হাইনরিশ হাইনে ১৭৯৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর জার্মানীর ডুসেলডর্ফ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। হাইনেকে বলা হয় উনিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং রোমান্টিক ধারার সর্বশেষ কবি। লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান এবং গল্প। ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিসে এই জগদ্বিখ্যাত লেখক পরপারে পাড়ি জমান।
ভাগ্য এক রূপজীবী
ভাগ্য এক রূপজীবী
সে কখনো থাকে না স্থির;
কপালে চুলের স্পর্শ দিয়ে
পালায় সহসা চুমু খেয়ে।
দুর্ভাগ্য চলে বিপরীতে
ভালোবেসে কাছে টেনে বলে,
তার কোনো তাড়া নেই
বিছানায় বসে থাকে
তোমার পাশে।
আহ! আবার সেই চোখগুলো
আহ! আবার সেই চোখগুলো,
যা আমায় ভালোবেসে ডাকতো।
এবং ফের সুমধুর করত
আমার জীবন।
সেই কণ্ঠস্বরও এসেছে আবার,
যা আমি ভালোবেসে শুনতাম।
শুধু আমি সেই আমি নই,
রূপান্তরিত হয়ে ফিরেছি ঘরে।
দুধসাদা সেই বাহুডোর
আমাকে করতো দৃঢ় আলিঙ্গন,
এখনো আমি আছি তার হৃদয়ের মাঝে,
আছি অনুভূতিতে, ভগ্নহৃদয়, নিষ্প্রাণ।
পুরানো গোলাপ
একটা গোলাপকুঁড়ি ছিল
যার জন্য উদ্ভাসিত এ হৃদয়;
বেড়ে ওঠে সে অপরূপ পুষ্প।
সে ছিলো আশ্চর্য গোলাপ,
আর আমি চেয়েছি তাকে ছিন্ন করতে।
সে জানত, আমার আদরের বিনিময়ে
কাঁটা বিঁধিয়ে দিতে।
এখন সে যেখানে ক্ষত করে, ছিন্নভিন্ন করে
বৃষ্টি আর বাতাসে ভেসে আঘাত করে—
প্রিয়তম হাইনরিশ এখন,
প্রণয়ভরে সে আসে আমার মুখোমুখি।
হাইনরিশ সামনে, হাইনরিশ পেছনে
শুনতে যেন সুমধুর শোনায়।
এই গায়ে বিঁধেছে তোমার কাঁটা,
এটা কী তোমার ধারালো চিবুক!
উপরের লোমগুলো বেজায় শক্ত,
যা তোমার থুতনিকে করে অলংকৃত-
আশ্রমে যাও, ওহে প্রিয় শিশু
অথবা মুণ্ডন করবে তোমায়।
আমি যখন তোমার দিকে তাকাই
আমি যখন তোমার চোখের দিকে তাকাই
বিলীন হয়ে যায় আমার যত দুঃখ-কষ্ট;
আমি যখন তোমার মুখে চুমু খাই,
আমি তখন হয়ে উঠি পুরোপুরি সুস্থ।
আমি যখন তোমার বুকে চেঁপে থাকি
স্বর্গীয় লিপ্সা নামে আমার উপর;
যখন তুমি বল : আমি তোমায় ভালোবাসি
মর্মভেদী কান্না আসে আমার।
শীতল হৃদয়ের বিমর্ষ অনুভূতি
শীতল হৃদয়ের বিমর্ষ অনুভূতি
বিষণ্নতায় অসাড় পৃথিবীকে দেখি,
হেমন্তের শেষেও, একবিন্দু শিশির
মৃত এই অঞ্চলকে রাখে ঢেকে।
বাতাস শিষ দেয়, এদিক ওদিক ছোটে
লাল পাতা, যা ঝরে পড়ে দীর্ঘশ্বাসের মতো,
বাষ্পায়িত কেশহীন ভূমি,
এখন আসবে অতি অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি।