X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিজয় সরকার জীবনীনাট্য

দয়াল তোমার আসল নামটা কী || পর্ব-১

সাইমন জাকারিয়া
১৮ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:৩৪আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:৪৩

বিজয় সরকারপ্রসঙ্গকথা
বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা রীতি কবিগান-এর আঙ্গিকে এই নাটকটি রচিত হয়েছে।
এতে উত্তরকালের দুইজন কবি বা কবিয়াল আসরে অবতীর্ণ হয়ে কবিগানের ঐতিহ্য অনুসরণে কথা, গান ও অভিনয়ের আশ্রয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন-উত্তরের ভেতর দিয়ে এবং সর্বোপরি, বিচিত্র ঘটনাক্রমের বর্ণনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের কিংবদন্তি কবিয়াল ও বিচ্ছেদীগানের অমর রচয়িতা সাধক-কবি বিজয় সরকারের জীবন-ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ মঞ্চে উদ্ভাসিত করেন।
সাধক-কবি বিজয় সরকারের জীবন-দর্শনের মর্মকথা প্রকাশের নিমিত্তে এই নাট্যে বর্ণিত কবিয়ালদের মুখ নিঃসৃত সংলাপ-বর্ণনায় ধৃত ঘটনাবলী কবিগানের প্রচলিত পরিবেশনা রীতির সমান্তরালে অভিনয়াকারে মঞ্চে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, এই নাটকে বর্ণিত কবিগানের প্রথম কবি শ্যামল সরকার ‘সাধক বিজয়ে’র পক্ষে এবং দ্বিতীয় কবি স্বপন সরকার মূলত ‘কবিয়াল বিজয় সরকারে’র পক্ষের অভিনয়ে বা উপস্থাপনে অংশগ্রহণ করেন।
এই নাটকে কবি সুধাকর বিজয় সরকারের জীবন ঘটনাবলীর বাস্তবচিত্রের সঙ্গে কল্পনার নানান মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। এতে বিজয় জীবনীতে গুরুতর কোন বিচ্যুতি বা গ্লানি ঘটলে তার দায়িত্ব একান্তভাবেই নাট্যকারের।
নাটকটি মঞ্চায়নের জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে, নাট্যকারকে মঞ্চায়নের তথ্য প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।
জগতের সবার মঙ্গল হোক।



 

কথক/প্রথম পক্ষ
আসর বন্দনা
তুমি সর্ব শক্তিমান, নিখিল বিশ্বের প্রাণ
সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের কারণ।
প্রকৃতির এই ভাঙাগড়া, নিয়ত এই উঠাপড়া
নিয়তির নিয়ম নির্ধারণ॥
ঐ দূর নীল আকাশে, তোমার করুণা ভাসে
রবিশশী হাসে দিবারাতি।
হাসির বীচি মায়াজ্বলে, তোমার জ্যোতির মানিকজ্বলে
কানন তলে জোনাকিদের বাতি॥...
ছল ছল কল সুরে, নদী চলে ওই সুদূরে
মিলন সাগর বক্ষ বিলাসিনী।
ফুলকলি সব ফুটে বনে, অলি ছুটে ফুল্ল বনে
গুঞ্জরণে রঞ্জিত বনানী॥...
তোমার করুণা বলে, শুনবো বাগে ফুল ফলে
সুশোভিত দিবসও রজনী।
সে কামনা মেনে সুখে, এ কাব্য সাগরের বুকে
ভাসাইনু জীবন তরণী॥

 

কথক/প্রথম পক্ষ
সুধী দর্শকমণ্ডলী, এই ছিল আমার আসর বন্দনা। এর রচয়িতা-সুর হলেন আমার দাদাগুরু কবিয়াল বিজয় সরকার। আজকের আসরে আমরা তাঁকেই স্মরণ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আসলে, কবিগানের আঙ্গিকেই কবিয়াল বিজয় সরকারকে চিনে নিতে চাই।
আসরে দাঁড়িয়ে আমি জানাই সবার, রামপালে বাড়ি আমার, নাম শ্যামল সরকার। দাদাগুরু ছিলেন আমার সে মহৎ বিজয় সরকার, তাঁর শিষ্য ছিলেন পরমভক্ত অনাদী সরকার, যিনি আমারে দয়া করে দিয়েছেন কবিগানে অধিকার।
এই আসরে এই মোর একান্ত নিবেদন। কথা, গানে, বাক্যে বিজয় এখনই হবেন প্রকাশন।
একথাও সত্য আমি জানি, বিপক্ষে আছেন যিনি, সামান্য নহেন তিনি। বিজয়ের নাতি বলে তাঁরে আমি চিনি। তাঁর মুখে আসো সবে শুনি, কবিগানের বিষয় ভবানী। আশা করি, আমার অধিক তিনি, জুড়াবেন সবারই প্রাণখানি।

 

কথক/দ্বিতীয় পক্ষ
ধন্যবাদ, ছন্দ-বাক্যে আমাকে আসরে আহ্বানের জন্য। মনে রাখবেন ছন্দ-বাক্যে আমিও নহি নগন্য। তবু, আমি ছন্দ ফেলে, কথা বলবো মন খুলে। এই নির্দেশ দিয়ে গেছেন গুরু আমার নিখিল সরকার, শোন ওরে স্বপন সরকার, কবিগানে ছন্দ ফেলে সরলবাক্য বলাটাও দরকার। মনে রাখিস, ওরে তোর দাদাগুরু বিজয় সরকার, আসরে দাঁড়িয়ে কথা বলতেন খুব চমৎকার। যদি পারিস সেই ভাব আসরে রাখিস। বিজয় প্রকাশে তুই সজাগ থাকিস।
গুরুর সেই বাক্য মনে রেখে আজ যখন বিজয় সরকারকে প্রকাশ করতেই আসরে দাঁড়িয়েছি, তখন শুধু আর ছন্দ-কথার চমৎকারিত্বে আপনাদের বিস্ময়ে ফেলতে চাই না। তার বদলে সহজ ও সরলভাবে বিজয়কে প্রকাশ করতে চাই। আমার বিপক্ষের গায়ককেও সেই অনুরোধ রেখে আমার পর্ব শুরু করছি।
আপনারা শুনেছেন, আমার প্রতিপক্ষের কবিয়াল শ্যামল সরকার, আমাকে আজকের আসরের জন্য ভবানী বিষয় নিয়ে সংগীত পরিবেশনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু এখন আমরা যে সময়ে এসে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে পুরানো দেব-দেবীর পুরানো বন্দনা খুব একটা যুক্তিসংগত হবে না। তাই আমি আমার দাদাগুরু কবিয়াল বিজয় সরকার রচিত এমন একটি ভবানী বিষয় পরিবেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে মা ভবানী হয়ে উঠেছেন— এই বাংলাদেশ, এই দেশমাতৃকা। আর কথা নয়, গানে প্রবেশ করি—

ভবানী বিষয় বা মালসী
তোমার নমঃ নমঃ বঙ্গমাতা, স্নেহের আসন বুকে পাতা
পালিছো মা সাত কোটি সন্তান।
তোমার করুণা অসামান্য, মানুষ থাক দেবের মান্য
ধনধান্য সবই তোমার দান॥

কত ভাঙা গড়া তোমার বুকে, ওঠাপড়ার আঘাত ঠুকে
জর্জরিত তব কলেবর, তবু অযাচিত স্নেহ-প্রীতি সন্তানের উপর।
মা-মাগো কত লাঙ্গল কোদাল জোরে চালাই, বক্ষ চিরে ফসল ফলাই
রাই সর্ষে মুগ মটর কলাই, তোমার দানে পূর্ণ করি ঘর॥
থাকি ভ্রাতৃভাবে মাতৃ বক্ষে হিন্দু মুসলমান
আমরা সকলে এক মায়ের সন্তান, গৌরবে সৌভাগ্য মানি। ...
মোদের দিঘির জলে আছে মৎস্য,
গাভীর কোলে নাচে বৎস্য, বৎসরে বৎসরে ফলে ধান,
আরো নোনা জলে সোনা ফলে বিধাতার বিধান,
মা মাগো তাইতে লোকে কয় সোনার বাংলাদেশ,
প্রকৃতির পূর্ণ পরিবেশ, রূপ বৈচিত্র্যের আর নাহি শেষ
চিত্তমাঝে ভাসে চিত্রখান।
কত কাঙাল বেশে কত দেশে ঘুরলাম কত স্থান
মাগো তোমার মতো অমন টানে কেউ তো বুকে লয় না টানি॥
বিশ্বকবির সোনার বাংলা নজরুলের বাংলাদেশই
জীবনানন্দের ছন্দে বন্দিছে বাংলা রূপসী।...
সকল দেশের সেরা তুমি স্মরণ নিলাম চরণ চুমি
জননী ও জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরিয়সী॥...
এই যে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস
আমার জন্মের পূর্ব আভাস, এই মাটিতে এই দেশের নির্মাণ,
বাংলার অন্ন জলে ফুল ও ফলে, তৃপ্ত মন প্রাণ,
মা মাগো ওমা! তোমার ওই পদপ্রান্তে, প্রার্থনা জানাই একান্তে
হয় যেন মোর জীবনান্তে দেশের মাটি আমার শেষের স্থান।
পাগল বিজয় বলে এই নিবেদন গ্রহণ করিস মাতা
যেন তোর বুকে ঠেকায় মাথা বলতে পারি বিদায় বাণী॥

 

কথক/দ্বিতীয় পক্ষ
আপনারা আগেই জেনেছেন, আমরা আজকের আসরে আমাদের পরম আরাধ্য দাদাগুরু কবিয়াল বিজয় সরকারকে স্মরণ করবো। কিন্তু কীভাবে? তার আমার পূর্ববর্তী কবিয়াল বলে গেছেন।
আপনারা সুধীজন, জ্ঞানের আলোক শিখা আপনাদের চেতনায় গুপ্ত রয়েছে, তাও আমরা জানি। আমরা এও জানি যে, আপনার সকলেই প্রায় কবিয়াল বিজয় সরকারের নাম জানেন, এবং তাঁকে কেউ কেউ চেনেন কবিগানের কবিয়াল হিসেবে, কেউবা চেনেন বিচ্ছেদী গানের অমর রচয়িতা হিসেবে, আবার কেউ কেউ সাধক মান্য করেন। কিন্তু তাঁর কোন পরিচয়টা বড় বা তিনি নিজেকে কোন পরিচয় দিতে ভালবাসতেন তা কি আমরা জানি? এই প্রশ্নের উপর দাঁড়িয়ে আজকের আসর নির্ধারণ করা হয়েছে— “বিজয় সরকার : কবিয়াল নাকি সাধক?”
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন— আসরে আমরা দুইজন কবিয়াল, এখানে আমাকে বলা হয়েছে— কবিয়াল বিজয় সরকারের পক্ষ নিতে।

 

প্রথম পক্ষ
[উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পক্ষের কথা বলে আবার বসে পড়েন।]
— আর আমাকে দেওয়া হয়েছে সাধক বিজয় সরকারের পক্ষ।

 

দ্বিতীয় পক্ষ
— আমি যেহেতু কবিয়াল বিজয় সরকারের পক্ষ নিয়েছি, তাই শুরুতে প্রণম্য কবিয়াল বিজয়ের রচিত আরেকটি ভবানী বিষয় বা মালসী গেয়ে আমার পক্ষের পাঠ শুরু করতে চাই—

আমি অহোরাত্র ভাবি মা তোর সৃষ্টির বৈচিত্র্য
মা গো যেখানে যা না সাজে, তাই সাজালি কোন কাজে
জগৎ মাঝে তোর একি চরিত্র।

মা তুই কৃপণেরে দিয়ে ধন, করলি ধনের মহাজন
তাতে মা তোর স্বার্থ কি, এরূপ কত দেখি।
মা মা গো যারা পরহিতে সদারত, তাদের নাই মা শক্তি ততো
দাতার যদি টাকা হতো, আমরা সবাই হতাম সুখী॥...

মা তুই সুর দিলি পাতি শৃগালে, দিলি না তার তাল
যতো তালিম লোকের ভাঙা সুর, এই আর এক সৃষ্টির কসুর
মা তোর সব কার্যের পিছে এক জঞ্জাল॥

দেখি ধনীর হয় মুর্খ সন্তান, গরিবের ছেলে বিদ্বান
এই আর একটি অলগ্ন, বলতে উৎসাহ হয় ভগ্ন
মা মা গো যতো ভাল বউ পায় বোকা লোকে
জ্ঞানী লোক প্রায়ই ঠকে, দম্পতির দাম্পত্য সুখে
মা তুই ঘটায়ে দিস বিঘ্ন॥

এ ধরনের গানের নাম মালসি। এটা কবিগানের আবশ্যিক অংশ। এতে জগৎমাতা দুর্গার নানা চরিত্র, নানা গুণকীর্তন যেমন প্রকাশিত, তেমনি প্রত্যক্ষ চোখ দিয়ে জগৎ-জীবনের নানা বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করে জগৎমাতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। কবিরা সমাজের প্রতিবাদী চরিত্র, আর বিজয় সরকার সেই প্রতিবাদী চরিত্র ধারণ করতে না পারলে কি এমন কথা বলতে পারতেন— ‘মা গো যেখানে যা না সাজে, তাই সাজালি কোন কাজে’, ‘মা তুই কৃপণেরে দিয়ে ধন, করলি ধনের মহাজন/তাতে মা তোর স্বার্থ কি, এরূপ কত দেখি’, ‘দেখি ধনীর হয় মুর্খ সন্তান, গরিবের ছেলে বিদ্বান’ আবার বললেন— ‘মা, মা গো যতো ভাল বউ পায় বোকা লোকে/জ্ঞানী লোক প্রায়ই ঠকে, দম্পতির দাম্পত্য সুখে/মা তুই ঘটায়ে দিস বিঘ্ন।’ দেখলেন তো কেমন যুক্তি দিয়ে, সাহসের সাথে বিজয় সরকার দুর্গা মাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন! এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন শুধু একজন কবিয়ালের পক্ষেই করা সম্ভব, কোনো ধর্মাচারী সাধকের পক্ষে অসম্ভব। তাই আমি আমার বিপক্ষের গায়কের কাছে জানতে চাই— তিনি কোন বিচারে বিজয় সরকারকে সাধক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান?

[এই প্রশ্ন রেখে প্রথম গায়ক বসে পড়েন। বাদ্য বেজে ওঠে। তার মধ্যে উঠে দাঁড়ান বিপক্ষের গায়ক। তিনি উঠে দাঁড়াতেই বাদ্য থেমে যায়। এবং বিপক্ষের গায়ক গানের সুরে টান দেন।]

 

প্রথম পক্ষ
তুমি জানো না— তুমি জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।
তোমায় প্রথম যেদিন জেনেছি, মনে আপন মেনেছি
তুমি বন্ধু আমার মন মানো না॥

সেদিন ফাল্গুনেরও দোলপূর্ণিমায়, মৃদুল মিঠাম বায়
ফুল বনে পুলকের আলপনা—
সেই মধুর মাধবী রাতে, বধুয়া তোমারই সাথে
আমি করেছিলাম যে যামিনী যাপনা॥

তুমি জানো না— তুমি জানো না রে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা।

কি দারুণ কথা— ‘তুমি জানো নারে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা।’ কি এই সাধনা? যে সাধনায় সাধক বিজয় স্রষ্টাকে প্রিয় হিসেবে সম্বোধন করেছেন! আপনারা জানেন কি— শান্তিনিকেতনে একজন বাউল সাধকের মুখে এই গান শুনে অপূর্ব সুন্দরী এক আমেরিকান পণ্ডিত নারী মুগ্ধ হয়েছিলেন, তারপর সেখান থেকে আমাদের দাদাগুরু সাধক বিজয়ের ঠিকানা সংগ্রহ করেন এবং চলে আসেন বাংলাদেশে।
একদিন বর্ষায় ডুবে যাওয়া বিলের কাদা-পানির মধ্যদিয়ে হেঁটে আমেরিকান সেই লেডি সাধক বিজয়ের সাক্ষাতে নড়াইলে ডুমদি গ্রামে গিয়েছিলেন। সেদিন ভাদ্রের বৃষ্টি স্রোত উঠানে অকস্মাৎ একজন বিদেশী মেমকে দেখে সাধক বিজয় বললেন—
‘মা কে তুমি? কোথা থেকে এসেছো? বল মা, কি প্রয়োজন তোমার?’

মেয়েটি বললেন—
— ‘আমার নাম ক্যারল সলোমন, আমি আমেরিকা থেকে এসেছি। আমি সাধক বিজয়ের সাক্ষাৎ চাই।’

সাধক বিজয় বললেন—
— ‘তুমি যাকে খুঁজছো মা, এই তো সেই আমি। পাগল বিজয়।’

মেয়েটি বললেন—
‘আপনি এতো ভাল গান লিখেছেন! স্রষ্টাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করেছেন! সেই আপনি নিজেকে পাগল বলছেন কেন? পাগল তো একটা খারাপ শব্দ!’

বিজয় বললেন—
‘মা গো, তোমায় আর কি বলি, ওই পাগলসত্তাতেই তো আমার আসল পরিচয়, শোনো মা— এই যে ভাদ্র মাস, যখন এই শরতের আকাশে চন্দ্রিমা উদিত হয়ে আমার আঙ্গিনাকে আলোকিত করে। জলহারা মেঘ তার শূন্যতাজনিত হাহাকার ধ্বনি আকাশে বাতাসে আর্তনাদ করে ফেরে— তুমি তো দেখেছো এখন সারা মাঠে জলমগ্ন সবুজ আমন ধানের ছড়াছড়ি, এখন পুবালি বাতাস ধানগাছের পাতার মধ্যদিয়ে সাঁই সাঁই শব্দ করে কেঁদে যাচ্ছে— আমার কাছে বারবার মনে হয়— এ বাতাস সাঁই সাঁই করে যেন আলেক সাঁইয়ের সন্ধানে ছুটে চলে যাচ্ছে। আমিও ওই মেঘ ও বাতাসের মতো ক্ষ্যাপা হয়ে হন্যে হয়ে সেই একই আলেক সাঁইয়ের সন্ধানে ছুটে চলেছি নিরন্তর। তাই আমি পাগল।’

আমি ঘুরে জনম জনমে, ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোমে
খুঁজে ফিরি তোমারই ঠিকানা।
পাগল বিজয় বলে চিতচোর, আসবে কি জীবনে মোর
বুকে রইল ব্যথা ভরা বাসনা।

এই যে স্রষ্টাকে প্রিয় করে তাঁর সন্ধানে নিরন্তর মগ্ন থাকার নাম কি সাধনা নয়, নিশ্চয় তা সাধনা, আর এই সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন বলেই বিজয় শুধু কবিয়াল নন, আমার বিচারে পরিপূর্ণ সাধক।
এবার আমার প্রতিপক্ষের গায়কের কাছে আমার জিজ্ঞাস্য হচ্ছে— কেউ কবিগানের আসরের জন্য একটি দুটি ‘ডাক’, ‘মালসি’, ‘সখি-সংবাদ’ রচনা করলেই কবিয়াল হয়ে যায় না! কবিয়াল হবার জন্যে গুরু কবিয়ালের কাছ থেকে শিক্ষা-দীক্ষা লাগে, কবিগানের প্রশিক্ষণ ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ইত্যাদি লাগে। কিন্তু তিনি যদি বিজয় সরকারকে কবিয়াল হিসেবে প্রতিষ্ঠান করতে চান তো, তাঁর সেই শিক্ষা-দীক্ষা বা শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতা আছে কি-না সে সকল কথা কিছু বলুন। না হলে আজ থেকে আমার কথা নিন— কবিয়াল বিজয় সরকার আসলে একজন খাঁটি সাধক, এ ভিন্ন তাঁর আর কোনো পরিচয় নেই, থাকতে পারে না।
আমার কথা আপাতত এখানেই শেষ। এবার বলুন দেখি কবির পক্ষে বেশ।

[যথারীতি তিনি বসে পড়েন এবং কবিগানের আসরের মতো পরবর্তী গায়কের আগমনের ইঙ্গিতাবহের বাদ্য বেজে ওঠে। তার মধ্যে প্রথম পক্ষের গায়ক উঠে দাঁড়ান। তিনি উঠে দাঁড়াতেই বাদ্য থেমে যায় এবং তিনি সুরে টান দিয়ে বলেন।]

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন