X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্য মালাকারের কবিতা

.
০১ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৪৪আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৩

 

নিত্য মালাকারের কবিতা

সুধা

মাথার ভেতরে নক্ষত্রখচিত রাত্রি। নাকি কৃষ্ণচূড়া আর বনকলমিদের সংসার বিগ্রহ?

মনে নেই। ঝাঁপি খুললেই বেরিয়ে আসবে। ভয়ে এসব কথা বউকেও বলি না। হাঁটি

আর ঘনশ্যাম ঘাসেদের পায়ে পায়ে দলতে দলতে এক পোর্টিকোয় হাজির। সেখানে এক

বেতের চেয়ার আর বিশুদ্ধ পাপোশ ছাড়া কেউ নেই। মন বলে, কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা

এক উজ্জ্বল ভোলা ছিল। অন্ধকারে কে কোথায় যে

যায়। কিন্তু বসে ছিল কে? যে স্তব্ধতা- তার কাছেই বলব কি?

 

ছিটকিনি নড়ে ওঠে, কাছে যাই, কেউ না বিভাষা।

 

মদ

পোস্টারে শুধু দুটি পা। কাঞ্চনজঙ্ঘা বলব? কারণ ওপরটা নেই। কে জানে হাওয়া

ছিনিয়ে নিয়েছে কি না।

 

আজ আমার দুঃখের দিন। কল্পনা তাড়িয়ে দিয়েছে পথে, রেস্ত নেই। মাথায় বৃষ্টি, পায়ে

রোদ, কপালে দুঃখ, চিত্তে সুখ, হৃদয়ে নকল ভালভ। এদিকে দু হাতের দশটা আঙুলই

পুড়ে দস্তানা। তবু স্তব্ধবাক, সামনে দাঁড়িয়ে আমিও পা ফাঁক করে দাঁড়ালাম। এখানে

সন্ধ্যার পর লোকজন কখনও হাঁটে না। চড়ব কি ? যদি পড়ে যাই ? শূন্যমন্ডল থেকে

বিপ-বিপ শব্দ আসে। শালা, আমি যেন পড়ালেখা করিনি। ‘দেয়াল ধরো, দেয়াল’। কিন্তু

দেয়াল ধরা মানেই পাঁজাকোলা করা নয়। ‘নাক লাগাও, টানো বুক ভরে।’ –

বিপ, পিঁ-পিঁ। আমি বুঝলাম, পাগলা হাতির মাথা নড়ে। পালা।

 

কাব্যকথা

বাঁচব কি ? এক লৌহ-ব্যবসায়ীর স্ত্রীর গোড়ালি দেখে তিন মাস হাসলাম। নদীকেও

বললাম। সে আবার গালে লজ্জা পুরে একটু সরে গিয়ে- পাশেই বসে টিভি দেখতে

লাগল; কখনও মাছ, কখনও বঁড়শি। কখনও মানুষ- উত্থানপদ, মাথা দিয়ে হাঁটে। এতে

গর্ভধারণ করার কী আছে বুঝি না। আমি তো গোপন, রাত্রি- এসব বলিনি। বলেছি,

উৎকর্ণ হও। বলিনি আঁখিপল্লব তোলো বা বাহুমূল। এত কী সমস্যা আসে?

 

অবশ্য এখনও চন্দ্র সূর্য হিমালয় আছে। হয়তো রবীন্দ্রনাথও। তবু প্রশ্ন। হাওয়ায় হারপুন

ও কুড়ুল ভেসে আসে। এই ভুমধ্য শহরে। ধিক, শত ধিক।

 

রূপকথার পরের কথা

জানি না নটে গাছটি কবে মুড়োবে। জানি না তারও আগে এইসব, এইসব ভণিতা

গল্পগাছা আরও কীভাবে পল্লবিত হবে। শ্রুতিসুখকর একটি স্বপ্নের কথা যখনই ভেবেছি,

ঠিক তখনই এসে ঘিরে ধরেছে, প্রশ্ন করেছে কিছু রাক্ষস- নিরীহ মারীচ। এরা

স্বল্পালোকে বিচরণশীল থেকে মানুষি তালমান বোঝে, পরে সময়মতো থাবা তোলে।

ভালোবাসা- একটু রকমফের, সুবর্ণ কঙ্কণের লোভ।

 

নিমব্রহ্ম সরস্বতী

দ্যাখো, এইবেলা আমি নিম বিষয়ে ভাবছি। যদিচ, সকলি,

আলো ও শীত-তীব্রতা মিলিয়ে ছাত্রীপাঠ্য সন্দর্ভ কিছু হয়

কিনা নিয়ে তুমুল তোলপাড় হবো ভেবে চির স্ত্রীমুখ দেখে

সংযত, হেসে সুখে রোজকার মতো চূড়ান্ত প্রৌঢ়—চা খাচ্ছি

বেশ।

হাল ধরে বহুক্ষণ,—এরকম কত দিন যে গিয়েছে। গিয়েছে

বিকেল, শুকনো। রাত্রি গিয়েছে। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে

যাওয়া ভুক্তাবশিষ্টের মাংস, খাঁড়ি, ভাঁজ ও মোহনাদর্শন

শেষে সাদা সত্য লাভ।—এসব ঘটেছে বহুতর ছলাৎছল

ঘাটের অর্চিষ্মান খাবি বেপথুমতি আপন্নের ঘাটে।

তাই, এইবেলা আমি নিম বিষয়ে বিবিধ উপসর্গ অনুসর্গ

যোগে দেখছি সুখদ ব্রহ্ম, দেখছি সরস্বত্যৈ হ্রীং ক্লীং।

 

আজ সকালে ভারতের কোচবিহারের এম.জে.এন. হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন কবি নিত্য মালাকার। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৮ আগস্ট বর্তমান বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার ভদ্রঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেছেন নদিয়ার নবদ্বীপে। তারপর থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন কোচবিহার জেলার মাথাভাঙায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: সূত্রধারের স্বগতোক্তি (১৯৮৮), অন্ধের বাগান (১৯৯৪), দানা ফসলের দেশে (২০০২), গীতবিতান প্রসূত রাত্রি এই বৃষ্টিধারা (২০০৮), যথার্থ বাক্যটি রচনার স্বার্থে (২০১২), নিমব্রহ্ম সরস্বতী (২০১৫)।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি