আকাশে তারা নেই আজ। তবু মাথায় গান বাজছে “তারা ভরা রাতে আমি পারিনি বুঝাতে......
আমি সত্যি তাকে বুঝাতে পারিনি।তাকে বুঝাতে পারিনি আমি সত্যি…!
সত্যি কি? রাত আমাকে নেশায় আক্রান্ত করেছে। খালি সত্যি সত্যি করছি।কি নিয়ে সত্যি সত্যি করছি তাই ভুলে যাচ্ছি।ঠিক শাহবাগের উপরে যেন চাঁদটা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চাঁদ বলছে তুমি আজ সত্যিই একা?
চাঁদও সত্যি সত্যি করছে। চাঁদেরও নেশা হয়ে গেল? মাতাল চাঁদ।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে কথা বললে সত্যি তোমার কথা মনে পরে। মনে পরে সেই হারিয়ে যাওয়া রাত। রাতের আগের এক আচমকা বিকেল। যেই বিকেলে প্রথমবার মুচকি হেসেছিলে। মুচকি হাসতে হাসতে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলে। আমি হুড়মুড় করে তোমার সামনে গেলাম তুমি তাড়িয়ে দিলে। কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম তোমার পড়ে যাওয়ার পেছনে আমিই অপরাধী। কিন্তু তুমি অস্বীকার করে আমাকে কোন ট্রাইব্যুনালে উঠালেনা। আমি পাশে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখলাম। তুমি খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে ফুটপাথ এর দোকান থেকে একটা কবিতার বই তুললে। আমি সত্যি তখন সাহস পাইনি তোমার কাছে যাওয়ার। তুমি নিজ থেকেই এলে। বিশ্বাস করো মনে হচ্ছিল আমি দৌড় দেই। কিন্তু মানুষ ছিনতাইকারি ভাববে বলে আমি দৌড় দেইনি! আমি নিজেকে ছিনতাইকারি ভাবতে পেরেছিলাম কিন্তু প্রেমিক ভাবতে পারিনি।তখনও না এখনও না।
চাঁদটা সামান্য বা দিকে হেলে গেল। যাদুঘরের পাশটায় মনে হচ্ছে। এখানেই তুমি আসতে বলেছিলে তার পরের দিন। আমি কি কি কথা বলবো ঠিক করে এনেছিলাম। রাত ৫ টা পর্যন্ত আমি নানা সংলাপ মুখস্ত করেছিলাম।আ আ আ বললে আমি একটু তোতলাই। তাই ভেবেছিলাম “আমার”কথাটা আনবই না। শুধু বলবো “তুমি”আর “তোমার”। আমি আমার কিছু নেই। কিন্তু সব পরিকল্পনা তছনছ করে দিলে। আসতেই বললে
“চলেন বলাকায় সিনেমা দেখি।”
তোমার কাছে নাকি টিকেট আছে।কিন্তু আমি বলতে পারিনি যে সিনেমা নিয়ে কোনও প্রস্তুতি আমি নিয়ে আসিনি। তুমি যদি জিজ্ঞেস কর যে আমি ইদানিং কি সিনেমা দেখেছি তবে হয়ত বলব “টাইটানিক”। কি যে লজ্জাজনক পরিস্থিতি হবে। তবু আমি রিকশায় উঠলাম। উঠেই লজ্জা নিয়ে বসলাম। তুমি মুচকি হাসলে। কিন্তু তুমি তো মুচকি হাসলেই পিছলে পড়ে যাও। আমি তোমার হাত ধরে আস্তে করে বললাম “মুচকি হেসো না,হাসলে খিল খিল করে হাসো”।
বলাকার একটু সামনে গিয়ে বললে “চলেন টিএসসিতেই বসে থাকি গিয়ে। এত মানুষ এখানে ভাল লাগছেনা”।
-তবে না বললে সিনেমা দেখবে?
-সিনেমা দেখার জন্য সিনেমা হল পর্যন্ত এসেছি তাতেই সিনেমা দেখার আনন্দ পেয়ে গিয়েছি।
আমরা সেদিন টিএসসিতে এসেছিলাম। সে মাল্টা চা খেয়ে হেসেছিল অনেক। মাল্টা চা আবার কিভাবে হয়।
তার হাসি থামাতে তাকে একটা দুধ চা খাওয়াতে হয়েছিল।
চাঁদটা এখন আজিজ মার্কেটের দিকে দেখা যাচ্ছে। চাঁদটাও মলিন হয়ে আছে। আরে চাঁদ তুই তো আজন্ম একা।আজন্ম একাদের কিসের দুঃখ আবার?
আমি একটা চা নিলাম। চায়ে চুমুক দিতেই দেখি পাশে মানুষের হাসির শব্দ। আবার কোনও সত্যি কথা বলবো?
বলবো? বলবো যে তোমাকে... তোমাকে মনে পড়ছে?
আজিজ মার্কেট এ একবার নিয়ে গেলে আমাকে টিশার্ট পরাবে বলে। আমি বললাম কালো রঙ এর কিনি। তুমি বললে হলুদ। হলুদে নাকি আমাকে দূর থেকে দেখতে পাবে। তুমি কি শুধু আমাকে দূর থেকে দেখতে চাইতে? আজকেও কি দেখতে পাচ্ছ? সেদিন হলুদ টিশার্ট পরে সিগারেট ধরিয়েছিলাম। তুমি বললে ‘ফেলেন’।
আমি সত্যি সিগারেট ফেলে দিয়েছিলাম। তুমি বললে সিগারেট খেতে ইচ্ছে হলে সিগারেট না ধরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন।
-তুমি আমার নিকোটিন?
-যা ভাবেন। সিগারেট কেন খাবেন?
- ক্লাস এইটে অংকে ফেইল করে ধরিয়েছিলাম। আর ছাড়তে পারিনি।
-আমাকে পেয়ে ছাড়বেন এখন।
-তুমি আমার পাস করা অংক তবে!
টিএসসির গরম চা আর গরম নেই। তোমাকে ভাবতে গিয়ে চা কুসুম গরম হয়ে গিয়েছে।আরেকটু ভাবলে একদম জুস হয়ে যাবে। আমি ভাবতে চাইনা। কিন্তু চাঁদ শুধু তোমাকে মনে করায়। দোকানদার বলছে মামা সিগারেট লাগবেনা?
-নাহ। তুমি খাও।
তুমি নেই কিন্তু ব্যাপারটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আর ভাল লাগেনা নিকোটিনের প্রেমহীন ধোঁয়া। চাঁদটা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে একটু পর পর। চাঁদ আমার সঙ্গ দিয়ে মেঘের সাথে যুদ্ধ করছে। মেঘের সাথে যুদ্ধ করে আমার চোখের সামনে এলেই বলবো “কি মামা আসছ?”
চাঁদ মামা কাটাবনের দিকে দেখা যাচ্ছে। কাটাবনে নিয়ে গেলে একদিন পাখি কিনতে। বললাম একটা চড়ুই কিনো। ছোট চড়ুই তোমার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকবে। তুমি ধমক দিলে সাথে সাথে,আমি চুপ করে দোকানের বাইরে দাড়িয়ে ছিলাম। সুন্দর দুইটা সাদা লাভ বার্ড আনলে। আমি বলতে গেলাম একটা তুমি একটা আমি?
তুমি বললে না দুইটাই নাকি তুমি। রিকশায় পাখি নিয়ে বসে ছিলে। আমার হাতে পাখির খাবার ছিল। জঘন্য ধরনের খাবার।
একটু দূরে যেতেই তুমি তাদের ছেড়ে দিলে। তারা হুড়মুড় করে উড়ে গেল। তোমার হাসি দেখে মনে হচ্ছিল তুমিও উড়ছ। সেদিন আমার সত্যি বলা উচিত ছিল। বলা উচিত ছিল আমি তোমার হাসি সারা জীবন দেখতে চাই। কিন্তু আমি বলেছিলাম পাখির খাবারও কি উড়িয়ে দিব?
কত বোকা ছিলাম। বোকাই হতেই পেরেছিলাম প্রেমিক হতে পারিনি। তবু তুমি বোকাকেই মেনে নিলে। হাসলে,হাসালে আর হাত ধরে বসে ছিলে।
চাঁদ মামা। কই তুমি?
আবার সেই মেঘ? একা লাগছে তো। রাতের অবস্থা ভাল না। যে কোন সময় পালাবে। অসহ্য সূর্যটা তার আগুন নিয়ে হাজির হবে। চাঁদ মামা তুমি কি নীলক্ষেতের দিকটায়? হয়তো।
নীলক্ষেতে রয়েলে বসালে কাচ্চি খাওয়াবে। কিন্তু আমার কাচ্চি খাওয়া ৫ মিনিটেই শেষ। তুমি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খাচ্ছিলে। আমি বোকার মত দ্রুত খেয়ে ফেলেছিলাম। আমি যে দুপুরে খেয়ে বের হইনি মনে ছিল না। প্রেমে থাকলে পেটের কথা মনে পরেনা।তুমি দোকানদার মামাকে বললে তাকে আরেক প্লেট দেন।
-আর খেতে পারবনা।
-আপনি আরও তিন প্লেট খেতে পারবেন। আপনি একটা উল্লুক।
তিন প্লেট খেয়ে অনেক সময় নিয়ে আমরা বই দেখলাম। তুমি কিছু সমাজ পরিবর্তন এর বই দিলে আমাকে। আমি বললাম এগুলা পড়তে পারবো না।
-কেন “ক খ”পারেন না?
সমাজ পরিবর্তনের বই আমি পড়েছিলাম। শুধু তুমি পড়তে বলেছিলে বলে। কিন্তু আমি সমাজ পরিবর্তনকারী কোন বিপ্লবী হতে চাইনি। হতে চেয়েছিলাম শুধু তোমার প্রেমিক। তোমার পেটুক প্রেমিক,তোমার বোকা প্রেমিক। তোমার টিপের কোণে লেগে থাকা ধূলিকণা হতে চেয়েছিলাম। তোমার রিকশার পাশের যাত্রী হতে চেয়েছিলাম। হতে চেয়েছিলাম তোমার হাসি শোনার দর্শক। তোমার অনেক কিছু হতে চেয়েছিলাম।
হতে পেরেছিলাম? পারিনি?
তোমার দোষ ছিল নাকি আমার?
সত্যি একটা কথা বলি,বলবো?
কোনও কথা বের হচ্ছেনা। অন্য এক রাতে চাঁদের কাছে বলে দিব।