি। তাঁকে পুরোপুরি পাকিস্তানের কবি বলা যাবে না। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের আগেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন। ১৯২২ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি দেন। জালাল উদ্দিন রুমি, জে এম ই ম্যাকট্যাগার্ট, নিটসে ও বের্গসঁর দার্শনিক ভাবনায় ইকবাল অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি ইসলামি পুনরুজ্জীবনের দার্শনিক। পাশ্চাত্য দার্শনিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েও মূলত ইসলামি পুনরুজ্জীবনের প্রবক্তা। ইসলামি ইতিহাস, দর্শন, ফারসি সাহিত্য সম্পর্কে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। ধর্মীয় ও মানবিক দর্শনই ইকবালের কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর দার্শনিক ভাবনা যাতে দুনিয়াব্যাপী ইসলামি জগৎকে অনুপ্রাণিত করতে পারে তার জন্য তিনি ফারসিতে লিখতে শুরু করেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ভারতবর্ষে মুসলমানরা ধ্বংসের সম্মুখিন।তিনি মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যারা ইকবালকে ইসলামি জাতীয়তাবাদের কবি হিসেবি প্রতিষ্ঠিত করতে চান তারা যে কতটা ভ্রান্তির মধ্যে আছে তাঁর লেলিন কবিতাটিই দৃষ্টান্ত। যে লেলিন ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলে না। যে লেলিন কেয়ামত বিশ্বাসী ছিলেন না। যে লেলিন বস্তাবাদী দর্শনে বিশ্বাসী। সে লেলিন সমস্ত ধর্মীয় দর্শনের ঘোর বিরোধী। তিনি তাকে নিয়েও কবিতা লিখেছেন।

 

সমাজ-দিগন্ত আজ জাগে বীর্য কল্যাণ-রেখায়,

আসুর প্রচেষ্টা যত লুটাইবে তারি দৃপ্ত ঘায়।

যে লালিমা ফোটে আজ চোখে-মুখে সন্ধ্যার লগনে,

হয় তাহা প্রসাধন, নয় রঙ মত্ততা-সিঞ্চনে।

তুমি সর্বশক্তিমান বিচারক, ভুবনে তোমার,

কাটিতে চাহেনা দিন, শ্রমিকের ব্যথা-তিক্ততার।

কখন ডুবিবে এই পুঁজিবাদ-স্বর্ণ তরীখানি,

ফরিয়াদ তুলে আজ প্রভু, ত্রিভুবন-বাণী

(অনু : মনির উদ্দীন ইউসুফ)

 

এই মানবতাবাদী কবির পক্ষেই বলা সম্ভব, যে কাফের তাঁর দেবতার মূর্তির সামনে জাগ্রত হৃদয়ে উপাসনা করেছেন, কাবায় ঘুমিয়ে থাকা মুসলমানের চেয়ে সে অনেক বেশি পবিত্র। ইকবালের উর্দু কাব্যগ্রন্থের মধ্যে বাঙ্গ-ই-মশরিক, বাই-ই-ডিব্রিল এবং ফারসি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আসরার-ই-খুদি, রুমুজ-ই-বেখুদি, পায়াম-ই-মশরিক, জবুর-ই-আজম, জাবিদনামা উল্লেখযোগ্য।

সাদাত হাসান মান্টো এক অনন্য কথাসাহিত্যিক। অনিশ্চয়তা তাজ নিয়ে যেন জন্মেছিলেন তিনি। জীবনে কোথাও আপস করেননি। চাকচিক্যশুভিত জীবন চাইলেই যাপন করতে পারতেন। আসলে লেখক হওয়া যায় না। লেখক হয়ে জন্মগ্রহণ করতে হয়। সাদাত তেমনি ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি মোটেও ভালো ছাত্র ছিলেন না। তিনি যে কয়েকটা বিষয়ে পাশ করতে পারেননি। এর মধ্যে উর্দু ছিল। যদিও পরবর্তী জীবনে এই উর্দুতেই লিখেছেন প্রায় ২০০ গল্প। সাদাত ছিলেন স্বভাবে বিদ্রোহী ও অস্থিরচিত্ত। সাদাত হোসেনের অবিস্মরণীয় ছোটগল্প টোবা টেক সিং। এ গল্পটি দেশভাগ যন্ত্রণার অসাধারণ প্রকাশ। ‘সেখানে তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন, যে জমির ওপরে কারও কোনো অধিকার নেই, তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন ফোলা পা দুখানি নিয়ে। যেন একজন কলোসাস। যেহেতু তিনি একজন নিরীহ বৃদ্ধ মানুষ, তাই তাকে জোর করে ভারত ভূখণ্ডে পাঠানোর চেষ্টা  কেউ করল না। যেখানে তার দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হল সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেওয়া হল। এ দিকে লোক বিনিময় চলতে থাকল। এমনি করে রাত গড়িয়ে গেল। সকাল হওয়ার ঠিক আগে, যে মানুষটি পনেরো বছর ধরে দুপায়ের ওপরে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই বিষাণ সিং হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠলেন, দুদেশের কর্মচারীরাই দুপাশ থেকে ছুটে এলেন, তার দিকে এগোলেন, সেই মুহূর্তে তিনি মাটি মাটিতে আছড়ে পড়লেন। সেখানে, কাঁটাতারের বেড়ার এক দিকে রয়েছে ভারত, অন্য দিকে আরও কাঁটাতারের বেড়ার ও দিকে পাকিস্তান। তার মাঝখানে, এক খণ্ড জমি পড়ে রয়েছে যার কোনো নাম নেই, পড়ে রইলেন টোবা টেক সিং।’ মান্টো গৃহবধূর থেকে পতিতাদের অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে করতেন। সরকারি আমলাদের চেয়ে জুয়াচোরদের অনেক মানবিক মনে করতেন। যার গল্প পড়ে মানুষ মানবতাবাদে উজ্জীবিত হয়েছে। তাকে অশ্লীলতার দায়ে দু দুবার অভিযুক্ত হতে হয়েছে। পাকিস্তান তার ‘অভিভাবকেরা’ গল্পটিকে চরম অশ্লীল বলে ঘোষণা করে। পাঞ্জাবের দুর্ববৃত্তরা এক যুবতী নারীকে দর্ষণ করে। তাকে তার স্বদেশী পাকিস্তানি ভাইরা উদ্ধার করে ধর্ষণ করে। নির্দয় আচরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়। অভিযোগ করা হয় গল্পটি নিম্নমানের এবং রাষ্ট্রবিরোধী। এ গল্পের জন্য সাদাতকে অভিযুক্ত করে জেল জরিমানা করা হয়। সাদাত নেই কিন্তু তাঁর গল্পগুলো আজো মানুষ মনে রেখেছে। তাঁর আলোচিত কয়েকটি গল্প—ঈশ্বরের মানুষ, বরফের চেয়ে ঠান্ডা, বাবু গোপীনাথ, মর্যাদার প্রশ্ন, মমি, রাস্তার ধারে, মোজেল প্রভৃতি গল্প আজো স্মরণীয় হয়ে আছে।

অবিভক্ত ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণকারী আরেক বিখ্যাত কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ। তিনি প্রগতিশীল বামপন্থী আদর্শের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন। নাৎসি বাহিনী ও হিটলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য তিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। উর্দু ভাষার কবি হিসেবে তিনি সম্মানিত এবং আলোচিত ছিলেন। ফয়েজের প্রথম কবিতার বই নকশ-এ ফরিয়াদি প্রকাশিত হয় ১৯৪১ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৫২ সাল দ্বিতীয় কবিতার বই দস্ত-এ সবা প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে—জিনদান নামা, দস্ত তহ্-এ-সাঙ,  সারে-এ-ওয়াদি-এ সিনা, শাম-এ-শহর-এ ইয়ারাঁ, কালাম-এ-ফয়েজ। কবি পাবলো নেরুদা ও নাজিম হিকমতের সঙ্গে কবি-স্বভাবে ফয়েজ আহমদ ফয়েজের সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি ১৯৬২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ‘লেনিন শান্তি পরস্কারে’ ভূষিত হন।

দেশ যে নতুন স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন হলো সেই স্বপ্ন ভাঙতে খুব বেশি সময় লাগেনি। আর এসব যন্ত্রণার কথা বার বার ফুঠে উঠেছে পারভিন সাকির, মজিদ আহম্মদ, শেহনাজ আহম্মদ, মুনির নিয়াজি, ওয়াজির আগার কবিতায়। ফারসি চিত্রকল্প, ইসলামি ভাবধারার প্রতি অনুগত না হয়ে মানুষের যন্ত্রণা কষ্টের সিম্ফনি তারা বাজাতে শুরু করে। তাদের শব্দ চয়ন, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, ছন্দ চিত্রকল্পে কাব্য চর্চায় নতুন ধারার সূচনা হয়। কবি জামিলুদ্দিন আলি, ফাহমিদা রিয়াজ, আফগাল আহম্মদ সাইয়াদ প্রমুখ কবির প্রতিবাদী চেতনা পাকিস্তানি কাব্যচর্চাকে শক্তিশালী করেছে।

ইংরেজিতে সাহিত্য চর্চা করেন এরকম বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি আছেন। দানিয়েল মুইনুদ্দিনের গল্প সংকলন ‘ইন আদার রুমস, আদার ওয়ার্ল্ডস’ বহির্বিশ্বে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এই গল্পের বেশির ভাগ গল্প দ্য নিউ ইর্য়কারে প্রকাশিত হয়েছে। অনেক সমালোচক বলেছেন, ইভান তুর্গেনিভ ও উইলিয়াম ফকনারের সমতুল্য কথাসাহিত্যিক দানিয়েল। মহসিন হামিদের ‘দ্য রিলাকটান্ট ফানডামেন্টালিস্ট’, বইটি ২০০৭ সালে বুকার পুরস্কারর জন্য মনোনীত হয়। কামিলা শামসি আর একজন উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক। সাম্প্রতিক সময় পাকিস্তানি সাহিত্যিকদের লেখা বই পাশ্চাত্যে স্বীকৃতি পাচ্ছে।

শাসকরা কখনো শিল্পী, সাহিত্যিকদের পছন্দ করেন না। পাকিস্তানি শাসকরা তো আরও আগে না। অন্যায়, নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর ফাহমিদা রিয়াজ। পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ ১৪টি মামলা করেছে তার বিরুদ্ধে। কবি আজরা আব্বাসকে মানবিক কবিতা লেখার অপরাধে নির্বাসিত করা হয়েছে। যারা অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেও মানুষের কথা বলে তারা কখনো হারিয়ে যায় না। অত্যাচারী শাসকের পতন অনিবার্য। কথাসাহিত্যে এনবার সাজ্জাদ, মানশা ইয়াদ তাদের মধ্যে অন্যতম। মুক্তমত প্রকাশের জন্য গণতন্ত্র একটি ভালো ব্যবস্থা। স্বাধীনতার পর অধিকাংশ সময় পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সাময়িক শক্তি থাকার কারণে—স্বাধীন মত প্রকাশের পথ অনেকটাই রুদ্ধ। তারপরও পাকিস্তানি সাধারণ মানুষের স্বপ্ন একদিন আলো আসবে। সাম্প্রদায়িকতার বিষগর্ভ থেকে বাক স্বাধীনতা এবং সাস্কৃতিক বিপ্লব একদিন তাদেরও হবে।


 

কৃতজ্ঞতা : দিব্যজ্যোতি মজুমদার

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা