X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

তারিক আলির বেদানা গাছের ছায়া

নাজমা আফরোজ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৫:৩৫আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৬:২০

বেদানা গাছের ছায়া এ বছর একুশে গ্রন্থমেলায় তারিক আলির Shadows of the Pomegranate Tree উপন্যাসের বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। রাশীদ হারুন এর অনুবাদ করেছেন বেদানা গাছের ছায়া  নামে। বইটি প্রকাশ করেছে কাগজ প্রকাশন। ইসলাম বিষয়ে তারিক আলির যে পাঁচটি গ্রন্থ আছে এটি তার একটি। অন্যগুলো হলো : The Book of Saladin, The Stone Woman, A Sultan in Palermo, and Night of the Golden Butterfly. 
এই উপন্যাসে স্পেনের মুসলিম যুগের গৌরবের কথা বলা হয়েছে। গ্রন্থটি ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হবার পর দ্যা ইনডিপেনডেন্ট  লিখেছে, ‘তারিক আলি মুসলিম স্পেনের মানুষ ও গৌরবের কথা বর্ণনা করেছেন। এটি উদ্দীপনা আর অল্প কথার মিশেলে এক বিমুগ্ধ গল্প। বেদানা গাছের ছায়া  একই সঙ্গে পরিহাসমূল ও অকৃত্রিম, তথ্যমূলক ও আনন্দদায়ক। এ উপন্যাস বাস্তব ইতিহাসের সাথে কল্পিতগল্পের এক অনবদ্য মিশেল। যা এক বসায় পাঠ করার মতো উপভোগ্য উপন্যাস।’
তারিক আলির লেখা প্রস্তাবনা অংশটুকু পাঠকদের জন্য তুলে দেওয়া হল- 

প্রস্তাবনা

জিমেনেস দ্য সিসনিরোস মাঝরাতে তার নিজের কক্ষে পাঁচ খ্রিস্টান নাইটকে জরুরি তলব করেছেন। মাঝরাতের এ তলবে মোটেও খুশি হননি তারা। স্মরণকালের সবচেয়ে ঠাণ্ডার শীতকাল এখন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে যে তাদের এমন মনোভাব ব্যাপারটা তা নয়। তাঁরা পুনর্দখলের পোড় খাওয়া বর্ষীয়ান যোদ্ধা। তাদের নেতৃত্বাধীন সৈন্যবাহিনী সাত বছর আগে ফারদিনান্দ এবং ইসাবেলার নামে বিজয়ীবেশে গ্রানাডায় প্রবেশ করে শহরটা দখল করে নেয়। পাঁচ নাইটদের কেউ-ই এই অঞ্চলের অধিবাসী নন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ যিনি তিনি তোলেদোর এক মঙ্কের জারজ সন্তান। আর বাকিরা ক্যাস্তিলিয়ান অঞ্চলের, ফলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য উন্মুখ ছিলেন। প্রত্যেকেই তারা একনিষ্ঠ ক্যাথলিক। কিন্তু তাদের কেউই চান না এই আনুগত্যকে অবধারিত ও চিরস্থায়ী বলে ধরে নেয়া হোক, এমনকি রানীর পুরোহিতের কাছেও না। তলেদো শহরের আর্চবিশপ কিভাবে বিজয়ী শহরে নিজেকে বদলি করেছেন সেটা তারা ভালো করেই জানেন। সিসনিরোস যে রানী ইসাবেলার হাতের পুতুল, ব্যাপারটা মোটেও গোপন কিছু নয়। তিনি যে এমন প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী হয়েছে সেটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার-স্যাপারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তার কর্তৃত্বের প্রতি স্পর্ধা প্রদর্শনকে রাজদরবার কিভাবে নেবে সে বিষয়ে নাইটরা অতিমাত্রায় অবগত।

শীতের আলখাল্লা জড়িয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে পাঁচজনকে সিসনিরোস এর শয়নকক্ষে দেখা গেল। তারা পুরোহিতের সহজ সরল জীবনযাপন দেখে বিস্মিত হলেন। একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। একজন চার্চের রাজপুত্রের এমন গোঁড়া ধর্মীয় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন নজিরবিহীন। একজন যাজক নিজের প্রচারিত ধর্মোপদেশ অনুসারে এমন সহজ সরল জীবনযাপন করতে পারেন, কখনো ভাবেন নি। জিমেনেস তাদের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন। যে কণ্ঠে তিনি তাদের নির্দেশনা দিলেন তাতে আদেশের সুর ছিল না। নাইটেরা হতচকিত হয়ে গেলেন। তোলেদো থেকে আগত নাইট অনুচ্চস্বরে তার সঙ্গের সঙ্গীদের বললেন, ‘ইসাবেলা বেড়ালের কাছে তাঁর কবুতরের খাঁচার চাবি দিয়ে রেখেছে’। সিসনিরোস এই ঔদ্ধত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার বদলে তিনি তার স্বর একটু উপরে উঠিয়ে বললেন ‘আমি স্পষ্ট করে জানাতে চাই, আমরা কোন ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কোন কাজ করছি না। আমি চার্চ ও রাজদরবারের উভয় পক্ষের কর্তৃত্ব নিয়েই আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি’।
যদিও বিষয়টা নির্জলা সত্যি নয়, কিন্তু সৈন্যরা এসব ব্যাপারে উপরওয়ালাদের প্রশ্ন করতে অভ্যস্ত নয়। আর্চবিশপ যখন বুঝতে পারলেন, তার নির্দেশনা নাইটরা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে, তিনি তাদের সন্তুষ্ট মনে বিদায় দিলেন। তিনি তাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন ক্ষমতার চাবিকাঠি এখন চার্চের হাতে। এক সপ্তাহ পর, ১৪৯৯ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিনে, পাঁচ নাইটের অধীনে থাকা সব ক্রিশ্চিয়ান সৈন্য নগরের একশত পঁচানব্বইটি লাইব্রেরী এবং ডজন খানেক বই সংগ্রাহকের কাছ থেকে আরবিতে লেখা সকল বই বাজেয়াপ্ত করে।
চার্চের অধীনস্ত বিজ্ঞ পরামর্স্কগন আগের দিন সিসনিরোসকে বোঝাতে সক্ষম হওয়ায় তিনশ পাণ্ডুলিপি অধ্যাদেশের আওতা থেকে রক্ষা পায়। তিনি রাজি হয়েছেন এক শর্তে: অধ্যাদেশকৃত পাণ্ডুলিপিগুলো আলকালার নতুন প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরিতে দান করতে হবে। এ পাণ্ডুলিপিগুলোর একটা বড় অংশই ছিল আরবি ভাষায় ঔষধ এবং জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে লেখা। প্রাচীনকালে আবিষ্কৃত প্রধান প্রধান বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অগ্রগতির কথা এবং তৎসম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এইসব পাণ্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ ছিল। এসব মূল্যবান তথ্যবহুল পাণ্ডুলিপির বেশিরভাগ আল-আন্দলুস ও সিসিলি থেকে সমগ্র ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হয়, যেগুলো রেনেসাঁ সংগঠিত হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
বিভিন্ন আয়াতের তত্ত্বীয় এবং দার্শনিক ব্যাখ্যার সুফল ও কুফল বর্ণনাসহ কয়েক হাজার কোরআন শরীফ, যেগুলো লেখা হয়েছিল অসাধারণ সুন্দর ক্যালিগ্রাফিতে, সেগুলোও নির্বিচারে উর্দি পরা সৈন্যরা নিয়ে গেল। আল আন্দলুসের বুদ্ধিজীবী সমাজের সকল দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ঠেসে গাঁট বানিয়ে সৈন্যরা নিয়ে যায়। সারাদিন সৈন্যরা এসব লাখ লাখ হাজার হাজার মূল্যবান দুর্লভ পাণ্ডুলিপি দিয়ে স্তুপ বানিয়ে ফেলে। পুরো অঞ্চলের সকল মূল্যবান জ্ঞান ভাণ্ডার সেদিন বাব-আল-রামলার নিচে পুরাতন রেশম বাজারে পড়ে থাকে।
বাব-আল-রামলা হলো সেই প্রাচীন স্থান যেখানে মুর নাইটরা রমণীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঘোড়ায় চড়ে পরস্পরের সঙ্গে কসরত প্রদর্শন করতো। এ স্থানটি লোকসমাগমে গমগম করতো, শিশুরা তাদের বাবা, চাচা কিংবা বড় ভাইয়ের কাঁধে চড়ে পছন্দের যোদ্ধাকে উৎসাহ দিতো। সুলতানের পাঠানো দল নাইটদের বর্মে সজ্জিত হয়ে কুচকাওয়াজে এলে, তাদেরকে তীক্ষ্ম শিস বাজিয়ে হেয় করা হতো। রাজার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কোন সাহসী ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা এক থলে স্বর্ণমুদ্রার আশ্বাসে কোন রাজসভাসদকে জয়ী হওয়ার সুযোগ করে দিলে, গ্রানাডার লোকজন উচ্চ স্বরে তীব্র উপহাস করতো। তখনকার নাগরিকেরা তাদের বাক-স্বাধীনতা, বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য এবং ঊর্ধ্বতনের কাছে নতি স্বীকারে অনীহার জন্য সুপরিচিত ছিল। সেই রাতে পাণ্ডুলিপির ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য সিসনিরোস এই শহর এবং এই শহরের এ স্থানকেই বেছে নিয়েছিলেন।
চমৎকারভাবে বাঁধাই করা মহামূল্যবান পাণ্ডুলিপিগুলো আরব অঞ্চলের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাক্ষী স্মারক, যেগুলো মানবিচারে খ্রিষ্টানদের আশ্রমের পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে অনেক বেশি মানসম্মত। তাদের রচনাশৈলী ছিল ইউরোপের অন্যান্য বিদ্যানুরাগীর হিংসার কারণ। জ্ঞানের এক অসাধারণ সমাহার সেদিন জনগণের সামনে রাখা হয়েছিল ।
যেসব সৈন্য সকাল থেকে বইয়ের এই বিশাল দেয়াল গড়ে তুলছিল তারা গ্রানাডার লোকদের চোখের দৃষ্টি এড়িয়ে চলছিল। দর্শণাথীদের মধ্যে কারও কারও দৃষ্টি করুণ, কেউ কেউ বিক্ষুব্ধ, ক্রোধে ও বিরুদ্ধচারণে কারও চোখ জ্বলজ্বল করছিল। কেউ কেউ ছিল অভিব্যক্তিহীন, এদিক ওদিক হাঁটছিল শূন্য দৃষ্টি নিয়ে। তাদের মধ্যে বয়বৃদ্ধ এক ব্যক্তি সেই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে শুধু একটি বাক্যই বার বার উচ্চারণ করছিলেন ‘আমাদের সলিলসমাধি হতে যাচ্ছে অসহায়ত্বের সাগরে’।
কিছু সৈন্য যারা কখনো লেখাপড়া করেনি, তারাও বুঝতে পেরেছিল, তারা কি এক ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ তাদের কষ্ট দিচ্ছিল। এসব চাষির সন্তানেরা মনে করার চেষ্টা করলো, দাদি-নানির কাছ থেকে শুনা মুঢ় নাইটদের নিষ্ঠুর গল্পগুলোকে। কিন্তু সে গল্পগুলোর সঙ্গে তাদের সংস্কৃতি ও শিক্ষার বিষয়গুলো বেশ বেমানান বলে মনে হচ্ছে।

সেদিন এরকম সৈন্যের সংখ্যা হয়ত খুব বেশি ছিল না, কিন্তু পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট ছিল। সরু গলি দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বন্ধ দরজার সামনে তারা কিছু পাণ্ডুলিপি ফেলে যাচ্ছিল। তাদের কাছে মনে হয়েছে, হয়ত সবচেয়ে ভারি পা-ুলিপিগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পা-ুলিপি হয়ে থাকবে।
যদিও এই ধারণা ভুল ছিল, কিন্তু তাদের অভিপ্রায় ছিল ভালো এবং তাদের শারীরিক ভাষা ছিল প্রশংসনীয়। সেন্যরা দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলে আলখাল্লা পরিহিত কোন কোন লোক বাইরে বেরিয়ে এসে পাণ্ডুলিপিগুলো তুলে নিয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ দূরত্বে সরে যেত। এই প্রক্রিয়ায়, মুষ্টিমেয় কিছু সৈন্যের স্বভাবজাত পরিমিতিবোধের কারণে শ’খানেক পাণ্ডুলিপি বেঁচে যায়। পরবর্তীকালে সেসব পাণ্ডুলিপি সাগর পেরিয়ে ফে’স-এর ব্যক্তিগত পাঠাগারগুলোতে চলে আসে, ফলে সেগুলো রক্ষা পায়।
চত্বরে অন্ধকার নেমে আসতে শুরু করে। বিপুল সংখ্যক বিমুখ ও বিক্ষুব্ধ নগরবাসী, প্রধানত পুরুষদেরকে, সৈন্যরা সমবেত করে। মুসলিম ধর্মগুরু, পাগড়ি পরা যাজক, মুদি দোকানদারের সঙ্গে ব্যবসায়ী, কৃষক, মিস্ত্রি ও খুচরা বিক্রেতা মিলেমিশে একাকার, সেই সঙ্গে দালাল, পতিতা থেকে শুরু করে পাগল পর্যন্ত সমবেত হয়েছিলো। যেন মানবজাতির সকলেই সেখানে সমবেত।
একটি সরাইখানার ঘরে, জানালার পেছনে বসে রোমের চার্চের সবচেয়ে অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি সন্তুষ্টচিত্তে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকা বইয়ের এই বিশাল পাহাড় দেখছিলেন। জিমেনেস দ্য সিসনিরোস সবসময় বিশ্বাস করেন বিধর্মীদের নিঃশেষ করতে হলে তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে সম্পূণরূপে বিনষ্টি করতে হবে। তার মানে, তাদের সব পাঠ্যবই ধ্বংস করে দিতে হবে। মুখে মুখে ব্যবহৃত ভাষা হয়তো ততদিন টিকে থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তল্লাসির মাধ্যমে সেইসব জিহব্বাকে উপড়ে ফেলা না হয়। তিনি নিজে না করলে অন্য কাউকে হয়তো এই প্রয়োজনীয় অগ্ন্যৎসব করতে হতো। এমন কেউ যিনি বোঝেন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে কঠোরতা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে, শিক্ষা বা ভালোবাসা দিয়ে নয়। একথা তো ঐ অভদ্র ও অসভ্য ডমিনিকানরা বার বার বলে আসছে। তারা এ পর্যন্ত কী অর্জন করতে পেরেছে?

সিসনিরোস আনন্দে উদ্বেলিত ছিলেন। তিনি ভাবছিলেন তাঁকে ঈশ্বরের হাতিয়ার হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। অন্যরাও হয়তো একই কাজ করতো, কিন্তু কেউ তার মতো সুশৃঙ্খলভাবে কাজটা করতে পারতো না। তিনি ঠোঁট বাঁকা করে নিজে নিজেই উপহাস করলেন, এসব মুসলিম মঠের যাজকদের কাছ থেকে কী-ই বা আর আশা করা যায়; মুহম্মদ, উমার, উসমান-সহ অন্যান্য ধর্মগুরুরা মাত্র কয়েকশত বছর আগের। জিমেনেস তার বিশুদ্ধতার জন্য গর্বিত ছিলেন। তার উপলব্ধি, শৈশবে তাকে যে বিদ্রুপ শুনতে হয়েছিল সেগুলো ছিল সব মিথ্যা। তার পূর্বপুরুষদের কেউ ইহুদি ছিল না। বর্ণসংকর রক্ত তার ধমনীতে নেই।
আর্চবিশপের কক্ষের জানালার সামনে এক সৈন্যকে নিযুক্ত করা হয়েছে। জিমেনেস তার দিকে তাকিয়ে ঈষৎ মাথা নাড়ালেন। তার নির্দেশে মশাল পৌঁছে যায় বাহকের কাছে; জ্বালিয়ে দেওয়া হলো আগুন। কিছুক্ষণ সব নিস্তব্ধ। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরেই কান্না ছড়িয়ে পড়লো ডিসেম্বরের সেই রাতে। তার পরপরই উচ্চ শব্দে শোনা গেল একটা বাক্য, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই এবং মুহম্মদ (সঃ) তাঁর প্রেরিত রাসূল’।
সিসনিরোস থেকে অল্প কিছু দূরে একটি দল জিকির করছিলো, কিন্তু তিনি তাদের কথা কিছুই শুনতে পাচ্ছিলেন না। শুনতে পেলেও তাদের কথা যে বুঝতে পারবেন তা নয়, কারণ তাদের আয়াতের ভাষা ছিল আরবি। দাউ দাউ আগুন জ্বলে আকাশে ছড়িয়ে পড়ছিল। আকাশ যেন লেলিহান শিখার এক নরকে পরিণত হয়েছে, অসাধারণ সেই ক্যলিগ্রাফিগুলো পুড়ে ছাই হয়ে, বর্ণালী শিখা হয়ে ছেয়ে যাচ্ছিল আকাশে। এমন মনে হচ্ছিল যেন আকাশের তারারাও কেঁদে কেঁদে তাদের কষ্টকে ঝরিয়ে দিচ্ছে। হতবুদ্ধি লোকজন যখন ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছিল, তখন এক ভিখারি সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে আগুনের দেয়ালের উপর উঠতে থাকে এবং তার ঝলসানো ফুসফুস নিয়ে বলতে থাকে ‘জ্ঞানের বই ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায়?’। ‘তাদেরকে এর হিসাব দিতেই হবে। তারা আজকে আমাদের সঙ্গে যা করেছে তার চরম মূল্য তাদের একদিন দিতেই হবে।’
ভিখারি অচেতন হয়ে পড়ে। উজ্জ্বল শিখা তাকে মুড়িয়ে দেয়। ঘৃণায় এবং নীরবে সেদিন অনেকে চোখের অশ্রু ফেলেছিল, কিন্তু সেদিন সেই অশ্রু আগুনকে নেভাতে পারেনি। লোকজন ধীরে ধীরে হেঁটে চলে যায়।

চত্বরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। এখানে ওখানে তখনো আগুন জ্বলছে। কুটিল হাসি ঠোঁটের কোনায় নিয়ে জিমেনেস ছাই-এর মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে পরবর্তী পরিকল্পনা করছেন। তিনি চিন্তা করছিলেন, এই দুঃখ ভারাক্রান্ত সময়ে তারা প্রতিশোধের জন্য যে কৌশলই হাতে নিক না কেন তারা ব্যর্থ হবেই। আমরা বিজয়ী। আজকে আমাদের সত্যিকারের বিজয় হয়েছে।
এই উপদ্বীপের অন্য যে কারো চেয়ে, এমনকি ইসাবেলার মতো ক্ষমতাধরের চেয়েও, জিমেনেস ‘ক্ষমতার উৎস’ সম্পর্কে ভালো বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি পুড়ে যাওয়া কয়েকটি পাণ্ডুলিপির চামড়ার ছাইকে লাথি মেরে ছুড়ে দিলেন। একটি বিয়োগান্তক ঘটনার জ্বলন্ত অঙ্গারের পেছনেই ওত পেতে রয়েছে আরেকটির ছায়া। 

সম্পর্কিত
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
২৫০ শিশু লিখলো ‘আমাদের জাতির পিতা, আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা’
আজকের প্রকাশিত বই
সর্বশেষ খবর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে চারজন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে চারজন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’