X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
মুরাকামির লেখক হয়ে ওঠার গল্প: পর্ব-১

দৌড়বিদ-ঔপন্যাসিক || হারুকি মুরাকামি

২৯ ডিসেম্বর ২০১৫, ১২:১৮আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৪:৩২

দৌড়বিদ-ঔপন্যাসিক || হারুকি মুরাকামি [খ্যাতনামা জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির আত্মজৈবনিক গ্রন্থের নাম ‘হোয়াট আই টক অ্যাবাউট হোয়েন আই টক অ্যাবাউট রানিং’। কিছুদিন আগে ‘দ্য নিউইয়র্কার’ পত্রিকায় ‘রানিং নভেলিস্ট’ নামে একটা আত্মজীবনীমূলক লেখাও বের হয়। এই লেখাটি ঐ বইয়ের অংশ কিনা পত্রিকাটিতে তার উল্লেখ নেই। লেখাটাতে দৌড়ের প্রসঙ্গ জোড়ালভাবে এলেও এটি আসলে মুরাকামির লেখক হয়ে ওঠারই গল্প। মূল জাপানি থেকে লেখাটা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ফিলিপ গ্যাব্রিয়েল। সেখান থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন দিলওয়ার হাসান।]

প্রতিদিন দৌড়ানোর কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে ১৯৮১ সালের শরতের কথা বলা যায় যখন আমার বয়স ৩৩।

এর বেশিদিন আগের কথা নয় যখন টোকিওর সেন্দাগায়া স্টেশনের কাছে আমার একটা জাজ ক্লাব ছিল। তখন পার্ট-টাইম চাকরি নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে, গ্রাজুয়েশন লাভের জন্যে প্রয়োজনীয় অনেকগুলো ‘ক্রেডিট’ তখনও বাকি। বস্তুত তখনও আমি একজন ছাত্র। সেই সময় কাকুবুঞ্জি স্টেশনের দক্ষিণের প্রবেশ দ্বারের পাশে ক্লাবটি খোলা হয়। ক্লাবটা ওখানে প্রায় তিন বছর ছিল। তারপর যখন ওখানকার ভবনটিতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয় তখন টেকিও শহরের কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাই। নতুন জায়গাটা বেশি বড় ছিল না। আমরা একটা গ্রান্ড-পিয়ানো জোগাড় করেছিলাম তবে পঞ্চ বাদ্যযন্ত্রের উপযোগী যৌথ সঙ্গীত পরিবেশন করবার মতো যথেষ্ট জায়গা ওখানে ছিল না। দিনের বেলায় এটা ছিল কফিখানা আর রাতে বার। আমরা বেশ ভাল খাবার-দাবাড় পরিশেন করতাম গ্রাহকদের, আর সপ্তাহের শেষে লাইভ পারফরম্যান্স থাকতো। তখনও টোকিও শহরে এ-ধরনের ক্লাব দুর্লভ ছিল, ফলে আমরা বেশ ভাল রকমের গ্রাহক ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম, আর জায়গাটা আর্থিক দিক থেকেও ছিল ভাল।
আমার অধিকাংশ বন্ধুর ধারণা ছিল ক্লাবটি সফলতা লাভ করতে পারবে না। তারা হিসাব করেছিল এইভাবে সখের বশে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান সাফল্যের মুখ দেখতে পারবে না। তারা সন্দেহ করেছিল, আমার মতো সাদাসিধে আর কৌশলবর্জিত মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি সামান্যই আগ্রহ থাকে, ফলে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। বেশ, তাদের অনুমান ছিল অসার। সত্যি কথা বলতে কী, ব্যবসায় আমার তেমন একটা আগ্রহ ছিল না একথা ঠিক। আমি শুধু একটা হিসবাই করেছিলাম, তা হচ্ছে ব্যর্থতার কোনো অপশন ছিল না, আমার যথাসর্বস্ব ওখানে ঢেলে দিয়েছিলাম। শক্তির জায়গাটা ছিল আমার পরিশ্রম আর সবকিছু কায়িক পরিশ্রম দিয়ে মোকাবিলা করতে পারি। রেসের-ঘোড়া ছিল না, ছিলাম কর্মপাগল ঘোড়া। নিত্যদিন পরিশ্রমে অভ্যস্ত নয় এমন পরিবারে থেকে এসেছিলাম বলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে বেশি ধারণা ছিল না; কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমার স্ত্রীর পরিবার ব্যবসা চালিয়ে অভ্যস্ত ছিল, ফলে তার স্বতলব্ধ জ্ঞান আমাদের খুব কাজে লেগেছিল।

কাজকর্ম সত্যিই খুব কঠিন ছিল। সকাল থেকে রাত অবধি ওখানে থাকতাম আর পরিশ্রান্ত হয়ে পড়তাম। সব রকমের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আমার ছিল আর ছিল ভূরি ভূরি হতাশা। তবে কিছুদিন পর লাভের মাত্রা এত বাড়ল যে, লোকজন নিয়োগ করতে সক্ষম হলাম। শেষ পর্যন্ত সাময়িক বিশ্রাম গ্রহণের সুযোগ এলো। ভালভাবে শুরু করার জন্য যতদূর সম্ভব ব্যাংক থেকে ঋণ নিলাম আর এতদিনে সেই ঋণ পরিশোধের সক্ষম হলাম। সব কিছুই ঠিকঠাক হয়ে আসছিল। ওই পর্যায়ে এসে সাংঘাতিক রকমের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিল। আর কিছু নিয়ে ভাববার অবকাশ ছিল না। এখন মনে হয় অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে শীর্ষে পৌঁছেছি আর একটা মুক্ত এলাকা খুঁজে পেয়েছি। এখন আমার মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জন্মেছে যে, যেকোনো রকমের নতুন সমস্যা সামলাতে পারব। আমি দীর্ঘ একটা শ্বাস নেই, যে সিঁড়ি এইমাত্র অতিক্রম করেছি তার নিচে তাকাই আর এরপর কী করণীয় তা নিয়ে ভাবতে বসি। তখন বয়স ত্রিশ ছুঁইছুঁই। সেই বয়সে এসে উপনীত হচ্ছি যখন কাউকে আর যুবক বলে গণ্য করা যায় না। একদিন আকস্মিকভাবেই আমার ভেতর উপন্যাস রচনার প্রেরণা এল।

সেই মুহূর্তটির কথা একেবারে নির্দিষ্ট করে বলতে পারব। সেটা ছিল ১৯৭৮ সালের ১লা এপ্রিল বেলা ১টা ৩০ মিনিট। জিংঘু স্টেডিয়ামে বসে বেসবল খেলা দেখছিলাম। সেই সময় স্টেডিয়ামটা ছিল আমার বাসা থেকে হাঁটা-পথ। আমি ছিলাম ইয়াকুল্ট সোয়ালো দলের একজন ঘোরতর সমর্থক। বসন্তের চমৎকার একটা দিন ছিল সেই সেটি, মেঘমুক্ত আকাশ, উষ্ণ বাতাস বইছিল। সে সময় বহির্মাঠের বসবার জায়গায় কোনো বেঞ্চ-টেন্স ছিল না, ঘাসের একটা ঢালু জায়গা ছিল মাত্র। ঘাসের উপর শুয়েছিলাম, ঠাণ্ডা বিয়ার খেতে খেতে মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর খুব করে উপভোগ করছিলাম খেলাটা। অন্যদিনের মতোই স্টেডিয়ামে তেমন একটা ভিড় ছিল না। সিজনের প্রথম খেলা ছিল সেটা। সোয়ালো হিরোশিমা কার্পের মুখোমুখি হয়েছিল। সোয়ালোর পক্ষে বল নিক্ষেপ করেছিল তাকেশি ইয়েসুদা। বেঁটে খাটো খেলোয়াড়। চাতুর্যপূর্ণ বাঁকা বল করে। প্রথম ইনিংসের শীর্ষ খেলা সে অনায়াসে সম্পন্ন করল। স্বল্প দূরত্ব থেকে ব্যাট করে এমন ব্যাটসম্যান ছিল সেয়ালো দলের ডেভ হিলটন, দলে নতুন এসেছে এমন একজন মার্কিন খেলোয়াড়। হিলটন ব্যাট বলে লাগিয়ে মাঠের বাম প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়। ব্যাট-বলের সংঘর্ষের শব্দ সারা মাঠে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। হিলটন খুব সহজেই প্রথমে পৌঁছে গিয়েছিল আর দ্বিতীয় বারের জন্যে অবস্থান আরও উন্নতি ঘটিয়েছিল।
ঠিক সেই মুহূর্তে একটা চিন্তা আমার মাথায় এসে বিদ্ধ হয় : ‘তুকি জান কি’? আমি একটা উপন্যাস লেখার চেষ্টা করতে পারি। এখনও স্পষ্ট স্মরণ করতে পারি সেই উদার আকাশ, অনুভব করতে পারি নতুন ঘাস, মন ভোলানো ব্যাটের শব্দ। মনে হয়েছিল আকাশ থেকে কোনো কিছু উড়ে এসেছে, সেটা যা-ই হোক না কেন, আমি গ্রহণ করেছিলাম।
“ঔপন্যাসিক” হওয়ার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমার ছিল না। কেবলমাত্র একটা উপন্যাস লেখার তীব্র ইচ্ছা আমার মধ্যে বাসা বেঁধেছিল। কী লিখতে চাই তার বাস্তব কোনো ইমেজও আমার সামনে ছিল না, শুধু এইটুকু দৃঢ়তা মনের মধ্যে ছিল, আমি এমন কিছু নিয়ে হাজির হতে চাই যা দৃঢ়-প্রত্যয়ের জন্ম দেয়। যখন টেবিলে গিয়ে বসে লিখতে শুরু করলাম টের পেলাম আমার কাছে কোনো ভাল কলমও নেই। অতএব, সিঞ্জুকির কিনোকুনিয়া স্টোর থেকে কিছু লেখার কাগজ আর পাঁচ ডলার মূল্যের একটা কলম কিনে নিয়ে এলাম। লেখালেখি বাবদ আমার যৎকিঞ্চিৎ বিনিয়োগ।
ওই বছরের শরতের মধ্যে ২শ’ পৃষ্ঠা হাতে লিখে শেষ করলাম। ওটা দিয়ে কী করব সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না; ক্ষণিকের প্রেরণার বসে লেখাটা সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘গুঞ্জোর’ নতুন লেখকদের প্রতিযোগিতার জন্যে জমা দিয়ে দিলাম। ওটার জন্যে তেমন কোনো যত্ন-আত্মিও নিলাম না, ভাবখানা আমার এমন ছিল— নির্বাচিত হলে হবে, না-হলে না হবে, কিংবা ওটা হাওয়া হয়ে গেলেও আমার কিছু যায় আসে না। লেখাটা আলোর মুখ দেখল কিনা তা নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না, কোনো মতে বইটা লিখে শেষ করার ব্যাপারে আমার বেশি আগ্রহ ছিল।
সেই বছর নিয়ত লাঞ্ছিত দল ইয়াকাল্ট সোয়ালোজ বিজয়ের পতাকা পেল আর জাপান সিরিজে হানকাইয়ু ব্রেডসকে পরাজিত করতে উদ্যত হলো। এতে আমি সাংঘাতিক রকমের উত্তেজনার মধ্যে ছিলাম আর কারাকুয়েন স্টেডিয়ামের বেশ কয়েকটা খেলা দেখেছিলাম। (সত্যিকারভাবে, কেউ ভাবতেও পারেনি সেয়ালো জিতবে, তাদের নিজেদের ভেনু, জিংসু স্টেডিয়ামে কলেজ বেস বলে কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিল)। বিশেষভাবে ওই শরৎকালটা ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। আকাশ ছিল পরিস্কার, আর মেইজি মেমোরিয়াল গ্যালারির সামনে গিংকৌ গাছগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি সোনালি মনে হয়েছিল, আগে তাদেরকে এত সোনালি রং ধারণ করতে দেখা যায়নি। ওটা ছিল আমার কুড়ির কোঠার যুবক-বয়সের শেষ শরৎ।
পরের বসন্তের মধ্যেই গুঞ্জো পত্রিকার সম্পাদকের কাছ থেকে এই মর্মে একটা ফোন কল পাই যে, আমার উপন্যাসটি পুরস্কারের জন্যে হ্রষ্য তালিকাভূক্ত হয়েছে; ততদিনে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ওই প্রতিযোগিতার জন্য নাম অন্তর্ভূক্ত করেছি। এর কারণ, অন্যান্য বিষয় নিয়ে খুব ব্যস্ততার ভেতর ছিলাম। তবে উপন্যাসটি বিজয়ের মুখ দেখে ‘হিয়ার দ্য উইন্ড সিং’ নামে প্রকাশ হয়েছিল। লেখাটিকে সবাই স্বাগত জানিয়েছিল। কী ঘটতে যাচ্ছে তা না জেনেই হঠাৎ আবিস্কার করেছিলাম, আমাকে সম্ভাবনাময় নতুন লেখক বলে অভিহিত করা হয়েছে। অবাক হয়েছিলাম। আমার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছিল আমার পরিচিত লোকজন।
দৌড়বিদ-ঔপন্যাসিক || হারুকি মুরাকামি এর পরে জাজ ক্লাব চালাতে-চালাতে আর একটা মাঝারি আকারের উপন্যাস লিখে শেষ করতে পেরেছিলাম যার নাম ছিল ‘পিনবল, ১৯৭৩’। তখন কয়েকটা ছোটগল্প লেখা হয়ে উঠেছিল। আর স্কট ফিটজেরাল্ড থেকে খানিকটা অনুবাদ করেছিলাম। ‘হিয়ার দ্য উইন্ড সিং’ ও ‘পিনবল, ১৯৭৩’ সম্ভ্রান্ত পুরস্কার ‘আকুতাগাওয়া’র জন্যে মনোনীত হয়েছিল; কিন্তু কোনোটিই পুরস্কারটা পায়নি শেষ পর্যন্ত। এ জন্যে অবশ্য আমার কোনো পরোয়া ছিল না। পুরস্কারটা পেয়ে গেলে অনেক সাক্ষাৎকার আর লেখার আমন্ত্রণ পাওয়া যেত। আমার ভয় ছিল তাতে করে আমার জাজ ক্লাবের কাজে অনেক বিঘ্ন ঘটত।
তিন বছর আমি জাজ ক্লাবটি পরিচালনা করি— হিসাবপত্র ঠিকঠাক মতো রাখি, মালামালের হিসেব নিকেশ নেই, কর্মচারিদের দায়-দায়িত্ব পুণর্বণ্টন করি আর কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে ককটেল বানাই, রান্নার কাজ দেখি, ভোর বেলা ক্লাব বন্ধ করি। আর তখনই কেবল বাড়িতে গিয়ে কিচেন টেবিলে বসে লিখবার একটুখানি ফুসরত পাই; ঘুমে ঢুলু ঢুলু না হওয়া পর্যন্ত লেখার কাজটা চালাতে পারি। মনে হয় আমার মধ্যে দু’জন লোক বসবাস করছে। ধীরে-ধীরে উপলব্ধি করি আরও বিস্তৃত আকারের উপন্যাস লিখতে চাই। প্রথম দু’খানি বই লেখার সময় লেখার পদ্ধতিটি উপভোগ করেছি। তবে দুটোরই অংশ বিশেষ লিখবার সময় খুশি হতে পারিনি। তখন শুধু একটুখানি সময় ছিনিয়ে নিয়ে মাথায় নতুন আসা ভাবনা চিন্তাগুলো মাত্র লিপিবদ্ধ করতে পারতাম। এখন আধাঘণ্টা, অন্য সময় আধাঘণ্টা এমনি করে সময় বের করতাম, কারণ সব সময় ক্লান্ত থাকতাম; মনে হতো সারাক্ষণ যেন ঘড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলেছি। কখনোই খুব ভালভাবে মনোনিবেশ করতে পারিনি। এই ধরনের বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে কিছু কৌতুহলোদ্দীপক ও তরতাজা জিনিস রচনা করতে সক্ষম হই; কিন্তু তাতে ভাল কোনো ফল আসে না। উপলব্ধি করি ঔপন্যাসিক হওয়ার জন্যে এই সুযোগ যতটা সম্ভব বেশি গ্রহণের সাধারণ ইচ্ছা আমার আছে। অতএব, অনেক চিন্তা ভাবনার পর ব্যবসা বন্ধ করে আমার সব প্রচেষ্টা লেখালিখিতে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ওই পর্যায়ে ঔপন্যাসিক হিসেবে আমার আয়ের চেয়ে জাজ ক্লাবের আয় অনেক বেশি ছিল, এটা এমন একটা বাস্তবতা যা থেকে নিজেকে অব্যহতি দেই।
আমার অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধব আমার এই সিদ্ধান্তের ঘোরতর বিরোধী ছিল, না হয় তারা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিল। তারা বলেছিল, ‘তোমার ব্যবসা তো বেশ ভাল চলছে, উপন্যাস লেখার কাজে যখন ব্যস্ত থাক তখন অন্য লোকদের ব্যবসা দেখার দায়িত্ব দাও।’ কিন্তু তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারিনি। আমি এমন ধরনের মানুষ যখন যা করি সে বিষয়ে আমার সবটুকু অঙ্গীকার থাকতে হয়। অঙ্গীকার থাকার পরও তা ব্যর্থ হলে তা মেনে নিতে পারি। জানতাম যদি কোনো জিনিস আধাখেচড়াভাবে করি আর তা যদি ঠিকঠাক মতো না হয় তাহলে দুঃখের অবধি থাকবে না।
অতএব, সবার আপত্তি উপেক্ষা করে ক্লাবটা বিক্রি করে দিয়ে খানিকটা অস্বস্তির সঙ্গে নিজেকে ঔপন্যাসিক বলে ঘোষণা করি। আমার স্ত্রীকে বলি, ‘কেবলমাত্র দু’বছরের জন্যে লেখালিখির জন্যে অবকাশ পেতে চাই। এই প্রক্রিয়া কাজ না করলে অন্য কোনোখানে আর একটা ক্লাব খুলব। এখনও যুবক বয়স আমার, শুরু করার জন্যে নিশ্চয়ই সময় পেরিয়ে যাবে না।’ ওটা ছিল ১৯৮১ সাল, তখনও বেশকিছু ঋণ কাঁধে ছিল। তবে হিসেব করে দেখেছিলাম, ভালই করতে পারব, দেখাই যাক না কী হয়।
অতপর, উপন্যাস রচনা করতে মনস্থির করি আর সেই শরতেই গবেষণা কর্মে হোক্কাইডো সফরে যাই। পরের এপ্রিলের মধ্যেই ‘অ্যা ওয়াইল্ড শিপ চেজ’ রচনা শেষ করি। আগের দুটোর চেয়ে এটি আকারের দিক থেকে বড় ও আরো বেশি গল্প নির্ভর। লেখাটি শেষ হওয়ার পর বেশ ভাল অনুভূতির সৃষ্টি হয় আমার ভেতর— একটা নিজস্ব শৈলি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এখন ঔপন্যাসিক হিসেবে আয় রোজগার করার জন্যে নিজেকে তুলে ধরতে পারব।
গুঞ্জোর সম্পাদক মূলধারার লেখার চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করছিলেন। ‘অ্যা ওয়াল্ড শিপ চেজ’ নিয়ে তাদের খুব একটা মাথা ব্যথা ছিল না। তবে মনে হয়েছিল পাঠকরা বইটা পছন্দ করেছিল, যা কিনা আমার সুখের কারণ হয়। ঔপন্যাসিক হিসেবে ওটাই ছিল আমার চলার আরম্ভ।
(চলবে)

শেষ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন—

মুরাকামির লেখক হয়ে ওঠার গল্প: শেষ পর্ব

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট