X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিজয় সরকার জীবনীনাট্য

দয়াল তোমার আসল নামটা কী || পর্ব-২

সাইমন জাকারিয়া
২৬ এপ্রিল ২০১৬, ১২:০২আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৬, ১২:৩০

প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগরপূর্ব প্রকাশের পর


দ্বিতীয় পক্ষ
একদিন কুঞ্জবাসে বসে সখীর পাশে কাতরে বলে কিশোরী
যেদিন পূর্বরাগে বন্ধুকে দেখিলাম আবেগ সোহাগে আরো শিহরি॥

সখী পেলেম বন্ধুর দরশন পেলেম মধুর পরশন
সে সুখ ঘটলো না আর
পেয়ে বন্ধুকে হলো শুধু হাসি কান্না সার
পূর্বরাগে অপূর্ব সুখ সে সুখেই হয়ে বিমুখ
এখন সুখের আশে পেয়েছি দুখ
সখী মুখ দেখানো হলো ভার॥

এটা সখী-সংবাদ। এটা কবিগানের আসরের জন্যে কবিয়াল বিজয় সরকারের একটি মৌলিক রচনা। ডাক ও মালসির পর কবিগানের আসরে এ ধরনের সখী-সংবাদ গাওয়ার নিয়ম আছে। কবিয়াল বিজয় সরকার কবিগানের এই প্রচলিত নিয়মগুলি মানতেন। এগুলি তিনি গুরু কবিয়ালের কাছ থেকে শিক্ষা-দীক্ষা সূত্রে অর্জন করেছিলেন।
আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে— কবিগানের জন্য কবিয়াল বিজয় সরকার কোনো শিক্ষা-দীক্ষা অর্জন করেছিলেন কি-না? সোজা কথায় উত্তরে দিলে বলতে হবে— নিশ্চয়। এবারের বিস্তারে বলি—
বাংলা ১৩৩০ সালের চৈত্র মাসে হোগলাডাঙ্গায় বারোয়ারী পূজা উপলক্ষে কবিগান অনুষ্ঠিত হয়। কবিয়াল মনোহর সরকার ও রাজেন্দ্রনাথ সরকারের কবিগান। রাতের বেলা সে আসরে মনোহর সরকারের ছড়া, পাঁচালী ও গান শুনে বিজয় মুগ্ধ হন এবং পরদিন সকালে তিনি অবসর মুহূর্তে মনোহর সরকারের কাছে এসে তাঁর চরণে ভক্তি দেন। অজ্ঞাত ভক্তের ভক্তিতে মনোহর বলেন—
— কি চাই তোমার?
বিজয় বলেন—
— বাবা, আমি আপনার কাছ থেকে কবিগানের সরকারি শিখতে চাই।
— কি কর তুমি?
— স্কুলের মাস্টারি করি।
— মাস্টারি ছেড়ে তুমি কবিগান শিখবে কেন? তুমি কি গান গাইতে পার? গলায় কি তোমার সুর আছে?
— সুর ও সংগীতে কিছু অধিকার আছে বলেই তো সরকার হওয়ার প্রবল ইচ্ছে আমার।
— তাহলে আমাকে একখানা গান শোনাও।
— কি গান শুনিবেন?
— আমি যা বলব তা কি গাইতে পারবে?
— ছোটবেলা থেকে যাত্রা, কীর্তন, বিচার গান করেছি। তার উপর ভর করেই বলছি, আশা করি আপনি যে গান শুনিতে চান, তা আমি শোনাতে পারবো।
— অশ্বিনীদার গান জানো তুমি? যদি পারো তো তুমি অশ্বিনীদার একখানা গান শোনাও।

মনোহর সরকারের কথামতো বিজয় হাতে একতারা নিয়ে অশ্বিনী কুমার সরকারের গান ধরলেন—

আমি গুরু বৈমুখ হয়ে রইলাম ভাই এ মুখ কেউ দেখ না।
আমার এ মুখ দেখলে পরে, তার দুঃখ আর যাবে না॥
হরি বৈমুখ হলে পরে, তারে গুরু গোঁসাই রাখতে পরে বিচার অনুসারে॥
গুরু বৈমুখ হলে পরে, তারে কেউ রাখতে পারে না॥

এই গানের গায়ক বিজয় ও শ্রোতা মনোহর সরকার উভয়ের মুখমণ্ডল ভক্তিরসের অশ্রুতে ভিজে যান। গান শেষ হতেই চোখ মুছে মনোহর সরকার বলেন—

— বিজয় আমি তোমাকে গ্রহণ করিলাম। তবে, এখন গানের মৌসুম প্রায় শেষ, তাই তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। আগামী দুর্গাপূজার আগে তুমি আমার বাড়িতে চলে এসো।
— আমার কাছে তো তেমন কিছু নেই। এই নিন একটি টাকা, এই টাকায় গুরু প্রণামী দিয়ে আপনাকে আমি গুরু বলে গ্রহণ করলাম।
— আশীর্বাদ করি, তুমি অনেক বড় সরকার হও। শান্তিপূর্ণ জীবনের অধিকারী হও।

এরপর দুর্গাপূজার ঠিক আগে বিজয় চলে যান মনোহর সরকারের বাড়িতে। গিয়ে দেখেন মনোহর সরকারের ছোট স্ত্রী খুবই অসুস্থ, আর মনোহর সরকার সেই অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। যাবার মুখে বিজয়কে দেখেই তিনি—

— তুমি এসেছো! কিন্তু তোমার ছোট মা খুব অসুস্থ, তাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এখনই কলকাতা চলে যাচ্ছি। যদি তোমার ছোট মাকে সুস্থ করে বাড়ি আনতে পারি, তাহলে তুমি সস্নেহে আমার দলে স্থান পাবে, অন্যথায় তোমার বাড়ি ফিরে যেতে হবে।

মনোহর সরকারের মুখে একথা শুনে বিজয়ের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। প্রতিদিন মনোহর সরকারের ছোট স্ত্রীর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করে করে তার দিন যায়। এর মধ্যে দুর্গাপূজার সপ্তাহ দেড়েক আগে ছোট স্ত্রীকে নিয়ে মনোহর সরকার বাড়ি ফিরলেন।
এরপর মনোহর সরকারের দলে শিক্ষানবিশ হিসেবে বিজয়ের স্থান হল। বিজয় অধীর আছেন কবিগান শেখার জন্য, একদিন মনোহর সরকারকে বললেন—

— গুরু, আমায় এবার কবিগানের শিক্ষা দিন?
— এতো সহজে কবিগান শেখানোর বিধান নেই!
— তাহলে উপায়?
— তোমাকে তো আমি দলে স্থান দিয়েছি। এখন শেখাটা সম্পূর্ণ তোমার নিজের উপর।
— তাহলে কি আমার কবিগানের সরকারি আপনি শেখাবেন না গুরু?
— একই প্রশ্নের দুইবার উত্তর হয় না।

গুরু মনোহর সরকারের কথায় বিজয়ের মন ভরে না। তাই তিনি বিষণ্ন বদনে কবির দলের সাথে মিশে থাকেন। এক সময় তিনি মনোহর সরকারের কবিদলের সাথে খুলনা জেলার শিবসানদীর পাশে চটকাতলা গ্রামে রওনা দেন। নদী পথে নৌকায় যেতে যেতে বিজয়ের মনে বিষণ্ন বেদনায় সুর বেজে ওঠে—

ভাটির নদী বয়ে যায় রে, কয়ে যায় তার শূন্য বুকের ব্যথা।
জোয়ারে ভরিয়ে নদী যখন যে উজান দিকে চলে
তার বিপুল স্রোতে দু-কূল ভাসায় রে
কুল কুল রবে নদী কত কথা বলে
আবার ভাটির টানে ধীরে ধীরে, নদী সাগর মুখে কেঁদে ফিরে
তার হারান মন চাহে ফিরে ব্যাকুল বেদনায় রে॥...
অসীম আসন ফেলে সসীম জীবে নদীর মত ঘোরে
তাই শান্ত জীবে মিলিতে চায় রে, সেই অনন্ত সাগরে।

নদীতে ভাসতে নৌকা এসে ভেড়ে চটকাতলার ঘাটে। সবাই নেমে আশ্রয় নেন কালিবাবুর বাড়িতে। সেখানেই রাতে হবে কবিগান। সেই উপলক্ষে গ্রামের পাশে বসে গেছে আড়ং। বিজয় কি যেন মনে করে আড়ং ঘুরে ঘুরে দেখেন। দেখতে দেখতে আড়ংয়ের দক্ষিণে পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ান, সেখানে হাতে গলা রুদ্রাক্ষরে মালা জড়ানো একজন সাধুকে দেখতে পান, তাঁর কপালে লাল সিঁদুরের দীর্ঘরেখা, পরনে পট্টবস্ত্র ও গলায় উত্তরীয় পেচানো, মাথায় লম্বা চুল ও মুখে কালো মিচমিটে দাঁড়ি। তিনি বিজয়কে দেখার সাথে সাথে বললেন—

— কোথা থেকে এসেছো? কি কর?
— আমি মনোহর সরকারের কবির দলে থাকি। আমার কবিগানের সরকারি শেখার খুব ইচ্ছা।
— তোমাকে আমি একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিতে চাই। যাতে তুমি তাড়াতাড়ি বড় সরকার হতে পারো।
— সত্যি বলছেন?
— হ্যাঁ। সত্যি। কিন্তু তোমাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে।
— কোথায় যেতে হবে? কখন যেতে হবে? আপনি বলুন। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।
— রাত্রি দশটার সময় এখানে এসো।

রাত্রির খাওয়া-দাওয়ার পর দুই দলই আসরে গিয়েছে। মনোহর সরকারের দলে মহাদেব নামে একজন পুরাতন শিক্ষার্থী আসরে প্রথম গান পরিচালনা করেন। এ সময় মনোহর সরকার শুয়ে আছেন, বিজয় তাকে ঘুম পাড়াবার জন্য চরণ যুগল কোলের উপর নিয়ে টিপে দিচ্ছে। একটু পরেই সরকার মহাশয় ঘুমিয়ে পড়লেন। বিজয় তা নিশ্চিত হয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়লেন। পড়িমরি করে সেই বটতলার উদ্দেশ্যে যাত্রা দিলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন— সাধু লোকটা তারই অপেক্ষায় হারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। বিজয়কে দেখেই তিনি বললেন—

— এসো।

বিজয় মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। খড়ম পায়ে সাধু হাঁটছে বিজয় চলছেন তার পিছনে পিছনে। ওইদিকে কবিগানের আসরে তখন মহিমাচরণ সরকারের দল মালসি গেয়ে চলছেন, তাও সরবে শোনা যাচ্ছে। বিজয়ের কান গানের দিকে থাকলেও মন চলছে সাধুর দিকে। প্রায় মাইলখানেক হাঁটার পরও যখন পথ ফুরাচ্ছে না তখন একবার বিজয় সামনের সাধুকে—

— আর কত দূর?
— এই তো এসে গেছি। এই বাদাবনের পরেই সেই আশ্রম যেখানে তোমায় আমি মন্ত্র দিবো। ওই তো এসে গেছি।

এ কথা বলে সাধু এবার বিজয়কে একটি ভিটের উপর নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি মাত্র ঘর। ঘরে একটি মাত্র দরজা কোনো জানালা নেই। বিজয়কে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে সাধু হারিকেনের আলো কমিয়ে দিলেন। আবছা আলোয় ঘরের ভেতর পাঁচটি নরমুণ্ডুর আসন চোখে পড়ল। তা লালচে কাপড়ে আবৃত এবং পঞ্চমুখী জবাফুলে সুশোভিত। সম্মুখে আম্রপল্লবযুক্ত জলঘটে সিঁদুরের ফোঁটা। আসনের চারি কোণায় লাল সুতা জড়ানো চারটি বাঁশের তীর। জলঘটের পশ্চিমে ত্রিফলাযুক্ত লৌহ ত্রিশূল। ঘরের দক্ষিণে একখানা টেবিল। সাধু বিজয়কে বললেন—

— এই টেবিলের কাছে আসো।

বিজয় তাই করলেন। এবার সাধু বললেন—

— তোমার জামা-কাপড় সব খুলে টেবিলের উপর রাখো।
— এ কি বলছেন! আমাকে দিগম্বর হতে হবে!
— কোনো কথা বলো না। যা বলছি, তাই করো!

বিজয় মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাই করলেন। আর সাধু বিজয়ের সামনে এক হাঁটু ভেঙে আরেক হাঁটু বুকের কাছে রেখে বললেন—

— আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকো।

বিজয় কোনো দিকে না তাকিয়ে সাধুর চোখে তাকিয়ে রইলেন। সাধু তখন আপাদমস্তক বিজয়ের সর্বাঙ্গে হাত বুলিয়ে দিলেন। এতে বিজয়ের বোধ হতে থাকলো যে, তার হাত পায়ের জোড়াগুলি যেন খুলে যাচ্ছে। মনে হলো তিনি সাধুর কোলে ঢলে পড়ছেন। হঠাৎ বিজয় দেখতে পেলেন চাঁদড়ার লোকনাথ ফকির ছড়ি হাতে ঘরের চারিপাশে খটখট শব্দে খড়ম পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘরে কোনো জানালা নেই। তবু বিজয় কীভাবে যেন সেই গৃহপ্রদক্ষিণকারী ফকিরকে দেখতে পেলেন। তিনি মাটিতে ছড়ির আঘাত করে বিজয়ের দিকে তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন—

— তুই এখানে কেন এসেছিস?

একটু পরে সাধু বললেন—

— যা তোর হল না। কবিগানের আসরে যেতে পারবি?
— সেই বটগাছের তলে গেলেই আমি ফিরে যেতে পারবো।

সাধু হারিকেন নিয়ে ঘরে থেকে নেমে বিজয়কে সেই বটগাছের কাছে পৌঁচ্ছে দিলেন।
বিজয় যখন কবিগানের আসরে উপস্থিত হলেন তখন মনোহর সরকার রেগে বললেন—

— এতক্ষণ কোথায় ছিলে? কেউ তোমার কোনো খোঁজ দিতে পারছে না! নিশ্চয় তুমি রাতের অবসর বিশ্রামে গিয়েছিলে! শোনো, গানের আসর রেখে বিশ্রাম নিলে যে আত্মোন্নতির ব্যাঘাত ঘটে— সে বোধ কি তোমার আছে?
— গুরুজি রাগ করবেন না, আমি এক সাধুর খপ্পরে পড়েছিলাম।
— কি বললি?
— জ্বি গুরু! একজন সাধু আমাকে দ্রুত সরকার হবার জন্য মন্ত্র শিখিয়ে দেবেন বলে রাতের এই অন্ধকারে তার আশ্রমে নিয়ে গিয়েছিলেন।
— কি বললি! আমি ছাড়া তোকে তাড়াতাড়ি বড় সরকার বানায়ে দেবে এমন বান্ধব কে আছে!
— আমি বুঝতে পারিনি! আমায় ক্ষমা করেন!
— গান শিক্ষার জন্য খুব অধৈর্য্য হয়ে গেছো না! কিন্তু এই কথা তোমার একবারও মনে হলো যে, মন্ত্র পড়ে কবিয়াল হওয়া যায় না, গান গাইতে হয়, গান-বাজনার কলা-কৌশল জানতে হয়, শাস্ত্রকথা জানতে হয়।
— গুরু, আমি সব জানতে চাই!
— তাহলে ওই মন্ত্রের কথা ভুলে যাও, তার বদলে গানে আসো, ধরো, এখনই আমার সাথে গান ধরো—

কালিকে করাল বদনী
মূলাধারে থাক তুমি হয়ে সর্পাকার
তোমার শক্তি- বোঝে শক্তি
এমন শক্তি কার॥

না পেল তব অন্ত, ধ্যান যোগে উমাকান্ত
শ্মাশন ভূমে অবিশ্রান্ত
ফিরছে শূলপাণি॥

— বিজয়, এই হলো কবিপাঁচালীর ধূয়া, এবার তোমায় গাইতে হবে মূল পাঁচালী। পাঁচালীতে বর্তমানের নিরিখে কারো প্রশংসা করা যায়। যেমন ধরো, আমাদের আসরে উপস্থিত কবিয়াল রজনী সরকারকে প্রশংসা করে গাওয়া যেতে পারে এই কথা— ধরো ধরো আমার সাথে—

এই সরকারের মধ্যে তুমি শ্রেষ্ঠ
সরকার রজনীকান্ত
তোমার কাব্যের ব্যাখ্যা গেছে
দেশ-বিদেশ পর্যন্ত
আশীর্বাদে ঘুচাইও ভ্রান্তি
গানে যেন পাই গো শান্তি
যেন তুষ্ট হয়ে বৈজয়ন্তী
জোগায় জয় জয়ন্তী রাগিনী॥

— বিজয়, এই পাঁচালী তখনই পূর্ণ হবে যখন তুমি যাঁকে নিয়ে পাঁচালী গাইলে তাঁকে ভক্তি করবে। যাও এখন পাঁচালীর পূর্ণতা আনায়ন করো।

গুরু মনোহর সরকারের ইশারায় বিজয় প্রণাম করেন আসরে উপস্থিত রজনী সরকারকে। তখন রজনী সরকার বিজয়ের মাথা হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে বলেন—

— তুমি বড় সরকার হও, তোমার মনোবাসনা পূর্ণ হোক।
— বিজয়, এটাই হলো কবিগান শিক্ষার সঠিক পথ। এভাবেই তোমাকে কবিগান শিখতে হবে। গাইতে হবে।
— ঠিক আছে গুরু, আর ভুল হবে না।
— এখন তাহলে আরেকটা গান করো। আমি সাহস দিচ্ছি গাও, শোনো কবিগানের গায়ককে অন্তরে চেতনায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে গাইতে হয়। আরেকটি কথা মনে রেখো বিজয়— গান গেয়ে সেই গান সবার আগে নিজেই শুনতে হয়, আর যে গান নিজের মন মতো হয়, সে গান আসরের দর্শকের মন যোগাতে বাধ্য।
— আপনার চরণে শত কোটি ভক্তি জানাই। আপনার শেষ কথা মনে এসে টান মেরেছে, একটা গান এসেছে, আজ না হয় সেটাই গাই?
— গাও বাবা, গাও।
— শুনুন—

নিজে গেয়ে নিজে শুনিস নিজের গান
তোর গান তোর মন মতো হলে জুড়াবে সকলের প্রাণ॥

কোন মোকামে এই গানের সুর ভাসে
কোথা গিয়ে কোন পথ বাহিরে আসে
তুই বসে সেই সুরের এক পাশে, করিস শুধু তাহার ধ্যান॥

অনাহতে নাদ বিন্দু ফোটে
সংঘাতে সংযম হয়ে তদুর্ব্ধে ছোটে
শেষে বিশুদ্ধেতে বেজে ওঠে, বীণাপাণির বীণার তান॥

জীবন ভরে যে গান গেয়েছিস
ঘরকে না শুনায়ে গান পরকে শুনায়েছিস
তুই এই গান গেয়ে কি পেয়েছিস, হিসাব নাই তোর লাভ লোকসান।

সারা আসর বিজয়ের এই গানে মোহিত হয়ে গেল। মনোহর সরকার নিজেও বিস্মিত হলেন— তার সামান্য ইশারা বিজয় তাৎক্ষণিকভাবে এ ধরনের গান আসরে গাইলেন বলেন।

— বিজয়, দেহতত্ত্বের এত বড় কথা তোর ভেতর এলো কি করে!
— গুরু, আপনার আশীর্বাদ ও সাধুগুরুর ইশারা না পেলে এমন কথা বাঁধার সাধ্য আমার হতো না গুরু। আপনার মতো শিক্ষাগুরুর ইশারা বিনা পদ আমার হতো না গুরু।

আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল— বিজয় কবিগানের কোনো শিক্ষা-দীক্ষা করেছিলেন কি-না। আশা করি, আমার প্রতিপক্ষের গায়ক তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। এবার কবিয়াল হিসেবে বিজয় সরকারকে গ্রহণ করে নিতে তার কোনো দ্বিধা, সংকোচ বা আপত্তি থাকার কথা নেই। সেই সঙ্গে আমি এও বলে যেতে চাই বিজয়ের নামের সাথে ‘সরকার’ উপাধিটা যুক্ত হয়েছে কবিগানের কবিয়াল হিসেবে। তিনি যদি কবিয়াল নাই হবেন— সবার সাক্ষাতে আমার জিজ্ঞাস্য বিজয় সরকারের আসল নাম কি? আর কেনইবা তিনি নিজের আসল নাম রেখে সরকার উপাধি গ্রহণ করলেন, সকলে কেনইবা তাঁকে বিজয় সরকার বলে?
এই পর্যন্ত প্রশ্ন করছি আমি ক্ষ্যান্ত। সঠিক উত্তর দিয়ে তুমি নিজে হও শান্ত।

...................................................................................................
দয়াল তোমার আসল নামটা কী || পর্ব-১


 

আরো পড়ুন-

শেক্সপিয়ারের ৪০০তম মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি