নীল নোটবুকের গান
অনিল চলিয়া গেল
অনিলের প্রায়
—কুসুমকুমারী দাশ
অনিল চলিয়া যায়
অনিলের প্রায়,
আর তুমি দিলে নোটবুক;
নীল তীব্রতায়।
ভাবা গেল
তোমার নীলে লিখে রাখব
খয়েরি আমাকে।
কিন্তু নীল প্রায়শই
নৃশংস নাশকতা ছড়ায়।
আহত-আতুরকে দেয়
প্রলুব্ধি; প্রেমের।
মৃত্যুলিপি লিখতে গিয়ে
লোভে পড়ে
লিখে ফেলি
দুর্লভ জীবনের দু’চার অক্ষর।
আর কাউকে যা-ই দাও;
মৃত্যুযাত্রীকে দিও না
নোটবুক নীলাভ।
শহর ও সোনালি সংগোপন
ঘুমের ভেতর চলে যাই ফেলে আসা শহরে,
যেহেতু আমার যাবত জাগরণ ঘুমোয় সে শহরে।
মাঝেমধ্যে বুকের নিঝুম প্রাণপুকুরপাড়ে
নিবিড় এক রামঘাট জেগে ওঠে,
সেখানে
বিগত-বালকের চলাফেরার চিহ্ন কি কেউ খুঁজে?
তোমাদের আজকের নিরূপম নগরে
দরদালানের ভিড়ে যে জ্যোৎস্না স্থবির হয়ে আছে
শুধু তাকে বলি,
স্বপ্নের ভেতরেও উদ্বাস্তু যে তিমির-বালক;
তার ভূমিহীন পদতল আর পুষ্পকরথে
ভারসাম্যের বিন্দু এঁকো না;
তোমার আলোর আলপনাতে।
বরং তুমি ত্বরিৎ
জানাও আমাকে
একজীবনের গাড়িতে
ঢাকা থেকে
কুমিল্লা
কতদূরে
কতদূরে...
লোকাল বাসের শক্তি চট্টোপাধ্যায়
অফিস যাচ্ছি লোকাল বাসে
ব্যাগের ভেতর খাবার-বাটি আর কবি শক্তি
চলতি দেশ-এ অংশুমান আর জয়ের লেখা
খাবার-বাটি মাছ, ডাল আর ভাতে ভরা।
এ জীবন সকালের দুপুরে গড়িয়ে যাওয়া
এ জীবন ভাত খাওয়া আর কবিতা পড়া
কবি বলেছেন,
‘এত কবি কেন?’
ভাবছি ভাবছি
যা পড়ব তা কবিতাই তো!
কবি বলেছেন,
‘ভাত নয়,
আমাদের আদিগন্ত থালায় পাথর ছড়ানো থাকে।’
ভাবছি ভাবছি
আসছে দুপুরে যা খাব
সাদা ভাতের আদলে
কালের পাথর নয়তো তা!
ক্রিয়াপদের বসন্ত
ফাল্গুন ফিকে হয়ে দেখা দিল এবার,
হিমে হুড়মুড় ধ্বসে গেল
ঘনীভূত শীতপ্রাসাদ।
কুয়াশার মিনার পেল না কোনো
প্রতীক্ষিত প্লাবন;
যে প্লাবনে মরে যাওয়া তৃষ্ণা বেঁচে ওঠে।
বালকের মুখ থেকে
বিগত বছরের হিম এসে শ্বাস ফেলে
নববসন্তের জ্যোৎস্নার গায়ে।
জ্যোৎস্নার আলো তবু পায় না
বেভুল বালক
শুধু তার গ্রহণের দাগে লেখা হয়
বালকের প্রার্থিত
পতন কি পরম!
একটি ফুল, পাপড়ি পাঁচটি
আমার ধ্বংসের সারগামে
তুমি জীবন খুঁজে নিও।
২.
ঘুমের ভেতর থেকো
স্বপ্নের প্রতিবেশী হয়ে।
৩.
আসছি
মরণের মধু-মোহে
আমার বেঁচে থাকার
কারণের কাছে।
৪.
উড়ি
পাখাহীন আমি;
কারণ কাউকে জানি
দিগন্ত আমার।
৫.
প্রতিটি অভ্যর্থনায় থাকে
বিদায়ের গন্ধ।