বিপ্লব অথবা প্রেম, একটি অমীমাংসিত অধ্যায়
একটি অমীমাংসিত দুপুর উত্তাপ ছড়ালো খুব! তুমুল বাক্য ব্যয়! স্বপ্ন আর কল্পনার
মাস্তুলে উড়লো প্রত্যাশার পতাকা। এভাবেই আমরা আড্ডায় মজে গেলাম; চা,
সিগারেটে গচ্চা হলো বেশ! পথে পথে ফুল তবু ফুটলো না।
নৈঃশব্দ্যের সাথে পরকীয়ায় মেতে, প্রেম পেতে চাইলো কেউ কেউ; লোকলজ্জা
মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখে সন্তানের মুখ কী ভীষণ মলিন! কেউ কেউ শুধু
ঘরেই ফেরে না, ফিরে আসে নিজের কাছে; তাদের শয্যায় পাশাপাশি ঘুম ও
জাগরণ।
ফড়িঙের জীবন খুঁজে এখনো কবিতা লেখে যারা, তাদের ঘরে রোদ নামে না
হয়তো, কিন্তু শহরজুড়ে কেন অতো অন্ধকার! মেলা থেকে মিছিল, ফুটপাত থেকে
ফেস্টিভ্যাল; সবখানেই কেন এতো বিকিকিনির হাট! কেন পার্কের বেঞ্চে পুলিশের
অহেতুক হানা!
ছেলেটা লেনিন হতে চেয়ে রাতভর চিকা মারে দেয়ালে দেয়ালে; তবু মানুষের
মুক্তি মেলে না। চে’র ছবি বুকে ঝুলিয়ে প্রেমিক হওয়া যায়, অথবা বিপ্লবী
হওয়ার ভান করা যায় হয়তো; নইলে, মিছিল থেকে ঘরে ফেরা বিপ্লবীরা কেন
সিন্ডিকেটের ফাঁদে!
যাচ্ছি (ব্যক্তিগত জার্নাল)
বিচ্ছিরি-বিকেল থেকে বেরুতে হবে!
ধুত্তরি-সকালটা ঘুমিয়ে কাটাবো!
রাত্তিরের ভ্রমণটা দীর্ঘ হবে আরেকটু;
এইসব ভাবতে ভাবতে রাশভারি ভোর পেরিয়ে গেলো!
ট্রেনের জানালায় ঘুরতে থাকা দিগন্ত দেখবো
ফেরিঘাটে রাত কাটাবো
যাত্রী পারাপার দেখবো।
একটা দৌড় দিয়ে পেরিয়ে যাবো ছেলেবেলার মাঠ!
আমিতো রাজা!
এটা অবশ্য গোপনীয় খুব!
কাউকে প্রতীক্ষায় রাখবো না
ভুলে যেতে চাইবো অনেক কিছু।
তোমাদের এইসব বাজারদরের ওঠানামা
দলাদলি, বলাবলি—করুক, চলুক।
বিকিকিনি আর ভাগাভাগির সভায় হট্টগোল হোক, অথবা শান্তি বিরাজ করুক;
মাথাজুড়ে একঝাঁক প্রজাপতি ছাড়া আর কাউকে দেবো না স্থান।
চলে গেলাম...
আরেকটা জীবনের খোঁজে এই চলে যাওয়া নয়
হয়তো, একটুও পেছনে না তাকিয়ে হাঁটতে শেখাও নয়।
যাচ্ছি,
যেখানে অপেক্ষা করে আছে শিল্পিত অক্ষরেরা...
তোমাদের জন্য রেখে গেলাম কোলাহলময় উঠোন
নৈঃশব্দ্যটুকু কেবল আমার।
ঘুম সিরিজ ❑১১
নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার জন্য হলেও একজন শয্যাসঙ্গী প্রয়োজন হয়ে পড়ে
কখনো কখনো; অথবা বিছানার শূন্যতা বোধে হারানো রাতের কথা ভেবে শুরু করা যায়
বিলাপ...
মানুষেরা একা ঘুমাতে পারে না, তবু প্রতিদিন আলো এসে ভুলিয়ে দেয় এইসব
আক্ষেপ। ধুলোর পৃথিবীতে জলেরা গড়ায় নিজস্ব নিয়মে।
বৃক্ষের বাকল খুলে নেয় মানুষ, বৃক্ষের ডাল কেটে নেয় মানুষ, তেইশ কোটি বছর
আগে দানবীয় তৃণভোজী ডাইনোসরেরা ছিলো যখন; তখনো বৃক্ষরা ছিলো এমনই
নিশ্চল।
মাটি থেকে মহল, কোথাও সঙ্গী ছিলো না কেউ; এই কথা সত্য হয় কেবল
ঘুমোতে যাওয়ার কালে।
মন সিরিজ ❑১৪
হঠাৎ মনে হলো নিজের দিকে তাকানো হয় না তেমন। নিজেকে দেখতে দেখতে
মনে হলো চোখজোড়া আগের মতোই, চুলে কিঞ্চিৎ ধবল ঈশারা।
অধরে আঙুল ছোঁয়াতেই মনে হলো ভালোবাসি খুব, তারপর মনে হলো অবহেলা
করছি ওষ্ঠকে। অথচ ওরা আলাদা হলে আর চুমু খাওয়া যায় না। ওদের নৈকট্য
বা ছুঁয়ে থাকার বিকল্প নেই।
হাত পা নখ উরু এবং নাকের দিকে তাকাতেও মনে হলো ভালোবাসি খুব
এইসব প্রিয় প্রত্যঙ্গ।
এই যে এতসব ভাবছি! নিরলস প্রত্যঙ্গমালা; ওরা কী জানে মনের খবর! যদি
জানতো, তবে কেন এত বিরোধ! এতটা অবাধ্য ঘুম ও জাগরণ।
দেহ সিরিজ ❑১৫
মহাকাল থেকে খসে পড়লো একটা পাতা, উড়তে উড়তে সেই পাতা গিয়ে পড়লো
আফ্রিকার বিরানভূমিতে; পাতাদের ইতিহাস তখনো লেখা হয়নি বলে একটা বৃক্ষ
গজালো সেই পাতা থেকে।
তারপর পেরিয়ে গেলো নিয়ান্ডারথাল যুগ; স্যাপিয়েন্সদের পৃথিবীতে পাতাদের
কোনো ইতিহাস লেখা হয়নি, তবে আপেলের গল্প মুখরোচক হওয়ায় টিকে গেছে
অদ্যাবধি; আর চাপা পড়েছে গণহত্যার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন হওয়া নিয়ান্ডারথালদের
করুণ ইতিহাস!
বিলুপ্ত ম্যামথ অথবা ডাইনোসরদের জন্য কোনো শোকসভা হয়নি কোনোদিন,
এমিবা কিংবা কুমিরের সাথে আমাদের কোনো মিল নেই, কেননা আমরা
শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার!
এখন আমাদের আরেকটি গ্রহ নেই বলে পালাবার পথ বন্ধ, পারমাণবিক
বিভাজনের মতো স্যাপিয়েন্সরা আজ। ধর্ম যদি হয় অনুঘটক! তবে তো বিস্ফোরণ
আসন্ন!
এখন মাঝেমধ্যে আমাদের পুর্বপুরুষদের দেখতে যাই টিকিট কেটে, শিশুদের
জন্য হলেও যেতে হয় বছরে দু’একবার। কারণ, আমরা পেয়েছি অপরূপ, অনন্য
দেহ!