X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
জাম্বিয়ার গল্প

কেবল একটি চটের বস্তার কাহিনী || নাম্বালি সেরপেল

অনুবাদ : রোখসানা চৌধুরী
২৮ মে ২০১৯, ১৭:৩৩আপডেট : ২৮ মে ২০১৯, ১৭:৩৬

নাম্বালি সেরপেল ১৯৮০ সালে জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাহিত্যে আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমেরিকান অ্যান্ড ব্রিটিশ ফিকশন-এ ডক্টরেট। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তার প্রথম উপন্যাস দ্য ওল্ড ড্রিফট প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। কেবলএকটিচটেরবস্তারকাহিনী তার দ্য স্যাক গল্পের অনুবাদ। এই গল্পের জন্য তিনি ২০১৫ সালে আফ্রিকার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্য পুরস্কার কেইন প্রাইজ লাভ করেন।

কেবল একটি চটের বস্তার কাহিনী || নাম্বালি সেরপেল

একটা বস্তা

বস্তা? হ্যাঁ চটের বস্তা।

বড়? হ্যাঁ। ছাইরঙা। বাইরে দেখলাম ছায়াটা নড়ছিল বলে বুঝতে পারলাম।

ঐটার ভেতরে কিছু নড়ছিল নাকি?

পুরো বস্তাটাই নড়ছিল। ঐ যে রাস্তাটা খালের পাশে এবড়ো-খেবড়ো, ঘাস আর হলুদ ফুলে ভরা, সবুজ গাছ। অন্ধকার ছিল?

হ্যাঁ, কিন্তু আলো ফুটছিল। ভোর হচ্ছিল। পাখিদের কলতান, উড়াউড়ি। আর বস্তাটা নড়ছিল। ওটাকে আসলে টেনে আনছিল, একটা লোক।

কে সে?

আমি তার চেহারা দেখতে পাইনি। সে দেখতে লম্বা, তার শার্ট ছিল রঙচটা কোনো মোজা নাই, হাতগুলো স্যাঁতসেঁতে ভেজা আর পায়ে ছিল নোংরা স্যান্ডেল।

সে তোমাকে দেখতে পেয়েছিল?

জানি না। ক্লান্ত লাগছে এখন। পর্দাগুলো ঢেকে দাও।

আচ্ছা।

জে. বেডরুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে গেল। কাঠের দরজাটা খোলা থাকলেও লোহার ভারী কলাপসিবল গেটটা তখনো বন্ধ ছিল। আকাশটা ক্রমেই ধূসর হয়ে আসছিল, পোকামাকড়ের গুঞ্জন ভেসে আসছিল বাগান থেকে। সে ভাবছিল ঘরের লোকটাকে নিয়ে, যার প্রতি সে অনেক বছর ধরে তীব্রভাবে ঘৃণা পুষে আসছে।

জে. খাবারের প্লেটগুলো পরিষ্কার করল, ঘর ঝাড় দিল। একটা মুরগি বাইরে বিকট শব্দ করছিল। জে. দাঁত খিলাল করতে করতে বাইরে তাকালো কী ঘটেছে তা দেখতে। কিশোর ছেলেটা লোহার গেটের বাইরে দাঁড়িয়েছিল। বড় একটা ঝুড়ি দু’হাতে আগলে ছিল সে, যেটার দড়ি তার দুই কনুইতে দু’দিক থেকে শক্ত করে বাঁধা ছিল। তার পা ছিল সাদা বালি আর ধূসর ময়লায় আবৃত।

চুপচাপ আওয়াজ না দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কীভাবে ভাবো আমি বুঝব?

জে. অসন্তুষ্টভাবে বলে যাচ্ছিল। ছেলেটা গেট খুলে ঢুকল, কাঁধ ঝাঁকিয়ে মিষ্টি হাসল, যেন কিছুই হয়নি। দু’জন মিলে তুলতে গিয়েও মস্ত ঝুড়িটা যেন বাঁকিয়ে উঠছিল। জে. ‘হেইয়ো’ বলে ওটাকে উঠিয়ে ভেতরে নিয়ে পানির বেসিনে মধ্যে ছেড়ে দিল। পানিতে মাছগুলোর খলবলানির ভেতরেও এর বিপুল পরিমাণ অনুমান করা যাচ্ছিল। স্বচ্ছল পানি পেয়ে মাছগুলো মনের আনন্দে সাঁতার কাটছিল।

বিশাল ব্যাপার, তাই না? জে. বালকের দিকে তাকিয়ে হাসল। বালকটি তখনো গেটের হুড়কো ধরে দাঁড়িয়েছিল। তার পা-গুলো নকশা কাটা মেঝেতে প্রতিফলিত হয়ে তাকে আরো লম্বা দেখাচ্ছিল যেন।

কিছু খাবে?

ছেলেটি মাথা নাড়ল।

তোমার উচিৎ এই মাছ খেয়েই বেঁচে থাকা। টিকে থাকার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় হয় না।

আমি তাকে প্রথম স্বপ্নটা বলেছিলাম। দ্বিতীয়টা বলিনি। দ্বিতীয়টাতে আমিই বস্তাটার ভিতরে ছিলাম। বস্তাটা ঠিক আমার চোখের উপরে চেপে বসে ছিল। আমি একদিকে ঘুরে শুয়েছিলাম। সবকিছু চোখের সামনে ধূসর দেখাচ্ছিল। ব্যথা পাচ্ছিলাম না কিন্তু মেঝেটা ঠিক আমার হাড় বরাবর ছিল। আমি তাই বেঁকে শুয়েছিলাম। আমি যেন বস্তাটা টানার শব্দ পাচ্ছিলাম, খুব ধীরে ঝাড় দেয়ার শব্দের মতো। আমি তাকে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধ করে আসছি—যে কারণে সে আমাকে সত্যি সত্যি ক্রীতদাস ভেবে আসতেছে। সে তার কাজ করেছে, কিন্তু সে বৈচিত্রের অভাববোধ করছিল। তার রাজনীতি যদিও এটা সমর্থন করে না আসলে আমার তাকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। আমি জানি আমাদের প্রজন্মে আমার গাত্রবর্ণ অন্যের কাছে কী অর্থ বয়ে নিয়ে আসে। তার দৃষ্টির পরিবর্তন হচ্ছিল। আমার ধারণা সে আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল। আমি যা ভাবছিলাম আমার স্বপ্নগুলো তা বলে দিচ্ছিল, নায়লা।

আমি তোমার কথা মনে রাখিনি নায়লা। তারা দু’জন মিলে ঝুড়িটা তুলে মাছগুলো বের করে ফেলল, একজন ধরল ঝুড়ির পেছন দিকটা অন্যজন ঝুড়ির হাতল। মাছগুলো ইচ্ছামতো লাফাচ্ছিল, কানকোগুলো কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছিল, মাছগুলোর কিনারগুলো দিল উজ্জ্বল রুপালি রঙ, আঁশগুলো পানির ভেতর চকচক করছিল। মুরগিটা বাইরে আবারো তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠল।

আহ্, এটাকে ধরো।

বালকটি শক্ত করে মাছটি চেপে ধরতেই জে. তার ছুরি দিয়ে নড়তে থাকা কানকোর নিচে পোচ দিল। রক্তে দু’জনের হাত ভরে গেল। মাছটা একবার, দু’বার তড়পালো। তারপর থেমে গেল।

তোমার সাহায্য দরকার আমার, জে. স্মিতভাবে হাসল। সে মাছগুলোর কাঁটা ছাড়ালো, নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করল। বালকটি চপিং বোর্ডের ডোরাকাটা দাগ নিবিষ্ট মনে দেখতে দেখতে মুছে ফেলল। জে. মাছগুলো তেল পিঁয়াজ আর টমেটো দিয়ে চচ্চড়ি করে রান্না করল। ছেলেটাকে মেঝেতে পিড়ি পেতে খেতে দিল। নিজের জন্য খানিকটা তুলে রেখে বাকিটা শায়নকক্ষে থাকা লোকটার জন্য প্লেটে নিয়ে নিল।

ঘরটা ছিল অন্ধকার কিন্তু ল্যাম্পের মৃদু আলো দেয়ালে কমলা আভা ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

কে ওখানে?

মাছওয়ালা ছেলেটা। জে. প্লেটটা সাইড টেবিলে রেখে ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিল।

লোকটা কাশতে শুরু করল। প্রদীপের ধোঁয়া তার বুকে জমাট বেঁধে আটকে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হতে লাগল। জে. তাকে উঠিয়ে বসিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকল যতক্ষণ না সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। স্বাভাবিক হলেও লোকটা ক্লান্ত হয়ে হাপাঁচ্ছিল।

মাছওয়ালা এখনো এখানে কেনো? তাকে মাছের টাকা দেয়া হয় নাই?

আমি তাকে খেতে দিয়েছি। আমি তাকে উঠিয়ে বসিয়ে খাবারের প্লেট দিলাম, গাঁইগুঁই করতে করতে সে খেতে শুরু করল।

প্রথম স্বপ্নে, চটের বস্তাটা ছিল ভরা আর এটা টেনে আনা হচ্ছিল। দ্বিতীয় স্বপ্নে আমি ছিলাম এটার ভিতরে। তৃতীয় স্বপ্ন কী ঘটেছিল? তুমি হাসবে স্বপ্ন খুব দ্রুত সামনে এগোচ্ছে, পেছনে তাকাচ্ছে না কিন্তু তুমি আমাকে এজন্যই বেছে নিয়েছিলে নায়লা। অথবা এটাও আমি কল্পনা করেছিলাম  কিনা, আজ আর তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। মাঝে মাঝে আমি ভাবতাম তুমি আমার হাতগুলো জন্য আমাকে ভালোবাসো। আমার ধারণা সিদ্ধান্ত নেবার জন্য তুমি আন্দাকে ঢিল ছুঁড়ে ছিলে। মুরগির ঘরে একটা ছোটখাটো প্রলয়ই ঘটে গেল।

রান্নাঘরের মেঝেতে চেটেপুটে শেষ করা প্লেটটা পড়ে ছিল। ছেলেটা চলে গেছে। বাইরের সিকিউরিটি গেটের কাছে মাছের আঁশের দলার উপর জমাট মাছির ভনভনানির আওয়াজ আসছে। সে নিশ্চয়ই ঐ পথেই গেছে। জে. উঠে গিয়ে ধীর পদক্ষেপে মুরগির ঘরের কাছে গিয়ে খড়ে ছাওয়া দরজা উবু হয়ে খুললো। ক্যাচ ক্যাচ ঘর ঘর আওয়াজ উঠল সমবেতভাবে। ঘরের ভেতর থেকে আলো এসে অন্ধকারকে ফালি ফালি করে দিচ্ছিল।

জে. একটার পর একটা মুরগির কাছে যেতে গিয়ে কোমরের হাড় মচকে গেল। মুরগিগুলো বাঁচার উপায় হিসেবে তাদের মাথাগুলো পালক ফুলিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে রাখছিল। একদম শেষ মুরগিটা নিঃশব্দে তার বাসার উপরে গিয়ে বসেছিল। জে. একটি আর্তচিৎকার শুনল আর দেয়ালের দিকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল সেই ছেলেটি ভয়ে গুটিশুটি হয়ে কোনায় বসে আছে। আলোর নকশা পড়ে খেলা করছে ওর উপর। জে. আবার মুরগিগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। মুরগির পালকগুলো তার হাতের চাপে ছিঁড়ে, ভেঙেচুড়ে যাচ্ছিল। নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল ওগুলো। জে.  তারপর মুরগির দঙ্গলকে একসাথে নামিয়ে এনে ঘাড় মুচড়ে মাথা ঠোঁট থেকে আলাদা করে ফেলল। মুরগির গুহা রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছিল পিঁপড়াসমতে। জে. সোজা হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে মাথায় লাগল। মুরগিগুলো তীক্ষ্ন স্বরে চেচাচ্ছিল আর ডানা ঝাপটাচ্ছিল। ঘরময় মুরগির পালক উড়ছিল। পিঁপড়া জে.’র হাতে কামড়ে দিয়েছিল। একটা মুরগি উঠান পেরিয়ে পালিয়ে যাবার উপক্রম করতেই জে. ওটাকে ধরে ফেলল।

আমার ফুসফুস ভরা ছিল ভাঙা কাচের টুকরো। আমি যখন কাশতাম তখন এগুলো অনুভূত হতো। কিন্তু গ্লাসগুলো কখনো পুরোপুরি ভেঙে যেত না। আর ব্যথাও পুরোপুরি আমাকে ছেড়ে যায়নি কখনো।

আমি অসুস্থ নায়লা। নিজের জন্য কাজ করাটা তাকে আরো শক্তিশালী করছিল শুধু। কেনো সে এটা সহ্য করত? আমার ধারণা টাকার জন্য। কিন্তু এখন আমার মনে হয় সে আসলে অপেক্ষা করেছিল। আমি অবাক হচ্ছিলাম আমাদের সেবা কমে যাওয়ার নমুনা দেখে। আমরা শুরু করেছিলাম সমাজের বিশাল পরিধি থেকে। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমরা মাত্র তিনজনে এসে ঠেকেছি। জ্যাকর জোসেফ আর নায়লা। নায়লা, তোমার গর্ভজাত সন্তান তোমার জায়গা নিয়ে নিয়েছে। সবশেষে আমরা তিনজনই রয়ে গেছি। আবার তোমার পরিবার আমাদের ছেলেকে নিয়ে গেছে। সবশেষে বাকি আছে মাত্র দুই জন। অসুস্থতা আমাকে রোজ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে শেষপর্যন্ত একজনই বাকি থাকবে। প্রতিদিন স্বপ্নে আমি সেই বার্তা পাচ্ছি। আমি মাটির উপর রাতের বেলা দাঁড়িয়ে আছি, মানুষটা নতজানু হয়ে আমার পাশে বসে আছে। তার চেহারা অস্পষ্ট কিন্তু স্কুলের চুলের ছাট পাশা থেকে বোঝা যায়। আর তারও সেই রকম শক্তিশালী বাহু দেখা যায়। হাতগুলো ভেজা। হ্যাচকা টানে তার মুখ আমার উরুর ওপর রাখে। এটা নিশ্চয়ই তখন যখন সে আমাকে ওটার ভেতর রাখতে যায়। আমরা বাগানের ভেতর...

ধোঁয়ার গন্ধে আমি জেগে উঠি।

জে. মুরগির ঘরটা পুড়িয়ে দেয়। চারটা মুরগি পালিয়ে যায়। একটা রাতের বেলা নিখোঁজ হয় এবং এক সৌভাগ্যবান কুকুরের শিকার হয়ে যায়। আগুনের ধোঁয়া থেকে চমৎকার গন্ধ আসছিল। মুরগিগুলো আসলে চমৎকারভাবে রান্না হয়ে গিয়েছিল। জে. দেখল রান্নাঘরের দরজা দিয়ে ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে মেঘের আকার ধারণ করেছে। তার মুখভর্তি তেতো থু থু এলো। বেসিনে ফেলতে গিয়ে দেখল এটা ধূসর রঙ ধারণ করেছে। ছেলেটা রান্নাঘরের মেঝেতে কম্বল গায়ে শুয়েছিল। তার পা এখন পরিষ্কার ভ্যাজলিন দেয়া। জে. ছেলেটার পিঁপড়ার কামড়ে ফুলে যাওয়া ক্ষত ধুয়ে ঔষধ লাগিয়ে দিল। এক কাপ চা বানিয়ে ট্রেতে রাখল। চিনি ছাড়া দুধের চা, গোলাপের সুগন্ধী দেয়া।

শয়নঘরটি পোড়া ধোঁয়া আর শুকনা রক্তের গন্ধে ভরপুর হয়েছিল। তাম্রবর্ণ ভোর জানালায় উকি দিচ্ছিল।

লোকটা জে. ঘরে ঢুকতেই জিজ্ঞেস করল, পুড়েছে নাকি কিছু?

আমি পুড়িয়ে দিয়েছি মুরগির ঘরটা, কেনো?

জে. সাইড টেবিল থেকে ট্রে নিয়ে চলে যাচ্ছিল।

আমার কথার উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছ কেনো? বলেই লোকটা থু থু ফেলল মেঝেতে।

জে. মেঝে থেকে থু থু মুছতে মুছতে বলল, সাদা পিঁপড়া হয়েছিল অনেক।

যত্তসব কুসংস্কার! লোকটা বলে উঠল। দাঁত খিঁচিয়ে আবার বলল, ঐ ছেলেটা এখনো আছে নাকি। আমি বাইরের মানুষকে ঘরে আনা পছন্দ করি না। তারা আমার সম্পর্কে জানতে চায় আর অর্থের প্রত্যাশী হয়ে পড়ে।

জে. বলল, সে জানে না আপনি কে। একদম বাচ্চা ছেলে, এতিম। এখানে থাকলে আমার কাজেকর্মে সুবিধা হবে।

লোকটা চায়ের কাপ তুলে চা খেতে লাগল, জানালায় ভোর হচ্ছিল। তার হাত যদিও কাঁপছিল।

ছেলেটা চলে গিয়েছিল।

আমি এসব আর নিতে পারছিলাম না। ভোরের আলো ক্রমে সোনালি হয়ে আসছিল। উবু হয়ে গেটের বাইরে বেরিয়ে এলো। কুমড়া শাক রান্ন করবে। রাস্তা দিয়ে নীল স্কুল ড্রেস পরা বালক বালিকারা দল বেঁধে যাচ্ছিল। জে. তাদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বাদামের খোসা ছাড়াতে শুরু করল। সে রান্নাঘরে ফিরে আসতেই লিভিং রুম থেকে শব্দ পেল। বিস্মিতভাবে তাকিয়ে দেখল কৃশকায় দুর্বল অসুস্থ লোকটি দরজার চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাজামা নেমে গেছে কোমরের নিচে। সে বিছানা থেকে সপ্তাহন্তে একবার নামতে পারত না। সে চিৎকার করে জে.’র পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বালকটিকে ডাকল।

এদিকে আসো কানে শোনো না? বালকটি খুব দ্বিধাগ্রস্তভাবে এগিয়ে গেল। লোকটি তার কাঁধে ভর দিয়ে ক্রাচের মতো লিভিং রুমের সোফায় গিয়ে বসল।

তার নিঃশ্বাস দ্রুত লয়ে ওঠা নামা করছিল আর বাতাসে ঘরঘর আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।

লিভিং রুমের মৃদু আলোয় বালকের গায়ের রঙ পুরোনো মুদ্রার মতো মরচে পড়া দেখাচ্ছিল।

সেখানে একটা ছবির ফ্রেম মেঝেতে উল্টে পড়ে থাকতে দেখে লোকটি বলল, কী এটা?

তখনি জে. ঘরে ঢুকে বলে উঠল, ছাড়ুন ওকে। —ছেলেটি তাড়াতাড়ি জে.’র পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। লোকটি ছবির ফ্রেমটা তুলতে তুলতে বলল, ও এটা ভেঙে রেখেছে।

ও এসব কিছু জানে না। জে. ছেলেটির কুণ্ঠিত লুকিয়ে পড়া অবয়ব দেখতে দেখতে বলল।

আমি ওকে ওখানে আর দেখতে চাইনা। —লোকটা ঘোষণা দিয়ে বলল।

আমি ছেলেটার কাছে দায়বদ্ধ, জে. বলল।

লোকটি মুখব্যাদান করে বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে হাসি আটকে রেখে বলল, তুমি একমাত্র আমার কাছে দায়বদ্ধ, তোমার ঋণের জন্য।

জে. ছেলেটিকে রান্নাঘরের দিকে ঠেলে দিল।

আমি ভাবতে পারিনি আমি আবার হাঁটতে পারব। স্বপ্নগুলো আমাকে শক্তি দিয়েছিল, তবে যথেষ্ট পরিমাণে নয়। আমি রান্নাঘরে গেলাম। ড্রয়ার খুলে বড় ছুরিটা বের করলাম। এটার ওজন বেশ, পুরু কাঠের হাতল আর বিশাল চকচকে ছুরির পাত। আমি আমার ক্লান্ত হাতে ওটা ধরে রাখলাম, তোমার দিকে নায়লা। চিন্তা করো তোমার এত সুন্দর ফটোগ্রাফটা ঐ জারজটা ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু তোমাকে কী যে দারুণ লাগছিল সবুজ সালোয়ার কামিজে। আমি আগে কখনো লক্ষ্য করিনি তুমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলে কেনো? তোমার চোখের মণিগুলো মসৃণ পাথরের মতো লাগছে ওখানে। আমি একটা আস্ত হাদারামের মতো হয়ে তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। ঔদ্ধত্যের নেশায় আমরা চুড় হয়ে ছিলাম। নেহেরু শার্ট পরা জে.। হায়! ভাবতে পারো আজ সে কোথায় নেমেছে আমার জন্য রান্না করে আর ঘর ঝাড়ু দেয়। ছবিটা সম্ভবত কলিঙ্গ লিঙ্গ র‌্যালির আগে তোলা। যে র‌্যালি থেকেই রায়টের দিকে ধাবিত হয়েছিল।

মনে করতে পারো? আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম। কারণ আমরা তখনো ভীষণ রকম তরুণ ছিলাম।

জে. ঘুমন্ত লোকটির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এক মুহূর্ত অবলোকন করে সে দেয়ালে আঘাত করল তাকে জাগানোর জন্য।

একটা টিকটিকি কোনায় বসে ঝিকমিক করছিল। লোকটি জেগে উঠে কাশতে কাশতে মাথা সামনের দিকে ঝুকে পড়ছিল। প্রদীপের আলো স্থির হয়ে এলে সে চোখ পিটপিট করতে লাগল।

রাতের খাবার এনেছি, বলেই জে. তাকে উঠে বসতে সাহায্য করল। তার ভার এমনভাবে জে.র হাতে ছেড়ে দিচ্ছিল যেন দড়ি থেকে ভারি পর্দা ছিঁড়ে পড়ে গেছে। জে. তাকে বিছানায় খাবার দিতে গেলে সে রান্নাঘরের দিকে ইশারা দিয়ে দেখায়। জে. দুই হাতে লোকটিকে ধরে রান্নাঘরের দরজা পায়ের ধাক্কায় খুলে দেখে মাছঅলা ছেলেটি মেঝের এক কোনায় জড়সড়ো হয়ে বসে আছে। লোকটি ছোট টেবিলের পাশে রাখা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, আবার মাছ? বলেই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসল প্লেটে রাখা মাছের টুকরোগুলো থেকে রূপালি ঝিলিক দিচ্ছিল আর মাথার দুপাশে চোখগুলো ছিল বোতামের মতো, নীরেট। কে লোকটিকে খাবার দিতে ছেলেটিকেও মেঝেতে একটা বোলের মধ্যে খাবার দিল। নিচে বসতে গেলে লোকটা হুকুমের স্বরে বলে উঠল, আমার সাথে এসে বসো।

লিভিং রুমে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্নটা ছোটই ছিল। একটা লোক কোন লাশের গোড়ালি ধরেছিল এক হাতে অন্য হাতে তার কোমর। অন্ধকার কোনো গুহার ভেতর লাশটাকে বস্তার ভেতর ঢোকানো হচ্ছে।

আমি যখন জেগে উঠি জে. তখন আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়েছিল। তুমি বলেছিলে এগুলো বৃদ্ধ মানুষের মতিভ্রম মাত্র। স্বপ্ন কখনো বাস্তব হতে পারে না। তুমি কি দেখতে পাচ্ছ আমরা মুখোমুখি টেবিলের দু’ধারে বসে আছি? সে নিঃশব্দে খেয়ে চলেছে। ছেলেটা মেঝেতে বসে র‌্যালীর সুর ভাজছে গুনগুন করে। এটা নিশ্চয়ই সে শিখিয়ে দিয়েছে। এরা সবাই মিলে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আমি জানি এটা আমার সন্তান না। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চয় হতে পারছি না। আমি শেষবারের মতো রাতের খাবারে একসাথে বসার জন্য জোর করেছিলাম। আমি সবকিছু থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাই। তুমি হাসছ কারণ তুমি জানো আমি কোনোকিছুই ছাড়তে পারি না। একমাত্র মৃত্যু এলেই তুমি আমাকে আশাবাদ থেকে নিরস্ত করতে পারবে। আচ্ছা দেখা যাক। আমরা না হয় জ্যাকব আর এই নিষ্পাপ শিশুটির মতো লড়াই করে যাব।

আমি মাছের এই চোখ দেখতে পারছি না। লোকটির বিরক্ত মুখ দেখে জে. তার প্লেটের দিকে এগোলো।

আমি কি বাচ্চা যে আমার খাবার টুকরো করে দিতে হবে?

জে. উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের উপর হাত মুছে ফেলল। বালকটির কাছে এগিয়ে যেতেই দেখল সে এর মধ্যেই খাবার প্লেট পরিষ্কার করেছে, তখনো গানের সুর ভাজছে আর কিচেন ড্রয়ার খুলে একটা ছোট ছুরি বের করল কাঠের হাতলঅলা।

‘আরে হ্যাঁ এটাই তো। খুব ধার এটাতে।’

জে. নীরবে দেখতে লাগল কীভাবে নিপুন সার্জনের মতো মাথা থেকে চোখগুলো বের করে ফেলে দিয়ে খাওয়া শুরু করল সে।

তো তাহলে ভাঙা ফ্রেম আর ছবিটা নিয়ে আমরা কী করব?

‘আমি আবার ঠিক করে দেব, কমরেড গ্লাস কাটার দিয়ে।’

‘কমরেড! হা হা হা।’

জে. বাসনগুলো পরিষ্কার করছিল। 

বেসিনের কাছে আবার মিলিয়ে যেতে যেতে ভেজা হাতা গোটাতে গোটাতে বলল, কী বললে তুমি খুশি হও, বন্ধু?

শব্দটা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে হে? বলেই আবার দাঁত খিচোলো সে। ছেলেটা তাদের লক্ষ্য করছিল দূর থেকে।

‘হ্যাঁ’ আমি আসলে বন্ধুত্বের কিছুই জানি না।

লোকটি তাকালো তার দিকে। একটা শূন্যতা বাতাসের সাথে বয়ে গেল দু’জনার মাঝখান দিয়ে। খাওয়ার টেবিলের এই সামান্য দূরত্ব যেন যোজন যোজন দূরত্ব।

আমি তাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিইনি। একবাক্যে জে. তার সমস্ত কথা উগরে দিতে চাইল। ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম’ ফিসফিস করে লোকটি বলল। না, আমি তোমার কোনো স্বপ্ন সম্পর্কে কোনো খবর রাখিনি। আমার নিজের স্বপ্ন নিয়েই ছিলাম বন্ধু। জে. থু থু ফেলল। ঐ ঘরে জে.’র প্রতিটি পদক্ষেপ তখন বলিষ্ঠ হিস্র তেজ্যোদীপ্ত কোনো পশুর মতো মনে হচ্ছিল। তার গুরুত্ব জাহির করছিলাম তার প্রতিটি শব্দে। কথাগুলো কেটে কেটে যাচ্ছিল মাছের গন্ধ, অসুস্থতা অথবা বালকের তোলা সুরকেও।

‘আমি মিলিত হয়ে ছিলাম একটা যৌনদাসীর সাথে।’

শব্দগুলো ভারি সীসার মতো তার মুখ থেকে বের হচ্ছিল। ‘আমি সেই যৌনদাসীর কাছে একটা শিশু সন্তান প্রার্থনা করেছিলাম’। বাচ্চাটার পেট ছিল গোলাকার আর বড়, চামড়ার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছিল এটার ভেতর আরো একটা বাচ্চা রয়ে গেছে। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই সে হাসল। সে তখন প্রসবযন্ত্রণার ঘামে সিক্ত হয়ে আছে। আমি জানলাম আর বুঝলাম কী ঘটেছে। যখন তুমি একজন নারীকে ব্যবহার করছ আসলে বহু ব্যবহারে নোংরা একটা খানকি মাগিকে ভোগ করছিলে।

লোকটা প্রথমবারের মতো চোখ মেলে তাকালো। সে তখন বেসিনে গেছে আবার থু থু ফেলতে। বালকটি চলে গিয়েছিল। তার খাবারের গামলাটি যেন মেঝের চারপাশে একটা চোখের মতো তাকিয়ে দৃষ্টি ফেলছিল। সে সবকিছু গোছাতে গোছাতে তার মালিকের দিকে তাকাল। মানুষটার চোখগুলো তখন বন্ধ, হাতগুলো টেবিলের নিচে।

আমাদের উচিৎ না ঐ মহিলাকে নিয়ে কোনো কথা বলা। সে তো আর নেই। চলে গেছে দীর্ঘদিন হলো। আর ছেলেটি?

‘সেও চলে গেছে।’

লোকটি বসে থেকেই সজোরে পা ঝাঁকাতে চেষ্টা করল। সে তাকালো তার দিকে। সে দীর্ঘকাল ঐ নারীটিকে ঘৃণাই করেছে তারপর এক সময় স্বচ্ছ এক অনুভব তাকে সময়ের সাথে পুরো বিষয়টিকে সহনীয় করে দিয়েছে। কিন্তু এই লোকটা তাকে এখনো ভালোবাসে প্রচণ্ডভাবে। না দেখা অসংখ্য কথামালা সে প্রতিদিন পৌঁছে দেয় তার কাছে। সে তার এই প্রৌঢ় বন্ধুটির জন্য দুঃখবোধ করে। কিন্তু দুঃখ প্রকাশ করতে গেলেই চলে যাবার সময় হবে অথচ ভুল বোঝাবুঝির অবসান না ঘটলে যাওয়াও যায় না।

অসুস্থ মানুষটি ঘুমানোর আগপর্যন্ত বাচ্চাদের মতো অথবা মাতালের মতো হেচঁকি তুলে কাঁদল। সে দরজা চাপিয়ে বাতি বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।

সে বেরিয়ে যেতেই লোকটির চোখ খুলে গেল। বালিশের তলা পর্যন্ত পৌঁছাতেই একটা ব্লেড তার কবজি চিড়ে দিল। খুব স্বাস্থ্য, ব্যথা কবজি থেকে সারা শরীর জুড়ে কোলাহল করতে লাগল। যেন নেকড়ের গোঙানি আর আর্তচিৎকার। লোকটি তার কবজি চুষে ধরল আর সাবধানে হাতটা যত্নসহকারে পেছনে রেখে বালিশের তলা থেকে ছুরিটা খুঁজে বের করল।

সে তার স্বপ্নের বিপরীত রূপটাকে আরেকটু ধীরগতি দিতে চাইলেও পারল না, পারল না কুকুরের মতো বশীভূত হতে। যথাসম্ভব কষ্ট করে সে চোখগুলো খোলা রাখছিল।

মানুষটা অন্ধকারের ভেতর পা ঘষটাতে ঘষটাতে এগিয়ে যাচ্ছিল, কাঁধে একটা লাশ। করিডোর দিয়ে টলমল পায়ে হাঁটছিল। সে সামনের দিকে এগুতে চাইলেও পা-গুলো তাকে পেছন দিকে টানছিল যেন। হাতগুলো দরজার ছিটকিনি খুঁজছিল অস্থিরভাবে। শয়নকক্ষের দরজাটা খুলে গেল একসময় নিঃশব্দেই। লোকটা বডিটাকে বিছানায় আলতো করে রাখতে গিয়েও হুড়মুড়িয়ে বিছানার উপর পড়ে গেল। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দীর্ঘসময় সে এটার দিকে তাকিয়ে থাকল। হঠাৎ করেই সে শরীরটা অধৈর্যভাবে ছুড়ে মারল। একবার মনে হলো এটাকে জড়িয়ে ধরে।

শুরু হয়েছিল কোত্থকে আসলে? ছুরির হাতলটা জোর করে ছিল কেউ তার হাতে গুঁজে দিতে? অথবা কোনো মর্মপীড়া তাকে দাহ করেছে বুকের ভেতর দীর্ঘকাল ধরে। মানুষটি চোখ খুলল, সে হাঁপাছিল নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। জ্যাকবের মুখটা সেই নিঃশ্বাসের ভেতর ভাসতে থাকল, সাদামাটা দিনের মতো গাঢ় তমিস্রার রাত্রির মতো। হাত দিয়ে সে নিজের বুকটা চেপে ধরল। হাতের তালুতে তার ছুরির বাটলটা ধরা। জ্যাকবের আঙ্গুলগুলো তাকে চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরেছিল। তাদের হাতগুলো ছিল মাংস আর হাড়ে কাঠ আর ব্লেডে মাখামাখি। তারা একসাথে বাড়ি থেকে ছুরিটা সরিয়ে দিতে সক্ষম হলো। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল সবকিছু।

বালকটি রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়েছিল, দেখছিল বাইরে। তখনো রাত। লোকটি তখন বাগানে মাটি খুঁড়ছিল, সাথে একটা চটের বস্তা আর কালো একটা পিণ্ড। বালকটির অন্তরে ছিল শূন্যতা, কিন্তু মাথাভর্তি নানান ভাবনা—ভালোবাসা খিদে ভয়!

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া