ছাব্বিশ
একটি ভেজা শরীর যেভাবে কাত হয়ে ঘুমিয়ে থাকে সেভাবে অগণিত তুমি কাত হয়ে পড়ে থাকে। আর
আমরা দোলনচাঁপা কাঁধে নিয়ে ঘুরতে থাকি বাঁচার আনন্দে। কতদূর কতদূর বলে চিহ্নিত চিৎকার দিয়ে
যাচ্ছে অসংখ্য তুমি'রা। এই যে আমি রক্ত টেনে খাচ্ছি হরদম, খুব খেয়ালে-বেখেয়ালে। 'রক্তের ভেতর
জোসনা' কিলবিল কিলবিল করে। অন্ধ তীরন্দাজ, তোমার ধনুকের সুতোতে কামড় বসিয়ে হাঁটতে থাকো
পশ্চাতে, প্রাচীনে, সাদা রক্তের ভেতর। আবিষ্কার করতে পারো নাদান ভক্তকুল, রক্ত যোগী হুর।
প্রেমমিশ্রিত শ্লোকে জাগরণ তুলে দেওয়া দৃশ্য দেখতে দেখতে হুরসকল ভেজা শরীরের ভাঁজের ভেতর
লুকিয়ে পড়বে। আমরা বা আমি একে একে ধ্বংসের দিকে চক্ষু তাক করে উড়ে যাবো বায়ুনিশ্বাসে। বায়ু
থেকে ছিটকে পড়বে খেয়াঘাট। খেয়াঘাট, তুমি আরেক শৃঙ্গার-তারনা, অথবা সঙ্গম-যন্ত্রণা। আরেকটি
বেগবান শরীর বেয়ে নেমে পড়বে অহিংস বুদ্ধবাণী। যাই হোক, তাতে কি আসে যায় গোড়াপি। তোমার
ঝুলিতেই তো দুনিয়ার তাবৎ দণ্ডায়মান ইতিহাস।
আটাশ
এই যে ধুকে মরা দেহখানি কী নিদারুণ সুরে বাজিয়ে যাচ্ছে ঢোল, আহা। গাছেদের শোক জমে আরেক
মৃত্যুসুর পাঠাচ্ছে, গোড়াপি।
আমরা ঘুমকে সঙ করে ইঙ্গিত প্রকাশ করি। অথচ সমস্ত আদম ইঙ্গিতস্বরূপ নিষিদ্ধ করে আমাদের
ভেজাতে চায় ঘামসিক্ত পশমে। কী নিদারুণ সাঁতার কাটি ঘামের ভেতর।
ত্রিশ
ত্রিদণ্ড উচ্ছাস করে গভীর রাতের অন্ধ চুল খিলখিলিয়ে হাসে। ওরে হাসন, তোর তৈরি সামান্য তলোয়ার
এখন আমার পিঠে ঢুকাই, আনন্দ করি। হৈ হুলুস্থুল করে পায়ে মোমের আগুন ছোঁয়াইয়া ইস্রপিলের ঘরে
পৌঁছে যাই। মদ্যপান করে লুটিয়ে থাকি কোলে। সমস্ত বিষাদ ছেড়ে শৃঙ্খলিত স্বর্গের দেখা পাই। জুয়াড়
আঙুলের যন্ত্রণা থেকে মানুষ মুক্তি চাইবে, কিন্তু আঙুল ভাগ হয়ে উড়ে যাবে সন্ধ্যায়। যখন দৃষ্টিযোগে ভ্রান্ত
করি সংশ্রব, যার বায়ুতে কষ্ট আছে, কষ্টের ভেতর আরেকটা যন্ত্রণা আছে, তখন তার অন্তঃস্থ ভেদ করে
থেতলে দেই আগুনের পরগাছা। ইচ্ছাচ্যুতভাবে প্রাণে প্রাণে যে শঙ্খশিৎকারের তৈরি হয়, তাই কি
বাৎসল্য প্রেম? গোড়াপি, তুমি গঞ্জে যাও, রাস্তায় ঘুরে কুড়িয়ে নিও রাস্তার বিষাদ। আকাশ ছেদ করে দৃষ্টি
দিও সূর্যের দিকে, চোখ কচলানো শেষ হলে খুঁজে নিও রক্তমাংসের আমাকে। রক্তদানে তুমিও চটপট।
বত্রিশ
ওরে বৈশাখ তোর যৌবনে হাবুডুবু খাওয়া বালিকা, সমুদ্রসঙ্গমে। গুলতানি মদের নেশায় কামাতুর দাঁতের
কটমট শব্দে, কামড়ে নিচ্ছে চিকন-চাকন দেহ। ধুনচি ভঙ্গিমায় ডুবে মরে পুরুষের কোমরে। কোমর দোলে
না, দোলে তার চোখ; কারণ অকারণ।
চিলতে ঘরে রোদ ঢুকেছে বলে আদরের সোয়ামি বাতাসে ভেসে বেড়ায়, নসিহতনামা আওড়াতে আওড়াতে
আবার ঘরে ফেরে, দেখে তার সমস্ত স্ত্রী ঘোড়ারূপে স্তন দোলাচ্ছে। যেখানে এই আহম্মক আস্ত একটা
ঘর। যার ভেতরে এতটা রোষানল, খাণ্ডবদাহন। ঘরের দিকে তাক করানো পরশুরামের কুঠার। আমার
দাইমা, কুঠার সরাও, তোমার গন্ধ শুকতে দাও, আমিও বাবার মতো ক্লান্ত হবো।
: নাইবা ভাবো রজনী, ধরে রাখো তর্জনী, ঘোর খুলে দাও, চুক চুক জিহ্বা বাইর করে নাও, ভিজিয়ে দাও
দেহ, জ্বরে ও জটে, লেবুকাটা ঘাটে, চুষে নাও প্রেম, সুষমা হৃদয়। তুলে দাও হাত, পূর্ণিমা রাত, দেহ
কাঁদে, ভিজে ভিজে রসে। ফুল ফোটাও দুপাহাড়ে, তুলে নাও পা, কাঁধে ও পিঠে। দূর রাখনা কাম, উন্মুক্ত
আমি, হাসি আর খেলি, গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও।