X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

আলতাফ হোসেন-এর দশটি কবিতা

৩১ জানুয়ারি ২০১৬, ১৪:৪৩আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:০০

আলতাফ হোসেন

[আলতাফ হোসেনের জন্ম ২৭ অক্টোবর, ১৯৪৯। পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জের হোমাইপুরে। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাটনা, চাটগাঁ, করাচি ও ঢাকায়। ১৯৬৪ থেকে ঢাকায় বসবাস। অনার্স ও এম এ করেছেন বাংলায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, ঢাকা থেকে দু’বছর ফরাসি ভাষা অধ্যয়ন করে সনদ পেয়েছেন।
পুরস্কার : আলাওল (২০০০), প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল গ্রন্থ (২০০৮), খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য (১৪১৬-১৭) এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।
প্রকাশিত গ্রন্থ : কবিতা : সজল ভৈরবী (১৯৭২), লাজুক অক্টোপাস (১৯৭৭), ভূমধ্যসাগরে অন্ধ ঘূর্ণি যা বলুক (১৯৮৭), সঙ্গে নিয়ে চলে যাই পাহাড়চূড়োয় (১৯৯৪), বলি যে তারানা হচ্ছে (২০০০), তারপর হঠাৎ একদিন মৌমাছি (২০০২), পাখি বলে (২০০৮), কী ফুল ঝরিল বিপুল অন্ধকারে (নির্বাচিত) (২০০৮), ডন জুয়ানের হাজার নারীকে ভাবো (২০১২)। প্রবন্ধ, কথকতা : ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ও চামেলি (২০০৯), যুবক রবি অন্য রবি ছিন্নপত্রে (২০০৯)। উপন্যাস : এরপর কোন্ গল্পটা বলবে জানি (২০০৯)।
চাকরিসুবাদে কর্মশালা ও শিক্ষাসফরে বিদেশভ্রমণ : যুক্তরাষ্ট্র,চীন,থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, নেপাল।]

 

কবিতা-৩

যখন শরীর চায় শরীর জানান দেয় নিজে
শরীরেরই ঊর্ধ্বমণি মুখ এসে মুখের কথা বলে
মেলে কিংবা না মিলতেও পারে
মাথা-মুখ জোট বেঁধে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে চায়
পারে না তো। বৈজ্ঞানিক অনেকই তো পারে
অনেকই পারে না। দূর, ক-তো দূর পথ…

 


কবিতা-৪

মুশকিল হয়েছে, সসঙ্কোচেই বলি, উত্তরগুলো জানা
এই এদের প্রশ্নগুলোর
প্রশ্নগুলো জানা
ওই ওদের উত্তরগুলোর
অনেক আগে থেকে
মাঝখানে জেনে জেনে ভুলে গিয়ে
না জেনে না জেনে
পরে আর ভুলিনি
ওদের কথা শুরু করার আগেই– বলতে খুব লজ্জা– ধরে ফেলি
এদের মুখ খোলার আগেই– বলতে গিয়ে মরতে ইচ্ছা যায়– ফর্সা হয়
কোনদিকে ওদের যাত্রা
কখন শবানুগমন

 


কবিতা-৫

এই তো সেদিনই এক লিখেছে কলাম
তিন বছরেরও পর ছাপায় ওকেই দেখলাম
যা বিষয়
ও-ই যে বোঝা গেছে, আর কেউ নয়
ওই তো ওকে দেখা যাচ্ছে গল্পরতা, অফিসে বসে আছে
বাঁদরটি জানালায়, গাছে
পৃথিবীটা এর মধ্যে ঘুরে এল কতবার শেষ আবিষ্কৃত গ্রহ থেকে
আগুনে, ঠাণ্ডায় কোমর গেছে বেঁকে
অনেকেই ফিরতে চায়নি, লুপ্ত হয়ে যেতে চায়নি শ্বাস আটকে গিয়ে
ক্রোধে অন্ধ লালচক্ষু দৈত্যটি মাথা তুলেছে আট ঘণ্টা ডুব দিয়ে
আমরাও চলে গেছি। চিহ্ন আর আমাদের কীভাবে বা থাকে
মুখোমুখি ওই ওরা, পাকেচক্রে, পাকে…

 


কবিতা-৬

কথা তো নিজেরই লিখছি। স্বতঃস্ফূর্ত, সোজা।
তবে ব্যক্তিগত তুমি বলতে পারবে না।
চারপাশে তোমরা সবাই।
একটাও কথা না-বলে বিড়বিড় করেই চলেছি। তারও ভাষা বোঝো।
শুধু হয়তো ভালোবাসতেই চাই। জানি না কীভাবে সম্ভব।
ঘৃণা, শুধু ঘৃণা। জানি না তা সম্ভব কী প্রকারে।
আমাদের সাধ্য হায় নির্ণয় ন জানি।
কেউ এসে বলতে পারো। কান নেবে না তা। কেন
তা বলতে পারব না। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অভ্যাস
অঙ্গপ্রত্যঙ্গরা বলতে পারে।
একটা কথাও নয়। বিড়বিড় করেই চলেছি।
খুব মোটা চামড়ার প্রাণীটার ভাষায় বলছি। যা বলছি তা
উফশটনভ বলতে পারো। ইমোতমোটুরু বলতে পারো। অর্ধস্ফুট কিছু…
সে ভাষাও তোমাদের সকলেরই চেনা

 


শেষটা

শেষটা আর শুনতেই পারে না
পদ্মা-ও টের পেয়ে শুধু কল্যাণ থামিয়ে দ্যায়
এমপি ফোর ফরম্যাটে
এক দমকা হাওয়া ভোর-জানালা পেরোয়
মিলের ভয়ে ‘টপকায়’ লিখে ডিলিট টিপেছে
ভেবে পাই না ‘ও’ কতটা আমি
তাই ও-ও করছি
হ্যাঁ, ও-ও করছে, বসে আছে কী কী করবে আর
তলওয়ালকর পদবীটা পদ্মা-সঙ্গে কেমন?
পদ্মা-সঙ্গে কেমন
আর কখনও প্রশ্ন করবে কি না সেটা ভাবে
উত্তরও দেবে কি না জিজ্ঞাসার
চিন্তা করে তো

 


ডিম ফেটে

ডিম ফেটে মোচঅলা রুক্ষ লোকটি বেরনোর পর
তিনটে বাঘ (তার একটি আমি) লাফিয়ে নামতে লাগলাম
ঘুমিয়ে এলিয়ে থাকা নগ্ন নারীটির ওপর
নামতে-নামতেই আনন্দ ও বিষাদের কাণ্ডকারখানা
দেখতে পাচ্ছিলাম
ফ্রাঁস ভট্টাটার্য পেছনে কলকল গল্প করছিলেন
নরকে এক ঋতুর কথা আমিও যেন বলে যাচ্ছিলাম
ব্ল্যাক চকলেট এ তল্লাটে রাকা খুঁজছে সে কথাও,মঞ্চে
সুবোধ দুলে দুলে মাথা ঘোরাচ্ছিলেন,সোজা সামনের
শঙ্করলালকে রুদ্ধশ্বাস বলতে যাচ্ছিলাম যে তাঁর
রবিশঙ্কর উই কেটে প্রায় শেষ করে এনেছে
কাঁদলাম একটু যখন সুচিত্রারও কথা মনে পড়ল
নামতে-নামতেই
কখন যে ‘এবার আলতাফ...’ বলে
উঠলেন কেউ
অসহায়
নেমে এসে একটি কাগজ হাতে মঞ্চের দিকে চললাম

 


একেকটি লেখা

একেকটি লেখা যেন মনে হয় খুব হয়, অন্য লেখা হতেই চায় না
লিখি শাদা পর্দায়, 'উহু' বলি, মুছি

আবার ধুসর আসমানে চোখ রেখে চলে শব্দ খোঁজাখুঁজি

আজ তো সন্ধ্যায় বসে, বসে বসে এখন দশটা, রাত
প্রিয় যে কবিটি একটি অরণ্যের, এতক্ষণে না জানি ক'বার বাজিমাত?

এই যে ষষ্ঠ লাইনটি দেখা হচ্ছে, এর সম্ভাবনা মনে হয় নিঃশেষিত
আমার ঘুমোতে যাওয়া মনে হচ্ছে এবার উচিত

অষ্টম পঙক্তিটি এসে বসে পড়ে। বলে, 'থাকব'। যায় না।

 


এই একটা জায়গা আছে তোর

আবার এমনও ভাবি
এই একটা জায়গা আছে তোর
যা-ই হোস অন্য কোনোখানে
সাধু কিংবা চোর
এখানে তো ওয়াচম্যান
ডে বা নাইটের
দস্যু বনহুর বা মোহন
যতদিন আসুসের এই পর্দা তোর
হোক না ইন্টেল, সেলেরন
এ নোটবুকের প্রসেসর
এখান থেকেই তোকে যাত্রা, ফিরে যাত্রা করতে হবে
আবারও জানতে চেয়ে যাত্রারই মানে
কোথাও ভোরের বেলা ছিল কি না সূর্য উঠেছিল কি না
না কি শুধু রাত্রি সবখানে
না হলে দুপুর কেন তপ্ত এত, এত দগদগে
রক্তগন্ধে শ্বাসকষ্ট এত
কালো কীবোর্ডের সঙ্গে হলুদ একটি জুড়ে জানবি তুই
ঠকা ঠক ঠক-এ

 


কেন এলি রে

কেন এলি রে, 'ভালোবাসিলি' হাসিমুখে আর
তরমুজ কেটে নিলি লাল টকটকে, অন্যহাতে
দার্জিলিং চা সাজিয়ে ' আজ যাও, ফোন হবে রাতে'
বেডরুমে ঢুকে গেলি, স্বাদ নিবি নতুন হল্কার...

 


পা ঝুলিয়ে

জনে জনে বলতে চেয়েছি
শোনাতে চেয়ে পায়ে ধরতে বাকি রেখেছি
খুন করতেও এমনকি
আমাকে বলেছিলেন চারজন
তিন হাজার ছত্রিশবার
তবে তারও আগে থেকে শুনে শুনে
শোনা সংখ্যা নিশ্চয় লক্ষের ঘরও পেরিয়ে থাকবে
তারপর আজই দেখতে পেলাম চিনদেশের সেই তাও-ও বলেছেন:
দুনিয়াব্যাপারে
কী করে গুরুগম্ভীর থাকি
উল্টাপাল্টা সমস্ত যেখানে
আর আমার কাজ কী
আর আমার কী গরজ
টিলায় উঠে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসেছি

সম্পর্কিত
চতুর্দশপদী ও অন্যান্য
নববর্ষে সহিংসতার আশঙ্কা মোকাবিলায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্ববান
শব্দ দহন
সর্বশেষ খবর
কাশ্মীর বিরোধ সমাধানে কাজ করতে চান ট্রাম্প
কাশ্মীর বিরোধ সমাধানে কাজ করতে চান ট্রাম্প
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখবে এই ১০ খাবার
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখবে এই ১০ খাবার
আ.লীগের সঙ্গে জামায়াতেরও বিচার চায় বাসদ
আ.লীগের সঙ্গে জামায়াতেরও বিচার চায় বাসদ
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার
ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে বাংলাদেশ দিবস উদযাপনবাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার
সর্বাধিক পঠিত
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে